Feeds:
Posts
Comments

Archive for December, 2013

Knowledge is the new capital, but it’s worthless unless it’s accessible, communicated, and enhanced.

Hamilton Beazley, Strategic Leadership Group

Some people drink deeply from the fountain of knowledge. Others just gargle.

— Bright, Grant M

২৪৫.

শ্রীলঙ্কার রেগুলেটরের একটা উদ্যোগ মুগ্ধ করেছিল আমাকে – বছর কয়েক আগে। উদ্যোগটা ছিল ব্রডব্যান্ড স্পিড নিয়ে। ব্যবহারকারীরা তাদের কেনা ব্যান্ডউইডথ প্রতিশ্রুতি মতো পাচ্ছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগটা নেয়া। ভালো উদ্যোগ। আর সেকারণেই ইন্টারনেটের আসল গতি বের করার জন্য সার্ভার দুটোর লোকেশন রেখেছিলো দেশের বাইরে। দেশের ভেতরে ইন্টারনেটের গতি ভালো পেলেও বাইরেরটা নিয়ে শঙ্কা থাকে বেশি। আপনার প্রোভাইডার প্রয়োজন মতো ইন্টারন্যাশনাল আইপি ট্রানজিট [ব্যান্ডউইডথ] না কিনলে ওই সমস্যাটা হতে পারে।

শ্রীলংকা? আপনার প্রশ্ন।

২৪৬.

আমাদের রিজিয়নে দুহাজার ছয়েই থ্রীজি লাইসেন্স দিয়েছিলো শ্রীলংকা। আর সেকারণে এখানে ওদের কাজ হয়েছে কিছুটা বেশি। ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ডের ‘কোয়ালিটি অফ সার্ভিস’ নিয়ে ভালো কাজ হয়েছে তাদের। অপারেটরদের মধ্যে থ্রীজি সার্ভিসের ওপর বেঞ্চমার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছে তাদের সাইটে। তবে দুহাজার ছয় থেকে আজ পর্যন্ত হিসেব করলে বেশি পিছিয়ে নেই আমরাও। কাভারেজ বাড়ছে আমাদের। বিশেষ করে থ্রীজির। বসে নেই কেউই। দ্রুততম সময়ে বাড়ছে এর সীমানা। লাইসেন্স পাবার পরদিন থেকেই শুরু হয়েছে তাদের কাজ। নতুন স্পেকট্রাম প্ল্যানিং, রেডিও টিউনিং – বিটিএসে ফাইবার ব্যাকহল সংযোগ দেয়া; অনেক কাজ। লোকাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পীয়ারিংয়ের কাজও এগুচ্ছে। থ্রীজিতে লোকাল কনটেন্ট বাড়তে বাধ্য। গুগলের লোকাল ক্যাশে ইঞ্জিনের অনেকগুলোই বসেছে দেশের ভেতরে। লক্ষণ ভালো।

২৪৭.

আমার গল্প অন্যখানে। অন্যদেশের রেগুলেটরদের খোঁজ খবর নেয়া আমার অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে। ভালো অভ্যাস কি? ছেড়ে দিলাম আপনার ওপর। আবার, আমার দেশী হ্যান্ডসেটের ওপর বিভিন্ন এপ্লিকেশন চেখে দেখার বদঅভ্যাসটাও ত্যাগ করতে পারছি না। মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি) একটা অ্যাপ তৈরী করে ছেড়েছে গুগলপ্লে স্টোরে। মোবাইল ব্রডব্যান্ডের গতি আর তার পারফরমেন্স চেখে দেখার জন্য গ্রাহকের জন্য তৈরী করে দিয়েছে ছোট্ট একটা অ্যাপ। ভোক্তা পর্যায়ে মোবাইল ব্রডব্যান্ডের গতি নিয়ে কাজ চলছে ওদের ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড প্ল্যান বের হবার পর থেকেই। ওখানে একটা সুপারিশও ছিলো ওটার ওপর ভিত্তি করে। ভুল বুঝবেন না, ব্রডব্যান্ড গতির পরিমাপের জন্য আগে থেকেই এফসিসি’র সাইটে একটা টুল রয়েছে। এই মোবাইল অ্যাপটা একটু ভিন্ন ধাঁচের।

এফসিসি'র  মোবাইল অ্যাপ -  মোবাইল ব্রডব্যান্ডের গতি আর তার পারফরমেন্স চেখে দেখার জন্য তৈরী করা

এফসিসি’র মোবাইল অ্যাপ – মোবাইল ব্রডব্যান্ডের গতি আর তার পারফরমেন্স চেখে দেখার জন্য তৈরী করা

২৪৮.

আমেরিকার সমস্যা অন্যখানে। বিশাল মহাদেশ। আবার মানুষও অনেক কম। ওদের সেলুলার টেলিকমিউনিকেশনস এন্ড ইন্টারনেট এসোসিয়েশনের হিসেব অনুযায়ী তিরিশটার বেশি ফ্যাসিলিটি বেসড অপারেটর রয়েছে। ফ্যাসিলিটি বেসড অপারেটর মানে ওদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক রয়েছে মার্কিন মুল্লুকে। আবার তার বড় বড় চারটা অপারেটরের ঘাড়ে ভর করে পঞ্চাশটার বেশি ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটরগুলো কাজ করছে ওখানে। কাভারেজ তৈরী করা হচ্ছে ওদের বড় সমস্যা। মাইলের পর মাইল মানুষ না থাকলেও সেটার জন্য কাভারেজ তৈরী করতে তাদের বিজনেস প্ল্যান ‘অফসেট’ হয়ে যায়। ‘কমপ্লায়ান্স’ কস্ট অনেক বেশি। বাংলাদেশের কথা ভিন্ন। সর্বোচ্চ ঘনবসতির দেশগুলোর মধ্যে একটা। আর সেকারণে আমাদের ফোনকলের দাম কম।

২৪৯.

ফিরে আসি অ্যাপে। কেমন হয় এরকম একটা অ্যাপ থাকলে? আমাদের জন্য তৈরী? মজার কথা হচ্ছে এর সোর্সকোডও দেয়া আছে সফটওয়্যার কলাবোরেশন সাইট গিটহাবে। যারা টেকনিক্যালি বুঝতে চান, তাদেরকেও নিরাশ করেননি তারা। পুরো গল্পটা দেয়া আছে এফসিসি’র সাইটে।

ধারণা দিয়ে সাহায্য করতে পারেন সবাই। সোর্সকোডটা দেখে ডেভেলপাররা ধারণা দেবেন কি?

পরবর্তী পড়াশোনা:

ক. শ্রীলঙ্কার মোবাইল ব্রডব্যান্ড পরিমাপ সাইট
খ. শ্রীলঙ্কার রেগুলেটরের দুহাজার বারোর একটা প্রেজেন্টেশন (যাদের সময় কম, তাদের জন্য বুকমার্ক – স্লাইড নয়)
গ. এফসিসি’র মোবাইল ব্রডব্যান্ড পরিমাপের অ্যাপ, গুগল প্লেতেও রয়েছে সেটা
ঘ. এফসিসি’র মোবাইল ব্রডব্যান্ড পরিমাপের টেকনিক্যাল গল্প
ঙ. গিটহাবে এফসিসি’র মোবাইল ব্রডব্যান্ড অ্যাপের সোর্সকোড

Read Full Post »

Share your knowledge. It’s a way to achieve immortality.

Dalai Lama

Knowledge is like money: to be of value it must circulate, and in circulating it can increase in quantity and, hopefully, in value.

Louis L’Amour

২৩৫.

ফিলিপাইনের ভুমিকম্পের ভয়াবহতা দেখে অস্থিরতা কাজ করছিলো ভেতরে ভেতরে। ঘর পোড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়। আমার অবস্থা হয়েছে ওরকম। ঢাকায় ওরকম কিছু হলে ঘুরে দাড়াতে পারবো কি না আমরা? নাকি এই অধ্যুষিত নগরী মৃত্যুনগরীতে পরিনত হবে? ঠিক এই সময়ে একটা ইনভিটেশন চলে এলো ওয়ার্ল্ডব্যাংক থেকে। পৃথিবীর নগরগুলোর ভূমিকম্পের ‘রেজিলিয়েন্স’ মানে কতো কম ক্ষয়ক্ষতি করিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের জন্য যেসব কাজ করা প্রয়োজন সেটা নিয়ে এই ওয়ার্কশপ। রেজিলিয়েন্স এর অর্থ অনেক কিছুই।

২৩৬.

ভুমিকম্পের একটা লাইফসাইকেলে যা যা করনীয় – সেখানে প্রথম ধাক্কাটা নিতে পারাটাই একটা বড় ধরনের এক্সারসাইজ। অল্পমাত্রার একটা ভুমিকম্প যেখানে বিশাল বড় জনপদকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে – সেখানে অনেকদেশ বড় বড় রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প নিয়ে দাড়িয়ে আছে বহাল তবিয়তে। সেটার পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান। একমাত্র বিজ্ঞানই পারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে – মানুষের সীমাবদ্ধতা। নিজের সীমাবদ্ধতাটা জানাটাও যেকারো জন্য একটা বড় স্ট্রেংথ। তাহলে সেটা মিটিগেট করার জন্য খুঁজতে হবে অন্য রাস্তা। ভুমিকম্প মোকাবেলায় মানুষের বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে বলেই ওই জায়গাগুলোতেই ‘ফোকাসড’ কাজ করতে হবে। থাইল্যান্ড শিখে গিয়েছে যুদ্ধের কৌশলটা। এখন অন্যদেশ শিখছে ওখানে গিয়ে। নৈরাশ্যবাদী আছে সব জায়গায়। ভুমিকম্পের মতো জটিলতর বিষয়ে আরো বেশি। ওনাদের ধারণা আপনাকেও মন্ত্রমুগ্ধ করবে।

২৩৭.

বলুনতো মানুষ কাজ করে কিসের ভিত্তিতে?

অভিজ্ঞতা! আপনার সহজ উত্তর।

একটা ভূমিকম্প না হলে এর ভয়াবহতা জানবো কিভাবে? একটা দুটো দেখে ঠিকই শিখে নেবো ‘রেজিলিয়েন্স’ হবার কৌশল। আগে থেকে শেখা বাতুলতা মাত্র।

বলেন কি?

ঠিক তাই। ভূমিকম্প ঠেকাতে হলে দরকার অভিজ্ঞতা। একটা দুটো হলে শিখে নেবো ঠিকই!

এটা তো ঠেকে শেখা হলো। লাখ লোকের জীবন দিয়ে পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কি আদৌ? আপনি জানেন ঢাকার বিল্ডিং কোডের কি অবস্থা? আর সেটার ভয়াবহতা? মনে আছে তো রানা প্লাজার কথা?

২৩৮.

এর পরের উত্তর নিস্প্রয়োজন। আচ্ছা, আপনি কি জানেন ভূমিকম্পের ভয়াবহতা ঠেকাতে বিজ্ঞান গিয়েছে কোথায়? আমি নিজেই জানতাম না। এর প্রুভেন ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ যে দেশগুলো ব্যবহার করছে – ক্ষয়ক্ষতির হার অবিশ্বাস্যভাবে কমিয়ে নিয়ে এসেছে তারা। ফেলে দিন আদিমযুগের কন্টিনজেন্সী প্ল্যান, দরকার একটা ওয়েল রিহার্সড অ্যাকশন আইটেম, ঠোটের আগায় থাকবে স্টেপগুলো। ওটাই হচ্ছে ভুমিকম্প ঠেকানোর সবচেয়ে বড় যথার্থ বিনিয়োগ। কি হলে কি করনীয় সেটা নির্ধারণ করা জরুরী। আমাদের দেশের জন্য কি প্রযোজ্য সেটা জানাবে বিজ্ঞান। সেটা মানুষের হাতের নাগালে। খুঁজে নিতে হবে আমাদেরকেই। ভুমিকম্পের ছোট একটা সূত্র আছে। কোথাও যদি একবার হয় ভূমিকম্প, ছোটমাপের হলেও – ওটা ফিরে আসবে আবার!

২৩৯.

অফিসের কাজে পারিনি থাকতে, ছুটিরদিনগুলো বেছে নিয়েছিলাম ওই ওয়ার্কশপগুলোতে থাকার জন্য। সব ছুটির দিন ওরাও পারেনি, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটরের সাথে কথা বলে ডকুমেন্টগুলো নিয়েছিলাম হাতে। ফিলিপাইনের ‘আর্থকোয়াকস এন্ড মেগাসিটিজ ইনিশিয়েটিভ’ নামের একটা কোম্পানি এটার কনসালটেন্সি করছে। লিড কন্সাল্ট্যান্ট ডক্টর ফুয়াদ বেঁদিমেরাদ মধ্যবয়স্ক হলেও তার ধারণা মুগ্ধ করলো আমাকে। সবকিছুতে লোকাল এক্সপার্টিজ তৈরী করানোর জন্য মুখিয়ে আছেন উনি। এতো দেখি গুরু মারা বিদ্যা। ওই একটা ধারনাতেই তাকে আপন করে নিলাম। একেবারে মনের ভেতর।

২৪০.

ইতিপূর্বে কনসালটেন্সি করেছেন সেকয়েকটা দেশের উদাহরনও টেনে নিয়ে এলেন উনি। ওই দেশগুলোর নিজস্ব জনবল ছিলো না – এই ভুমিকম্পের ‘রেজিলিয়েন্সের’ উপর। বাইরে থেকে লোক এনে কাজ করানোর থেকে নিজেদের মানুষ তৈরীর উপর জোর দেয়াতে সেই দেশগুলো কিছুটা নিমরাজি হয়েই ইনভেস্ট করেছিলো। বাইরে থেকে লোক এনে কাজ করলে সাময়িকভাবে কম খরচে কাজটা হয়ে যায়। লঙরানে ওটাতেই খরচ বেশি পড়ে। প্রতিবার কাজের জন্য বাইরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। এখন তারা শুধুমাত্র নিজেদের দেশের কাজ করে বেড়াচ্ছে না – অন্যদেশেও কনসালটেন্সি করছে। আয় করছে বৈদেশিক মুদ্রা।

২৪১.

উন্নত আর অনেক উন্নয়নশীল দেশগুলোর কিছু প্রাকটিস নিয়ে এলেন আমাদের সামনে। হয়তোবা আমাদের এজেন্সিগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব তাকে পীড়া দিয়েছে বেশি। বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশ এমনভাবে এগুচ্ছে যে তারা তাড়াতাড়ি টেক্কা দেবে উন্নতবিশ্বের অনেকদেশকেই। কীওয়ার্ড, ভাগাভাগি করে জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহার। আমাদের সরকারী এজেন্সীগুলোর মধ্যে নিজেদের জ্ঞানগুলো ভাগাভাগি করলে খরচ কমে আসবে ধারণার বাইরে। সেই বাড়তি টাকা দিয়ে উন্নততর জ্ঞান আহরণ করো। আর সেটাকে ভাগাভাগি করে নিজেদের আহরিত জ্ঞান ছড়িয়ে দাও নিজেদের মধ্যে। আটকাতে পারবে না কেউ তোমাদের।

২৪২.

কফি ব্রেকে ধরলাম তাকে। কার্ড অদল বদলের মধ্যেই প্রশংসা করলাম তাঁর উপাত্তের। মন থেকেই। স্মার্টফোনে তাঁর বক্তৃতার অংশবিশেষ লেখা ছিলো বলে ডেলিভারি দিলাম এক নিমিষেই। আমার স্মৃতিশক্তির তারিফ করলেন উনি। খুব খুশি মনে হলো তাঁকে। আমার কথা একটাই, আমি কমিউনিকেশনের লোক। ইট সুরকি বুঝি না আমি। কমিউনিকেশনে ‘রেজিলিয়েন্স’ বানিয়ে দাও আমাকে। ভুমিকম্পের ‘গোল্ডেন’ বাহাত্তুর ঘন্টার আগেই টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পূর্বাবস্থায় আনার জ্ঞানের সুরুঙ্গটা দেখিয়ে দাও আমাকে। জ্বলজ্বল করে উঠলো উনার চোখ। লাঞ্চ ব্রেকে আমাকে আটকে ফেললেন উনি। ওটাই চাইছিলাম মনে মনে। দুঘন্টায় ওলটপালট হয়ে গেল ওর ল্যাপটপ। অনেকগুলো প্রেজেন্টেশনের ওপর রানডাউন দেয়া হয়ে গেলো ওর মধ্যেই।

২৪৩.

ধারণা করুন, ভুমিকম্পের পরে আমি আপনি আটকে পড়েছি বিল্ডিংয়ের ধ্বংসাবশেষের নিচে। সাথে রয়েছে মোবাইলফোন। ওটাতো থাকে পকেটেই। পকেটের সেই অক্ষত মোবাইলফোনটাতে কোনো সিগনাল বার না পেলে কতটা অসহায় মনে হবে নিজেকে? কারণ, ভুমিকম্পের শুরুতেই পড়ে গিয়েছে মোবাইলফোন টাওয়ারগুলো। জীবিত থেকেও যোগাযোগ না করতে পারার কারণে অনেককিছুই ঘটে যেতে পারে। চলুন ঘুরে আসি জাপানে। এগারোই মার্চ, দুহাজার এগারো। ভুমিকম্পের মাত্রা ছিলো নয়। ওর ধাক্কায় তৈরী হয় সুনামি। জাপানের মতো ভুমিকম্প ‘রেজিলিয়েন্স’ প্রটেকশন থাকা অবস্থায় মারা যান বিশ হাজারের মতো মানুষ। অবাক হয়ে যাবেন তাদের টেলিযোগাযোগ সার্ভিস পূর্বাবস্থায় আনার গ্রাফটা দেখে।

জাপানের লাইফলাইন সার্ভিসগুলোর রেস্টোরেশন গ্রাফ - ফিক্সড লাইন (টেলিফোন) আর মোবাইল - হলুদ আর ম্যাজেন্টা রঙয়ে

জাপানের লাইফলাইন সার্ভিসগুলোর রেস্টোরেশন গ্রাফ – ফিক্সড লাইন (টেলিফোন) আর মোবাইল – হলুদ আর ম্যাজেন্টা রঙয়ে

২৪৪.

এখানে সবগুলো লাইফলাইন সার্ভিসই দেখানো হয়েছে আপনার বোঝার সুবিধার্থে। কয়েকটা সিরিজ ভুমিকম্পের পরও বিচ্যুতি হয়নি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার। প্রথম ধাক্কা সামলেছে প্রথম দুদিনেই। অলৌকিক কিছু নয় কিন্তু। প্রয়োজন কিছু নীতিমালা। পারবো আমরাও। তৈরী হয়ে আছে গাইডবুকগুলো, দরকার স্টেকহোল্ডারদের ভ্যালিডেশন আর সামান্য কিছু ক্যালিব্রেশন। আবার, বিভিন্ন প্র্যাক্টিশনারদের জন্যও নিয়ে আসবো সহজবোধ্য ইনডিকেটর! ঝুলিতে আরো রয়েছে এসম্পর্কীয় আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডগুলো!

আসছি সামনে – দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে।

Read Full Post »

Sometimes I feel my heart is breaking
But I stay strong and I hold on cause I know
I will see you again,
This is not where it ends
I will carry you with me … @Carrie Underwood

২২৮.

জর্জিয়া থেকে ফিরলাম নিউ ইয়র্কে। আমেরিকার ভেতরের টিকেটটা ওভাবেই করে দিয়েছিলো স্টেট ডিপার্টমেন্ট। গিয়ে উঠলাম লঙ আইল্যান্ডে, ক্যাডেট কলেজের বন্ধুর বাসায়।

দোস্ত, সাদার্ন অ্যাকসেন্ট তো ধরে ফেলেছে তোকে।

বলিস কি? টরকাতে চাইলাম। বুঝলি কিভাবে?

একটু আগে ফোনে কথা বলার সময় শুনলাম।

মনে পড়লো, কথা বলছিলাম টেনেসির এক বন্ধুর সাথে।

হতে পারে। কম থাকা হয়নি ওখানে। জর্জিয়া আর সাউথ ক্যারোলাইনার মানুষগুলো বেশ বন্ধুবত্‍সল। কথা বলতে পছন্দ করে আমাদের মতো। ইয়াংকিদের মতো নয়, অন্ততঃ। টান পড়াটা স্বাভাবিক।

২২৯.

ছোট বেলা থেকে বড় হয়েছি কান্ট্রি আর ক্রসওভার শুনেই। ওয়ার্ল্ড হারভেস্ট রেডিওর কল্যানে। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় আমার কথা শুনলেন। আর সেকারণে ফেললেনও সাদার্ন অংশে। ওখানকার মিলিটারি বেজ থেকে যিনি আমাকে ওই ছোট্ট এয়ারপোর্ট থেকে নিতে এসেছিলেন – তাকে না চেনার উপায় নেই। ছোট এয়ারপোর্ট মানে সপ্তাহে নামে কয়েকটা সেশনা বা ড্যাশ প্লেন। আমার প্লেনে ছিলাম মোটে তিনজন। সাভান্নার ওপর দিয়ে উড়ে আসার সময় দেখলাম আসল সাভান্না। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, সেটাই দেখতে দেখতে আসলাম। গাছ আর গাছ – বিশাল বন আর শেষ হয় না। বনেই ফেলবে নাকি শেষ পর্যন্ত? আতংকে রইলাম।

২৩০.

গাড়িতে আসতে আসতে কয়েকটা চমৎকার কান্ট্রি শুনে ফেললাম। স্টেশনটার নাম হচ্ছে ডাব্লিউ-বি-বি-কিউ। বোঝাই যাচ্ছে স্টেশনের কল সাইন ওটা। দিন গড়াতে শুরু করলো। কান্ট্রির দেশে এসে মেমফিস আর ন্যাশভিলে না ঘুরলে কেমন হয়? কনসার্ট দেখেও ফেললাম অনেকগুলো। আমার জনরা* হচ্ছে কান্ট্রি ওয়েস্টার্ন। তবে সেটা পাল্টে যাচ্ছে ক্রসওভারে। ক্রসওভার হচ্ছে কান্ট্রির সাথে অন্য কোনো জনরার মিশ্রন। সেটা পপ বা রক হলে অসুবিধা কি? উদাহরন দিলে পরিস্কার হবে সবার। ডলি পার্টন আর কেনি রজার্স নিজেদেরকে ওই ‘মেলো’ কান্ট্রির মধ্যে আটকে রাখেননি। ঈগলস, উইলি নেলসন, অ্যান ম্যারি, ক্রিস্টাল গেইল সবাই কান্ট্রির সাথে মিলিয়েছেন পপকে। খ্যাতি পেয়েছেন আমেরিকার বাইরে।

২৩১.

