Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘Communications’ Category

Tagline: There’s so much to do in Bangladesh!

০১.

সেদিন দেখলাম নতুন একটা ব্যবসায়িক ফোরাম। নাম হচ্ছে “বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর ফেয়ার কম্পিটিশন”। ভালো উদ্যোগ। আরো আগে আসতে পারতো ব্যাপারটা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “ফেয়ার ট্রেড কমিশন” (এফটিসি) ঠিক এই কাজটাই করে সুস্থ প্রতিযোগিতার স্বার্থে। এফটিসিতে কমপ্লেইন মানে খবর আছে ওই কোম্পানি অথবা কোম্পানিগুলোর “সিন্ডিকেটের”। কোন কোম্পানির জিনিস কিনে প্রতারিত হয়েছেন? সেটাও আদায় করে দেবে কমপ্লেইন করলেই। তারপর তো জরিমানা আছেই। গ্রাহক স্বার্থ থেকে বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সবকিছুর খবর রাখে এই এফটিসি। ঘুরে আসতে পারেন ওদের সাইট থেকে। এইমাত্র দেখলাম ফোনে “ডু নট ডিস্টার্ব” নামে একটা বড় ট্যাবই রেখেছে গ্রাহকদের অচেনা কল থেকে রক্ষা করতে।

০২.

অস্ট্রেলিয়ান কম্পেটিশন অ্যান্ড কনসিউমার কমিশন (এ ট্রিপল সি) তো আরেক জিনিস। যেকোন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে জিজ্ঞেস করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন সাথে সাথে। গ্রাহক পর্যায়ে ফোনের প্রতি মিনিট বিল আসলে কতো হওয়া উচিৎ সেটার “কস্ট মডেলিং” করে থাকে এই কমিশন। নিয়মিত ভাবে। টেলিকম রেগুলেটর না হয়েও। তাদের কথা একটাই। কোন একটা কোম্পানির ভেতরের অদক্ষতা অথবা কিছু কোম্পানির সিন্ডিকেটের কারণে গ্রাহক কেন গুনবে বেশি পয়সা? তাহলে ট্যাক্স দেয়াই বা কেন? একটা দক্ষ কোম্পানি হলে ফোনের ‘আন্তসংযোগ’ বিল কতো হতো সেটাই বের করে ওই এক্সারসাইজ।

০৩.

অস্ট্রেলিয়া বিশাল দেশ। সেখানের বেশিরভাগ জায়গা খালি। মানে, মানুষ থাকে দুরে দুরে। এমন দেশে মোবাইল ব্যবসা ভয়ংকর কষ্টসাধ্য। যে হাইওয়ে দিয়ে দিনে একটা দুটো মানুষ চলে – সেখানে মোবাইল কাভারেজ দেয়া ব্যবসাবান্ধব নয়। দিতে হয় তবুও। সেখানে ‘ফ্লাগফল’ নিয়ে কম ঝামেলা হয়নি প্রথমে। মোবাইলে ‘ফ্লাগফল’ হচ্ছে প্রথম মিনিটের চার্জ বাকি মিনিট থেকে বেশি। বাংলাদেশেও ছিলো জিনিসটা। সমাধান করা হয়েছে মিনিট ‘পালস’ সহ। মানে, কথা বলেছেন এক মিনিট ১ সেকেন্ড, দাম নিয়ে নিলো ২ মিনিটের। এছাড়া, বাংলাদেশে কোথায় মানুষ নেই? বরং একেকটা বেসস্টেশন ইনভেস্টমেন্টে ক্যাপাসিটির সমস্যা। সংযোগ দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারে না যন্ত্র। এতোই মানুষ আমাদের এখানে! ওটা আরেকদিন!

০৪.

ওঁদের ধারণাটা নিয়ে ২০১১তে প্রায় দেড় বছর ধরে করা হয়েছিলো এই “কস্ট মডেলিং এক্সারসাইজ”। বাড়ি টাড়ি খেয়ে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম কয়েকবার। তবে, সন্তানের মতো আগলে রেখেছিলেন সংস্থার প্রয়াত চেয়ারম্যান। সবার সহায়তা নিয়েই ওই এক্সারসাইজে ফোনের বিল কমেছিল প্রায় ৩০%। আমার হিসেবে ওই প্রজেকশনে প্রতি মিনিটের দাম কমতে পারে আরো ২০%। নিজস্ব অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে ১৮ পয়সা + আইসিএক্স ৪ পয়সা = “২২+নিজের লাভ” পয়সা থেকেই শুরু হতে পারে একটা কল। নিজের নেটওয়ার্কে কল শুরু হতে পারে ০ পয়সা দিয়ে। বান্ডল অফারে। (পরে দেখুন হিসেবটা) পাশের দেশে ভয়েস কল হয়ে যাচ্ছে বিনামূল্য আইটেমে। মানেন না মানেন, এটাই ভবিষ্যত মডেল। ‘রিলায়েন্স জিও’ নিয়ে গুগল করলেই বুঝতে পারবেন কি ঘটনা হচ্ছে ওখানে।

০৫.

বাজারে ঠিক প্রতিযোগিতা আছে কিনা সেটার জন্য টেলিকম রেগুলেটরকে কাজ করতে হয় একটা ইনডেক্সের ওপর। এটাকে বলে “হারফিন্ডেল ইনডেক্স” (এইচএইচআই)। জিনিসটার একটা নাম আছে বিশ্বব্যাপী। সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি)। সাংবাদিক বন্ধুরা বলতে পারবেন ভালো। এই নীতিমালাটাও করা হয়েছে বাংলাদেশে। আমার সাত বছর রেগুলেটরে থাকার সময়ে। তবে প্রয়োগে প্রয়োজন প্রজ্ঞা। তা না হলে বাজারে বড়রা বড়ই হবেন আরো ছোটরা ছোটতর। গুগল করে দেখুন। এটা আছে অনেক অনেক দেশে। নাইজেরিয়াতে গিয়েছিলাম অনেক আগে – দেখলাম ওরাও জানে সবই।

০৬.

এইচএইচআই ছাড়াও ‘ওই স্পেসিফিক বাজারের স্ট্রাকচার’ আর ‘ব্যারিয়ার টু এন্ট্রি’ ইনডেক্স দেখলে পরিস্কার হবে অনেক কিছু। নতুনকে যদি অন্য কোন অপারেটরের ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়, সেটা সুস্থতার লক্ষণ নয়। ব্যারিয়ার টু এন্ট্রি’ মানে ব্যবসার শুরুতে কানেকশন চেয়ে না পাওয়া। তাহলে তো মোবাইল ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (এমভিএনও) অপারেটর চলবে না এদেশে। সব দেশেই ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস প্রোভাইডারদের নির্ভর করতে হয় মোবাইল অপারেটরদের ইন্টার-কানেকশনের ওপর। সেটার জন্য ওই ক্রিটিকাল ইন্টার-কানেকশন হতে হবে ‘কস্ট বেসড’। মুনাফা নয় ওই জায়গায়। দাম ঠিক করে দেবে রেগুলেটর। যেভাবে ঠিক করে দেয়া হয় সাবমেরিন কেবলের ইন্টারনেটের দাম। কারণ, ওই সাবমেরিন কেবলের বিকল্প নেই আর। এগুলো ‘বটলনেক’ ইনফ্রাস্ট্রাকচার। যে সেবার বিকল্প নেই, সেগুলোর রেগুলেশনে এগিয়ে আসতে হবে ওই মার্কেটের রেগুলেটর অথবা কম্পিটিশন এজেন্সীকে। হিসেব সোজা।

০৭.

ঠিক সেভাবেই নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় ভয়েস কলের ইন্টার-কানেকশনের দাম। যেটা ঠিক করা হয়েছিল ১৮ পয়সায়। শেষটা করা হয়েছিল ২০১৩তে। এটার অর্থ হচ্ছে মোবাইল, ল্যান্ডলাইন অপারেটররা একে অপরকে কল পাঠাতে হলে অন্যজনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করে গতি নেই কারো। সেজন্য এটাও একটা ‘ক্রিটিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’। সেটার দাম বেঁধে দেবে রেগুলেটর। হিসেব করে। ০১৭ থেকে ০১৮য়ে কল পাঠাতে গ্রামীন রবিকে দেবে ১৮ পয়সা। ৪ পয়সা দেবে মাঝের ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স)কে। ২২ পয়সা দিয়ে বাকিটা নিজের লাভ।

০৮.

কোন একটা স্পেসিফিক বাজারে (মোবাইল বাজার, ইন্টারনেট বাজার, হোলসেল, রিটেল বাজার) যার মার্কেট শেয়ার অনেক অনেক বেশি, সেটা ক্ষতি করে প্রতিযোগিতাকে। অন্যরা বাজারে পরে আসলে তারা পায়না পানি। উদাহরণ দেই বরং। আমাকে একটা রেগুলেটরি প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছিল থাইল্যান্ডে। প্রশিক্ষণ শেষে হাতে কলমে দেখানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হলো ওদের টেলিকম রেগুলেটরি কমিশনে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে তাদের নিয়ম পরিষ্কার। আসলেই তাই।

০৯.

