Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘Bangla’ Category

আজকে আবার কিসের দিন? মানে, এই তেইশে অগাস্ট। অনেকে লিখেছেন আজকে।

হ্যাঁ, ইন্টারনেট ডে। বলেছেন কেউ কেউ।

হুম। সেটাতো অক্টোবরের উনত্রিশে।

তাই তো! ওহো বুঝেছি। তাহলে ‘ইন্টারনট ডে’। নট? মানে খট খট?

সেটা আবার কী?

এটা একটা শব্দের যৌগ। ‘বিশাল’ আর ‘আকার’ যোগ করে হয় বিশালাকার। ওরকম আরকি।

বুঝলাম। তাহলে ‘নট’ আসলো কোথা থেকে?

ওটা এসেছে ‘অ্যাস্ট্রোনাট’ থেকে। ইন্টারনেট থেকে ‘ইন্টার’ আর অ্যাস্ট্রোনাটের  ‘নট’।

নট কেন? হবে তো নাট? আপনার প্রশ্ন।

আসলে ‘নাট’ বললে এসে যায় অন্যকিছু। মানুষ রাগলে বলে ওই কথা। তাই বাদ সেটা।

মানুষ সারাজীবনই অভিযাত্রী। ভুল বলেছি? পৃথিবী চষে বেড়িয়েছে মানুষ। সত্যের খোঁজে। নতুন কিছু জানতে। উল্টে পাল্টে দেখেছে পৃথিবী। এরপর গিয়েছে চাঁদে। তারপর? আরো, আরো দূরে।

আসলেই তাই! ইন্টারনেট মানুষকে নিয়ে গেছে অনেক অনেক দূরে। জ্ঞান পিপাসার্ত মানুষ বশে নিয়ে এসেছে প্রযুক্তিকে। অভিযাত্রীর মতো সত্যের খোঁজে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে এই মানুষ। নিমিষেই চলে যাচ্ছে পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। সেজন্যই এসেছে ‘অ্যাস্ট্রোনাট’ শব্দটা।

০৬ আগস্ট। ১৯৯১ সাল। টিম বারনার্স লী পোস্ট দিলেন নিউজগ্রুপে। বরাবরের মতো। তবে এটা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব’ নিয়ে একটা প্রজেক্ট নিয়ে। ওহো, বলাই হয়নি ব্যাপারটা। ‘নিউজগ্রুপ’ ছিলো আমাদের মানে প্রস্তরযুগের ফেসবূক। মতামত জানতে সবাই ধারস্ত হতো এই নিউজগ্রুপে। ছিলোও হাজার হাজার গ্রুপ। একেক বিষয় নিয়ে একেকটা গ্রুপ। আমার প্রিয়টা ছিল শর্টওয়েভ নিয়ে।

তবে, ‘ওয়েব’ নয় সেটা। আলাদা অ্যাপ্লিকেশন। ‘এনএনটিপি’। আর উনার গ্রুপটার নাম ছিল অল্ট॰হাইপারটেক্সট!

আজকের দিন মানে ২৩ আগস্ট। খুলে দেয়া হয় সবচেয়ে প্রথম ওয়েবসাইটটা। সবার জন্য।

আর এখন?

ইন্টারনেটের সবচেয়ে ‘সবচেয়ে’ জনপ্রিয় জিনিস হচ্ছে এই ওয়েব। আমাদের মতো টেকি(!) লোকদের ভাষায় এটা ‘পোর্ট ৮০’। ‘এইচটিটিপি’। যে যাই বলুক জিনিস কিন্তু একটাই।

সত্যিই তাই। এজন্যই আজকের দিন হচ্ছে ওই ‘ইন্টারনট ডে’!

Read Full Post »

এটি একটি বই। আমরা এটি তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি আশীর্বাদ হিসেবে। এই আশীর্বাদ বই আমরা এজন্য পাঠিয়েছি যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা (গবেষণা) করে। আর, জ্ঞানবান লোকেরা যেনো এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

– সূরা ৩৮ সোয়াদ: আয়াত ২৯

০১.

নতুন বত্‍সরের ‘রেজ্যুলুশন’ নিয়ে অনেক কথা হলেও রমজান মাস নিয়ে ভেবেছেন কখনো? তিরিশ দিন, সময় কম নয়। কি করা যায় বলুনতো? আমার মাথায় খেলছে জিনিস একটা। বলবো?

নতুন ভাষা শিখলে হয় কেমন? নতুন একটা ভাষা। যেটা আমরা পড়তেও জানি কিছুটা।

হটাত্‍ কেন এই কথা?

পৃথিবী চষে বেড়ানোর পর এ উপলব্ধি কেন আপনার? এড়াতে পারলাম না প্রশ্নটা।

০২.

যুগটা গ্লোবালাইজেশনের। বন্ধুও জুটিয়েছি বিভিন্ন টাইমজোনে। তাদের মধ্যে পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছে তারাই – যারা ভাষা জানে নিদেনপক্ষে পাঁচটার মতো। ‘জিম রনে’র ভাষায় একেক ভাষা মানে এক মিলিয়ন ডলার। বাড়তি আয়। মিথ্যে বলেনি সে। ছোট বাচ্চাদের হাজারো গিফটের মধ্যে এটাই সব সেরা গিফট। সারা জীবনের জন্য। ঘুরে বেড়াবে পৃথিবী দাপিয়ে। ধন্যবাদ দেবে আপনাকে মনে মনে। দূরদৃষ্টির জন্য।

কতো গুলো ভাষা শিখতে পারে বাচ্চারা?

যতোগুলো চান আপনি। ভাষাতত্ববিদদের উত্তর। তবে সংখ্যা ছয় ব্যপারটা খারাপ নয়। রিসার্চ বলে বাচ্চারা একসাথে দুটো করে ভাষা শিখতে পারে ওই ‘দুই-তিন’ বছর বয়সে। কোন সময়ে কোন ভাষা ব্যবহার করতে হবে সেটাও ধরতে পারে ওই সময়ে।

০৩.

আচ্ছা, বাদ দিলাম বাচ্চাদের কথা। আমাদের কি হবে? চুল পেকে গেলেও আরেকটা ভাষা শেখা কঠিন নয়। নিজের কথাই বলি। জার্মান নিয়ে খোঁচাখুচি করেছিলাম একসময়ে। খবর পড়ুয়াদের বেশ বড় অংশ বুঝতেও পারতাম একসময়। টিভিতে সারাদিন জার্মান দেখলে না শিখে উপায় কি? কঙ্গোতে ছিলাম এক বছর। ফ্র্যাংকোফণিক দেশ হিসেবে ফরাসী ছাড়া ওদেশ অচল। কিছুটা শিখতে হয়েছিল অবস্থার চাপে পড়ে। দশ বছর পরে আবার এসে পড়লাম এই আইভরি কোস্টে। এখানেও সবাই কথা বলছেন ফ্রেঞ্চে। পুরোনো ফ্রেঞ্চকে ঝালাই করতে আবার ভর্তি হলাম ফ্রেঞ্চ ক্লাসে। এই আইভরি কোস্টে। মন টিকলো না মাসখানিক পরে। পুরানো জিনিস ভালো লাগে কার? নতুন কিছু শেখার জন্য আকুপাকু করতে থাকলো মন।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

It is truly rare for people to outmaneuver Big Telecom’s army of lobbyists, but together Canadians did it. Now that we’ve prevented big phone and cable companies from taking full control, it’s time to fix our broken telecom market for good. A first step is for Canadians to move to independent providers, then we need to shift policy so everyone has affordable choices for Internet access. Our future depends on it.

Steve Anderson, Executive Director, OpenMedia.ca

৬৩৬.

দেশগুলোর রেগুলেটরী এজেন্সি তৈরির পেছনে ‘গ্রাহকস্বার্থ’ দেখার ব্যাপারটা কাজ করে বেশি। গ্রাহক ঠিকমতো তার সার্ভিসটা পাচ্ছে কিনা বা যে টাকা দিয়ে কিনছে সেটা যথোপযুক্ত কিনা, এধরনের ‘নজরদারি’ করে থাকে রেগুলেটরী এজেন্সি। দেশের মানুষের ভালো দেখবে তারা, সেটাই থাকে মুখ্য। আর রেগুলেটরী এজেন্সি বাইরের সব ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে সেটাও আশা করে জনগণ। তবে বড় বড় ইনডাস্ট্রির জন্য রেগুলেশন সরকারের মাথা ব্যাথা হয়ে দাড়ায় অনেক সময়। অর্থনৈতিকভাবে এ ব্যাপারটা আরো প্রকট হয় যখন বড় বড় ইনডাস্ট্রিগুলোর কাছে প্রচুর পয়সা থাকে। ফলে, তাদের কাছে চলে যায় সেরা মেধাগুলো, সেরা আইনজীবী, হাজারে হাজারে। সরকারও ধরে রাখতে পারে না তাদের ‘সেরা মেধাগুলো’ – তাদের বেতন স্ট্রাকচারের কারণে। ফলে রেগুলেটর জনগণের না হয়ে – হয়ে যায় ইনডাস্ট্রি’র ‘হস্তগত’। ‘রেগুলেটরী ক্যাপচার’ হচ্ছে এর আইনগত সংজ্ঞা। দাম বেড়ে যায় পণ্যের।

৬৩৭.