এ জমানার আপনার পরিচিত কান্ট্রি গায়ক/গায়িকার প্রায় সবাই পড়েছেন এই ক্রসওভারে। গার্থ ব্রুক, শানিয়া টোয়াইন, ফেইথহিল, ডিক্সি চিক্স, লিয়ান রাইমস – আর কার নাম বলবো? লি অ্যান ওম্যাক? আমেরিকান আইডল থেকে উত্থান পাওয়া সব গায়ক পরে কান্ট্রি অথবা ক্রসওভারে গিয়েছেন। গলার কারুকাজ দেখাতে হলে ব্লুজ আর কান্ট্রির বিকল্প নেই। এখন আসি ‘ক্যারি আন্ডারউড’কে নিয়ে। ‘ক্যারি’ নামটার উপর দুর্বলতা আমার ওই ইউরোপের গানটার পর থেকে। ঝামেলাটা আরো বাড়লো স্টিফেন কিংয়ের সাথে। তার বইয়ের নামও ওই ক্যারি দিয়ে। মুভিও হচ্ছে নাকি বইটাকে ঘিরে। অজ পাড়াগাঁ থেকে উঠে এসেছেন এই ক্যারি আমেরিকান আইডল হয়ে। বাবা কাজ করতেন স-মিলে। মা পড়াতেন একটা এলিমেন্টারি স্কুলে। সব ধরনের ‘ওড’ জব করে এসেছেন এই ক্যারি। ছোটবেলা থেকে গান করে এলেও জীবনযুদ্ধে না পেরে ওটা ছেড়ে দিয়েছিলেন মেয়েটা। তারপরের ঘটনা সবার জানা।

২৩২.

ক্যারির অনেকগুলো অ্যালবামই আমার কেনা। ইউএস মিলিটারি বেজে থাকার ফলে সাধারণ মার্কিনীদের মনোভাব জানতে পেরেছি কিছুটা। সেনাবাহিনীর ব্যাপারটা তারা নিয়ে আসে অনেক জায়গায় – তাদের ঐকতা অর্থাৎ ‘ইউনিটি’ বোঝানোর জন্য। সেনাবাহিনী মানে লাস্ট রিসোর্ট, যারা তাদেরকে সাহায্য করবে – সকল দুর্যোগে, রাজনীতি ছাড়া অন্য সব বড় বড় সমস্যায়। হাজার হাজার মুভি হয়েছে এই সেনাবাহিনীর উপর ভরসার গল্প দিয়ে। কান্ট্রি আর্টিস্টদের মধ্যে প্রচুর মিউজিক ভিডিও তৈরী করার প্রবণতা রয়েছে এই সেনাবাহিনী নিয়ে। মোস্টলি, দেশ যখন দুর্যোগে পড়ে। আর সেকারণে আজকের এই লেখা।

২৩৩.

ক্যারি আন্ডারউডের নতুন অ্যালবামের ‘সি ইউ এগেইন’ গানটা মৃত্যুর মতো শক্তিশালী একটা থিমের উপর তৈরী করা। মৃত্যুর পর স্বর্গে গিয়ে তার ভালবাসার মানুষগুলোর সাথে আবার দেখা হবার কথা এসেছে এই গানটাতে। ‘মৃত্যুই শেষ নয়’, ক্যারির কথা গানটা নিয়ে – ‘আমি স্বর্গে বিশ্বাস করি মনে প্রাণে। সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন আর তার কাছে যেতেই হবে একদিন। পৃথিবীতে আমাদের প্রিয়জনদের হারানোটা খুবই কষ্টের। তবে, আমরা শুধু বিশ্বাসই করি না – জানি যে তাদের সাথে দেখা হবে আবার। এর থেকে খুশির আর আনন্দময় কি হতে পারে বলুনতো? বিস্ময়কর বটে। এব্যাপারটা নিয়েই গানটা।’

২৩৪.

মিউজিক ভিডিওটা আরেক কাঠি ওপরে। যুদ্ধফেরৎ ছেলে, বাবা আর পরিবারের সাথে ‘রি-ইউনাইটেড’ হবার সত্যিকারের ফুটেজ নিয়ে তৈরী করা এই ভিডিওটা আমার বাধ্য করেছে হাজারবার দেখতে। ওকলাহোমার ট্রাজেডি আর টর্নেডো পরমুহুর্তের অংশগুলো স্পর্শ করবে আপনাকে। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা, সমাধিপ্রস্তর, শেষকৃত্যের প্রোগ্রাম বা আলিঙ্গনের মধ্যে অনেক গল্পই এসেছে এই ভিডিওটাতে। মৃত্যু, বার্ধক্য, জীবন আর ভালবাসা সংক্রান্ত ফুটেজগুলো চলছে কনস্ট্যান্ট লুপে – আমার পিসিতে। ভিডিওটা হাই ডেফিনেশন হওয়াতে এটা ডাউনলোড করে নিতে পারেন বার বার দেখার জন্য। ক্যারির শক্তিশালী কন্ঠ আর ব্যাকআপ সিঙ্গারদের হামিং মুগ্ধ করবে আপনাকেও।

০০:৩৫

মন ভেঙ্গে গিয়েছে এই ছোট্ট মেয়েটার কথা চিন্তা করে। যুদ্ধফেরৎ বাবার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটার কথা মনে রাখবে এই ছোট্ট মেয়েটা। সারাজীবন। খুবই কষ্টকর – তবে দেখা হবে আবার।

০১:০২

যুদ্ধফেরৎ ন্যাভাল সৈনিক আর তার প্রেমিকার মিলনের দৃশ্য। সাধারণ বটে, তবে মেয়েটার লজ্জা ছেড়ে দৌড়ানোর দৃশ্যটা কম মোহনীয় নয়। ভালবাসা বলে কথা। তবে এক সৈনিক আরেকজনের ব্যথা বুঝবে বলে ওই ধারণা থেকেই লিখছি। ভুলো মন আমার, লক্ষ্য করেছেন মেয়েটার পোশাকটা? জ্যাকেটের নিচে? বিয়ের পোশাকেই এসেছে কিন্তু মেয়েটা!

০১:১৬

নানার অবাক হবার দৃশ্য। নাতির কোনো জড়তা কাজ করছেনা এখানে। নানার মাথায় ঢুকে দেখেছেন কখনো?

০১:৪৬

ক্যারির ‘আই ক্যান হিয়ার দোজ একোজ ইন দ্য উইন্ড অ্যাট নাইট’ অংশটা শুনুন ভালোভাবে। ‘অ্যাট নাইট’ অংশটার টানটা খেয়াল করেছেন তো? স্বর্গীয়!
০২:১১

বাচ্চাটার চোখ দেখেছেন, পুরো ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন? অসম্ভব পজিটিভ একটা স্ন্যাপশট। বাচ্চাটা নিশ্চয়ই তার খুব প্রিয় কাউকে দেখছে ওই মুহুর্তে।

০২:১৬

আমার ধারণা, যুদ্ধফেরৎ ছেলে হটাৎ করেই চলে এসেছে দেশে। মাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য লুকিয়ে বারে গিয়ে পানীয় দিতে গিয়ে এই অবস্থা। দেখেছেন মায়ের অবাক হবার ধরনটা? মা বলে কথা। ছেলের কথা চিন্তা করতে করতে মার অবস্থা শেষ! বলে গেলে কি হতো?

০২:২৬-০৩:৩১

যুদ্ধফেরৎ স্বামীর সাথে স্ত্রীর যোগ হবার দৃশ্য। কোলে ছোট বাচ্চাটা। চুমুর দৃশ্য হলেও স্ত্রী কাঁদছেন অঝোরে। খুশির কান্না তো বটে। স্বামী ছাড়া বছরগুলো কিভাবে কেটেছে সেটা জানার জন্য তার মনের ভেতরে ঢোকার প্রয়োজন নেই। আমার স্ত্রীও পায়নি আমাকে বিয়ের প্রথম পাঁচ বছর। বাচ্চা দুটো হবার সময়েও পাশে থাকতে পারিনি ওর। সুখদুঃখ স্থান কাল পাত্র ভেদে এক বলে আমার ধারণা। ইউএস মিলিটারি বেজে যুদ্ধে যাওয়া সৈন্যদের স্ত্রীদের দেখেছি – অবর্ণনীয় কষ্ট।

০২:৫৪ – ০৩:০১

তিন মাসের মেয়েটাকে ফেলে পাড়ি দিয়েছিলাম আটলান্টিক। নেমেই থাঙ্কসগিভিংয়ের ছুটি। পুরো বেজই ফাঁকা। পাগল হয়ে গেলাম। পাগল হয়ে গেলাম মেয়েটার জন্য। কাঁদলাম দুদিন ধরে। ফিরতে চাইলাম দেশে। সে অনেক কথা। ফুটেজটা আপনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করাতে বাধ্য। এমনিতেই চুইছিলো হৃদয়টা। যুদ্ধফেরৎ বাবার জন্য তিন চার বছরের মেয়েকে এগিয়ে দিলো মা আর আর তার আত্মীয়রা। মেয়ে কিছুটা আড়স্ট হয়ে রইলো প্রথম কয়েক সেকেন্ড। দেখা গেলো বাবাকে – বেশ দুরে। মেয়ের জড়তা রইলো না আর। শুরু হলো হান্ড্রেড মিটার স্প্রিন্ট।

০৩:০২

দৌড় আর দৌড়। কিন্তু, একি? শেষ হচ্ছে না কেন দৌড় –  মেয়েটার? আমার হৃত্‍স্পন্দন বাড়তেই থাকলো। নিশ্বাস বন্ধ করে বসে রইলাম আমি। আহ! শেষ হলো দৌড়ের গল্প। বাবা ধরে ফেললো বড় ভালুকের মতো – পরম মমতায়। অতটুকু মেয়ের খুশি দেখে কে? বিশ্বজয় করে ফেলেছে মেয়েটা! বাবার আকুলিবিকুলি হৃদয় ঠান্ডা হলো বলে। এই মুহূর্তগুলোরই জন্য বেঁচে থাকি – প্রতিনিয়ত!

আরেকটা জিনিস, ক্যারির ওয়ার্ডড্রোবটা মানিয়েছে চমৎকারভাবে। ভুল বলেছি?

* genre = বিশেষত শিল্পসাহিত্যের প্রকরণগত রীতি , ধরণ , শৈলী , গোত্র , ঘরানা

Read Full Post »

The first rule of any technology used in a business is that automation applied to an efficient operation will magnify the efficiency. The second is that automation applied to an inefficient operation will magnify the inefficiency.

– Bill Gates

২১৮.

কম্পিউটার রকিব না?

