Feeds:
Posts
Comments

Posts Tagged ‘থ্রিজি’

Dreamers are mocked as impractical. The truth is they are the most practical, as their innovations lead to progress and a better way of life for all of us.

― Robin S. Sharma

১১০.

ফিরে আসি ‘ক’ দেশের থ্রিজি প্যাকেজের দাম নিয়ে। আমার অভিজ্ঞতায় অনেক দেশকে দেখেছি স্পেকট্রামের উচ্চমূল্যের অংশবিশেষ থ্রিজির প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করতে। কি আর হবে? ডিজাস্টার। গ্রাহক ভয় পেয়ে ফিরিয়ে নিয়েছিলো মুখ। থ্রিজি হচ্ছে অল এবাউট ‘এক্সপেরিয়েন্স’। ‘এক্সপেরিয়েন্স’ ভালো পেলে টাকা দিতে কসুর করবে না গ্রাহক। প্রতারিত হলে তাকে আবার এমুখো করা দুস্কর। মোবাইল ব্রডব্যান্ডের ‘কোয়ালিটি অফ সার্ভিস’ একটা বিশাল ব্যাপার হয়ে দাড়াবে এখানে, এই ‘ক’ দেশে। কিন্তু এই ‘এক্সপেরিয়েন্স’ দেবার জন্য থ্রি প্যাকেজের প্রথম দিকের দামগুলো খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ। গ্রাহকের ‘পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি’ বুঝলে ভালো।

১১১.

এখানে একটা চ্যালেঞ্জ আছে রেগুলেটরর জন্য। বড় অপারেটর (যদি থাকে) যারা বাজার দখল করে রেখেছে অর্ধেকের বেশি, তাদের প্রিডেটরী প্রাইসিং অন্যদের বাজার শেষ করে দিতে পারে। প্রিডেটরী প্রাইসিং হচ্ছে আসল মূল্যের অনেক কমে বিক্রি করা – যেটা আইনগতভাবে অ্যান্টি-কম্পিটিটিভ। অনেক দেশে এটা প্রতিযোগিতা আইনে বেআইনি। বড় অপারেটর আর রেগুলেটরকে একটা সুক্ষ ভারসাম্য রাখতে হবে যাতে অপেক্ষাকৃত ছোট অপারেটরের ব্যবস্যা বিপদে না পড়ে। দাম আসল দামের কম হবে সেই গ্রাহকসংখ্যার ‘ক্রিটিক্যাল ম্যাস’ ধরতে গিয়ে, [পরে দেখুন] – বাজারের পতন বা মার্কেট ফেইল্যুর না হবার দিকেও নজর দিতে হবে।

১১২.

ইউনিলিভার এটা বোঝে খুব ভালোভাবেই। দু টাকার মিনিপ্যাক বা ‘শ্যাশে’ প্রাইসিংয়ের কোটি টাকার মার্কেট রিসার্চ ব্যর্থ যায়না কখনো। এই ‘ক’ দেশের ক্ষুদ্রঋণের উপর একটা বিদেশী ইভেন্টে এক বক্তার কথা মনে পড়ছে এখন। ‘বটম অফ দ্য পিরামিডের’ একজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি।

আপনাকে বাসা থেকে টাকা জমা দেবার সুযোগ দেয়া হলে কতো টাকা জমা দিতে পারবেন আজ?

দশ টাকা, তার উত্তর।

প্রতি সপ্তাহে?

দশ টাকা।

প্রতি মাসে?

ভাবলেশহীন একই উত্তর, দশ টাকা।

১১৪.

দেশভেদে মোবাইল অপারেটররা ভালোমতোই জানেন যে থ্রিজি ডাটা প্যাকেজের ‘ব্রেকইভেনে’ পৌঁছাতেই দরকার একটা ‘ক্রিটিক্যাল ম্যাস’| সেই সোনারকাঠির গ্রাহকসংখ্যাও অপারেটর ভেদে ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সাধারণ ভাষায়, বিজনেস কেসের বার চার্টের যেই গ্রাহকসংখ্যার পর একটা হকিস্টিক ফেনোমেনন দেখা যায় সেটাই হচ্ছে তাদের জন্য ‘ক্রিটিক্যাল ম্যাস’| ওই গ্রাহকসংখ্যা পাবার জন্য প্যাকেজের প্রথমদিকের প্রাইসিং গুরুত্বপূর্ণ বটে। সুবিধাজনক প্রাইসিং এর ঠিক পরে চলে আসে গ্রাহকদের ধরে রাখার মতো ভয়ংকর কষ্টকর কাজ। ভালো সার্ভিস না পেলেই ওমুখো হবে না মন ভাঙ্গা গ্রাহক। আবার গ্রাহক না পেলে ভালো সার্ভিস দেয়া দুস্কর। সাইকেল বলে কথা। আবার ওই গ্রাহকের সংখ্যা পাবার উপর নির্ভর করছে তাদের বিজনেস কেস। কারো জন্য সেটা হতে পারে দু লাখ।  আবার বিশ লাখও অনেকের ‘ভয়াবহ’ ইনভেস্টমেন্টকে সাহায্য করছে না। এজন্য লাগবে উদ্ভাবনী শক্তি!

