It is better to light a candle than curse the darkness.
– Chinese proverb
১৫৮.
পত্রিকার ‘পাঠকের পাতা’গুলো পড়তাম ছোটবেলা থেকে। মেনস্ট্রিম নিউজ থেকে অন্য পার্সপেক্টিভ পেতে এ ব্যবস্থা। টিভি, প্রিন্ট আর অনলাইন নিউজের রিপোর্টিং থেকে আন্দাজ একটা পাওয়া যায় বটে। তবে পাঠকের লেখা তার নিজস্বতা থেকে তৈরী হলেও অনেকের লেখা থেকে কিছু রিফ্রেশিং আইডিয়া মাথা খোলায়। সেকারণে বড় বড় নিউজ এজেন্সীগুলো সিএনএনএর আইরিপোর্টের মতো পাঠকের সাথে হাত মিলিয়েছে সরাসরি। আজ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সেই ‘পাঠকের পাতাকে’ নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়। বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগের নতুন এই মাত্রা একেকজনের ব্রডকাস্টিং স্টেশনে পরিনত হয়েছে।
১৫৯.
ঢাকার লেটেস্ট হ্যাপেনিংস পাচ্ছেন ওই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের নিউজফীড থেকে। বন্ধুর বিয়ে থেকে শুরু করে কোন রাস্তায় কে কি দেখেছে তাও আসছে সেই নিউজফীডে। পাওয়ার টু দ্য পিপল, বলে কথা। মেনস্ট্রিম নিউজের লিংক আর কাস্টমাইজড খবরের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটা হট ব্রডকাস্টিং স্টেশন – প্রায় সবার জন্য। হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকাতে স্টাটাস আপডেটের ভিড়ে ওর মতামত আসছে প্রতিনিয়ত। ওল্ড হ্যাবিট ডাই হার্ড, মতামতগুলোই পড়ি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। আর সেটা নিয়ে আমার এই লেখা। সমস্যা নিয়ে একটা স্টাটাসের পাশাপাশি সবার মতামতগুলো পড়লে এর আশিভাগই হয় ‘দোষারোপ’ সংক্রান্ত। মানে কার দোষে হলো এটা? এটা দোষের নয় কিছু, তবে সবাই দোষারোপ করেই ক্ষান্ত। ব্লেমগেম চলতে থাকে নিরন্তর। সমস্যাটার অ্যাকশন পয়েন্ট কি অথবা সমস্যাটার সমাধানে কি করণীয় সেটা ভুলে যাই আমরা। সমস্যার শুরুটা সরকার দিয়ে শুরু হলে তার ‘ব্যাশিং’ স্টেটমেন্টেই সবাই ক্ষান্ত, কনস্ট্রাকটিভ ডিসকাশন হয় কম।
১৬০.
কারণ বের করতে নামলাম এক সপ্তাহের রিসার্চে। মনস্তাত্ত্বিক। প্রথমেই পেলাম এই চীনা প্রবাদবাক্যটা। অন্ধকারের অভিসম্পাত না করে বরং মোমবাতিটা জ্বালানো জরুরী। কার দোষে অন্ধকার হলো সেদিকে না যেয়ে উচিত আসল কাজটাই করে ফেলা। অন্ধকার তাড়ানোর জন্য মোমবাতিটা জ্বালানোটাই হচ্ছে অ্যাকশন পয়েন্ট। এরপর কার ‘দোষে’ আর কিভাবে অন্ধকার হলো সেটা নিয়ে ‘পিএইচডি’ করলে কারো সমস্যা থাকার কথা নয়। সমাধানটা তো হয়েছে আগে। মূল প্রশ্ন, সমস্যার সমাধানে মানুষ কাজটা না করে দোষারোপের পথটা বেছে নেয় কেন?
১৬১.
প্রথমত, দোষারোপ করাটা সবচেয়ে সহজ। আমার দ্বায়িত্বটা পার করে দিলাম আরেকজনের ঘাড়ে। থাকলো না কোনো পিছুটান। সমাধান করতে গেলে ওর দায়িত্বটা নিতে হবে আমাকে। আবার সমস্যার সমাধানের চিন্তা করতে গেলেও সমস্যাটাকে নিজের করে নিতে হবে আগে। দেশের প্রতিটা সমস্যাকে নিজের সমস্যার মধ্যে নিয়ে নিলে দোষারোপের গল্প থাকবে না। কারণ, ওই সমস্যাটা আমারো সমস্যা। আমার কিছু করার আছে এতে। দ্বায়িত্ব নিলেই আমিও পার্ট অফ দ্য সল্যুশন। আর দায়িত্ব না নিলে ওটা অন্য কারো সমস্যা। আশা করতে থাকি সমস্যাটা অন্যদের, সমাধান করবে বাকিরাই। এগোচ্ছি না আমরা, হচ্ছে না ভাগ্য পরিবর্তন। ঘটনা ঘটছে সেই দুধ দিয়ে পুকুর ভরানোর মতো। অত দুধের মধ্যে আমার এক কলসী পানি যাবে কি বোঝা?
১৬২.