শুনেছি কথাটা অনেক অনেকবার! মেনেও নিয়েছি। সত্যি কথা বলতে – সিনিয়রদের কাছ থেকে শুনলে খারাপ লাগতো না কিন্তু। বরং, স্নেহের একটা প্যাকেজিং থাকতো ওর মধ্যে। কম্পিউটারের হাজারো সমস্যা? ডাকো ওকে। সলভ করার জন্যই তো আমি। বন্ধুদের ডাকে খোঁচা না থাকলে আর বন্ধুই বা কেন? আবার, আমারো দোষ না থাকলে এই নাম কেন? অফ-লাইন ইন্টারনেটের যুগ থেকেই ব্যবহার করছি এই কম্পিউটার। এফটিপি মেইল দিয়ে ব্রাউজ করতাম নেট – ওই অফলাইনেই! পুশ পুল এসএমএস তো দেখছেন এখন! ওই পুশ পুল মেইল দিয়ে ব্রাউজ করতাম নেট! জেদ করে সব কাজেই ব্যবহার করতে চাইতাম কম্পিউটার।

২১৯.

নব্বইয়ের দিকে কম্পিউটার মানে টাইপের যন্ত্র, সে ধারনা থেকে বের করার জন্যই আমার ওই প্রানান্তকর চেষ্টা। কম বকা খাইনি ওর জন্য। ধরা যাক জরুরি একটা ফ্যাক্স পাঠাবার কথা আমার, মোডেমের ড্রাইভারের সমস্যার কারণে সেটা পাঠানো যায়নি গত কয়েক ঘন্টায়। ফ্যাক্স মেশিন কিন্তু পড়ে আছে আমার রুমে। জিদ চেপেছে – পাঠাবো এই নচ্ছার কম্পিউটার দিয়েই। যাবি না মানে – তোর বাবা যাবে, এই মটো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ছুটিটাই বাতিল হয়ে গেলো! অবহেলা করেছি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্সটা। চাকরি চলে যাবার কথা! মাঝখান দিয়ে সাত দিনের ছুটিটা নট্ হয়ে গেলো।

২২০.

কিসের মন খারাপ, কিসের কি? রাত তিনটে বাজিয়ে ওই ফ্যাক্সের আরেকটা কপি পাঠিয়ে ঘুমুতে গেলাম। লিনাক্স কার্নালটা ওটা সাপোর্ট করছিলো না। কম্পাইল আর রি-কম্পাইল করেই মিটলো ঝামেলাটা। সাড়ে পাঁচটায় আবার পিটি। আহারে দিনগুলি! কোনো কিছুই অসম্ভব মনে হয়নি তখন! শরীরের চেয়ে বড় হৃত্পিণ্ড নিয়ে আমার সিনিয়ররা আগলে ছিলেন আমাকে। কম্পিউটার রকিব, ও একাজ না করলে করবেটা কে আর? সামওয়ান হ্যাজ টু ডু দ্য ইনোভেশন, লেট হিম ইনোভেট!

২২১.

আমার রুটি রোজগার রেডিও যোগাযোগের সূত্রে বাঁধা থাকলেও কম্পিউটার কমিউনিকেশনে পড়ে ছিলো বুকভরা ভালবাসা। উপায় কি? ওদের বিয়ে না দিয়ে উপায় আছে আমার? ইংরেজিতে ম্যারিং আপ বলে কথাটা ওটার জন্য একদম সত্যি! এইচএফ (হাই ফ্রিকোয়েন্সি) রেডিওর সাথে কম্পিউটারের ডুপ্লেক্স সাউন্ডকার্ড আর লিনাক্সের বেসব্যান্ড এন্টেনা টিউনারের সঙ্গে দরকারী সফটওয়্যার! বেশি নয়, বছরখানিক লেগেছিলো মাত্র। তিনশো বউড পার সেকেন্ডের রেডিও মোডেম বানাতেই সময় লেগেছিলো এই যা।

২২২.

সবকিছুতে কম্পিউটার কেন? ভালো প্রশ্ন। ছোটবেলা থেকে অটোমেশনের ওপর একটা দুর্বলতা জন্মে গিয়েছিলো। ওর কারণও ছিলো। ওয়েস্টার্ন সিনেমার নায়কের মতো বন্দুকের নল কামড়ে না বড় হলেও ক্রিস্টাল ডায়োড আর ট্রানজিস্টর কতো চিবিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। তবে সেটা একটু বড় হয়ে – রাগের মাথায়, সার্কিট ঠিকমতো কাজ না করার কারণে। অফিসের একঘেয়ে রিপিটেটিভ কাজগুলো ফেলে দিতাম প্রসেসে। করতো মানুষই। তবে, একটা প্রসেসের মধ্যে। প্রসেসের মধ্যে হিউমান ইন্টার-অ্যাকশন লুপহোল তৈরী করলে – প্রসেসটার কয়েকটা চেক এন্ড ব্যালান্সে ধরা পরত জিনিষটা।

২২৩.

আমার ধারনায় – বড় কাজকে ছোট ছোট মাইলস্টোনে ভাগ করে কয়েকজনের মধ্যে দিলে – অটোমেশনের মতোই কাজ করে। সবার আউটপুট কানেক্টেড আপনার সাথে। যাবে কোথায়? সেমি-অটোমেটিক। শেলস্ক্রিপ্টের মতো। খানিকটা ‘ফর লুপ’এর ধারণা থেকেই। সামরিক বাহিনীর সব কাজের জন্য একেকটা এসওপি – ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ আমার কাজের মূল প্রেরণা। কাজ না হবার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না – এসওপি আছে না? ফলে ডিসিশন মেকিং প্রসেসটাও – ‘ডিএমপি’ কাজ করে দ্রুত। ম্যানাজেমেন্টের জন্য বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ ম্যাগাজিনটাও অনেককিছু নিয়েছে সামরিক বাহিনী থেকে। চেখে দেখুন নিজেই স্পেশাল কালেকশনের কিছু অংশ।

২২৪.

ভাবতাম অটোমেশনে জোর দিলে কাজ বের হবে তাড়াতাড়ি। সেটা কাজও করেছে অনেক জায়গায়। প্রচুর অটোমেশনের কাজও করানো হয়েছে আমাকে দিয়ে। প্রথম দিকে কাজও হয়েছে ভালো। আমি অন্য জায়গায় চলে গেলে সেটা পড়েছে মুখ থুবড়ে। ভালো ডকুমেন্টেশন থাকা সত্ত্বেও না কাজ করার পেছনে ওই প্রজেক্টের পরবর্তী ওনারশীপ দায়ী থাকে কিছুটা। এখন কাজ করছি নলেজ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। সমস্যা একটাই। মানুষ চলে গেলে মুখ থুবড়ে পড়ে প্রজেক্ট। সেকারণেই কাজ করছি নলেজ ‘কন্টিনিউটি’ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে।

২২৫.

এই ‘কন্টিনিউটি’ অংশটাই সমস্যা কাটাবে আসা করি। নতুন আইডিয়া বটে, আমাদের জন্য। প্রতিদিন কাজের একটা স্ন্যাপশট থাকবে সবার কাছে। সবার কাজের খতিয়ান সবাই দেখতে পারবে বছর ধরে। সপ্তাহের এক দিন সবাই দেখবে বিগ পিকচারটা। কোথায় এগুলো তার কাজ আর বাকি সবার। মানে বড় কাজটার কোন মডিউলে কাজ করছিলো সে। আর না হলে হাতির কান দেখার মতো অবস্থা হবে ওদের। প্রতিযোগিতা তৈরী হবে আউটপুটে। খাওয়া দাওয়াও হতে পারে সেদিন! ওয়েল ডিফাইন্ড প্রসেস তৈরী করতে সময় নিলেও করতে হবে সবকিছু ফেলে। প্রসেসটা ক্লায়েন্টও জানবে। সরকারের ক্ষেত্রে জনগণ। একবার দাড়িয়ে গেলে বস প্রতিদিন না থাকলেও অসুবিধা নেই। কাজ থাকবে না মানুষ ডিপেন্ডেন্ট হয়ে। ওটা হবে প্রসেস ডিপেন্ডেন্ট। অমুক নেই তো হবে না কাজ – সেদিন যাচ্ছে চলে। কাজের তদারকি করবে ক্লায়েন্ট, পরোক্ষভাবে। সরকারের ক্ষেত্রে ওই জনগণই।

২২৬.

তবে সব জায়গায় ‘চলো করি অটোমেশন’ ভাবার আগে বিল গেটসের কথাটা মনে রাখবেন। হাটুন কিছুটা পেছনে, মানে সমস্যাটা থেকে বেরিয়ে এসে। প্রসেসটা দক্ষ বা কার্যকর না হলে ব্যাকফায়ার করতে পারে। ভালো দিক হচ্ছে – অটোমেশন অকার্যকর প্রসেসকে আরো আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয়। এফিসিয়েন্ট প্রসেসটাই সবকিছুর মূলে। আবার, দরকার মতো – উই হ্যাভ টু স্ট্রিমলাইন দ্য ওয়ার্কফ্লো! বছর লাগলেও কষ্ট করে তৈরী করুন একটা ‘কার্যকর’ প্রসেস ওয়ার্কফ্লো। বিয়ের রাতে বেড়াল মারার মতো। শান্তি চলে আসবে কাজে। আমি মেরেছিলাম কিনা? বলেন কি ভাই? ভয় ডর কি নেই আমার?

২২৭.

সামনের দিনগুলোতে কিভাবে কোম্পানিগুলোর বাজেট কাট হবে সেটার জন্য বসে থাকতে হবে না আরেকটা বছর। টাকা কম, ভালো কাজ আর স্বচ্ছতা; অটোমেশন ছাড়া গতি নেই সামনের দিনগুলোতে। এফিসিয়েন্ট আর কার্যকর অটোমেশন করার আইডিয়া নিয়ে আসছি সামনেই। ওয়ার্কফ্লোসহ! মাইন্ডম্যাপ? ওটা বোনাস! এই প্রাকটিসটা সবার মধ্যে ঢুকে গেলে আসবে ভালো কাজ আর স্বচ্ছতা। কত মানুষ আমাদের, খাওয়াতে হবে না সবাইকে? আনবো ওয়েলফেয়ার ফান্ডের ধারণা। সবার জন্য স্বাস্থ্য আর দুরের স্বপ্ন নয়। টাকা নেই – ভুল কথা। হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রির ‘কার্যকর’ প্রসেস ওয়ার্কফ্লো তৈরীই আছে পাশের দেশ থাইল্যান্ডে। দেশের জন্য ‘কাস্টমাইজেশন’ আর দরকারী ‘ম্যাপিং’ না করতে পারলে বিশ বছর কি শিখলাম তাহলে? ফেরৎ দিতে হবে না?

দেশের জন্যই তো! থাকছেন তো সাথে?

Read Full Post »

Don’t find fault, find a remedy; anybody can complain.
― Henry Ford

Common sense is not so common.
― Voltaire, A Pocket Philosophical Dictionary

২১৩.

অফিসে ‘ওপেন ডোর’ নীতি নিয়ে কাজ করার ফলে পরিচয় হয়েছে হাজারো মানুষের সাথে। এতে শুরুর দিকে সময় নষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু অফিসের পর বাড়তি ঘন্টা কাজ করে পুষিয়েছি সবসময়। ছুটি হয়েছে পাঁচটায় – থেকেছি রাত নটা পর্যন্ত। ছেড়ে দিয়েছি সবাইকে ওই পাঁচটায়। বসেছি ঠান্ডা মাথায় – ডিরেক্টিভ আর অন্য ইনোভেশনগুলো নিয়ে। লিগালীজ জানাটা হচ্ছে সবকিছুর বাই প্রোডাক্ট। ঠান্ডা মাথাও মেইলিংয়ের জন্য প্রযোজ্য। দেখা গেছে আমার প্রোডাকটিভ আওয়ার্স হচ্ছে বিকাল পাঁচটা থেকে রাত আটটা। বাকিটা কাল কি করবো সেটার প্ল্যানিং। আমি নিজে ক্যালেন্ডার বয়, ক্যালেন্ডার এন্ট্রি ছাড়া অচল আমি। আমার এন্ট্রি, পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টের এন্ট্রি আর উইকএন্ডের বাকি এন্ট্রি ভরে রাখে কালারফুল ক্যালেন্ডারটা। চল্লিশ শতাংশ দিনে পোস্টপন হলেও ক্ষতি কি? অন্যদেশগুলো কি করছে – বা কি ধরনের সার্ভিস আসছে – অথবা অন্য ইকোনমিগুলোতে সেটা আনছে কিভাবে – তার জন্য আলাদাভাবে বের করতে হয় মেইলিংলিস্টগুলো। ভালো ধারণা পাওয়া যায় ওই চার ঘন্টা। অফিসে আসতে সময় নেই দেড় ঘন্টা। তিরিশ শতাংশ মেইলের উত্তর দেয়া যায় রাস্তায়। আহ! পুশ মেইল, আবিস্কার করেছিলো কে?

২১৪.

ফিরে আসি লিগালীজের ব্যাপারটা নিয়ে। সামরিক বাহিনীতে টেলিযোগাযোগ রুটি রোজগার হওয়াতে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে ছিলাম দীর্ঘ পনেরোটা বছর। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে লিখতাম বলে সবকিছুর গোড়ায় টেলিযোগাযোগ আইন লাগে বলে ওটাও পড়ে ফেলেছিলাম তখনি। এই অফিসে আসার আগেই হস্তগত হয়েছিলো টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরদের বাইবেল বলে খ্যাত টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি হ্যান্ডবুক। না পড়লে বোঝানো মুশকিল। যে দেশগুলোর এজেন্ডাতে ‘ডিজিটাল ইকোনমি’ নিয়ে কাজ করার কথা বলা হয়েছে – তাদের জন্যই এই পাবলিকেশন।

২১৫.

তথ্যপ্রযুক্তিতে এতো কিছু থাকতে আইনের দিকে ঝুঁকলেন কেন? প্রশ্নটা আমারও। আইনের ব্যাপারটা নিয়ে বিশাল দাগ কেটেছিলো ছোটবেলায় দেখা ‘পেপার চেজ’ টিভি সিরিজটা। না বুঝলেও দেখা বাদ দিতাম না সিরিজটা। সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান বা বায়োনিক উওম্যান মিস করলেও ওটা নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ হতো বাবা মার সাথে। মিনেসোটার অজ পাড়াগা থেকে উঠে আসা আইনের ছাত্র জেমস হার্ট – বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ভর্তি হয়েছিলো হার্ভার্ড ল স্কুলে। কম্পিটিটিভ আর খরুচে স্কুল বলে কথা। ওর পর থেকে বিপদ পিছু ছাড়ে না তাকে। মনে আছে প্রফেসর কিংসলের কথা? পরে শুনেছিলাম উনি পড়াতেন ‘কন্ট্রাক্ট ল’, আমার এমবিএতেও খুঁজে পেতে নিয়েছিলাম ওই বিষয়টা।

২১৬.

বুঝতে বুঝতেই চলে এলো এল.এ. ল। আরেকটা হিট টিভি সিরিজ। মাথা খারাপ হয়ে গেলো প্যারালাল স্টোরিলাইন দেখে। হাজারো কন্ট্রোভার্সি আর আসল ঘটনা নিয়ে ভালই চলছিলো সিরিজটা। ল আর কমনসেন্সের মধ্যে ফারাক কমে আসতে লাগলো আস্তে আস্তে। এরমধ্যেই চলে এলো জন গ্রিশাম। হাতে এলো ‘অ টাইম টু কিল’, মাথা খারাপ করা একটা লিগাল থ্রিলার। দ্য ফার্ম, পেলিক্যান ব্রিফের মতো বইগুলো মোড় ঘুরিয়ে দিলো আমার ‘আনস্ট্রাকচারড’ চিন্তাধারা। জন গ্রিশাম নিয়ে আলাদাভাবে আসবো আরেকদিন। অন্য রেগুলেটরদের বিভিন্ন লাইসেন্সিং ডকুমেন্ট ঘাটতে ঘাটতে অনেককিছু শেখা হয়েছে এই বছরগুলোতে। হাজারো লিগালীজ আনতে হয়েছে নখদর্পণে – অফিসের প্রয়োজনে।

২১৭.

বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রির সাথে কাজ করতে গেলে পড়তে হয় প্রচুর ইন্টারন্যাশনাল লিগাল ডকুমেন্টেশন। গুগলের সাথে কাজ করতে গিয়েই শতখানিক লিগালীজ জানতে হয়েছে এই আমাকেই। ফেইসবুক শুরু হলো বলে। ইনোভেশন আর ‘ফ্রী স্পীচে’র ধারক হিসেবে মার্কিন ডিজিটাল মিলেনিয়াম কপিরাইট অ্যাক্টের ধারা ৫১২ ভালো কাজ করেছে অনেক দেশেই। আবার কমিউনিকেশন ডিসেন্সি অ্যাক্টের ২৩০ ধারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্ল্যাটফর্মগুলোকে ভারসাম্য দিয়েছে অনেকটাই। বিশ্বব্যাপী টেলিযোগাযোগ আইনের ওপর ক্র্যাশ কোর্স, কেমন হয় নিলে? তবে সবার আগে আনছি কম্পেটিটিশন ল। মানে হচ্ছে প্রতিযোগিতা আইন যা ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায় টেলিযোগাযোগ আইনটাই।

আসছি সামনেই।

আচ্ছা, ‘বস্টন লিগাল’ কেমন লাগছে আপনার?

Read Full Post »

You have taught me very important lesson, Xiao Dre. Life will knock us down, but we can choose whether or not to stand back up.

Being still and doing nothing are two very different things.

– Mr. Han [The Karate Kid ,2010]

২০৫.

কয়েকদিন ধরেই শব্দটা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। বার বার। রেলেভেন্স। মানে প্রাসঙ্গিকতা। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি আমি। সবকিছুর সাথে নিজেকে ‘রেলেভেন্ট’ রাখা যে কতো কষ্টকর সেটা বুঝতে পারছি হাড়ে হাড়ে। হাজারো কথাবার্তা পড়ি পত্রপত্রিকায়। কথা বলি অনেক মানুষের সাথে। রেলেভেন্সের প্রকট অভাব। নিজেরও একই সমস্যা। জন মায়ারের ‘কন্টিনিউয়াম’ অ্যালবামটা কিনেছিলাম জাপান থেকে। এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে। মায়ারের কনসার্টটা দেখিয়েছিলো ওই। শুনেছিলামও কয়েকবার অ্যালবামটা। নাউ, ইট ইজ গ্যাদারিং ডাস্ট। এর মানে নয় যে অ্যালবামটা ভালো না, বরং ওর্থ এভরি পেনি! হয়তো ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম অন্যকিছুতে।

২০৬.

স্বাতী ওর বোনের মেয়ের বিয়ের আয়োজনে কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ত। আজ সকাল থেকে বাচ্চ্চাগুলো নিয়ে সকাল থেকেই গায়েব। বাসায় ছিলাম একাই। দুটো বইও নিয়ে বসেছিলাম সকালে। দুপুরে বোকার বাক্সটা খুলতেই আটকে গেলাম। সাধারণতঃ টিভি জিনিসটা দেখা হয় কম। অ্যাকশন আর হরর মুভি – একেবারে নো নো! ‘কারাটে কিড’ মুভিগুলোর সিকুয়েল ‘অ্যাকশন/কুংফু’ জাতের হওয়াতে ওদিকে মাড়াতাম না কখনোই। কারাটে কিড, মানে প্রথম মুভিটা খানিকটা দেখেছিলাম এলিজাবেথ শু’র জন্য। হাজার হোক ছোটবেলার ক্রাশ বলে কথা। দুই নম্বরটাও খানিকটা দেখেছিলাম ‘গ্লোরি অফ লাভ’ সাউন্ডট্রাকটার জন্য। প্রাক্তন শিকাগো’র পিটার সেটেরা আমার বুক ভরে আছে এখনো। গান করো ভালো কথা – মাথা খারাপ করে দিয়ো না বাপু। আমার হাজার হাজার ‘ওয়েস্টেড’ আওয়ার্স এর পেছনে দায়ী এই গায়কও শামিল।

২০৭.

ঘাপলা লাগালো কারাটে কিড – দুহাজার দশের নতুন সেক্যুয়েলটা নিয়ে। তাও আবার ‘না পছন্দে’র জ্যাকি চ্যান আছে এর মধ্যে। রিমোটটা আবার ফ্লিপ করতে গিয়েও আটকে দিলো জন মায়ার। পাগল নাকি? এখানে কেন? মানে এই গানটা? মুভিটার পাঁচ মিনিট নয় সেকেন্ডের অংশটা আটকে দিলো সারাদিনের জন্য। বারো বছরের ড্রে পার্কার আর তার মা কাজের ট্রান্সফারের ধাক্কায় চলে আসে বেইজিংয়ে। ডেট্রয়েট থেকে বিমানে ওঠার পর থেকেই মা ধাতস্ত করতে চাচ্ছিলেন ছোট ড্রেকে। ‘তোমার নাম কি’ অথবা ‘তুমি কেমন আছ’ এধরনের ছোটখাটো ম্যান্ডারিন চাইনিজ প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন ওর মা – বাসা থেকে। খানিকটা আগ বাড়িয়ে কিছুটা পরীক্ষা করানোর জন্য চাপ তৈরী করলেন তার মা – বিমানে বসে। তাও আবার তার পাশের চীনা চেহারার একটা ছেলের সাথে।

নিমরাজি ড্রে চাপে পড়ে নাক বোচকা ছেলেটার সাথে শুরু করলো কথাবার্তা।

ড্রে [আড়স্ট ম্যান্ডারিন চাইনিজে]: তোমার নাম কি? তুমি আছ কেমন?

ছেলেটা [খাঁটি মার্কিন অ্যাকসেন্টে, কিছুটা অবাক হয়েই]: ডুড, আমি ডেট্রয়েট থেকে!

