Never give people unsolicited advice. If they want your opinion, they’ll ask for it. And only those who ask for it and pay for it will value it.
– Bob Bly
০০॰
বোকারা শেখে দেখে। আর বাকিরা নাকি শেখে ‘ঠেকে’। আর – আমার মতো নিম্ন-বুদ্ধিবৃত্তির মানুষ শেখে না কিছুতেই। সেটাও কিন্তু ‘উপলব্ধি’ নয় আমার নিজের। আশেপাশের মানুষদের। মানুষ সামাজিক জীব বলে কথা।
দুহাজারের ঘটনা। মিউনিখের এক ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দিলো আমার ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি। চোখের ওপর অনেক পড়াশোনা ওই ডাক্তারের।
চেম্বারে ঢুকতেই চোখ ছানাবড়া!
দরজায় কি যেন লেখা। তাও আবার বড় বড় করে। চশমা ঠিক করে নিলাম।
০১.
জিনিসটা জার্মান ভাষায়। ‘বিনা পয়সার উপদেশ নিতে নেই।’ বঙ্গানুবাদ করলে এটাই দাড়ায় মোটামুটি। হক কথা। আমি তো পয়সা না দিয়ে উপদেশ নিচ্ছি না ওর। কিন্তু, এই ‘গালগল্প’ পড়ার জন্য তো পয়সা দিতে হয়নি আমাকে। ইন দ্য ফার্স্ট প্লেস – এটা তো ‘সাব্সক্রাইব’ই করার কথা না আমার। ‘বিনা পয়সা’র উপদেশ বলে কথা। কাটাকাটি। তবে মনে রাখলাম জিনিসটা। বলা তো যায় না কখন লাগে কি কাজে। মাথা মানে ‘পরামর্শ’ বেচে যে পয়সা পাওয়া যায় সেটার একটা ‘প্রিমিটিভ’ ধারনা পেলাম ওখানে। আবার, কথা বলে মন ভালো করার জন্য পয়সা নিচ্ছে ডাক্তাররা। ‘কন্সাল্টেশন ফী’ নাকি সেটার নাম।
কি ‘কন্সাল্ট’ করে তারাই জানে ভালো।
০২.
দুহাজার আটের ঘটনা। হংকংয়ে একটা থ্রীজি-এলটিই’র কণফারেন্সে একটা সিগন্যাল পেলাম ‘বিগ এইটে’র দুটো ফার্ম থেকে। এখন সেগুলো ‘মার্জার অ্যাকুইজেশনে’র পর দাড়িয়েছে ‘বিগ ফোর’য়ে। কফি ব্রেকের সময় লাঞ্চের ‘ইনভাইটেশন’ দিয়ে বসলো একজন। রাতে আরেকজন। ও ধরনের ‘সিগন্যাল’ ইন্টারপ্রেট করার মতো ‘ম্যাচ্যুরিটি’ মানে পরিপক্বতা ছিলো না তখন। জাপানের সিগন্যালটা আরো বড় ধরনের। আইটিইউ’র মিটিংয়ে স্পেকট্রামের ওপর একটা প্রেজেন্টেশন দেবার পর বাংলাদেশের থ্রীজি স্পেকট্রামের ‘মার্কেট সাইজিং’ নিয়ে কথা বললো কয়েকজন। পৃথিবী চলে ‘সংখ্যা’র ওপর। ‘গেসিং’ মানে অনুমানের ওপর নির্ভর না করে ‘এষ্টিমেশন’, প্রোজেকশন, ফাইনান্সিয়াল ক্যাপিটাল তোলার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ের রিস্ক মিটিগেশন নিয়ে যা গল্প হয় তার বেশিরভাগ আসে এই সংখ্যার ভেতরের ‘ইনসাইট’ থেকে।
০৩.
