One trouble with being efficient is that it makes everybody hate you so.
― Bob Edwards
৩১২.
স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কথা বলার আগে ওর ওড়ার রীতিনীতি নিয়ে না বললেই নয়। বুঝতে হবে স্পেকট্রাম পানির মতো জিনিস খানিকটা, মানিয়ে রাখাটা কিছুটা সমস্যা বৈকি। দেশগুলোর স্পেকট্রাম রিসোর্স একধরনের হবার ফলে সীমান্তে এর ম্যানেজমেন্ট কিছুটা সমস্যা হলেও দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। এর উদাহরন আছেও ভুরিভুরি। দেশগুলোর মধ্যে ভালো সম্পর্ক না থাকলে সীমান্তবর্তী মানুষগুলোর টেলিযোগাযোগের ভালো সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। দুদেশের মধ্যে তরঙ্গের ইন্টার্ফিয়ারেন্স কমানোর জন্য ‘ক্রস বর্ডার স্পেকট্রাম কর্ডিনেশন’ মিটিং হতে হয় মাঝে মাঝেই। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে সরকার এব্যাপারে মাথা ঘামায় না আর। গাইডলাইন করে ছেড়ে দিয়েছে আগে ভাগেই। কোম্পানিগুলো তাদের কাজের সুবিধার্থে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে স্পেকট্রাম। ব্যবস্যার স্বার্থে সবাই এক। এটাই স্বাভাবিক।
৩১৩.
স্কুলে অন্য সব ক্লাসে ঘুম লাগলেও এরিয়েল প্রপাগেশন ক্লাসে চোখ থাকতো টান টান। চোখে পানি দিয়ে আসতাম আগে থেকেই। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল কিভাবে ওড়ে অর্থাৎ প্রোপাগেট করার ধারণাটাই ভালো করে দিতো মনটাকে। স্পেকট্রাম আসলে চলে তিন ধারণার ওপর। গ্রাউন্ড ওয়েভ সেগমেন্টটা চলে পৃথিবীর মাটির ওপর দিয়ে। তিন মেগাহার্টজের নিচের তরঙ্গগুলো মাটির ওপর দিয়ে যেতে পারে অনেক দুরে। ফর্মুলা দেখলে বোঝা যায় যতো বেশি কিলোহার্টজ বা মেগাহার্টজ ততো কম ওয়েভলেংথ, মানে ততো কম দূরুত্বে যেতে পারে রেডিও সিগন্যাল। আবার যতো বেশি বেশি কিলোহার্টজ বা মেগাহার্টজ ততো বেশি দুর্বল হয়ে যায় সিগন্যাল – বিশেষ করে মাটির ওপর দিয়ে যাবার সময়। সর্বোচ্চ দুরত্ব – ধরে নিন পঞ্চাশ মাইলের নিচে। এটা হচ্ছে নিশ্চিত ধরনের যোগাযোগ তরঙ্গ। মিডিয়াম ওয়েভ রেডিওর কথা মনে আছে তো?
৩১৪.
স্কাই ওয়েভ মানে হচ্ছে ওই স্পেকট্রাম যেটা আকাশে বাড়ি খেয়ে ফিরে আসে। ফলে এর অসীম দুরত্ব পার হবার ক্ষমতার কারণে এই শর্টওয়েভ রেডিওগুলো চলে এই স্পেকট্রামের ওপর। কম ওয়াট ক্ষমতা নিয়ে এর ওড়ার ক্ষমতা নিঃসন্দেহে ইর্ষনীয়। দশ বারো ওয়াট ক্ষমতা নিয়ে অর্ধেক পৃথিবী ঘোরার মতো ক্ষমতা আছে তার। ওর একমাত্র ভয় হচ্ছে সৌরঝড়। আইনোস্ফীয়ারের ওজন লেয়ারে রিফ্র্যাক্টিভ ইনডেক্সের কারণে তরঙ্গটা ফেরে বলে সৌরঝড় ওজন লেয়ারের আইয়োনাইজড পার্টিকেল খেয়ে ফেললেই হয় বিপত্তি। আর সে কারণে এটা সর্বোচ্চ দুরত্বে গেলেও নিশ্চিতভাবে যোগাযোগের জন্য আরো কয়েকটা তরঙ্গ ব্যবহার করতে হয়। আগেও লিখেছিলাম এটা নিয়ে।
৩১৫.
স্পেস ওয়েভ কিছুটা গ্রাউন্ড ওয়েভ হলেও এটার গল্প অন্য জায়গায়। পৃথিবীব্যাপী ফাইবার অপটিক্যালের প্রচলন বাড়ার ফলে স্কাই ওয়েভের প্রয়োজন কমে গেছে অনেকাংশে। মিলিটারি অপারেশন, ন্যাভিগেশন, মেরিন কমিউনিকেশন আর কিছু দরকারী কাজ ছাড়া পৃথিবীব্যাপী যোগাযোগের জন্য স্কাই ওয়েভের ব্যবহার গেছে কমে। বরং তার জায়গায় স্পেস ওয়েভ মানে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য মাইক্রোওয়েভ অর্থাৎ তরঙ্গের উপরের দিকে পড়ছে সবার চোখ। গত এক দশকে মোবাইল পেনিট্রেশন পাল্টে দিয়েছে সবার ধারণা। প্রয়োজন যুক্ত করা সবাইকে, ছোট জায়গায়। দূরত্বটা নিয়ে সমস্যা নয়। একশো মেগাহার্টজ থেকে চার পাঁচ গিগাহার্টজের স্পেকট্রাম হচ্ছে গিয়ে আজকের মোবাইল ব্রডব্যান্ডের কাঁচামাল।
৩১৬.
স্যাটেলাইটের একই গল্প। ওয়েভলেংথ হতে হবে কম। মানে প্রয়োজন ওপরের দিকের ফ্রিকোয়েন্সির। এর সব ধরনের রিসার্চ আর ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে এই ব্যান্ডটাকে ঘিরে। তরঙ্গের মধুরতম অংশ কিন্তু এই অংশে। মোবাইল আর স্যাটেলাইট ইন্ডাস্ট্রির মারামারি তিন গিগাহার্টজের কিছু অংশ নিয়ে। স্যাটেলাইটের তরঙ্গের ব্যাপারটা দেশের ভেতরে থাকেনা বলে এটার সমন্বয় করতে হয় একটা ইউএন এজেন্সি থেকে। সেটা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন। এই মধুরতম মানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যান্ড নিয়ে আসছি সামনে।
মধুরতম মানে? সব আছে এখানে – টুজি, থ্রিজি, ফোরজি, এলটিই, ওয়াইম্যাক্স, ওয়াইফাই, এফএম ব্রডকাস্টিং, মোবাইল টিভি, ডিজিটাল টেরেস্ট্রিয়াল টিভি, ডিজিটাল অডিও ব্রডকাস্টিং (ডিএবি), আরো বলবো? কি নেই এখানে?
[ক্রমশঃ]
এমন আরো লেখাচাই।
LikeLike
ধন্যবাদ। লিখছি সামনেই।
LikeLike