ড্রে প্রচন্ড অকওয়ার্ড অবস্থায় পড়লেও মানিয়ে নেবার চেষ্টা করলো ওমুহুর্তে। বোঝাই যাচ্ছে পরের লাইনটা হাতড়ে বেড়াচ্ছে সে।

ড্রে: হোয়াটস আপ! লজ্জিত গলা ওর।

ছেলেটা মার্কিন কায়দায় ভ্রূকুটি করে জানালো – ভালো আছে সে।

পরিচালকের মুন্সিয়ানা শেষ হয়নি তখনো।  তেরো ঘন্টার ফ্লাইটে ড্রে’র অস্থিরতা চমত্কারভাবে ফুটিয়ে এনেছেন ওর ঘুমানোর দৃশ্যের ওপর দিয়ে। ট্রান্স-আটলান্টিক ফ্লাইটে সকালের আলো জানালা দিয়ে ঢোকানোর দৃশ্য যা তা ব্যাপার নয়। ড্রে’কে ফ্লাইট এটেন্ডেন্টের দেখভাল – ওর ঘুম থেকে ওঠা – মায়ের প্রশ্রয়ের হাসি – জানালায় সূর্য – মায়ারের গান; সব ফুটে এলো ওই আটান্ন সেকেন্ডে। পরিচালনায় নিচ্ছেন কবে আমায়?

২০৮.

মুভিটার পরিচালকদের মুন্সিয়ানা বোঝা গেলো ওই পাঁচ মিনিট আট সেকেন্ডের মাথায়। মায়ারের গিটারের শব্দ শুরু হয়ে গেলো অন দ্যাট ভেরি মোমেন্ট। অব্যর্থ নিশানা। ধারণা করছি হৃদয় এফোড় ওফোড় হয়ে গেলো সকল দর্শকদের। হৃদয় চুইয়ে ফোঁটা ফোঁটা আবেগ পড়ছিল আগে থেকেই। আটকাতে পারলাম না আর। বসে গেলাম পুরোটা দেখার জন্য। মনে এলো রেলেভেন্সের কথা। মনে হলো গানটা লেখা হয়েছে এই মুহুর্তের জন্য। আবার সবকিছুর সাথে অনেককিছু না গেলেও কিছু জিনিস এমনিই এমন ‘রেলেভেন্ট’ যে একটার কথা চিন্তা করলে আরেকটা চলে আসে এমনিতেই।

২০৯.

গানটা আসলে লেখা হয়েছিলো মুভির জন্য। তবে কারাটে কিডের জন্য নয়। পরিচালনায় কয়েকজনের সাথে আছেন উইল স্মিথ। মনে আছে ‘পার্স্যুট অফ হ্যাপিনেস’ মুভিটার কথা? উইল স্মিথের সাথে ছিলো ওর নিজের ছেলে জেইডেন স্মিথ। মন খারাপ করা একটা মুভি। সেই জেইডেনও আছে এখানে। কারাটে কিড মুভিটা কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে ওর সহজ আর প্রেডিকটেবল প্লটলাইনের ওপর। লক্ষ্য করে দেখবেন ওর ডায়ালগগুলোও খুবই সহজবোধ্য। আর সহজবোধ্যতার জন্য এর ভেতরের মেসেজ টেনেছে আমাকে। ক্যাডেট কলেজ আর মিলিটারি একাডেমীর কুংফু ক্লাবের সদস্য থাকার ফলে ওর মেসেজ পানির মতো পরিস্কার।

২১০.

কুংফু একটা ওয়ে অফ লাইফ, এটা কখনই মারামারি বা জেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না। জীবনের সেরা সিদ্ধান্তগুলো নেবার সময় কুংফুর ধারণাগুলো কাজে লেগেছে আমার। কুংফুর আসল ব্যবহার কিন্তু শান্তির জন্য, মনে আছে খৃস্টপূর্ব তিনশো পঁচাত্তরের ফ্লাভিয়াস রেনাটাসের কথা? ইফ ইউ ওয়ান্ট পিস, প্রিপেয়ার ফর ওয়ার? শান্তির জন্য রক্তারক্তির আউটকাম কখনই ভালো হয়নি। জীবনের সবকিছুই যুদ্ধ, আর সেকারণে একে বলে জীবনযুদ্ধ। আর যুদ্ধের কোনকিছুই রক্তারক্তির ওপর ছিলো না। যুদ্ধের আশিভাগই থাকে স্টেট অফ মাইন্ডের ওপর। মনস্তাত্ত্বিক।

২১১.

ফাইনাল টুর্নামেন্টে আগের প্রতিযোগী ড্রে’র পা ভয়ংকরভাবে মচকে দিলেও ও রিঙ্গে ফিরতে চাচ্ছিলো অদ্ভুদ কোনো কারণে। ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও হ্যানকে [জ্যাকি চান, ওর কুংফুর শিক্ষক] অনুনয় করছিলো বার বার।

হ্যান: কারণ, আমি তোমাকে আরো মার খেতে দেখতে চাই না।

ড্রে: মিস্টার হ্যান, প্লিজ, ছেড়ে দিন আমাকে, প্লিজ।

হ্যান: লক্ষী ড্রে, বলতো কেন? কেন ফিরতে চাচ্ছো ওই হতচ্ছাড়া রিঙ্গে? এতটাই দরকার কেন?

ড্রে: আমি এখনো ভীত পুরো জিনিষটা নিয়ে। কি হবে জানিনা – আজ রাতে। তবে আর ভীত থাকতে চাইনা [সারাজীবনের জন্য] – আজ রাতের পর থেকে।

২১২.

চোখ বেয়ে পানি আর আটকাতে পারলাম না এ অংশে। জীবনের হাজারো জিনিস নিয়ে ভীত এই মানুষ তার জীবনে যা করতে চায় – তার কিয়দংশও পারে না করতে। আমিও পারিনি। অন্যেরা কি মনে করবে – ওটা আমি পারবো কি – এই সেলফ ডাউটে পার করে সারা জীবন। বুকে হাত দিয়ে বলুন, যা করতে চেয়েছেন সারাজীবন – তা পেরেছেন কি? না পারলে – কি আটকে রেখেছে আপনাকে? পার হয়ে গিয়েছে বয়স? আমিও পারিনি বলে এখনো পারবোনা সেটা বলিনি তো আমি। পার হয়ে গিয়েছে বয়স? হয়েছে কি তাতে? পার হয়নি মনের বয়স। বিশ বছরের যুবকের আশি বছরের মানসিকতা দেখেছি অনেকের মধ্যে। তার দোষ দেখিনা সেখানে। পারিপার্শ্বিকতা আটকে রেখেছে ওকে, তাকে ছাড়ানোর দায়িত্ব আমাদের। জীবন আমাদের পরখ করছে প্রতিনিয়ত: – ঠেলে ফেলে দিচ্ছে কমফোর্ট জোনের বাইরে। পরোক্ষভাবে সাহায্য করছে যুদ্ধে জয়ী হতে। যতবার উঠে দাড়াই ওই জুজুবুড়ির ভয়কে পেছনে ফেলে, ততো অজেয় হয়ে উঠি আমরা।

আচ্ছা, ভালো কথা – জন মায়ারের গানটা শুনেছেন তো?

Even if your hands are shaking
And your faith is broken
Even as the eyes are closing
Do it with a heart wide open

Say what you need to say …

Read Full Post »

Great anger and violence can never build a nation. We are striving to proceed in a manner and towards a result, which will ensure that all our people, both black and white, emerge as victors.

– Nelson Mandela (Speech to European Parliament, 1990)

২০৩.

নেলসন ম্যান্ডেলার ‘লঙ ওয়াক টু ফ্রিডম’টা পড়তে যেয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিলো বার বার। আমাদের দেশের সাথে অনেকগুলো ঘটনা মিলে যাচ্ছে বলে কষ্টটা বেড়েছে। অবাক কান্ড – অন্য জায়গায়! বইটার নতুন ভার্সনটার মুখবন্ধ লিখেছেন আমার প্রিয় একটা মানুষ। তাকে খুব কাছ থেকে পেয়েছিলাম দু দুবার। কথাও বলেন চমত্কার। নিশ্চিত আমি, ধরে ফেলেছেন আপনি। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। দেশকে কিভাবে তুলতে হয় সেটা দেখেছি তার ফরেন পলিসিতে। মুখবন্ধ পড়তে গিয়েই বইটা দুবার বন্ধ করে ভাবছিলাম। ক্লিনটন তার সাথে ম্যান্ডেলার কিছু কথাবার্তার স্ন্যাপশট নিয়ে এসেছেন মুখবন্ধেই। প্রথমটা পড়ে ধাতস্থ হতে না হতেই পরেরটা মনের অর্গল খুলে দিলো। পাশ কাঁটাতে পারলাম না বইটাকে।

২০৪.

‘সত্যি করে বলুনতো?’ ক্লিন্টনের প্রশ্ন, ‘দীর্ঘ সাতাশ বছর পর জেল থেকে মুক্তির পথে হাঁটার সময় কেমন মনে হয়েছিলো আপনার? ওদেরকে কি নতুন করে ঘৃনা করতে শুরু করছিলেন?’

‘অবশ্যই ঘৃনা করেছিলাম।’ ম্যান্ডেলার সহজ সরল উত্তর। ‘ওরা আমাকে আটকে রেখেছিলো অনেকটা বছর। অমানবিক ব্যবহার করেছে আমার সাথে। জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়টা পার করেছি এই কুঠুরিতে। বিয়েটাও শেষ হয়ে গিয়েছে ওই কারণে। বাচ্চাদের বড় হওয়ার সময় পারিনি পাশে থাকতে। প্রচন্ড রকমের ক্রোধান্বিত ছিলাম ওদের ওপর। আতঙ্কগ্রস্ত সময় পার করতে হয়েছে ওই লম্বা – আটকে থাকার সময়টাতে।’

‘তবে মুক্তির সময়ে গাড়িটার কাছে হেঁটে যাচ্ছিলাম যখন – অনেক চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাথায়। গেটটা পার হবার সময় একটা উপলব্ধিতে পৌছালাম। ওদেরকে তখনো ঘৃনা করলে ওরাতো পেয়ে গেলো আমাকে। ওটাতো চাইনি আমি। মুক্তি চেয়েছি বরং ওই সংকীর্ণতা আর বিদ্বেষের শৃঙ্খল থেকে। ওই সর্বগ্রাসী ঘৃনা তুলে নিলাম ওদের ওপর থেকে। ওই মুহূর্ত থেকেই।’

___
* পুরো মুখবন্ধটা নিয়ে আসবো সামনে। আমাজনে বইটার লিঙ্কে গেলে প্রথম অধ্যায়টা পড়তে পারবেন বিনামূল্যে। জীবন পাল্টে দিয়েছে এই আমাজন। বইয়ের কাভারের ছবিটার উপর ক্লিক করুন। পুরো মুখবন্ধটা পড়তে ভুলে যাবেন না কিন্তু। বলে নিচ্ছি আগে, আমি বঙ্গানুবাদে বিশ্বাসী নই। আমার ধারনায়, মুখবন্ধের শেষ প্যারাটাই পুরো বইটার ওয়ান লাইনার!  ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন আশা করি।

Read Full Post »

You can have everything in life you want, if you will just help other people get what they want.

Zig Ziglar

Life is a gift, and it offers us the privilege, opportunity, and responsibility to give something back by becoming more.

Anthony Robbins

১৯৫.

