Feeds:
Posts
Comments

Archive for January, 2014

One trouble with being efficient is that it makes everybody hate you so.

Bob Edwards

৩১২.

স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কথা বলার আগে ওর ওড়ার রীতিনীতি নিয়ে না বললেই নয়। বুঝতে হবে স্পেকট্রাম পানির মতো জিনিস খানিকটা, মানিয়ে রাখাটা কিছুটা সমস্যা বৈকি। দেশগুলোর স্পেকট্রাম রিসোর্স একধরনের হবার ফলে সীমান্তে এর ম্যানেজমেন্ট কিছুটা সমস্যা হলেও দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। এর উদাহরন আছেও ভুরিভুরি। দেশগুলোর মধ্যে ভালো সম্পর্ক না থাকলে সীমান্তবর্তী মানুষগুলোর টেলিযোগাযোগের ভালো সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। দুদেশের মধ্যে তরঙ্গের ইন্টার্ফিয়ারেন্স কমানোর জন্য ‘ক্রস বর্ডার স্পেকট্রাম কর্ডিনেশন’ মিটিং হতে হয় মাঝে মাঝেই। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে সরকার এব্যাপারে মাথা ঘামায় না আর। গাইডলাইন করে ছেড়ে দিয়েছে আগে ভাগেই। কোম্পানিগুলো তাদের কাজের সুবিধার্থে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে স্পেকট্রাম। ব্যবস্যার স্বার্থে সবাই এক। এটাই স্বাভাবিক।

ওয়েভ ওড়ার ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে এখানে, সূত্র - আমার স্কুলের ম্যানুয়াল

স্পেকট্রাম ওয়েভের ওড়ার ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে এখানে, সূত্র – হ্যাম স্কুলের ম্যানুয়াল

৩১৩.

স্কুলে অন্য সব ক্লাসে ঘুম লাগলেও এরিয়েল প্রপাগেশন ক্লাসে চোখ থাকতো টান টান। চোখে পানি দিয়ে আসতাম আগে থেকেই। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল কিভাবে ওড়ে অর্থাৎ প্রোপাগেট করার ধারণাটাই ভালো করে দিতো মনটাকে। স্পেকট্রাম আসলে চলে তিন ধারণার ওপর। গ্রাউন্ড ওয়েভ সেগমেন্টটা চলে পৃথিবীর মাটির ওপর দিয়ে। তিন মেগাহার্টজের নিচের তরঙ্গগুলো মাটির ওপর দিয়ে যেতে পারে অনেক দুরে। ফর্মুলা দেখলে বোঝা যায় যতো বেশি কিলোহার্টজ বা মেগাহার্টজ ততো কম ওয়েভলেংথ, মানে ততো কম দূরুত্বে যেতে পারে রেডিও সিগন্যাল। আবার যতো বেশি বেশি কিলোহার্টজ বা মেগাহার্টজ ততো বেশি দুর্বল হয়ে যায় সিগন্যাল – বিশেষ করে মাটির ওপর দিয়ে যাবার সময়। সর্বোচ্চ দুরত্ব – ধরে নিন পঞ্চাশ মাইলের নিচে। এটা হচ্ছে নিশ্চিত ধরনের যোগাযোগ তরঙ্গ। মিডিয়াম ওয়েভ রেডিওর কথা মনে আছে তো?

৩১৪.

স্কাই ওয়েভ মানে হচ্ছে ওই স্পেকট্রাম যেটা আকাশে বাড়ি খেয়ে ফিরে আসে। ফলে এর অসীম দুরত্ব পার হবার ক্ষমতার কারণে এই শর্টওয়েভ রেডিওগুলো চলে এই স্পেকট্রামের ওপর। কম ওয়াট ক্ষমতা নিয়ে এর ওড়ার ক্ষমতা নিঃসন্দেহে ইর্ষনীয়। দশ বারো ওয়াট ক্ষমতা নিয়ে অর্ধেক পৃথিবী ঘোরার মতো ক্ষমতা আছে তার। ওর একমাত্র ভয় হচ্ছে সৌরঝড়। আইনোস্ফীয়ারের ওজন লেয়ারে রিফ্র্যাক্টিভ ইনডেক্সের কারণে তরঙ্গটা ফেরে বলে সৌরঝড় ওজন লেয়ারের আইয়োনাইজড পার্টিকেল খেয়ে ফেললেই হয় বিপত্তি। আর সে কারণে এটা সর্বোচ্চ দুরত্বে গেলেও নিশ্চিতভাবে যোগাযোগের জন্য আরো কয়েকটা তরঙ্গ ব্যবহার করতে হয়। আগেও লিখেছিলাম এটা নিয়ে।

৩১৫.

স্পেস ওয়েভ কিছুটা গ্রাউন্ড ওয়েভ হলেও এটার গল্প অন্য জায়গায়। পৃথিবীব্যাপী ফাইবার অপটিক্যালের প্রচলন বাড়ার ফলে স্কাই ওয়েভের প্রয়োজন কমে গেছে অনেকাংশে। মিলিটারি অপারেশন, ন্যাভিগেশন, মেরিন কমিউনিকেশন আর কিছু দরকারী কাজ ছাড়া পৃথিবীব্যাপী যোগাযোগের জন্য স্কাই ওয়েভের ব্যবহার গেছে কমে। বরং তার জায়গায় স্পেস ওয়েভ মানে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য মাইক্রোওয়েভ অর্থাৎ তরঙ্গের উপরের দিকে পড়ছে সবার চোখ। গত এক দশকে মোবাইল পেনিট্রেশন পাল্টে দিয়েছে সবার ধারণা। প্রয়োজন যুক্ত করা সবাইকে, ছোট জায়গায়। দূরত্বটা নিয়ে সমস্যা নয়। একশো মেগাহার্টজ থেকে চার পাঁচ গিগাহার্টজের স্পেকট্রাম হচ্ছে গিয়ে আজকের মোবাইল ব্রডব্যান্ডের কাঁচামাল।

৩১৬.

স্যাটেলাইটের একই গল্প। ওয়েভলেংথ হতে হবে কম। মানে প্রয়োজন ওপরের দিকের ফ্রিকোয়েন্সির। এর সব ধরনের রিসার্চ আর ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে এই ব্যান্ডটাকে ঘিরে। তরঙ্গের মধুরতম অংশ কিন্তু এই অংশে। মোবাইল আর স্যাটেলাইট ইন্ডাস্ট্রির মারামারি তিন গিগাহার্টজের কিছু অংশ নিয়ে। স্যাটেলাইটের তরঙ্গের ব্যাপারটা দেশের ভেতরে থাকেনা বলে এটার সমন্বয় করতে হয় একটা ইউএন এজেন্সি থেকে। সেটা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন। এই মধুরতম মানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যান্ড নিয়ে আসছি সামনে।

সব আছে এখানে - টুজি, থ্রিজি, ফোরজি, এলটিই, ওয়াইম্যাক্স, ওয়াইফাই, এফএম ব্রডকাস্টিং, মোবাইলটিভি, ডিজিটাল টেরেস্ট্রিয়াল টিভি, ডিজিটাল অডিও ব্রডকাস্টিং (ডিএবি)

সব আছে এখানে – টুজি, থ্রিজি, ফোরজি, এলটিই, ওয়াইম্যাক্স, ওয়াইফাই, এফএম ব্রডকাস্টিং, মোবাইল টিভি, ডিজিটাল টেরেস্ট্রিয়াল টিভি, ডিজিটাল অডিও ব্রডকাস্টিং (ডিএবি) … আরো আছে এখানে; সূত্র: ব্রিটিশ রেগুলেটর

মধুরতম মানে? সব আছে এখানে – টুজি, থ্রিজি, ফোরজি, এলটিই, ওয়াইম্যাক্স, ওয়াইফাই, এফএম ব্রডকাস্টিং, মোবাইল টিভি, ডিজিটাল টেরেস্ট্রিয়াল টিভি, ডিজিটাল অডিও ব্রডকাস্টিং (ডিএবি), আরো বলবো? কি নেই এখানে?

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

How you try is more important than how hard you try.

Tim Fargo

৩০৬.

মানুষের জীবন পাল্টে দিচ্ছে মোবাইল ডিভাইসগুলো। তথ্যের সহজলভ্যতা ক্ষমতায়ন করছে মানুষের। চিন্তা করছিলাম ক্লাস সেভেনের কথা। ঢাকা থেকে ক্যাডেট কলেজে পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হতো নদী যমুনা। পৌঁছানোর পর পোস্ট করতাম চিঠি। পাঁচ ছয়দিন পর খবর পেতেন বাবা মা। আমার পৌছানোর খবর। আজ হলে কি হতো? মুহুর্তেই চলে যেতো খবর। আগের মতো পাঁচ ছয় দিন ধরে শঙ্কার মধ্যে সময় কাটাতে হবে না আর। ভিডিও কলে আমাকে দেখে মন জুড়িয়ে নিতেন বাবা মা। প্যারেন্টস ডেতে আসার ঝক্কি যেতো কমে।

৩০৭.

