The European Commission has recommended that digital switchover should be completed by 1 January 2012.
– Commission Recommendation 2009/848/EC, of 28.10.2009
৬৪১.
মনে আছে বিটিভি’র যুগের কথা? নতুন জেনারেশনের কাছে ‘প্রস্তর’ যুগের গল্প মনে হতে পারে পুরো ব্যপারটাই। চ্যানেল ‘নয়ে’ সলিড গোল্ড আর সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান নিয়ে সময় কাটছিল ভালোই। ঢাকায় থাকার সুবাদে হাতে পেলাম বাড়তি আরেকটা চ্যানেল। চ্যানেল সিক্স। বিকাল ছয়টার কার্টুন না দেখলে ভাত হজম হতো না আমাদের। স্পাইডার ম্যান, ফ্যানটাস্টিক ফোর, রিচি রিচ, অ্যাকোয়া ম্যান – বলতে হবে আর? মনে আছে ‘গ্রীন হর্নেটে’র কথা? আর সবচেয়ে মজা হতো ভোটের সময় ম্যারাথন প্রোগ্রামে। গুড ওল্ড ডেজ!
৬৪২.
এই বিটিভি হচ্ছে টেরেস্ট্রিয়াল ব্রডকাস্টিং। যাকে ব্যবহার করতে হয় মোবাইলের মতো কিছু ফ্রিকোয়েন্সী। ফলে, আপনার টিভি অনুষ্ঠান ধরতে পারে সাধারণ অ্যান্টেনা দিয়ে। রেডিও’র মতো অ্যান্টেনা। ওই হাড়ি পাতিল দরকার ছিলো অন্যদেশের চ্যানেল দেখার জন্য। ওইদিকে আর নাই বা গেলাম। অ্যানালগ ব্রডকাস্টিংয়ে স্পেকট্রাম লাগে প্রচুর। একেকটা চ্যানেল নিয়ে নেয় ৬ থেকে ৮ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইডথ। আর একই ব্যান্ডউইডথে ডিজিটাল ব্রডকাস্টিং পাঠাবে বিশটার মতো চ্যানেল – সমান মানের। চিন্তা করেছেন কতো লাভ এখানে? আবার, ডিজিটাল ব্রডকাস্টিং ব্যবহার করে ‘সিংগেল ফ্রিকোয়েন্সী নেটওয়ার্কস’, ফলে ওই এক ফ্রিকোয়েন্সী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা যাবে পুরো দেশজুড়ে। অ্যানালগেও সম্ভব, চেষ্টা করলে।
৬৪৩.
পৃথিবী জুড়ে টেরেস্ট্রিয়াল ব্রডকাস্টিং ব্যবহার করছে ‘ইউএইচএফ’ আর ‘ভিএইচএফ’ ব্যান্ড। আল্ট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সীতে এর জন্য দেয়া আছে ৪৭০ থেকে ৮৭২ মেগাহার্টজ পর্যন্ত। হাসছেন আপনি। তাইতো! ৭০০ মেগাহার্টজের গন্ধ পেয়ে গেছেন এর মধ্যে। সোনার খনি। সত্যিই তাই। আমাদের মতো জনবহুল দেশও ব্যান্ডউইডথ দিয়ে ভাসিয়ে দেয়ার হিসেব নিয়ে আসবো সামনে। এজন্য এটার নাম হচ্ছে ডিজিটাল ডিভিডেন্ড। মানে ডিজিটাল ট্রান্সমিশনে গেলে কতো শত ফ্রিকোয়েন্সী খালি হয়, সেটা না দেখলে বিশ্বাস হবে না আপনার। গুগল করবেন নাকি একবার ‘ডিজিটাল ডিভিডেন্ড’ শব্দ জোড়া দিয়ে?
৬৪৪.
ভেরী হাই ফ্রিকোয়েন্সীতে টেরেস্ট্রিয়াল ব্রডকাস্টিং চলছে ১৭৩ থেকে ২৩০ মেগাহার্টজ পর্যন্ত। বাংলাদেশে পুরোটাই ব্যবহার করছে বিটিভি। চ্যানেল একটা, কিন্তু রীলেগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে অন্য ফ্রিকোয়েন্সী। এখানে ‘অপটিমাইজ’ করা যেতো অনেক। নীতিমালায় বলা আছে এই পুরো ব্যান্ডটা ব্যবহার করবে বিটিভি। অথচ এই অ্যানালগ টেরেস্ট্রিয়ালের বাকি ব্যান্ডটা ভাড়া দিয়ে সরকার আয় করতে পারতো শত কোটি টাকা। আর বাঁচাতে পারতো একই পরিমাণ টাকা – স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ। আমাদের বেসরকারী টিভি চ্যানেল চলছে বাইরের দেশের ‘খরুচে’ স্যাটেলাইট দিয়ে। আর জনগণও দেখতো বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলগুলো – বিনামূল্যে। ওই অ্যান্টেনা দিয়েই। স্পেকট্রামটা খালি পড়ে আছে দেশের জন্মকাল থেকে।
৬৪৫.
