If you spend too much time thinking about a thing, you’ll never get it done.
― Bruce Lee
৩১৭.
স্পেকট্রাম নিয়ে মাতামাতির পেছনে কারণ হাজারো। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্রডব্যান্ড কিভাবে কাজ করছে সেটা নিয়ে কম লেখা হয়নি। আমিও লিখেছি অনেকবার। যতো বেশি গতি, ততো বেশি ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান যাবে অনলাইনে। আর অনলাইন মানে যা চাইবেন তাই নিয়ে করতে পারবেন ব্যবস্যা। অনলাইন হচ্ছে বিশাল প্ল্যাটফর্ম যেখানে সবাই সমান। বিশ্বাস হচ্ছে না? কি করতে চান আগে ঠিক করুন। আপনি কার্টুন আঁকেন ভালো। খুব ভালো কথা। টি-শার্ট বানিয়ে বিক্রি করুন বাসা থেকেই। অথবা, ভালো আর্টিকেল লেখেন। তাহলে আর্টিকেল লিখে বা অন্যের জন্য রিভিউ লিখে পয়সা বানান। ওর জন্য দরকার অনলাইন এক্সেস। একটা ফ্রি ওয়েবসাইট আর সোশ্যাল মিডিয়ার একটা একাউন্ট। সবই বিনামূল্যে। তবে এজন্য প্রয়োজন অনলাইন এক্সেস। সস্তায়। কীওয়ার্ড কিন্তু – সস্তা।
৩১৮.
প্রথম কথা হচ্ছে ক্যাপাসিটি। হাজারো মানুষকে দিতে হবে অনলাইন এক্সেস। ফাইবার অপটিক বিছিয়ে এগুলে সময় নেবে অনেক। প্রয়োজন ওয়ারলেস এক্সেস মানে আপনি যুক্ত হবেন বাতাসের ওপর। এক্সেস ডিভাইস কিনলেই আপনি কানেক্টেড। ওটিএ, ওভার দ্য এয়ার – প্লাগ ‘ন’ প্লে! এর জন্যই দরকার স্পেকট্রাম। দরকার সেধরনের স্পেকট্রাম যা হাজারো মানুষকে যুক্ত করতে পারবে একসাথে। একই জায়গায়। ওয়াকিটকির মতো হলে হবে না কিন্তু! ওইজন্যই বলা হচ্ছে ক্যাপাসিটির কথা। এমন স্পেকট্রাম যা কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে বেশি গতির সংযোগ দিতে পারবে। সেটা নিয়ে গবেষণা হয়েছে অনেক। বেশি স্পেকট্রাম দিলে সবই সম্ভব। তাহলে চ্যালেঞ্জ কোথায়? আগে আপনি তেত্রিশ কেবিপিএসের আইএসপির ডায়াল-আপ সার্ভিস ব্যবহার করতেন। মোবাইল আসাতে নয় কেবিপিএসের জিপিআরএস দিয়ে শুরু করেছিলেন কিন্তু। গত বত্সর আপনার দরকার ছিলো দুশো ছাপ্পান্ন কেবিপিএস, গতমাসে এক মেগাবিট – আজ দু মেগাবিট। গতি বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। স্পেকট্রাম তো বাড়ছে না আর।
৩১৯.
অত গতি চাইলে স্পেকট্রাম দরকার দুশো গুন। অতো বেশি স্পেকট্রাম নেই কোথাও। এর মধ্যে আছে স্যাটেলাইট, টিভি ব্রডকাস্টিং, পাবলিক সেফটি নেটওয়ার্ক (ও নিয়ে বিশাল আড্ডা হবে পরে), রেডিও, ন্যাভিগেশন আরো কতো কি। ধরে নিচ্ছি মোবাইল কমিউনিকেশন আমাদের জীবনকে আস্টে পিষ্টে আটকেছে ভালোভাবেই – তাই বলে অন্য ব্যাপারগুলো গুরুত্বহীন নয়। ফলে চলে এলো দক্ষতার সাথে স্পেকট্রামের ব্যবহারের কথা। এফিসিয়েন্ট ইউজ অফ স্পেকট্রাম। দরকার গবেষণা। যা তা গবেষণা নয়, বিলিয়ন ডলারের গবেষণা। হ্যান্ডসেটে বিলিয়ন ডলার – চিপসেটে আরেক বিলিয়ন ডলার – বেজস্টেশনে সমমানের ডলার, নেটওয়ার্ক রোলআউটে – আর বলবো না। ভেবে নিন।
৩২০.
সবাই শত শত বিলিয়ন ডলারের বিল করলে এন্ড ইউজার মানে প্রান্তিক ব্যবহারকারীর কি অবস্থা হবে? ও তো কিনতেই পারবে না। ওখানে চলে এলো একটা কীওয়ার্ড। ইকোনমি অফ স্কেল। ‘এক পিস মেড কারিগর ডেড’ ব্যাপারটার একদম উল্টো। বিলিয়ন ডলারের গবেষণা দিয়ে বানাতে হবে বিলিয়ন হ্যান্ডসেট। একরকমের বিলিয়ন চিপসেট। তাহলেই ওতো বড় লগ্নি কমাতে পারবে ব্যবহারকারীর খরচ। বিলিয়ন ডলারের গবেষণাকে ভাগ দিন ওর আউটকাম দিয়ে। আউটকাম হচ্ছে বিলিয়ন হ্যান্ডসেট আর ওয়ারলেস ডঙ্গল। প্রতিটা হ্যান্ডসেটের পেছনে গবেষনার খরচ পড়ছে এক ডলার করে। আর সেকারণেই হাজার টাকায় পাচ্ছেন মোবাইল হ্যান্ডসেট। ঘটনা অন্যখানে।
৩২১.
