“The idea that the future is unpredictable is undermined every day by the ease with which the past is explained.”
― Daniel Kahneman, Thinking, Fast and Slow
“I may be surprised. But I don’t think I will be.”
― Andrew Strauss
১.
আগে অবাক হতাম, এখন ছেড়ে দিয়েছি অনেক কিছুই। অবাক হবার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে হয়তোবা। ধরুন, লিখছি একটা বিষয় নিয়ে – অনেকের মতো রিসার্চের জন্য সাহায্য নিতে হয় গুগলের। পিএইচপি দিয়ে তৈরী করা সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করছিলাম বহুবছর আগে – তাও আবার একটা অফিসেরই ভেতরে। আমার পালা দুটো স্পাইডার (ক্রলারও বলেন অনেকে) ইনডেক্সিং করতো অফিস ডকুমেন্টগুলো – সারাদিন ধরে। সেই আদি ধারণা থেকে গুগলের সার্চ আলগরিদম আন্দাজ করা কষ্টকর তো বটে। কাজের সুবিধার জন্য আমার সার্চ প্যাটার্ন (যা সার্চ করেছি এপর্যন্ত, দশ বছর হবে কি?) গুগলকে রাখতে বলেছি মনে, আর তার ফলাফল ভয়াবহ। এর মধ্যে ‘গুগল ইনস্ট্যান্ট’ আগুনে ঢেলেছে ঘি। ইনস্ট্যান্ট সার্ভিসটা কোটি মানুষের ‘সার্চ ফ্রেজ’ মানে যে বাক্য দিয়ে মানুষ সচরাচর কিছু একটা খোজে তা মুখস্ত করে বসে বসে। আবার আপনি সার্চ করার মুহুর্তে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো লিখে দেয় আগেই। আপনি সার্চ করার বাক্যের প্রথম শব্দটা কোনো রকমে লিখলেই হলো। আপনার আশেপাশের লোকজন এধরনের কিওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকলে তার প্রস্তাবনার লিস্টি সহ আপনার কাছে উপস্থিত করবে গুগল। সেদিন ষ্টারমুভিজে ‘মিরর মিরর’ মুভিটা দেখার পরপরই গুগলে মিররের শুধুমাত্র ‘এমআইআর’ লিখতেই পুরো মুভিটার সাজেশনই নয় – তার ডান পাশের স্নিপেটে চলে এলো এর পুরো মুভির আদ্যপান্ত। কনটেক্সট ও ছাড়া ভালো কে বুঝবে? গুগলের কথা বলছি। দশ বছরের ব্যবহৃত সার্চ টার্ম ও জানে বলে আমার খোজার ফলাফলকে ন্যারো ডাউন করে নিয়ে এসেছে আমার চাহিদার উপর ভিত্তি করে।
২.
অবাক হবার কিছু নেই। ধারণা করছি, ওই সময়ে এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নে ষ্টারমুভিজ সিনেমাটা ব্রডকাস্ট করছিলো বলে অনেকেই মুভিটা সমন্ধে জানতে চেয়েছে গুগলের কাছে। তার একদিন আগে মেয়ের জন্য জিমেইলে ‘স্নোহোয়াইট’ সম্পর্কিত কিছু ইমেইল চালাচলি করেছিলাম হয়তোবা। আমার দশ বছরের সার্চ প্যাটার্ন গুগল মনে রাখাতে তার সাজেশন এতটাই টার্গেটেড হয় তা দেখলে অবাক না হবার জো নেই। ও আমাকে চেনে আমার থেকে বেশি। বেশি অবাক হলে কাজে সমস্যা হয় বলে ছেড়ে দিয়েছি ইদানিং। আমার সব লেখালিখির জিনিসপত্র গুগলের বিভিন্ন সার্ভিসে থাকার কারণে এটা কতোটা নিখুঁত হয় তা আপনার অজানা নয় আপনার। ফ্লাইট ডিটেলস আর স্টক মার্কেট? বাংলা টাইপিং এর জন্য গুগল ইনপুট টুলস ব্যবহার করাতে ইংরেজিতে একটা বাংলা শব্দ লেখা শুরু করতেই যা সাজেশন দেয়া শুরু করে তা ইর্ষনীয় বটে। এই টুল যতই ব্যবহার করছি, আরো স্মার্ট হচ্ছে দিনকে দিন – আমার লেখার (মানে ইনপুটের) ভিত্তিতে। আমি যে শব্দটা যেই ইংরেজি শব্দে লিখেছি আগে, মনে রেখে দেয় টুলটা। অনেকটা টেক্সট তো স্পীচ সফটওয়্যারের ট্রেনিং পিরিয়ডের মতো। মানে, নিজের চোখে দেখছি মেশিন লার্নিং। আর ইংরেজি শব্দ এমন ভাবে বাংলায় ম্যাপিং করেছে তার জন্য নিজেকে দেখতে হবে চেখে। ইংরেজি বানানে কোনো কিছু লেখলে তার সরাসরি বাংলা উচ্চারণ ছাড়াও অভিধানের কাজ করছে সময় সময়। যেমন, ইংরেজিতে ‘আমেরিকান’ শব্দটা লেখতেই ‘মার্কিন’ শব্দটা বের করে দিচ্ছে বাংলায়।
৩.
বই পড়ার সময় পাতায় পাতায় দরকারী লাইনে দাগানো আমার ছোট বেলার অভ্যাস। আমাজনের কিন্ডল এ কেনা সব বইয়ে পৃথিবীর বাকি পাঠকদের হাইলাইটগুলোর অংশ দেখে বুঝতে পারি আমার ফারাকটা। পিসিতে কাজ করার পর মোবাইল ফোনে কাজ করতে গেলে অবাক হবার চেষ্টা করি – ও আমার সব বদ অভ্যাসগুলো রেখেছে মনে। ফোনটা [নয় সালের] পুরোনো হলেও এন্ড্রয়েডের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেমে নতুনভাবে ইনস্টল করতেই পুরোনো সব সেটিংস, ফোনবুক এন্ট্রি, গুগলের কোন কোন সার্ভিস ব্যবহার করছিলাম তার সকল যোগসূত্র, কি কি এপ্লিকেশন ইনস্টল করেছিলাম তা নিমিষেই নিয়ে আসলো গুগল ক্লাউড থেকে। মানে, গুগল জানে সবকিছু! আমার প্রিয় রংটাও। ‘গুগল কীপ’ [ড্রাইভের অংশ] সাহায্য করছে পরের বইটা লেখার ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে।
৪.
‘পার্সোনালাইজেশন’ কাকে বলে সেটা দেখতে যেতে হবে আমাজনের সাইটে। প্রতিদিন প্রায় বিভিন্ন জিনিসের জন্য ওখানে ঢু মারার ফলে আমাকে চিনে গেছে বন্ধুদের থেকে বেশি। আমার কেনাকাটার রেকর্ড আর তার ব্রাউজিং রেকর্ড ঘেঁটে যা রেকমেন্ডেশন তৈরী করে তা ইর্ষনীয়। না কিনে যাবেন কোথায়? ওই জিনিষটা যারা কিনেছেন উনারাই আর কি কি কিনেছেন তার প্রস্তাবনা দিচ্ছে পাশেপাশে। আবার আমার কেনাকাটার রেকর্ড দেখে অন্যেরা প্রভাবিত হলে তারা কি কিনেছেন তাও দেয়া আছে পাশে। বিশেষ দিনগুলোতে কি কি কিনেছেন সেটা মনে রাখবে বছর ধরে। পরের বছর নতুন কিছু মনে করিয়ে দিতে পিছুপা হবে না সে। কুকি দিয়ে ট্রাক করছে আমার ব্রাউজিং হিস্ট্রি, আমার একান্ত গোপনীয় জিনিসও জানে সে। তবে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো আমাকে কখনো জানাবে না কি কি জানে সে আমার ব্যাপারে।
৫.
দোকানের জানালা পার হতেই পাঞ্জাবিটা পরলো চোখে। মনেও ধরলো আপনার। দামটাই মনকে সায় দিলো না বরং। হাঁটতে শুরু করলেন আগের মতো। আপনি হয়তোবা জানেন না যে জানালাতে লাগানো ওয়াইফাই সেন্সর আপনার স্মার্টফোনতাকে স্ক্যান করে নিয়েছে এর মধ্যে। কতোজন দাড়িয়েছিলেন সেই ডিসপ্লের সামনে, কতোজন এরপর দোকানে ঢুকেছেন আর কতোজন ঢোকেননি – তার হিসেব চলে যাচ্ছে স্টোর ম্যানেজারের কাছে। কতোক্ষণ দাড়িয়েছিলেন ক্রেতা তার উপর নির্ভর করছে দামটা যুতসই হয়েছে কিনা। দোকান যদি এটাই না বের করতে পারে তাহলে বিক্রি ব্যবসায় কেনো? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো রিটেল শপে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ইউক্লিড এনালাইটিক্স’ এর প্রযুক্তি – যারা সিলিকন ভ্যালির আরেকটা স্টার্টআপ। ক্রেতার কোন কোন তথ্য নেয়া যাবে আর নেয়া যাবেনা সেটার উপর সুবিধাজনক অবস্থান আসাতে ফ্লাডগেট খুলেছে ‘বিগ ডাটা’র ব্যাপারে। বিজনেস মডেল পাল্টে যাচ্ছে রাতের মধ্যে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের বই ‘ডিকোডিং বিগ ডাটা’ বইটা শুরু হয়েছে এভাবেই।
৬.
সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর ডাটার ভলিউম নিয়ে বিপাকে সবাই। যেভাবে বাড়ছে ডাটা সেটাকে প্রসেস করাটা সমস্যা হলেও ভবিষ্যত এখানেই। বিজনেস হাউস, হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে সরকারও এই ডাটার দিকে তাকিয়ে আছে। গুগলের আগের চিফ এক্ষিকিউটিভ এরিক স্মিদ দুহাজার দশ সালেই বলেছিলেন নতুন এই ডাটা তৈরীর ব্যাপারে। মাত্র দুদিনে তৈরী হচ্ছে পাঁচ এক্সাবাইটের মতো যা দিয়ে ধারণ করা যাবে দুলক্ষ পঞ্চাশ হাজার বছরের ডিভিডি কোয়ালিটি ভিডিও। আর দু হাজার তেরোতে সেটাই তৈরী হচ্ছে প্রতি দশ মিনিটে। ‘খেতে যাচ্ছেন গুলশানে’ থেকে ‘রক্ত দরকার বন্ধুর জন্য’ বা সহমর্মীদের কাছ থেকে টাকা তোলা থেকে শুরু করে আপনার ‘পিনপয়েন্ট লোকেশন’ সবই যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আপনার আপলোড করা কোন কোন ছবিতে আপনি বা আপনার বন্ধুরা আছেন তাদের মুখ স্ক্যান করে তথ্য যাচ্ছে এই বিগ ডাটাতে। ছবিটা কোথায় তোলা হয়েছে তা বলে দিতে হয়না আর। ও জানে সব। প্রচুর ডাটা, প্রচুর সম্ভাবনা।
৭.
রাতে ঘুমের সমস্যা হওয়াতে ফোনটাকেও শুইয়েছিলাম আমার সাথে। ভোরে বলে দিলো ঠিক কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম রাতে, কোন কোন লেভেলে। তাও চলে গেছে ‘বিগ ডাটা’তে। হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রি মুখিয়ে আছে সামনের বছরগুলোতে। যারা মোবাইল হেলথ ট্র্যাকার পরতে সন্মত হচ্ছেন তাদের জন্য প্রিমিয়াম কমিয়ে দিচ্ছেন ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো। সব যাচ্ছে বিগ ডাটাতে। আগে গাড়ির ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো যেভাবে জিপিএস লাগালেই কিস্তি কমিয়ে দিতো – তার উন্নততর ভার্সন এটা। চালু করা টিভির সামনে এক দম্পতি ঝগড়া করাতে পরবর্তী কমার্শিয়াল ব্রেকে চলে আসলো স্থানীয় ম্যারেজ কাউন্সিলরের বিজ্ঞাপন। ভেরাইজন তার পেটেণ্ট ডাটাবেসে এই প্রযুক্তি পাশ করিয়ে নিয়েছে বেশ আগে। মা তার সন্তানের একটা ইনফেকশনের খবর জানতে পেরেছেন চব্বিশ ঘন্টা আগে, দৃশ্যমান লক্ষণ হাতে পাবার আগেই। সবই যাচ্ছে ‘বিগ ডাটা’য়।
৮.
আসি মোবাইল ইন্ডাস্ট্রির বিগ ডাটাতে। লেডি গাগাকে ব্যক্তিগতভাবে [প্রথম দিকে] পছন্দ না করলেও তার ‘বিগ ডাটা’র উপরে ভরসা মুগ্ধ করেছে আমাকে। লেডি গাগার ভক্তদের ব্র্যাকেটটা দেখতে অনুনয় করছি। ‘স্পটিফাই’ এপ্লিকেশনের ‘বিগ ডাটা’র ক্লাউড থেকে কোটি মানুষের প্লে-লিস্ট দেখে তার পরবর্তী কনসার্টে কোন কোন গান গাইবেন তা ঠিক করতে পারাটা কিন্তু উচ্চমার্গের। ভক্তরা তার ব্যক্তিগত সময়ে ফোনে বা পিসিতে গানের যে ‘একান্ত’ প্লেলিস্ট ব্যবহার করেন; সংগীতশিল্পী তার আন্দাজ পেলে ভক্তের মনের ভেতরে ঢোকা কষ্টকর নয়। নির্বাচন পূর্ব সার্ভে আর বিগ ডাটা সম্পর্কযুক্ত।
‘বাবা’, আমার মেয়ে দাড়িয়ে আছে হাসিমুখে ‘মা খেতে ডেকেছে, বাবা – গুহা থেকে’। ‘গুহা’ মেয়ের মা’র তৈরী করা আমার ঘরের [দেখতে কিন্তু স্টোররুমের মতো] সমার্থক শব্দ। এই শব্দটাও এসেছে বিগ ডাটা থেকে। চিন্তা করছি, মেয়ের মা আবার আমার ‘বিগ ডাটা’ কি না?
Reblogged this on almadinaartgallery.
LikeLike
Dear Brother,
Excellent and very informative write up. I have enrich my knowledge. Thanks for sharing and caring for us Remain blessed.
LikeLike
Big data made clear ! Thanks
LikeLike
Thank you so much, hope this has helped you. More input is much appreciated. Thank you once again.
LikeLike
এমন সুন্দর গোছানো লেখা কতদিন পড়িনি মনে নেই! অসাধারণ, চোখ রাখবো ব্লগে, পরবর্তী আপডেটের জন্য!
LikeLike
Thank you so much!
LikeLike