তবে, আমাদের ‘ন্যাশন্যাল ফ্রিকোয়েন্সী অ্যালোকেশন প্ল্যান’ টেরেস্ট্রিয়াল ব্রডকাস্টিংয়ে বরাদ্দ দিয়েছে ৫২২ থেকে ৬৯৮ মেগাহার্টজ পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী অ্যানালগ ট্রান্সমিশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ২০১৫তে। ১১৯টা দেশ মেনে নিয়েছে ১৭ জুন ২০১৫ তারিখটা। তবে উন্নত দেশগুলো ‘অ্যানালগ টু ডিজিটাল সুইচওভার’ করে নিয়েছে ওই ‘কাট-অফ’ তারিখের আগেই। সবাই নিজের ভালো বোঝে! আর সুবিধাও হাজার খানেক! আপনার বাড়ির পাশের পানের দোকানও ‘অ্যাড’ দিতে পারবে ওখানে।
৬৪৬.
আমার বইয়ের কাহিনী অন্যখানে। এই ‘ডিজিটাল ট্রানজিশনে’ সবচেয়ে লাভ দেশের মোবাইল ব্রডব্যান্ডের। অ্যানালগ থেকে বেঁচে যাওয়া ফ্রিকোয়েন্সী দিয়ে দেয়া যাবে দেশের ব্রডব্যান্ড গল্পে। এইজন্যই এটার নাম ‘ডিজিটাল ডিভিডেন্ড’। পাঁচ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইডথ দিয়ে ‘থ্রীজি’ সার্ভিস? হয় নাকি কখনো। আমাদের মতো শত কোটি মানুষের দেশে? আর ডিজিটাল টেলিভিশন মানুষের জীবন কি সহজ করে দেবে সেটা নিয়ে অপেক্ষা রাখে না বলার। এর ভ্যালু চেইন উচ্চমার্গের।
৬৪৭.
ফিরে আসি আমার গল্পে। স্পেকট্রাম। ইউরোপিয়ান কমিশন তাদের স্পেকট্রামের ওপর দিয়ে দেয়া সার্ভিসগুলোর দাম যোগ করতে গিয়ে পেল ২৫০ বিলিয়ন ইউরোর ওপরে। এটা পুরো ইউরোপের বাত্সরিক জিডিপির ২.২ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭০০ মেগাহার্টজ বিক্রি করে পেল ১৯.১ বিলিয়ন ডলার। সেই দুহাজার আটে। বিক্রি করেছিলো মাত্র ৫৬ মেগাহার্টজ। জার্মানী বিক্রি করলো ৬০ মেগাহার্টজ ওই দুহাজার দশে। ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড থেকে। পেয়েছিলো ৩.৫৭ বিলিয়ন ইউরো। ফ্রান্স ওই ৬০ মেগাহার্টজ বিক্রি করে আয় করেছিলো ২.৬ বিলিয়ন ইউরো।
৬৪৮.
দাম নিয়ে সবার বক্তব্য কি হবে সেটা না জানলেও একটা জিনিস বুঝি ভালোভাবে। এর দাম হওয়া উচিত্ ‘অপুরচুনিটি কস্ট’এর ভিত্তিতে। গ্রাহকদের ‘নাভিশ্বাস’ তুলে নয়। আমার দেশের ‘পারচেজিং প্যারিটি’ মানে কেনার ক্ষমতা আর জিডিপিকে তুলনা করা যাবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। লিখেছি আগে এব্যাপারটা নিয়ে। ভালো কথা, স্পেকট্রাম তুমি কার?
মজা জানেন কোথায়? কেন দাম উঠছে এতো? ২.৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে (আমাদের ওয়াইম্যাক্স ব্যান্ড) দশ গুণ বেশি বেজস্টেশন লাগবে যদি একই জায়গা ‘কাভার’ করতে হয় ওই ৮০০ মেগাহার্টজ দিয়ে। মজা আছে আরো।
[ক্রমশ:]