কোন গ্রামের কি উত্পাদন হচ্ছে আর তার দর কষাকষি হয়ে যাচ্ছে মোবাইলে। এটা মানুষের কতো বড় ক্ষমতায়ন সেটা যারা করছেন তারাই জানেন ভালো করে। মানুষের জীবন পাল্টানোর সাথে অর্থনীতিতে একটা অভূতপূর্ব ‘মাল্টিপ্লায়ার’ হিসেবে কাজ করছে এই মোবাইল ডিভাইসগুলো। দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসছে মানুষ – যুক্ত থাকার ফলে। বাংলালিঙ্কের ‘দিন বদলের পালা’র গল্প তো আসেনি এমনিতেই। আর – এই মোবাইল ডিভাইসগুলো যুক্ত হচ্ছে স্পেকট্রাম দিয়ে।

৩০৮.

মোবাইল পাল্টে দিয়েছে আমাদের সবার জীবন। পিরামিডের সবচেয়ে নিচের মানুষগুলোর দিকে তাকাই একবার। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, চরম দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার মানুষগুলোকে যুক্ত হবার সুযোগ করে দিলে ওরাই নিজের চেষ্টায় বের হয়ে আসবে – দারিদ্র্য সীমা থেকে। সোলার চার্জারসহ একটা করে ফোন দিন ওই মানুষগুলোকে – আপনাকে অবাক করে দুবছরের আগেই একটা ব্যবস্যা দাড়িয়ে করে ফেলবে সে। ভিজিএফ সাহায্যের সাথে বান্ডল করে দিন একটা করে ফোন, দেখতে হবে না ফিরে। আমরা অনেক রেজিলিয়েন্ট! তো – টাকা কোথায়? ওর উত্তরে আসছি পরে।

৩০৯.

গত বছর কি লিখেছিলাম এব্যাপারে? ধার করলাম আগের পোস্ট থেকে।

আমাদের দেশে কেন, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেয়া হয়েছে মোবাইল ফোন বিনামূল্যে – উনিশশো পঁচাশি সাল থেকে। ইউনিভার্সাল সার্ভিসের আওতায় গরীব মানুষগুলোর বাসায় ল্যান্ডলাইনের পাশাপাশি হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে মোবাইল ফোন – মাসে দুশো পঞ্চাশ মিনিটের টক্ টাইম সহ। ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন মানে এফসিসি, আমাদের বিটিআরসির মতো শুধু গত বছরেই একশো ষাট কোটি ডলার খরচ করেছে ফোন কেনার পেছনে। এক কোটি পঁচিশ লক্ষ মোবাইল একাউন্ট ভরেছে টক্ টাইম দিয়ে। ঘুরে আসুন না এফসিসির লাইফলাইন প্রোগ্রামের সাইট থেকে।

৩১০.

ফিরে আসি স্পেকট্রামের গল্পে। এই যুক্ত থাকার মূলেই রয়েছে স্পেকট্রাম। উন্নতদেশগুলোর মতো আমাদের ব্রডব্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই তো কি হয়েছে? সৃষ্টিকর্তা নিরাশ করেন নি আমাদের মতো দেশগুলোকে। আমাদেরকে দিয়েছেন স্পেকট্রাম। ফাইবারের মতো ডাটা ক্যাপাসিটি নিয়ে উড়াল দিচ্ছে এখনকার মাইক্রোওয়েভ ব্যাকহলগুলো – এই স্পেকট্রামের ওপর। সমস্যা একটাই। অন্য ভালো সবকিছুর মতো এটার পরিমান সীমিত। মোবাইল ইন্টারনেট আসার পর স্পেকট্রামের চাহিদা বেড়েছে হু হু করে। অব্যবহৃত স্পেকট্রাম হচ্ছে গোল্ডমাইনের মতো। সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বলে ওটাকে কোলে করে বসে থাকার মানে হয় না কোনো। স্পেকট্রাম অব্যবহৃত থাকলে ওটার সিস্টেম ওভারহেড চলে যাচ্ছে জনগনের ওপর। বাজারে আজ একটা স্পেকট্রাম ছেড়ে দিলে ‘নলেজ ইকোনমি’ হবার পথে দেশ আমাদের এগিয়ে থাকবে একদিন। এখানে, এভরিডে কাউন্টস! হারিয়ে ফেলছি অপুর্চুনিটি কস্ট, প্রতিদিন।

৩১১.

‘রেসপন্সিবলি’ মানে দায়িত্বের সাথে স্পেকট্রামের সুষম বন্টন, কৌশলের সাথে ওর সুষ্ঠু ব্যবহার, ন্যায্যতার সাথে কোথায় কোথায় ব্যবহারের অগ্রাধিকার দরকার এই সবকিছুর দায় চলে আসছে এর এফিসিয়েন্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর। দক্ষতার সাথে স্পেকট্রামের বন্টন নিয়ে গবেষণা চলছে পৃথিবী জুড়ে। আর স্পেকট্রামের রিসোর্স ইউটিলাইজেশন বাড়ানো নিয়েই বিনিয়োগ হচ্ছে বিলিয়ন ডলারের। ফাঁকা স্পেকট্রাম না পেয়ে ‘হোয়াইট স্পেস’ আলোচনায় আসছে বার বার। সত্যি তাই!

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Wireless communication is plagued by a shortage of space for new services. As new regions of the radio spectrum have been opened to practical operation, commerce and industry have found more than enough uses to crowd them.

– Report by the US Joint Technical Advisory Committee , 1952

২৯৯.

ঝিম মেরে ছিলাম গত দুদিন। ব্যাপারটা অক্সিজেনের মতো। ছড়িয়ে আছে সব জায়গায়। দেখা যায় না আবার। কাজ করছে লাইফলাইন হিসেবে – যোগাযোগ যন্ত্রগুলোর। লাইফসাপোর্ট মেডিকেল ইকুইপমেন্টও চলছে ওর ওপর দিয়ে। কোথা থেকে শুরু করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। রিসার্চ পেপার হিসেবে লিখলে পড়বেনই বা কেন? সেটা তো লিখতে হবে ইংরেজিতে। কিন্তু লিখতে তো চাচ্ছি বাংলায় আমি। সবার মতো করে। আউটলাইন করে নিলাম খানিকটা। বই হিসেবে বের করবো পরে। মাথা থেকে ডাউনলোড করি তো আগে, কি বলেন?

৩০০.

লিখতে বসলাম এইমাত্র। স্বাতী বাচ্চা দুটোকে নিয়ে বেরুলো মাত্র। গন্তব্য – মায়ের বাসা! খোঁজ নিতে হলো বার কয়েক। মোবাইল ফোনে। ফোনটাকে তুলে ডায়াল করলাম ওর নাম্বারে। বাতাসের ইথারে ভেসে এলো ওর কথা। অটবিতে নেমেছে কিছুক্ষণের জন্য। হৃদস্পন্দন থেমে গেল মনে হলো। নতুন আবার কি কিনতে নামলো? ভীতি বাড়িয়ে দিলো ও। গুগল হ্যাংআউট চালু করে নতুন জুতোর শোকেসটা দেখালো ওর ফোন থেকে। রংটা ভালোই মনে হচ্ছে। দামটা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেলাম – ভয়েই। গুগল হ্যাংআউটের ভিডিও কল দিয়ে জিনিসপত্র দেখানো শিখিয়েছে আমার ছেলে। দুমাস আগে গিয়েছিলাম ব্যাংককে। হোটেলে ফিরে এলেই ছেলের বায়না। কথা বলতে হবে ওর সাথে। চালু করলাম গুগল হ্যাংআউট। হঠাৎ করে বলে বসলো – রুম দেখাও বাবা! নিচের বাটন চেপে চালু করতে হলো পেছনের ক্যামেরাটা। বড়টা। এরপর পুরো পর্দা সরিয়ে বিশ তালার হোটেলের ওপর থেকে দেখাতে হলো রাতের মোহনীয় ব্যাংকক। মিনিট পনেরো ধরে আশে পাশের আলো ঝলমলে হোটেল আর রাস্তা দেখে ঘুমাতে গেল সে।

৩০১.