ইনোভেশন নিয়ে থাকুন সবাই, আসছি সামনে!

Read Full Post »

Healey’s First Law Of Holes: When in one, stop digging.

Denis Healey

১০৫.

প্রযুক্তি এতোই এগিয়ে আসলো যে একসময় দেখা গেল এক স্পেকট্রাম ব্যবহার করে কয়েকজন মিলে দিতে পারছে সেবাটা। অনেক দেশের আয়ের একটা বড় অংশ হবার কারণে রেগুলেটর এই স্পেকট্রাম ভাগাভাগির ব্যাপারে নিয়ে এলো নতুন নিয়ম। যাই করো –ভাগাভাগি করা যাবে না স্পেকট্রাম। তবে ভাগাভাগি করা গেলে খরচ আসতো আরো কমে। সেটার মধ্যপন্থা হচ্ছে স্পেকট্রাম ট্রেডিং। সেকেন্ডারি মার্কেটে অন্যের বাড়তি স্পেকট্রাম কিনে যে কোনো অপারেটর তার সুবিধামতো সার্ভিস দিতে পারতো। কিছু দেশে সেটারও আইনগত ভিত্তি দেয়া হয়নি। বিজ্ঞান তো ওই অবস্থানে আটকে থাকবে না। অপারেটররাও বসে নেই। তাদের কথা ‘মানছি – ভাগাভাগি করা যাবে না স্পেকট্রাম। হাউ এবাউট নোড-বি?’ নোড-বি হচ্ছে থ্রিজির বেসস্টেশন। ‘রেডিও এক্সেস নেটওয়ার্ক? অথবা এন্টেনা? বা ফীডার ক্যাবল? কিংবা আমরা সবাই মিলে যদি কিনি বিলিং প্ল্যাটফর্ম?’ দেখা গেছে এই নেটওয়ার্কেই তাদের খরচের তিরিশ শতাংশের বেশি যায় চলে। বাকিটা লাইসেন্স, স্পেকট্রাম, মার্কেটিং, ইন্টারকানেকশন ইত্যাদির খরচে। যেখানে ব্যবস্যা নেই বা কম সেখানে সবার আলাদা যন্ত্রপাতি আর কাভারেজ থাকার বাধ্যবাধকতা খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে সবার। দরকার কাভারেজ, দিচ্ছি সেটা সবাই মিলে। রেগুলেটরের সন্দেহ দানা বেঁধে ওঠে।

১০৬.

যুক্ত হলো নতুন টার্মিনোলোজি। একটিভ শেয়ারিং। ট্রাফিককে পাঠানোর জন্য নেটওয়ার্কের যে অংশগুলো জন্য সরাসরি কল প্রসেসিংয়ের সাথে আছে সেটাকে একটিভ শেয়ারিং বলা যেতে পারে। এখানে নেটওয়ার্কের ইলেকট্রনিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলো ভাগাভাগির কথা চলে আসে। যতো একটিভ শেয়ারিং ততো কম লাগবে ক্যাপেক্স মানে ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার। ততো কম বৈদেশিক মুদ্রা বের হবে দেশ থেকে। গ্রাহকদের হাতের থ্রিজি প্যাকেজের দামটাও সে অনুপাতে আসবে কমে। আমার ধারণায় স্পেকট্রাম বিক্রি হয়ে গেলে একটিভ শেয়ারিং সুবিধা দিলে সবারই লাভ। দেশে পাঁচ ছয়টা থ্রিজি অপারেটর থাকলে সবাইকে কিনতে হবে থ্রিজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার। মানে পাঁচ ছয়টা আলাদা আলাদা থ্রিজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার। আবার একটিভ শেয়ারিং সুবিধা দিলে সবাই মিলে কিনতে হবে মাত্র দু থেকে তিনটা থ্রিজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে অপারেটরের যাবার কথা এক বছরে, শেয়ারিং হলে সবাই মিলে সেটায় যাবে চার মাসে। দ্রুততম রোলআউট আশা করলে এর বিকল্প নেই। টাওয়ার আর বিটিএসের জঙ্গল আসবে কমে।

১০৭.

আমার অভিজ্ঞতায় দুটো অপারেটর সাইট ভাগাভাগি করলেই চল্লিশ শতাংশ কমে আসে বিটিএস ইনস্টলেশন। কমে আসবে বিদ্যুত খরচ। ব্যবহারকারীদের প্যাকেজের দাম কমে আশার কথা। সেটা কমে আসবে প্রতিযোগিতায়। এছাড়া সব অপারেটরের ব্যালান্স শিট নিয়ে তাদের এবিটডা মার্জিন দেখলে ধারনাটা পরিস্কার হবে। এটা যেকোনো কোম্পানির লাভের ব্যাপারে চমত্কার একটা ধারণা দেয়। লাভ করতে চাইবে সবাই, সেটার সাথে দক্ষতা আর কস্ট ওরিয়েন্টেশনের ব্যালান্স থাকলে সবারই লাভ। গ্রাহক পয়সার বিনিময়ে সঠিক জিনিষটা পাচ্ছে কিনা সেটাই দেখবে রেগুলেটর। বাকি সময় থাকবে অদৃশ্য রোলে। ‘গ্রাহক স্বার্থ আর প্রতিযোগিতা’ মানে কনজিউমার এন্ড কম্পিটিশন ব্যুরো থাকবে ফোরফ্রন্টে।

১০৮.