ধরুন, একজন বললেন বাংলাদেশের মতো বাজারে কতোগুলো মোবাইল অপারেটর ‘অপটিমাল’? নট টু মাচ, নট টু লিটল। মানে, একটা সংখ্যা চাওয়া হচ্ছে মার্কেট সাইজিংয়ের ওপর। ‘কান টানলে মাথা আসে’ হিসেবে ‘মার্কেট শেয়ার’ আর ‘গ্রোথ ক্যালকুলেশন’ চলে আসবে এর সাথে। বাজারের ‘প্রতিযোগিতা’র ইনডেক্স কেমন সেটা জানতেই তো দরকার অনেক হিসেব। অনেকেই বলবেন – মুক্তবাজার অর্থনীতি, যার ইচ্ছা আসবে – না পোষালে চলে যাবে, সংখ্যার আবার দরকার কি? তাহলে তো শিখলাম ঠেকে। অন্ধভাবে একটা বাজারে এসে ‘বাড়ি’ (বাসা না কিন্তু) খাবার জন্য তো আর হাজার মিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট করবে না একটা কোম্পানী। দেশের নীতিনির্ধারকরাও বসে থাকবেন না ‘দেখা যাক কি হয়’ মোডে। মুখে বলবেন না হয়তোবা, তবে সবারই একটা ‘ইন্টার্নাল ক্যালকুলেশন’ থাকবে এই সংখ্যাটার ব্যপারে। ব্যবসায় এসে ‘ভুল’ সংখ্যার ‘প্রফিট মার্জিন’ আর ‘রিটার্ন অন ক্যাপিটাল’এর ওপর বসে থাকলে সবারই ক্ষতি। কোম্পানীর হাজার মিলিয়ন ডলারের গচ্চা, আর দেশের গ্রাহকের ভোগান্তি। সরকারও বিব্রত। শেষ মেষ বিপদে সবাই। আসল কথা, ভুল উপাত্ত থেকে আসে ভুল সিদ্ধান্ত।
০৪.
আর উপাত্ত না থাকলে?
বলেন কি? কোটি কোটি ‘পাবলিক ডোমেন’ ডাটা উড়ছে আকাশে বাতাসে। আর সরকারের কাছে কোন উপাত্তটা নেই বলবেন কি? কোন উপাত্ত থেকে কি ধরনের ‘ইন্টেলিজেন্স’ নিংড়ে নেবেন সেটা নির্ভর করে সদিচ্ছার ওপর। ‘দক্ষতা’ কিনতে পাওয়া যায় মার্কেটপ্লেসে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের পেছনের ইতিহাসটা ঘাটলেই পরিষ্কার হবে সবকিছু। দুর্ভিক্ষের ইমেজ থেকে বের হয়ে গেছে অনেক আগেই। অভিজ্ঞ ‘পরামর্শ’ নিয়ে।
০৫.
বড় বড় কার্পোরেশন নয় শুধু, অনেক দেশের সরকারযন্ত্রের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পৃথিবী হারাচ্ছে কোটি কোটি ডলার। প্রজেক্টের শুরুর ‘প্রজেক্টেড কস্ট স্ট্রাকচার’ কখনই মেলে না শেষের খরচের সাথে। শেষ মেষ, ‘কস্ট ওভাররান’। অথচ, এতো উপাত্ত থাকার পরও ভুল করছে সরকারগুলো। ভুল হবে মানুষের সিদ্ধান্ত – তাই বলে এতো? মানুষের নিজস্ব আবেগ আর ভাবাদর্শ ভাসিয়ে নিয়ে যায় সবকিছু। ‘ডিসিশন সাপোর্ট সিষ্টেম’ থিওরি তো আজকের নয়, তবুও ভুল করছে অর্গানাইজেশনগুলো। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই শুধরে নিয়েছে এখন তাদের হাজারো টেস্টেড প্রসেসের মধ্য দিয়ে গিয়ে। ‘স্ট্রীমলাইন’ হয়ে গেছে অনেক প্রসেস। তা না হলে শেয়ারহোল্ডাররা বসে আছেন কি করতে? ইনভেস্টমেণ্টের প্রতিটা পাই পাই পয়সার হিসেব দিতে হয় তাদের।
০৬.
সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা কমানোর জন্য ‘এনলাইটেনড’ দেশগুলো ছোট করে নিয়ে আসছে তাদের কাজের পরিধি। ‘অপারেশনস’য়ে নয় আর, শুধুমাত্র ‘রেগুলেটরী ওভারসাইট’ কাজকর্মে ফোকাস করছে সরকারগুলো। প্রাইভেট সেক্টরকে ওঠানোর জন্য তৈরি করছে ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা। আটকাতে নয়। সময়ের সাথে সাথে জটিল হয়ে দাড়াচ্ছে সরকার আর অর্গানাইজেশনের কাজের আউটকামগুলো। এদিকে দক্ষতার সাথে তার পারিশ্রমিক না মেলার কারণে মেধাবী কর্মীবাহিনী হারাচ্ছে সবাই। ‘স্পেশ্যালিস্ট’ কাজগুলো করবে কে তাহলে? সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের নির্ভুল সিদ্ধান্তের পেছনে মানে ‘ব্যাকঅফিস’এর কাজটা আসবে কোথা থেকে?
[ক্রমশ:]
Read Full Post »