ফিরে আসি আগের জায়গায়। ফোনটা করেছিলাম বাতাসের ওপর ভর করে। ওটার আসল নাম বেতার তরঙ্গ। ওই তারহীন তড়িৎ-চৌম্বকীয় জিনিসটা শক্তির এমন একটা রূপ যেটা শূণ্যস্থান মানে বাতাস অথবা বাতাস ছাড়া ঢেউয়ের আকার নিয়ে সঞ্চালিত হতে পারে। মহাশুন্যের স্যাটেলাইট বা কোটি মাইল দুরের মার্সের রোভার আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে ওই বেতার তরঙ্গ দিয়ে। ওটাই হচ্ছে স্পেকট্রাম। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় জার্মেনিয়াম ডায়ডের রেডিও তৈরী করতে গিয়ে প্রেমে পড়ি এই স্পেকট্রামের। শর্টওয়েভের কোয়ালিটি নিয়ে বিরক্ত হয়ে সস্তায় বানিয়ে নিলাম একটা স্যাটেলাইট রিসিভার। ল্যাচ করলাম এশিয়াস্যাটে। হ্যাপী স্টেশন – রেডিও নেদারল্যান্ডস! সিডি কোয়ালিটি, স্যাম্পলিং ৪৪ কিলোহার্টজের মতো। হাতে আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো অবস্থা।

৩০২.

আজও রেডিও শুনি। তবে, ইন্টারনেট দিয়ে। কান্ট্রি রেডিও। আইএসপি ধরে বাসার ওয়াইফাই রাউটারে। তারপর সব খেলা স্পেকট্রামের। পাঁচটা পিসি, টিভি, ট্যাবলেট আর আমাদের অ্যান্ড্রয়েড কয়েকটা। ২.৪ আর ৫.৭ গিগাহার্টজের খেলা। ক্যামেরাটাও নাকি কথা বলে ওদের সাথে। নতুন মাইক্রোএসডি কার্ডটা কথা বলছে রাউটারের সাথে। আইএসপির লাইন কেটে গেলেও সমস্যা নেই। ব্যাকআপ হিসেবে রয়েছে টেলিটকের থ্রীজি, ওটাও স্পেকট্রামের খেলা। আসছে থ্রিজির ওপর দিয়ে – বের হচ্ছে আরেকটা ওয়াইফাই হটস্পট হয়ে। এসআরডি মানে শর্টরেঞ্জ ডিভাইসের মধ্যে ব্লুটুথ আর আরএফআইডির ওপর চলছে অনেকগুলো যন্ত্র। গান ছাড়া চলতে পারি না বলেই মিনিম্যালিস্ট ডিস্ক সিস্টেমটাও চলছে ব্লুটুথ রিসিভারের ওপর ভর করে। ইন্টারনেট রেডিও, ল্যাপটপ বা ফোন, যার যখন দরকার ব্লুটুথ রিসিভারে রেজিস্টার করে চালাচ্ছে তার পছন্দের গান বা টকশো। টিভির রিমোটটা অবশ্যি হাতে পাইনি কখনো। তাই বলে ওটাও কি চলছে না স্পেকট্রামের ওপর? ট্রেডমিলটাও স্পেকট্রামের ওপর ভর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে শরীরের সব গল্প। তাও আবার ক্লাউডে। জিপিএস স্যাটেলাইটগুলো আমার নজরদারী করছে বছরের পর বছর – ওই স্পেকট্রাম দিয়েই।

৩০৩.

স্পেকট্রামকে ঘিরে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ভ্যালু চেইন। সরকার, রেগুলেটর, সার্ভিস প্রোভাইডার মানে অপারেটর আর যন্ত্রপ্রস্তুতকারক। যন্ত্রপ্রস্তুতকারকদের পেছনে রয়েছে বিলিয়ন ডলারের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি। বাঘা বাঘা ইউনিভার্সিটি। হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারকদের যুদ্ধের শুরুতেই কুপোকাত নকিয়া। বিলিয়ন ডলারের চিপসেট ইন্ডাস্ট্রি? আর তাদের পেটেন্ট? সবকিছুর মূলে হচ্ছে গিয়ে হতচ্ছাড়া এই স্পেকট্রাম। এই স্পেকট্রামের ওপর চলছে দেশগুলোর জোর লবিং। আর্লি মুভার্স অ্যাডভান্টেজও বিলিয়ন ডলারের। স্নায়ুযুদ্ধের দেখেছেন কি?

৩০৪.

চার বছর পর পর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়নের ‘ওয়ার্ল্ড রেডিও কনফারেন্স’ নিয়ে যুদ্ধপ্রস্তুতি দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে আপনার। দুহাজার পনেরোর ওয়ার্ল্ড রেডিও কনফারেন্স নিয়ে মুখিয়ে আছে স্যাটেলাইট আর ওয়্যারলেস ইন্ডাস্ট্রি। খুঁজে নাও অন্য ব্যান্ড! স্যাটেলাইট ইন্ডাস্ট্রি ওর ‘সি ব্যান্ড’ নিয়ে দেবে মরণ কামড়। এদিকে টেরেস্ট্রিয়াল ব্রডকাস্টিং থেকে ‘ডিজিটাল ডিভিডেন্ড’ ব্যান্ড খেয়ে ফেলেছে ওয়্যারলেস মানে মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি। ত্রিশঙ্কু লড়াইকে ঘিরে সরকারগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। সরকারের পেছন থেকে গোলাবারুদ সরবরাহ করছে যন্ত্রপ্রস্তুতকারকগণ। বিলিয়ন ডলারের প্রোডাকশন লাইন অপেক্ষা করছে একটা নডের জন্য। আমার দেশের ওই ব্যান্ডের যন্ত্রটা ‘হারমোনাইজড’ মানে সব জায়গায় মানাতে পারলে পায় কে আমায়! তখন খেলা হবে ইকোনমি অফ স্কেলে। ভলিউমে খেলবে কোম্পানিগুলো। বোল্ডআউট হয়ে যাবে অন্য বাঘা বাঘা কোম্পানি। তার জলন্ত উদাহরণগুলো ভাসছে চোখের সামনে। হ্যা, আপনার আমার সামনে।

৩০৫.

সব কিছুর পেছনে রয়েছে সরকারগুলোর ‘এগ্রেসিভ’ ব্রডব্যান্ড মাস্টার প্ল্যান। সরকারগুলো আগে না বুঝলেও এখন বুঝে গেছে ব্রডব্যান্ড ছাড়া তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। নিকষ কালো অন্ধকার। নলেজ ইকোনমি আর ব্যবস্যার চাবি হচ্ছে ব্রডব্যান্ডে। তার জন্য সবচেয়ে সহজ কাঁচামাল হচ্ছে স্পেকট্রাম।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

The resistance is waiting. Fight it. Ship.
Seth Godin

২৯১.

লিখছি অনেক কিছুই। ‘কেন লিখবেন’ গোছের লেখা থেকে শুরু করে ‘গান বাজনা’ কিছুই বাদ যাচ্ছে না বলেই এই গল্পের অবতারণা। কেউ কেউ বলছেন ইনবক্সে – লিখুন, আপনার কাজ নিয়ে। উত্তম প্রস্তাব। তবে এখনি নয়। শিখছি এখনো। তৈরী করছি বিশাল একটা নলেজবেজ। এই অর্গানাইজেশনের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। আমাদের মতো দেশগুলো জ্ঞান আহরণ করলেও তা টিকিয়ে রাখতে পারেনা প্রায়োগিক দর্শনের অভাবে। এজেন্সীগুলোর সমন্বয়হীনতা এর একটা বড় কারণ হতে পারে। তার চেয়ে বড় কারণ হচ্ছে অর্গানাইজেশনের স্মৃতি বা মেমরি তৈরী করার ধারণার চর্চা না থাকা। একটা অর্গানাইজেশনের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তার দক্ষ মানবসম্পদ। অর্গানাইজেশনের স্মৃতি তৈরী না হলে সেটা দিন দিন মেধাশুন্যতায় পর্যবসিত হবে। অর্গানাইজেশন আর দেশের জন্য ব্যাপারটা একই। সেদিক থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো মধ্যে যারাই জ্ঞানটাকে টেকসই অবস্থানে নেবে – তারাই টক্কর দেবে উন্নত অর্থনীতিগুলোর সাথে।

২৯২.

জ্ঞান ভিত্তিক অর্গানাইজেশনগুলোর বড় সমস্যার মধ্যে নলেজ ম্যানেজমেন্ট একটা বিশাল সমস্যা বটে। গুগলের মতো জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিতে সাত বছর চাকুরী করে বের হয়ে গেলে কোম্পানি কিছুটা চাপে পড়ে সত্যি, তবে সেটার জন্য ওদের নলেজ ম্যানেজমেন্ট দেখলে মাথা ঘুরে যাবে। বাংলাদেশে ওর কাছাকাছি নলেজ ম্যানেজমেন্ট গুটিকয়েক কোম্পানির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটার সুবিধাটা নিতে পারছি না আমরা, এখনো। ভালো ভালো রিসোর্স মানে জনবল চলে যায় কাজ শিখে – আটকে রাখতে পারি না আমরা।

২৯৩.