হ্যান্ডসেট, চিপসেট আর বেজস্টেশন বানালেন। সবগুলো যন্ত্র টিউন করা হয়েছে একটা স্পেকট্রামে। কে কিনবে এটা? আমার দেশে চলে স্পেকট্রাম ‘ক’, অন্যদেশে ‘খ’, ইউরোপে ‘গ’ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ঘ’| ফেঁসে যাবেন আপনি। গবেষণায় দেউলিয়া হয়ে যাবে আপনার কোম্পানি। বিলিয়ন ডলারের গবেষণা ক,খ,গ,ঘ স্পেকট্রাম নিয়ে করতে গেলে দাম হবে আকাশচুম্বী, কেউ কিনবে না হ্যান্ডসেট। চারটা ফ্রিকোয়েন্সিতে টিউন করাতে গেলে খরচ শুধুই বাড়বে না, প্রতিটা হ্যান্ডসেটে শুধুমাত্র গবেষনার খরচই আসবে চার ডলার করে। দুশো পঞ্চাশ মিলিয়ন হ্যান্ডসেট করে এক এক গবেষণা। এক একটা চিপসেট। পেলেন না ইকোনমি অফ স্কেল। প্রোডাকশন খরচ বেড়ে গেলে গ্রাহকের ফিরিয়ে নেবে মুখ।
৩২২.
একারণেই পুরো পৃথিবী চায় কাজ করতে এক ফ্রিকোয়েন্সিতে। গবেষণা একবার। যন্ত্র বানাও কোটিবার। সেখানেই চলে আসে ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন’, মানে চলবে সব জায়গায়। আজ হেডফোনের ৩.৫ মিলিমিটারের জ্যাকটা একেক দেশে একেকটা হলে কি হতো? জ্যাকটার তিনটা কন্টাক্ট পয়েন্টগুলো কয়েক মিলিমিটার সরে গেলেই বা কি হতো? সব কিছুর একটা মান নির্ধারণ করা থাকলে আমাদের জীবন কতো আনন্দের হতো, ভাবা যায়? স্পেকট্রামে এটাকে বলা হয় ‘হারমোনাইজেশন’, মানে যে স্পেকট্রামটা আমাদের দেশে মোবাইল কমিউনিকেশনে ব্যবহার হয় সেটা অন্য সব দেশের সাথে মিলিয়ে নিয়ে ব্যবহার শুরু করা। তা না হলে সীমান্তে শুরু হবে সমস্যা, হবে না রোমিং, আমাদের ব্যবহারকারীরা অন্য দেশে গিয়ে আর চালাতে পারবে না আমাদের হ্যান্ডসেট। চিন্তা করেছেন একবার? যে দেশেই যাচ্ছেন সে দেশেই কিনতে হচ্ছে নতুন করে হ্যান্ডসেট?
৩২৩.
যুতসই যুক্তি দেবো? তার আগে প্রশ্ন একটা। এ পর্যন্ত হ্যান্ডসেট পাল্টেছেন কটা? পাঁচটা – দশটা? ড্রয়ারে পড়ে থাকা ওগুলোর চার্জার কি করেছেন আপনি? ধারণা করা যায় কতো রিসোর্স নষ্ট করেছি আমি আপনি? চার্জারগুলো শুধুমাত্র পরিবেশ নষ্ট করেনি – কোটি কোটি টাকা খরচ করিয়েছে আমাদের। অযথাই। চার্জারগুলোর ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন’ করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতাম আমরা। ফোন বিক্রি হতো চার্জার ছাড়াই। যারা চাইতো – তারাই কিনতো আলাদা করে। চার্জারের আউটপুট ভোল্টেজ, জ্যাকের দৈর্ঘ্য প্রস্থ একধরনের হলে এক চার্জার দিয়েই জীবন পার। দেশগুলো বুঝতে পেরেছে অনেক পরে। মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির টাইপ অ্যাপ্রুভাল মানে ছাড়পত্রে বলে দিচ্ছে একথাগুলো। ইন্ডাস্ট্রির সায় আছে এতে। সেকারণে মাইক্রো-ইউএসবি চার্জার আসছে সব হ্যান্ডসেটে। ভোল্টেজ রেটিং পিসির ইউএসবির সমান। কিছুদিন পর চার্জার কিনতে হবে আলাদা। আমার কিন্ডলে তো চার্জারই দেয় নি। চার্জ করি পিসি থেকে। আইপডের একই অবস্থা। এমনিতেই হয় নি এগুলো।
৩২৪.
কোনো দেশ একা চলতে পারে না আজ। আর সেকারণে সামনেই আসছি ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ডিনেশন’ নিয়ে। এটা অন্য ধরনের যুদ্ধ। অন্যকে বাজার বানানোর যুদ্ধ! নিজ দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে নিয়ে দেশগুলো জড়িয়ে পড়ে বিশাল গেমপ্ল্যানে। যুদ্ধের আগমুহূর্ত পর্যন্ত ওদের এলায়েন্স ঠাহর করা দুস্কর। গেম থিয়রি নিয়ে পড়েছেন কখনো?
[ক্রমশঃ]
[…] […]
LikeLike