“A man who cannot reach a decision promptly, once he has all the necessary facts, cannot be depended upon to carry through any decision he may make.”
– Andrew Carnegie
৯.
গবেষণা ছাড়া কিছু করা যায়? আমার ধারণা, একেবারেই না৷ অনেক সময় শর্টকাট করে বেঞ্চমার্ক পদ্ধতি বেছে নিলেও তা আমাদের জন্য ঠিক মতো মেলে কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷ বেঞ্চমার্ক পদ্ধতি হচ্ছে অন্যদেরটা (পাশাপাশি জিডিপি) দেখে কপি করা, বিদেশী পরামর্শক আমাদের দেশকে ভালো ভাবে না বুঝে যখন অন্য দেশের টেমপ্লেটে ফেলে দেন৷ বিদেশী পরামর্শকের খুব একটা দোষ দেয়া যায় না, যেখানে আমরা জনবলের অভাবে রিপোর্টগুলো ঠিকমতো বুঝে নিতে পারি না৷ বিদেশী পরামর্শককে আমাদের স্টাটিসটিকাল পার্টিকুলারগুলো বোঝানোর মতো লোক নেই৷ বাংলাদেশ অনেক দেশ থেকেই অনেক আলাদা৷ আমাদের প্যারামিটারগুলো অন্য কারো সাথে মেলে না৷ যে কোনো ভালো পদ্ধতি বের করতে হলে গবেষণা প্রয়োজন৷ যত বেশী তথ্য ততো বেশী বিশ্লেষণ – সিদ্ধান্ত ততো ভালো না হয়ে যাবে কোথায়৷
১০.
কার্নেগী নিজেই গবেষনায় বিশ্বাসী ছিলেন৷ তিনি হিলকে দিয়ে সেই তত্ত্ব গবেষণা করাতে চাইলেন যার ব্যাপ্তি হবে বিশ বছরের মতো৷ কার্নেগী কিভাবে এত বড় হলেন তার ধারণা হিলকে দিলেও ওই সময়ের দুশোরও বেশী কোটিপতিদের সাক্ষাতকারের আয়োজনের ব্যবস্থা করে দিবেন বলে ধারণা দিলেন৷ হেনরী ফোর্ড, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, রাইট ভাতৃদয়, গ্রাহাম বেল থেকে থমাস আলফা এডিসন কেউ সেই সাক্ষাতকার লিস্ট থেকে বাদ পড়েননি৷ কার্ণেগীর ধারণা, সব মানুষ বড় হবার পেছনে কিছু প্যাটার্নের মিল থাকবে যা তাদেরকে অন্য সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা করে রেখেছে৷ আর এই প্যাটার্ন বের করতে পুরো যুক্তরাষ্ট্র চষে বেড়াতে হবে হিলকে৷ বিশ বছরের সেই সব তথ্যের সংকলনের গবেষণালব্ধ তত্ত্ব প্রকাশের যাবতীয় খরচসহ প্রস্তাবনা দিলেন কার্নেগী৷ কার্নেগী তার প্রগ্জ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে এই গবেষণা করাতে হিলকে পছন্দ করেছিলেন৷
১১.
হিলের লেখা “থিংক এন্ড গ্রো রিচ” এ বর্ণিত বড় বা বড়লোক হবার সুত্র কার্ণেগীর পৃষ্ঠপোষকতায় তার তত্ত্বকে আজকেও অম্লান রেখেছে৷ বইটা তখনকার সময়েরই হাজার কোটিপতি লোকের উপর পরীক্ষার ফলাফল যা পরবর্তীতেও আরো লাখো লোকের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে৷ কার্নেগী চাচ্ছিলেন এই সুত্রগুলো সবাই জানুক৷ এই ম্যাজিক তত্ত্ব যা কার্নেগীসহ অনেককে নিস্বঃ থেকে কোটিপতিতে রূপান্তর করেছে৷ কার্নেগী মূলতঃ এই জ্ঞানটা তাদেরই জন্য উন্মুক্ত করতে চাচ্ছিলেন যাদের সেই সময়ে জ্ঞান আহরণ করার সামর্থ্য ছিলনা৷ তখন এখনকার মতো ইন্টারনেট বা শিক্ষা ব্যবস্থা ছিলনা বললেই চলে৷ কার্নেগী বিশ্বাস করতেন এই তত্ত্ব ঠিক ভাবে স্কুল কলেজে পড়ানো হলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা পাল্টে যাবে৷ আর স্কুলের সময় অর্ধেকের চেয়ে কমে আসবে যার প্রতিফলন কার্নেগিমেলন উনিভার্সিটিতে পড়েছে৷
১২.
আমি হলে কার্ণেগীর মুখের কথা পড়ার আগেই প্রস্তাবটা লুফে নিতাম৷ তবে আমি তা আমার বর্তমান প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে বলছি৷ তবে আমার ধারণা, সেই উনিশশো আট সালে আমাকে বলা হলে আমি হয়তোবা সিদ্ধান্তহীনতায় পড়তাম৷ যুক্তরাষ্ট্র মহাদেশ চষে বেড়াতে হতো বিশ বছর ধরে৷ মোবাইল ফোন তো দুরের কথা, টেলিফোনও ঠিকমতো কাজ শুরু করেনি৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ভরসা করতে হতো বাস্পীয় ইঞ্জিনের উপর৷ মজার কথা, পরবর্তীতে জানা গিয়েছিলো যে হিল উনত্রিশ সেকেন্ডের মাথায় তার মতামত দিয়েছিলেন৷ কার্ণেগীর জীবনী থেকে জানা গেছে যে সেটা এক মিনিটের বেশী হলেই কার্নেগী তার প্রস্তাবটি ফিরিয়ে নিতেন৷ তার মতে, প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত থাকা সত্ত্বেও যে লোক সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তার কোনো সিদ্ধান্তের উপর ভরসা করা যায়না৷