দেখা গেছে কোম্পানীগুলোর স্যাটেলাইট অফিস থাকে সরকারী অফিসের কাছাকাছি। লবিষ্টদের কথা আর নাই বা বললাম। ছোট কোম্পানী আর সাধারণ জনগণের দিকটা দেখা অনিবার্য হয়ে পড়ে ওই রেগুলেটরী এজেন্সি’র ওপর। তবে সেটা হয়ে ওঠে না সবসময়। দেখা যায় সরকারের নীতিনির্ধারণীতে থাকা মানুষগুলো পরিবেষ্টিত থাকে ওই বড় বড় কোম্পানীর ‘মেধাবী’ মানুষদের দিয়ে। ছোট কোম্পানীগুলো বা সাধারণ জনগণ তো তাদের নিজেদের ‘দিনকে দিনের’ সমস্যা মেটাতেই ব্যস্ত, তার স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কিনা সেটার পেছনে দৌড়ানো হয় কমই। আপনি করবেন? আপনার পেটের দায় আগে – না আপনার ‘গ্রাহকস্বার্থ’? আর সেকারণে দেশগুলো তৈরি করে থাকে আলাদা ‘গ্রাহকস্বার্থ’ কমিশন।

৬৩৮.

প্রতিটা ইনডাস্ট্রির কিছু স্বার্থ থাকে যেটার জন্য সেই কোম্পানীটা যে কোন দৌড়ে যেতে আগ্রহী। এভিয়েশন ইনডাস্ট্রির দিকে তাকাই একবার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওই সেক্টরের রেগুলেটর হচ্ছে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন, যাকে আমরা বলি ‘এফএএ’। তাদের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রান্সপোর্টেশন’ মানে মন্ত্রণালয়ের একটা ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টে দেখা গেলো একটা নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের ৪৬টা প্লেন আকাশে উড়ছিলো ‘সেফটি ইন্সপেকশন’ ছাড়াই। সাধারণ গাড়ির মতো প্রতিটা প্লেনের ‘ফিটনেস’ সার্টিফিকেট নিতে হয় একটা সময় পর পর। ওই এয়ারলাইন্সটাকে দুবছর ধরে এই ছাড় দিয়ে রেখেছিলো তাদের রেগুলেটর। যাত্রীদের জানের ওপর বাজী রেখে ওই ছাড় দিয়ে রেখেছিলো এফএএ’র অফিসাররা। এদিয়ে বাকি এয়ারলাইন্সগুলোর অডিট রিপোর্ট ঠিকমতো যাবার ফলে ‘গ্রাউন্ডেড’ হয়ে গেল শত শত প্লেন। শুরু হয়ে গেল ফ্লাইট ক্যান্সেলেশন। তাও আবার হাজার খানেক ফ্লাইট। ঘটনা প্রকাশ পেল যখন ওই এয়ারলাইন্সের একটা প্লেনকে ‘গ্রাউন্ডেড’ করতে যেয়ে। প্লেনের ‘ফিউজলাজে’ কয়েকটা ফাটল পাওয়াতে ইন্সপেকটর ‘ক’কে বলা হলো ‘রেগুলেটরের ভালো সম্পর্ক’ আছে ওই এয়ারলাইন্সের সাথে।

৬৩৯.

মার্কিন টেলিযোগাযোগ রেগুলেটর এফসিসি’কে কম কথা হয়নি। ‘এফসিসি’ বিশাল মিডিয়া ইনডাস্ট্রির ‘হস্তগত’ হয়ে আছে এধরনের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিলো অনেকদিন থেকে। যাই রেগুলেশন করা হয় সেগুলো সাপোর্ট করছিলো ওই বড় বড় ইনডাস্ট্রিগুলোকে। কর্পোরেট ‘কার্টেলাইজেশন’ আর কি। বড় বড় মিডিয়া ইনডাস্ট্রির যোগসাজসে ক্রমশ: খরচ বাড়ছিলো গ্রাহকদের। ছোট ফার্মগুলো টিকতে না পেরে গুটিয়ে ফেলছিলো তাদের ব্যবসা। নতুন কোম্পানীও আসতে পারছিলো না বাজারে। ফলে উদ্ভাবনা যাচ্ছিলো কমে। দিনের শেষে গ্রাহকের পছন্দের ‘বিকল্প পন্য’ আসছিলো কমে। মানে সোজা। ধরুন, আগে ছয়টা কোম্পানী দিতো মোবাইল সেবা, ‘মার্জার অ্যাকুইজিশন’ হয়ে কোম্পানী হয়ে গেলো তিনটা। পছন্দের সংখ্যা গেলো কমে। এদিকে রেডিও টেলিভিশন লাইসেন্স পাবার ক্ষেত্রে পাত্তাই পেল না ছোট কোম্পানীগুলো।

৬৪০.

ঘুরে আসবো নাকি কানাডা একবার? কানাডিয়ান রেডিও-টেলিভিশন এণ্ড টেলিকম্যুনিকেশনস কমিশন হচ্ছে ‘কনভার্জড’ রেগুলেটর। ব্রডকাস্টিং, মিডিয়া, টেলিযোগাযোগ – সবই তার আওতায়। এক কথায় আধুনিক রেগুলেটর। বেল কানাডা, সবচেয়ে বড় অপারেটর – একবার কিভাবে যেন হোলসেল ইন্টারনেট বিক্রির ওপর ‘ইউসেজ বেসড বিলিং’ সিষ্টেমটা নিয়েছিল পাস করে। খোদ রেগুলেটর থেকে। মানে বেল কানাডা থেকে হোলসেল ইন্টারনেট কিনতে গেলে পয়সা গুনতে হবে ব্যবহারের ওপর। কিনতে হবে গিগাবাইট ধরে। আইএসপিদের যদি এভাবে কিনতে হয়, তাহলে গ্রাহকদের অবস্থা বারোটা। মোবাইলের ব্যপারটা কিছুটা আলাদা। তাদের সীমিত রিসোর্স হচ্ছে স্পেকট্রাম। ফলে ‘ইউসেজ বেসড বিলিং’ দিয়ে গ্রাহকদের চাপটা কমিয়ে নিয়ে আসে নেটওয়ার্কের ওপর থেকে। রাগান্বিত গ্রাহক আর আইএসপিরা শুরু করলো অনলাইন পিটিশন। পাঁচ লাখ লোকের পিটিশন। রেগুলেটর আর ‘বেল কানাডা’র মিল-মিলাপের গল্প শুরু হলো মিডিয়াতে। চাপ তৈরি হলো পার্লামেন্টারী স্ট্যান্ডিং কমিটির ওপর। ডাক পড়লো কমিশনের চেয়ারম্যানের। পিছু হটলো রেগুলেটর

এতে দাম বাড়ে বৈকি। এখন উপায় কি? আবার, মেধাগুলোকেও রাখা যাচ্ছে না সরকারে। উপায় না থাকলে শুরুই বা কেন করলাম গল্পটা?

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Formal education will make you a living; self-education will make you a fortune.

― Jim Rohn

০১.

লিঙ্কডইন নেটওয়ার্কে ফেসবুকের মতো ‘পোকিং’ ফীচার না থাকলেও মাঝে মধ্যে বাজিয়ে দেখে হেড-হান্টাররা। ধরুন, এই অধমকেই। মানে আপনার সিভি’র কাছে যে নস্যি! আসল আফ্রিকান ‘হেড-হানটিং’ হলে পালিয়ে বেড়াতাম এর মধ্যেই। এটা সেধরনের নয় বলে রক্ষা। পৃথিবী পাল্টে গেছে অনেক। পাঁচ বছর আগের গল্প দিয়ে চাকরি পাওয়া কঠিন এখন। আর যারা দেবে চাকরি, তারাও পাল্টেছেন তাদের পজিশন। পুরোপুরি – রিপজিশন! তারা এখন অনেক ফোকাসড, তারা জানেন – আসলে কি চায় কোম্পানী। তিন বছর আগে যেভাবে চাকরি পেয়েছেন – সেটা কিন্তু নেই আর। সত্যি বলছি। গতানুগতিক চাকরি দিতে চান না তারা, কথা হয় নির্দিষ্ট কাজ ওঠানো নিয়ে। তাহলে ‘হেড-হানটিং’ নিয়ে কথা বলি দু একটা, কি বলেন?

০২.

