Feeds:
Posts
Comments

Archive for July, 2014

Education costs money. But then so does ignorance.

– Sir Claus Moser

৫৬২.

নীতিমালার একটা ‘প্রেডিক্টাবিলিটি’র কথা বলে ইনভেস্টররা। যেকোনো ব্যাপারে একটা চালু নীতিমালা থাকার কথা। লেখা থাকলে ভালো। আর লেখা না থাকলে রেগুলেটরে ওই মানুষটা পাল্টালে বিপদ। যেকোন ঝামেলা মেটানোর জন্য একটা ‘ওয়েল ডিফাইন্ড’ প্রোসিডিং না থাকলে একেক সময়ে একেক রেজল্যুশন হলে ভয়ে থাকে ইনভেস্টররা। এধরনের অনিশ্চয়তা চায় না বিলিয়ন ডলারের এই ইনভেস্টররা। আর তারা ‘হিট এন্ড রান’ ব্যবসা করতে আসেনি নতুন দেশে। ‘লাভ করলাম আর চলে গেলাম’ কিসিমের ব্যবসা হয় না এই ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেক্টরে। আর যদি পাল্টাতেই হয় – সেটার একটা ‘প্ল্যানড’ রোডম্যাপ থাকতে হবে আগে থেকে। সবাই জানবে পরিবর্তনটা। কবে হবে, কিভাবে হবে, কে করবে, কাদের মাধ্যমে করবে, ইন্টার-ডিপেন্ডেন্সি কোথায় – সব বলা থাকবে ওই পাবলিক ডকুমেন্টে।

৫৬৩.

উন্নয়নশীল দেশগুলোর ‘বোঝার সমস্যা’র কারণে বড় বড় বাণিজ্যিক লেনদেন ব্যহত হচ্ছিলো অনেকদিন ধরে। আবার টেলিযোগাযোগ সেবাটাও দাড়িয়ে গেল দেশেগুলোর জনগনের একটা মৌলিক অধিকার হিসেবে। ব্যবসাতে সমস্যা হওয়াতে সেটা নিয়ে এগিয়ে এলো ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন, ডাব্লিউটিও। বেসিক টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস নিয়ে প্রথম চুক্তিটা হয় উরুগুয়ে রাউন্ডে (১৯৮৬-৯৪)। ততোদিনে টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস জেনারেট করছে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার। এটা নিয়ে সব দেশ না ভাবলেও ভাবছিল অনেকেই। প্রথম কথা শুরু হয় ভ্যালু এডেড সার্ভিস নিয়ে। মোবাইলটাও ছিলো ওই সার্ভিসের মধ্যে। ১০৮টা দেশ টেলিযোগাযোগের ভেতরে বাণিজ্যিক গল্পে সন্মতি দেয়। উরুগুয়ে রাউন্ডের পর (১৯৯৪-৯৭) নতুন দেন-দরবারে বেসিক টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এই সেক্টরের রিফর্মের আলাপটা চলে আসে। এতো বড় বাজার – দরকার রেগুলেটরি রিফর্ম।

৫৬৪.

পুরনো মান্ধাতা আইন দিয়ে না চালিয়ে নতুন ‘ইনোভেটিভ’ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরের প্রয়োজন মনে করলো সব দেশ। রেগুলেটরের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে দরকার চমত্কার একটা আইন। সময়োপযোগী। সরকারী কোম্পানি ভালো না ব্যবসায়। বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে এগুলো দিয়ে দেয়া যায় বরং। রেগুলেটর না থাকলে বেসরকারি কোম্পানিগুলো পারবে না সরকারী কোম্পানির সাথে। দরকার শক্ত রেগুলেটর। কথা বলবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ওই ১০৮টা দেশ যে চুক্তিতে মত দেয় সেটাতে নতুন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি খোলা থেকে শুরু করে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের নীতিমালা আর দেশগুলোর ভেতর যোগাযোগের নতুন মাত্রা আনলো বলে। ওটা না হলে আজকের সাবমেরিন ক্যাবলের দেখা পেতেন বলুন?

৫৬৫.

মজার কথা হচ্ছে ওই একশো আটটার মধ্যে নিরানব্বইটা দেশ বেসরকারি প্রতিযোগিতা আনতে চাইলো এই টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে। ফিক্সড, মোবাইল আর ইন্টারন্যাশনাল লঙ-ডিসটেন্স সার্ভিস – প্রায় সবকিছুতেই। এরমধ্যে বিরাশিটা দেশ হচ্ছে আরো বুদ্ধিমান। তারা সেক্টরটাকে আরো বাড়ানোর জন্য মেনে নিলো একটা ব্লুপ্রিন্ট। ‘রেগুলেটরি প্রিন্সিপালস’ বলে টেলিযোগাযোগ রেগুলেশনের ওপর একটা রেফারেন্স পেপার তৈরী করলো তারা। ওটা পড়লে মাথা খারাপ হয়ে যাবে আপনার। আজকের নয়, বিশ বছর আগের চিন্তা কিন্তু!

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

You can never cross the ocean until you have the courage to lose sight of the shore.

– Christopher Columbus

৫৫৮.

