Such knowledge, Wal-Mart has learned, is not only power. It is profit, too.
– The New York Times, 2004
৩৩.
গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীর মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি বলে তার কিছু ছায়া দেখতে পাই সব জায়গায়। সব দোষ ওই পত্রিকাটার। কি যেন নাম পত্রিকাটার? কিশোর বাংলা? কিশোর বয়সে ওই পুরানো গল্পের জন্য অপেক্ষা করতাম সপ্তাহের পর সপ্তাহ। আহা, কি যে দিন ছিলো তখন! মানে হয় কোনো? মাথাটা আরো খারাপ হলো আর্শিয়ার জন্য কেনা ‘দ্য লাইটনিং থীফ’ পড়ার পর। পার্সি জ্যাকসনকে পরের দুনিয়াতে নেয়া হলে মানুষ সম্পর্কে সে যে উক্তি শোনে তা থেকে অনেক ধরনের ধারণা মাথায় ঘুরপাক খেলেও ওদিকে যাবো না আর। ‘মানুষ সেটাই দেখে যেটা সে দেখতে চায়’ কথাটা যুক্তিবিদ্যার বাইরের মর্টালদের জন্য প্রযোজ্য হলেও বর্তমানে ভবিষ্যতদ্বানির ব্যবস্যা গেছে অন্য মাত্রায়। পেশা আর নেশা এক হলে সমস্যার অন্ত নেই। ভাগ্যগণনায় বিশ্বাস করতাম না বলে আবার সেই ভাগ্যের ফেরে জ্যোতিষী বনে গেলাম নিজেই। অফিসের কাজের ফাঁকে অন্যের হাতের রেখা না দেখলেও গণকের কাজটা খারাপ নয়।
টিয়ে পাখি?
সরকারীভাবে বন্য পাখি রাখা বারণ। তবে, এক্সেলশিট টিয়ে পাখির মতো না পারলেও একবারে খারাপ নয়।
৩৪.
কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ কথাটা আমাদের কোথায় প্রযোজ্য সেটা খুঁজতে যেয়ে বাসার পোষা টিয়ে পাখি উড়ে বসলো দেয়ালে ঝোলানো নাবিলের ওয়ার্ল্ডম্যাপে। একি, ওমা – ফ্লোরিডা? না, মাথা ঝাঁকিয়ে ঠোট ফেললো আরকানসাসের ওপর। বেন্টনভিল?
তো, হয়েছে কি তাতে? টিয়ে কে প্রশ্ন। ওয়ালমার্ট স্টোর। পরিস্কার জবাব। আমার বিরক্তি চরমে। মুখে না বললেও কপালের ভাঁজে প্রকাশ পেলো।
আরে বেটা, টিয়ের স্বরে বিরক্তি ‘করো গুগল’!
চালু হলো গুগল ভয়েস সার্চ।
৩৫.
উত্তর এলো হ্যারিকেন ফ্রান্সিস। টাইমলাইন – দুহাজার চার সাল। জট খুললো শেষে। আটলান্টিকের ধার ধরে হ্যারিকেনের পূর্বাভাসে সব মানুষের আত্মারাম খাঁচাছাড়া। দুর্যোগ মোকাবেলায় দরকারী কিছু কিনতে এসে খালি হাতে মানুষ না ফেরে সেটা জানতে ভাগ্য গণনার আশ্রয় নিলো বেন্টনভিলের সব ওয়ালমার্ট স্টোরগুলো। স্টোরে যা আছে তাই বিক্রি হবে সে ভাবনায় বসে না থেকে মানুষ কি কিনতে পারে আর তার পর্যাপ্ত স্টক আছে কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্য ডাকা হলো টিয়েকে। ওদের টিয়া পাখি কিন্তু সাদা রঙের, প্রতিটা জিনিস বেচার সময় ঠোকর না দিয়ে ‘বিপ’ শব্দ করে। চোখ দিয়ে লাল রশ্মি দিয়ে জিনিসের বারকোড খোঁজে। ‘বিপ’ শব্দের পর শুরু হয় আসল খেলা। মানুষের প্রতিটা কেনাকাটার উপর তার অন্তরঙ্গ ডিটেলস ম্যাপিং হয়ে তৈরী হচ্ছে তার ভবিষ্যত কেনাকাটার লিস্টি। সে কি কিনবে সামনের সপ্তাহে বা মাসে সেটা বলে দিতে পারে এই টিয়ে পাখিটা। কার শ্যাম্পু, সাবান, সফট ড্রিংকসের কেস আর দুধের সাপ্লাই শেষ হবে কবে আর তার ভবিষ্যত কেনাকাটার লিস্টি আগে ভাগে ইমেইলে বা এসএমএসে গ্রাহককে পাঠিয়ে ভয় না দেখিয়ে তার দরকারী জিনিসে ডিসকাউন্ট দিয়ে সারছে কাজ। কয়টা মুরগির ডিম পাড়াতে হবে, কতো টন সবজি উত্পাদন করতে হবে, নতুন কোন প্রোডাক্ট আপনাকে গছাতে হবে, দিনে কয়বার দাঁত মাজবেন আর কিভাবে মাজবেন তার সব হিসেব আসে ওই টিয়ের পেট থেকে। কার ঘর আলো করে সন্তান আসবে তাও ডাক্তারের আগে জানে টিয়ে। কি কি অসম্ভব সেটা জানালে তাকে সম্ভব করে দেখাবে সেই টিয়ে।
৩৬.
ফিরে আসি হ্যারিকেন ফ্রান্সিসে। মাস দুয়েক আগের হ্যারিকেন চার্লির ডাটা নিয়ে বসলো টিয়ে। তাজ্জব বনে গেলো ওয়ালমার্ট। ধারণা করেছিলো বিক্রি বেশি হবে টর্চলাইটের। টিয়ের হিসেব অন্য। ছবি গুগল করুন “স্ট্রবেরী পপ টার্ট”, কেল্লোগের প্রি-বেকড টোস্টার প্যাস্ট্রি! বিক্রি হয়েছিলো দশগুন হারে! প্যাকিংয়ে পরিবর্তন নিয়ে আসা হলো রাত পার হবার আগেই! ছয়টা নিয়ে এক একটার প্যাক। পরিবর্তন আসলো বিয়ারের প্যাকিংয়েও। জানা গেলো “হ্যারিকেন-পূর্ব” টপ সেলিং ব্র্যান্ডগুলোর নাম আর কতগুলো করে কেনে মানুষ সেগুলো। ইন্টারস্টেট নাইনটিফাইভ রাস্তা ভরে গেলো বিজে এন্ড দ্য বিয়ারের ট্রাকের মতো শত ট্রাকে। হ্যারিকেন ফ্রান্সিসের আগে পৌছাতে হবে ওয়ালমার্ট স্টোরগুলোতে।
এতো কিছু থাকতে স্ট্রবেরী পপ টার্ট? মানুষ বড়ই বিচিত্র!