আমি আশাবাদী। পাল্টাচ্ছি আমরা। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের অভিনব ব্যবহার মুগ্ধ করছে প্রতিনিয়ত। এই কর্মসংস্থানের দুর্যোগে সরকারকে দোষারোপ না করে কিছু দ্বায়িত্বশীল মানুষ এগিয়ে এসে তৈরী করেছেন “চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব” গ্রুপ। সমস্যাটাকে তারা চালান করে দেননি সরকারের কাছে। দ্বায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছেন সমস্যা সমাধানে। বড় কথা, ধরে নিয়েছেন নিজের সমস্যা হিসেবে। দোষারোপ করে যে আগানো যায়না সেটা ভালোভাবেই বোঝেন এই দ্বায়িত্বশীল মানুষগুলো।
১৬৩.
দরকারের সময় রক্তের যোগান পাওয়া যে কতো বড় সমস্যা সেটা ভুক্তভোগীরাই জানেন ভালো। এটা একটা সমস্যা, দেশের সমস্যা। তবে কেউ কেউ এটাকে নিজের সমস্যা মনে করে নেমে গেছেন এর সমাধানে। করছেন সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বোত্তম ব্যবহার। তবে অবাক করেছে এই মেয়েটা। ফারহিন সোহান কবির লিটা’র ফেইসবুক পেজের সর্বশেষ আপডেট নিয়ে আসি বরং (সংক্ষেপিত)।
#মিশন_প্রতিদিন_৪_ব্যাগ_বি_পজিটিভ_ঢাকা।
একজন দুরন্ত তরুণ রাজু ভাই। কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছেন। এখন তাঁর সময় নবপরিণীতাকে নিয়ে গল্পের চেয়েও সুন্দর দিন কাটানোর।
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছেন রাজু ভাই। প্রায় ৩০ ব্যাগের মতো রক্ত দেয়া হয়েছে তাঁকে। রক্তকোষ গুলো ভেঙে যাচ্ছে তাঁর। ডাক্তার বলেছে আবার ৩০ ব্যাগ রক্ত দিতে হবে, ধীরে ধীরে, প্রতিদিন ৪ ব্যাগ করে।
ফোনঃ 01670865036 সাইদুল বাশার হিমেল (রাজুর ভাই)
সবাই মিলে কি পারবো এই ভাইকে রক্ত জোগাড় করে দিতে?? বি পজেটিভ বলে যারা রক্ত দিতে সুযোগ পান না, তাঁদের জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর কি হতে পারে??
কপি পেস্ট করুন, শেয়ার করুন, নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে আসুন। রাজু ভাইর জন্য, প্রতিদিন ৪ ব্যাগ বি পজিটিভ।
১৬৪.
‘আমরাই বাংলাদেশ’ নামে একটা কমিউনিটি পেজ দেশের কিছু কিছু সমস্যা নিয়ে ঘামাচ্ছে মাথা। তৈরী করেছে ডোনারদের অনলাইন ডাটাবেস। সমস্যাগুলোকে নিজের করে নিয়েছে তারা। দেখুন উন্নত দেশগুলোতে, সরকারের পাশে কর্পোরেটদের ‘সিএসআর’ পাল্টে দিচ্ছে সামাজিক দায়বদ্ধতার পুরনো হিসেব। ‘বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে’র অডিটেড ফিনান্সিয়াল ফিগার নামালাম এইমাত্র, খরচ বাদে শুধুমাত্র দানই করেছেন দুই লাখ বিশ হাজার আটশো কোটি টাকা (২৭.৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার)| টাকা নিয়ে বসে আছে তারা, নিতে পারছে না দেশগুলো। মানুষের জীবন পাল্টানোর আইডিয়ার অভাব বড়। বরং আফ্রিকাই ছাড় করিয়েছে অনেক টাকা।
১৬৫.
চীনা প্রবাদবাক্যটাকে জনসাধারণের সামনে প্রথম নিয়ে আসেন একজন ইংলিশ আইনজীবী, পিটার বেনেনসন। উনিশশো একষট্টি সালে – তার এক বক্তৃতায়। চিনতে পেরেছেন নিশ্চয়ই। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা। আমার ধারণা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের লোগোতে মোমবাতিটা এসেছে ওখান থেকে।
কাজটাই আসল কথা। সব সমস্যাই আমাদের নিজেদের সমস্যা। ব্লেমগেম নয় আর – কি বলুন?
ধন্যবাদ :)
LikeLike
লিটা আপু , ম্যাঁও পেজ এবং আরো চারটি গ্রুপ দুর্দান্ত কিছু কাজ করে যাচ্ছে রক্ত সংগ্রহ নিয়ে।
আমরাই বাংলাদেশের ১১তম এপিসোডে আমি ছিলাম , গ্রুপ লিঙ্কিং করে বোতল বাতি নিয়ে কাজ করার একটা উদ্যোগ এ। একদিন সবগুলো ছোট ছোট উদ্যোগ লিঙ্কড হবে, লীডারশীপ , ইনস্পাইরেশান ছড়িয়ে যাবে … স্বপন দেখি স্বপন দেখি … কিছু একটা দাঁড়িয়ে যাবে।
LikeLike