আফ্রিকার সতেরোটা দেশে অপারেট করতো কুয়েতি অপারেটর জৈন। সেই জৈনকে কিনেছে পরে ভারতী এয়ারটেল। অতগুলো আফ্রিকার দেশে অপারেট করার কারণে জৈনের একজন গ্রাহক অন্যদেশে গেলেও কথা বলতো লোকাল রেটে। কোথায় রোমিং কোথায় কি? বাজারে পলিসি না থাকলে ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করে নেবে তার রাস্তা। এটাই ইনোভেশন! সত্যিকার অর্থে, বহু বাজারে ব্যবসা থাকার অনেকগুলো সুবিধার এটা একটা। আমাদের অপারেটরগুলো চাইলে পারে এটা। ইন্টারন্যাশনাল লঙ-ডিসটেন্স নীতিমালায় আটকে আছে এধরনের ব্যাপারগুলো। লিখে নিন একটা কথা। ঐদিন বেশি দুরে নয় যখন ইন্টারন্যাশনাল কলের দাম কমে আসবে লোকাল কলের নিচে। মিনিট ভিত্তিক কলের হিসেব উঠে যাচ্ছে অনেক দেশে। পয়সা দেবেন মাস ভিত্তিক। আনলিমিটেড কল। রেগুলেটরকে বুঝতে হবে জিনিসগুলো। ভয়েস কলের ওপর রেভিনিউয়ের আশা নিয়ে বসে থাকলে ভুল করবে সবাই।

৫৫৯.

ফিরে আসি স্বচ্ছতায়। যতো যাই হোক না কেন, কিছু কিছু নীতিমালায় স্বচ্ছতা না থাকলে ভয় পায় টেলিযোগাযোগ ইনভেস্টররা। অনিশ্চয়তা ভর করে তাদের ওপর। বানানো কথা নয় আমার। হাজারো মিটিং থেকে উঠে এসেছে এ কথাগুলো। পুরনো অপারেটরের সাথে ইন্টারকানেকশন মানে আন্তসংযোগ নীতিমালা হতে হবে ব্যবসাবান্ধব। নতুন অপারেটর এলো – কল পাঠাতে পারলো না অন্য অপারেটরে। আসবে টাকা নিয়ে কেউ? ফরওয়ার্ড লুকিং কস্ট এনালাইসিস থাকতে হবে রেগুলেটরের কাছে। ‘কস্ট প্লাস’ আর ‘রিটেল মাইনাস’ প্রাইসিংয়ে দক্ষতা দিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে রেগুলেটরকে। নতুন ইনভেস্টমেন্টকে। দেশের টেলিযোগাযোগ সার্ভিসের মূল্য নির্ধারণের নীতিমালা কেমন আর সেটা থাকলে সেটা কতোটা ব্যবসাবান্ধব সেটা দেখতে চায় নতুন টাকাওয়ালা। ভবিষ্যতের বাজার উন্মুক্ত করতে রেগুলেটরের রোডম্যাপ না থাকলে অনেক পয়েন্ট হারায় দেশ।

৫৬০.

আমাদের দেশ ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন’ মানে ডাব্লিউটিওতে কি কি ব্যাপারে সাক্ষর করেছে সেটা কিন্তু জানে সে। রিসার্চ ছাড়া আসবে না নতুন ইনভেস্টমেন্ট। বিশেষ করে নতুন দেশে। রিসার্চ অর্গানাইজেশনগুলো যোগাযোগ করতো আমার সাথে। কিভাবে যেন যোগাড় করতো নাম ঠিকানা আমার। তবে, বলতো না কোন কোম্পানির হয়ে রিসার্চ করতো তারা। এটাই নিয়ম। নিয়ম করে উত্তর পাঠাতাম ইমেইলে। দেরী করলে ক্ষতি আমাদের। বেঁচতে হবে না দেশকে? দরকার নেই রোডশো’র। দেখিয়ে দাও আমাদের নীতিমালাগুলোকে। সিদ্ধান্ত নেবে তারাই। দেশকে বেঁচতে পারাটা অনেক কষ্টের কাজ। দেশ বিদেশের হাজারো নীতিমালা রাখতে হয় মুখস্ত! কখন কি লাগে সেটা আগে থেকে বলা দুস্কর। গ্লোবালাইজেশনের যুগে গ্লোবাল ফুটিং না থাকলে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে প্রতিযোগী দেশগুলো। ফেলেও দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। মিডিয়াতে আসে না ওগুলো। সুক্ষ মারপ্যাচের কাজ। আমরা আটকে আছি বেসিক জিনিস নিয়ে এখনো। খালি কথায় ভিঁজে না চিড়ে। ওটা আসবে কমিটমেন্ট থেকে। পাঁচ বছর পর পর ‘কমিটমেন্ট’ পাল্টালে ঘেঁসবে না কেউ।

৫৬১.