‘হেড-হানটিং’য়ের গল্পটা তখনই আসে যখন কোম্পানীটা একটা ‘নির্দিষ্ট’ কাজের জন্য মানুষ চায়। ‘প্রিটি মাচ স্পেসিফিক।’ সাধারণত: এই প্রসেসটা শুরু হয় ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের মাথাদের ‘হায়ার’ করার জন্য। সোজা কথায়, পিরামিডের ওপরের দিকের মানুষ খুঁজতেই এই ‘মাথা’ নিয়ে টানাটানি। সে কি ধরনের হবে সেটার একটা ‘ম্যাপিং’ তৈরি করে নেয় কোম্পানীটা। আরেকটা ব্যাপার বলে রাখি আগেভাগে, পেপারে বা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে কাজগুলো করা হয় না – বেশির ভাগ সময়ে। আবার, অনেক সময় ওই কোম্পানীর ‘এইচআর’ও জানে না কি হচ্ছে কোথায়? হতে পারে – প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানী থেকে নিয়ে আসতে হবে একজনকে, অথবা যার কাজের প্রোফাইল সাধারণের মতো নয়। রিক্রুটিং এজেন্সির কাজের বাইরের কাজ এটা। কোম্পানী তখন খোঁজে হেড-হান্টারদের। যাদের ব্যবসা মানুষের নাড়িনক্ষত্র নিয়ে। হেড-হান্টাররা সাধারণত: লূকোছাপা করেন কম, তাদের কথাবার্তা আর যোগাযোগ অনেকটাই ‘পার্সোনালাইজড’ আর সরাসরি ধরনের।

০৩.

কেন হেডহানটিং? কোম্পানী চায় কি? মানে ম্যানেজাররা চান কি? যেকোন কাজকে ‘আইডেন্টিফাই’ করে ওই সমস্যার সমাধান। ওই সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে যতো কম ‘রিসোর্সে’র ব্যবহার আর সেটা তাদের বটমলাইনে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আনছে কি না। এগুলোই দেখার বিষয়। সোজা কথায় ম্যানেজারদের কাজ মাপার ‘ইয়ার্ডস্টিক’ হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে তারা কতটুকু সফলতা পাচ্ছে ক। কোম্পানীর খরচ কমাতে, খ। দিনের শেষে কতো লাভ হলো। ওর সাথে সাথে ‘হেড-কাউন্ট’ চলে আসে। যেখানে এই কাজটা করতে চারজন লাগে, সেটাকে খরচ কমাতে গিয়ে হাত পড়ে হেড-কাউন্টে। ফলে কমে যায় মানুষ। আর কোম্পানী খোঁজে ওই লোক যে ওই বাড়তি কাজটাও পারে। আগে যেটা তার ‘টার্মস অফ রেফারেন্সে অমুক জিনিস থাকলে ‘অ্যাডেড’ অ্যাডভাণ্টেজ – সেটা যোগ হয়ে যায় মূল কাজে। মানে পুরানো কাজের ‘চোথা’ দিয়ে এগুতে পারছে না কোম্পানীগুলো। হেড-হান্টারদের লাগছে ওই ‘কাস্টোমাইজড’ কাজের গল্প বানিয়ে ওই লোকটাকে খুঁজে বের করতে।

০৪.

কোম্পানীর বড় লেভেলের এগজিকিউটিভ খুঁজতে বড় ধরনের ‘ক্যাম্পেন’ করতে হয় না হেড-হান্টারদের। যারা ওই কোম্পানীটার জন্য এগজিকিউটিভকে খুঁজছেন তাদের অনেকেরই নিজস্ব ফার্ম থাকে। রিক্রুটমেন্ট কন্সাল্ট্যান্টদের মতো তুলনা করা যাবে না তাদের। আপনি চাকরি পেলেন নাকি পেলেন না সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না ওই ফার্ম। আপনাকে বলে দেবে কিভাবে চাকরি খুঁজতে হয় অথবা ওই কোম্পানীতে চাকরি করতে হলে এই এই কাজ করতে হবে। তার ফী নির্ধারিত। হেড-হান্টারদের গল্প কিন্তু আলাদা। তারা ওই কোম্পানীর মানুষটাকে খুঁজে দিতে পারলেই পায় পয়সা। মানে খেটে – রেজাল্ট দেখিয়ে আয় করতে হয় তাদের। ব্যাপারটা কিছুটা কমিশন ভিত্তিক হয়। তাদের ফী – সেটা ‘কন্টিজেন্সী’ অথবা ‘রিটেইনড’ মানে কাজ ভিত্তিক বা বড় ধরনের রিক্রুটমেন্ট ভিত্তিক যাই হোক না কেন সেটা বেতনের ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। কোম্পানীর ওই এগজিকিউটিভের রোল কি হবে, তার ব্যাকগ্রাউণ্ড নিয়ে গবেষণা থেকে শুরু করে কোন কোন কোম্পানী থেকে মানুষ টানা যায় সেটার লিস্ট তৈরি করতে সাহায্য করে হেড-হান্টাররা।

০৫.

আচ্ছা, হেড-হান্টাররা তাদের লিস্ট বানায় কি করে? আমার ধারনা, গ্লোবাল নেটওয়ার্কিং। ‘ক্যারিয়ার মীট’ কোনটাই মিস করে না তারা। রিসার্চেও তুখোড় তারা। বিভিন্ন ট্রেড অ্যাসোশিয়েশন থেকে ‘ইনহাউস’ তথ্য পায় তারা। আর তো রয়েছে ইন্টারনেট। চাকরির বাজার নিয়ে বেশ কিছু ডিরেক্টরি বের হয় প্রতি বছর। সবশেষে তো আছে লিংকডইন! মানুষ নিয়েই তাদের কাজ। কোন কোম্পানীতে কোন মানুষটা আছে – সে কি রকম ভাবে আছে – সব জানতে হয় তাদের। এদিকে কোন কোম্পানী কি চাইবে সেটাও ধারনা করতে হয় আগে থেকে। ইদানিং কোম্পানীগুলো পড়া বাদ দিয়েছে মানুষের ‘রেজিউমে’। ওই ‘হিব্রু’ থেকে কি পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে সন্দিহান তারা। এখন ফোকাস হচ্ছে নির্দিষ্ট কাজগুলোকে তুলে দেয়া – একটা সময়ের মধ্যে। বলতে হবে আর ‘কেপিআই’এর গল্প? আপনারা আরো ভালো জানেন আমার থেকে।

০৬.

প্রথম কলটা পাই প্রায় পাঁচ বছর আগে। ইউরোপের একটা ফার্ম। পরপরই চলে এলো পুরোপুরি ‘পার্সোনালাইজড’ একটা ইমেইল। বোঝা গেলো আমাকে অনেক ভালোভাবেই চেনে সে। কবে কোথায় ছিলাম সেটা জানে ‘ইন ডেপ্থ’! তবে, কি কি কাজ করেছি সেটা নিয়ে কথা বলতে চায় সে। কিভাবে আমাকে চেনে বলতেই হাসলো মেয়েটা। বোঝা গেল – বলতে চাইছে না সে। তবে, পরের দিকে জানিয়েছিল – একটা নামকরা টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি কোম্পানী থেকে পেয়েছিল আমার কনট্যাক্ট ডিটেলস। একটা রেগুলেটরের পক্ষ হয়ে কাজ করছে সে। কোন রেগুলেটর? এখন নয়, শর্টলিস্টিং হলে জানাবে সে। এটা চায় তো ওটা চায়। কণফারেন্স কল তো পানিভাত। আমি আগ বাড়িনি আর। এধরনের অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে এর পরে। বাজার ‘যাচাই’ করতে কে না চায় বলুন? মানে, আপনার দাম উঠলো কতো? মনে কিছু করবেন না, নিজেকে বিক্রি করতে পারাটা আর্টের পর্যায়ে চলে গেছে ইদানিং। ঘণ্টায় দশ টাকা আয় করার মানুষ থেকে শুরু করে লক্ষ টাকার মানুষ আছে এই আমাদের দেশেই। মানে সেই মানুষটা ওই মূল্যটা পাচ্ছে বাজার থেকে। আপনার কাজ থেকে কোম্পানী ঘণ্টায় বিশ লাখ টাকা আয় করলে আপনাকে লাখ টাকা দিতে বাধা কোথায়? মনে নেই জিম রনের সেই কথা?

We get paid for bringing value to the marketplace. It takes time to bring value to the marketplace, but we get paid for the value, not the time.

— Jim Rohn

০৭.

আইডিয়া হলো কিছু। পরের দিকে ‘নক’ করলেই বলতাম – চাকরি খুঁজছি না এ মূহুর্তে। তবে ছোট বড় কিছু কাজ নিয়ে কথা বলতো হেড-হান্টাররা। ‘তোমার একটা প্রেজেন্টেশন দেখলাম এই নীতিমালাটা নিয়ে। ওই সাইটে। ওই দেশকে নীতিমালাটা তৈরি করে দিচ্ছি আমরা, কেয়ার টু জয়েন?’

বলুনতো কোথায় কাটাবেন সময়? ফেসবুক না লিংকডইন? প্রায়োরিটি কোথায়? টাকা কিন্তু উড়ছেই। ধরতে পারাটাই কায়দা।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

What you do has far greater impact than what you say.

— Stephen Covey

৬৩১.

ইকনোমিস্টের একটা রিপোর্ট পড়ছিলাম দিন কয়েক আগে। ওদের ‘ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট’ থেকে প্রতিনিয়ত ‘স্পেশাল রিপোর্ট’ বের করে – বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যাকে নিয়ে। এটা ছিলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্রডব্যান্ডের ভবিষ্যতের ওপর। মোবাইল ব্রডব্যান্ড নিয়ে অনেক আশা থাকলেও সেটার কিছু সমস্যা পিছিয়ে দিচ্ছে দেশগুলোকে। অপারেটররা চাচ্ছে নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে – তবে সেটার কাঁচামাল হচ্ছে এই স্পেকট্রাম। আর সেটার ‘অ্যালোকেশন’ নিয়ে যতো সমস্যা। আগে ঠিকমতো ‘অ্যালোকেশন’ না দেয়াতে নতুন করে পাওয়া যাচ্ছে না স্পেকট্রাম। অথবা নতুন স্পেকট্রাম কিভাবে দেবে সেটার ‘মোডালিটি’ কি হবে সেটা জ্ঞান না থাকার কারণে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে অনেক অনেক বেশি। স্পেকট্রামের দামটা কি হবে সেটা নিয়ে কালক্ষেপণ করছে অনেক দেশ। অথচ, এটার ব্যপারে ‘অপুরচুনিটি কস্ট’ বলে একটা হিসেব চলছে উন্নত দেশগুলোতে – অনেকদিন ধরে।

৬৩২.

অর্থনীতির সংজ্ঞাতে গেলে কিন্তু বিপদ। উদাহরণ টানি বরং – এই স্পেকট্রাম দিয়েই। স্পেকট্রামের ‘অপুরচুনিটি কস্ট’ বের করতে পারি দুভাবে। প্রথম প্রশ্ন, মোবাইল অপারেটর ‘ক’কে ওই স্পেকট্রামটা ছাড়া পুরোনো স্পেকট্রাম দিয়ে একই ভূখণ্ড আর গ্রাহকদের সার্ভিস দিতে গেলে তার বাড়তি খরচ করতে হবে কতো? মানে, তাকে বার বার ব্যবহার করতে হবে ওই পুরনো স্পেকট্রাম, কমিয়ে দিতে হবে ট্রান্সমিশন পাওয়ার, কিনতে হবে অনেক বেশি বেজস্টেশন। আরেকটা প্রশ্ন হতে পারে এধরনের – আমরা স্পেকট্রামটা যদি অন্য কোন সার্ভিসে দিতাম, তাহলে ওই নতুন মোবাইল কোম্পানীটা কতো টাকার সুবিধা পেত ওই সার্ভিসটা তৈরি করতে গিয়ে? এটাই ‘অপুরচুনিটি কস্ট’, যেখানে অপারেটরও খুশি আর গ্রাহককেও দিতে হচ্ছে না অকশনের উচ্চমূল্যের খেসারত। ‘থ্রীজি’ স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয়া হলো এশিয়ার প্রথম দিকের দেশগুলোর প্রায় বারো বছর পর। সিংগাপুরের রেগুলেটর অপারেটরদের পুরোনো ‘টুজি’ স্পেকট্রামের ওপর সব টেকনোলজি চালাতে দিয়ে এগিয়ে গেলো সবার – অনেক অনেক আগে। বলছিলেন সেখানকার ডেপুটি চীফ এগজিকিউটিভ, লেয়ং কেঙ্গ থাই। এক ধাক্কায় তাদের অপারেটরগুলো চলে গেলো ‘টুজি’ থেকে ‘ফোরজি’তে। দিতে শুরু করলো সত্যিকারের মোবাইল ব্রডব্যান্ড।

৬৩৩.

রেগুলেটরের ভাষায় এটাকে বলে ‘টেকনোলজি নিউট্রালিটি’ – মানে স্পেকট্রাম কিনে নাও কোন ধরনের ‘ইফ’ আর ‘বাট’ ছাড়াই। ‘নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড’। যে সময়ের জন্য কিনছো, ব্যবহার করো নিজের পছন্দমতো টেকনোলজি, বাজার যা চায়। বাজার ‘টুজি’, না ‘থ্রীজি’, না ‘ফাইভজি’, যা চাইবে সেটা দিতে পারবে ওই স্পেকট্রাম দিয়ে। এক কথায় অপারেটরকে স্বাধীনতা দেয়া স্পেকট্রামের ‘এফিশিয়েণ্ট’ ব্যবহারের ওপর। দুশো হার্টজ নাকি দশ মেগাহার্টজের চ্যানেল প্ল্যান, স্বাধীনতা অপারেটরদের। গ্রাহক বুঝে। আরেকটা উদাহরণ নিয়ে আসি আপনার সুবিধার জন্য। বাজার থেকে কিনলেন ফুলপ্যান্ট একটা। প্যান্টের পকেট চারটা, তার তিনটাই সেলাই করা। বলা হলো, ব্যবহার করতে পারবেন একটা, বাকিগুলো খুলতে লাগবে – পঞ্চাশ টাকা করে – প্রতিটা। পুরো প্যান্টের ‘এফিশিয়েণ্ট’ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হলো আপনাকে।

৬৩৪.

রেগুলেটরের কাছে এটা একটা কলমের খোঁচা হলেও, অপারেটরের কাছে এটা একটা বিশাল জিনিস। এটা একটা নতুন ধরনের ‘সিগন্যাল’ দেয় বাজারে। সেটা চলে যায় পুরো বিনিয়োগ দুনিয়ায়। আনকোরা নতুন মেসেজ। ‘নিশ্চয়তা’, রেগুলেটরী সার্টেনিটি। আর সেকারণে ‘ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস অ্যাক্সেস’ লাইসেন্সে ব্যাপারটা ঢোকাতে না পারলেও থ্রীজি লাইসেন্সের প্রথম ড্রাফটেই দেয়া হয়েছিল এই ‘নিউট্রালিটি’র ব্যাপারটা। অনেক রেগুলেটর এটাকে ‘টেকনোলজি অ্যাগনস্টিক’ বলে থাকেন। নীতিমালার নিশ্চয়তা চায় সবাই। অপারেটর, গ্রাহক, সবাই। জিএসএম অপারেটরদের অ্যাসোশিয়েশন, জিএসএমএ’র একটা স্টাডি বলে শুধুমাত্র এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিয়নের জিডিপি বাড়বে এক ট্রিলিয়ন ডলারে। ২০১৪ থেকে ২০২০য়ের মধ্যে। একটাই শর্ত, ‘এফিশিয়েণ্ট ইউজ অফ স্পেকট্রাম’। বেশি মনে হতে পারে, তবে, আমার ধারণায় এটা ছাড়িয়ে যাবে তাদের হিসেবকে। সেটা দেখাবো কাগজে কলমে। সামনে।

৬৩৫.

তবে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সব সমস্যার ‘জীয়ন কাঠি’ – এটা ভাবা ভুল হবে। এমনটাই বলেছেন আরেকজন আইটিইউ কন্সাল্ট্যান্ট। মোবাইল ব্রডব্যান্ড ততোক্ষণ পর্যন্ত ভালো সার্ভিস দেবে যখন তার পাশাপাশি ভালো ‘ফিক্সড’ নেটওয়ার্ক থাকবে। ‘ফিক্সড লাইন অ্যাক্সেস’ আর ‘ওয়াই-ফাই’ না হলে এতো ডাটা ‘অফলোড’ একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার – তাও আবার শহরগুলোতে। স্মার্টফোন কিন্তু বাড়ছে হু হু করে। ফেমটোসেল আর ওয়াই-ফাই কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে অপারেটরদের। সিংগাপুরের রেগুলেটর সবার সাথে বসে তৈরি করছে ‘হেটনেট’। এই ‘হেটারোজেনাস নেটওয়ার্কে’ থাকছে ফিক্সড লাইন, মোবাইল অপারেটরের ডাটা, ওয়াইফাই আর ছোট ছোট সেলুলার নেটওয়ার্ক। গ্রাহকরা বুঝবেনই না কিভাবে ‘সিমলেস ট্রানজিশন’ হচ্ছে নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে। ওটা তো জানার দরকার নেই জনসাধারণের। এটা ছাড়া, এই বিশাল ডাটা ডিমান্ড মেটানো সম্ভব নয়, কারো একার পক্ষে। আর ঢাকা শহরের জন্য আমার প্রস্তাবনা কিছুটা ভিন্ন। সেটা প্রাসঙ্গিক নয় বলে এখানে আলাপ করছি না। কীওয়ার্ড, নেটকো মডেল।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

When I give a minister an order, I leave it to him to find the means to carry it out.

— Napoleon Bonaparte

৬২৫.

দরকার কি এইসব ইন্টারনেট ‘ইকোসিষ্টেমে’র? একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখতে পারবেন এগুলো একটা আরেকটার ওপর – পুরোপুরি ‘ইন্টার-ডিপেণডেণ্ট’। একটা ছাড়া আরেকটা অচল। অথচ, এই ইকোসিষ্টেমের প্রতিটা জিনিষ নিয়ে কাজ করে সরকারের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট। সত্যিই তাই। কার সাথে কোনটার কি সম্পর্ক সেটা না জানলেই বিপদ। ইন্টারনেটের ট্রান্সমিশন মানে হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। সার্ভিসগুলো কার? সেটা তো আসলে সবার। অনলাইন ক্লাস নিয়ে মাথাব্যথা হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। ‘জেনারেল পারপাজ টেকনোলজি’ হিসেবে সবকিছুই দরকার সব মন্ত্রণালয়ের। ‘হেল্থকেয়ার’ নিয়ে ইন্টারনেটের সুবিধা নিচ্ছে পাশের দেশ ভারত। হাজার মানুষ প্লেন ভরে আসছে ওই দেশে ‘হেল্থকেয়ার’ ট্রিপে। প্রাথমিক ‘ডায়াগনস্টিকস’ হচ্ছে ইন্টারনেটের ওপর দিয়ে। থাইল্যান্ড আর সিংগাপুর তো শুরু করেছে অনেক আগেই।

৬২৬.

স্বাস্থ্য আর চিকিত্‍সা নিয়ে কাজ করবে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়। ‘অ্যাপ্লিকেশন’ নিয়ে কাজ করছে আইসিটি মন্ত্রণালয় অনেক আগে থেকে। তবে কেউ জানে না কার করতে হবে – কতোটুকু অংশ। নাকি আবার ‘ডুপ্লিকেশন অফ ইফোর্ট’ হচ্ছে বার বার? বিটিআরসিতে থাকার সময় দেখেছি এধরনের কাজ – করছে সবাই। সবার দরকার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, পয়সা ঢালছে কিন্তু সবাই। গরীব দেশে এটা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। এমনিতেই ফান্ডিংয়ের সমস্যা, সেখানে পয়সা যাচ্ছে নতুন নতুন জায়গায় – না জানার কারণে। ডোনার এজেন্সিরা সরকারের এই ‘সমন্বয়হীনতা’ ব্যাপারটা জেনেও দেনার ধার বাড়াচ্ছেন দিনে দিনে।

৬২৭.

ইন্টারনেট বা ব্রডব্যান্ড যাই বলেন সেটা যে শুধু হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক নয় – সেটা থেকে বের হতে এই ‘ইকোসিষ্টেম’ ব্যবস্থা। সার্ভিস আর অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার আগে কথা বলে নিতে হবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে – জিনিসগুলো তাদের নেটওয়ার্ক নিতে পারবে কি না? টিএণ্ডটি’র যুগে ‘টেলিফোন মডেল’ থেকে বের হয়ে আসতে হবে আগে। একটা ফোনের জন্য একটা লাইন। আরেকটা ফোন লাগাতে চাইলে আরেকটা লাইন – আর ফ্যাক্স চাইলে আরেকটা। ওইটা ছিলো পুরনো টেলিযোগাযোগের ‘ওয়ালড গার্ডেন’ সমস্যা, সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা রিসোর্স। এখনকার যুগে লাইন আসবে একটা, ওইটার ওপর যা চাইবেন তাই করবেন। আবার সার্ভিস আর অ্যাপ্লিকেশন কিন্তু শুধুমাত্র আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি নয়, এটা সবার। শিক্ষা আর হেল্থকেয়ার অ্যাপ্লিকেশন কেন তৈরি করবেন তারা? ব্যবহারকারী মন্ত্রণালয় জানেন না – কিন্তু তার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছেন আরেকজন। ‘ইন-কম্পাটিবিলিটি’র শুরু ওখানেই। সনাতন ‘পুশ’ মানে ‘খাইয়ে দেয়া’র মডেল থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের। পয়সা ঢালো ‘সাপ্লাই সাইডে’, মানে দাম কমাও ইন্টারনেটের – ওতেই হবে সব – সেটা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে আমাদের।

৬২৮.

মানি, পুরনো শেখাটাকে ‘আন-লার্ন’ করা কষ্টের। সেটাকে মেনেই চিন্তা করতে হবে নতুন ‘কনসেপ্চুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক’, বড় আকারে – সবাইকে নিয়ে। ব্যবহারকারীদের নিয়ে। টাকা দেয় তো তারাই। তাদের জন্যই তো সবকিছু। চারটা কম্পোনেণ্টকে আলাদা করে মাইলস্টোনে ভাগ করলেই ‘ফোকাস’ এরিয়াগুলো বোঝা যাবে সরকারের দিক থেকে। ইকোসিষ্টেমের প্রতিটা কম্পোনেণ্টকে আলাদা করে সেটার জন্য সরকারের কোন কোন এজেন্সি কাজ করবে সেটা বের করতে হবে আগে। সেটার ‘ফীডব্যাক’ লুপ যাবে সরকারী বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলোতে। সেটাকে ঘিরে ঘোরাতে হবে সরকারের সম্পর্কিত পলিসিগুলোকে। শুধুমাত্র ব্রডব্যান্ড নীতিমালা নিয়ে কাজ করতে গেলে পয়সা, সময় আর ‘ফোকাস’ নষ্ট হবে আরো বেশি। আমাদের মতো গরীব দেশের জন্য সেটা হয়ে যাবে বড় ধরনের বিলাসিতা। এখনকার ‘ব্রডব্যান্ড প্লান’ আগের মতো নেই আর। এটা শুরু হয় দেশের ‘দর্শন’ নিয়ে। দেশ কি চায়, সেটা বের করতে হয় আগে। টেকনোলজি বাদ, দেশের ‘প্রায়োরিটি’ বের করতে হয় খুটে খুটে। উদাহরণ দেখবেন নাকি একটা? ‘কানেক্টিং আমেরিকা’ বলে ওদের ন্যাশন্যাল ব্রডব্যান্ড প্ল্যানটা দেখলে পরিষ্কার হবে সবার। দেখুন তাদের দর্শনগুলো – প্রথম কয়েক লাইনে। সবকিছু আছে ওতে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা, চিকিত্‍সা ব্যবস্থা, সরকারের কাজের জবাবদিহিতা, এনার্জি খাত, মানুষের নিরাপত্তা, আরো অনেক কিছু – কোন কিছু বাদ রাখে নি তারা। এক্সিকিউটিভ সামারিটা না পড়লে ব্যাপারটা না ধরতে পারার সম্ভাবনা বেশি। একটা দেশ কি চায়, সেটাই এনেছে এই প্ল্যানে। বিশাল ক্যানভাস।

৬২৯.

‘বিল্ডিং ব্রডব্যান্ড’ বইটাতে আমাদের মতো দেশগুলো কি ধরনের ভুল করতে পারে সেগুলোর বেশ কিছু ধারনা দিয়েছেন আগেভাগেই। ব্রডব্যান্ড মানে ইন্টারনেটের মতো প্রোডাক্টের ডিমান্ড তৈরি করার মতো ‘ব্যাপারটা’র ধারনা না থাকাতে পুরো ইনভেস্টমেন্ট চলে যায় ‘সাপ্লাই’ সাইডে। মানে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি হলেই খুশি। কিভাবে বাড়াতে হবে ব্যবহারকারীদের সংখ্যা, তৈরি করতে হবে নতুন নতুন সার্ভিস, নতুন গ্রাহকবান্ধব অ্যাপ্লিকেশন – সেটা পলিসিতে না থাকাতে পুরো কাজটাই যায় ভেস্তে। ‘ইকোনোমি অফ স্কেল’ – ব্যবহারকারী বাড়লে কমবে দাম, আর দাম কমলে আসবে নতুন নতুন সার্ভিস, নতুন ইনভেস্টমেন্ট। ইকোসিষ্টেমের তুখোড় সাইকেল হচ্ছে জিনিসটা। কম্পোনেণ্টগুলোর মধ্যে ‘ইন্টার-ডিপেনডেন্সি’ থাকাতে পুরো জিনিসটাকে ফেলতে হবে বড় ক্যানভাসে। ইংরেজিতে যাকে আমরা বলি ‘হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ’, তাহলেই কাজ করবে পুরো ইকোসিষ্টেম। কম্পোনেণ্টগুলোর একটার ওপর আরেকটার নির্ভরশীলতা কাজ করে অনেকদিক থেকে। হাই-স্পীড ট্রান্সমিশনে ইনভেস্টমেন্ট আসা মানে ‘কোয়ালিটি অফ সার্ভিস’ বাড়বে আমাদের দরকারী সব সার্ভিসগুলোতে। আর সেটা বাড়িয়ে দেবে ‘ব্যান্ডউইডধ ইন্টেসিভ’ অ্যাপ্লিকেশন তৈরির মাত্রা। যতো বেশি অ্যাপ্লিকেশন, ততো বেশি টানবে নতুন নতুন গ্রাহকদের। নতুন গ্রাহকেরা চাপ তৈরি করবে নেটওয়ার্ক এক্সপ্যানশনের কাজে। ফলে বাড়বে ইন্টারনেট আর ব্রডব্যান্ডের ওপর নতুন ইনভেস্টমেন্ট। পুরো পৃথিবী বসে আছে পয়সা নিয়ে। ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার জন্য বসে আছে কোম্পানীগুলো।

৬৩০.

নতুন সার্ভিস আসা মানে নতুন কনটেন্ট তৈরির হিড়িক। কনটেন্ট তৈরি করছেন ব্যবহারকারীরা নিজেই। ইন্টারনেটের শুরুতে ডাউনলোডই ছিলো বেশি। আজ – পাল্টে গেছে দাবার গুটি। অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে গুগল আর ফেসবুকের মতো কোম্পানীগুলো। হাজার হাজার গিগাবাইটের ‘ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট’ আসছে আপনার আমার দিক থেকে। আমার আপনার ভিডিও, ছবি, ব্লগ পোস্ট দিয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট। ষাট হাজার ছবি আছে আমারই, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। আগে কনটেন্ট তৈরি করতো মিডিয়া কোম্পানীগুলো। এখন সেটা চলে এসেছে গ্রাহকদের হাতে। ফলে, দরকার হচ্ছে হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক – ব্যবহারকারীর দোরগোড়ায়।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

It [is] that courage that Africa most desperately needs.

― Barack Obama, Dreams from My Father: A Story of Race and Inheritance

০৭.

‘মাছের ঝোল লাগবে, কর্নেল?’

ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম ওই মুহূর্তটাতে। ‘পীস কীপার’ রোলের পাশাপাশি ‘এবোলা’ ভাইরাস ঘাড়ের ওপর চড়ে থাকলেও ভুল শোনার মতো মানসিক অবস্থা ছিলো না ওই দিনে দুপুরে। বেশি হয়ে গেলো নাকি? ক্লান্ত? তাও না। আঠারো উনিশ ঘন্টার ইউএন ফ্লাইট তো পানিভাত। আইভোরিয়ান মেয়েটা দাড়ানো আমার সামনে। কথা বলছে – স্পষ্ট বাংলায়। একদম কুষ্টিয়া’র শুদ্ধ অ্যাকসেন্টে। হাতে গ্লাভস, সাদা টুপি, ক্যাটেরিংয়ের ড্রেস পরা। গিলে ফেললাম নিজের কথা। আগের কঙ্গো মিশনে শেখা ভাঙ্গা ফ্রেঞ্চ খানিকটা বের হলো মুখ থেকে।

‘সিল ভ্যু প্লে’। মানে, অনুগ্রহ করে দিলে ভালো আরকি। পুরোটাই অস্ফুট থাকলো মুখের ভেতর। বুঝলো কিনা জানি না।

‘আমি বাংলা জানি, ভালো বাংলা। ধন্যবাদ আপনাকে।’ সপ্রতিভ উত্তর মেয়েটার।

সুপ্রীমের সবাই এদেশীয় স্টাফ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে এধরনের ‘প্রফেশনাল’ আচরণ আশা করিনি আমি।

০৮.

বিটিআরসিতে থাকার সময়েই পেলাম পোস্টিং অর্ডারটা। নিউ অ্যাসাইনমেণ্ট। কোতে দে’ভোয়া। আইভোরিয়ানদের ভাষায় না বললে দেশটার নাম ‘আইভোরি কোস্ট’। নতুন দেশ – নতুন অভিজ্ঞতা। উড়াল দিলো মনটা আগেই। দেশটার নাম নিয়ে অনেক ভাষায় অনেক ধরনের অনুবাদ হবার ফলে তাদের সরকার ‘কোতে দে’ভোয়া’ ছাড়া মানেনি কোনটাই। আমাদের অপারেশনের ইংরেজি নামটাও ওটাই। ইউনাইটেড নেশনস অপারেশন ইন কোতে দে’ভোয়া। এসেছি স্টাফ হয়ে। মাল্টি-ন্যাশন্যাল সেক্টর হেডকোয়ার্টার। থাকা খাওয়ার দ্বায়িত্ব ‘ইউএন’এর ওপর। যোগাযোগের মানুষ আমি। নতুন এলাকা। মাথাটাকে ‘ডিফ্র্যাগমেন্ট’ করে নিলাম প্রথম কয়েকদিনে। খালি হলো কিছু যায়গা। মুখ বন্ধ, চলে গেলাম ‘অবজার্ভার’ রোলে। নতুন পরিবেশে এই টেকনিক কাজ করে ভালো। থাকতে হবে নয় দশটা দেশের লোকের সাথে। এজন্য এই সেক্টরের নাম শুরু হয়েছে ‘মাল্টি-ন্যাশন্যাল’ দিয়ে। আমার তো পোয়াবারো। জানবো নতুন কালচার। বন্ধুত্বটা শুরু হলো বেনিনের আরেক কর্নেলকে দিয়ে।

০৯.

পোস্টিং অর্ডার পাবার পরের ঘটনা। সবার কথা একটাই। সব ভালো। খালি – খেতে পারবে না ‘সুপ্রীমে’। কি যে রাঁধে – ওরাই জানে ভালো। দেশ থেকে মশলা, আচার, রাইস কূকার না নিলে বিপদ। দেশ থেকে কথা হতো আগের অফিসারদের সাথে। এই ‘কোতে দে’ভোয়া’তে। মিশন এরিয়াতে ওই একটা ‘অ্যাপ’ই আমাদের লাইফলাইন। মাঝে মধ্যে স্বাতীর কানে যেতো কিছু কিছু জিনিস। চাল ডাল নেবার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করলো সে। আমার ধারনা হলো ‘সুপ্রীম’ হলো ডাইনিং হলের মতো কিছু একটা। চালাচ্ছে এদেশীয় কোন কনট্রাক্টর।

১০.

শেষমেষ ‘কোতে দে’ভোয়া’তে চলে এলাম আবিদজান হয়ে। আফ্রিকার ‘প্যারিস’ খ্যাত এই আবিদজান অনেকখানি মলিন – গৃহযুদ্ধের ফলে। দেখলাম তো আফ্রিকার অনেকগুলো দেশ। দেশ ‘ডিভাইডেড’ থাকলে যে কি হয় সেটা দেখছি নিজের চোখে। আমার কাজের জায়গাটা হচ্ছে পশ্চিম সেক্টরে। এটার ‘এরিয়া অফ রেস্পন্সিবিলিটি’ আমাদের দেশ থেকেও বড়। পাশেই লাইবেরিয়া আর গিনি। মাল্টি-ন্যাশন্যাল সেক্টর বলে অনেকগুলো দেশ কাজ করছে এখানে। আর আমাদের খাওয়া দাওয়ার দ্বায়িত্ব হচ্ছে এই সুপ্রীমের ওপর। ছোট পরিপাটি ডাইনিং হল – নিরীহ মনে হলো প্রথম দেখায়। অলিভ অয়েলে আসক্তি চলে এলো কিছুদিনেই। খাওয়া দাওয়া, সেটা না হয় আরেকদিন? ওয়ান লাইনার? আই অ্যাম লাভিং ইট!

১১.

নতুন দেশ দেখা নেশা হলেও তাদের কাজের ধারা নিয়ে লেখার অভ্যাসটা ঢুকে গেছে রক্তে। পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা জ্ঞানগুলোর ডটগুলোকে কানেক্ট করার মতো। পাঠকদের মধ্যে যে যেভাবে সেটা ব্যবহার করে! কাজে লাগলেই খুশি আমি। জানতে চাইলাম এই সুপ্রীমকে নিয়ে। যতোটা নিরীহ মনে করেছিলাম সেটা মনে হলো না আর। লোকাল স্টাফ দেখে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য। এটা রীতিমত একটা মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ক্যাটারিং কোম্পানী। দুর্গম জায়গায় খাবার, ফুয়েল আর যা দরকার সবকিছু পাঠাতে সিদ্ধহস্ত তারা। এক লাখ খাবারের প্লেট ‘ডেলিভারী’ দেয় প্রতিদিন! পাঁচ মহাদেশ মিলে ত্রিশটা দেশে কাজ করছে গত পঞ্চাশ বছর ধরে। কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ার, গাড়ি বোমা, এক্সপ্লোসিভ আর বুলেট ফাঁকি দিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে আফগানিস্তান, সুদান, ইরাক, লাইবেরিয়া, মালী সহ আরো অনেক দেশে। রুয়াণ্ডা, সোমালিয়া আর কোতে দে’ভোয়া বাদ দেই কেন? তুখোড় কাজের ডাউনসাইডটা অনেক কষ্টের। শুধু আফগানিস্তানে গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত হারিয়েছে তারা ৩১২ জন বেসামরিক কনট্রাক্টর। মন খারাপ করার মতো খবর বটে।

১২.

আজ আর নয়। এই তুখোড় কোম্পানীর গল্প নিয়ে আসবো আরেকদিন! সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের জাদুর চাবিকাঠি মনে হয় আছে তাদের কাছে! সমস্যাকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এনে ব্যবসা – এটা নিয়েই কথা হবে সামনে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Do you know what my favorite renewable fuel is? An ecosystem for innovation.

– Thomas Friedman

৬১৩.

ছোটবেলায় ইকোসিষ্টেম নিয়ে ভাবলেই মনে আসতো মানুষ, গরু, ছাগল, ঘাসপাতা, গাছের ছবি। ওগুলো ছিলো ডাঙার অংশে। বাতাস সূর্য আর পানি ছিলো ‘জীবনহীন’ কম্পোনেণ্ট। পানির অংশে তাকাতেই ভয় লাগতো আমার। কুমির, তিমি – ছবির আকারে বেশ বড়ই ছিলো আঁকাগুলো। আসল কথা হচ্ছে সবাই মিলে একটা ইকোসিষ্টেম। লাগবে সবাইকে। মানে ওই ব্যাকটেরিয়াটাকেও। কোন একটা কম্পোনেট বাদ পড়লেই বিপদ। ‘ফীডব্যাক লূপে’ হবে সমস্যা। খাদ্য চেইনেও একই সমস্যা। কেউ উত্পাদক – কেউ ভোক্তা। ঘাস ছাড়া চলে না গরুর। আবার গরু ছাড়া চলে না মানুষের। এই ‘ইন্টার-ডিপেনডেন্সি’ চিরকালের। ব্রডব্যান্ডের ইকোসিষ্টেম তো আরো ভয়াবহ। প্রতিটা কম্পোনেণ্ট শুধু একটা আরেকটার ওপর শুধু ‘ডিপেনডেন্ট’ না, একটা আরেকটার প্রবৃদ্ধির সহায়ক। বইয়ের ভাষায় বলে ফেললাম মনে হচ্ছে।

৬১৪.

ব্রডব্যান্ড ইকোসিষ্টেমে আছে কি? শুরুতেই নিয়ে আসি হাই-স্পীড নেটওয়ার্ককে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা এটা বোঝেন ভালো। ইন্টারনেট ছড়াতে এটার পেছনেই খরচ করছেন কোটি কোটি টাকা। তাও আবার দিচ্ছেন বিটিসিএলকে। এই ইকোসিষ্টেমের ‘ইনভেস্টমেন্ট’ আসবে কিভাবে? ওই ‘পাজল’টা মেলাতে লেখা হয়েছে আরেকটা চ্যাপ্টার। পাইপ তো হলো, ভেতর দিয়ে আসা যাওয়ার জিনিস কোথায়? সেটা হচ্ছে সার্ভিস, যা তৈরি করতে আমরা আসলেই দুর্বল। কোটি টাকা দিয়ে বানালাম স্কুল, বই ছাড়া। অথচ এই ‘সেবা’র জন্যই সবকিছু। এই সার্ভিস হচ্ছে আমাদের ব্রডব্যান্ড ইকোসিষ্টেমের দ্বিতীয় কম্পোনেণ্ট। আবার সার্ভিসগুলো কিন্তু অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক। অ্যাপ্লিকেশন প্রোভাইডাররা বসবেন কোথায়? ভুল বুঝবেন না, এই কম্পোনেণ্টটাই বাঁচিয়ে রেখেছে নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারকে। অ্যাপ্লিকেশন ছাড়া ইন্টারনেট কেন, আপনার স্মার্টফোনই তো অচল। এই বিলিয়ন ডলারের অ্যাপ্লিকেশন (নাকি অ্যাপ) হচ্ছে তিন নম্বর কম্পোনেণ্ট। টেলকো’রা প্রায় অভিযোগ করেন – কমছে তাদের আয়। টেলকো’র ব্যবসা আগে ছিলো ‘ওয়ালড গার্ডেন’ ধাঁচের। নিজ নিজ অ্যাপ্লিকেশন শুধুমাত্র নিজ গ্রাহকের জন্য। ইন্টারনেট ভেঙে ফেলেছে ওই ‘ওয়ালড গার্ডেন’য়ের ব্যবসা, থমাস ফ্রীডম্যানের ভাষায়, ওয়ার্ল্ড হ্যাজ বিকাম ফ্ল্যাট! একেবারে ফ্ল্যাট! ভিসা লাগে না আয় করতে। পাশাপাশি আয় বাড়ছে টেলকো’র হু হু করে। আর যতো বাড়ছে অ্যাপ্লিকেশন, ততো মোটা হচ্ছে পাইপ। মানে ব্যবসা হচ্ছে পাইপেরও। আর যাই করেন – মিটার লাগানো আছে তো পাইপে। তবে ‘নেট নিউট্রালিটি’র একটা ধকল যাবে সামনে। ওটা আরেকদিন!

কোনটা ফেলনা নয়। একটা ছাড়া চলবে না আরেকটা। নেটওয়ার্কে পয়সা ফেললেই হবে না - বাকিগুলোকে দেখভাল করতে হবে।

কোনটা ফেলনা নয়। একটা ছাড়া চলবে না আরেকটা। নেটওয়ার্কে পয়সা ফেললেই হবে না – বাকিগুলোকে দেখভাল করতে হবে।

৬১৫.

চার নম্বর কম্পোনেণ্টের কথা ভুলে যায় সবাই। আমরা মানে ‘ব্যবহারকারীরা’। গ্রাহক। ফেসবুকের ভাষায় ‘আম জনতা’। যে যাই বলুক – ভোক্তা ছাড়া ব্রডব্যান্ড ইকোসিষ্টেমের পুরোটাই অচল। দিচ্ছে কে পয়সাটা – দিনের শেষে? ভোক্তা। আমার ভাষায় ‘প্রাইস সেনসেটিভ’ ভোক্তা। ব্রডব্যান্ড ইকোসিস্টেমের সবচেয়ে নামী দামী কম্পোনেণ্টকে নিয়ে ভাবেন কম – নীতিনির্ধারণীতে বসা মানুষেরা। আমি নিজেই ওখানে ছিলাম বলেই বলছি ব্যাপারটা। বিশ্বাস করুন, সার্ভিসের দাম আর তার সহজলভ্যতাকে ঠিকমতো ‘টুইকিং’ করতে পারলে এটাই মোড় ঘুড়িয়ে দেবে পুরো ইকোসিস্টেমের। গ্রাহকের সাথে অ্যাপ্লিকেশনের সম্পর্ককে বাদ দিলে চলবে না কিন্তু। ইন্দোনেশিয়ায় যে ধরনের অ্যাপ্লিকেশন চলে বেশি সেটা আমাদের দেশে যে চলবে সেটার গ্যারান্টি দেবে কে? বাড়বে গ্রাহক একসময়। বাড়বে গ্রাহকের চাহিদা, বাড়বে ‘সফিস্টিকেশন’, আর সেটাই বাড়াবে ডিমান্ড। ডিমান্ড বাড়লে আসবে ‘ইনভেস্টমেন্ট’ নেটওয়ার্কে। তখন, পয়সা আসবে উড়ে উড়ে। মানে ঘুরতে থাকবে ইকোসিস্টেমের বৃত্তটা। একেকটা ‘কম্পোনেণ্ট’ ঠেলে ওপরে ওঠাবে তার পরের কম্পোনেণ্টটাকে। প্রতিটা কম্পোনেণ্টকে ঠিকমতো দেখভাল করলে আর তাকাতে হবে না পেছনে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

In a minimum subsidy auction, the government identifies a project and a maximum subsidy. Companies compete for the project by bidding down the value of the subsidy. The bidder requiring the lowest subsidy wins.

– FCC Staff Working Paper 2 (Oct 2010)

৬০৮.

এখন আসুন আসল প্রশ্নে – কোথা থেকে আসবে টাকা? ‘ক্লু’ হিসেবে আরেকটা টুল নিয়ে আসি এখানে। নাম হচ্ছে ‘রিভার্স সাবসিডি অকশন’। শিখেছিলাম পেরুর একটা ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি থেকে। ফিরে আসি ডোমারের গল্পে। ওই পাঁচশো এমবিপিএস/সেকেন্ড ব্যান্ডউইডথ দিতে হবে পঞ্চাশটা সরকারী স্থাপনায়। একেক স্থাপনায় চার পাঁচটা করে সংযোগ দিলে মোট সংযোগের সংখ্যা দাড়াচ্ছে দেড়শোতে। শুধু ডোমার অথবা পুরো বিভাগ ধরে ‘উল্টো’ সাবসিডির অকশন করবো একটা। যার যতো কম খরচ তাকে দেবো এলাকাটা। না পারলে শক্ত পেনাল্টি!

৬০৯.

ধরা যাক আমার হিসেবে ওই দেড়শো সংযোগের জন্য সরকারকে খরচ করতে হবে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। কিন্তু একটা অপারেটর ওই ডোমারের জন্য শুধুমাত্র ওই পাঁচশো এমবিপিএস/সেকেন্ড ব্যান্ডউইডথ নিয়ে থাকবে না বসে। তার ব্যবসার জন্য নেবে আরো এক জিবিপিএস সংযোগ। ফলে দাম কমবে আরো বেশি। আমার অকশনে থাকবে সবাই। বিটিসিএল সহ। ওই দেড়শো সংযোগের জন্য একটা অপারেটরকে কতো ভর্তুকি দিতে হবে সেটাই নির্ধারণ হবে এই অকশনে। সবচেয়ে কম টাকা চাইবে যে অপারেটর তাকে দিয়ে দেয়া হবে এলাকাটা।

৬১০.

ধরা যাক অপারেটর ‘ক’ চাইলো ষাট লক্ষ টাকা। ‘খ’ চাইলো চল্লিশ। ‘গ’ চাইলো আরো কম। অপারেটর ‘ক’ বিড শেষ করে দিলো দশ লক্ষ টাকা চেয়ে। যেহেতু অনেক ব্যান্ডউইডথ একসাথে কিনছে সরকার, কমবে দামও। এছাড়া হাজারো ভ্যালু এডেড সার্ভিস যাবে ওই নেটওয়ার্কের ওপর দিয়ে। দেখা যাবে নিজের অন্যান্য সার্ভিসের সাথে দশ পনেরো বছরের ‘অ্যামোর্টাইজেশন কস্ট’ ধরে সরকারকে দিতে হবে না বেশি ভর্তুকি। বেশি ভলিউম হওয়াতে খুশি অপারেটর। টাকা পাবে এক জায়গা থেকে। খুশি সরকার, তিন চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে কিনছে রাষ্ট্রের সার্ভিস।

৬১১.

