Feeds:
Posts
Comments

Archive for June, 2016

Learn to get in touch with the silence within yourself, and know that everything in life has purpose. There are no mistakes, no coincidences, all events are blessings given to us to learn from.

– Elisabeth Kubler-Ross, the author “On Death and Dying”

বইটার নাম দেখেই নাক সিটকেছিলাম বোধহয়। না হলে কিনলাম না কেন? আটানব্বইয়ের কথা। ‘চিকেন স্যুপ ফর দ্য সৌল।’ ‘ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড’ অর্থে গেলে হয় ‘আত্মার জন্য মুরগীর ঝোল’। বলে কী? এই বই কিনে পয়সা নষ্ট করার মানুষ না আমি।

দশ বছর পরের কথা। বুদ্ধিশুদ্ধি হয়েছে আরো। এবার যেতে হলো ওয়েস্ট কোস্টে। ‘সানি’ সান-ফ্রান্সিসকোতে। উঠলাম একটা পারিবারিক ধরনের হোটেলে। মানে, নিজের বড় বাসাকে পাল্টে নিয়েছে একেকটা গেস্টরুম ধরে। বুড়ো-বুড়ি মাথার ওপর থেকে চালালেও ব্যবসাটার খুঁটিনাটি সবকিছু বড় মেয়ের হাতে। আমার থেকে কিছুটা ছোট হবে। হোটেল ব্যবসায় যতোটুকু আন্তরিক হওয়া উচিত তার থেকেও বেশি আন্তরিক ছিলো মেয়েটা। বিশেষ করে এশিয়ানদের প্রতি। সে গল্প আরেকদিন।

সকালের বিনিপয়সার ব্রেকফাস্ট করতে যেতে হতো একটা বড় হলওয়ে দিয়ে। মজার কথা হচ্ছে পুরো হলওয়ের দুপাশটা অনেকগুলো বইয়ের ‘শেলফ’ দিয়ে ভর্তি। হাজারো বই। তার চেয়ে ভালো লাগতো ওই বইগুলোর গন্ধ। সকালের কফি, মাফিন আর বেকনের গন্ধ ছাপিয়ে বইয়ের গন্ধ খারাপ লাগতো না মোটেই।

আচ্ছা, ড্যাফনি – কিছু বই নিতে পারি রুমে? সন্ধার পর বেশ কিছু সময় নষ্ট হয় এমনিতেই। তোমাদের টিভি’র চ্যানেল মাত্র কয়েকটা।

ভাঙ্গাচোরা হলেও দুটো পয়েন্ট দাড়া করিয়েছি বলে শান্তি শান্তি লাগছিল মনে।

চোখ মটকালো মেয়েটা। মনে হচ্ছে হলিউড ফেল। ফেল তো হবেই। আমরা তো হলিউড স্টেটে। ব্লণ্ডদের নামে যে দুর্ণাম সেটাও উতরে যাচ্ছে সে।

ওমা! টিভি দেখবে কোন দুঃখে? আমাদের নাইটলাইফ পৃথিবী সেরা! তুমি চাইলেই পরিচয় করিয়ে দিতে পারি আমার কিছু বন্ধুবান্ধবীদের সাথে। ফোন দেবো ওদের?

এ আবার কী বিপদ ডেকে আনছি এই সকালে! মিনমিন করে কয়েকটা বই চাইতে যেয়ে এ বিপদে পড়বো জানলে ওমুখো হয় কী কেউ? শেষমেষ হাতে পায়ে ধরে রক্ষা পেলাম ওর বন্ধুদের হাত থেকে। নাইটক্লাবে গেলে ডেজিগনেটেড ড্রাইভার হিসেবে ফ্রী সোডাটাই যা লাভ।

এই ড্যাফনি’র হাত ধরে আবার এলো ‘চিকেন স্যুপ ফর দ্য সৌল’ সিরিজের দুটো বই। আমার নেয়া কয়েকটা বইয়ের মধ্যে কিছুটা জোর করেই ঢুকিয়ে দিলো বই দুটো। কথা না বাড়িয়ে বইগুলো নিলাম ওর হাত থেকে। দিন কয়েক পর এক উইকেন্ডে বন্ধুর বাসায় দাওয়াতে যেতে হলো আমাকে। ট্রেনে যেতে যেতে কী পড়বো বলে মনে হতে নিয়ে নিলাম ওই দুটো বই।

প্রথম গল্পেই ঝাপসা হয়ে গেল চোখ। জীবনের ‘ডার্কেষ্ট আওয়ার’গুলোতে সাধারণ মানুষগুলোর অসাধারণ গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনটা ভিজে রইলো পুরো সময়টা ধরে। ছোট্ট ছোট্ট সত্যিকারের গল্প। আসলেই, খুব সুন্দর করে লেখা। চিকেন স্যুপ যেমন করে পেটের জন্য সহনীয়, গল্পগুলোও তাই। মনের জন্য।

ট্রেন স্টেশনে এসেছিল বন্ধু আমাকে নেবার জন্য। ও ঠিক ধরে ফেললো ব্যাপারটা। ক্যাডেট কলেজ থেকে দেখছে না আমাকে? হাতের বইটা হিন্ট দিয়েছে হয়তোবা। মজার কথা, ওই সিরিজের বেশ কয়েকটা বই বের হলো ওর বাসা থেকেও। সেই থেকে জ্যাক ক্যানফিল্ডের বিশাল ভক্ত আমি।

‘চিকেন স্যুপ ফর দ্য সৌল’ সিরিজের প্রথম দিকের একটা গল্প হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা একজন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে। ঠিক ধরেছেন, উনি হচ্ছেন আব্রাহাম লিন্কন। অধ্যবসায় মানে ‘নাছোড়বান্দাভাবে জিনিস চালিয়ে’ নেবার ব্যাপারটা মনে হয় এসেছে উনার কাছ থেকে। আরেক রবার্ট ব্রূস। চরম দারিদ্র থেকে উঠে আসা এই মানুষটা সারা জীবন বিফলতা ছাড়া কিছু দেখেননি বলে আমার ধারনা। তার জীবনের টাইমলাইন কিন্তু তাই বলে।

আট আটটা ইলেকশনে হারলে ওই পথ আর মাড়ায় কেউ? দুবার ব্যবসা করতে গিয়ে খুইয়েছিলেন সব। বিয়ের পর হারান তার প্রিয়তমাকে। আরো কয়েকটা বিপদে পড়ে বড় ধরনের নার্ভাস ব্রেকডাউন হয় তার। বিছানায় পড়ে ছিলেন ছয়মাস। চাকরি হারান কয়েকবার। কিন্তু হাল ছাড়েননি কখনো। আর সেই লেগে থাকাই তাকে নিয়ে গেছে সর্বোচ্চ জায়গায়। আর ওই বিফলতা তাকে শিখিয়েছে নম্র আর বিশাল হতে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »