The first rule of any technology used in a business is that automation applied to an efficient operation will magnify the efficiency. The second is that automation applied to an inefficient operation will magnify the inefficiency.
– Bill Gates
২১৮.
কম্পিউটার রকিব না?
শুনেছি কথাটা অনেক অনেকবার! মেনেও নিয়েছি। সত্যি কথা বলতে – সিনিয়রদের কাছ থেকে শুনলে খারাপ লাগতো না কিন্তু। বরং, স্নেহের একটা প্যাকেজিং থাকতো ওর মধ্যে। কম্পিউটারের হাজারো সমস্যা? ডাকো ওকে। সলভ করার জন্যই তো আমি। বন্ধুদের ডাকে খোঁচা না থাকলে আর বন্ধুই বা কেন? আবার, আমারো দোষ না থাকলে এই নাম কেন? অফ-লাইন ইন্টারনেটের যুগ থেকেই ব্যবহার করছি এই কম্পিউটার। এফটিপি মেইল দিয়ে ব্রাউজ করতাম নেট – ওই অফলাইনেই! পুশ পুল এসএমএস তো দেখছেন এখন! ওই পুশ পুল মেইল দিয়ে ব্রাউজ করতাম নেট! জেদ করে সব কাজেই ব্যবহার করতে চাইতাম কম্পিউটার।
২১৯.
নব্বইয়ের দিকে কম্পিউটার মানে টাইপের যন্ত্র, সে ধারনা থেকে বের করার জন্যই আমার ওই প্রানান্তকর চেষ্টা। কম বকা খাইনি ওর জন্য। ধরা যাক জরুরি একটা ফ্যাক্স পাঠাবার কথা আমার, মোডেমের ড্রাইভারের সমস্যার কারণে সেটা পাঠানো যায়নি গত কয়েক ঘন্টায়। ফ্যাক্স মেশিন কিন্তু পড়ে আছে আমার রুমে। জিদ চেপেছে – পাঠাবো এই নচ্ছার কম্পিউটার দিয়েই। যাবি না মানে – তোর বাবা যাবে, এই মটো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ছুটিটাই বাতিল হয়ে গেলো! অবহেলা করেছি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্সটা। চাকরি চলে যাবার কথা! মাঝখান দিয়ে সাত দিনের ছুটিটা নট্ হয়ে গেলো।
২২০.
কিসের মন খারাপ, কিসের কি? রাত তিনটে বাজিয়ে ওই ফ্যাক্সের আরেকটা কপি পাঠিয়ে ঘুমুতে গেলাম। লিনাক্স কার্নালটা ওটা সাপোর্ট করছিলো না। কম্পাইল আর রি-কম্পাইল করেই মিটলো ঝামেলাটা। সাড়ে পাঁচটায় আবার পিটি। আহারে দিনগুলি! কোনো কিছুই অসম্ভব মনে হয়নি তখন! শরীরের চেয়ে বড় হৃত্পিণ্ড নিয়ে আমার সিনিয়ররা আগলে ছিলেন আমাকে। কম্পিউটার রকিব, ও একাজ না করলে করবেটা কে আর? সামওয়ান হ্যাজ টু ডু দ্য ইনোভেশন, লেট হিম ইনোভেট!
২২১.
আমার রুটি রোজগার রেডিও যোগাযোগের সূত্রে বাঁধা থাকলেও কম্পিউটার কমিউনিকেশনে পড়ে ছিলো বুকভরা ভালবাসা। উপায় কি? ওদের বিয়ে না দিয়ে উপায় আছে আমার? ইংরেজিতে ম্যারিং আপ বলে কথাটা ওটার জন্য একদম সত্যি! এইচএফ (হাই ফ্রিকোয়েন্সি) রেডিওর সাথে কম্পিউটারের ডুপ্লেক্স সাউন্ডকার্ড আর লিনাক্সের বেসব্যান্ড এন্টেনা টিউনারের সঙ্গে দরকারী সফটওয়্যার! বেশি নয়, বছরখানিক লেগেছিলো মাত্র। তিনশো বউড পার সেকেন্ডের রেডিও মোডেম বানাতেই সময় লেগেছিলো এই যা।
২২২.
সবকিছুতে কম্পিউটার কেন? ভালো প্রশ্ন। ছোটবেলা থেকে অটোমেশনের ওপর একটা দুর্বলতা জন্মে গিয়েছিলো। ওর কারণও ছিলো। ওয়েস্টার্ন সিনেমার নায়কের মতো বন্দুকের নল কামড়ে না বড় হলেও ক্রিস্টাল ডায়োড আর ট্রানজিস্টর কতো চিবিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। তবে সেটা একটু বড় হয়ে – রাগের মাথায়, সার্কিট ঠিকমতো কাজ না করার কারণে। অফিসের একঘেয়ে রিপিটেটিভ কাজগুলো ফেলে দিতাম প্রসেসে। করতো মানুষই। তবে, একটা প্রসেসের মধ্যে। প্রসেসের মধ্যে হিউমান ইন্টার-অ্যাকশন লুপহোল তৈরী করলে – প্রসেসটার কয়েকটা চেক এন্ড ব্যালান্সে ধরা পরত জিনিষটা।
২২৩.