ওদের নিয়ম অনুযায়ী, অপারেটরের (হোক সে মোবাইল অথবা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার), মার্কেট শেয়ার ২৫% ওপরে গেলেই তাকে বলা হবে “সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার” (এসএমপি)। তখন তার ওপর বর্তাবে আলাদা নিয়ম। ‘অ্যাকাউন্টিং সেপারেশন’ করে দেবে সার্ভিসগুলোর। মানে, একটার লাভ দিয়ে অন্যটাকে ক্রস-সাবসিডি দিয়ে চালাতে পারবে না ওই অপারেটর। নতুন কোন অফার নামাতে জানাতে হবে রেগুলেটরকে। নেটওয়ার্ককে খুলে দিতে হবে ‘ওপেন অ্যাক্সেস’ মডেলে। যাতে সবাই একটা নির্দিষ্ট দামের ভিত্তিতে ‘রাইড’ নিতে পারে ওই নেটওয়ার্কে। বান্ডলিং, মানে এটা নিলে ওইটা ফ্রি – দিতে পারবে না সে। তার ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং’ মানে ব্যবহার করতে দিতে হবে অন্য প্রতিযোগী অপারেটরদের। একটা নির্দিষ্ট দামের ভিত্তিতে। ওটা জানবে রেগুলেটর। সেটা শিখেছিলাম আরেকটা গুরূ দেশ থেকে। সিঙ্গাপুর। ওদের টেলিকম রেগুলেটর থেকে। পাগল করা কোর্স ছিলো ওটা। এমনই রেগুলেটর যে নিজেদের নাম পাল্টে রেখেছে “ইনফোকম ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি” নামে।

১০.

এসএমপি অপারেটরদের ‘প্রিডেটরি প্রাইসিং’ একেবারে না না। অর্থাৎ মনে হলো যে দাম অফার করলে বাজার থেকে নাই হয়ে যাবে প্রতিযোগীরা, সেটা করলে রেগুলেটরের খড়গ নেমে আসবে তার ওপর। ২০১২ সাল থেকে থাইল্যান্ডের ‘এআইএস’ আর ‘ডিট্যাক’ রেগুলেটর ঘোষিত ‘এসএমপি’ অপারেটর। অন্য অনেক অবলিগেশনের মধ্যে তাদেরকে ফেলা হয়েছে ‘মোবাইল ভয়েস প্রাইস রেগুলেশনে’। ফলে তাদের প্রতি মিনিট ভয়েস কলের সর্বোচ্চ দাম ঠিক করে দেয়া আছে ০.৯৯ বাথে। আবার যারা যারা থ্রিজি লাইসেন্স পেয়েছে (মানে যারা ২.১ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি পেয়েছে) তাদেরকে বাজারের গড় দাম থেকে ১৫% কমিয়ে রাখতে বলেছে রেগুলেটর। ওখানে আরেকটা জিনিস কাজ করে ভালো। ইনসেনটিভ রেগুলেশন। অপারেটর মুনাফা বাড়াতে পারে দক্ষতা দেখিয়ে। দক্ষতা মানে দেখাতে হবে নিজেদের ‘এফিসিয়েন্সি’। মানে কম ইনভেস্টমেন্টে বেশি সুবিধা। ফলে, গ্রাহককে গুনতে হবে কম পয়সা।

১১.

বাজারে প্রতিযোগিতার সুস্থ পরিবেশ না থাকলে অনেকগুলো জিনিস হয়। নষ্ট হয় অপারেটরদের ইনভেস্টমেন্ট। মারা যায় অনেকে। মার্জার অ্যাকুইজেশন হয় তখন। এতে অনেকে বলবেন, ‘সারভাইভাল ফর দ্যা ফিটেস্ট’। ব্যাপারটা তা না। এটাতো আর ‘ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’ নয়। নীতিমালা আছে এখানে। তবে প্রতিযোগিতা সুস্থ না হলে বাজারে বার বার টাকা হারিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেবে ইনভেস্টররা। চলে যাবে বাইরে। যেমনটি দেখেছি ওই চেয়ারে বসে। টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। যে যাই বলুক, উদ্যোক্তারাই কিন্তু চালায় দেশের অর্থনীতি। হোক সেটা দেশীয় অথবা বৈদেশিক বিনিয়োগ। দশটা পরিবারের চল্লিশটা মুখের খাবারের যোগান দেয় এই উদ্যোক্তা।

১২.

উদাহরন দেই বরং। আমাদের উপমহাদেশের একটা দেশ ‘ক’। কাকতালীয়ভাবে মিল হলে সেটা হবে দৈবচয়নের ভিত্তিতে। পুরো মোবাইল বাজার নিয়ে আছে ওখানের ছয়টা অপারেটর। পুরো রেভিনিউ মার্কেটের ৫০% এর কিছুটা বেশি মার্কেট শেয়ার দখল করে আছে প্রথম অপারেটর। মানে হচ্ছে – পুরো মোবাইল মার্কেট থেকে ১০০ টাকা আসলে সেটার ৫২ টাকা পায় ওই অপারেটর। বাকি ৪৮ টাকা মিলে মিশে পায় পাঁচ অপারেটর। বুঝতেই পারছেন প্রতিযোগিতার অবস্থা। ওই সময় একটা হিসেব করলো রেগুলেটর। বিদেশী কনসালটেন্ট নিয়ে। দেখা গেলো এই মোবাইল বাজারে ৩৫-৪০% হতে পারে নিচের ‘থ্রেসহোল্ড’ – মার্কেট শেয়ারে। মানে, ৩৫ থেকে ৪০% মার্কেট শেয়ার (যেটা রেগুলেটর মনে করে ভালো) হলেই সে হবে ‘এসএমপি’। এরকম ভাবে হোলসেল বাজারে ট্রান্সমিশন লাইসেন্সেও আসতে পারে এধরনের শতাংশের বেস লাইন।

১৩.

আমাদের প্রতিযোগিতা কমিশন নেই – সেটা নয় কিন্তু। আছে। আবার দেশীয় উদ্যোক্তা আর বৈদেশিক ইনভেস্টমেন্ট দুটোকে পরস্পর সাংঘর্ষিক করে দেখার সুযোগ কম। সেটার জন্য আমাদের দেখতে হবে বিশ্বখ্যাত “ডুইং বিজনেস” ইনডেক্সে কোথায় আমরা? কতোটা ব্যবসাবান্ধব আমরা? একটা ট্রেড লাইসেন্স অথবা একটা টেলিকম ব্যবসা খুলতে সময় লাগে কতো দিন? সরকার থেকে একটা ‘পারমিট’ বের করতে কতোটা অসহায় হতে হয় একেকজন উদ্যোক্তাকে? ‘গোল পোস্ট’ পাল্টায় কতো তাড়াতাড়ি? মানে, একটা নিয়ম মেনে ইনভেস্টমেন্ট করার পর কখন পাল্টায় আগের নিয়ম?

১৪.

খালি চোখে দেখা যায় না প্রতিযোগিতা’র অসুস্থতা। সেটা দেখতে লাগবে অনেকগুলো স্ট্যাটিসটিকাল ইন্ডিকেটর। আর প্রতিযোগিতাকে ব্যবসাবান্ধব করতে লাগবে ‘প্রজ্ঞা’। একটু ওলটপালট হলেই ক্ষতি হবে ব্যবসায়িক পরিবেশের। তিন বছর লেগেছে আমারই বুঝতে। আমার এই ব্যাপারটা কিছুটা ধীর, পুরনো প্রসেসর বলে হয়তোবা। যেমন, ‘প্রাইস’ অথবা ‘মার্জিন স্কুইজ’ দেখা যাবে না খালি চোখে। আপনি আরেকজনের কাঁচামাল নিয়ে যদি রিটেল মার্কেটে ব্যবসা করেন যেখানে ওই কাঁচামাল তৈরীর কোম্পানিও ব্যবসা করে পাশাপাশি। পারবেন তার সাথে? ধরা যাক, মোবাইল অপারেটর থেকে ‘ক’ টাকায় “ইন্টারনেট” কিনে ‘ভেহিকল ট্র্যাকিং সার্ভিস’ দেন আপনি। ওই বাজারে মোবাইল অপারেটর ওই একই ব্যবসা করলে টিকবে কি সেই উদ্যোক্তা? যতোই লাভ সে দিক সরকারকে। এরকম জিনিস আছে হাজারো।

১৫.

এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে দেশীয় উদ্যোক্তা আর বৈদেশিক ইনভেস্টমেন্টের মধ্যে ফারাক নেই বললেই চলে। বর্তমানে অনেক সফল দেশীয় উদ্যোক্তাদের ভেঞ্চারে বিনিয়োগ আসছে বিদেশ থেকে। আমার কথা একটাই। তৈরী হোক সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ। দেশে। বাড়ুক সবাই। একসাথে। হাজার হোক, আমাদের দেশ এটা। হোক এটা আরেকটা ‘ল্যান্ড অফ অপুর্চুনিটি’। বসে আছি ওই দিনের জন্য, যখন আমাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে থেকে পড়ে ফিরে আসবে বাংলাদেশে।

কেন?

১. ল্যান্ড অফ অপুর্চুনিটি ২. দেয়ার’স সো মাচ টু ডু ইন বাংলাদেশ! আসলেই তাই! এখানে করার আছে এতো কিছু, যে মাঝে মধ্যে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বসে থাকি ওই উত্তেজনায়!

ধন্যবাদ সবাইকে।

ট্যাগলাইন: দেয়ার’স সো মাচ টু ডু ইন বাংলাদেশ!


ডুইং বিজনেস http://www.doingbusiness.org
অস্ট্রেলিয়ান কম্পেটিশন অ্যান্ড কনসিউমার কমিশন http://accc.gov.au
ফেয়ার ট্রেড কমিশন https://www.ftc.gov
বাংলাদেশের রিপোর্ট: সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার https://goo.gl/IVbJSG

Read Full Post »

If you reveal your secrets to the wind, you should not blame the wind for revealing them to the trees.

— Kahlil Gibran

১২.