হাজারো জিনিস শিখছি প্রতিদিন। আমার বদ অভ্যাস হচ্ছে ওটার জার্নালিং করা। দু-এক লাইনে হলেও লিখে রাখি ডিজিটাল নোটপ্যাডে। হাজারো লাইন লেখার পর বছর এক দুই পর পর হারাই ওই নোটগুলো। ঠেকে শিখেছি ক্লাউড সিনক্রোনাইজেশন। আপাতত হারাচ্ছে না ওগুলো। এখন ক্লাউড প্রোভাইডার হাওয়া না হয়ে গেলেই হয়! কাজের ফাঁকে ফাঁকে রেগুলেটরি নতুন কীওয়ার্ড চোখে পড়লেই যোগাযোগ করি ওই দেশগুলোর রেগুলেটরের সাথে। জ্ঞান বিলানোর ক্ষেত্রে জুড়ি নেই ওদের। চাইতে হবে নিজ থেকে। দুহাজার আটে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সুইডিশ রেগুলেটর। শুরু করেছিলাম নিজের উদ্যোগে। ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির প্রথম লাইসেন্সিং নীতিমালার নামটা ধার করলাম তাদের থেকে। ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস এক্সেস – সংক্ষেপে বিডাব্লিউএ।

২৯৪.

গত ছয়বছর ধরে পড়েছি অনেক কিছুই। শুনেছি আর কথা বলেছি অনেক কনফারেন্সে। তবে জ্ঞান নিয়ে তো বসে থাকলে হবে না – সেটার আউটকাম থাকতে হবে! যাকে সেথ গোডিং বলেছেন ‘শিপিং’ মানে বের করে দাও কাজটা। উনার কথা হচ্ছে;

Ship often. Ship lousy stuff, but ship. Ship constantly.

২৯৫.

সবকিছুর একটা আউটপুট থাকবে। জ্ঞানের আউটকামটা নিয়ে আসতে হবে দেশের স্বার্থে। আজ আমার জ্ঞানের পেছনে খরচ করেছে দেশ, ফেরৎ দিতে তো হবে আমাকেই – দেশকে। জ্ঞান থাকার পরও কাজ না করার পেছনে রয়েছে রেজিস্টেন্স। কাজ করতে গেলেই ‘কিন্তু’ আর ‘কি না কি হয়’ গল্প চলতে থাকে মনের ভেতর। আর এই মনের ভেতরের ইন্টারনাল রেজিস্টেন্স শেষ করে দিচ্ছে আমাদের ক্যারিয়ার, হাজারো উদীয়মান প্রজেক্ট আর দেশের উন্নতি। সমস্যা হয় না আমার। আটকে গেলেই হাঁক ছাড়েন সেথ গোডিং আর স্টিভেন প্রেসফিল্ড!

ফাইট ইট, রকিব! নেইল ইট, বাডি! বি দ্য লিঞ্চপিন!

মুক্তি নেই! ঘুমের মধ্যেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন এঁরা। একারণে মনে হয় ডেলিভারিও বেশি।

ব্রায়ান ট্রেইসির মূল মন্ত্রটাও একেবারে খারাপ নয়।

ট্র্যাই ইট, ডু ইট, ফিক্স ইট!

২৯৬.

নলেজ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়েছি বলে তৈরী করছি একটা নলেজবেজ, আমার সহকর্মীদের নিয়ে। আগে ম্যানেজ করতাম একা একা। এখন পারছিনা আর। ভাগ করে দিয়েছি সবার মধ্যে। কাউকে ডাব্লিউটিও/গ্যাটস প্রোটোকল, কাউকে স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট আর কাউকে কনসিউমার প্রটেকশন। সংগ্রহ করেছি প্রায় সাত হাজার ডিজিটাল নীতিনির্ধারনী ডকুমেন্টেশন, আরো হাজার আটেকের মতো হাতে আসছে সামনেই। কবে কে কি করেছে – ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্রাকটিস কোনোটাই বাদ পড়বে না বলে আশা করছি। টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশন চলে গেছে অন্য ধাপে। আসল কথা, ইনোভেশন ইন্ডাস্ট্রির সাথে করতে হবে মিতালি। বানাতে হবে তাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। দেশের স্বার্থে। তবেই হবে উন্নতি। রেগুলেশন বলছে না কেউ, ওটা হয়ে গেছে ফ্যাসিলিটেশন। আসল রেগুলেশন চলে গেছে কম্পিটিশন আর কনসিউমার প্রটেকশন এজেন্সীর কাছে। গল্প দিচ্ছি না কিন্তু! ফেডারেল ট্রেড কমিশন আর অস্ট্রেলিয়ান কম্পিটিটিশন এন্ড কনসিউমার কমিশন সাইটে উঁকি মারবেন নাকি একবার? ট্যাগলাইন হচ্ছে ‘প্রটেক্টিং কনসিউমার’!

২৯৭.

দেশের উন্নতির সাথে জিডিপি জড়িত। আর ব্রডব্যান্ড ছড়ানোর সাথে জিডিপি যুক্ত সরাসরি। দেশগুলো নিজেকে বলছে ডিজিটাল ইকোনমি আর নিচ্ছে ডিজিটাল এজেন্ডা। যে দেশগুলোতে ব্রডব্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে উঠেনি তাদেরকে নিরাশ করেননি সৃষ্টিকর্তা। তাদেরকে দিয়েছেন তরঙ্গ বা স্পেকট্রামের মতো জাদুর চাবিকাঠি। লেট-স্টার্টারদের সামনে অফুরন্ত সম্ভাবনা। ওয়েস্টার্ন সিনেমার নায়কদের মতো বন্দুকের নল না কামড়িয়ে বড় হলেও তরঙ্গের সাথে সখ্যতা সেই জ্ঞান হবার পর থেকেই। ওই স্পেকট্রাম আর টেলিযোগাযোগের নাম্বারিং হচ্ছে যেকোনো দেশের একটা সীমিত রিসোর্স। আজ আপনার বাতাসের ভেতরের ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স আর থ্রীজি/এলটিই – সবই হচ্ছে স্পেকট্রামের খেলা। মজার কথা হচ্ছে সব দেশের এই দুটো জিনিসকে সমান করে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্পেকট্রাম আছে যে পরিমান – আমাদেরও তাই। এটার সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য গবেষণা হচ্ছে কোটি কোটি ডলারের। আবার সর্বোত্তম আউটকামের জন্য দরকার ওই গবেষণালব্ধ জ্ঞান আর ওই দেশের জন্য প্রায়োগিক প্রজ্ঞা। তবে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়লে হবে না। দরকার ব্যবস্যা বান্ধব নীতিমালা। দরকার ভিশনারী ব্রডব্যান্ড মাস্টার প্ল্যান

২৯৮.

খালি হাতে যাব না আজ। শিক্ষা কিভাবে দেশগুলোকে এগিয়ে নিচ্ছে সেটার গল্প বলার অপেক্ষা রাখে না আর। স্কুলগুলোতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেবার জন্য কাজ করছে অনেকেই। সেটার একটা চমত্কার রিপোর্ট হাতে এসে পড়ল গতকাল। নামিয়ে নিন এখান থেকে

তার আগে, বলুন তো – শুরু করবো কোনটা দিয়ে?

স্পেকট্রাম না নাম্বারিং?

Read Full Post »

Sane is boring.

― R.A. Salvatore

২৮৩.

গানটার নাম শুনে এগোইনি আর। পাগলের কান্ডকারখানা নিয়ে হবে হয়তোবা। নামেই ওটার প্রমান পাওয়া যায়। ভুল ভাঙ্গলো কয়েকদিন আগে। বিলি কারিংটনের গান যে শুনিনি সেটা নয়। চমত্কার গলা – ভরাট বলে কথা। সিডিটা পড়েই ছিলো অনেকদিন ধরে। অনেকগুলো সিডি একসাথে কেনাতে এটা শোনা হয়নি আর। ধন্যবাদ ইউটিউব। কেনি চেজনির একটা মিক্স শুনতে গিয়ে পড়লাম আসল বিপদে। মনটাই ভালো হয়ে গেল ভিডিওটা দেখে। গানটাও অসাধারণ। মানিয়ে গেছে কারিংটনের সাথে। ও না গাইলে ভালো লাগতো না এতো। অন্যরাও ভুল করেনি গানটা নিয়ে। কান্ট্রি বিলবোর্ড টপ চার্টে এক নম্বর ছিলো ওই সময়ে। গ্র্যামি নমিনেশনে ‘বেস্ট মেল কান্ট্রি ভোকাল পারফরমেন্স’ আর ‘বেস্ট কান্ট্রি সং’ হিসেবে ছিলো দুহাজার নয়ের ডিসেম্বরে। ‘সং অফ দ্য ইয়ার’ নমিনেশন পেয়েছিলো পরে।

২৮৪.