সেদিন বেশি দুরে নেই যখন ‘ক’ দেশের সব কোম্পানি তার নেটওয়ার্ক আর্মটাকে আলাদা করে ফেলবে ওর অপারেশনাল আর্ম, যারা গ্রাহকসেবা আর প্যাকেজ দেখবেন তাদের থেকে। খরচ কমাতে এর জুড়ি নেই। আবার সব কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্ক আর্ম যুক্ত হয়ে তৈরী হবে নেটওয়ার্ক কোম্পানি সংক্ষেপে ‘নেটকো’| নতুন স্পেকট্রাম পাবার পর সবাই মিলে তৈরী করবে একটা ‘নেটকো’| পুরো দেশকে একটা সিঙ্গেল রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নেটওয়ার্কের আওতায় এনে তৈরী করতে চাইবে একটা দক্ষ ‘ফেইলসেফ’ নেটওয়ার্ক। সেটা হয়তোবা চালাবে জয়েন্ট ভেঞ্চার বা ম্যানেজড সার্ভিস কোম্পানি, অপারেটর নয়। গ্রাহকেরা সব জায়গায় পাবেন সবার নেটওয়ার্ক। অপারেটরদের মধ্যে চালু থাকবে ন্যাশনাল রোমিং। কোনো জায়গায় কারো কাভারেজ না থাকলেও নেই সমস্যা। অন্যের মানে যার সেখানে কাভারেজ আছে তার বিটিএসের উপর দিয়ে ওর এয়ারটাইম কিনে নিজের সেল লেভেল প্যারামিটার বসিয়ে ফিজিক্যাল কাভারেজ না থাকা সত্বেও সে থাকবে উপস্থিত। কোম্পানিগুলো ভেতরে এধরনের এগ্রিমেন্ট নিয়ে বর্তমান রেগুলেটররাও খুব একটা মাথা ঘামায়না এখন। অপারেশনাল লেভেলে ‘অপকো’ কোম্পানিগুলো আলাদা থাকে তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য। আমার প্যাকেজ আমার কাছে। সেটাকে সবাই মিলে বাজারে নিয়ে গেলে মনোপলি হয়ে যাবে। সেটা হতে দেবে না রেগুলেটর। সেটা অপারেটররাও চাইবে না কখনো। অ্যাপ্লিকেশন মানে অ্যাপ পাল্টাচ্ছে সবার ফোকাস। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসটা নতুন দিগন্তে নিয়ে যাচ্ছে ‘ক’ দেশটাকে।

১০৯.

দক্ষতা বাড়ানোর জন্য মালয়েশিয়ার টেলিযোগাযোগ রেগুলেটর ‘এমসিএমসি’ অপারেটরদের মধ্যে নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের জন্য বৃহত্তর সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ডাক দিতেই চলে এলো ম্যাক্সিস আর রেডটোন ইন্টারন্যাশনাল। চুক্তি হলো ইনফ্রাস্ট্রাকচার আর স্পেকট্রাম ভাগাভাগির। দুহাজার বারোর শুরুতে মালয়েশিয়া ব্যাপী ফোরজি এলটিই নেটওয়ার্ক বসাতে দুই অপারেটরের খরচ কমে গেল অর্ধেক। সময়ও লাগবে অর্ধেক। বেসস্টেশন আর টাওয়ারের সংখ্যা আসলো কমে। তাদের ভাষ্যমতে দুটো মোবাইল অপারেটরের আলাদাভাবে সেই ‘ভয়াবহ’ ইনভেস্টমেন্ট থেকে বাঁচিয়েছে তাদের এই চুক্তি। সেটার প্রভাব পড়েছে গ্রাহকের ওপর। তক্কে তক্কে ছিলো ‘ইউ মোবাইল’ বলে আরেকটা কোম্পানি। সেই বছরেই চুক্তি হলো তেরোশো থ্রিজির রেডিও এক্সেস নেটওয়ার্ক ভাগাভাগি করার – ওই ম্যাক্সিসের সাথেই। ‘ইউ মোবাইল’কে প্রত্যক্ষভাবে বসাতে হলো না সেই তেরোশো থ্রিজির রেডিও এক্সেস নেটওয়ার্ক। কমে আসলো টাওয়ারের জঙ্গল। ‘ইউ মোবাইলের’ নেটওয়ার্ক কাভারেজ বেড়ে গেল চার থেকে পাঁচগুন – রাত শেষ না হতেই।

ভাবা যায়?

Read Full Post »