গুপ্তচররাই তথ্য লুকিয়ে ঘুরে বেড়ায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে। মাঝে মধ্যে ওই ‘কাগজ’ অন্যের হাতে পড়লেও পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় না বলে দেখি আমরা মুভিতে। অথবা স্পাই-থ্রিলার বইগুলো পড়তে গেলে। সচরাচর ধারনা করা হয়, স্নায়ু যুদ্ধের পর ব্যবহার শেষ হয়ে গেছে এই ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’র। ‘কেজিবি’র ‘শ্লীপার এজেন্ট’দের নিয়ে পড়তে পড়তে আমরাও হয়ে যেতাম একেকজন গুপ্তচর। ওই ছোটবেলায়। ছিলো না খালি নায়িকা। কেউ ‘নায়িকা’ হলেও সে আবার মিলাতে পারতো না গুপ্তচরদের ‘খল’ নায়িকার চরিত্রে। গুপ্তচর হবার খায়েশ ওখানেই শেষ! ‘অ্যানা’কে কেন মরতে হলো ‘গানস অফ নাভারোণ’য়ে – সেটা নিয়েই জল্পনা কল্পনা। বছরখানেক। ‘গ্রেগরি পেক’ আবার হতেও দিলো ব্যপারটা? আর যাই হই – গুপ্তচর নয়। সৃষ্টিকর্তা বোধহয় হেসেছিলেন আড়ালে।

১৩.

সত্যিকার অর্থে, স্নায়ু যুদ্ধের পর ব্যবহার বেড়েছে ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’র। বরং হু হু করে। কোম্পানীগুলো একটার পর একটা সাইবার আক্রমনের শিকার হয়ে হারাচ্ছিলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। গ্রাহকের ‘পরিচয়’ চুরি করে এমন সব কাজ হতে শুরু করলো সেটাতে শুধু টাকা হারানো নয়, হাজারো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে থাকলো সাধারণ মানুষেরা। কে কবে কাকে কি ইমেইল লিখেছিলো সেটাও চলে গেল ওয়েব সাইটে। মানুষের ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও চুরি করে বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা’ মানে মানুষের ‘প্রাইভেসী’ নিয়ে চরম টানাটানি। বিটিআরসিতে ‘সাইবার সিকিউরিটি টীম’ চালানোর সময় মানুষের হয়রানি দেখে শিউরে উঠতাম নিজেই। সাত বছর – লম্বা সময়। মানসিকভাবে কষ্ট পেতাম মানুষের ‘অসহায়ত্ব’ দেখে। মানুষের চোখের পানির সামনে নিজেকে অসহায় মনে হতো আরো। ওই কষ্ট থেকে বইটা ধরা। মিলিয়ন ডলারের ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ নিয়ে আলাপ করবো না আমি। ‘ওপেনসোর্স’ হাজারো ‘নিরাপত্তা প্রজেক্ট’ তৈরি হয়েছে মানুষকে সাহায্য করতে। এটা নয় আর রকেট সায়েন্স। অন্তত: আমাদের জন্য। তবে, সবার আগে – কেন দরকার এই ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’? আর, কিছুটা ব্যাবচ্ছেদ করবো – মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে।

১৪.

আমার অভিজ্ঞতা বলে – মানুষ সবচেয়ে বেশি ‘ওপেন’ মানে খোলামেলা হয় অনলাইনে গেলে। অনেকেই নিজের ভালো মানুষের খোলসটা ফেলে দিয়ে নেমে পড়েন দু:সাহসী কাজে। ‘কেউ দেখছে না’ মনে করে ইচ্ছেমতো সাইটে গিয়ে রেজিস্টার করছেন নিজের লুকানো নাম দিয়ে। ওই ইচ্ছেমতো সাইটগুলো শুরুতেই ঢুকিয়ে দেয় ‘ট্র্যাকিং কুকি’। আপনার কম্পিউটারে। আপনার দুর্দান্ত ‘প্রোফাইল’ তৈরি করে ফেলবে ‘ব্রাউজিং হিসট্রি’ ঘেঁটে। ইনিয়ে বিনিয়ে আপনাকে দিয়েই ডাউনলোড করিয়ে নেবে তাদের পছন্দের সফটওয়্যার। বাকি গল্প থাকছে সামনে। তবে, ওই ‘সাইবার সিকিউরিটি টীম’ চালানোর সময় কিছু শিক্ষিত(!), ভালো অবয়বের মানুষের ‘মানসিক বিকৃতি’ দেখে অবাক হয়েছি বেশি। সাধারণ মানুষের ‘কম্পিউটার নিরাপত্তার’ অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে হেয় করছে তাদের। সামাজিক ও মানসিক ভাবে। দেশছাড়া হয়েও মুক্তি পায়নি মানুষ।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Cryptography is the ultimate form of non-violent direct action.

― Julian Assange

০১.

আমরা এগুচ্ছি কিন্তু। দুনিয়ার সাথে তাল না মিলিয়ে যাবেন কোথায়? সমস্যা থাকবে সাথে। আর সমস্যা নেই কোথায়? তবে বাসায় বসে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারাটা যে কতো ‘লিবারেটিং’ সেটা আমার থেকে আপনি জানেন ভালো। শুক্রবার সকালের ঘুম বাদ দিয়ে বাজারে দৌড়ানো? অন্য কারণে না হলেও বউয়ের ঝামটা খেয়ে নিজের গজগজটাও গিলে খেয়ে ‘বাজারে যাওয়া’ বন্ধ করার ‘সিষ্টেম’ মনে হয় দাড়িয়ে গেছে, কি বলেন? অনেকেই বাজার পাচ্ছেন বাসায় বসে। ঢাকায়। বাসার ‘কমফোর্ট জোনে’ বসে মানে বউ বাচ্চার শান্তি’র ‘কিচির মিচির’এর মধ্যে অর্ডার দেয়া অনলাইনে। ভুল বলেছি? গলায় ঝুলছে দুজন, দুপাশ থেকে। ওই টানাটানিতে মনের ভুলে ‘ধুন্দল’ অর্ডার দিলেন দু কেজি। ‘পই পই করে বললাম এক কেজি। বাকিটা খাবে কে?’ ‘ঝাপটা’ একটাও মাটিতে পড়লো না কর্তীর কাছ থেকে! হেভেনলী!

০২.

বাসার কাজের সাহায্যকারী মেয়েটার বেতন পাঠাতে হবে তার পরিবারকে। কি হতো আগে? খুঁজে বের করো তার আত্মীয় স্বজনকে। কে থাকে ঢাকায়? কবে যাবে দেশে? বসে থাকো তার দেশে যাবার সময়ের জন্য। বাস ভাড়া দাও যাওয়া আসার। আর এখন, “খালু, ‘বিকাশ’ করে দিয়েন আজ।” সময় পাল্টেছে, সহজ হয়ে যাচ্ছে কাজ। ঘরে বসে অনেক কাজ সেরে ফেলতে পারছি আমরা। ই-কমার্সের যুগে সবাই কেনাবেচা করতে পারেন বলে অনেকেই হতে পারছেন ‘উদ্যোক্তা’। ধরা যাক ‘বিজনেস রাইটিং’য়ে দক্ষতা আছে কিছুটা। আমার। একটা সাইট খুলে বাসায় বসে শুরু করা যায় ব্যবসাটা। বাইরের ক্লায়েন্টের জন্য লিখে দেবো চমত্কার চমত্কার চিঠি, এক দিনে ডেলিভারী, একশো টাকা। আর্জেন্ট মানে দু ঘণ্টায় হলে – দুশো টাকা। দুর্দান্ত, তাই না? গেম চেঞ্জার হচ্ছে এই ইন্টারনেট। আর তার ইকোনমি।

০৩.

আগে চুরি হতো সিঁধ কেটে। ওখানেও পাল্টেছে যুগ। ইন্টারনেট ভরে যাচ্ছে বুদ্ধিমান ‘চোর’ দিয়ে। কেনাকাটা করছেন আপনার প্রিয় সাইটে। টাকা পয়সার বিত্তান্ত দিলেন জিনিসটা পাবার জন্য। সপ্তাহ খানেক পর ব্যাংক থেকে জানলেন আরো অনেক কিছু কেনাকাটা করেছেন আপনি। ভাষা হারিয়ে ফেললেন কয়েক মুহূর্তের জন্য। অর্ডারের জিনিসই পাননি এখনো। এদিকে বলে কি ব্যাংক? মানে, টাকা হওয়া। টাকা পাঠালেন মোবাইল করে, বন্ধুকে। টাকা গিয়েছে ঠিকই। তবে তুলে নিয়েছে আরেকজন। আগে ইমেইলে কি পাঠাতেন – সেটা জেনে যেতো অন্যরা। আবার, হটাত্‍ করে ইমেইল পেলেন প্রিয় বন্ধুর কাছ থেকে, আটকে পড়েছেন আফ্রিকার একটা দেশে। পকেটমার হয়ে গেছে সব কিছু, ফিরতে পারছেন না টাকার অভাবে। বন্ধুর সাথে কি কথা বললেন ফোনে, সেটাও চলে এলো ইউটিউবে। ল্যাপটপ বসে আছে কিন্তু আপনার বাসায় বা অফিসে। কোম্পানীর গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কিভাবে যেন চলে গেছে আরেকজনের হাতে।

০৪.

আগে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে টাকা পাঠাতে ‘হুলুস্তুল’ ঝামেলা করতো ব্যাংক কতৃপক্ষ। ভল্টের মতো গাড়ি, গুলিভরা বন্দুক সমেত গার্ড। সামনে পেছনে পুলিশ। ওটাতো ‘ফিজিক্যাল’ টাকা। এদিকে প্রতিমূহুর্তে বিলিয়ন ‘ভার্চুয়াল’ টাকা পাড়ি দিচ্ছে হাজারো নেটওয়ার্ক। যাচ্ছে এই ‘ইন্টারনেট’ নামের রাস্তা দিয়ে। সেটার কি হবে? কে দেবে সেটার নিরাপত্তা? তার ওপর ইন্টারনেটে নেই কোন ভৌগলিক সীমারেখা। অন্য দেশ থেকে আমাদের দেশ হয়ে যদি চুরি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারো টাকা? কি হবে তখন? কোম্পানীগুলো বিলিয়ন ডলার ঢালছে তাদের ই-কমার্স ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে। তার থেকেও বেশি ঢালছে সেটার নিরাপত্তার খাতিরে। ‘ব্যক্তিগত ফাইল’ বলে হেলাফেলা করে মানুষ হচ্ছে বিব্রত – প্রতিনিয়ত।

০৫.

জেমস বন্ডের ছবিতে ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’র গল্প দেখে ধারনা হতেই পারে অন্য কথা। গুপ্তচরদের টেকনোলজি নিয়ে কি করছি আমি? বিপদে ফেলার ফন্দি করছি নাকি আবার? ওগুলো তো ব্যবহার করে সামরিক বাহিনী। ঠিক ধরেছেন! জুলিয়াস সিজার এই কাজ শুরু করেন খ্রীষ্টজন্মের ৫৮ বছর আগে। দেশগুলো তাদের নিরাপত্তার জন্য তো ব্যবহার করবেই এই ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’। ইন্টারনেট ইকোনমি’র জন্য অনেক হিসেবই পাল্টে গেছে এই দশকে। অ্যাপল, হ্যা, কোম্পানী অ্যাপলের কথা বলছি। তার ‘ভ্যালুয়েশন’ মানে দাম হচ্ছে মাত্র ৭০০ বিলিয়ন ডলার। আবার ‘ক্যাশ’ হিসেবে তার হাতেই আছে মাত্র ১৭৮ বিলিয়ন ডলার। এই ফেব্রুয়ারীর শুরুর কথা। এই টাকা কিন্তু নিউজিল্যান্ডের জিডিপি’র সমান। ঝেড়ে কাশি। ‘অ্যাপল’ যদি কোন দেশ হতো আজ, ৫৫তম ধনী দেশ হিসেবে নাম হতো তার। বাকি কোম্পানীগুলোর কথা বাদ দিলাম আজ। দেশ যেখানে তার নিরাপত্তায় যে ধরনের ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ ব্যবহার করবে, তার থেকে কোন অংশ কম করবে এই কোম্পানীগুলো – শুনি?

০৬.

ভড়কে দিলাম নাকি? গল্প বাদ, পরিচিত হওয়া যাক আমাদের ‘ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার’ এই ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’র সাথে। অনেকে বলবেন ব্যাপারটা সহজ নয় অতো। আমি আছি কি করতে? পানি বানিয়ে ফেলবো – এই আপনাদের জন্য। শুরু করেছি কিন্তু ওই নব্বইয়ের দশকে। আপনারা চাইলে বই হয়ে যাবে এটা! রেডি?

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

I prefer for government to err toward less regulation, lower taxation, and free markets. And I’m a radical free trader.

– Mark McKinnon

৬৬০.

‘বেশি ইন্টারনেট ছড়ানো’ দেশগুলোর কেসস্টাডি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ওদের ব্রডব্যান্ড ‘ডিফিউশন’এ সাপ্লাই আর ডিমান্ড দুটো সাইডের ফ্যাক্টরগুলোকে কাজ করিয়েছে এক সাথে। সাপ্লাই সাইডে যখন তৈরি করেছে নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাক্চার, একই সাথে ওই ব্রডব্যান্ড সার্ভিসগুলোকে সবাই যাতে ব্যবহার করতে পারে সেটার নীতিমালা করতে ভোলে নি দেশগুলো। এতে বেড়েছে ব্রডব্যান্ডের গ্রহনযোগ্যতা। বেড়েছে সার্ভিসগুলোর পরিচিতি, সরকারী সব সার্ভিস চলে গেছে অনলাইনে। ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে গিয়ে এই ডিমান্ড সাইডের কাজ। আমাদের সাপ্লাই সাইডে বেশ কাজ হলেও ডিমান্ড সাইডে কাজ হয়েছে কম। ইন্টারনেটের সজলভ্যতা আসেনি এর দামের কারণে।

৬৬১.

সাপ্লাই আর ডিমান্ড সাইডের গল্পগুলোর মধ্যে ‘ইন্টারঅ্যাকশন’ না হলে বিপদ। দেখা গেছে সাপ্লাই সাইড ঠিকমতো কাজ করলে সেটাই বাড়িয়ে দেয় ডিমান্ড সাইড। আবার ডিমান্ড সাইড বেড়ে গেলে সাপ্লাইয়ের পাইপ মোটা হতে বাধ্য। ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়লে ওর সরবরাহ না বাড়ার কোন কারণ নেই। তবে, এই ব্যাপারগুলোর ‘ইন্টারঅ্যাকশন’ ওনেক সময় এমনি এমনি হয় না। সেটার জন্য একটা পরিবেশ লাগে। ‘মার্কেট ফেইলুর’ মানে বাজার ঠিকমতো কাজ না করলে কাজ করবে না জিনিসগুলো। বাজারে একটা বড় প্রোভাইডার ধসিয়ে দিতে পারে পুরো বাজার। আর সেকারণে সময়ে সময়ে বাজারে ‘প্রতিযোগিতা’ আছে কিনা সেটা দেখার টূল ব্যবহার করে কম্পিটিশন এজেন্সি অথবা রেগুলেটর। এটা ঠিক যে, ব্রডব্যান্ড ‘ডিফিউশন’ মানে এর ছড়ানোর জন্য দরকারী ‘ক্রিটিক্যাল মাস’ না হলে ব্যবসা টিকবে না। এখানে ‘ক্রিটিক্যাল মাস’ হচ্ছে একটা দরকারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ধরুন, কয়েক লাখ। ঐটাই ব্যবসাকে দেবে একটা ‘টেকসই’ গ্রোথ।

৬৬২.

আবার দুটো ফ্যাক্টরই যদি একই সময়ে অর্থনীতিতে দেখা যায়, সেটা তার পুরো রেজাল্ট নাও দিতে পারে। যদি না দুটো সাইড পুরোপুরি ‘কোওর্ডিনেটেড’ না থাকে। দুটো সাইডের ‘সমন্বয়’ ঠিকমতো না হলে দেখা যাবে তৈরি হচ্ছে ব্রডব্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাক্চার, অনেক দেরিতে। আবার সাপ্লাই সাইড ঠিকমতো তৈরি না হলে এটা ধাক্কা খাবে ডিমান্ড তৈরিতে। বাড়বে না ব্যবহারকারী। তৈরি হবে না ‘ক্রিটিক্যাল মাস’। তৈরি হবে না ‘টেকসই’ অর্থনীতি। আর সেকারণেই, ব্রডব্যান্ড বেশি ‘ছড়ানো’ দেশগুলো প্রথমেই হাত দেয় ‘কমপ্রিহেনসিভ’ নীতিমালাতে। পুরো দেশের ‘দর্শন’ চলে আসে ওর মধ্যে। সাপ্লাই আর ডিমান্ড সাইডের সব ধরনের সমন্বয় পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় ওই নীতিমালাগুলো পড়লে। তবে দুটো দেশ এক ‘রুট’ – মানে এক রাস্তা না ধরলেও বেশ কয়েকটা মোটা দাগের ‘স্ট্র্যাটেজি’ মেনে নিয়েছে প্রায় সবাই। বিশ্বব্যাংক আর টেলিকম্যুনিকেশন ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের ডকুমেন্টেশনও তাই বলে। ব্রডব্যান্ড টূলকিটের হিসেবে ফিনল্যান্ড, ফ্রাণ্স, জাপান, ওমান, সিংগাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন না কোন ভাবে কাজ করিয়েছে এই বড় দাগের স্ট্র্যাটেজিগুলোকে।

ক॰ ‘ওপেন-অ্যাক্সেস’ হোলসেল নেটওয়ার্ক তৈরি
খ॰ বেসরকারি ইনভেস্টমেন্ট আনার জন্য ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা তৈরি
গ॰ ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’র মতো ‘সবার জন্য ব্রডব্যান্ড’ ব্যাপারটা ঢোকানো হয়েছে সর্বোচ্চ নীতিমালায়
ঘ॰ ব্রডব্যান্ডের সব সার্ভিসের ডিমান্ড বাড়ানোর জন্য সবকিছুকে অনলাইনে নিয়ে এনে পাইপের দাম সস্তা করা
ঙ॰ পিপিপি, পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশীপ দিয়ে বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাক্চার তৈরিতে বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধ করা, এক কথায়, মধুর চাক বানানো
চ॰ আঞ্চলিকভাবে অথবা ‘নেশনওয়াইড’ ব্যবসায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসা তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দরকার মতো ভর্তুকি দেয়া
ছ॰ বড় হোলসেল প্রোভাইডার থেকে কিনে ছোট ছোট কোম্পানীগুলোকে সেই ‘রিসোর্স’ ‘রিসেল’ করার জন্য প্রণোদনা দেয়া, আর বড়রা না দিতে চাইলে সেটা বাধ্য করা
ঝ॰ * ‘লোকাল লুপ আনবান্ডলিং’য়ে বড়দের বাধ্য করা যাতে কিছু ব্যবসা করতে পারে ছোটরা

৬৬৩.

যে যাই বলুক, সাপ্লাই সাইডের নীতিমালা প্রণোদনা দেয় বেসরকারী খাতকে – ইনভেস্ট করো নেটওয়ার্কে। এখানে ইনভেস্ট করলে এটা ফ্রী! আর নেটওয়ার্কে ইনভেস্টমেন্ট মানে হাজার কোটি টাকার খেলা। ওই টাকার জন্য দরকার প্রাইভেট সেক্টরকে। ওদিকে ডিমান্ড সাইড নীতিমালা সরকারকে বাধ্য করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ আর ব্রডব্যান্ড সার্ভিসগুলোর ওপর মানুষের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে। এটা চলে লম্বা সময় ধরে, ফলে সরকারকে এটাকে তৈরি করতে হয় শুরুতেই।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

The hungrier one becomes, the clearer one’s mind works— also the more sensitive one becomes to the odors of food.

― George S. Clason, The Richest Man in Babylon

৬৫৮.

এদিকে চমত্কার একটা কাজ করেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। তাদের যোগাযোগ আর আইসিটি মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে একটা ‘অ্যাডভাইজরী গ্রুপ’। সরকারী লোক নয় শুধু, সবাইকে নিয়ে এসেছে এক কাতারে। টেলিযোগাযোগ কোম্পানী থেকে শুরু করে ইনডাস্ট্রি অ্যাসোশিয়েশন, ইনভেস্টর, সম্পর্কিত দপ্তর থেকে সরকারী প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় – বাদ পড়েনি কিছুই। সবাইকে দিতে হয়েছে ‘কম্পিটেণ্ট’ সদস্য। ভারতের জাতীয় ব্রডব্যান্ড প্ল্যান অনুযায়ী একত্রীভূত ‘জাতীয় ফাইবার নেটওয়ার্ক’ দিয়ে প্রতিটা গ্রাম আর শহরকে কিভাবে যুক্ত করা যায় সেটাই এই অ্যাডভাইজরী গ্রুপের ভাবনা। লাস্ট মাইলে স্পেকট্রামকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটাও দেখছে তারা। মোদ্দা কথা, যুক্ত করতে হবে সবাইকে। মানুষের পয়সা থাকুক আর না থাকুক। ইন্টারনেট তো লাগবেই। আজ নয়তো কাল। ইন্টারনেটকে সস্তা না করলে হবে কিভাবে? আর এই কাজ করতে ভারতের এই সম্মিলিত ‘অ্যাডভাইজরী গ্রুপ’কে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে ব্যবহারকে ‘উদাহরণ’ হিসেবে টানা হয়েছে ব্রডব্যান্ড টূলকিটে। সত্যি বলতে, বেশ ভালোভাবেই। এতে অনেক সরকারী বেসরকারী এজেন্সিগুলোর ‘ক্রস-কাটিং’ ব্যাপারগুলো মেটানো গেছে সবার সাথে কথা বলে। নেটওয়ার্ক রোলআউট করতে লাগে অনেক টাকা, তবে সেটাকে সবাই মিলে করলে খরচ কমে আসে। গ্যাস পাইপ বসবে, একই সাথে চলে যাচ্ছে পানি, ফাইবার, তেল, বিদ্যুত্‍। সমন্বয় করার দ্বায়িত্ব ফোকাল পয়েন্টের। আর সেই সুবিধাটা নিয়েছে দেশটা।

৬৫৯.

ব্রডব্যান্ড প্রোমোশন এজেন্সি লাগবে কিনা – সেটা অনেকটাই নির্ভর করে দেশটার ‘লোকাল কন্ডিশনে’র ওপর। মানে ওই দেশের বর্তমান আইন ব্যবস্থা, সরকারী ‘প্রতিষ্ঠানগুলো’র কাজের ক্ষমতায়ন কতোখানি, ব্রডব্যান্ডে নেতৃত্ব দেবার মতো মানুষের ‘ক্যাপসিটি তৈরি’, আর সরকার এই এজেন্সিটাকে চালানোর জন্য পয়সা দিতে পারবে কিনা সেগুলো আসবে আস্তে আস্তে। উন্নয়নশীল দেশের জন্য ব্যাপারটা ‘উচ্চাকাংখী’ মনে হলেও ব্রডব্যান্ড একটা দেশকে কোথায় নিতে পারে সেটা অনুধাবন করলে এই এজেন্সি জরুরী। এই এজেন্সি বসাতে জন্য যে প্রচুর পয়সা লাগবে তাও নয়। তথ্য, টেলিযোগাযোগ, আইটি আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একীভূত করলে যে পয়সাটা বাঁচবে তাতেই হয়ে যাবে এজেন্সিটা। প্রযুক্তি মানে ‘জেনারেল পারপাজ টেকনোলজি’র মতো জিনিসকে মানুষের জীবনে ঢুকিয়ে দিতে পারলে দেশে চলে আসবে ‘সুশাসন’ আর ‘স্বচ্ছতা’। সাধারণ মানুষের চাওয়া এগুলোই। ব্যাস, দেশকে আর তাকাতে হবে না পেছনে। তবে, ‘ব্রডব্যান্ড টূলকিট’ বলছে আরো একটা গল্প। সরকারে সেই ‘জ্ঞান’টা না থাকলে নেতৃত্ব দেবে কে? ব্রডব্যান্ডকে ঠেলে সামনে নেবার জন্য প্রয়োজন ‘প্রজ্ঞা’সহ নেতৃত্ব। সেটাকে দিতে হবে সরকারকেই।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Singapore is building to be the world’s first Smart Nation, with fuller use of technology to live, work and play. Singapore has the opportunity to be a Smart Nation if we work together and successfully combine policy, people and technology, and boost all aspects to enhance our national capabilities – from infrastructure, industry and talent, to governance.

– Smart Nation Vision, 2005

৬৫৫.

‘ফোকাল পয়েন্ট’ ধারনাটা নতুন নয় কিন্তু। যারা এগিয়েছে ব্রডব্যান্ডে, তাদের সবারই আছে এই আলাদা অফিসটা। কাজ একটাই, সারাদিন ব্রডব্যান্ড নিয়ে চিন্তা করা। সরকারী সম্পর্কিত সব এজেন্সিগুলোকে ধাক্কা দিয়ে এক কাতারে নিয়ে আসা। ইনভেস্টর, ইনডাস্ট্রি, অপারেটররাও বাদ যাবে না সেই ধাক্কা থেকে। ‘প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস’ থেকে বিভিন্ন ‘ওভারল্যাপিং’ প্রজেক্টের সমন্বয় সাধনের মতো জিনিসের সাথে ‘ব্লেম গেম’ ব্যাপারটা সরিয়ে আসল কাজ বের করে নিয়ে আসছে এই অফিস। ফিরে আসি সুইডেনের কথায়। তাদের ‘আইটি পলিসি স্ট্র্যাটেজি গ্রুপ’ প্রথমেই তৈরি করতে বলেছিল ‘আভ্যন্তরীণ একটা স্ট্র্যাটেজিক সমন্বয়কারী অফিস’। তার কাজ হচ্ছে ব্রডব্যান্ড ডেভেলপেমেণ্টে জড়িত সব এজেন্সিকে এক টেবিলে এনে কাজের ধারাবাহিকতা ‘মনিটর’ করা। সব এজেন্সি মানে সরকারী, বেসরকারী – ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সবাই।

৬৫৬.

ভালো কথা, ব্রিটেনে তো পুরো একজন মন্ত্রী রয়েছেন এই ‘ডিজিটাল ইনক্লুশন’ দেখভাল করার জন্য। ব্রাজিল এদিকে এগিয়ে আছে বেশ ভালোভাবে। তাদের এগিয়ে থাকার পেছনে রয়েছেন একজন ‘ডিজিটাল ইনক্লুশন’ সচিব যাকে আলাদাভাবে বসানো হয়েছে ওই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে। জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেটা নিয়েই পড়ে আছেন তিনি। ‘ডিজিটাল ইনক্লুশন’ নিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত প্রজেক্টেরগুলোর মাথা উনি। তবে, অনেকদেশে এই ব্রডব্যান্ড ডেভেলপেমেণ্টের দেখভাল করার কাজ দিয়ে রেখেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় অথবা রেগুলেটরের কাছে। এটার ভালো খারাপ দুটোই দেখেছি আমি। আমার মত হচ্ছে যে দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ ‘গভার্ণেস’ খুবই শক্তিশালী, সেখানে এটা কাজ করে ভালো। এই কম্বিনেশনটা কাজ করে চমত্কার – যাদের রয়েছে ‘পোক্ত’ মানে ডিটেইল লেভেলে কাজ করা জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা। ‘পোক্ত’ ব্রডব্যান্ড নীতিমালার মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্হ্য, জ্বালানী – দক্ষ প্রশাসন – থাকবে সবকিছু।

৬৫৭.

উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আসি সিংগাপুরের কথা। ওদের দেশের জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা নিয়ে ‘স্ট্র্যাটেজিক’ লেভেলের একটা কোর্স করিয়েছিল আমাকে, বিটিআরসি। পাঁচ হাজার ডলারের মতো ছিলো শুধুমাত্র তার কোর্স ফি। সিংগাপুর একটা মাস্টার প্ল্যান করেছিলো অনেক আগে। নাম ‘ইণ্টেলিজেণ্ট নেশন ২০১৫’। প্ল্যানটা নিয়ে মাঠে নামে ২০০৫য়ে, যদিও সেটা তৈরি হয়েছিল অনেক আগে। দশ বছর ধরে প্রতিটা আইটেম ধরে ধরে এগিয়েছে তারা। দর্শন ছিলো, ‘অ্যান ইণ্টেলিজেণ্ট নেশন, আ গ্লোবাল সিটি, পাওয়ারড বাই ইনফো-কম’। তারা মনোযোগ দিয়েছিলো ‘ট্রাস্টেড’ আর ‘বুদ্ধিমান’ আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাক্চারের ওপর। সেই সাথে ব্যস্ত ছিল পুরো ‘ইকোসিষ্টেম’ তৈরিতে। ডিমান্ড আর সাপ্লাই সাইড নিয়ে তাদের কাজ দেখার মতো। বাজারে প্রতিযোগিতা ঠিক রেখে নতুন নতুন ‘স্টার্ট-আপ’ কোম্পানী মানে ইনভেস্টমেন্ট আনার ব্যপারে তাদের কাজ দেখলে তাক লাগবে সবার। ইনভেস্টমেন্ট আনার জন্য অনেক অফিস খুলেছে পৃথিবী জুড়ে। সেই সাথে তৈরি করেছে বিশাল ‘ট্যালেন্ট পুল’। বেড়েছে জাতীয় ‘সক্ষমতা’। দশ বছরের ধারাবাহিকতার ফলাফল – ‘স্মার্ট নেশন’।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

It’s better to be at the bottom of the ladder you want to climb than at the top of the one you don’t.

– Stephen Kellogg

৬৫৩.

ব্রডব্যান্ডের সুফল দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিতে হলে আগে নির্ধারন করতে হবে জাতীয় ‘ফোকাল পয়েন্ট’। বুঝতেই পারছেন, হাজারো কাজ হবে এই ব্রডব্যান্ড নিয়ে। সরকারের কোন এজেন্সি যদি সেটাকে ঠিকমতো ‘মনিটর’ অর্থাত্‍ কাজগুলো ঠিক মতো হচ্ছে কিনা – কোন কাজটার সুফল আসছে আর কোনটার আসছে না সেটাকে চিহ্নিত করার দ্বায়িত্ব নিতে হবে সেই ফোকাল পয়েন্টকে। কাজটা হচ্ছে দেশের – সেখানে নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশনের তো আর ‘লীড’ নেবে না। সরকারী আর বেসরকারি ‘শত’ এজেন্সি কাজ করবে এখানে, কাজ হবে বিশাল প্রজেক্ট আকারে। ফোকাল পয়েন্ট থাকবে ‘ক্লিয়ারিং হাউস’ হিসেবে – এই বিশাল প্রজেক্টের। প্রজেক্টের কাজের সফলতা, অগ্রগতি আর একেকটা কাজের ‘ইন্টার-ডিপেনডেন্সি’ অথবা, কার জন্য আটকে আছে কাজটা – এধরনের ধারাবাহিকতা ‘মনিটর’ করার জন্য থাকতে হবে সরকার থেকে মনোনীত ‘ফোকাল পয়েন্ট’ একটা এজেন্সিকে। এটাকে ধরে নেব ‘পিএমও’ মানে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস হিসেবে।

৬৫৪॰

ফোকাল পয়েন্ট এজেন্সি হিসেবে থাকছেন যারা, তাদের ‘ক্যাপাসিটি’ তৈরি করা জরুরী। ব্রডব্যান্ড ডেভেলপেমেণ্ট প্রোগ্রাম তৈরি করতে তাদের জানতে হবে বিভিন্ন টুলস। পুরো পৃথিবীতে ব্যবহার হচ্ছে এই টূলগুলো। রকেট সায়েন্স নয় বলে এগুলো ব্যবহার করে ‘উন্নত’ থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশগুলো সুফল পাচ্ছে সরাসরি। বইটার তৃতীয় অধ্যায়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে এই টুলগুলো নিয়ে। এই কাজগুলো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সাথে কিভাবে সম্পৃক্ত সেটা জানতে হবে আগে। আর সেকারণে বেশ কিছু অর্থনীতিবিদ থাকতে হবে সেই ফোকাল পয়েন্ট এজেন্সিতে। রেগুলেটরী এজেন্সি থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় এবং ব্রডব্যান্ড প্রোমোশন এজেন্সি (যদি থাকে) সবাইকে জানতে হবে জিনিসগুলো। ব্যাপারগুলো না জানলে অপারেটর, ইনভেস্টর আর ইনডাস্ট্রির কাছ থেকে নেয়া যেতে পারে ধারণাগুলো – ‘পাবলিক কন্সাল্টেশন’ হিসেবে। সবদেশের অপারেটরদের কর্পোরেট হেডকোয়ার্টারে জ্ঞানগুলো জমা রাখা হয় বিভিন্ন দেশের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। বলতে বাঁধা নেই, তাদের ‘জ্ঞান ব্যবস্থাপনা’ অনেক উঁচুমানের। হবে না কেন? এক কোম্পানী যখন ‘অপারেট’ করে অনেক দেশে, তাদের জানতে হয় অনেক কিছু। ব্যবসার খাতিরেই।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Formal education will make you a living; self-education will make you a fortune.

― Jim Rohn

০১.

লিঙ্কডইন নেটওয়ার্কে ফেসবুকের মতো ‘পোকিং’ ফীচার না থাকলেও মাঝে মধ্যে বাজিয়ে দেখে হেড-হান্টাররা। ধরুন, এই অধমকেই। মানে আপনার সিভি’র কাছে যে নস্যি! আসল আফ্রিকান ‘হেড-হানটিং’ হলে পালিয়ে বেড়াতাম এর মধ্যেই। এটা সেধরনের নয় বলে রক্ষা। পৃথিবী পাল্টে গেছে অনেক। পাঁচ বছর আগের গল্প দিয়ে চাকরি পাওয়া কঠিন এখন। আর যারা দেবে চাকরি, তারাও পাল্টেছেন তাদের পজিশন। পুরোপুরি – রিপজিশন! তারা এখন অনেক ফোকাসড, তারা জানেন – আসলে কি চায় কোম্পানী। তিন বছর আগে যেভাবে চাকরি পেয়েছেন – সেটা কিন্তু নেই আর। সত্যি বলছি। গতানুগতিক চাকরি দিতে চান না তারা, কথা হয় নির্দিষ্ট কাজ ওঠানো নিয়ে। তাহলে ‘হেড-হানটিং’ নিয়ে কথা বলি দু একটা, কি বলেন?

০২.

‘হেড-হানটিং’য়ের গল্পটা তখনই আসে যখন কোম্পানীটা একটা ‘নির্দিষ্ট’ কাজের জন্য মানুষ চায়। ‘প্রিটি মাচ স্পেসিফিক।’ সাধারণত: এই প্রসেসটা শুরু হয় ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের মাথাদের ‘হায়ার’ করার জন্য। সোজা কথায়, পিরামিডের ওপরের দিকের মানুষ খুঁজতেই এই ‘মাথা’ নিয়ে টানাটানি। সে কি ধরনের হবে সেটার একটা ‘ম্যাপিং’ তৈরি করে নেয় কোম্পানীটা। আরেকটা ব্যাপার বলে রাখি আগেভাগে, পেপারে বা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে কাজগুলো করা হয় না – বেশির ভাগ সময়ে। আবার, অনেক সময় ওই কোম্পানীর ‘এইচআর’ও জানে না কি হচ্ছে কোথায়? হতে পারে – প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানী থেকে নিয়ে আসতে হবে একজনকে, অথবা যার কাজের প্রোফাইল সাধারণের মতো নয়। রিক্রুটিং এজেন্সির কাজের বাইরের কাজ এটা। কোম্পানী তখন খোঁজে হেড-হান্টারদের। যাদের ব্যবসা মানুষের নাড়িনক্ষত্র নিয়ে। হেড-হান্টাররা সাধারণত: লূকোছাপা করেন কম, তাদের কথাবার্তা আর যোগাযোগ অনেকটাই ‘পার্সোনালাইজড’ আর সরাসরি ধরনের।

০৩.

কেন হেডহানটিং? কোম্পানী চায় কি? মানে ম্যানেজাররা চান কি? যেকোন কাজকে ‘আইডেন্টিফাই’ করে ওই সমস্যার সমাধান। ওই সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে যতো কম ‘রিসোর্সে’র ব্যবহার আর সেটা তাদের বটমলাইনে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আনছে কি না। এগুলোই দেখার বিষয়। সোজা কথায় ম্যানেজারদের কাজ মাপার ‘ইয়ার্ডস্টিক’ হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে তারা কতটুকু সফলতা পাচ্ছে ক। কোম্পানীর খরচ কমাতে, খ। দিনের শেষে কতো লাভ হলো। ওর সাথে সাথে ‘হেড-কাউন্ট’ চলে আসে। যেখানে এই কাজটা করতে চারজন লাগে, সেটাকে খরচ কমাতে গিয়ে হাত পড়ে হেড-কাউন্টে। ফলে কমে যায় মানুষ। আর কোম্পানী খোঁজে ওই লোক যে ওই বাড়তি কাজটাও পারে। আগে যেটা তার ‘টার্মস অফ রেফারেন্সে অমুক জিনিস থাকলে ‘অ্যাডেড’ অ্যাডভাণ্টেজ – সেটা যোগ হয়ে যায় মূল কাজে। মানে পুরানো কাজের ‘চোথা’ দিয়ে এগুতে পারছে না কোম্পানীগুলো। হেড-হান্টারদের লাগছে ওই ‘কাস্টোমাইজড’ কাজের গল্প বানিয়ে ওই লোকটাকে খুঁজে বের করতে।

০৪.

কোম্পানীর বড় লেভেলের এগজিকিউটিভ খুঁজতে বড় ধরনের ‘ক্যাম্পেন’ করতে হয় না হেড-হান্টারদের। যারা ওই কোম্পানীটার জন্য এগজিকিউটিভকে খুঁজছেন তাদের অনেকেরই নিজস্ব ফার্ম থাকে। রিক্রুটমেন্ট কন্সাল্ট্যান্টদের মতো তুলনা করা যাবে না তাদের। আপনি চাকরি পেলেন নাকি পেলেন না সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না ওই ফার্ম। আপনাকে বলে দেবে কিভাবে চাকরি খুঁজতে হয় অথবা ওই কোম্পানীতে চাকরি করতে হলে এই এই কাজ করতে হবে। তার ফী নির্ধারিত। হেড-হান্টারদের গল্প কিন্তু আলাদা। তারা ওই কোম্পানীর মানুষটাকে খুঁজে দিতে পারলেই পায় পয়সা। মানে খেটে – রেজাল্ট দেখিয়ে আয় করতে হয় তাদের। ব্যাপারটা কিছুটা কমিশন ভিত্তিক হয়। তাদের ফী – সেটা ‘কন্টিজেন্সী’ অথবা ‘রিটেইনড’ মানে কাজ ভিত্তিক বা বড় ধরনের রিক্রুটমেন্ট ভিত্তিক যাই হোক না কেন সেটা বেতনের ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। কোম্পানীর ওই এগজিকিউটিভের রোল কি হবে, তার ব্যাকগ্রাউণ্ড নিয়ে গবেষণা থেকে শুরু করে কোন কোন কোম্পানী থেকে মানুষ টানা যায় সেটার লিস্ট তৈরি করতে সাহায্য করে হেড-হান্টাররা।

০৫.

আচ্ছা, হেড-হান্টাররা তাদের লিস্ট বানায় কি করে? আমার ধারনা, গ্লোবাল নেটওয়ার্কিং। ‘ক্যারিয়ার মীট’ কোনটাই মিস করে না তারা। রিসার্চেও তুখোড় তারা। বিভিন্ন ট্রেড অ্যাসোশিয়েশন থেকে ‘ইনহাউস’ তথ্য পায় তারা। আর তো রয়েছে ইন্টারনেট। চাকরির বাজার নিয়ে বেশ কিছু ডিরেক্টরি বের হয় প্রতি বছর। সবশেষে তো আছে লিংকডইন! মানুষ নিয়েই তাদের কাজ। কোন কোম্পানীতে কোন মানুষটা আছে – সে কি রকম ভাবে আছে – সব জানতে হয় তাদের। এদিকে কোন কোম্পানী কি চাইবে সেটাও ধারনা করতে হয় আগে থেকে। ইদানিং কোম্পানীগুলো পড়া বাদ দিয়েছে মানুষের ‘রেজিউমে’। ওই ‘হিব্রু’ থেকে কি পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে সন্দিহান তারা। এখন ফোকাস হচ্ছে নির্দিষ্ট কাজগুলোকে তুলে দেয়া – একটা সময়ের মধ্যে। বলতে হবে আর ‘কেপিআই’এর গল্প? আপনারা আরো ভালো জানেন আমার থেকে।

০৬.

প্রথম কলটা পাই প্রায় পাঁচ বছর আগে। ইউরোপের একটা ফার্ম। পরপরই চলে এলো পুরোপুরি ‘পার্সোনালাইজড’ একটা ইমেইল। বোঝা গেলো আমাকে অনেক ভালোভাবেই চেনে সে। কবে কোথায় ছিলাম সেটা জানে ‘ইন ডেপ্থ’! তবে, কি কি কাজ করেছি সেটা নিয়ে কথা বলতে চায় সে। কিভাবে আমাকে চেনে বলতেই হাসলো মেয়েটা। বোঝা গেল – বলতে চাইছে না সে। তবে, পরের দিকে জানিয়েছিল – একটা নামকরা টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি কোম্পানী থেকে পেয়েছিল আমার কনট্যাক্ট ডিটেলস। একটা রেগুলেটরের পক্ষ হয়ে কাজ করছে সে। কোন রেগুলেটর? এখন নয়, শর্টলিস্টিং হলে জানাবে সে। এটা চায় তো ওটা চায়। কণফারেন্স কল তো পানিভাত। আমি আগ বাড়িনি আর। এধরনের অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে এর পরে। বাজার ‘যাচাই’ করতে কে না চায় বলুন? মানে, আপনার দাম উঠলো কতো? মনে কিছু করবেন না, নিজেকে বিক্রি করতে পারাটা আর্টের পর্যায়ে চলে গেছে ইদানিং। ঘণ্টায় দশ টাকা আয় করার মানুষ থেকে শুরু করে লক্ষ টাকার মানুষ আছে এই আমাদের দেশেই। মানে সেই মানুষটা ওই মূল্যটা পাচ্ছে বাজার থেকে। আপনার কাজ থেকে কোম্পানী ঘণ্টায় বিশ লাখ টাকা আয় করলে আপনাকে লাখ টাকা দিতে বাধা কোথায়? মনে নেই জিম রনের সেই কথা?

We get paid for bringing value to the marketplace. It takes time to bring value to the marketplace, but we get paid for the value, not the time.

— Jim Rohn

০৭.

আইডিয়া হলো কিছু। পরের দিকে ‘নক’ করলেই বলতাম – চাকরি খুঁজছি না এ মূহুর্তে। তবে ছোট বড় কিছু কাজ নিয়ে কথা বলতো হেড-হান্টাররা। ‘তোমার একটা প্রেজেন্টেশন দেখলাম এই নীতিমালাটা নিয়ে। ওই সাইটে। ওই দেশকে নীতিমালাটা তৈরি করে দিচ্ছি আমরা, কেয়ার টু জয়েন?’

বলুনতো কোথায় কাটাবেন সময়? ফেসবুক না লিংকডইন? প্রায়োরিটি কোথায়? টাকা কিন্তু উড়ছেই। ধরতে পারাটাই কায়দা।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

When I give a minister an order, I leave it to him to find the means to carry it out.

— Napoleon Bonaparte

৬২৫.

দরকার কি এইসব ইন্টারনেট ‘ইকোসিষ্টেমে’র? একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখতে পারবেন এগুলো একটা আরেকটার ওপর – পুরোপুরি ‘ইন্টার-ডিপেণডেণ্ট’। একটা ছাড়া আরেকটা অচল। অথচ, এই ইকোসিষ্টেমের প্রতিটা জিনিষ নিয়ে কাজ করে সরকারের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট। সত্যিই তাই। কার সাথে কোনটার কি সম্পর্ক সেটা না জানলেই বিপদ। ইন্টারনেটের ট্রান্সমিশন মানে হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। সার্ভিসগুলো কার? সেটা তো আসলে সবার। অনলাইন ক্লাস নিয়ে মাথাব্যথা হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। ‘জেনারেল পারপাজ টেকনোলজি’ হিসেবে সবকিছুই দরকার সব মন্ত্রণালয়ের। ‘হেল্থকেয়ার’ নিয়ে ইন্টারনেটের সুবিধা নিচ্ছে পাশের দেশ ভারত। হাজার মানুষ প্লেন ভরে আসছে ওই দেশে ‘হেল্থকেয়ার’ ট্রিপে। প্রাথমিক ‘ডায়াগনস্টিকস’ হচ্ছে ইন্টারনেটের ওপর দিয়ে। থাইল্যান্ড আর সিংগাপুর তো শুরু করেছে অনেক আগেই।

৬২৬.

স্বাস্থ্য আর চিকিত্‍সা নিয়ে কাজ করবে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়। ‘অ্যাপ্লিকেশন’ নিয়ে কাজ করছে আইসিটি মন্ত্রণালয় অনেক আগে থেকে। তবে কেউ জানে না কার করতে হবে – কতোটুকু অংশ। নাকি আবার ‘ডুপ্লিকেশন অফ ইফোর্ট’ হচ্ছে বার বার? বিটিআরসিতে থাকার সময় দেখেছি এধরনের কাজ – করছে সবাই। সবার দরকার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, পয়সা ঢালছে কিন্তু সবাই। গরীব দেশে এটা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। এমনিতেই ফান্ডিংয়ের সমস্যা, সেখানে পয়সা যাচ্ছে নতুন নতুন জায়গায় – না জানার কারণে। ডোনার এজেন্সিরা সরকারের এই ‘সমন্বয়হীনতা’ ব্যাপারটা জেনেও দেনার ধার বাড়াচ্ছেন দিনে দিনে।

৬২৭.

ইন্টারনেট বা ব্রডব্যান্ড যাই বলেন সেটা যে শুধু হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক নয় – সেটা থেকে বের হতে এই ‘ইকোসিষ্টেম’ ব্যবস্থা। সার্ভিস আর অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার আগে কথা বলে নিতে হবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে – জিনিসগুলো তাদের নেটওয়ার্ক নিতে পারবে কি না? টিএণ্ডটি’র যুগে ‘টেলিফোন মডেল’ থেকে বের হয়ে আসতে হবে আগে। একটা ফোনের জন্য একটা লাইন। আরেকটা ফোন লাগাতে চাইলে আরেকটা লাইন – আর ফ্যাক্স চাইলে আরেকটা। ওইটা ছিলো পুরনো টেলিযোগাযোগের ‘ওয়ালড গার্ডেন’ সমস্যা, সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা রিসোর্স। এখনকার যুগে লাইন আসবে একটা, ওইটার ওপর যা চাইবেন তাই করবেন। আবার সার্ভিস আর অ্যাপ্লিকেশন কিন্তু শুধুমাত্র আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি নয়, এটা সবার। শিক্ষা আর হেল্থকেয়ার অ্যাপ্লিকেশন কেন তৈরি করবেন তারা? ব্যবহারকারী মন্ত্রণালয় জানেন না – কিন্তু তার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছেন আরেকজন। ‘ইন-কম্পাটিবিলিটি’র শুরু ওখানেই। সনাতন ‘পুশ’ মানে ‘খাইয়ে দেয়া’র মডেল থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের। পয়সা ঢালো ‘সাপ্লাই সাইডে’, মানে দাম কমাও ইন্টারনেটের – ওতেই হবে সব – সেটা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে আমাদের।

৬২৮.

মানি, পুরনো শেখাটাকে ‘আন-লার্ন’ করা কষ্টের। সেটাকে মেনেই চিন্তা করতে হবে নতুন ‘কনসেপ্চুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক’, বড় আকারে – সবাইকে নিয়ে। ব্যবহারকারীদের নিয়ে। টাকা দেয় তো তারাই। তাদের জন্যই তো সবকিছু। চারটা কম্পোনেণ্টকে আলাদা করে মাইলস্টোনে ভাগ করলেই ‘ফোকাস’ এরিয়াগুলো বোঝা যাবে সরকারের দিক থেকে। ইকোসিষ্টেমের প্রতিটা কম্পোনেণ্টকে আলাদা করে সেটার জন্য সরকারের কোন কোন এজেন্সি কাজ করবে সেটা বের করতে হবে আগে। সেটার ‘ফীডব্যাক’ লুপ যাবে সরকারী বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলোতে। সেটাকে ঘিরে ঘোরাতে হবে সরকারের সম্পর্কিত পলিসিগুলোকে। শুধুমাত্র ব্রডব্যান্ড নীতিমালা নিয়ে কাজ করতে গেলে পয়সা, সময় আর ‘ফোকাস’ নষ্ট হবে আরো বেশি। আমাদের মতো গরীব দেশের জন্য সেটা হয়ে যাবে বড় ধরনের বিলাসিতা। এখনকার ‘ব্রডব্যান্ড প্লান’ আগের মতো নেই আর। এটা শুরু হয় দেশের ‘দর্শন’ নিয়ে। দেশ কি চায়, সেটা বের করতে হয় আগে। টেকনোলজি বাদ, দেশের ‘প্রায়োরিটি’ বের করতে হয় খুটে খুটে। উদাহরণ দেখবেন নাকি একটা? ‘কানেক্টিং আমেরিকা’ বলে ওদের ন্যাশন্যাল ব্রডব্যান্ড প্ল্যানটা দেখলে পরিষ্কার হবে সবার। দেখুন তাদের দর্শনগুলো – প্রথম কয়েক লাইনে। সবকিছু আছে ওতে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা, চিকিত্‍সা ব্যবস্থা, সরকারের কাজের জবাবদিহিতা, এনার্জি খাত, মানুষের নিরাপত্তা, আরো অনেক কিছু – কোন কিছু বাদ রাখে নি তারা। এক্সিকিউটিভ সামারিটা না পড়লে ব্যাপারটা না ধরতে পারার সম্ভাবনা বেশি। একটা দেশ কি চায়, সেটাই এনেছে এই প্ল্যানে। বিশাল ক্যানভাস।

৬২৯.

‘বিল্ডিং ব্রডব্যান্ড’ বইটাতে আমাদের মতো দেশগুলো কি ধরনের ভুল করতে পারে সেগুলোর বেশ কিছু ধারনা দিয়েছেন আগেভাগেই। ব্রডব্যান্ড মানে ইন্টারনেটের মতো প্রোডাক্টের ডিমান্ড তৈরি করার মতো ‘ব্যাপারটা’র ধারনা না থাকাতে পুরো ইনভেস্টমেন্ট চলে যায় ‘সাপ্লাই’ সাইডে। মানে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি হলেই খুশি। কিভাবে বাড়াতে হবে ব্যবহারকারীদের সংখ্যা, তৈরি করতে হবে নতুন নতুন সার্ভিস, নতুন গ্রাহকবান্ধব অ্যাপ্লিকেশন – সেটা পলিসিতে না থাকাতে পুরো কাজটাই যায় ভেস্তে। ‘ইকোনোমি অফ স্কেল’ – ব্যবহারকারী বাড়লে কমবে দাম, আর দাম কমলে আসবে নতুন নতুন সার্ভিস, নতুন ইনভেস্টমেন্ট। ইকোসিষ্টেমের তুখোড় সাইকেল হচ্ছে জিনিসটা। কম্পোনেণ্টগুলোর মধ্যে ‘ইন্টার-ডিপেনডেন্সি’ থাকাতে পুরো জিনিসটাকে ফেলতে হবে বড় ক্যানভাসে। ইংরেজিতে যাকে আমরা বলি ‘হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ’, তাহলেই কাজ করবে পুরো ইকোসিষ্টেম। কম্পোনেণ্টগুলোর একটার ওপর আরেকটার নির্ভরশীলতা কাজ করে অনেকদিক থেকে। হাই-স্পীড ট্রান্সমিশনে ইনভেস্টমেন্ট আসা মানে ‘কোয়ালিটি অফ সার্ভিস’ বাড়বে আমাদের দরকারী সব সার্ভিসগুলোতে। আর সেটা বাড়িয়ে দেবে ‘ব্যান্ডউইডধ ইন্টেসিভ’ অ্যাপ্লিকেশন তৈরির মাত্রা। যতো বেশি অ্যাপ্লিকেশন, ততো বেশি টানবে নতুন নতুন গ্রাহকদের। নতুন গ্রাহকেরা চাপ তৈরি করবে নেটওয়ার্ক এক্সপ্যানশনের কাজে। ফলে বাড়বে ইন্টারনেট আর ব্রডব্যান্ডের ওপর নতুন ইনভেস্টমেন্ট। পুরো পৃথিবী বসে আছে পয়সা নিয়ে। ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার জন্য বসে আছে কোম্পানীগুলো।

৬৩০.

নতুন সার্ভিস আসা মানে নতুন কনটেন্ট তৈরির হিড়িক। কনটেন্ট তৈরি করছেন ব্যবহারকারীরা নিজেই। ইন্টারনেটের শুরুতে ডাউনলোডই ছিলো বেশি। আজ – পাল্টে গেছে দাবার গুটি। অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে গুগল আর ফেসবুকের মতো কোম্পানীগুলো। হাজার হাজার গিগাবাইটের ‘ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট’ আসছে আপনার আমার দিক থেকে। আমার আপনার ভিডিও, ছবি, ব্লগ পোস্ট দিয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট। ষাট হাজার ছবি আছে আমারই, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। আগে কনটেন্ট তৈরি করতো মিডিয়া কোম্পানীগুলো। এখন সেটা চলে এসেছে গ্রাহকদের হাতে। ফলে, দরকার হচ্ছে হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক – ব্যবহারকারীর দোরগোড়ায়।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

If the world is cold, make it your business to build fires.

– Horace Traubel

৫৮৮.

স্বাধীন, শক্তিশালী রেগুলেটরি সংস্থা সবসময় চেয়েছে ডাব্লিউটিও। ইন্ডাস্ট্রির আর রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত নয় এমন সংস্থা। সরকারী বেসিক টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে এমন কোম্পানিকেও ছাড় দিতে পারবে না এই রেগুলেটর। বাজারে অন্য কোম্পানিগুলোকে দেখভাল করতে হবে এক নীতিমালা দিয়ে। টেলিযোগাযোগে স্পেকট্রাম, ‘রাইট অফ ওয়ে’ আর নাম্বারিং হচ্ছে দেশের সীমিত সম্পদ। স্পেকট্রাম হচ্ছে আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য লাইফলাইন। ভবিষ্যত ব্রডব্যান্ড নির্ভর করছে এর ওপর অনেকাংশে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর সাত শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি নির্ভর করছে এর ওপর।

৫৮৯.

আর নাম্বারিং হচ্ছে সবার জন্য ভয়েস কল করার নিশ্চয়তা। ইউনিভার্সাল এক্সেস। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বসাতে গেলে রাস্তার ‘রাইট অফ ওয়ে’র মতো তাদের ‘লিগাল এক্সেস প্রভিশনিং’য়ে সরকার কিছু টাকা পায়। আবার সেটা ঠিকমতো না বলা থাকলে সমস্যায় পড়ে ইনভেস্টররা। দক্ষতার সাথে সম্পদগুলোর ‘অ্যালোকেশন’ না হলে দেশ হারায় প্রবৃদ্ধির সুযোগ। সম্পদগুলোর ‘অ্যালোকেশন প্রসিডিউর’ হতে হবে স্বচ্ছ, পক্ষপাতিত্ব ছাড়া। ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর বর্তমান ‘অ্যালোকেশন’ উন্মুক্ত থাকতে হবে সবার জন্য। সবাই জানবে কে কি পাচ্ছে। তবে সরকারী ‘অ্যালোকেশনে’র বিস্তারিত দরকার নেই এই চুক্তিতে।

৫৯০.

দেশগুলোর ডাব্লিউটিও’র এইসব ‘কমিটমেন্ট’ বিশ্ববাজারে একটা শক্ত সিগন্যাল দেয়। মানে সেক্টরে রিফর্ম চাচ্ছে দেশটা। আবার চুক্তিতে সাক্ষর করেছেন কিন্তু মানছেন না – তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। মেষপালকের ওই নেকড়ে আসার গল্পে আসবে আর না কেউ। ইনভেস্টমেন্ট ‘ক্রেডিবিলিটি’ মানে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে দেশ। কয়েকটা কনসাল্টিং ফার্মের রিপোর্ট দেখে যা বোঝা গেল যারা ডাব্লিউটিও’র রেফারেন্স পেপারে সত্যিকারে ‘কমিট’ করেছিলেন – তাদের দেশে এফডিআই এসেছে অনেকগুণ।

৫৯১.

আসলেই অনেকগুণ। আর বেশি এফডিআই মানে বেশি প্রতিযোগিতা। নতুন নতুন টেলিযোগাযোগ ইনফ্রাস্ট্রাকচার। নতুন প্রোডাক্ট, হাজারো বিকল্প – দাম না কমে যাবে কোথায়? মানে আসল (প্রোডাকশন কস্ট) দামের কাছাকাছি চলে আসবে ইন্টারনেটের দাম। অথবা এখনকার দামে অনেকগুণ বেশি ইন্টারনেট। তবে এফডিআই আনার জন্য সবচেয়ে বড় কাজ করে দেশটা যখন তার নিজ টেলিযোগাযোগ কোম্পানিটা বেসরকারি করে দেয়। এটা ইনভেস্টরদের জন্য সবচেয়ে বড় সিগন্যাল। মানে, সরকারী কোম্পানিকে বাঁচাতে অন্যায় কিছু করবে না দেশটা।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Older Posts »