গানটা লিখেছিলেন দুজন। ববি ব্র্যাডক আর ট্রয় জোন্স মিলে এমন তিনটা ধারণা খুঁজছিলেন যার কোনো আর্গুমেন্ট থাকবে না। খুঁজতে খুঁজতে পেলেনও সেই তিনটে – সর্বসত্য ধারণা। ১. সৃষ্টিকর্তা মহান, ২. পানীয়টা ভালো আর ৩. মানুষ মাত্রই পাগল। ওটা নিয়েই ঘুরেছে গানটা। আমাদের কৃষ্টির সাথে বিয়ারের মতো পানীয়টা যায়না বলে ওখানে চা’র মতো পানীয়কে ধারণা করে চালাতে পারেন আপনার মতো করে। মডারেট টেম্পো নিয়ে এগিয়েছে গানটা, কী ছিলো ‘এফ মেজর’, ভয়েস সেন্ট্রিক। ভালো না লেগে উপায় নেই আপনার। ন্যারাটরই হচ্ছে গায়ক, তার ওপর দিয়ে চালিয়ে দিলাম আমি। গানটার শেষে টুইস্টটাই টেনেছে বেশি আমাকে।

This old man and me, were at the bar and we…
Were having us some beers and swappin’ I-don’t-cares
Talking politics, blonde and redhead chicks
Old dogs and new tricks, and habits we ain’t kicked
We talked about God’s grace, and all the hell we raised
Then I heard the ol’ man say
God is great, beer is good, and people are crazy

২৮৫.

বারে বসেছিল বুড়ো লোকটা। পাশের জায়গাটা ফাঁকা থাকাতে বসলাম ওর পাশে। বুড়োর বন্ধুসুলভ আচরণ মুগ্ধ করলো আমাকে। বিয়ারের অর্ডার দিতে থাকলাম দুজনে মিলে। আলাপের কুল কিনারা ছিলনা বলেই বোধহয় কোনো কিছু মিস করতে চাইনি! পলিটিক্স, নিজ নিজ ট্রেড সিক্রেট, বারের সোনালী আর লালচুলো মেয়েগুলোও বাদ যায়নি ওই আলাপ থেকে। কি কি এখনো চেষ্টা করা হয়নি জীবনে, আমাদের বাজে অভ্যাস থেকে শুরু করে নিজের পালা কুকুরগুলো নিয়েও আলাপ হয়েছে ওই বুড়োর সাথে। মিশে গেলাম তার সাথে – পুরনো বন্ধুর মতো। অবাক করার মতো!

২৮৬.

কতো জায়গায় সৃষ্টিকর্তা সাহায্য করেছে এই ছোট জীবনে – সেটাও বাদ যায়নি ওখানে। সৃষ্টিকর্তা যে কতো মহান সেটার কথাই ঘুরেফিরে আসছিলো আমাদের কথায়। কতো খারাপ কাজ করেছি সেটা নিয়েও আলাপ হয়েছে ওই বুড়োর সাথে। তখনি দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বুড়ো বললো – সৃষ্টিকর্তা মহান/পানীয়টা ভালো/আর মানুষও পাগল বটে! মানুষের পাগলামির কথা এসেছে বুড়োর কথায়। পরে বুঝেছি সেটার মর্মার্থ।

He said I fought two wars, been married and divorced
What brings you to Ohio, he said damned if I know
We talked an hour or two, ’bout every girl we knew
What all we put them through, like two old boys will do
We pondered life and death, he lit a cigarette
Said these damn things will kill me yet
But God is great, beer is good, and people are crazy

২৮৭.

বুড়ো দু দুটো যুদ্ধ করেছে দেশের জন্য। বিবাহিত তবে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে অনেক আগে। ওহাইওতে আসার ঘটনা জিজ্ঞাসা করতেই চোখ মটকে জানালো – সেটা জানে না নিজেও! বোঝা যাচ্ছিলো জীবন নিয়ে সে তৃপ্ত, মানুষের পাগলামিটা বরং উপভোগ করছে সে। আমাদের জীবনে আসা সব মেয়েদেরকেই নিয়ে আলাপ করলাম দু এক ঘন্টা ধরে – ওই বুড়োর সাথেই। পুরনো দুই বন্ধুর মতো খোঁচাখুচি করলাম নিজেদের মধ্যে। জীবন আর মৃত্যু নিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে সিগারেট জ্বালালো বুড়ো। সিগারেট তাকে মেরে ফেললেও সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিলো সবকিছুর জন্য। নির্মল আনন্দ পায় মানুষের পাগলামিতে। পানীয়টাও চমত্কার!

Last call was 2 a.m., I said goodbye to him
I never talked to him again

২৮৮.

রাত দুটো পর্যন্ত কাটালাম ওই বারেই। দুজনে মিলে। বারের মেয়েগুলোও আমাদের সাথে নাচলো অনেকক্ষণ। অবাক করেই দুটো মেয়ে আমাদেরকে আপন করে নিলো। বুড়োর সাথে মিশে গেলো সবাই। নীল টপস পরা মেয়েটাকে ভালো লেগে গেল আমার। মার্থা নামের মেয়েটা বুড়ো মানুষটাকে একদম আপন করে নিলো। একসময় বিদায় নিলাম বুড়োর কাছ থেকে। আর দেখা হয়নি ওই বুড়োর সাথে। হাওয়ায় মিলিয়ে গেল মনে হচ্ছে।

Then one sunny day, I saw the old man’s face
Front page obituary, he was a millionairee
He left his fortune to some guy he barely knew
His kids were mad as hell, but me…I’m doing well
And I dropped by today, to just say thanks and pray
And I left a six-pack right there on his grave
And I said, God is great, beer is good, and people are crazy

২৮৯.

বুড়োর দেখা পেলাম শেষে। এক চমত্কার রৌদ্দজ্বল দিনে। খবরের কাগজের প্রথম পাতায়। শোকসংবাদ সেকশনে। লোকটা নাকি কোটিপতি ছিলো। তার সব সহায় সম্পত্তি নাকি লিখে গেছে এক লোককে। আসল খবর হচ্ছে – বুড়ো নাকি ওই লোকটাকে চিনতো না ভালো ভাবে। বুড়োর ছেলেমেয়েরা মন খারাপ করেছে এব্যাপারে। এতদিন পর মানুষের পাগলামির ব্যাপারটা ধরা পরলো আমার কাছে। করেছে কি বুড়ো! আমার সময় কাটছে ভালো। মার্থাকে নিয়ে বুড়োর কবরে গিয়েছিলাম আজ। সাগরের পারে বুড়োর কবরটা। সামান্য কিছু পাথর দিয়ে ঢেকে দেয়া আছে ওটা। একটা ক্রস দেয়া, কিছু ফুল উড়ছে ওটার সাথে। পানি ছলকে পড়ছে মাঝে মাঝে।

২৯০.

মার্থা ঘাড়ে হাত দিয়ে আস্বস্ত করতে চাইল আমাকে। বুড়ো আর আমাকে কিছুটা একা সময় দিতে চাইলো ও। বুড়োর কবরের পাশে বসে মনে পড়ল ওই দিনটার কথা। মনটা ভালো হয়ে গেল ওমুহুর্তে। নিজের অজান্তে মুখে হাসি এলো আমার। সূর্যাস্তের আবহাওয়াটাও বুড়োর মতো বন্ধুসুলভ। মনে করে বিয়ারের ছয়টা প্যাক নিয়ে গিয়েছিলাম বুড়োর জন্য। রেখে দিলাম কবরের পাশে। প্রার্থনা করলাম সৃষ্টিকর্তা কাছে, বুড়োর জন্য। সৃষ্টিকর্তা মহান। মানুষ মাত্রই পাগল! আর পাগল মানুষই পারে ভালবাসতে।

আর পাগলামির জন্যই ভালবাসি মানুষকে! অন্য কেউ না ভালোবাসলেও একমুখী ভালবাসাও তৈরী করেছি আমরা!

পুনশ্চ: গানটা না দেখলে গল্পটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে কিন্তু!

Read Full Post »

And if my time on earth were through
And she must face the world without me
Is the love I gave her in the past
Gonna be enough to last
If tomorrow never comes …

If Tomorrow Never Comes, Garth Brooks

২৭৭.

গান না পছন্দ করার মানুষ আছে নাকি? গানের ওপর দুর্বলতা আছে সবারই। আমার ব্যাপারটা ওই রকমই বটে। চল্লিশ বছরের বিশ বছরই হয়তোবা শুনেছি গান। গানের মধ্যেই আছি। দৌড়ালেও আছি গান নিয়ে। বই পড়লেও গান চলছে। শোয়ার সময় চলে কিছু অডিওবুক অবশ্যি। অফিসে অবশ্যি শোনা হয় না খুব একটা। অফিসের সময়ে তো নয়ই। ও সময়ে তো হাজারো মিটিং আর কথা বলতে হয় অনেকের সাথে। তবে অফিস শেষে সবাইকে ছুটি দিয়ে বসি লম্বা ড্রাফটিং নিয়ে। তখন হেডফোনটা আবার চড়ে কানে। গানটা অবশ্যি কিছুটা পার্সোনাল হয়ে যায়। কে কোন গান শোনে সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে পড়ে। সেখানে অন্যের নাক গলাগলি নেই। আমার পছন্দের সাথে অন্যের না মেলাটাই স্বাভাবিক। আর সেজন্যই তো মানুষ। আবার অনেকের পছন্দের সাথে মিললে তো আর কথাই নেই।

২৭৮.

