Feeds:
Posts
Comments

Archive for October, 2016

It’s like Tolstoy said. Happiness is an allegory, unhappiness a story.

― Haruki Murakami, Kafka on the Shore

ট্রেন স্টেশনে ঢুকেই চক্ষুচড়কগাছ! প্রায় সবার হাতেই অন্য ধরনের একটা কাগজ। এগোলাম একটু। খটকা লাগছিল প্রথম থেকেই। নিউজ পেপার নয়। পত্রিকা তো নয়ই। সামনে পড়লো একজন বয়স্ক মহিলা। সাহস করে ঘাড়ের ওপর দিয়েই দেখার চেষ্টা করলাম। অল্প বয়স্কদের ওপর দিয়ে তাকানো বিপদজনক। একবার হলো কী, এই চট্টগ্রামের ঘটনা।

বিরক্ত চোখে থাকলেন আপনি। ‘আরে শুরু করলেন ট্রেন স্টেশনে – থাকেন তো ওখানে। পরে শুনবো ওই কাহিনী।’

মাফ করবেন। ট্রেন স্টেশনে থাকি বরং। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। ছোট কাগজ। ‘এ-ফোর’ সাইজ থেকে বেশ ছোট। আবার, পেপারব্যাক বইয়ের সমান না। বরং একটু বড়। হেডলাইন পড়েই বুঝলাম কাহিনী কী। ছোট গল্প। আশেপাশে তাকালাম সময় নিয়ে। ইংরেজির ‘হার্ড লুক’এর মতো করে। অনেকের হাতেই এই কাগজ। একেকটা দু তিন পাতার। সোর্স কী – মানে পেল কোথায়? বইয়ের দোকান থেকে পায়নি তো?

এটা ঠিক, স্মার্ট কখনোই ছিলো না এই বান্দা। তবে বেকুব হয়ে থাকার সুবিধা অনেক। মানুষ এগিয়ে আসে সাহায্যে। ভুল ভাঙ্গাতে। হলো এবারো। আমার ধারণা ওই বয়স্ক মহিলা বুঝতে পারছিলেন আমার অবস্থা।

‘মসিয়ে’, ভদ্রমহিলা তাকালেন আমার দিকে। মনে হলো – স্মিত হাসলেন আমার অবস্থা দেখে। ‘অবাক কান্ড হয়েছে এখানে। আজ। লাগবে আপনার?’ নিজের হাতের কাগজটা দেখিয়ে বললেন উনি।

মাথা নাড়ালাম আড়ষ্ট হাসি দিয়ে। ‘আসুন আমার সাথে।’ বললেন মহিলা।

পিছু নিলাম ওনার। অনেকে আসছেন ওই দিক থেকেই। ভিড় নয় তবে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা আছে ওখানে।

ওখানেই পাবেন আপনার গল্পগুলো! অসাধারণ, তাই না? বললেন মহিলা।

মহিলার চোখের লীড নিয়ে তাকালাম ওই দিকটাতে। দুটো ভেণ্ডিং মেশিন দাড়িয়ে আছে ওদিকে। ধন্যবাদ জানিয়ে এগোলাম যন্ত্রগুলোর কাছে। যতোই এগোই যন্ত্রগুলোর কাছে – ততোই বাড়ছে আমার হাঁটার গতি।

কমলা রঙের গোলাকৃতি এই ভেণ্ডিং মেশিনটা অনেকটাই অন্য মেশিনগুলোর মতো, তবে একটা পার্থক্য বোঝা গেলো কাছে থেকে। মাত্র তিনটা বোতাম। এক মিনিট, দুই আর পাঁচ মিনিট। টাকা পয়সার কথা বলেনি কোথাও।

বলে কী? এই একটা ভেণ্ডিং মেশিন পাওয়া গেলো পয়সা ছাড়া। চাপ দিলাম দুই মিনিটের বোতামে। বেরিয়ে এলো দুই পাতার একটা ছোট গল্প।


গল্পের মানুষগুলো কাল্পনিক হলেও ঘটনা কিন্তু একদম সত্যি। ফ্রান্সের ট্রেন স্টেশনগুলোতে বসানো হয়েছে এই গল্পের ভেণ্ডিং মেশিন। বিনে পয়সায় গল্প পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে ওদের ট্রেন অপারেটর ‘এসএনসিএফ’। ‘এসএনসিএফ’ ব্যবহার করার সুযোগ হয়েছে অনেকবার। প্রতিবারই নতুন কিছু না কিছু দেখেছি ওটাতে উঠে। এবারের গল্পটা বেশ ইউনিক। অনেক গভীর।

এই মোবাইলের যুগে এটা একটা স্বস্তির বাতাস। বোঝা যাচ্ছে – ট্রেন অপারেটর একটা নতুন কালচার চালু করতে চাচ্ছে এই গল্প পড়া নিয়ে। ব্যস্ততার মধ্যে মানুষ যাতে কিছু কোয়ালিটি সময় পায় সেটার ব্যবস্থা করেছে এই অপারেটর। কোয়ালিটি সময়ের সাথে কোয়ালিটি লিটারেচার দিতে এপর্যন্ত লাখের বেশি গল্প ডিস্ট্রিবিউট করেছে এই প্রোগ্রামের সলিউশন প্রোভাইডার ‘শর্ট এডিশন’।

দশ বছর হবে হয়তোবা। আমাজন থেকে ছোট গল্প কিনতাম চল্লিশ সেন্ট করে। তিন – পাঁচ পাতার। দেশীয় ক্রেডিট কার্ড ঝামেলা করলে বন্ধুরাই কিনে দিতো জিনিসটা। পরে মেইল করে দিতো পিডিএফ ফাইলটা। তখনই মনে হয়েছিল এই মডেলটার কথা। পাঁচ টাকায় একেকটা গল্প। কয়েকজনের সাথে এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম অনেকবার। সবার কথা, মানুষের পড়া কমে গেছে অনেকাংশে। সত্যি। পরে আর এগোয়নি জিনিসটা।

২০১৩তে ফ্রান্সকে নাম দেয়া হয়েছিল ‘লেখকদের দেশ’ হিসেবে। এটা এসেছিল বড় একটা ‘নেশনওয়াইড’ সার্ভের পর। জানা গেলো প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ বইয়ের পাণ্ডুলিপি লিখেও ফেলে রাখে বছরের পর বছর। বই হিসেবে আলোর মুখ দেখেনা আরো বড় একটা শতাংশ। শর্ট এডিশনের ডিরেক্টরের কথাটা ভালো লেগেছে আমার। ‘আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই গল্পকে। মানুষের মাঝে। উত্সাহ দিতে চাই পড়া আর গল্প লেখার ওপর। প্রোমোট করতে চাই আমাদের লেখকদের। গল্পের বিশাল একটা আবেদন আছে আমাদের জীবনে।’ ঠিক তাই। একটা জার্নির আগে আরেকটা জার্নির পরশ দিতেই এ ব্যবস্থা।

পাঁচ হাজারের বেশি গল্প লেখক লিখেছেন এই প্রোগ্রামে। বুঝুন তাহলে – অনেক লেখক তৈরি হবে এভাবে। সামনের বছরগুলোতে। ট্রেনে মানুষের সময়ের ওপর ভিত্তি করে এক, দুই আর পাঁচ মিনিটের গল্প নিয়েই আজ আমার এই গল্প। আমিও চাইবো এধরনের একটা প্রোগ্রাম চালাতে। কী বলেন?

Read Full Post »