আরেকটা বড় ব্যাপার হচ্ছে ‘ডিসপিউট রিজোল্যুশন’, মানে রেগুলেটর কোন ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দিলে যাবে কার কাছে? এ ব্যাপারগুলো ঠিকমতো না বলা থাকলে টাকা আনতে কষ্ট হয় দেশগুলোর। আবার – নতুন ইনভেস্টমেন্ট না আসলে বাজার প্রতিযোগিতা আসে না ভালো ভাবে। কমে না দাম। এদিকে, ইনভেস্টমেন্ট করার পর পরিবেশের অভাবে কোনরকমে টাকা তুলে চলে যেতে চাইলে ন্যায্য দামের অধিকার হারায় গ্রাহকেরা।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Everything that is possible to be believed is an image of the truth.

— William Blake

৫৫৩.

ইনভেস্টরদের উইশলিস্টের প্রথমেই আছে স্বাধীন, রাজনৈতিক অথবা ইন্ডাস্ট্রির প্রভাবমুক্ত – শক্তিশালী রেগুলেটরি সংস্থা। ন্যায়বিচার আর অবৈষম্যমূলক আচরণ করবে সবার সাথে। স্বাধীন ব্যাপারটা আসছে রেগুলেটরের রোল নিয়ে। যা চলবে – সার্বজনীনভাবে প্রকাশিত কিছু ‘ওয়েল ডিফাইনড’ নীতিমালা নিয়ে। ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহার দিয়ে নয়। মাঠে নামার আগেই জানবে সবাই কোনটা ফাউল আর কোনটা নয়। নামার পর ইচ্ছেমতো ‘ফাউল’ দিলে খেলার আগ্রহ হারাবে এই পয়সাঅলা কোম্পানিগুলো। যাই করুন কথা বলে নিন গ্রাহক আর ইন্ডাস্ট্রির সাথে। গ্রাহক হচ্ছে যিনি সরাসরি কিনছেন জিনিসটা। আর ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করছেন সেটা।আপনি হচ্ছেন গিয়ে রেফারি। নিয়মবিরুদ্ধ জিনিস ছেড়ে দিলে ইন্ডাস্ট্রি সেটাকে ‘প্র্যাকটিস’ ধরে করতে থাকে বার বার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ গ্রাহক। আমার ধারণা, ইনভেস্টরদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হিসেবে নিলে নিলে দেশের লাভ বেশি। ওই বিচক্ষণতার জন্য জানতে হবে রেগুলেটরকে বেশি। শিখতে হবে অনেক। না জানলে যে সমস্যাটা হয় সেটার নাম হচ্ছে গিয়ে ‘রেগুলেটরি ক্যাপচার’। গুগল করবেন নাকি একবার?

৫৫৪.

সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক কথা বার্তা বলে থাকে ইনভেস্টররা। মানে, যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা যাতে সমান হয় সবার জন্য। ‘ক’এর জন্য সিদ্ধান্ত এক আর ‘খ’ বিদেশ থেকে এসেছে বলে ওর জন্য অন্যরকম তাহলে সেটা ইনভেস্টর কনসোর্টিয়ামে ভুল সিগন্যাল পাঠায়। আবার যাদের টাকা পয়সা বেশি – তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয় অনেক দেশেই। রাজনৈতিক ‘লবিস্ট’রা এব্যাপারে সিদ্ধহস্ত। আপনার পক্ষে সিদ্ধান্ত এনে দেবে – নো ম্যাটার হোয়াট! একটা ফী’র বিনিময়ে। এ ব্যাপারগুলো ‘ব্যাকফায়ার’ করে নতুন ইনভেস্টমেন্ট আনার জন্য। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন বড়রা। রেগুলেটরকে বুঝতে হবে বড়রাই রেগুলেটরকে ‘এনগেজ’ করবে বেশি। এটাই নিয়ম। তাই বলে যে ছোটরা কিছু বলতে পারছে না সেটা জানতে হবে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে। এরপর বসিয়ে দিন সামনাসামনি। রেগুলেটর আগে থেকে সবকিছু লিখে রাখলে সবার জন্য সুবিধা। উন্নতদেশে রেগুলেটরকে নিয়ে মিডিয়াতে আলাপ হয় কালেভদ্রে। কারণ, সবাই সবকিছু জানে। কোনটা ফাউল আর কোনটা নয় – সেটা বলে রেখেছে রেগুলেটর আগে থেকেই। মিডিয়াতে কথাবার্তা না হবার মানে হচ্ছে সবকিছু চলছে ঠিকমতো!

৫৫৫.

এখন সবাই খুব কানেক্টেড, কোন দেশে কি হচ্ছে সবাই জানে আগেভাগে। এমনকি, ওই দেশের মানুষের আগে। মনে রাখতে হবে – পৃথিবী চালায় কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড। টেলিযোগাযোগ বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলোর অপারেশন আছে অনেকগুলো দেশে। এমন বড় যে ওই কোম্পানিগুলোর পেছনে আছে বড় বড় দেশগুলো। এই কোম্পানিগুলোই ঘুরে ফিরে টাকা ঢালছে একেক দেশে। তারা দেশগুলোকে চেনে ওই দেশের মানুষগুলো থেকে বেশি। একেকটা ‘ইনোভেশন’ আর পেটেণ্টের পেছনে কতো টাকা ঢালছে সেটার হিসেব নাই বা দিলাম আর।

৫৫৬.

না জানলে হবে কিভাবে? বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট তো না জেনেশুনে করবেন না কেউ? আপনি করবেন? আমরাই তো দশ টাকার ইনভেস্টমেন্টের আগে চিন্তা করি দশ বার। বোর্ডমিটিংয়ে শেয়ারহোল্ডারদের কি বোঝাবেন? আমাদের দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ তাদের নখদর্পনে। দেশগুলোর নীতিমালা মুখস্ত তাদের। কোথায় ইনভেস্টমেন্ট পরিবেশ ভালো আর কোথায় অপেক্ষা করতে হবে আরেকটা সরকারের জন্য – সেটা তাদের জানা। ইনভেস্টমেন্ট কতো প্রকার আর কি কি প্রকারের – সেটা দেখতে তাকাতে হবে ভারত আর মায়ানমারের দিকে। সামনের বছরগুলোতে।

৫৫৭.

সবার কিছু না কিছু অপারেশন আছে আমাদের মতো দেশগুলোতে। একেক বাজারের জন্য আলাদা রিসার্চ টীম আছে তাদের। আমাদের দেশে কোন ধরনের প্রোডাক্ট চলবে ভালো – আর কোনটা নয়, সব জানা তাদের। সব জ্ঞান গিয়ে জমা হয় তাদের গ্রুপ হেডকোয়ার্টারে। এই জ্ঞানগুলো বাঁচায় কোম্পানিগুলোকে। কোটি টাকা খরচ করে নামালেন একটা প্রোডাক্ট – আর তা না চললে সেটার গচ্চা দিতে হয় আমাদের মতো গ্রাহকদের। সবকিছু মিলিয়ে বিশাল কার্যক্ষেত্র আর বাজার তৈরিতে সিদ্ধহস্ত তারা। তাদের সম্মিলিত জ্ঞান একেকটা দেশ থেকে অনেক বেশি। ফলে – দেশগুলোও থাকতে চায় তাদের গুডবুকে।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

The best time to plant a tree was 20 years ago. The second best time is now.

– Chinese Proverb

৫৪৯.

প্রচুর আন্তর্জাতিক মিটিংয়ে দেশগুলো কিভাবে নিজেদের বিক্রি করছে সেটার কিছু আর্ট রপ্ত করেছিলাম ওই সময়ে। বহুজাতিক ফোরামগুলোতে আলাদা স্লট কিনবে দেশগুলো। ওই সময়ে ডেকে নিয়ে যাবে আপনাকে। অর্গানাইজার থেকে ফোন আর ইমেইল এড্রেস নিয়ে মিষ্টি মিষ্টি ‘সফট রিমাইন্ডার’ দিতে থাকবে সময় সময়ে। মনে হবে আপনি রাজা। খাওয়াবে পেট পুরে, নিজেদের ‘স্ট্রেন্থ’ গুনগুন করে বলতে থাকবে – পুরো সময়ে। বসিয়ে দেবে তাদের কোম্পানিগুলোর সাথে। ফাঁকে ফাঁকেই। ফেরৎ আসার সময়ে ধরিয়ে দেবে সুন্দর সুন্দর ব্রোশিওর। এমন ভাব, ভুলে গেলে পড়ে নেবেন দেশে গিয়ে। আর দেশগুলোর গিফট আইটেম তো আছেই।

৫৫০.

মোদ্দাকথা, টাকা আনো – দেবো এই সুবিধা, ওই সুবিধা। জায়গা দেবো তোমার পছন্দের অঞ্চলে। আর চেয়েই দেখো না একবার? নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেবো সস্তায়। যেতে হবে না ‘বুরোক্রেটিক’ সরকারী অফিসে, ‘ওয়ান স্টপ শপ’ করে দেবো তোমাদের জন্য। সরকারী সব পারমিট পাবে এই একটা অফিস থেকেই। বেশি দুরে যেতে হবে না এগুলো দেখতে, শ্রীলংকা ঘুরে আসুন ইদানিং! অথবা ‘আসিয়ান’ দেশগুলোতে। একমুদ্রা চালু হবার আগে পাগল হয়ে গেছে ওরা। বেচাবেচির দেখেছেন কি? সবাই চাইছে টাকা আসুক নিজের দেশে। সেটার জন্য যতো ইনফ্রাস্ট্রাকচার আধুনিকীকরণ – তার সব করছে দেশগুলো।

৫৫১.

জানা কথা, দেশের মাথাগুলো সরকারে থাকে না অনেক দেশেই। তাতে কি? অফিসের কাজগুলো আউটসোর্স করে দিন বিআরটিএ’র নম্বরপ্লেট আর লাইসেন্স অথোরাইজেশনের মতো। যে যেটা ভালো পারে তাকে দিয়ে নিন না করিয়ে? দাড়া করান ভালো সিস্টেম, সরকারী না বেসরকারী মানুষ – কেউ ভাঙ্গবে না নিয়ম। সরকারী অফিসে বসে বেসরকারী কোম্পানির চটপটে ছেলেমেয়েদের কাজ দেখলে ভরে যায় মন। তবে, প্রজেক্টের শেষে বিষয়টা চালু থাকলেই খুশি মানুষ। ছোট করে আনছে সরকারের পরিধি – দেশে দেশে। সরকারও পারছে না সবকিছু। নীতিমালা তৈরী করতে সরকার সাহায্য নিচ্ছে ক্রাউডসৌর্সিং মতো মেগা প্ল্যাটফর্মের। আমি নিজেও ব্যবহার করেছি এই প্ল্যাটফর্ম। ভিসা প্রসেসিংয়ের মতো সংবেদনশীল কাজগুলো করছে বেসরকারী কোম্পানি – দুতাবাসের হয়ে। অন্যরা পারলে পারছি না কেন আমরা? পারবো আমরাও। পাগলও ভালো বোঝে নিজের। আমাদের বুঝতে সময় লাগছে, এই যা!

