Everything that is possible to be believed is an image of the truth.
— William Blake
৫৫৩.
ইনভেস্টরদের উইশলিস্টের প্রথমেই আছে স্বাধীন, রাজনৈতিক অথবা ইন্ডাস্ট্রির প্রভাবমুক্ত – শক্তিশালী রেগুলেটরি সংস্থা। ন্যায়বিচার আর অবৈষম্যমূলক আচরণ করবে সবার সাথে। স্বাধীন ব্যাপারটা আসছে রেগুলেটরের রোল নিয়ে। যা চলবে – সার্বজনীনভাবে প্রকাশিত কিছু ‘ওয়েল ডিফাইনড’ নীতিমালা নিয়ে। ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহার দিয়ে নয়। মাঠে নামার আগেই জানবে সবাই কোনটা ফাউল আর কোনটা নয়। নামার পর ইচ্ছেমতো ‘ফাউল’ দিলে খেলার আগ্রহ হারাবে এই পয়সাঅলা কোম্পানিগুলো। যাই করুন কথা বলে নিন গ্রাহক আর ইন্ডাস্ট্রির সাথে। গ্রাহক হচ্ছে যিনি সরাসরি কিনছেন জিনিসটা। আর ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করছেন সেটা।আপনি হচ্ছেন গিয়ে রেফারি। নিয়মবিরুদ্ধ জিনিস ছেড়ে দিলে ইন্ডাস্ট্রি সেটাকে ‘প্র্যাকটিস’ ধরে করতে থাকে বার বার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ গ্রাহক। আমার ধারণা, ইনভেস্টরদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হিসেবে নিলে নিলে দেশের লাভ বেশি। ওই বিচক্ষণতার জন্য জানতে হবে রেগুলেটরকে বেশি। শিখতে হবে অনেক। না জানলে যে সমস্যাটা হয় সেটার নাম হচ্ছে গিয়ে ‘রেগুলেটরি ক্যাপচার’। গুগল করবেন নাকি একবার?
৫৫৪.
সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক কথা বার্তা বলে থাকে ইনভেস্টররা। মানে, যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা যাতে সমান হয় সবার জন্য। ‘ক’এর জন্য সিদ্ধান্ত এক আর ‘খ’ বিদেশ থেকে এসেছে বলে ওর জন্য অন্যরকম তাহলে সেটা ইনভেস্টর কনসোর্টিয়ামে ভুল সিগন্যাল পাঠায়। আবার যাদের টাকা পয়সা বেশি – তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয় অনেক দেশেই। রাজনৈতিক ‘লবিস্ট’রা এব্যাপারে সিদ্ধহস্ত। আপনার পক্ষে সিদ্ধান্ত এনে দেবে – নো ম্যাটার হোয়াট! একটা ফী’র বিনিময়ে। এ ব্যাপারগুলো ‘ব্যাকফায়ার’ করে নতুন ইনভেস্টমেন্ট আনার জন্য। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন বড়রা। রেগুলেটরকে বুঝতে হবে বড়রাই রেগুলেটরকে ‘এনগেজ’ করবে বেশি। এটাই নিয়ম। তাই বলে যে ছোটরা কিছু বলতে পারছে না সেটা জানতে হবে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে। এরপর বসিয়ে দিন সামনাসামনি। রেগুলেটর আগে থেকে সবকিছু লিখে রাখলে সবার জন্য সুবিধা। উন্নতদেশে রেগুলেটরকে নিয়ে মিডিয়াতে আলাপ হয় কালেভদ্রে। কারণ, সবাই সবকিছু জানে। কোনটা ফাউল আর কোনটা নয় – সেটা বলে রেখেছে রেগুলেটর আগে থেকেই। মিডিয়াতে কথাবার্তা না হবার মানে হচ্ছে সবকিছু চলছে ঠিকমতো!
৫৫৫.
এখন সবাই খুব কানেক্টেড, কোন দেশে কি হচ্ছে সবাই জানে আগেভাগে। এমনকি, ওই দেশের মানুষের আগে। মনে রাখতে হবে – পৃথিবী চালায় কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড। টেলিযোগাযোগ বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলোর অপারেশন আছে অনেকগুলো দেশে। এমন বড় যে ওই কোম্পানিগুলোর পেছনে আছে বড় বড় দেশগুলো। এই কোম্পানিগুলোই ঘুরে ফিরে টাকা ঢালছে একেক দেশে। তারা দেশগুলোকে চেনে ওই দেশের মানুষগুলো থেকে বেশি। একেকটা ‘ইনোভেশন’ আর পেটেণ্টের পেছনে কতো টাকা ঢালছে সেটার হিসেব নাই বা দিলাম আর।
৫৫৬.
না জানলে হবে কিভাবে? বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট তো না জেনেশুনে করবেন না কেউ? আপনি করবেন? আমরাই তো দশ টাকার ইনভেস্টমেন্টের আগে চিন্তা করি দশ বার। বোর্ডমিটিংয়ে শেয়ারহোল্ডারদের কি বোঝাবেন? আমাদের দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ তাদের নখদর্পনে। দেশগুলোর নীতিমালা মুখস্ত তাদের। কোথায় ইনভেস্টমেন্ট পরিবেশ ভালো আর কোথায় অপেক্ষা করতে হবে আরেকটা সরকারের জন্য – সেটা তাদের জানা। ইনভেস্টমেন্ট কতো প্রকার আর কি কি প্রকারের – সেটা দেখতে তাকাতে হবে ভারত আর মায়ানমারের দিকে। সামনের বছরগুলোতে।
৫৫৭.
সবার কিছু না কিছু অপারেশন আছে আমাদের মতো দেশগুলোতে। একেক বাজারের জন্য আলাদা রিসার্চ টীম আছে তাদের। আমাদের দেশে কোন ধরনের প্রোডাক্ট চলবে ভালো – আর কোনটা নয়, সব জানা তাদের। সব জ্ঞান গিয়ে জমা হয় তাদের গ্রুপ হেডকোয়ার্টারে। এই জ্ঞানগুলো বাঁচায় কোম্পানিগুলোকে। কোটি টাকা খরচ করে নামালেন একটা প্রোডাক্ট – আর তা না চললে সেটার গচ্চা দিতে হয় আমাদের মতো গ্রাহকদের। সবকিছু মিলিয়ে বিশাল কার্যক্ষেত্র আর বাজার তৈরিতে সিদ্ধহস্ত তারা। তাদের সম্মিলিত জ্ঞান একেকটা দেশ থেকে অনেক বেশি। ফলে – দেশগুলোও থাকতে চায় তাদের গুডবুকে।
[ক্রমশঃ]