ব্যাংককের হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রিটা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না মিসিং লিংকটা। পরিচিতদের সামান্য ফোঁড়া উঠলেই ব্যাংককে দৌড়ানোর কারণটা ঠাহর করতে পারলাম কিছুটা। বিদেশে ডাক্তার দেখাইনি কখনো – মনে হয়েছিলো দেশের উপর বিশ্বাস না করলে দেশে থাকছিই বা কেন? আর নিজের জিনিস ব্যবহার না করলে সেটা ওয়ার্ল্ড ক্লাস হবে কবে? আমাদের হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে সমস্যা অনেক থাকলেও সেটা তো বাইরে থেকে কেউ এসে ঠিক করে দিয়ে যাবে না। সেটা করতে হবে আমাদেরকেই। আমাদেরকে ইন্ডাস্ট্রিকে এমনভাবে ‘ওন’ করতে হবে যে এটা ছাড়া গতি নেই আমাদের। তাহলেই এটা দাড়াবে ওয়ার্ল্ড ক্লাসে!

১৯৬.

ছোটবেলার লার্নিং হচ্ছে – নিজের সমস্যার কথা বলতে হয় না বেশি। বললেই, সেটা নিয়ে হয় মজা করবে মানুষ অথবা কিছুক্ষণ সমবেদনা জানিয়ে চলে যাবে। এই তো? তার থেকে না বলাটাই ভালো বরং। এরপরও মানুষ জেনে গেল চোখের সমস্যাটার কথা। তবে তেরো বছর অনেক লম্বা সময়। চোখের ম্যাকুলা অংশে দুটো ছিদ্র ধরা পড়েছিলো সেই দুহাজার সালে। ঝাপসা দেখা শুরু করলাম। রোগটা আমাদের দেশে সচরাচর দেখা যায় না বলে ডাক্তাররা তাদের ইন্টার্নদের ডেকে দেখাতে থাকলেন বার বার। অসম্ভব উজ্জ্বল আলোর নিচে আমার চোখগুলো ক্লান্ত হয়ে যেতে লাগলো পুরো মাস ধরে। তখনি দেখা হলো উনার সাথে।

১৯৭.

খুব ভালো একজন চোখের ডাক্তার – তবে থাকেন ভয়ঙ্কর ব্যস্ত। আমার ধারনায় ব্যস্ত মানুষগুলোই সব কাজ তাড়াতাড়ি বের করে দেন। লাইন দিলাম উনার পেছনে। বুঝলাম উনার চিকিত্‍সায় মনোবিজ্ঞানকে ব্যবহার করেন চমত্‍কার ভাবে। মাসখানিক অবজারভেশনে রাখলেন উনি। উন্নতি না হবার কারণে আর্গন লেজার ব্যবহার করতে হলো তাকে। লেজার দিয়ে ছিদ্রগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করলেন উনি। সেন্ট্রাল ভিশনটা একেবারে কাছে হওয়াতে পুরোপুরি লেজার ব্যবহার করা গেলো না। সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে উনার ধারণার উপর যতোটুকু করা সম্ভব সেটাই করলেন উনি। এর পরের ইতিহাস লম্বা হলেও পাল্টে গেলাম আমি। জীবনের প্রতি স্ট্রাটেজিটা রি-পজিশন করে নিলাম। চোখে আরো কয়েকটা অ্যাটাক হয়ে গেল পরের কয়েক বছরে। মন ভেঙ্গে পড়লেও তা চালান করে দিলাম অন্যদিকে। পড়ালেখা শুরু করলাম ওর মধ্যেই। কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করে ফেললাম পরের তিন বছরে। ভর্তি হলাম এমবিএতে।

১৯৮.

বাবা মা বিয়ের জন্য চাপ তৈরী করলেন। নিজেরই নাই ঠিক বিয়ে করবো কিভাবে? সেভাবেই কাটলো আরো কয়েক বছর। চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নিলাম – সমস্যাটা বলে নিতে হবে আগে। গাট বাঁধার আগেই। হটাত্‍ করে চাকরি না থাকলে তো দুজনেই সাগরে। আমার প্রফেশন প্রচন্ডভাবে চোখের উপর নির্ভরশীল বটে। প্রশিক্ষণের সময় শার্পশুটার হিসেবে নাম করেছিলাম এই চোখের কারণেই। যিনি বিয়ে করবেন তিনি জেনেই আসবেন। ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাইলেন স্বাতীর বাবা মা। ডাক্তার আমার দিক টানলেন কিনা জানিনা – তবে এগিয়ে এলো স্বাতী। ডাক্তারকে পরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম – পার্শিয়ালটি হয়েছে কি না, উনার সরাসরি উত্তর – আমার কাজ আমি করেছি। অতপর: মুখ কুলুপ। আজও জানি না, কি কথা হয়েছিলো তাদের মধ্যে।

১৯৯.

নিজের অবস্থা ইভাল্যুয়েট করে নিলাম ভালোভাবে। কোথায় আছি আর কোথায় যাবো তার একটা প্যাটার্ন এনালাইসিস বের করে ফেললাম এর মধ্যে। নিজের দুর্বলতা জেনে নেয়া ভালো। আমার দুর্বলতা জানি বলেই সেটাকে মিটিগেট করতে হবে আমাকেই। দুর্বলতা জানলে সেটাকে ‘স্ট্রেন্থ’ হিসেবে ব্যবহার করাটা নিজের ওপর। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম নিজের কাছে – যা করবো বা যেখানে কাজ করবো – সর্বোচ্চ আউটকাম নিয়ে আসবো সেখানে। সময় আসছে কমে। দেশ তো কম দেয়নি আমাকে। ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছে আমাকে। গরীব দেশের কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে আমার ওপর – বিভিন্ন প্রশিক্ষণে। টাইম টু গিভ ব্যাক। যা নিয়েছি ফেরৎ দিতে হবে না?

২০০.

ফিরে আসি আগের গল্পে। ব্যাঙ্ককে গিয়েছিলাম ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)এর এক প্রোগ্রামে। সবার চাপাচাপিতে ছুটি নিলাম দুদিন। সেকেন্ড একটা ওপিনিয়ন নেবার জন্য। চোখের। আমার ধারনায় পুরো হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রিটা দাঁড়িয়ে আছে একটা কীওয়ার্ডের ওপর। শৃঙ্খলা। এর পরে আসছে স্ট্রিক্ট কোয়ালিটি কন্ট্রোল। হাজারো রোগীর চাপে দিশেহারা হয়নি তারা। আইটিইউ’এর প্রোগ্রামে চল্লিশ হাজার অতিথির অনেকেই চেক-আপে এসেছিলেন প্রোগ্রাম শেষের ঠিক পরের দিন। ধারণা করছি – তৈরী ছিলো ব্যাঙ্ককের পুরো হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রি। এনালাইটিক্সয়ের খেলা। পয়সা আয় করতে জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহার। ব্যাংককের আসার আগেই ওরা জানে মানুষ কি কি সার্চ করছে – ওদেরকে নিয়ে। সবাই জানে। আমিও জানি।

২০১.

আমি অন্য হাসপাতালের এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে গেলেও সকালে হেঁটেই চলে গেলাম নতুন একটা হাসপাতালে। সেদিনই প্রথম। কিছুটা ভয়ে ভয়ে। এপয়েন্টমেন্ট নেইনি তো আগে থেকে। কোথায় কি? হয়ে গেলাম ভিআইপি! একদিনের বাদশা! সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি বলে কথা। প্রসেসে ফেলে দিলো আমাকে – সন্তর্পনে। মানুষ ডিপেন্ডেন্ট নয়, পুরোপুরি প্রসেস ডিপেন্ডেন্ট। টাকা পয়সা কম নিয়ে গিয়েছিলাম বলে অনেকগুলো টেস্ট করতে চাইছিলাম না। ডাক্তার এমনই মগজধোলাই দিলো যে ছুটতে ছুটতে বাকি টাকা নিয়ে এলাম হোটেল থেকে – এই আমিই। তার কথা একটাই, তুমি তো এখানে এসেছো সেকেন্ড ওপিনিয়নের জন্য। বাকি টেস্টগুলো না করালে দেশে গেলে মন খোঁচাতে থাকবে। আমি তোমাকে একটা ‘এন্ড টু এন্ড’ চেক করতে চাচ্ছি। ফেল কড়ি মাখো তেল। সার্ভিসের বাহার দেখে পয়সার কথা মনে থাকবে না আর। সস্তা করে ফেলেছে অনেক জিনিস, ভলিউমে খেলছে তারা। কীওয়ার্ড ‘ইকোনমি অফ স্কেল’, পড়েছি হাজার জায়গায়। নিজের চোখে দেখতে হলো ওখানে।

২০২.

অবাক কান্ড, পরীক্ষা শেষে ডাক্তার [মহিলা] হেঁটে এসে ল্যাবে বসলো আমার পাশে – নিজে থেকে। তার চেম্বার ছেড়ে। রিপোর্টটা লাইন ধরে ধরে বোঝাতে শুরু করলো – খাঁটি মার্কিন অ্যাকসেন্টে। কথার ফাঁকে ও কোথায় বড় হয়েছে সেটা জানতে চাইলে – আমেরিকাতে শুধুমাত্র মেডিকেলেই পড়ার কথা জানালো সে। সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির জন্য পার্সোনালাইজেশনটা যে কি জিনিস সেটা বোঝা গেলো ওখানে বসে। বন্ধুর মতো পুরো জিনিষটার রানডাউন দিলো ডাক্তার। তেরো বত্‍সর আগে কিছুটা শক্তিশালী লেজার ব্যবহার করার কারণে ম্যাকুলার পেছনে ক্ষতিগ্রস্ত সুক্ষ রক্তনালীগুলো কি সমস্যা করতে পারে সেটা হালকাভাবে বললেও ওটাকে মিটিগেট করার ভবিষ্য করনীয় বুঝিয়ে দিলো বন্ধুর মতো। কিছু জিনিস এখনো হাতের নাগালে আসেনি মানুষের। সেটা মেনে নিয়েছি অনেক আগে। আর্গন লেজার ব্যবহার করলে সমস্যা হতেই পারে এধরনের – নতুন কিছু নয় এটা। আশা করছে – ‘ওর্স্ট কেস সিনারিওতে’ সেন্ট্রাল ভিশনে সমস্যা হলে পার্শ্ব ভিশন থাকবে ভালো। হাঁটা চলাতে সমস্যা থাকার কথা নয়।

ইউ ওন্ট গো কমপ্লিট ব্লাইন্ড, চোখে চোখ রাখলো ডাক্তার।

আশাই বাঁচিয়ে রাখবে আমাদেরকে। সৃষ্টিকর্তা বড় মহান।

Read Full Post »

The reasonable man adapts himself to the world; the unreasonable one persists in trying to adapt the world to himself. Therefore all progress depends on the unreasonable man.

George Bernard Shaw

১৮৭.

সময়টা [ছিলো] বর্ষাকাল। সন্ধার ট্রাফিক লাইট পোস্টে এসে দাড়ালো গাড়িটা। আমার মানে অফিসের দেয়া গাড়ি। মেয়ে একটা এসে দাড়ালো গাড়িটার পাশে। আমার আর তার মধ্যে ব্যবধান হচ্ছে গাড়ির কাঁচের জানালাটা। গাড়ির এসিটা ভালোভাবে না কাজ করলেও জানালার কাঁচ তুলে পানির ঝাপটা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিলাম। বর্ষার সঙ্গে বেশ ঠান্ডা বাইরে। মেয়েটার বয়স আমার মেয়ের সমান হবে হয়তোবা। অপুষ্টির কারণে বয়স বোঝা দুস্কর হলেও নিজের মেয়েটার কথা মনে হলো ওমুহুর্তে। ভিক্ষে চাইছে না মেয়েটা। ফুল বিক্রির পাশাপাশি সাহায্য চাইলো অস্ফুট স্বরে। তুমুল বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। সাথের প্লাস্টিকটা মাথায় না দিয়ে ফুলগুলোকে ঢেকে রেখেছে বরং। মনে হচ্ছে ফুলগুলোর কাছে ওর শরীরটা কিছুই নয়। ভার্বাল কমিউনিকেশনের পাশাপাশি অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলার চেষ্টার অংশ হিসেবে নাক লাগিয়ে দিলো জানালার কাঁচে। প্রচুর ঠান্ডার কারণে ওর নাকের নিশ্বাস কাঁচকে ঘোলা করে দিচ্ছিলো বারবার। সহ্য করতে পারলাম না আর। মনুষ্যত্ব ছাপিয়ে উঠলো – দুপাশেই মানুষ। বৃষ্টি আর প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে একজন অন্যজনকে দাড়িয়ে করে রেখেছে। জন্ম পক্ষপাতদুষ্ট বলে ও আজ জানালার ওপাশে। কাঁচ নামিয়ে দিলাম, সমতা আনার ব্যর্থ চেষ্টা। বৃষ্টি আর ঠান্ডা থেকে তাকে বাঁচাবার কথা মনে হলো – গাড়িতে নিয়ে বাসায় পৌছে দিলে কেমন হয়? মেয়ে বাচ্চা বলে সামলে নিলাম নিজেকে। রাস্তার বাকি বাচ্চাদের কি হবে তাহলে? কিনে নিলাম সবগুলো ফুল বরং। আশা করছি বৃষ্টিতে বেশিক্ষণ না ভিজে ও চলে যাবে বাসায়।

১৮৮.

যাদের ভাগ্য আপনার আমার মতো অতটা সুপ্রসন্ন নয় তাদের জন্য কাজ করবে কে? যাদের নুন্যতম অধিকার নিশ্চিত করতে পারছিনা আমরা – তাদেরকে নিয়ে চিন্তা করছে কেউ? উন্নত দেশগুলোতে ‘ওয়েলফেয়ার ফান্ড’এর ধারণা মানুষকে একটা নুন্যতম ‘ফীড’ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে – সেটার ধারণা আসবে কবে? ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ব্যাপারটা আসবে এর ঠিক পরে। আমার ধারণা, আমরা যারা পারছি তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে সেটা। সরকারকে একটা ভালো মডেল দেখাতে হবে আমাদেরকেই।

১৮৯.

অফিসে আমার কাজের একটা বড় অংশ হচ্ছে – নতুন কার্যক্ষেত্র তৈরী করা। কার্যক্ষেত্রের সাথে উদ্যোক্তা তৈরীর সম্পর্কটা আরো গভীরে। সারাদিন ধান্দা করি নতুন কার্যক্ষেত্রের খোঁজে। খুঁজে ফিরি উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের। নতুন লাইসেন্স, মানে নতুন কিছু এমপ্লয়মেন্ট। এখন বিশ্ব আবার সরে আসছে সনাতন ‘লাইসেন্সিং রেজীম’ থেকে। সেটা নিয়ে আসবো আরেকদিন। একেকটা গাইডলাইন আনছি কার্যক্ষেত্র তৈরীর ধারনায় – আবার নিজেই আমি অটোমেশনমুখী। অটোমেশনই নিয়ে আসবে স্বচ্ছতা। কাজগুলো মানুষ নির্ভর না হয়ে প্রসেস নির্ভর হলে সেদেশকে ফিরে তাকাতে হবে না আর। সেকারণে আমি ‘অ্যাকসেন্চারের’ মতো ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং কোম্পানিগুলোর ভক্ত। আজ একটা অর্গানাইজেশনের প্রসেস ডেভেলপমেন্ট করে দিন, ছোট সিদ্ধান্তগুলো মানুষের উপর ছেড়ে দিলে ঝামেলা হতে বাধ্য। সবকিছুর একটা ‘স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিউর’ তৈরী করে নিতে বলুন সবাইকে। সেটাই কমিয়ে নিয়ে আসবে ন্যায়বর্জিত কাজ। আমার ধারনায় জ্ঞান স্বল্পতায় মানুষই ক্ষতি করতে পারে আরেক মানুষের, প্রসেস নয়।

১৯০.

আবার মানবসম্পদকে যথাযথ ব্যবহার না করলে সেটা অভিশাপে পরিনত হতে দেরী হবে না। নতুন কর্মক্ষেত্র মানে নতুন চাঞ্চল্য। সেটার ফাঁকে খুঁজতে হবে নতুন বাজার – দেশের বাইরে। আর নয় পড়ে থাকা – অন্যের বাজার হয়ে। সত্যি যেটা, অটোমেশন নষ্ট করবে আমাদের অনেকের চাকুরী। তাদের জন্য আমাদের খুঁজতে হবে নতুন পথ। ওয়েলফেয়ার ফান্ডের ধারনাটা আসবে সামনে। যারা কোনো কাজ পাবেন না, তাদেরকে তো আর ফেলে দেয়া যাবে না। কিছু মানুষ কোন কাজই পাবেন না, তাই বলে কি ওদের অধিকার নেই কি বাঁচার?

১৯১.

যন্ত্র কৃষিনির্ভর আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ‘হেভি’ কাজগুলোকে কেড়ে নিয়েছে মানুষের কাছ থেকে। সত্যিই তো, আর কতো কষ্ট করবে মানুষ? ফলে সার্ভিস সেক্টরে এখন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। সেখানেও ধারণা করছি সত্তুর শতাংশ মানুষ কাজ হারাবে অটোমেশনের কাছে। ফলে কমবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। সেটা কমলে কমবে অটোমেশনের অগ্রগতি। এটা একটা সাইকেল বটে।

একটা উদাহরণ নিয়ে আসি বরং।

অটোমেশনের ফলে মানুষের কি হয় বলুনতো?

সত্যিকার অর্থে চাকুরী হারায় তারা। উন্নত দেশগুলো তাদের আবার একটা ওয়েলফেয়ার ফান্ডের উপর বাঁচিয়ে রাখে। সেই ‘ফীড’টা চলতে থাকে ততদিন পর্যন্ত যতদিন সে না আরেকটা চাকরি পাচ্ছে। চাকরি খুঁজেও বের করে সেই দেশগুলো।

আচ্ছা, ওয়েলফেয়ার ফান্ডটা আসে কোথা থেকে?

ওয়েলফেয়ারের পুরো টাকাটা আসে জনগনের রাজস্ব থেকে।

আচ্ছা ওয়েলফেয়ারে থাকা মানুষটা কি কোন ট্যাক্স দেয়?

না, তারা দেন না।

তাহলে অটোমেশনের কারণে সবাই চাকুরী হারালে তাদেরকে রাখতে হবে ওয়েলফেয়ারের ওপর। ওঁরা আবার ট্যাক্স দেবেন না। তাহলে চলবে কিভাবে দেশ?

ওটার উত্তরও আছে। সেটায় আসছি পরে। আমার কাজ হচ্ছে এই আংশিক অটোমেশনে সুবিধা নিয়ে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরী করা। আজও একটা ডিরেক্টিভ নিয়ে কাজ করলাম যা নতুন কার্যক্ষেত্র তৈরী করবে। আর অটোমেশনের কারণে সেটা এখন ওয়েবসাইটে – মানে পৌছে গিয়েছে সবার কাছে – স্বচ্ছতার সাথে।

১৯২.

ফিরে আসি পুরো অটোমেশনের ব্যাপারে। এটা নির্ভর করছে আমাদের ইচ্ছার ওপর। আজ আমরা পুরো পৃথিবীর সব সম্পদকে যদি উৎসর্গ করি মানবজাতির উদ্দেশ্যে, আর ছুটি দিয়ে দেই সবাইকে চাকুরী থেকে? আর অটোমেশনকে যদি ব্যবহার করি আমাদের সব চাহিদা মেটানোর জন্য – উচ্চমানের খাদ্য, বাসস্থান, কাপড় আর যা লাগে? হাই স্ট্যান্ডার্ড লিভিং তৈরী করবো সবারই জন্য। সবই সম্ভব। এর জন্য লাগবে মোটে দশ বছর – সেটাও দরকার হচ্ছে প্ল্যানিং আর তার প্রয়োজনীয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার বানানোর জন্য। বানিয়ে বলছি? পড়েই দেখুন এই বইটা। ‘দ্য বেস্ট দ্যাট মানি ক্যান্ট বাই: বিয়ন্ড পলিটিক্স, পভার্টি এন্ড ওয়ার’ মিথ্যা বলেনি এতোটুকু। ফিরে যাই ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার এডুকেশন সার্ভিস রিপোর্টে। মাথা খারাপ করা রিপোর্ট। পৃথিবী আসলে পুরো মানবজাতিকে খাওয়ানোর মতো খাদ্য উৎপাদন করে অনেক আগে থেকে। তার তিরিশ বছর পর পৃথিবীর জনসংখ্যা সত্তুর শতাংশ বৃদ্ধি সত্ত্বেও এগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রি মানুষ প্রতি সতেরো শতাংশের বেশি ক্যালোরি উৎপাদন করে আজ। না খেয়ে মরার কথা নয় মানুষের। সাম্প্রতিক হিসেব অনুযায়ী দিন প্রতি একেকজনের জন্য অন্তত প্রায় তিন হাজার কিলোক্যালোরির বেশি খাদ্য উৎপাদন হয় এই পৃথিবীতে। তাহলে সমস্যা কোথায়?

১৯৩.

ফিরে আসি আমার ডেস্কে। হাজারো স্ট্যাটিসটিকাল ইনডিকেটর বলছে এগোচ্ছি আমরা। এটা সত্য যে পিছিয়ে পড়ছি আবার কিছু বিষয়ে। কাজ বের করতে হবে আমাদের – সবার জন্য। ছোট রেড ডটের কথা মনে আছে? বিশ্বের অনেক ম্যাপে সিঙ্গাপুরকে দেখানো হয় ওই ছোট একটা রেড ডট দিয়ে। ওদের ইনফরমেশন আর কমিউনিকেশন রেগুলেটরের সাইট থেকে নেয়া নিচের ছবিটা। আমাদেরটাও তৈরী করতে বসে গিয়েছি আমি।

manpowerGrowth

নতুন কার্যক্ষেত্র তৈরীর ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে লিটল রেড ডট

১৯৪.

সবার আগে মন পড়ে আছে কিভাবে ওই মেয়েটাকে [ওদের মতো সবাইকে] জন্মগত একটা নুন্যতম অধিকার দেয়া যায়। ফুল বিক্রি করতে হবে না ওকে। আমার মেয়ের মতো পড়বে ও, একটা নিশ্চিত ছাদের নিচে।

Read Full Post »