৫৫২.

অনেকগুলো বিদেশী কোম্পানি টেলিযোগাযোগ ব্যবসা করছে বাংলাদেশে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলো একা আসতো না আমার সাথে দেখা করতে। তাদের দুতাবাসের ট্রেড সম্পর্কিত সেকশনের এক দুইজনকে নিয়ে আসতো সাথে। লক্ষ্য একটাই। কোম্পানিটাকে প্রমোট করা সরাসরি মানে বেচা। এই হাজারো বিনিয়োগকারীদের সাথে বসে তাদের মনের ভাব মুখস্ত হয়ে গেছে আমার। টেলিযোগাযোগ নীতিমালার ওপর বৈদেশিক ইনভেস্টমেন্টের একটা অংশ নিয়ে থাইল্যান্ডের সেই কোর্সের পর মাথা খুলেছে আরো বেশি। তা – টেলিযোগাযোগ ইনভেস্টররা কি চায় একটা দেশ থেকে? ম্যালা কিছু। আর সেটা নিয়েই চলছে দেশগুলোর মধ্যে অলিখিত যুদ্ধ। যারা তাদের মনের কথা শুনে করছে ‘রেগুলেটরি রিফর্ম’, কোটি ডলার চলে যাচ্ছে ওই দেশগুলোতে।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Two roads diverged in a wood, and I—I took the one less traveled by, And that has made all the difference.

Robert Frost

৫৪৬.

নীতিমালার রোডম্যাপ না থাকলে হটাৎ করে নতুন একটা নীতিমালা ভয় পাইয়ে দিতে পারে ইনভেস্টরদের। ওই নতুন নীতিমালা ছাড়া তিরিশ বা পয়তাল্লিশ বছরের বিজনেস প্ল্যানে যেই প্রোডাক্টের দাম হওয়া উচিত ছিলো ‘ক’ টাকা, সেটা হয়তোবা হয়ে যাবে ৩’ক’ টাকায়। নতুন নীতিমালা যা রেগুলেটরি রোডম্যাপে নেই – সেটা তাদের খরচ বাড়াবে ব্যবসাতে। প্রতিটা নতুন নীতিমালার ‘কমপ্লায়েন্স’ খরচ আগে থেকে তাদের হিসেবে না থাকলে সেটার বাড়তি টাকাটা চলে যাবে গ্রাহকের ওপর। মোদ্দাকথা, রেগুলেটরি সার্টেনিটি না থাকলে যত তাড়াতাড়ি তাদের লগ্নি’র টাকাটা ওঠাতে পারে সেদিকে নজর থাকে বেশি। সুযোগ পেলে টাকাটা তুলে কোম্পানিটা বিক্রি করে অন্য বাজারে যাবার চেষ্টায় থাকবে কোম্পানিগুলো।

৫৪৭.

মানে নীতিমালা করতে হলে রোডম্যাপটা তৈরী করে দিতে হবে সরকারকে। অনেক আগেই। আলোচনা করে নিতে হবে ইনভেস্টরদের সাথে। কাঁচামাল হিসেবে ধরুন স্পেকট্রামের কথা। কবে কি কি বিক্রি করবেন সেটা আগে থেকে না বললে ইনভেস্টররা টাকা যোগাড় করবে কোথা থেকে? এগুলো হচ্ছে লঙ টার্ম প্ল্যানিং। আগে থেকে না বললে হঠাৎ করে বেঁচা হয়না স্পেকট্রাম। ইনভেস্টমেন্টের জন্য তাদেরও যোগাড় করতে হয় টাকা। ফলে মোবাইল ব্রডব্যান্ড পেতে বসে থাকতে হয় বছরের পর বছর। আর স্পেকট্রাম অব্যবহৃত হিসেবে পড়ে থাকে ওই রোডম্যাপের অভাবে। এনপিভি, নেট প্রেজেন্ট ভ্যালুর ঘটে বিপর্যয়। যখন দেয়া হয় তখন দামও চলে যায় গ্রাহকের কাঁধে। নগদ নগদ।

৫৪৮.