এই ভর্তুকিটা যাতে সরকারকে না দিতে হয় সেটার ব্যবস্থাও করা হয়েছে দুহাজার নয়ে। মানে সরকারী সংযোগ হবে বিনামূল্যে! পলিসি ড্রাফটিংয়ের সাথে ছিলাম আমিও। তবে মন মতো হয়নি পুরোটা। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস অবলিগেশন ফান্ড। গুগল করুন ‘ইউএসওএফ’ দিয়ে। নিজের আগ্রহে তিন তিনটা অনলাইন ট্রেনিং করেছিলাম এই ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস আর তার ফান্ড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। ভয়ংকর জিনিসটা হচ্ছে ফান্ড ম্যানেজমেন্ট। হতে হবে স্বচ্ছ!

৬১২.

প্রতিটা জনগনের জন্য নিদেনপক্ষে একটা সংযোগ নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেকারণেই তৈরী করা হয়েছে একটা ফান্ড। এমুহুর্তে এখানে পয়সা দিচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলো। তাদের রেভিনিউয়ের এক শতাংশ যাচ্ছে এই ফান্ডে। মোবাইল অপারেটররা আশা করছেন এই ভর্তুকির পয়সাটা তাদের দিলে কাজ হবে ভালো। তবে, ধীরে ধীরে যোগ হবে বড় বড় সব অপারেটর। তখন অনেক বড় হবে ফান্ড। তবে যে যাই বলুক, ফান্ড খরচ করতে হলে ‘নূন্যতম সাবসিডি অকশন’ ছাড়া টাকাটা কাউকে দিয়ে দিলে ব্যাহত হবে এর মহত্‍ উদ্দেশ্যটা। দক্ষতার মূল্যায়ন না হবার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই দেখেছি আশেপাশের দেশে। ভুল থেকেই তো শেখে বুদ্ধিমানরা, তাই নয় কি?

ডিমান্ড এগ্রিগেশনের সবচেয়ে বড় উদাহরন আছে কোরিয়াতে। মারাত্মক টুল! গল্পটাও বিশাল।

আসছি সামনে।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Success is just a war of attrition. Sure, there’s an element of talent you should probably possess. But if you just stick around long enough, eventually something is going to happen.

– Dax Shepard

৬০২.

ফিরে আসি ইন্টারনেটের দাম কমানোর গল্প নিয়ে। যেকোনো দেশের ব্রডব্যান্ডের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে সরকার নিজে। যারা বুঝতে পেরেছে আগে, তারা আজ উঠে গেছে ওপরে। সরকারের হাজারো অফিস, স্কুল, কলেজ আর হাসপাতাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দুরদুরান্তে। ওখানের ইন্টারনেটের সংযোগ দেবে কে? কমদামে? ধরুন, আমি ডোমারের একটা স্কুলের ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে আছি। আমার স্কুলে দরকার পাঁচশো বারোর (কেবিপিএস) একটা সংযোগ। ওই একটা সংযোগের জন্য বিজনেস কেস হবে না কিন্তু কোন প্রোভাইডারের। তাও আবার মাত্র পাঁচশো বারো! ওটা ওখানে নিতে যে খরচ – সেটাতে অল্প টাকা যোগ করলে সংযুক্ত করা যাবে পুরো ডোমারের সব সরকারী অফিসগুলোকে।

৬০৩.

ফিরে আসি ওই স্কুলের গল্পে। ওই একটা সংযোগ হলেও তার যা দাম হবে সেটা দিতে পারবে না সরকার। আমার স্কুলের ইন্টারনেটের বিলটা দেবে হয়তোবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেটা পাস করাতেও ওই প্রোভাইডারের যে সময় ক্ষেপন হবে তাতে রাজি হবে না সে পরের মাস থেকে। মনে করুন আমি সরকার। প্রথমেই তৈরী করবো একটা ব্রডব্যান্ড কমিশন। চার পাঁচ জনের একটা অফিস। যার জায়গা হবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে। ওই অফিসের পেটে বসে সব মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইবো কার দরকার কতো ব্যান্ডউইডথ। দরকার কি কাজে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হিসেব দেবে তার সব রিজিওনাল অফিস আর হাসপাতালগুলোর ইন্টারনেটের চাহিদা। ভিডিও কনফারেন্স সহ। জেলা ভিত্তিক।

৬০৪.

ধরুন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়ত্তে দুরদুরান্তের স্কুলসহ পুরো ব্যান্ডউইডথের হিসেব পাওয়া গেল পাঁচ গিগাবিট/সেকেন্ডের। আবার, জনপ্রশাসন থেকে ডিসি অফিস ধরে সবার চাহিদা পাওয়া গেল আরো তিন গিগাবিট/সেকেন্ডের। এভাবে পুরো বাংলাদেশের সরকারী সব অফিস, পুলিশ স্টেশন, স্কুল কলেজ, হাসপাতালের চাহিদা পাওয়া গেলো পঞ্চাশ গিগাবিট/সেকেন্ডের। হিসেব নিলাম সম্ভাব্য কোথায় কোথায় সংযোগটা লাগবে সেটা সহ। ব্রডব্যান্ড কমিশনের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসলাম আমি। এই পঞ্চাশ গিগাবিট/সেকেন্ডের মধ্যে তিরিশই হচ্ছে ভেতরে ব্যান্ডউইডথ। মানে সরকারী সার্ভারগুলো তো দেশের ভেতরে। নাকি তাও নেই? যুক্ত করে দিলাম দেশের ভেতরের ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জে। তিরিশ গিগাবিট/সেকেন্ড গতি কিনবো না আর। তারমানে কিনতে হচ্ছে মাত্র বিশ গিগাবিট/সেকেন্ড। আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ হিসেবে। সরকারের কতো দরকার তার একটা ‘এগ্রিগেটেড’ ডিমান্ড চলে আসলো আমার হাতে। গুগল আর ফেইসবুকের কিছু প্রাইভেট ব্যান্ডউইডথ চাইলে সেটা নেমে আসবে দশ গিগাবিট/সেকেন্ডে। সরু করে তাকালেন মনে হচ্ছে? আচ্ছা, বাদ দিলাম আজ।

৬০৫.

বিজ্ঞাপন দেয়া হলো ওয়েবসাইট আর পত্রিকায়। বিশ গিগাবিট/সেকেন্ডের কতো ব্যান্ডউইডথ দরকার – দেশের কোথায় কোথায়, সেটার হিসেব সহ। এক্সেল টেবিল আকারে দেয়া হলে দেখা যাবে ওই ডোমারের পুরো ‘এগ্রিগেটেড’ ব্যান্ডউইডথ দরকার হচ্ছে প্রায় পাঁচশো এমবিপিএস! আর ওই পাঁচশো এমবিপিএস ওখানে নিতে আরো উপজেলা হয়ে যাবার সময় ওই একই পরিমানের মতো ব্যান্ডউইডথ প্রতি উপজেলায় নামিয়ে যেতে যেতে তার বিজনেস কেস উঠে যাবে অনেক আগেই। সেখান থেকে পাঁচশো বারো কেবিপিএস নেমে যাবে স্কুলে। আশেপাশের অনেকগুলো সরকারী স্থাপনা নিয়ে। পানির দামে।

৬০৬.

ভলিউমের খেলা। আন্তর্জাতিক বাজারে একটা ভলিউমের ওপর বেশি মাত্রায় ব্যান্ডউইডথ মানে ‘আইপি ট্রানজিট’ কিনলে সেটার দাম হয়ে যায় পানির মতো। কে কতো দিয়ে কিনছে সেটা নিয়ে গবেষণা করতাম বিটিআরসিতে বসে। একটা আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে যা খরচ পড়তো সেটাকে ভাগ করেছিলাম ষোলটা কস্ট কম্পোনেন্টে। হ্যা, ষোলটা। দুঃখজনক হলেও সত্যি এর মধ্যে লোকাল ব্যাকহল মানে দেশের ভেতরের ট্রান্সমিশন খরচটা সবচেয়ে বেশি।

৬০৭.

বিজ্ঞাপনের টেন্ডারের উত্তরে বিশাল সাড়া পড়বে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক অপারেটরদের পক্ষ থেকে। লাস্ট মাইল মানে শেষ সংযোগটা দেবার জন্য হুড়াহুড়ি পড়ে যাবে আইএসপি আর মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে। যেখানে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক অপারেটরদের নেটওয়ার্ক নেই – তবে যাদের নেটওয়ার্ক আছে তাদের সাথে ‘মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ করে নিয়ে টেন্ডারে আসবেন তারা। সরকার টাকা দেবে একটা জায়গা থেকে। ওএসএস, ওয়ান স্টপ শপ! আগের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়। বিল পাশ করাতে হবে না প্রোভাইডারদের – নিজের গাটের পয়সা খরচ করে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Older Posts »