আমার ধারনায় – বড় কাজকে ছোট ছোট মাইলস্টোনে ভাগ করে কয়েকজনের মধ্যে দিলে – অটোমেশনের মতোই কাজ করে। সবার আউটপুট কানেক্টেড আপনার সাথে। যাবে কোথায়? সেমি-অটোমেটিক। শেলস্ক্রিপ্টের মতো। খানিকটা ‘ফর লুপ’এর ধারণা থেকেই। সামরিক বাহিনীর সব কাজের জন্য একেকটা এসওপি – ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ আমার কাজের মূল প্রেরণা। কাজ না হবার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না – এসওপি আছে না? ফলে ডিসিশন মেকিং প্রসেসটাও – ‘ডিএমপি’ কাজ করে দ্রুত। ম্যানাজেমেন্টের জন্য বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ ম্যাগাজিনটাও অনেককিছু নিয়েছে সামরিক বাহিনী থেকে। চেখে দেখুন নিজেই স্পেশাল কালেকশনের কিছু অংশ।
২২৪.
ভাবতাম অটোমেশনে জোর দিলে কাজ বের হবে তাড়াতাড়ি। সেটা কাজও করেছে অনেক জায়গায়। প্রচুর অটোমেশনের কাজও করানো হয়েছে আমাকে দিয়ে। প্রথম দিকে কাজও হয়েছে ভালো। আমি অন্য জায়গায় চলে গেলে সেটা পড়েছে মুখ থুবড়ে। ভালো ডকুমেন্টেশন থাকা সত্ত্বেও না কাজ করার পেছনে ওই প্রজেক্টের পরবর্তী ওনারশীপ দায়ী থাকে কিছুটা। এখন কাজ করছি নলেজ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। সমস্যা একটাই। মানুষ চলে গেলে মুখ থুবড়ে পড়ে প্রজেক্ট। সেকারণেই কাজ করছি নলেজ ‘কন্টিনিউটি’ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে।
২২৫.
এই ‘কন্টিনিউটি’ অংশটাই সমস্যা কাটাবে আসা করি। নতুন আইডিয়া বটে, আমাদের জন্য। প্রতিদিন কাজের একটা স্ন্যাপশট থাকবে সবার কাছে। সবার কাজের খতিয়ান সবাই দেখতে পারবে বছর ধরে। সপ্তাহের এক দিন সবাই দেখবে বিগ পিকচারটা। কোথায় এগুলো তার কাজ আর বাকি সবার। মানে বড় কাজটার কোন মডিউলে কাজ করছিলো সে। আর না হলে হাতির কান দেখার মতো অবস্থা হবে ওদের। প্রতিযোগিতা তৈরী হবে আউটপুটে। খাওয়া দাওয়াও হতে পারে সেদিন! ওয়েল ডিফাইন্ড প্রসেস তৈরী করতে সময় নিলেও করতে হবে সবকিছু ফেলে। প্রসেসটা ক্লায়েন্টও জানবে। সরকারের ক্ষেত্রে জনগণ। একবার দাড়িয়ে গেলে বস প্রতিদিন না থাকলেও অসুবিধা নেই। কাজ থাকবে না মানুষ ডিপেন্ডেন্ট হয়ে। ওটা হবে প্রসেস ডিপেন্ডেন্ট। অমুক নেই তো হবে না কাজ – সেদিন যাচ্ছে চলে। কাজের তদারকি করবে ক্লায়েন্ট, পরোক্ষভাবে। সরকারের ক্ষেত্রে ওই জনগণই।
২২৬.
তবে সব জায়গায় ‘চলো করি অটোমেশন’ ভাবার আগে বিল গেটসের কথাটা মনে রাখবেন। হাটুন কিছুটা পেছনে, মানে সমস্যাটা থেকে বেরিয়ে এসে। প্রসেসটা দক্ষ বা কার্যকর না হলে ব্যাকফায়ার করতে পারে। ভালো দিক হচ্ছে – অটোমেশন অকার্যকর প্রসেসকে আরো আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয়। এফিসিয়েন্ট প্রসেসটাই সবকিছুর মূলে। আবার, দরকার মতো – উই হ্যাভ টু স্ট্রিমলাইন দ্য ওয়ার্কফ্লো! বছর লাগলেও কষ্ট করে তৈরী করুন একটা ‘কার্যকর’ প্রসেস ওয়ার্কফ্লো। বিয়ের রাতে বেড়াল মারার মতো। শান্তি চলে আসবে কাজে। আমি মেরেছিলাম কিনা? বলেন কি ভাই? ভয় ডর কি নেই আমার?
২২৭.
সামনের দিনগুলোতে কিভাবে কোম্পানিগুলোর বাজেট কাট হবে সেটার জন্য বসে থাকতে হবে না আরেকটা বছর। টাকা কম, ভালো কাজ আর স্বচ্ছতা; অটোমেশন ছাড়া গতি নেই সামনের দিনগুলোতে। এফিসিয়েন্ট আর কার্যকর অটোমেশন করার আইডিয়া নিয়ে আসছি সামনেই। ওয়ার্কফ্লোসহ! মাইন্ডম্যাপ? ওটা বোনাস! এই প্রাকটিসটা সবার মধ্যে ঢুকে গেলে আসবে ভালো কাজ আর স্বচ্ছতা। কত মানুষ আমাদের, খাওয়াতে হবে না সবাইকে? আনবো ওয়েলফেয়ার ফান্ডের ধারণা। সবার জন্য স্বাস্থ্য আর দুরের স্বপ্ন নয়। টাকা নেই – ভুল কথা। হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রির ‘কার্যকর’ প্রসেস ওয়ার্কফ্লো তৈরীই আছে পাশের দেশ থাইল্যান্ডে। দেশের জন্য ‘কাস্টমাইজেশন’ আর দরকারী ‘ম্যাপিং’ না করতে পারলে বিশ বছর কি শিখলাম তাহলে? ফেরৎ দিতে হবে না?
দেশের জন্যই তো! থাকছেন তো সাথে?