সাত বছর বিটিআরসিতে বসে কথা বলতে হয়েছে অনেক দেশী বিদেশী ইনভেস্টরদের সাথে। বোর্ড অফ ইনভেস্টমেন্টের অনেকগুলো মিটিংয়ে ডাক পড়েছে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে। ফরেন ইনভেস্টরদের যারা টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় – তারা শুনতে চায় ‘হর্সেস মাউথ’ থেকে। ‘বিশেষজ্ঞ’ নাকি বুঝি না – তবে দেশকে বেঁচার ভালো সেলসম্যান হিসেবে কিছু নাম ছিলো আমার। পত্রপত্রিকায় আমাদের দেশকে নিয়ে বেচাকেনার আলাপ পড়ি অনেক। মনে হয়, আহা! দেশটাকেও যদি ঠিকমতো বেঁচতে পারতো আমাদের নীতিনির্ধারকরা?

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

The most difficult thing is the decision to act, the rest is merely tenacity.

– Amelia Earhart

৫৪৩.

আরেকটা উদাহরণ দেই। লীজ নিয়েছেন পুকুর পনেরো বছরের জন্য। তবে সেটা ‘রিনিউয়েবল’ তিরিশ বছর পর্যন্ত। চুক্তিনামা হয়েছে সেভাবেই। আবার, টাকা না দিলে বাড়বে না সময়। পাঁচ বছর পর থেকে শুরু হলো ঝামেলা। চুক্তিনামার কিছু ‘ক্লজ’ মানে ধারা পাল্টাতে চাচ্ছে পুকুরের মালিক। অথবা চুক্তিনামার বাইরের কিছু অতিরিক্ত সুবিধা চাচ্ছেন তারা। অনিশ্চয়তা শুরু হলো বলে। কি করবেন আপনি? তিরিশ বছরের বিজনেস প্ল্যান নামিয়ে নিয়ে আসবেন বছরভিত্তিকে। আগের আশি টাকার মাছ বেচবেন দুশো টাকায়। পুরো ইনভেস্টমেন্টের টাকা তিরিশ বছর ধরে না তুলে সেটাই তুলতে চাইবেন এক বছরে। মাছ মানে প্রোডাক্টের দাম না বেড়ে যাবে কোথায়? অনিশ্চয়তার মাশুল চলে যাবে গ্রাহকের ঘাড়ে।

৫৪৪.

অর্গানিক ফলের রস আর সরবতের বিজনেস নিয়ে চিন্তা করছিলাম কয়েকদিন। কিছু না পারলে করতে তো হবে কিছু? দেশের অনিশ্চয়তার কারণে বিজনেস প্ল্যান বাড়ানো যায় না পাঁচ বছরের বেশি। পাঁচ বছর ধরে বিজনেস প্ল্যানে প্রতি গ্লাস রসের দাম পড়ে পঞ্চাশ টাকা। সেটা দুবছরে নামিয়ে আনলে ওই একই প্রোডাক্টের দাম আসে সত্তুরের মতো। আবার সেটার ব্রেক-ইভেন ছয়মাসে নামিয়ে আনলে দাম পড়বে আরো বেশি। অথচ, এটার সাস্টেনিবিলিটি ধরে বিজনেস প্ল্যান করলে ব্রেক-ইভেনে আসার কথা না – তিন বছরের আগে। আবার, ভালো মডেলে – মার্কেট রিসার্চে প্রতি গ্লাস রসের দাম আসতে হবে তিরিশ টাকায়। তাহলে পাশাপাশি আরো একটা ব্যবসা খুলতে হবে এই ফল নিয়েই। নীতিমালাতে সমস্যা থাকলে ওটা খোলা না গেলে দামতো কমানো যাবে না আর।

৫৪৫.

মোবাইল বা ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস এক্সেস কোম্পানির মতো বিশাল ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিওতে ওই বাজারটাতে রেগুলেটরি সার্টেনিটি মানে ‘নিশ্চয়তা’ না থাকলে কোম্পানিগুলো ঝুঁকি নিতে চায় না। আবার একবার ইনভেস্টমেন্ট করে ফেললে কিভাবে তাড়াতাড়ি টাকাটা তোলা যায় সেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। ওই দেশে নতুন করে ইনফ্রাস্ট্রাকচারে বিনিয়োগ করতে পায় ভয়। ফলে প্রোডাক্টের ‘ইউনিভার্সাল এক্সেস’ ব্যাপারটা গৌন হয়ে পড়ে। ‘ইউনিভার্সাল এক্সেস’ হচ্ছে একটা রেগুলেটরি ভাষা, মানে টেলিযোগাযোগের মতো সার্বজনীন সেবাটা যাতে সবার কাছে পৌঁছাতে পারে সেটার ব্যবস্থা নিবে সরকার। ওই অপারেটরদের মাধ্যমে। সেবা পৌঁছুতে লাগবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার আর দামটা হতে হবে সবার নাগালে।

[ক্রমশঃ]

এমেলিয়া এরহার্টকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে অনেক দিনের। বিশেষ করে আমার মেয়েটার জন্য। হাজারো চাপে মাথা ঠান্ডা আর জীবনকে জয় করার মন্ত্র জানতে হলে পড়তে হবে এমেলিয়াকে নিয়ে।

Read Full Post »

Public servants say, always with the best of intentions, “What greater service we could render if only we had a little more money and a little more power.” But the truth is that outside of its legitimate function, government does nothing as well or as economically as the private sector.

– Ronald Reagan

৫৩৯.

ফিরে আসি মূল প্রশ্নে, বাইরের কোম্পানি বা মানুষটা পয়সা ফেলবে কেন এই দেশে? মনে আছে ওই তিনটা রিপোর্টের কথা? যেই কোম্পানিটা পয়সা ফেলবে সেটাতো চালায় আপনার আমার মতোই মানুষ। পয়সা আমার হলে কি করতাম – এই আমি নিজে? ভালো জায়গা বের করতাম খুঁজে। ইনভেস্টমেন্টের জন্য। ঝামেলা ছাড়া লাভ চাইতাম আমি। মূল টাকার ওপরে। খুঁজতাম এমন একটা দেশ যার – ক. অর্থনীতিটা তুলনামূলক ভাবে শক্তিশালী, খ. জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ট্রেন্ড সুবিধার দিকে, গ. ইনফ্রাস্ট্রাকচার মানে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে ভালোভাবে, ঘ. মুদ্রাস্ফীতি কম, ঙ. ওই দেশের টাকার রিস্ক ফ্যাক্টর আছে কিনা, চ. বাইরের মুদ্রার এক্সচেঞ্জ কন্ট্রোল আছে কিনা?

৫৪০.

লিস্ট মনে হচ্ছে ছোট – তাই না? আসলে লিস্টি কিন্তু অনেক বড়। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা বিশালভাবে প্রভাবিত করে এই টাকাওয়ালাদের। ক. দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমার ব্যবসায়ের সাথে যায় কিনা, খ. সরকারের ‘বিজনেস ফিলোসফি’ মানে ব্যবসায়িক দর্শন আছে কিনা , গ. থাকলে তার ট্র্যাক রেকর্ড কেমন? শেষ গল্প হচ্ছে প্রনোদনা নিয়ে। ইনসেনটিভ কে না চায়? ক. করারোপনের মাত্রা কেমন? খ. ট্যাক্স ইনসেনটিভ আছে কিনা? গ. ওই দেশে সম্পত্তি কিনলে তার অধিকারের মাত্রাটা জানতে চাইতে পারি আমি। সবশেষে, মানুষের শিক্ষার হার, জনবলের দক্ষতা, অন্যান্য ব্যবসার সুযোগ আছে কিনা, আবার – ওই ব্যবসায় লোকাল কম্পিটিশন কেমন ইত্যাদি না জানলে বিপদে পড়বে টাকাওয়ালা।

৫৪১.

ভালো কথা – এ ব্যাপারগুলো খাটবে সব ব্যবসায়। টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় গল্প কিন্তু আরো ভেতরে। ধরে নিন আপনি এসেছেন বাইরের কোন একটা দেশ থেকে। করতে চান টেলিযোগাযোগ ব্যবসা। বাংলাদেশে। পয়সা ঢালার আগে আপনার চেকলিস্টে কি কি থাকতে পারে – বলবেন কি আমাদের? একটা মোবাইল কোম্পানি খুললে তার লাইসেন্সের সময়সীমা হচ্ছে পনেরো বছর। আপনি যদি জানেন সময়সীমাটা, তাহলে বিজনেস প্ল্যান করতে সুবিধা হবে আপনার। আর তার সাথে ‘রেগুলেটরি সার্টেনিটি’ মানে লাইসেন্সের ‘ক্লজ’ মানে ধারাগুলো যদি পাল্টে যায় মাঝে মধ্যে – তাহলে ভয় পাবেন আপনি।

৫৪২.

বড় বড় কোম্পানিগুলো মোবাইল লাইসেন্স পনেরো বছরের জন্য নিলেও তারা জানে ভালো করে – তাদের চুক্তিনামা বাড়বে তিরিশ, পয়তাল্লিশ বছর করে। একটা কোম্পানি খুব বড় অপরাধ না করলে বাতিল হয়না তার লাইসেন্স। অনেককিছু জড়িত থাকে এর মধ্যে। ইনভেস্টমেন্ট, কার্যক্ষেত্র তৈরী হয়ে গেছে এর মধ্যে। ধরে নিলাম আপনার মোবাইল কোম্পানির বিজনেস প্ল্যান করলেন তিরিশ বছর ধরে। প্রথম দিকে ইনফ্রাস্ট্রাকচারে প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট দরকার পড়ে বলে আপনার কোম্পানির ব্রেক-ইভেনে পৌছাতে লাগলো না হয় লাগলো সাত বছর। মানে, আসল লাভ করা শুরু করলেন ওই সময়ের পর থেকে। আপনি লাইসেন্সের সময়সীমা নিয়ে নিশ্চিত থাকলে আপনার প্রোডাক্টের দামও হবে ওই সময়সীমার সাথে মিল রেখে। পনেরো হলে এক দাম – পয়তাল্লিশ হলে আরেক দাম! হিসেব সোজা।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

When I give food to the poor, they call me a saint. When I ask why the poor have no food, they call me a communist.

– Dom Helda Camara

৫৩৪.