আমার ধারণা, বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে গান মেলানো বেশ দুস্কর। আমি একটা পছন্দ করলে অন্যজন যে আমার ‘জনরা’ পছন্দ করে – সে যে ওটা পছন্দ করবে সেটার হার তেত্রিশের বেশি হবে না। উদাহরনই নিয়ে আসি বরং। ধরা যাক আমার পছন্দের ‘জনরা’ কান্ট্রি – তবে ক্লাসিক কান্ট্রি নয়। খানিকটা ব্লুজ+কান্ট্রি+পপের ব্লেন্ডিং। তবে এটার সাথে ডেফ লেপার্ড ধাঁচের কিছুটা রকে আপত্তি নেই আমার। নামও আছে এ গোত্রের। ক্রস-ওভার। তাই বলে ফিউশন নয়। ক্রস-ওভার গোত্রের মধ্যে শানাইয়া টোয়াইনের গান আমরা দুবন্ধু পছন্দ করলেও ‘ফরএভার এ্যান্ড অলওয়েজ’ দুজনের পছন্দ হবার সম্ভাবনা কম। একই গায়কের গানের মধ্যেই অনেক পার্থক্য, সেখানে পছন্দের হারটা অনেক কমে আসে জনরার ক্ষেত্রে।

২৭৯.

সাজাম সার্ভিসটা অনেকেই ব্যবহার করেন আমার ধারণা। গান সনাক্ত করার জন্য চমত্কার অ্যাপ একটা। একটা অপরিচিত গানটাকে কয়েক সেকেন্ড আপনার ফোনকে শোনালে ও বলে দিতে পারে, এটা কোন গান আর তার গায়ক কে – কোন অ্যালবামের। স্যাম্পলিং দিলেই হলো। বের করে ফেলবে ও ব্যাটা। ওর ব্যাকগ্রাউন্ডে বিলিয়ন গানের ‘অ্যাকুস্টিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে ওদের সার্ভারে – কয়েকটা লোকেশনে। বাইরের নয়েজ কান্সেলেশন টেকনিক ব্যবহার করে আসল চেহারাটা পাঠায় ওদের সার্ভারে। মুহুর্তেই ফিরতি রিকোয়েস্টে উত্তর দেয় পাঠিয়ে।

২৮০.

সাজামের গল্প নিয়ে আসলাম কেন?

মানুষের মনের ভেতরে ঢোকার জন্য। মানুষের গান শোনাটা একটা রকেট সাইন্স বলে। আপনার কেন ওই গানটা পছন্দ আর আমার পছন্দ নয়, সেটা একটা গবেষনার বিষয় বটে। ধরে নিন ‘ফুয়াদের’ মতো একজন গায়ক আপনি। কনসার্টে গান গাইবেন বারো থেকে চোদ্দটা। কিন্তু আপনার অ্যালবামের সংখ্যা দশটা। কোন বারোটা গাইবেন? সাজামের সাহায্য নিন। মানুষের পছন্দের লিস্টি পেয়ে যাবেন ওর হ্যাস ট্যাগে। কনসার্ট শেষে মানুষ আপনাকে ধন্যবাদ দিতে থাকবে। কারণ ওর মনের ভেতরের খবর নিয়ে বানিয়েছেন আপনার প্লে-লিস্টি। লেডি গাগা থেকে শুরু করে হালের সব গায়ক গায়িকারা সাহায্য নেন সার্ভিসটার। সাজামের প্রেডিকশন অব্যর্থ। ভবিষ্যত গায়ক গায়িকা কে হবে সেটা ও জানতে পারে আগে। কারণ আমরাই জানিয়ে দেই ওকে। ওটাই ওর বিজনেস কেস। বিগ ডাটা।

২৮১.

বাইরে গিয়েই এফএম রেডিওগুলো প্রেমে পড়ে গেলাম। ওই সময়ে ছোটদের মতো কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করলে ওর উত্তর ধারণা করা সেকেন্ডের ব্যাপার। হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু বি হোয়েন ইউ গ্রো আপ? আ রেডিও হোস্ট! পার্বত্যাঞ্চলে থাকার সময়ে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ‘জলি গুড শো’ বাঁচিয়ে রেখেছিলো আমাকে – মাসের পর মাস। একাশি সালে শুরু হয়েছিলো প্রোগ্রামটা। ডিজে ডেভ ট্রাভিস পুরো পৃথিবীর গানের রিকোয়েস্ট পড়ে শোনাতেন ওই গানটা প্লে করার আগে। চিঠি লিখে রিকোয়েস্ট করতে হতো আমাদের মতো সবাইকে। ফোনের ভয়েসমেইলেও রিকোয়েস্ট পাঠানো যেতো। আমি নিজেও পাঠিয়েছিলাম একটা। চিঠিতে। ‘দ্য উইনার টেকস ইট অল’ গানটাও বাজিয়েছিলো ওই জলি গুড শো। মনে থাকবে না? পুরো মাসটাই ফুরফুরে কেটেছিলো বলে কথা। মজার কথা – গুগল করলাম ওই ‘জলি গুড শো’টা নিয়ে। ওমা, অং সান সুচিও পছন্দ করতেন এই শোটা। গৃহবন্দী থাকার সময়ের ঘটনা।

২৮২.

ধরা যাক এই আপনারাই ধরে বেঁধে রেডিও হোস্ট বানিয়ে দিলেন – একটা শোর! কাকে আবার? আমাকে।
‘এটার প্রয়োজন ছিলো কি একেবারে? পারেন ও আপনারা!’ কপট রাগ দেখাবো আপনাদের।

অবচেতন মন কিন্তু কাজ শুরু করে দিয়েছে এর মধ্যে! কি কি গান প্লে করবো সেটাই নিয়ে আসছি সামনে! মিউজিক ভিডিওর লিস্টি কিন্তু আলাদা। ভিডিওর আবেদন অডিওর লিস্টকে ওলট পালট করে দেবে।

আচ্ছা, ভালো বলেছেন – মুভির অরিজিনাল সাউন্ডট্র্যাক বাদ যাবে কেন?

পুনশ্চ: স্বাতী আর আমার পছন্দের একটা মিউজিক ভিডিও দিয়ে বিদায় নিচ্ছি আজ। গার্থ ব্রূকস গানটা গাইলেও রোনানের ভিডিও ডিরেক্টরের মুন্সিয়ানা মনে রাখার মতো।

Read Full Post »

If you’re offered a seat on a rocket ship, don’t ask what seat! Just get on.
Sheryl Sandberg

Life is either a daring adventure or nothing at all.
Helen Keller, The Open Door

২৭২.

টাওয়ারটার নিচ দিয়ে যাবার সময় অনেকগুলো জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাথায়। যেই সেই টাওয়ার নয়, আইফেল টাওয়ার। অনেকদিন আগের কথা। জেনেভা থেকে প্যারিসে যেতে হয়েছিলো একবন্ধুকে দেখার জন্য। সে অনেকটা ঘাড়ে ধরেই নিয়ে গিয়েছিল ওই বিশাল স্ট্রাকচারটার নিচে। লোহালক্কর দেখার আছে কি? বলছিলাম বন্ধুটাকে। ওটার আনন্দ তো বেচাতে। চোখ গরম করে চাইল আমার দিকে। মুখ বন্ধ করে রওয়ানা দিতে হয়েছিলো তখন। সময়ের দাম তো অনেক ওদের।

২৭৩.

কি কি জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাথায় আমার?

কঠিন প্রশ্ন। তবে অনেক কিছুই। টাওয়ারের কাছে তো যাওয়া যায় না হঠাত্‍ করে। ওটা এতোই বড় যে দূর থেকে যেতে হবে দেখতে দেখতে। আর ওই সময়ে অনেক কিছুই ঘুরপাক খাবে সবার মাথায়। বড় শহরগুলোতে গিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড ধরে ঘুরলে তো আর দেখা হবে না কিছুই। ট্রেন স্টেশনে নেমেই যখন ওটা পড়ল চোখে, প্রথমেই মনে পড়ল কটকটিয়ালার কথা। আহা, এটা বিক্রি করতে পারলে কোনো কষ্ট থাকতো না আমার। ওই ছোটবেলায়। রেডিও বানানোর একটা এয়ারপিস কেনার জন্য পাঁচ টাকা জমাতে কতো কি বিক্রি করতে হয়েছে সেটার ইয়ত্তা নেই। কার্টুনের টম আর জেরির মজাদার খাবার দেখে চোখে ভালবাসার লাল লাল চিহ্নর মতো কিছু হয়েছিলো কিনা জানিনা, তবে ওধরনের একটা অনুভুতি হয়েছিলো সত্যি।

২৭৪.

টাওয়ারের একদম নিচে গিয়ে ওর বিশালতা দেখে মনে পড়ল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা। টপগান দেখার পর ফাইটারজেট নিয়ে কম লেখাপড়া করিনি আমি। কে তৈরী করে কার ইঞ্জিন, যুদ্ধবিমানগুলোর ইভোলিউশন – কোন মডেলটা এসেছে কোন সালে – এধরনের গল্পগুলো ছিলো মুখের ডগায়। ঐ সময়ের নামকরা ডগফাইটগুলো পড়তাম এরোপ্লেন আর স্পেসক্রাফট এনসাইক্লোপিডিয়াতে। শুনতে ভয়ঙ্কর মনে হলেও এই টাওয়ারের সবচেয়ে নিচের আর্চ দিয়ে প্রথম উড়ে গিয়েছিলো এক পাইলট – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। উনিশশো চুয়াল্লিশ সালে জার্মানি দখল করে নিয়েছিলো প্যারিস। মাথা ঠান্ডা ছিলো কিনা জানিনা – এক মার্কিন পাইলট আরেকটা জার্মান যুদ্ধবিমান তাড়া করতে গিয়ে এই কান্ড করে বসে। ডগফাইটের শেষে ওই মার্কিন পাইলট জার্মান বিমানটাকে ভুপাতিত করে।

২৭৫.

ওই মার্কিন পাইলটকে নিয়ে আরো গল্প আছে। ট্রেনিংয়ের সময়ই দুবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসে সে। ওই ভয়ংকর ভয়ংকর ট্রেনিং অজেয় করে তোলে তাকে। উইলিয়াম ওভারস্ট্রিট, নাম তার। প্রথম ধাক্কা খায় যখন তার ইন্সট্রাকটর ফ্লাইটের মাঝে আচমকা ইঞ্জিন দেয় কেটে। কোনো রকমে ল্যান্ড করে সে ওই বিমানের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে। উনিশশো তেতাল্লিশ সালে এয়ার ম্যানুভারের স্পিনিং শেষে কন্ট্রোল করতে পারেনি তার বিমানটিকে। ফলে যা হবার তাই হলো। বিধ্বস্ত হলো বিমান, তার আগে কোনো রকমে বের হতে পেরেছিলো দরজা খুলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পঁচিশ হাজার ফিটে উঠে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার অক্সিজেন লাইন। ওই নব্বই মিনিট কিছুই মনে করতে পারেনি সে। ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের সময় গাছগুলোকে পাশ কাটিয়ে কোনো রকমে নামতে পারলেও ওটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার ছিলো। এধরনের অনেক ঘটনার সাক্ষী এই ওভারস্ট্রিট তার ভয়ঙ্কর প্রশিক্ষণকেই তার রক্ষাকবচ হিসেবে দাড়া করিয়েছে।

২৭৬.

হঠাত্‍ এই গল্প কেন? এই অকুতোভয় পাইলট ওভারস্ট্রিট মারা গিয়েছেন বিরানব্বই বছর বয়সে – এই জানুয়ারীতে। ডেইলি মেইলে পড়ছিলাম খবরটা। কমেন্ট করেছেন অনেকে, তার সাহসিকতার তারিফ করে। একজন লিখেছেন – রেস্ট ইন পিস, ওই জার্মান পাইলট আর উনি একসাথে সেলিব্রেট করছেন বিয়ার! অত্যন্ত অমায়িক আর ‘ডাউন টু আর্থ’ মানুষটা কোনোদিন তার নিজের কৃতিত্ব নেন নি। নিউজ মিডিয়াকে সবকিছুই টীমওয়ার্কের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। জীবনবাজি নিয়ে অনেক কাজ হয় বটে, এটা উদাহরন তৈরী করেছে। আমরা জীবনে করতে চাই অনেক কিছু, ঝুঁকি নিতে চাইনা। ঝুঁকি ছাড়া কিছুই হয়নি পৃথিবীতে। মাইক্রোসফট আর অ্যাপলের মতো কোম্পানি উদ্যোগতাদের ঝুঁকি ছাড়া এমনিতেই হয়নি মাল্টিবিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। ওই গ্যারেজ থেকে উঠতে গিয়ে হাজারো ঝুঁকি নিয়েছেন তারা। আমার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ঝুঁকিকে মাথা খেলে ভালো।

কি ঝুঁকি নিচ্ছেন আজ?

Read Full Post »

On ambition: “The first step is to establish that something is possible; then probability will occur.”

On hiring: “[My biggest mistake is probably] weighing too much on someone’s talent and not someone’s personality. I think it matters whether someone has a good heart.”

– Elon Musk

২৬৮.

ওই দুহাজার দুইয়েই এলন তৈরী করলো স্পে[ই]সএক্স নামের কোম্পানি। অর্থ হচ্ছে স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস। নিজে মার্স সোসাইটির আজীবন সদস্য থাকতে মঙ্গলগ্রহে কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালানোর জন্য রকেট বানাবে তার কোম্পানিটা। সে এটার একাধারে সিইও আর চিফ টেকনিকাল অফিসার। তাদের দুটো লঞ্চ ভেহিকল ‘ফ্যালকন এক’ আর ‘ফ্যালকন নয়’ বেশ নামকরা। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে যুক্ত ছিলো এর স্পেসক্রাফট ‘ড্রাগন’| প্রথম পুন:ব্যবহারযোগ্য স্পেসক্রাফট। নাসা তাকে দেড় বিলিয়ন ডলারের কন্ট্রাক্টটা দিয়েছিলো সেই দুহাজার আটে। এমনিতেই দেয়নি।

২৬৯.

স্বপ্ন কোথায় নিয়ে গেছে এই মাস্ককে। আইজ্যাক আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজটার কথা মনে আছে? এলন মাস্কের স্বপ্ন সার্থক ওই বইটার সংস্পর্শে। সে চেয়েছিলো আসিমভের স্বপ্নটাকে নিজের মতো করে দেখতে। এখন মঙ্গলগ্রহে ট্যুর চালাবে সে। প্রথম ফ্লাইট – এখন থেকে দশ বছর পর! কতো লম্বা বিজনেস প্ল্যান! সাইন্স ফিকশনে সে যা পড়েছে সেটা ইমপ্লিমেন্টেশনের অংশটা ঘুরছে তার মাথায়। গুগল করুন ‘হাইপারলুপ ট্রান্সপোর্টেশন’, হাজার কিলোমিটার গতিতে মাটিতেই উড়তে পারবে নতুন প্রজেক্টটা! এরপর আরো দুটো কোম্পানি খুলেছে ও। টেসলা, যারা শুধুমাত্র বৈদ্দুত্যিক গাড়ি বানায়। সোলার এনার্জির আরেকটা কোম্পানি দাড়া করিয়েছে সে। আপনারটা হবে না কেন? আমারটা? ওটাও স্বার্থকের পথে। মনে আছে স্টিভ জবসের কথাটা? মৃত্যুর ওপর গল্পটা। স্ট্যানফোর্ডের বক্তৃতাটা।

২৭০.

বেশ কিছুদিন ধরে চিন্তা করছিলাম একটা কথা। জীবনটা খুবই ছোট, ছোট হয়ে থাকার সুযোগ নেই কোনো। বেঞ্জামিন ডিজরাইয়েলির কথাটা অসম্ভব সুন্দর। জীবনে ছোট হয়ে থাকার জন্য সময়টা আসলেই খুবই কম। নেলসন ম্যান্ডেলা একই কথা বলেছিলেন। জীবন তো একটাই, কেন ছোট হয়ে থাকা – যেখানে জীবনটাকে বড় করে যাপন করা যায়। আমরা আমাদের সক্ষমতার কথাটাও চিন্তা করিনা, অনেক সময়। দোষ দেবেন না দেশের আর রাজনৈতিক অবস্থাকে। দুর্বল মানুষের কাজ ওটা, অন্যের দোষ খোঁজা। ব্লেম গেমে উঠতে পারেনি কোনো মানুষ। এই মানুষই কতো কিছু করছে – সেটা দেখেও ভান করি না দেখার। এই এলন মাস্ক কি করেছে – বিয়াল্লিশ বছর বয়সে?

২৭১.

আমাদের আছে সুস্থ হাত পা। আর যাদের সেগুলোও নেই তাদের অনেকেই পৃথিবীতে হাজারো ভালো কাজ করছে। আমাদের থেকে কম পড়ালেখা করে এই বাংলাদেশে কতো মানুষ অন্য মানুষদের জীবন পাল্টে দিচ্ছে। শুধু নিজের থাকার ছাদটা হলোই হলো – তাতে খুশি হলে চলবে না। অন্যের জন্য কি করেছি সেটাও দেখতে হবে। একদিন তো এই নশ্বর পৃথিবী থেকে যেতে হবে চলে, মানুষের জন্য কাজই মনে রাখবে মানুষ। স্টিভ জবসের কথায়; আমরা এসেছি পৃথিবীতে – একটা টোল খাওয়ানোর জন্য। মানে, আসলেই কিছু করার জন্য।

অনেক তো হলো, কিছু করছেন তো? মানুষের জন্য।

[শেষ]

পুনশ্চ: ক্যালটেকে একটা বক্তৃতা দিয়েছিলো এই এলন মাস্ক। পড়বেন নাকি একবার?

Read Full Post »

If something is important enough, even if the odds are against you, you should still do it.

It is remarkable how many things you can explode. I’m lucky I have all my fingers. [On his childhood experiments]
– Elon Musk

২৬৫.

ওমা! পেপ্যালের কথা বলেছি নাকি? ফাঁস হয়ে গেল আমার বয়সী মানুষটার নাম। ধ্যাত! আরো সাসপেন্সে রাখতে চেয়েছিলাম আপনাদের। ঠিক ধরেছেন! এলন মাস্ক, পেপ্যালের একজন প্রতিষ্ঠাতা। ওই উনিশশো নিরানব্বইতে আগের কোম্পানির বিক্রিলব্ধ টাকা থেকে দশ মিলিয়ন ডলার নিয়ে তৈরী করলো এক্স.কম। অনলাইন ব্যাংক। এরপর কন্ফিনীটি নামে আরেকটা কোম্পানি কিনে এক্স.কমকে ‘পেপ্যাল’এ রূপান্তর করলো সে। ওর বিশ্বাস ছিলো এটা পাল্টাবে মানুষকে। ইন্টারনেটে ‘টাকা ট্রান্সফার’ যে একটা বুমিং বিজনেস হবে সেটা ধারণা করেই তার এই কোম্পানির সূত্রপাত। তার আরেক বন্ধুর সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরে – এই পেপ্যালের সুত্র ধরেই। এলনের অগাধ বিশ্বাস ছিলো এই টাকা ঘোরানোর ব্যাপারটাতে। ক্লিক করেছে ঠিকই।

২৬৬.

দুহাজার দুইয়ে পেপ্যাল ছেড়ে দিলো ইবে’র কাছে – দেড় বিলিয়ন ডলারে। এলন মাস্ক পেলো একশো পয়শট্টি মিলিয়ন ডলারের মতো। ভুল বুঝবেন না। শুধুমাত্র বেচাকেনার লোক নয় সে। এটা উদ্ভাবনীমনা মানুষের একটা সমস্যা বলতে পারেন। আমার কাছে এটার ব্যাখ্যা অন্যখানে। সিলিকন ভ্যালিতে গিয়েছিলাম কয়েকবার। এখানে কিছু মানুষ আছেন – যারা টগবগ করছেন নতুন কিছু করার জন্য। সবসময়। গ্যারেজ থেকে কষ্ট করে নতুন কিছু তৈরী সেটা ছেড়ে দেবেন অন্যের কাছে। কোম্পানি চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করার জন্য বসে নেই তারা। কোম্পানি চালাতে অতো চ্যালেঞ্জ নেই। যে কেউ পারে সেটা। কোম্পানি দাঁড়া করানো চ্যালেঞ্জ। সেটাই করতে চান তারা।

২৬৭.

চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকতে চান, ওই লোকগুলো। সারাজীবন। কোম্পানি দাঁড়া করানোর পর কষ্ট কমে যায় – তখন জীবনে শান্তি চলে আসে। ওই মিলিয়ন ডলার আর শান্তি তাদের পছন্দ নয়। কোম্পানিকে যেই চ্যালেঞ্জের মুখ থেকে বের করে নিয়ে আসলো – তখনি ওটাকে বেশি দামে বিক্রি করে নতুন কিছু করতে মন আকুপাকু করতে থাকে। বিলিয়ন ডলারে কোম্পানি বেচে ওটা আবার নতুন কিছু করার জন্য পথের ভিখিরি হতে আপত্তি নেই তাদের। মনের শান্তি বলে কথা। ‘ফলো ইয়োর হার্ট’ – অল এলস উইল ফলো!

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Money is usually attracted, not pursued.
– Jim Rohn

Money was never a big motivation for me, except as a way to keep score. The real excitement is playing the game.
– Donald Trump

২৬২.

ফিরে আসি অন্য কথায়। মার্কিনীদের নতুন জিনিস কেনার ঝোঁক কিন্তু পৃথিবীর অর্থনীতিকে বহুদিন চাঙ্গা রেখেছে। ভুল বুঝবেন না, তাদের ‘থ্যান্কস গিভিং’ আর ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’তে কতো টাকার উপহার সামগ্রী কেনাকাটা হয় সেটার হিসেব নিয়েছেন কখনো? নাম্বার ক্রান্চিং হচ্ছে আমার ফেভারিট পাসটাইম, কিছু সংখ্যা নিয়ে আসি – কি বলেন? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার ‘পার ক্যাপিটা ইনকাম’ গিয়ে দাড়ায় তিনগুনে। আমার তথ্য অনুযায়ী দুহাজার ছয়ে মার্কিনীরা শুধুমাত্র ওই বছরের ক্রিস্টমাস শপিংয়ে খরচ করে অর্ধেক ট্রিলিয়ন ডলার। হ্যা, হাফ আ ট্রিলিয়ন। মানে পাঁচশো বিলিয়ন ডলারের কেনাকাটা। শুধুমাত্র উপহার সামগ্রী। ভাগ দিন ওই সময়ের তিনশো মিলিয়ন জনসংখ্যা দিয়ে। খরচের গড় গিয়ে দাড়ায় পনেরশো ডলারের মতো – মানুষ প্রতি। ভুল বলছি না।

২৬৩.

এর বেশিরভাগ কেনাকাটা হয়েছে অনলাইনে। একটা কথা বুঝে গেছি এই অফিসে এসে। যতো টাকা রোল করবে – ততো প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির। টাকা রোল করানোর মেকানিজমগুলোর ওপর যতো ট্যাক্স ভ্যাট – ফেলে দিতে হবে সবার আগে। অনলাইনে কিনলে যদি দোকানের মতো ট্যাক্স আর ভ্যাট দিতে হয় – তাহলে মানুষ অনলাইনে যাবে কেন? ইনসেনটিভ কোথায়? আবার, বাসার কমফোর্ট জোনে বসে আপনার পকেট থেকে [বাজারে না যেয়ে] আমার পণ্যটা কেনার পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন নেই রকেট সাইন্স। হাজার কোটি টাকা পড়ে থাকে আপনার আমার পকেটে। এটাকে ঘোরানোর সহজ পদ্ধতি বের করবে উদ্ভাবনী কোম্পানিগুলো। বের করেছে ঠিকই। নীতিনির্ধারণীদের ছাড় দিতে হবে ওখানে। টাকা ঘোরালেই ভ্যালু যোগ হয় প্রতিটা স্টেজে। এতে লাভ হয় সবারই। অর্থনীতি মন্থর হয়ে গেলে ট্যাক্স ব্যাক করুন মানুষের মাঝে। অনেক দেশ সেটা করে বটে। প্রচুর কেনাকাটা করে এই জনগনই আবার উঠিয়ে দেয় অর্থনৈতিক অবস্থা।

২৬৪.

কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়ার দরকার নেই নীতিনির্ধারণী কর্তাব্যক্তিদের। টাকার ফ্লো-চার্টটা বুঝলেই যথেষ্ট। গ্রাহকস্বার্থ রক্ষার জন্য লিখে দিন দুকলম। বাকিটা ছেড়ে দিন উদ্ভাবনীর ওপর। বাংলাদেশকে পাল্টে দেবে এই মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস। যেমনটা পেপ্যাল করেছে উন্নতবিশ্বে। আমাদের তো ইন্টারনেট নেই সব জায়গায়। মোবাইল আছে বরং। মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিসের পেছনে কি কি কাজ হয়েছে সেটা নিয়ে আসবো আরেকদিন। এটা আটকে ছিলো সত্যি, তবে কিছু এনলাইটেনড কোম্পানির সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা আমাকে উদ্বেলিত করেছিলো। অনেক দ্বিধা নিয়ে বসে থাকেনি তারা – উড়িয়ে নিয়ে এসেছে গ্রুপ হেডকোয়ার্টার থেকে – জ্ঞানী মানুষদের। শুক্র শনিবার ছিলো না, বুঝিয়েছে আমাদের। লাভ করতে চায়নি প্রথমেই। ন্যায্য লভ্যাংশ নিশ্চিত করা হয়েছে ওই রিটেইলারের। ‘রেইন অর সাইন’, ঝড় বৃষ্টি ঠেলে সবচেয়ে কষ্টকর কাজটা যে করে। বই লিখছি সামনে।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Older Posts »