আজকাল সবকিছু ডিজিটাল হওয়াতে ভয়েস ভিত্তিক সার্ভিসের পাশাপাশি সবধরনের সার্ভিস দিতে পারছে বড় বড় কোম্পানিগুলো। সেক্টর স্পেসিফিক রেগুলেটর পড়ে তখন বেকায়দায়। এক মোবাইল কোম্পানি যদি মোবাইল টিভি, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, লটারি আর ওটিটি (ওভার দ্য টপ) সার্ভিস দেয় – তাহলে সে একাই বাংলাদেশ ব্যাংক, তথ্য মন্ত্রনালয়, বিটিআরসি আর এনবিআরের আওতায় যাচ্ছে পড়ে। ‘একাউন্টিং সেপারেশন’ না থাকলে বুঝবেন কিভাবে ও অপব্যবহার করছে না ওর ক্ষমতা? চার রেগুলেটরের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে এটা বোঝা সম্ভব নয়। আবার, সমন্বয়হীনতা সবচেয়ে কষ্ট দেয় কোম্পানিগুলোকে।

৫৩৫.

‘একাউন্টিং সেপারেশন’ নিয়ে কাজ হয়েছে হাজারো রেগুলেটরি এজেন্সীতে। টেলিকম হচ্ছে একটা ছোট অংশ। ধরা যাক মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নিয়ে খুব ভালো করছে একটা কোম্পানি। সেটার লাভ দিয়ে যদি মোবাইল টিভি সার্ভিসটাতে দাম কমিয়ে দিলে বিপদে পড়বে অন্যরা। সেটার ‘প্রটেকশন’ দেবে রেগুলেটর। কীওয়ার্ড, একাউন্টিং সেপারেশন। আবার, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের কাঁচামাল হচ্ছে ‘ইউএসএসডি’। নিজের কোম্পানির জন্য ওই সার্ভিসটা নিতে গেলে যে দাম নেয়া হবে – একই দাম (টার্মস এন্ড কন্ডিশন) দিতে হবে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোকে। সিঙ্গাপুরের রেগুলেটরের এই গাইডলাইনটা ধরে শুরু করেছিলাম আমার কাজ। ‘হোয়াই রিইনভেন্টিং দ্য হুইল?’ দুহাজার চারের রিভিশন হলেও চমকে দেবে আপনাকে। সার্ভিস দেবার ক্ষেত্রে নিজের ডাউনস্ট্রিম অপারেশন মানে নিজস্ব সার্ভিস প্রোভাইডার আর তার প্রতিযোগী কোম্পানির টার্মস/কন্ডিশন এক না হলে খবর আছে ওই অপারেটরের।

৫৩৬.

বাজার ভাগ করা হয়েছে কি আগে? ক্রস-ফান্কশোনাল ব্যাপারগুলোতে এজন্যই চলে আসছে ‘বিশেষায়িত’ কম্পিটিশন এজেন্সীর কাজ। না থাকলে দেখবে সেটা রেগুলেটর। দাম না কমে যাবে কোথায়? একারণে রেগুলেটরে অর্থনীতিবিদ রাখার কথা বলেছিলেন আমার পরিচিত কনসালটেন্ট। আগে ভাবতাম বড় কোম্পানি – পয়সা বেশি, সেতো বাজার দখল করবেই। সাত বছরে ধারণাটা পাল্টেছে অনেক। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে যেটা ‘এন্টি-ট্রাস্ট’ সেটা অন্য সব জায়গায় ‘এন্টি-কম্পিটিটিভ’ ব্যবহার। বড়জন ছোটদের বাজারে প্রবেশাধিকারে বাধা বা বাজার এক্সপ্যানশনে সমস্যা তৈরী না করে সেটা দেখবে রেগুলেটর। আমরা ‘ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্টে’ তো নেই আর!

৫৩৭.

ইন্টারনেটের দাম কমাবে কে? ঠিক বলেছেন। ইন্টারনেট সার্ভিস দিচ্ছেন যারা। আমাদের দেশে ফিক্সড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ওই পরিমান তৈরী না হওয়াতে বিশাল ভাবে তাকিয়ে থাকতে হয় মোবাইল আর ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অপারেটরদের ওপর। সেক্টরটা মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকার কারণে এর ইনভেস্টমেন্ট সাইকেল অস্বাভাবিক ভাবে বেশী। মানুষের হাতে আলাদিনের চেরাগের মতো মোবাইল থাকায় সব সার্ভিস দেয়া যাচ্ছে হাতের মুঠোয়। হাজারো সার্ভিস এক পোর্টালে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরী, স্পেকট্রাম কিনতে প্রয়োজন অনেক টাকার।

৫৩৮.

অনেক সময় এতো টাকা তোলা যায় না দেশের ভেতর থেকে। আমাদের মতো দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে যে ক্যাপিটাল দরকার সেটার জন্য অনেক সময় তাকাতে হয় বাইরের ইনভেস্টরদের দিকে। টাকাটা আসে দু ভাবে। মোবাইল সেক্টরটা ধরি উদাহরণ হিসেবে। বাইরের কেউ যদি টাকা দিয়ে মোবাইল কোম্পানিটাকে কেনে তাহলে সেটা আসবে ‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট’ মানে এফডিআই হিসেবে। তবে কেউ কোম্পানিটাকে না কিনে তার ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট মানে শেয়ার কেনে – সেটা ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্টে পড়ে। এর নাম হচ্ছে এফপিআই।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »