Feeds:
Posts
Comments

Archive for March, 2014

‘Dreamers are mocked as impractical. The truth is they are the most practical, as their innovations lead to progress and a better way of life for all of us.’

Robin S. Sharma

‘Knowledge isn’t power until it is applied.’

Dale Carnegie

৪১৭.

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য গবেষণা হচ্ছে বিস্তর। টাকায় টাকা আনে একথা যেমন সত্যি, আবার কোথায় টাকা ফেললে বহুমাত্রিক উপকার আর তার হাজারো গুন লাভ নিয়ে আসবে ফেরৎ সেটা নিয়ে সবাই এখন একমত। আফ্রিকার দেশগুলো তো আরো আগেই শুরু করে দিয়েছে কাজ। দেখিয়ে দেবে ওদের গ্রোথ। সারা পৃথিবীতে। রিপোর্টেও আসছেও তাই। এটা একমাত্র ইন্ডাস্ট্রি যার ফলাফলে রয়েছে মাল্টিপ্লায়ার মানে বহুমাত্রিক ইফেক্ট। বাড়বে জিডিপি, বাড়বে ব্যবস্যা বানিজ্য, বাড়বে পড়ালেখার সুযোগ। বাড়বে স্বাস্থ্যসেবার মান, তৈরী হবে ‘পাবলিক সেফটি’ ইকোসিস্টেম মানে রাষ্ট্র দেবে মানুষের সবধরনের নিরাপত্তা। এনার্জি আর পরিবহন খাতের দক্ষতা বাড়ছে এর কারণে। কম লিখিনি এগুলো নিয়ে। কিছু পাবেন এখানে, এখানে আর এখানে! ফিরে আসি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশটা নিয়ে। সত্যিকারের ডাটা নিয়ে এনালাইসিস করে দেখা গেছে ব্রডব্যান্ডের পেনিট্রেশন বাড়লে জিডিপি বাড়ে নিশ্চিত। প্রেজেন্টেশনটা নামিয়ে নিন বরং। এটাও পড়তে পারেন সময় পেলে বাংলাদেশের ওপর তৈরী করা। ভবিষ্যত পোস্টে যতো ভেতরে ঢুকবো ততো কাজে লাগবে এটা।

৪১৮.

এতক্ষণ আলাপ করছিলাম ব্রডব্যান্ডের ইফেক্ট নিয়ে। নিজেদের দেশের মানুষগুলোকে যুক্ত করতে হলে এর নেই বিকল্প। যতো মানুষ ‘কানেক্টেড’, ততো বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। ততো আসবে ‘সেলফ অ্যাকচুয়ালাইজেশন’ মানুষের মধ্যে। সেটাই নিয়ে আসবে আসল স্বাধীনতা। এতো মানুষ আমাদের দেশে – তাও বাস করে এতো ছোট জায়গায় – যে কোন বিজনেস কেস সফল হতে বাধ্য। আমার অফিস কাজ করে ব্রডব্যান্ডের ধারণা নিয়ে। হাজারো রিপোর্ট পড়েছি এই সাত বছরে। প্রচুর অনলাইন কোর্স করেছি সময় বাঁচিয়ে, রাতে। যতোই জেনেছি ততই খারাপ হয়েছে মন। চোখে পড়েছে ‘ফল্টলাইন’গুলো ধীরে ধীরে। বসে থাকিনি তাই বলে। আস্তে আস্তে হাত দিয়েছি নীতিমালা গুলোতে। পাল্টেছি অনেকখানি অংশ, সেটার ‘ফিনিশিং টাচ’ নিয়ে আসবো ক্রমান্বয়ে। এই লেখায়। আর আমাদের দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখছি ‘ব্রডব্যান্ড ম্যানুয়াল – বাংলাদেশ’। সামনের পোস্টগুলোতে রাখুন চোখ। বই হিসেবেও আসবে বাজারে।

কেন দরকার একটা ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড প্ল্যান?

কেন দরকার একটা ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড প্ল্যান?

৪১৯.

পৃথিবীব্যাপী কাজ চলছে ‘ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যান’ নিয়ে। ওটার মসলা দিয়ে ঠাসা থাকবে ম্যানুয়ালটা। কাঠখোট্টা বিষয় হলেও জিনিষটা হবে বাংলায় – বর্তমান প্রেক্ষিত মাথায় রেখে। তবে ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড পলিসি আর প্ল্যানের পার্থক্য বিস্তর! পলিসি আছে সবার, তবে কিভাবে করতে হবে সেটা না থাকায় হয় না কিছুই। পলিসি বলছে ‘চাই এতো শতাংশ পেনিট্রেশন, কিন্তু কে করবে, কিভাবে করবে, কোন এজেন্সি না পারলে সেটাকে কিভাবে মিটিগেট করবে, কোথায় সমন্বয় হবে মাইলস্টোনগুলো, কে টাকা দেবে আর কে পাবে, সরকারের পক্ষে ‘ইনক্লুসিভ’ ডিমান্ড এগ্রিগেশন কে করবে, সরকারের পারফরমেন্স ইভালুয়েশন আর তার জবাবদিহিতার সিকোয়েন্সিং সব থাকবে প্ল্যানে। পুরো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের বাবা।

৪২০.

ম্যানুয়ালের প্রতিটা চ্যাপ্টার শুরুটা করবো গল্প দিয়ে। উত্তরণের সম্ভাব্য অ্যাকশন পয়েন্ট থাকবে শেষে। দেরীতে শুরু হলেও অন্যদেশের ভুল থেকে শিখেছি অনেককিছু। অন্যদের ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে নষ্ট হবে কোটি টাকা। আমাদের কষ্টার্জিত টাকা। সঠিক ধারণা না থাকাতে সময় আর টাকা নষ্ট হচ্ছে এখনো। দরকার ব্রু-প্রিন্ট। কি চাই আসলে? স্টিভেন কোভি’র ‘বিগিন উইথ দ্য এন্ড ইন মাইন্ড’ কথাটা কাজে লাগাবো এখানে। কিছুটা ‘সৌল সার্চিং’ও হবে এখানে। বাইরের কনসালটেন্ট আর কতদিন লিখে দেবে আমাদের চাওয়া পাওয়া?

৪২১.

একটা ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যান বাঁচিয়ে দেবে অনেক ভুল থেকে। অনেকটা সময় নষ্ট থেকে বাঁচিয়ে দেবে এই প্ল্যান। মুখস্ত হয়ে গেছে অনেক দেশের কেস স্টাডি। পড়ে ফেলেছি অনেকের ‘আধুনিক’ ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যানগুলোকে। মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো মাস্টারপ্ল্যান একেকটা। অন্যদের মাস্টারপ্ল্যানগুলো পড়তে গিয়ে একটা প্যাটার্ন লক্ষ্য করেছি। আর সেই সাথে বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যান তৈরীর টুলকিটও জোগাড় করে ফেলেছি ইতিমধ্যে। আমার টীমকে সময় দিন তিন মাস, ঠিকই বের করে দেবো প্রাথমিক ব্লু-প্রিন্ট। যে দেশ এখনো ঠিক করতে পারে নি তারা ঠিক কি চায়, চূড়ান্ত চাওয়া বলে যাকে – তাদের সমস্যা মিটবে না কখনোই।

৪২২.

চলুন দেখে আসি আশেপাশের কয়েকটা দেশের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যান। মায়ানমার, নেপাল আর ভিয়েতনামেরটা দেখুন আজ। যাদের প্রবৃদ্ধি কম আর সেধরনের ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই তাদের সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন অফুরন্ত স্পেকট্রাম। সেই স্পেকট্রাম ধরে এসেছে স্পেকট্রাম ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যান। আমরাও করছি একটা। আইটিইউ’কে ধরে বের করে নিয়ে এসেছি তাদের প্রাথমিক সন্মতি, তৈরী করে দিতে হবে বাংলাদেশের ন্যাশনাল স্পেকট্রাম/ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যান। না হয়ে যাবে কোথায়? মনে আছে তো দশ হাজার ঘন্টার গল্পটা?

৪২৩.

দেশের চূড়ান্ত চাওয়া চাইবে রাষ্ট্র, সেটা রাষ্ট্রের সার্বভৌম অধিকার তবে সেটার টুল হিসেবে ‘ইউনিভার্সাল ব্রডব্যান্ড এক্সেস’ নিয়ে পুরোদমে ওকালতি করছে ব্রডব্যান্ড কমিশন। পৃথিবীব্যাপী ব্রডব্যান্ডের সুফল ছড়িয়ে দেবার জন্য ব্রডব্যান্ডের সুফল পাওয়া দেশগুলো, বড় বড় কোম্পানি, ইউনেস্কো আর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, আইটিইউ মিলে তৈরী করেছে আমার প্রিয় একটা অর্গানাইজেশন। ব্রডব্যান্ড কমিশন। এর কমিশনার হিসেবে আছেন পৃথিবীর ‘হু’স হু’, বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রির সিইওরা, সুফল পাওয়া দেশগুলোর সিনিয়র নীতিনির্ধারকগণ আর একাডেমিয়া। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিত্ব আছে এখানে। সবার চাওয়া একটাই। ছড়িয়ে দিতে হবে ব্রডব্যান্ডকে। জনস্বার্থে। কোম্পানিগুলো অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন কম মুনাফায় সার্ভিসগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। বাংলাদেশের একজন আছেন ওখানে। এর মূলমন্ত্র ‘ইউনিভার্সাল ব্রডব্যান্ড এক্সেস’ হচ্ছে ‘সবার জন্য শিক্ষা’র মতো জিনিস। যুক্ত করতে হবে সবাইকে।

৪২৪.

আমাদের মতো দেশগুলোতে ‘পলিটিক্যাল উইল’ ছাড়া একাজ অসম্ভব বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্মেলনে আলাদাভাবে থাকছে ‘মিনিস্টেরিয়াল ফোরাম’। দেশগুলোর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের প্রতিশ্রুতি পাবার জন্য কাজ করছে বছর ধরে। দেশের কোন কোন নীতিমালাতে কি ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে সেখানেও সাহায্য করে যাচ্ছে আইটিইউ, এপিটি, জিএসএমএ’র আরো অনেক সংস্থা। ব্রডব্যান্ডকে ছড়িয়ে দেবার জন্য ‘সরকারের খরচ’ আর তার ‘ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট’, ‘কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস’ আর ‘বিজনেস কেস ডেভেলপমেন্ট’ বানানোর করার জ্ঞান তৈরী করতে হবে দেশকেই। সরকারকেও ভাবতে হবে তার ‘রিটার্ন অফ ইনভেস্টমেন্ট’ নিয়ে। করদাতার টাকা বলে কথা। আর সেকারণেই কতদিনে ফিরে আসবে টাকাটা আর কোন কোন খাতে আবার পুনর্বিনিয়োগ হবে সেটার হিসেব নিয়ে আসছি সামনে।

ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করার মশলাও থাকবে সাথে। ব্রডব্যান্ডের ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট, কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস আর বিজনেস কেস ডেভেলপমেন্ট?

সাথে থাকুন। আসছি সামনেই!

[ক্রমশঃ]

[বাইরের একটাই ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড মাস্টারপ্ল্যান দেখুন আজ, চ্যাপ্টার বুঝে নামিয়ে নিন। পার্ট-৩ বলবে আপনার মনের কথা। আর ‘পাবলিক সেফটি’ ইকোসিস্টেম নিয়ে লিখবো সামনে]

Read Full Post »

If the only tool you have is a hammer, you tend to see every problem as a nail.

Abraham Maslow

৩৯৫.

শেষ হয়ে আসছে সময় আমার। বর্তমান এসাইনমেন্টে। চমত্‍কার কেটেছে এই সাত সাতটি বছর। একটা মানুষ পৃথিবীতে বাঁচে পঁচিশ হাজার দিনের কাছাকাছি। আর আমার আড়াই হাজার দিন হলো বলে – এখানে। ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েলের একটা বই পড়েছিলাম এখানে আসার পর পরই। নাম ‘আউটলাইয়ার্স’। শ-খানেক সাফল্যমন্ডিত মানুষদের নিয়ে একটা গবেষণা করেছিলেন। কিছুটা প্যাটার্ন এনালাইসিস। ওখান থেকে বেরুলো ‘দশ হাজার ঘন্টা’র একটা থাম্বরুল। কেউ কোনো বিষয় নিয়ে দশ হাজার ঘন্টা কাজ করলে তার সাফল্য অনিবার্য। মানে ও বিষয়ে জ্ঞানী বলা যেতে পারে তাঁকে। বিল গেটস, স্টিভ জবস থেকে শুরু করে সবাই তাদের কোম্পানি খোলার আগেই দশ হাজার ঘন্টা দিয়েছেন – নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে। বিশ্বাসযোগ্য রুল, ডক্টরাল ডিগ্রীর জন্যও দশ হাজার ঘন্টার নিয়ম খাটে। দুটো দশ হাজার ঘন্টা’র সাইকেল চালিয়েছি আমি – এখানে। শুধুমাত্র অফিস সময়েই! বিশাল সময়।

৩৯৬.

কেমন কেটেছে আমার? এক কথায় মাইন্ড ব্লোয়িং! জ্ঞানের সাগরে সাঁতার কেটেছি প্রতিদিন! কথা হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের সাথে। হৃদয়ে ছিলো স্টিভ জবসের মন্ত্রটা। স্টে হাংরি, স্টে ফুলিশ! বোকা ছিলাম আগে থেকেই, শেখার আগ্রহটা বাড়িয়েছি, এই যা! পুরো বিশ্বের জ্ঞান যেন উপচে পড়ছে এখানে। টেলিযোগাযোগ জ্ঞান। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন সকালে অফিসে ঢোকার সময় মনে হয়েছে একটা কথা। কে জানে, আজই হয়তোবা শেষ দিন। এমন কি করা যায় যাতে মনে থাকে দিনটার কথা? মন বললো ‘কিছু ভালো কাজ করো আগের দিন থেকে’। অল্প অল্প করে প্রতিদিন।

৩৯৭.

কিভাবে সম্ভব? ‘সাহায্য করো মানুষকে। একজন করে প্রতিদিন। যেদিন তুমি যাবে পড়ে, ওরাই তুলবে টেনে’ আন্দ্রিয়া’র উত্তর। ‘দশটা নিঃস্বার্থ হাত পাওয়া কম কথা নয় তোমার বিপদের সময়ে।’ মজার কথা, সবার আগে হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার সহকর্মীরা। শুরু হলো বেবি ওয়াকিং। তিন চেয়ারম্যান রাখলেন আগলে। বাবার মতো। সব বিপদ থেকে।

৩৯৮.

কোথায় যেন পড়েছিলাম সমস্যার সমাধানে বের হয়ে আসতে হবে ওর ভেতর থেকে। মানে বাইরে থেকে দেখতে হবে সমস্যাটাকে। তাহলেই ওর ফাটল মানে ‘ফল্টলাইন’ পড়বে চোখে। সমস্যাটা বুঝতে পারলেই তো সমাধান ‘পিস অফ কেক’! আইডিয়াটা মন্দ নয়। দুটো ইনপুট হাতে।

ক. সাহায্য করো মানুষকে। একজন করে প্রতিদিন।
খ. বাইরে থেকে দেখতে হবে সমস্যাটাকে। তৈরী করো বাইরের যোগসূত্র।

আউটপুট নিয়ে চিন্তা করলাম মাসখানেক। সাহায্যপ্রার্থী একজন করে মানুষ খুঁজে পাওয়া সমস্যা নয়, কিন্তু আমার কাজের আউটকামের ফলাফল যাচাই করতে লাগবে বাইরের ইনপুট। অফিসে আমার কাজই সাহায্য করা বিজনেসগুলোকে, যাতে আরো বাড়তে পারে ওরা। তারাই তৈরী করছেন কর্মক্ষেত্র। যুক্ত করছেন মানুষ আর ব্যবস্যাকে – একে অপরের সাথে। ফলে বাড়ছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। আবার, কি ধরনের প্রতারণার সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা সেটাও জানতে চাইলাম মনে মনে। উপায় কি? সাহস করেই মোবাইল নম্বরটা দিলাম ওয়েবসাইটে। পাল্টে যেতে থাকলাম সেদিনের পর থেকে। কর্মক্ষেত্রকে চিনতে থাকলাম নতুনভাবে। বাইরে থেকে। নিউট্রাল গ্রাউন্ড বলে কথা। কোনো পক্ষপাতিত্ব ছাড়া। ২৪/৭ কলসেন্টারের মতো কিছুটা। হাজারো ফীডব্যাক। কাজের প্রায়োরিটি পাল্টাতে থাকলো ধীরে ধীরে। নতুন একটা ইমেইল এড্রেসও খোলা হলো এব্যাপারে।

৩৯৯.

এই এসাইনমেন্টে এসে বুঝতে চাইলাম কাজের কোন কোন অংশগুলো বড় ‘টাইম ওয়েস্টার’ মানে সময়খাদক। ইন্ডাস্ট্রির প্রথম ফিডব্যাক, আপনার কাজের পদ্ধতিটার ডিটেলস তো লেখা নেই কোথাও। আর থাকলেও আছে কিছু মানুষের মুখে মুখে। লিখে টানিয়ে দিন ওয়েবসাইটে, ফোনকল আর অফিসে মানুষের আনাগোনা কমে যাবে অর্ধ্যেক! সার্ভিস প্রোভাইডাররা কোনটা পারবেন করতে আর কোনটা নয়, সেটা জানার জন্য হাজারো প্রশ্ন থাকতো তাদের পক্ষ থেকে। কোন সার্ভিসের দাম কতো আর তার শর্তগুলো জানার উপায় ছিলো না কোনো। পদ্ধতিগুলো লেখা থাকলে সার্ভিস প্রোভাইডার থেকে শুরু করে রেগুলেটর আর সাধারণ গ্রাহক – সবাই খুশি। ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো প্রতিদিন বলতে হবে না সবাইকে। সময়খাদকের কাজ কমতে থাকলো।

৪০০.

সামরিক বাহিনীর সব কিছুই ‘প্রসেস ড্রিভেন’, আর সেই প্রসেসগুলো লেখা আছে কোথাও। অস্ত্র কিভাবে খুলতে আর জুড়তে হবে সেটা থেকে শুরু করে বিশাল অপারেশন চালানোর পদ্ধতি সব কিছুই আছে ‘স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রোসিডিউরে’। এর বহুল প্রচলিত শব্দটা হচ্ছে ‘এসওপি’। অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে ‘এসওপি’ দেখো। রাস্তার কোন দিক দিয়ে হাটবো, ওটাও আছে ‘এসওপি’তে! মানুষের জীবন নিয়ে যাদের কাজ, সিদ্ধান্ত আর কাজের পদ্ধতির খুঁটিনাটি জানা থাকতে হবে আগে থেকেই। ফাস্ট পেসড যুদ্ধে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয় সেকেন্ডে!

৪০১.

উনিশশো নব্বইয়ের দিকে ‘ইউনিক্স’ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পড়লাম বিপদে। নিউজগ্রুপে যাই প্রশ্ন করি – উত্তর আসে, ‘আরটিএফএম’ মানে রিড দ্যা *কিং ম্যানুয়াল! ওই ম্যানুয়াল পড়তে পড়তে পড়লাম ভালবাসায়। প্রায় সব কিছুর উত্তর দেয়া আছে ওখানে। শিখে ফেললাম ম্যানুয়াল পড়া। লিখতেও শুরু করে দিলাম আমার মতো করে। অর্গানাইজেশনের জন্য। মনে হলো পৃথিবীটা আমার হাতে। উনিশশো আশি সালের দিকে হাতে এসেছিলো কমোডরের একটা ১২৮ কিলোবাইটের পিসি। সত্যিকারের গানের ক্যাসেট হচ্ছে ওর স্টোরেজ। চালাতে না পেরে ওর ম্যানুয়ালগুলো নিয়ে বসলাম সপ্তাহ খানেক। চালাতে পারবো না মানে? ওই জ্ঞান দিয়েই চালাচ্ছি আজ ইউনিক্স, লিনাক্স আর অ্যান্ড্রয়েডের মতো কাস্টমাইজড অপারেটিং সিস্টেম। এমবেডেড অপারেটিং সিস্টেম চলছে বাসায়। লিখতে শিখিয়েছি সহকর্মীদের। তবে কাজের পদ্ধতি নিয়ে থেকে নিজে লেখা শুরু করলেও এখন আমার সহকর্মীরা আমার থেকেও তুখোড়।

৪০২.

যাই লিখি সেটার প্রথম খসড়াতে ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। আর ওটাকে একা ঠিক করতে গেলে চলে যাবে মাসের পর মাস। ওগুলো দেখালাম কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি স্টেকহোল্ডারদের। ফীডব্যাক আসলো কনসালটেন্ট বন্ধু ‘মিরিয়াম’ থেকে। সুইডিশ রেগুলেটরের হয়ে কাজ করেছেন অনেকদিন। ‘পাবলিক কনসালটেশন’ মানে গণশুনানি করো ওয়েবসাইটে। বলে কি মেয়েটা? পুরোপুরি দাড়ায়নি কিন্তু খসড়াটা, স্বগোক্তির মতো শোনালো কথাটা। বুঝলো সে, মনে হলো। ‘‘পাবলিক কনসালটেশন’ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ জিনিস।’ মিরিয়াম বললো। ‘কি চাও সেটা লেখো কয়েক লাইনে। বেশি বড় না। ধরে নাও ব্যাপারটার কিছুই জানো না এমুহুর্তে। ব্যাপারটার সম্মন্ধেই জানতে চাও সবার কাছ থেকে। তুমি তিন লাইন লিখলে মানুষ লিখবে তিরিশ লাইন। আর ইন্ডাস্ট্রি লিখে দেবে তিনশো লাইন। প্রয়োজনীয় জিনিসটা রেখে বাকিটা ফেলে দিয়ে আলাপ করো সামনাসামনি। কয়েকবার। সবার ইনপুটগুলো পড়লেই একটা ‘পার্সপেক্টিভ’ পাবে। ভুল হবে না তোমার। সাহস করে চেয়েই দেখো না একবার। নিজের ইমেইল এড্রেস দিতে ভুল করো না কিন্তু!’

৪০৩.

আলাদিনের চেরাগ পেলাম হাতে। অনেক অনেক পাবলিক কনসালটেশন করেছি এপর্যন্ত। যুক্তি আছে সবারই। ‘হ্যা’ দলের যুক্তি পড়তে গিয়ে যতটা ‘কনভিন্স’ হলাম ততটাই ‘ক্রিটিকাল এনালাইসিসে’ পড়তে হলো ‘না’ দলের যুক্তিতে। সবার সাথে আলাপ করলেই বোঝা যায় কি চাচ্ছি আমরা। অসাধারণ একটা টুল। একবার সাত সাতটা পাবলিক কনসালটেশন লেগেছিলো একটা ব্যাপারকে ঠিক করতে গিয়ে। এখনো চলছে অনেকগুলো। ভারসাম্য রাখাটাই হচ্ছে অর্গানাইজেশনের মুন্সিয়ানা। বিশ্বের বড় বড় সরকারী সিদ্ধান্ত আর তার ডকুমেন্ট তৈরী কাজের অনেকাংশ ছেড়ে দিয়েছে জনগনের ওপর। ‘সরকারী শাসনব্যবস্থা ২.০’ বলে নাম দিয়েছে টেকিরা। নীতিনির্ধারণী নীতিমালার খসড়া তৈরীর দ্বায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে ‘ক্রাউডসৌর্সিং’য়ের ওপর। জনগণ আর সম্পর্কিত স্টেকহোল্ডাররাই লিখে দেয় বিশাল বিশাল ডকুমেন্ট। দেশটা তো জনগণেরই। ধারনাটা যে দেশগুলো নিচ্ছে তারাই উঠছে ওপরে। তাড়াতাড়ি।

৪০৪.

পাশাপাশি প্রাইস-ওয়াটারহাউস-কুপার্স, অ্যাকসেন্চার, ওভাম, এনালাইসিস ম্যাসনের মতো অনেকগুলো বড় বড় ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম থেকে শুরু করে গুগল আর ফেইসবুকের মতো ‘গেমচেঞ্জার’ কোম্পানিগুলোর সাথে পরিচয় হতে থাকলো। ‘ওয়ার্ড অফ মাউথ’ কি না জানি না – অনেকেই যোগাযোগ শুরু করলো বিভিন্ন কাজে। পরিচিত হতে সময় লাগলো না। চেয়েই নিলাম ব্ল্যাকবেরি, অফিস থেকে। ২৪/৭ ইমেইল সার্ভিস! অফিসের আইটি ডিপার্টমেন্টটাও দেয়া হলো আমার সাথে। বসিয়ে ফেললাম এক্সচেঞ্জ সার্ভার, প্রথম ধাক্কায়! পুশ মেইলের ভালবাসায় পড়লে যা হয় আর কি! ইমেইল করি এসএমএসের মতো। মেইলের উত্তর ঘন্টায় ঘন্টায়। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ টেলিকমিউনিকেশন অর্গানাইজেশন, আইক্যান, আইসক, এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি, ওয়ার্ল্ডব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য রেগুলেটরদের সাথে কথা বলতে বলতেই বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ধারণা পেতে শুরু করলাম।

৪০৫.

বিশ্ববাজারে আমাদের অবস্থান কোথায়? পাল্টাতে থাকলো চিন্তাধারণা। ‘থিঙ্ক গ্লোবাল, অ্যাক্ট লোকাল’ ধারণাটা গেড়ে বসতে শুরু করলো মনের মধ্যে। গ্লোবাল স্কেলে আমাদের অবস্থান নিয়ে জোর ‘ফাইট’ দেয়া শুরু করলাম সহকর্মীদের সহায়তায়। সুফল এলো কিছু জায়গায়। সবার কথা একটাই, ইট’স অল এবাউট ‘ভিজিবিলিটি’! আমাদের দেশকে চিনবে কি দিয়ে? উত্তর সোজা, সংখ্যা দিয়ে। স্ট্যাটিসটিকাল ইনডিকেটরগুলো পাল্টে দিচ্ছে দেশগুলোকে, দিনের পর দিন। ভুল করার অবকাশ নেই নীতিনির্ধারকদের। একটা ভুল, সেটাকে শুধরাতেই লাগবে অনেকটা বছর!

৪০৬.

দেশের অর্থনীতিতে ‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই)’ কতো বড় জিনিস সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম আফ্রিকাতে যেয়ে। হাজারো কোটি ডলারের ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ তৈরী করে বসে আছে দেশগুলো। ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ মানে শুধুমাত্র রাস্তাঘাট নয়, ব্যবস্যাবান্ধব নীতিমালাও কিন্তু। মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘বিল্ড ইট, দে উইল কাম! বানাও ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ব্যবস্যাবান্ধব নীতিমালা – ওরা আসবেই! ওরা আসা মানে হাজার কোটি ডলার ঢুকছে দেশে, কর্মযজ্ঞ হবে শুরু, বাড়বে জিডিপি! বাড়বে শিক্ষা, বাড়বে নাগরিক সুবিধা। ‘এফডিআই’ আকর্ষণ করে আনা যতটা কষ্টের – ধরে রাখা আরো কষ্টের।

৪০৭.

‘এফডিআই’ আনার থেকে ধরে রাখা কষ্টের কেন? কফি মগে চুমুক দিতে গিয়ে থমকে দাড়ালো কেভিন। ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে। ও কাজ করছে একটা বড় ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্মে। সিঙ্গাপুরের মতো দেশ তাদের সরকারী আর বেসরকারি কাজের সব ‘প্রসেস’ তৈরী করিয়ে নেয় এদের দিয়ে। কাজ মানুষ নির্ভর নয়। আমার মতো মানুষ অফিস পাল্টে অন্য জায়গায় গেলেও ‘প্রসেস’ মানে কাজের ‘ডিরেক্টিভ’ থাকবে অপরিবর্তিত। কথায় আছে না – হাকিম নড়লেও নড়বে না হুকুম। ভ্রু কুঁচকানোটা কমতে থাকলো মনে হচ্ছে।

৪০৮.

ডিনারের ইনভিটেশনটা ছিলো আমার। মানে আমিই খাওয়াচ্ছি ওকে। সেজন্য কি না জানি না, স্মিত হাসি হাসলো সে। হাতের পাঁচটা আঙ্গুল দেখালো বরং। এফডিআই আনা আর ধরে রাখার জন্য লাগবে কয়েকটা জিনিস, ১. ইনফ্রাস্ট্রাকচার মানে বিদ্যুত, রাস্তাঘাট আর ব্যবস্যাবান্ধব নীতিমালা, ২. তবে হঠাত্‍ করে ট্যাক্স রেজীম পাল্টানোটা বিপদজনক যে কোনো দেশের জন্য, ৩. রেগুলেটরি নিশ্চয়তা মানে পাল্টাবে না নীতিমালা একটা সময়ের মধ্যে, ৪. টাকা দেশের ভেতরে আর বাইরে যাবার সহজ নীতিমালা মানে ‘ক্যাপিটাল কন্ট্রোল’ পলিসি আর ‘কালচারাল ডিফারেন্স’ মানে সংস্কৃতিতে মিলতে হবে দেশগুলোকে।

৪০৯.

কেভিনের মতো শত শত বন্ধুদের সাথে কথা বলতে গিয়ে মাথা খুলেছে কিছুটা। আমি এখন ওদের জুতো পরতে শিখেছি ভালো মতোই। মানে বাইরের একটা ইনভেস্টর আমাদের দেশকে অন্যদেশগুলোর ওপর কেন বেছে নেবে সেটা আর রকেট সাইন্স নয়। অন্ততঃ আমার কাছে নয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক তর্ক বিতর্ক দেখতে হয় মাঝে মধ্যে। কিছু হলেই একদল আরেকদলকে দেশ বিক্রি করার অভিযোগ করছে। অথচ পৃথিবীব্যাপী দেশগুলো নিজেদেরকে কিভাবে একে অন্যের কাছে বেচবে সেটা নিয়ে চলছে হাজারো স্ট্রাটেজি। দেশ বেঁচতে পারাটা অন্য ধরনের স্কিল।

৪১০.

আফ্রিকার দেশগুলো কিভাবে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সগুলোতে নিজেদের বিক্রি করছে সেটা দেখলে চোখ উঠবে কপালে। একেকটা দেশের ব্র্যান্ডিং দেখলে মনে হয় একেকটা ব্যবস্যার স্বর্গ। কথায় চিড়ে ভেঁজে না। ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে বড় বক্তিমা দিলেন ওই দেশে ‘ইনভেস্ট’ করার জন্য – তাতেই টাকা নিয়ে ছুটবে না ইনভেস্টররা। সবার কষ্টার্জিত টাকা। এটা নিয়ে হয় মিলিয়ন ডলারের গবেষণা। যারা গবেষণা করেন তারা অনেকেই কথা বলেছেন আমার সাথে। প্রশ্নের ধরন দেখেই মাথা গেছে ঘুরে। কোথায় আছি আমরা? এতো খুঁটিনাটি জানতে হয় দেশকে বেঁচতে? কতটা ‘প্যাশনেট’ হলে এদেরকে আনা যায় একটা দেশে?

৪১১.

উদাহরন দেবো একটা? ধরে নিন আমি বাইরের একজন ইনভেস্টর। ঢাকায় আসার আগে তিনটা রিপোর্ট নিয়ে বসবো সবার আগে। কনসালটিং ফার্ম নিয়োগ দেবার আগ মুহুর্তে। বলতে পারেন এগুলোই এফডিআই’র টুলকিট। আমার ধারণা, অনেকেই বলবেন এটা।

ডুইং বিজনেস, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের রিপোর্ট, কোন দেশ কতটা ব্যবস্যাবান্ধব

ডুইং বিজনেস, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের রিপোর্ট, কোন দেশ কতটা ব্যবস্যাবান্ধব তার রাঙ্কিং দেয়া আছে এখানে

ডুইং বিজনেস, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ভয়াবহ রিপোর্ট একটা। কোন দেশের কোন শহর কতটা ব্যবস্যাবান্ধব সেটার লিস্টি করে এই রিপোর্টটা। একশো নব্বইটার মতো দেশের মধ্যে ছোট থেকে মাঝারি ব্যবস্যার লাইসেন্স পাওয়া থেকে শুরু করে কে কতো স্বল্প সময়ে ব্যবস্যা শুরু করতে পারে সেটার একটা বিশাল রাঙ্কিং। বিদ্যুতের লাইন, কন্ট্রাক্ট এগ্রিমেন্ট অথবা ঋণ পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিবন্ধনের জন্য কোন দেশে কতদিন লাগে তার সব গল্প দেয়া আছে ওখানে। ‘রাজুক’ থেকে অনুমতি পাবার দিনক্ষণ আর সম্পত্তির হস্তান্তরের সময়কালও এই রিপোর্টকে ‘ইমপ্যাক্টেড’ করেছে। দেশগুলোর সীমান্তের এপার থেকে ওপারে ব্যবস্যা শুরু করা নিয়েও আছে রাঙ্কিং! এই রাঙ্কিংগুলো নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে চলছে অলিখিত যুদ্ধ। কোন দেশের নীতিমালা কতটা ব্যবস্যাবান্ধব সেটার বেঞ্চমার্কিং নিয়ে একেক দেশ ফেলে দিচ্ছে অন্যদেরকে – বছরের মাথায়। অনেকটা নিঃশব্দেই। আর এটাই স্নায়ুযুদ্ধ।

৪১২.

ডুইং বিজনেস রিপোর্টটা মূলতঃ কাজ করেছে দেশীয় ব্যবস্যা নিয়ে। আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশীয় ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ না করতে পারলে পুরো অর্থনীতিতে নামে ধ্বস। আর একারণেই ‘এসএমই’ মানে স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজগুলোকে ওঠানোর জন্য মুখিয়ে আছে দেশগুলো। ‘টাকা লাগলে নাও, নীতিমালাতে কোথায় ছাড় দিতে হবে বল আমাদের, করে দিচ্ছি এখুনি’ বলছেন দেশগুলোর নীতিনির্ধারকরা! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশাল অর্থনৈতিক মন্দায় দাড়িয়েছিল এই ‘এসএমই’ অংশ। জার্মানি এখনো দাড়িয়ে আছে এই ‘এসএমই’ হাই-প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রির ওপর। দেশীয় কোম্পানিগুলোর সমস্যা বুঝতে হবে আগে। বাইরের ইনভেস্টররা আগেই জানতে চান দেশীয় ব্যবস্যার ধরন। নিজেদের পরিচিত মানুষের মধ্যে যদি ব্যবস্যা না করতে পারে তাহলে অজানা মানুষ এসে কি করবে এখানে? শিক্ষিত গ্রাজুয়েটদের মধ্যে ৪৭ শতাংশই বেকার, চাকরির পেছনে না দৌড়ে কোম্পানি খুলতে প্রণোদনা দিতে হবে নীতিনির্ধারকদের। আর সেকাজটি করতে চেষ্টা করেছি এই ডেস্কে বসে। খোল কোম্পানি আর নিয়ে যাও সার্ভিস এপ্রুভাল! সবকিছুর যে সনদ লাগবে তাও নয়, উদ্ভাবনা আগে!

৪১৩.

কি নেই এই রিপোর্টটাতে? পুরো ‘বিনিয়োগ আবহাওয়া’ দেয়া আছে ওর মধ্যে। শীর্ষস্থান ধরে আছে কে বলুনতো? এ বছরে? ঠিক বলেছেন, সিঙ্গাপুর। যাদের খাবার পানিটাও কিনে খেতে হয় পাশের দেশ থেকে তাদের নীতিমালা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার মতো বিলাসিতা সাঁজে না। সাগর সেঁচে যারা প্রতিনিয়ত মাথা গোজার জমি উদ্ধার করে তাদের আর যাই হোক ‘দক্ষ’ না হয়ে উপায় নেই। যাই কাজ করি না কেন অফিসে – আমাদের রাঙ্কিংটা ভাসে চোখের সামনে। সবসময়। সেই দুহাজার সাত থেকেই। বিশ্বাস হচ্ছে না? চেখে দেখুন নিজেই এখানে। রিপোর্টটা লাগবে? দুহাজার চৌদ্দেরটা? সময় আর সুযোগ পেলে রিপোর্ট বানাতাম একটা, আমাদের টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর জন্য। তৈরী করতে গিয়ে বুঝতাম কোথায় কোথায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এখনো।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভ রিপোর্ট’টা দেশগুলো কে কতটুকু প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে সেটা দেখায়

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভ রিপোর্ট’টা দেশগুলো কে কতটুকু প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে সেটা দেখায়

৪১৪.

দ্বিতীয় রিপোর্টটা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের। ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভ রিপোর্ট’টা নামেই বলে দেয় দেশগুলো কে কতটুকু প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে। অন্যদের থেকে। ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস’টা নির্ভর করছে তিনটা জিনিসের ওপর। প্রথমটা হচ্ছে একটা দেশে যেটা না থাকলেই নয় সেরকম কিছু দরকারী স্তম্ভ। পরেরটা নির্ভর করছে দক্ষতার ওপর। উদ্ভাবনা আর সফিস্টিকেশন জিনিসগুলো আসছে শেষে। দরকারী অংশে এসেছে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর ঠিকমতো কাজ করার ব্যাপারে। সেভাবে আমাদের অফিসটাও একটা প্রতিষ্ঠান।

৪১৫.

ইনফ্রাস্ট্রাকচার, বড় আকারের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে চলমান রাখার ইনডেক্সও আছে এরমধ্যে। জনগনের চিকিত্‍সাসেবা আর প্রাথমিক শিক্ষার রাঙ্কিংয়ে দেশগুলো কতটুকু প্রতিযোগিতায় আসছে সেটাও এই রিপোর্টের অন্তর্ভুক্ত। দক্ষতার সাব-ইনডেক্সে উচ্চতর শিক্ষা, পণ্য ও শ্রম বাজার কতটুকু প্রতিযোগিতাপূর্ণ আর সেটার বাজার কতো বড় তার একটা পরিমাপ করা হয় এখানে। পুঁজিবাজারে টাকার ফ্লো আর কতটুকু টেকনোলজিক্যাল রেডিনেস আছে দেশটার তা এসেছে রাঙ্কিংয়ে। বিজনেস ‘সফিস্টিকেশন’ আর উদ্ভাবনা ওই দেশে কতটুকু কাজে লাগাতে পারবে সেটা দেখে তো ইনভেস্টর আসবে, তাইনা? রিপোর্টটা দরকার? পুরোটা?

৪১৬.

তিন নম্বর রিপোর্টটা আমার সবচেয়ে প্রিয়। বুকের ভেতরে রাখার মতো রিপোর্ট। ‘স্বাধীনতা’র ইনডেক্স। কতোটা স্বাধীন আপনি? আপনার নিজের দেশে? স্বাধীন দেশে? এটা নিয়ে আসবো সামনে।

বিনিয়োগকারীরা টাকা ঢালার আগে দেশগুলোর ওই সংখ্যাগুলোর দিকে তাকান বার বার। আমিও তাকাতাম। এখন বুঝি কেন কমছে এফডিআই ফ্লো। একটা প্রসাশনিক অনুমোদন পেতে লাগে কতদিন – ওই দেশটাতে, তার জন্য খরচ কতো, অনলাইনে, নাকি ঘুরতে হবে টেবিলে টেবিলে এর সবকিছুর আউটকাম চলে এসেছে এই রিপোর্টগুলোতে। ব্যবস্যা শুরু করতে কতগুলো প্রসিডিউরের মধ্যে যেতে হবে সেটা কমাতে চেস্টা করেছি আমার প্রান্ত থেকে। আমার টেবিল থেকে। স্বচ্ছতা বাড়ানো চেষ্টা করেছি মুখে কিছু না রেখে লিখে রেখে যেতে। মানুষের মাথায় আর লেখা ‘ডিরেক্টিভে’র পার্থক্য বিস্তর। মাথায় থাকলে পাল্টে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর সেটার ‘কমপ্লায়েন্স কস্ট’ অনেক বেশি। চেষ্টা করেছি ‘প্রসেস’ তৈরী করে দিতে, চমত্‍কার কাজ হয়েছেও অনেক ক্ষেত্রে। সহজাত কারণে মানুষ আর অটোমেশন একসাথে না গেলেও এটাকে সমার্থক শব্দ করতে সাহায্য চেয়েছি সহকর্মীদের। হবে সেটাও।

নতুন প্রজন্ম না ওরা? অগাধ বিশ্বাস আছে ওদের ওপরে।

শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

But the real way to get happiness is by giving out happiness to other people. Try and leave this world a little better than you found it, and when your turn comes to die you can die happy in feeling that at any rate you have not wasted your time but have done your best.

– Last message to scouts, Robert Baden-Powell

৩৮৬.

স্বপ্ন দেখানোর কোম্পানির ব্লু-প্রিন্ট করতে গিয়ে পড়লাম বিপদে। ভালো কথা, স্বপ্ন দেখাবো – কিন্তু কি ধরনের স্বপ্ন? চিন্তা করতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে উঠলাম। আমার স্বপ্নটা কি সেটা বুঝতে বুঝতে বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেল। আমার ধারণা, যারা উদ্যোগতা তাদের স্বপ্ন পূরণ হয় তাড়াতাড়ি। নিজের বস নিজে হলে স্বপ্ন পূরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফিরে আসি নিজের কথায়। স্বপ্ন দেখানোর পাগলামিটা কোথায় পেলাম থেকে সেটা নিয়ে কম প্রশ্নের সন্মুখীন হইনি আমি। ভালো কথা, পাল্টা প্রশ্ন করি আপনাকে? আপনি কি চেয়েছেন জীবনে? আপনার স্বপ্নটা পূরণ করতে পেরেছেন কি? আবারো প্রশ্ন করছি আপনার চূড়ান্ত স্বপ্নের ব্যাপারে। মানুষের অনেকগুলো মধ্যম পর্যায়ের স্বপ্ন থাকতে পারে, তবে আপনি কি হতে চেয়েছিলেন শেষ অবধি? উত্তরটার জন্য আপনাকে কিছু ইনপুট দেই বরং।

৩৮৭.

দিনের শেষে কি হতে চান আপনি? একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো ছেলে/মেয়ে, নিজের বাচ্চাদের জন্য ভালো বাবা/মা? অথবা সহৃদয়বান সহকর্মী যিনি অন্যদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেন? অথবা এমন মানুষ যিনি অন্যদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিলিয়ে দেন সারাটি জীবন? কি হতে চেয়েছিলেন জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত? আরো একটা ইনপুট নিয়ে আসি এখানে। মনে করুন তো শেষ কবে গিয়েছিলেন আপনার প্রিয় কারো জানাজাতে? অথবা তার বাসায় উনার মৃত্যুর পর? কি হয়েছিলো ওখানে? সবার মুখে কি দেখতে পেয়েছিলেন? সবাই কি কথা বলছিলেন উনাকে নিয়ে? কেমন মানুষ এসেছিলেন ওনার মৃত্যুর পর? পত্রিকায় উনার ব্যাপারে কি লেখা হয়েছিলো?

৩৮৮.

যুদ্ধ ঠিক যেদিন শুরু হবে অর্থাৎ আক্রমনের ওই দিনটাকে আমরা বলি ‘ডি’ ডে। ওই ‘ডি’ডে টাকে শূন্য ধরে ডি-২ বা ডি-৫ দিন ধরে থাকি প্রস্তুতির সুবিধার্থে। মানে, ডি-৩ দিবসে কি করবেন সেটারও প্ল্যান করতে হয় আগেভাগে। এটা এক ধরনের ব্যাক ক্যালকুলেশন। প্রিয়জনের মুখটা শেষবারের মতো দেখতে যেয়ে চিন্তা করুন ওখানে নিজের মুখটাকে। ধরে নিন এটা আমার আপনার মৃত্যুর পরের ঘটনা। ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে নিলাম আমার আপনার জীবনটাকে। ডি ডে, মানে ডি শূন্য দিবস। যেদিন মারা গেলাম আমরা। চিন্তা করুন ডি+১ আর তার পরবর্তী দিনগুলোকে। আপনার জানাজার সময় কেমন মানুষ এসেছিলো? তারা সবাই কতটুকু ‘ইমপ্যাক্টেড’? আপনার কথা স্বরণ করতে যেয়ে কি বলছিলেন তারা? ওখানে বসে চিন্তা করুন আপনার আত্মীয়দের কথা? কি করছিলেন তারা? আপনার স্বামী/স্ত্রীর কি অবস্থা? আপনার ছেলেমেয়েগুলোর? আপনার বন্ধুদের আলোচনা? কেমন ছিলেন উনাদের চোখে আপনি? আমার ধারনায় ওটাই হচ্ছে সত্যিকারের ইভালুয়েশন। সৃষ্টিকর্তাও জানতে চান আপনি আমি কেমন ছিলাম? বিশেষ করে অন্যের চোখে। ওরকম একটা প্রশ্ন করা হয় জানাজাতে।

৩৮৯.

এখন আসি ব্যাক ক্যালকুলেশনে। বাংলাদেশের লাইফ এক্সপেকটেন্সীতে বাঁচি আমরা পঁচিশ-তিরিশ হাজার দিন। হিসেবের সুবিধার্থে ডি-১৫০০০ দিবস ধরে নিলাম আজ। স্বপ্ন পূরণের ব্লু-প্রিন্ট করেছি কি আমরা? আপনি যা হতে চান অথবা যা করতে চান তার ব্যাপারে কি করেছেন আপনি? হাজারো বই পড়ছি বলে অনেকগুলো ধারণাই মিলে যাচ্ছে একে অপরের সাথে। মনে আছে তো – স্টিভেন কোভি’র দ্বিতীয় অভ্যাসটার কথা? শুরু করতে হবে শেষের চিন্তাটা মাথায় নিয়ে। যাই শুরু করছেন না কেন আজ, শেষটা থাকে যেনো মাথায়। তাহলেই কিন্তু পৌছাতে পারবো আমাদের স্বপ্নে। নেপোলিয়ান হিলের কথাটাতে আসি ফিরে। মানুষ যা চিন্তা করতে পারে, চাইলে সে সেটা পেতে পারে। মানে আমি আজ যা হতে চাই বা পেতে চাই সেটা মস্তিস্কে ‘পারসিভ’ করলে সেটা পাওয়া সম্ভব। রন্ডা বার্নের ‘সিক্রেট’ ভিডিওটা দেখেছেন কি? আপনি যা চাইবেন পুরো পৃথিবীর সমস্ত শক্তি জড়ো হয়ে আপনাকে দিতে চাইবে, কিন্তু আপনাকে চাইতে হবে আগে। আমি আপনি কি চাই সেটা নিয়ে বসেছি কখনো? নিভৃতে। কথা বলেছি কি মনের মন্দিরে? লিখেছি কোথাও? লিখি তো বাজারের লিস্টিও!

৩৯০.

অভিজ্ঞতা বলে, প্রতিটা জিনিস তৈরী হয় দুবার। হ্যা, পৃথিবীর প্রতিটা জিনিস। মাথায় তৈরী হয় আগে, বাস্তবে তৈরী হয় ঠিকমতো চাইলে। আমাদের অফিসটার কথাই ধরুন। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট বিল্ডিংয়ে এর অবস্থান। চমত্কার বিল্ডিং। আজ এ বিল্ডিংটা দাঁড়িয়ে আছে বাস্তবে, কারণ কেউ না কেউ ওই খালি জায়গাটার পাশে দাঁড়িয়ে পুরো বিল্ডিংটা দেখেছিলেন আগে। মাথা উচু করে পনেরো তলা পর্যন্তও গুনেছিলেন উনি! এই বাতাসেই! ফ্লোর বাই ফ্লোর। এতো নিঁখুতভাবে যে বিল্ডিংটার কাঁচের প্রতিফলিত আলোর জন্য মাথা নুইয়ে নিয়েছিলেন উনি। স্বপ্নচারী মানুষ বলে কথা। অবিশ্বাসী মানুষেরও অভাব নেই। স্বপ্নে দেখেছেন নাকি প্রশ্ন করেছিলেন কেউ কেউ। তাদের জন্য আঁকা হয়েছিলো পুরো বিল্ডিংটা। বিল্ডিংটা তো আর হঠাত্‍ করে বানানো হয়নি। আবার হঠাত্‍ করে কেউ তো ইট সুরকি নিয়ে হাজির হননি খালি জায়গাটায়। বাস্তবে আসার আগেই স্বপ্ন দেখেছেন বছরের পর বছর ওই বিল্ডিংটা নিয়ে। বুঝতে চেয়েছেন কি চান তারা। আর আমাদের জীবন নিয়ে কি চাই সেটা নিয়ে চিন্তা করেছি কখনো? কতটুকু সময় দিয়েছি ভাবার জন্য – সত্যিকারের কি চাই আমরা?

৩৯১.

নিয়তির পরিহাসের মতো শোনালেও অফিসের কাজ বা একটা প্রজেক্টের পেছনে যতটা সময় দেই সে তুলনায় নিজের জীবনের প্রজেক্টে সময় দেয়া হয় না কখনো। আমি কি করতে ভালবাসি মানে সত্যিকারের ভালবাসার জিনিসটা উপেক্ষিত হয়ে থাকে সারাজীবন। অফিসের প্রজেক্টের কাজে প্রতিটা মাইলস্টোন লিখে রাখলেও নিজে কি চাই এ জীবন থেকে তা কি লিখে রাখিনি কখনো। সর্বোচ্চ চাওয়া। আমিও লিখিনি চল্লিশ বছরের আগ পর্যন্ত। আরো ভয়ংকর একটা কথা বলি? আমাদের অনেকেই বছর ধরে ভ্যাকেশনে কোথায় কোথায় যাবেন আর কি কি করবেন প্ল্যান করেন সেটার। সাময়িক মুক্তি পাবার জন্য, এই দুঃসহ জীবন থেকে। অথচঃ বর্তমান জীবনটাকে সুন্দর করার ব্যাপারে একটা প্ল্যান করতে আমাদের অনীহা অনেক। বিদেশে যেয়ে তাদের স্কাই ট্রেন দেখে আন্দোলিত হলেও দেশে এসে তাকিয়ে থাকি সরকারের দিকে। স্বপ্ন দেখতেও ভয় পাই ওটা নিয়ে। থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশের মানুষেরা নিজেরাই টাকা তুলে বিশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরী করছেন সরকারের দিকে না তাকিয়ে থেকে। মনে চাইলো তো নতুন একটা মোবাইল কোম্পানিই খুলে ফেললো সবাই মিলে। ওটার গল্প মানে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড নিয়ে আসবো সামনে। তবে নিজের মতো করে কিসে আমাদের পরিবেশটাকে সুন্দর করা যাবে সেটার একটা ব্লু-প্রিন্ট তৈরী করা গেলে দেশটাকে নিয়ে যেতে পারবো অন্য মাত্রায়। তার জন্য জানতে হবে নিজেদের সত্যিকারের চাওয়াটাকে। তাহলে পালানোর ব্লু-প্রিন্ট করতে হতো না বছর ধরে।

৩৯২.

স্টিভ চ্যান্ডলারের একটা বেস্টসেলার পড়ছিলাম কয়েকদিন ধরে। সাধারণ নাম, তবে বিভ্রান্তকর টাইটেল, না জানলে কিনতাম না কখনই। আমাজনে রিভিউ পড়ে হুঁশ হলো আমার। চাইই আমার বইটা। থাকি ঢাকায়। একদিন স্বপ্নেও দেখলাম বইয়ের কভারটা। আমার কোলে। চাওয়ার মাত্রাটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবার আগেই চলে এলো বইটা। একেবারে আমার টেবিলে। চোরাই বই চেষ্টা করি না পড়ার জন্য। পড়লেও পরে বইটা কিনে নেই নিজের জন্য। আমি চুরি করলে আমার বই কিনবে কে? চ্যান্ডলারের কথা একটাই। দুনিয়া থেকে যাবার আগে একটা প্রশ্ন আসবে কিন্তু বারে বারে। কি পরিবর্তন করেছি সবার জন্য? কি ভালো হয়েছে আমার এই দুনিয়াতে আসাতে? উত্তরটা কিন্তু ছোট, কতটুকু দিতে পেরেছি দুনিয়াকে।

৩৯৩.

স্কাউটের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রবার্ট বেইডেন পাওয়েলের কথা ওই একই সুরে বাধা। স্কাউটদের জন্য লেখা শেষ চিঠিটা মুগ্ধ করবে সবাইকে। কতোটুকু ‘এনলাইটেনড’ হলে একজন মানুষ তার ভ্রমণের সময় সাথে রাখতেন চিঠি কয়েকটা। তার একটা ছিলো মার্ক করা – ‘আমার মৃত্যুর পর’। স্ট্যানফোর্ডে দেয়া স্টিভ জবসের তিন নম্বর গল্পটা ছিলো মৃত্যুর ওপর। আমার মতে, সেরা অংশ। মাসলো’র তত্ত্ব অনুযায়ী এরা পৌঁছে গেছে ‘সেলফ অ্যাকচুয়ালাইজেশন’ পর্বে, তা না হলে মেলিন্ডা এন্ড গেটস ফাউন্ডেশন বিলিয়ন ডলার ঢালছে কেন মানব কল্যানে? সেরা অংশের ভাবটা তুলে আনলে ‘কনটেক্সট’টা বাদ যেতো চলে। সেকারণেই – সেরা অংশের আমার সেরা অংশটা হুবহু তুলে দিচ্ছি এখানে।

Your time is limited, so don’t waste it living someone else’s life. Don’t be trapped by dogma — which is living with the results of other people’s thinking. Don’t let the noise of others’ opinions drown out your own inner voice. And most important, have the courage to follow your heart and intuition. They somehow already know what you truly want to become. Everything else is secondary.

৩৯৪.

আমাদের সমস্যাটা কোথায়? স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই কেন আমরা? কেন জানি না – আমরা কি চাই জীবনে? স্বপ্ন দেখানোর কোম্পানির বিজনেস কেস না থাকলেও সাহস পাচ্ছি কোথা থেকে? নিজের ভয় কাটানোর গল্প নিয়ে আসছি সামনে।

বিদায় নেবো একটা মিউজিক ভিডিও দিয়ে। কেনী চেজনী’র এই গানটা মনে করিয়ে দেয় ক্যাডেট কলেজের এথলেটিক প্রতিযোগিতাগুলোর কথা। পুরো গানটা না শুনতে পারলেও পাঁচ মিনিট পঞ্চাশ সেকেন্ড থেকে মিস করবেন না, অনুগ্রহ করে। স্বপ্ন দেখবোই আমরা! থাকুন সাথে।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

1. You cannot change your destination overnight, but you can change your direction overnight.

2. Formal education will make you a living; self-education will make you a fortune.

― Jim Rohn

৩৮০.

বিরানব্বইয়ের গল্প। মানে উনিশশো বিরানব্বই। প্রথম পোস্টিং সৈয়দপুরে। চমত্কার সেনানিবাস। খোলামেলা। শহরটাও বেশ দুরে। অফিসার্স মেসটাও খালি খালি। কোর্সমেট চারজন থাকলেও অফিসেই কাটতো ব্যস্ত সময় আমাদের। মজার ব্যাপার, আমার অফিসের ওপর তলায় ছিলো একটা পিসি। ওই সময়ের তুলনায় অনেক অনেক এক্সেসিবল! কিসের এয়ারকন্ডিশনিং, কিসের কি? কাজ করার সুযোগ পেত সবাই। উদার ধ্যানধারণার সিনিয়র থাকলে যা হয় আর কি? হাইয়ুন্ডাইয়ের একটা টুএইটসিক্স। ও সময়ের জন্য আধুনিক না হলে মোডেম থাকে কি করে? তাও আবার ভেতরের স্লটে। ডস মেশিন, ‘ডাব্লিউপি’ চাপলে চালু হতো ওসময়কারের সেরা ওয়ার্ড প্রসেসর।

৩৮১.

ছোটবেলায় কমোডর ১২৮ দিয়ে হাত পাকালেও পুরো একটা ইন্টেল মেশিনের অধিগ্রহণ এই প্রথম। তখন প্রেজেন্টেশনের সর্বোচ্চমান হচ্ছে গিয়ে স্লাইড প্রজেক্টর। সাধারণ মানের প্রেজেন্টেশন মানে ওএইচপি। ওভার হেড প্রজেকশন, ওএইচপি ট্রান্সপারেন্সি বানানোর ঝক্কি থেকে বাচতে কান খোলা রাখলাম নতুন কিছুর জন্য। মোবাইলের যুগ নয় তখন। তবুও কিভাবে যেন নতুন একটা গল্প শুনলাম। ঢাকায় ছুটিতে এলে গাঁটের পয়সা ফেলে ফ্লপি ড্রাইভে করে নিয়ে এলাম হার্ভার্ড গ্রাফিক্সের সফটওয়্যারটা। ইংরেজি অক্ষরে নতুন ক্যালিগ্রাফি – ভালোই লাগছিলো। পাল্টাবার গল্পের শুরুটা ওখানে।

৩৮২.

জিম রনের একটা অডিওবুক শুনেছিলাম কোথাও। নামের বানান কিন্তু আর-ও-এইচ-এন। ‘লাইফ চেঞ্জিং ডে’র একটা ব্যাপার ছিলো ওখানে। আমার ধারণা, জিম রন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ‘কনফিডেন্ট’ মোটিভেশনাল স্পিকার, যিনি জানেন কিভাবে আর কোথায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়। সময়জ্ঞান অসাধারণ। তার পাল্টানোর গল্পটা অসাধারণ। পঁচিশ বছর বয়স। কলেজে ঢুকতে পারেন নি খরচের কারণে। ফাইফরমাস খাটছেন ছোট একটা কোম্পানিতে। সঙ্গে রয়েছে কিন্তু তার পরিবার। টেনেটুনে চলছে সংসার।

৩৮৩.

একদিন বাসায় ছিলেন আমাদের রন সাহেব। গার্লসস্কাউটের একটা মেয়ে এসে চমত্কার কারিশমা দেখালো কিছুক্ষণ। আমাদের দেশের রাস্তায় ছোটখাটো জাদু দেখিয়ে বা বাসে গান করে টাকা চাওয়ার মতো। প্রেজেন্টেশনটার পর হাসি দিয়ে রনকে কিছু বিস্কিট কিনতে অনুরোধ বললো বরাবরের মতো। গার্লসস্কাউটদের বিস্কিট বিক্রির টাকাটা চলে যেতো জনস্বার্থের কাজে। দু ডলার চাইল বিস্কিটের প্যাকেটটার জন্য। ওই টাকাটাও ছিলো না তখন রনের কাছে। কি করবে সে? গার্লসস্কাউটের এতো বড় প্রেজেন্টেশন দেখার পর ওই দু ডলার না থাকার ব্যাপারটা কিভাবে বলবেন রন। সিদ্ধান্ত নিলেন মিথ্যা বলার। দেখো প্রচুর গার্লসস্কাউট কুকি পড়ে আছে বাসায়। অনেকেই এসে বিক্রি করেছে গত কয়েকদিনে। মেয়েটা বরং ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল।

৩৮৪.

মেয়েটা চলে যাবার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন জিম রন। দু ডলারও দিতে পারলেন না মেয়েটাকে। তাহলে কি করছেন ওই বয়সে। আর নয় এ জীবন! ওই দিনটাই ছিলো রনের ‘লাইফ চেঞ্জিং ডে’। মানে পাল্টে যাবার দিন। আসলে মানুষ পাল্টায় অনেক দিন ধরে। তবে সেই পাল্টানোর শুরুটা কিন্তু কোন একটা কিছুর উপলক্ষ্য ধরে। আজ আপনি যদি মনে মনে ঠিক করে নেন যে লিখবেন একটা নভেল, তাহলে শুরু করছেন সেটা কবে? অথবা শরীরের যত্ন নেবেন – শুরু করবেন দৌড়, সেটা শুরু হবে কবে থেকে? আজ থেকে আপনি পাঁচ বা দশ বছর পর কোথায় পৌঁছুবেন সেটা ঠিক করতে হবে ওই একটা দিন থেকে। ধারণা করলেন পাঁচ বছর পর পাঁচ কোটি টাকার মালিক হবেন আপনি, সেটার ব্লু-প্রিন্ট শুরু করছেন কবে থেকে? আগে মানুষ পথব্রজে পাড়ি দিতেন দুনিয়া, উত্তর মেরু না দক্ষিন মেরু যাবেন সেটার সিদ্ধান্ত নিতে নিতে হবে ওই পাঁচ বছর আগে। কারণ, আজ সিদ্ধান্ত নিলেই না আপনি পাঁচ বছর পর পৌছাবেন ওই উত্তর বা দক্ষিন মেরুতে। মোদ্দাকথা সবকিছুর শুরুতে থাকতে হবে একটা ‘লাইফ চেঞ্জিং ডে’ বা পাল্টে যাবার দিন। বিশেষ একটা মাহেন্দ্রক্ষণ।

৩৮৫.

আমারটাও শুরু হয়েছিলো ওই হার্ভার্ড গ্রাফিক্স দিয়ে। নিতান্তই একটা প্রেজেন্টেশন ইউটিলিটি, কিন্তু বন্দুক চালানোর পাশাপাশি যুক্ত করেছে বক্তৃতা লেখক হিসেবে আমাকে। প্রেজেন্টেশন বানানোর ‘ক্যারিয়ার’ দিয়ে শুরু হলেও বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে এসেছে বক্তৃতা লেখা। কার জন্য লিখিনি? এক সময়ে এলো নিজের বক্তৃতার অংশে। বস বললেন, আমি পারবো না যেতে, তুমি যাও বরং! কে লিখবে সেটা? নিজেরটা লিখতে গিয়ে এর মর্মার্থটা বুঝে এলো। ভীষণ শক্তিশালী মাধ্যম। পাল্টে দেয়া যায় জনপদকেই! আগে একটা স্কিলসেট বেচে চালানো যেতো সারাটা জীবন। এখন একেকটা স্কিল মানে একেক কোটি টাকা। নখদর্পনে একেকটা ভাষা মানে একেক কোটি টাকা। ভুল বুঝবেন না, আপনার মূল্য হচ্ছে আপনি বাজারে কতটা মুল্য যোগ করতে পারছেন সেটার ওপর। আর সেকারণে ঘন্টা আনুপাতিক হারে আমি ‘শ’ খানেক টাকা আয় করলেও আপনি যোগ করছেন লাখ টাকার মতো। ‘স্ব-শিক্ষিত’ হবার গল্প নিয়ে আসছি সামনে।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Leave this world a little better than you found it.

Baden-Powell’s Last Message (1945)

২৬৯.

রাস্তাটার পাশে বসেই ভিক্ষা করছিলো মানুষটা। তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে। একদিন ওই ভিক্ষুকটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো পথচারী একজন। বরাবরের মতো পুরনো বেসবল ক্যাপটা বাড়িয়ে দিলো ভিক্ষুক।

খুচরো কিছু হবে ভাই?

যান্ত্রিক স্বর ভিক্ষুকের।

কিছু দেবার নেই যে আমার কাছে।

পথচারীর উত্তর। উত্তরেই শেষ হলো না তার কথা।

কিসের ওপর বসে আছ ভাই? পথচারীর প্রশ্ন।

‘কিছু না’ ভিক্ষুকের উত্তর, ‘পুরনো একটা বাক্স। যতদুর মনে পড়ে, এটার ওপরে বসেই আছি এতগুলো বছর।’

কখনো দেখেছ ভেতরে? পথচারীর উত্সুক প্রশ্ন।

‘না’, ভিক্ষুকের উত্তর, ‘দেখার দরকার আছে কি? কিছু নেই ভেতরে।’

দেখোই না একবার? পথচারীর উত্তর।

কিছুটা নিমরাজি হয়েই বাক্সটা ওল্টালো সে। উল্টিয়েই পাথর বনে গেল। বিশ্বাস করতে পারছে না সে নিজের চোখকেই। বাক্সটা সোনায় ভরা।

৩৭০.

আমি হচ্ছি গিয়ে সেই পথচারী। দেবার কিছু নেই আমার আপনাদের। একটা কথাই বলতে চাচ্ছি শুধু। দেখুন ভেতরে। বাক্সে নয়। দুরে কোথাও নয়। আপনার একদম কাছের জিনিসে। দেখুন নিজের ভেতরে।

আমি তো ভিক্ষুক নই, আপনার উত্তর।

ঠিকই বলেছেন আপনি। যারা চিনতে পারেননি নিজেকে, নিজেকে হারিয়েছেন বার বার – পৃথিবীর ইঁদুর দৌড়ে, তারাই সত্যিকারের ভিক্ষুক। যতই টাকা থাকুক না তার। মরীচিকার পেছনে ছুটছে সে – সুখ খুঁজছে সে ভুল জায়গায়। নিজেকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি একবারও। কিসে সুখী আমি?

৩৭১.

গল্পটা আমার নয়। হ্যা। ঠিক ধরেছেন। বরাবরের মতো নতুন বই হাতে আমার। নাম হচ্ছে ‘পাওয়ার অফ নাউ’; অন্য ধরনের বই। নিজেকে খোঁজার বই। বইয়ের শুরুটা হয়েছে চমত্কার একটা ‘স্টোরিটেলিং’য়ের মধ্য দিয়ে। সে কাহিনী হবে আরেক দিন। আমার সমস্যা অন্যখানে। বই না পড়লেই মাথা ধরে থাকে আমার। বই পড়ার সময় একটা ‘ইলুমিনেশন’ মানে মস্তিকের ঝিল্লিতে এক ধরনের সুখানুভূতি তৈরী হয়। বই শেষ করার পরও কেন জানি ওই অনুভুতিটা থাকে আরো দিন কয়েক। তারপর আবার ধরতে থাকে মাথা। খুঁজতে বের হতে হয় নতুন বইয়ের। চেষ্টা করছি প্রতি সপ্তাহে একটা করে বই পড়ার। বাসা থেকে অফিসে যাওয়া আসায় চলে যায় তিন থেকে চার ঘন্টা। প্রতিদিন। ওটাই ‘ব্লেসিং ইন ডিসগাইজ’। এছাড়াও আছে অডিওবুক।

৩৭২.

টেলিযোগাযোগের মতো একটা ডাইনামিক চাকুরীতে থাকার ফলে ভবিষদ্বাণী করতে হয় সকাল বিকাল। টিয়া পাখির মতো ভারী কার্ডবোর্ড তুলতে না হলেও এই ‘প্রেডিকশন’ আর ‘ফোরকাস্টিং’য়ের মতো জটিল কাজটা করতে খারাপ লাগে না। রোবোটিক মানুষ বলে হয়তোবা। এর মানে, আমার কাজের একটা বড় অংশ হচ্ছে ওই অদৃশ্য ‘ডটেড লাইনে’র ওপর কাজ করা। প্রজেকশন আর ফোরকাস্টিং ব্যাপারটার অনেকটাই আসে হিস্টরিক ডাটা থেকে, সঙ্গে যোগ হয় ভবিষ্যতের ধারণা। নয়েজ থেকে সিগন্যাল বের করার মতো।

৩৭৩.

আসল কথায় আসি। ভুল বকছি হয়তোবা, ঝামেলার মতো মনে হচ্ছে একটা জিনিস। ইদানিং কালের ঘটনা। প্রচুর বই পড়ার কারণে ‘উত্তর’ বের করতে পারছি হিস্টরিক ডাটা ‘কনসাল্ট’ না করেই। লাসভেগাসে জ্যাকপট হিট করার মতো। ভয়েই আছি জিনিসটা নিয়ে। ভবিষ্যত পড়তে পারার কথা নয় এখন, অন্ততঃ এই বয়সে নয়। যাই কাজ করছি তার ওপর পড়ালেখা থাকার কারনে হোক আর অভিজ্ঞতার আলোকে হোক – ডটগুলো যুক্ত করতে পারছি ফর্মুলা ব্যবহার না করেই। প্যাটার্ন ধরে ফেললে যা হয়। যাই দেখি প্রথমেই প্যাটার্ন খুঁজি মনে মনে। যেটা এখনো আসেনি অথবা ধারণা করা হয়নি সেটাও ভেসে আসছে চোখের সামনে। গুগল গ্লাসের মতো। এব্যাপারে লিখেছিলাম একবার

বড় বড় দুরূহ, অসম্ভব জটিল আর লম্বা প্রজেক্টগুলোকে চালানোর জন্য এ কৌশল ছাড়া গতি নেই। প্রথমে প্রজেক্টটাকে ছোট ছোট ভাগে (মাইলস্টোন) ভাগ করে ডিপেন্ডেন্সি দেখে নেয়া হয়। ধরা যাক, বিন্দু ‘ক’ থেকে ‘খ’, ‘গ’ থেকে ‘ঘ’ আর ‘ঘ’ থেকে ‘ঙ’ করতে যে প্রযুক্তি প্রয়োজন তা বর্তমানে উপস্থিত অথবা, সময়ের মধ্যে তৈরী করে নেয়া যাবে। কিন্ত, ‘খ’ থেকে ‘গ’ অংশটা কিভাবে হবে তার সমন্ধে কারো কোনো ধারণাই নেই। প্রজেক্ট শুরু হয়ে যাবে, ‘খ’ থেকে ‘গ’ অংশটা কিভাবে হবে তা বাকি প্রজেক্ট এর গতি কমাবে না। সবসময়ে দেখা যায় (পরীক্ষিত বটে), বাকি অংশগুলো হবার সময় যেহেতু প্রজেক্টটা বের করে নিতেই হবে, অন্য অংশের উপলব্ধিগুলো জড়ো হয়ে অজানা অংশটুকুও বের করে নিয়ে আসে। আমি কি চাই, তা ঠিক মতো পিনপয়েন্ট করে – বিশ্বাস করে লেগে থাকলে তা পাওয়া যাবেই।

৩৭৪.

ফিরে আসি সেথ গোডিংয়ের ‘শিপিং’ এর গল্পে। বই পড়ছি এতো, ফলাফল কোথায় তার? ধরে নিন, পড়লাম হাজার দশেক বই, সেলফ ডেভেলপমেন্ট হলো নিজের। হাজারো সুখানুভূতি হলো মনে। তারপর চলে গেলাম দুনিয়া থেকে একদিন। তাহলে পাল্টালাম কি দুনিয়ার, যাবার আগে? ‘লিভ দিস ওয়ার্ল্ড আ লিটল বেটার দ্যান ইউ ফাউন্ড ইট’ কথাটার কি হবে? স্টিভ জবসের ‘ডেন্টিং দ্য ইউনিভার্স’ কনসেপ্টটা ফেলে রাখার মানে হয় কোনো? বই পড়ার ‘পণ্যরূপ’ মানে প্রোডাক্ট কোথায়?

৩৭৫.

এই তেতাল্লিশ বছর বয়সে এসে বুঝতে পেরেছি কি চাই জীবনে। সত্যিকারের চাওয়া! অন্যের মাধ্যমে চাওয়া না। দেরী হয়েছে হয়তোবা। তবে এগিয়ে আছি অনেকের থেকে। ভুল বুঝবেন না, এখনো অনেকে জানেন না তারা কি চেয়েছেন জীবনে। সত্যিকারে! আর জানতে পারলেও সেটার পেছনে দৌড়ানোর স্পৃহা বা ইচ্ছে হারিয়ে গেছে এর মধ্যে। হাসবেন কিনা জানি না, তবে ‘স্বপ্ন দেখানো’র কোম্পানি খুলতে চাই আমি। লাখো লোকের সাথে হয়েছে পরিচয়। মানুষের সাথে কথা বলার সময় চোখের দিকে তাকাতে পছন্দ করি আমি। ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি পাথরের চোখ দেখতে দেখতে। বাচ্চাদের মতো উত্সুক চোখ কমে যাচ্ছে দিন দিন। নেতিবাচক জিনিসগুলো কুরেকুরে খাচ্ছে আমাদের সবাইকে। ধারণা করছি – আমাদের তৈরী পরিবেশ আর পরিস্থিতির কারণে ‘স্বপ্ন’ দেখতে ভয় পাই আমরা – নিজেরাই। ‘দ্য লাইফ অফ পাই’য়ে উড়ুক্কু মাছ নিয়ে চিন্তা করার মতো সাহস দরকার আমাদের সন্তানদের। মনটা ছোট হয়ে থাকে সবসময়। স্বপ্ন আর কল্পনা করতে পাই ভয়। অসম্ভব ভয়। কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের দেখাতে চাই স্বপ্ন। ওই সময়ে হারানোর থাকে না কিছু। বাবা মার হোটেলে থেকে স্বপ্ন না দেখতে পারলে আর দেখা হবে না কখনো! আমিও পেতাম ভয়, সেটা কেঁটে গেছে গত সাত বছরে।

৩৭৬.

আমাদের লাইফ এক্সপেকটেন্সী’র হার ধরলে বাঁচি আমরা সত্তুরের মতো। গড়ে পঁচিশ হাজার দিন। কলেজ পড়ুয়ারা পার করে ফেলেছে দশ হাজার দিন। ওর মধ্যে যদি স্বপ্ন না দেখতে পারে তাহলে সপ্ন সফল করবে কবে? এতো দিনের পড়াশোনায় যা বুঝেছি – মানুষ যা কল্পনা করতে পারে সেটাকে সম্ভব করতে পারে একমাত্র মানুষই। ‘বুর্জ খলিফা’কে বানানোর আগে কেউ একজন কল্পনাতে দেখেছেন বলে আজকে এটা পৃথিবীর সর্বোচ্চ ‘মানুষের তৈরী’ স্ট্রাকচার। পাগলের প্রলাপ বলাতে হাতে এঁকে দেখিয়েছেন সবাইকে। একমাত্র মানুষই পারে কল্পনার বাস্তবরূপ দিতে। ডিসকভারি চ্যানেলে দেখানো ‘মেগাস্ট্রাকচার’গুলো তো অন্যগ্রহের মানুষ তৈরী করে দিয়ে যায়নি আর। তৈরী করেছে এই মানুষই। আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষ, তবে কিছুটা পাগল কিসিমের। সেই অবাস্তববাদীদের কেউ ওই ‘অসম্ভব’ স্ট্রাকচারটা কল্পনা করেছিল বটে। আমরা পাগলামি বলি যাকে। ওই ‘পাগল’দের ভাষায় সেটাই সবকিছু, শয়নে স্বপনে। সেখানে আমরা স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। সেই স্বপ্ন দেখার প্রশিক্ষণ দেবো সবাইকে। ফাইনাল প্রোডাক্টের আগে একটা প্রি-প্রোডাক্ট আনলে কেমন হয় বাজারে?

বই পড়িয়ে দেবার প্রোগ্রাম, প্রতি সপ্তাহে একটা বই!

বই পড়িয়ে দেবার প্রোগ্রাম, প্রতি সপ্তাহে একটা করে বই!

৩৭৭.

ধরে নিন, হাজারটা বেস্টসেলার পড়ে ফেলেছি এর মধ্যে। ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার! এটা কাঁচামাল হিসেবে আছে আমার মধ্যে। এখনো। দরকার ‘শিপিং’। আপনার আশেপাশে নতুন প্রজন্মের সফল মানুষগুলোর মধ্যে কোন জিনিষটা মিলছে সবার সাথে? মানে ‘কমন’ জিনিসটা কি? হ্যা, তারা শিখছে সবার আগে। নতুন নতুন জিনিস। চিন্তা করতে পারছে তারা – সনাতন পদ্ধতির বাইরে। চিন্তা করতে পারছে বড় বড় ‘অসম্ভব’ জিনিস। মজার কথা, যতো বড় চিন্তা করছে, ততো বড় হচ্ছে ওরা। আর বড় হচ্ছে তাড়াতাড়ি। একারণে পৃথিবীর নব্বই শতাংশ সম্পদ গিয়ে জড়ো হয়েছে ওই এক শতাংশ ‘স্বপ্ন দেখা’ মানুষগুলোর কাছে। যতো বড় হচ্ছে ততো পরীক্ষা করছে তাদের নতুন নতুন কল্পনাপ্রসূত ‘অসম্ভব’ জিনিস নিয়ে। সম্ভব হচ্ছেও ওগুলো। তাড়াতাড়ি শেখার পদ্ধতি কি?

৩৭৮.

শেখার পদ্ধতিটাই হচ্ছে আমার প্রি-প্রোডাক্ট! বিশ্বের বেস্টসেলারগুলো পড়ে শোনাবো আপনাদের। প্রতি সপ্তাহে একটা করে বই। একঘন্টায় শেষ করে দেবো এক একটা বই। বাংলাদেশের কনটেক্সটে। ‘থিঙ্ক গ্লোবাল অ্যাক্ট লোকাল’ কনসেপ্ট। যেভাবে চাইবেন সেভাবে পড়িয়ে দেবো আপনাকে। যারা আমাকে চেনেন তারা ধার দিতে চাইবেন না তাদের বই। কারণ? বই দাগাদাগি না করলে ঘুমই আসে না আমার। সাইডনোট আর আকিবুকি করি বইয়ের পাশ দিয়ে। অন্য বইয়ের রেফারেন্স নিয়ে আসি ওখানে। বইটা পড়িয়ে দেবো আমার সাইডনোট মিলে। ছোটবেলায় শিখেছিলাম ‘রিড বিটউইন দ্য লাইনস’এর গল্পটা। অনেকটা ওরকম। ঠিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার পেলে তিনশো বই পড়িয়ে দেবো বছরে। তাহলে আপনাকে পায় কে? নেপোলিয়ান হিলের স্বপ্নের বই থেকে শুরু করে পার্সোনাল ফিনান্সের গুরু রবার্ট কিয়োসাকি’র সব বই পড়িয়ে দেবো এক এক ঘন্টা করে। আপনার জীবন উন্নত না হয়ে যাবে কোথায়? আর যখনি আপনি বই পড়ে ফেলবেন অনেকগুলো – ‘কানেক্টিং দ্য ডটস’ শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।

৩৭৯.

প্রোডাক্টটা চলবে না। আমাদের বাজারে। ঠিক বলেছেন। শুরু করবো ফ্রিমিয়াম মডেলে। মানে, ফ্রি কিন্তু প্রিমিয়াম – শুরুতে। পাঁচটা ক্লাস ফ্রি। সবার জন্য। এর মধ্যে কয়েকটা স্পন্সর পেয়ে যাবে ‘স্বপ্ন দেখানোর কোম্পানি’টা। বাংলায় নোট লিখে দেবো বইটার ওপর। পয়সা আসবে ওখান থেকে। বলুনতো, ট্যাবলেট পিসি বাজারে এনেছিলো কোন কোম্পানি? সবার আগে? হ্যা, মাইক্রোসফট। বাজার পায়নি ওটা। একই প্রোডাক্ট পরে এনেছে অ্যাপল। স্টিভ জবস আইপ্যাড দিয়ে বাজার তৈরী করেছেন। বাজার তৈরী করে আইপ্যাড আনেননি।

আপনাকে সাথে পেলে বাজার তৈরী করবো আমরা। বই পড়ানোর বাজার। টেক্কা দেবো গ্লোবাল স্কেলে!

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Those who do not move, do not notice their chains.

Rosa Luxemburg

৩৬৪.

কার কতো ফ্রিকোয়েন্সি দরকার তা বের করতে টনক নড়েছে দেশগুলোর। কতোটুকু স্পেকট্রাম ফাঁকা আর কতোটা খালি করতে হবে সেটা নিয়ে কম গল্প হচ্ছে না দেশগুলোর ভেতর। এরমধ্যে কতটুকু দেয়া আছে অন্য কাজে – সেটা ফিরিয়ে নিতে কতো কমপেনসেশন দিতে হবে সেটা নিয়ে চলছে দেনদরবার। মিলিয়ন ডলারের কন্সাল্টেন্সী কিনছে দেশগুলো। স্মার্টফোন যেভাবে মানুষের হাতে জায়গা করে নিচ্ছে সেখানে নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি শেষ হয়ে যাচ্ছে ডিজাইন ক্যাপাসিটির টাইমলাইনের অনেক আগেই। ভবিষ্যতে আরো কতো লাগবে সেটা নিয়ে চিন্তিত দেশগুলো। অপারেটর স্পেকট্রাম চাইলে তো না বলা যাবে না আর। ব্রডব্যান্ডের সাথে অর্থনীতি যুক্ত।

৩৬৫.

আইটিইউ’র ডিমান্ড ফোরকাস্ট করার যে রিপোর্ট সেটাকেই রীতিমত ভুল বানিয়ে বসে আছে উন্নত দেশগুলো। আসলে আইটিইউ’র দোষ কি? ও তো সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে গিয়ে প্রতিটা দেশের ভেতরের জিনিসগুলো আলোচনায় আনেনি সে। আর গত চার বছরে প্রযুক্তি এতো দ্রুত এগিয়েছে সেখানে মুর’স তত্ত্বই কাজে আসেনি, সেখানে আইটিইউ তো কোন ছার্। দুহাজার বিশে কি হবে সেটার ফোরকাস্ট পাল্টাচ্ছে দ্রুত, প্রতি বছরেই। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া আর যুক্তরাজ্যের কয়েকটা চমত্কার রিপোর্ট আমার মাথা ঘুরিয়েছে ভালোই। একেকটা দেশ একেক দিকে ভালো। আর সেদিক থেকে স্পেকট্রাম বা ফ্রিকোয়েন্সি ম্যানেজমেন্টে আমার এক নম্বর পছন্দ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। আমার দেখা বেশিরভাগ তুখোড় স্পেকট্রাম কনসালটেন্ট পেয়েছি অস্ট্রেলিয়ার রেগুলেটর থেকে। গতবছর আমাদের স্পেকট্রামের ওপর একটা কনসালটেন্সি করাতে গিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে আইটিইউ’র সাথে। ব্যাপারটা পছন্দের কনসালটেন্ট পাওয়া নিয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট, বাড়তি স্পেকট্রাম দিয়ে এক বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারণা দেয়া হয়েছে এখানে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট, বাড়তি স্পেকট্রাম দিয়ে এক বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারণা দেয়া হয়েছে এখানে

৩৬৬.

প্রথম রিপোর্ট – যেটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। বের করেছে ওদের রেগুলেটর, ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি)। দুহাজার দশের অক্টোবরে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড প্ল্যানে ৫০০ মেগাহার্টজ বের করতে বলা হয়েছিলো ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ডের জন্য। এর মধ্যে ৩০০ মেগাহার্টজই রাখা হয়েছে মোবাইলে বিভিন্ন ব্যবহারের আন্দাজে। এটা ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো (হ্যা, আরো) ৫০০ মেগাহার্টজ আলাদাভাবে রাখতে বলেছেন মোবাইল আর ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের ওপর ভরসা করে। এফসিসি’র এনালাইসিস বলছে বর্তমান হারে স্পেকট্রাম ব্যবহার হলে সেটা শেষ হয়ে আরো ৩০০ মেগাহার্টজ বাড়তি লাগবে দুহাজার চৌদ্দ সালে। ওই ৩০০ মেগাহার্টজের সরাসরি ট্রান্সলেশন হচ্ছে এক বিলিয়ন ডলারের বাজারের সমৃদ্ধি। মানে ওই ফ্রিকোয়েন্সি উদ্ধার করতে পারলে দেশের সমৃদ্ধি বাড়বে অত বিলিয়ন ডলার। ভুল বুঝবেন না, ওটা স্পেকট্রামটার দাম নয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হিসেব।

স্পেকট্রাম না পেলে কি হবে সেটার হিসেব দেয়া হয়েছে এখানে। ট্রাফিক গ্রোথ আর ডিমান্ড ফোরকাস্ট মিলিয়ে বাড়তি স্পেকট্রামের খুঁটিনাটি দেয়া হয়েছে এই চার্টে।

স্পেকট্রাম না পেলে কি হবে সেটার হিসেব দেয়া হয়েছে এখানে। ট্রাফিক গ্রোথ আর ডিমান্ড ফোরকাস্ট মিলিয়ে বাড়তি স্পেকট্রামের খুঁটিনাটি দেয়া হয়েছে এই চার্টে।

৩৬৭.

ওই সময়ে মানে ছয় মাসের টাইমলাইনে এফসিসি’র ডাটা রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ের ব্যবহার বেড়ে দাড়িয়েছিল ৪৫০ শতাংশে। ওই দুহাজার নয়েই স্মার্টফোন গ্রাহক বেড়ে দাড়ায় ৪২ শতাংশে। পিসি এয়ারকার্ড মানে মোডেম প্রতি ১.৪ গিগাবাইট ব্যবহার পাওয়া যায় যা মোবাইলফোনের ডাটা ব্যবহারের ছাপ্পান্ন গুন বেশি। এক মাসের হিসেব। আইফোনের ক্যারিয়ার এটিএন্ডটি’র নেটওয়ার্কে মোবাইলে ট্রাফিক বেড়ে দাড়ায় ৫০০০ শতাংশে। হ্যা, মাত্র ৫০০০ শতাংশে। তিন বছরে। এধরনের অনেক স্ট্যাটিসটিকাল হিসেবে বোঝাই রিপোর্টটার গল্প একটাই। দাও নতুন স্পেকট্রাম। আর সেটাকে দক্ষতার সাথে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন এফিসিয়েন্ট স্পেকট্রাল প্রযুক্তি।

৩৬৮.

মার্কিন রেগুলেটর এর মধ্যেই ইউএইচএফ আর ভিএইচএফ টেলিভিশন ব্যান্ড থেকে ১২০ মেগাহার্টজ নিয়ে নেবার পায়তারা করছে। তার ব্রডব্যান্ড প্ল্যান তাই বলছে। এদিকে এফসিসিকে নতুন করে টেলিভিশন কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন করার ‘স্পেকট্রাল এফিসিয়েন্ট’ প্রযুক্তি খুঁজে বের করতে বলেছে ওদের সরকার। ফলশ্রুতিতে এরিকসন আরেকটা রিপোর্ট বের করেছে ওই ডিজিটাল ব্রডকাস্টিং নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র এসময়ে ডিজিটাল ব্রডকাস্টিংয়ে ৩০০ মেগাহার্টজের মতো  ব্যবহার করলেও নতুন রিপোর্ট প্রাধান্য দিয়েছে নতুন এলটিই, লঙ টার্ম ইভোল্যুশন প্রযুক্তির ওপর। ডিজিটাল ব্রডকাস্টিং যদি এলটিই নেটওয়ার্কের ওপর দিয়ে পাঠানো হলে সেখানে স্পেকট্রাম খরচ হবে মাত্র ২৮ শতাংশ। বলেন কি? হ্যা, এক চতুর্থাংশের মতো।

চোখে পড়ার মতো রিপোর্ট বটে এফসিসির। নামিয়ে নিন এফসিসি’র সাইটের লিংক থেকে। ‘সেনসিটিভি এনালাইসিস’ অংশটা পড়তে ভুলবেন না।

আসছি সামনে।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »

Honest differences are often a healthy sign of progress.

Mahatma Gandhi

৩৫৮.

আইটিইউ’র স্ট্যাটিসটিকাল ডাটা দেবার ব্যাপারে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর ডাটার আনাগোনা হয়েছে আমার হাত দিয়ে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে ব্রডব্যান্ডের কারুকাজ নিয়ে কম লেখা হয়নি। একটা জিনিস বোঝা গেছে ওই হিসেব থেকে – ফিক্সড ব্রডব্যান্ড নিয়ে এগিয়ে আছে উন্নত দেশগুলো। পয়তাল্লিশ শতাংশের নিচে নয় কারো। সেখানে আমাদের মতো দেশগুলো পড়ে আছে পাঁচ শতাংশের নিচে। এতো বড় বিভেদ কমাবো কিভাবে? ঠিক বলেছেন ‘স্পেকট্রাম’! এটা বিশ শতাংশ মাথা জুড়ে আছে আমার। বাংলাদেশের জন্য একটা অপার সম্ভাবনা। সেটা অফলোড করতেই এ লেখা। ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েলের ‘আউটলাইয়ার’ বইটার দশ হাজার ঘন্টার রুলে বিশ্বাস করি আমি। হ্যা, সাত বছরে ডক্টরেট করা যায় দুবার!

৩৫৯.

কালই ফিরেছি থাইল্যান্ডের টিওটি একাডেমী থেকে। এক সপ্তাহের একটা প্রশিক্ষণ ছিলো টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশনের ওপরে। কনসেপ্টটা চমত্কার। দুমাসের একটা অনলাইন কোর্স হবে আগে। সামরিক বাহিনীর প্রি-কোর্সের মতো খানিকটা। টিকে গেলেই হবে ক্লাস সামনাসামনি। পরীক্ষায় টেকার কথা বলছি। হাজারো প্রশ্ন ছিলো অনলাইন সেশনে। সেটাই মিটিয়েছি সপ্তাহটা ধরে। ক্লাস শেষে দৌড়েছি আইটিইউ’র রিজিওনাল অফিসে। নতুন পাবলিকেশন্স ছিনতাই করতে পদ্ধতিটা কাজ করে ভালো। নতুন দুটো প্রজেক্টও বাগিয়েছি এবছরের জন্য। তার একটা হচ্ছে —-, আমাদের লাইফলাইন। রয়েসয়েই বলি বরং।

ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কাজ হচ্ছে আমাদের রিজিওনে

ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কাজ হচ্ছে আমাদের রিজিওনে

৩৬০.

স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্টের শুরুতে যে গল্পটা আমার কান পঁচিয়ে ফেলেছে সেটা হচ্ছে – স্পেকট্রাম একটা ‘স্কেয়ার্স’ মানে দুষ্প্রাপ্য বা সীমিত রিসোর্স। অথচ যে স্পেকট্রাম আঠারো বছর আগে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে দেয়া হয়েছিলো সেটা না দেয়া হলে কি হতো আজ? অর্থনীতির এধরনের প্রবৃদ্ধি কি ধারণা করতে পারতাম আমরা? সেই দুহাজার এক এ থ্রিজি স্পেকট্রাম ছেড়েছিল জাপান। মে দুহাজার দুয়ের মধ্যে কোরিয়ার দুটো অপারেটরও পায় এই থ্রিজি স্পেকট্রাম। দেখুন আজ ওদের অবস্থা! ওই দুহাজার একেই চারটা থ্রিজি লাইসেন্স দেয় হংকং। দুহাজার চার এর মধ্যে ওর টেলিডেনসিটি গিয়ে দাড়ায় ১০৬.৩ শতাংশে। দুহাজার সাতে জাপান আর সাউথ কোরিয়ার থ্রিজি পেনিট্রেশন দাড়ায় গিয়ে ৭০ শতাংশে। ফিরে আসি শ্রীলংকার গল্পে। গৃহযুদ্ধের পর ২০০৯ থেকে ২০১২তে তাদের থ্রিজি পেনিট্রেশন ছিলো ৭০ শতাংশ। জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্সের ২০১৩এর রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের জিডিপির পার ক্যাপিটা আয় বেড়েছে বারো শতাংশে। বুঝতেই পারছেন সময়ের একফোড়, অসময়ের দশফোড়। স্পেকট্রাম রিলিজ মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কাজ হয়েছে অনেক। মানে অনেক দেশে।

জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্সের ২০১৩এর রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের জিডিপির পার ক্যাপিটা আয় বেড়েছে বারো শতাংশে

জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্সের ২০১৩এর রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের জিডিপির পার ক্যাপিটা আয় বেড়েছে বারো শতাংশে

৩৬১.

আসল কথা বলি তাহলে। স্পেকট্রাম কখনই দুষ্প্রাপ্য বা সীমিত রিসোর্স ছিলো না। এর সীমাবদ্ধতা প্রযুক্তিতে। যাকে আমরা বলি প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা। স্পেকট্রাম হচ্ছে গিয়ে তিন তিন মিলিয়ন মেগাহার্টজের। অনেকটাই অসীম। আমরাই মানে মানুষই নিশ্চিত করতে পারছে না এটার সুষম ব্যবহার। শুরু করেছি আইএমটি ব্যান্ড দিয়ে। প্রথমে ছিলো নয়শো আর আঠারশো, পরে যোগ হলো দু গিগাহার্টজ। এখন যোগ হচ্ছে আরো অনেক অনেক ব্যান্ড। প্রযুক্তি যা পারছে তাকেই নিয়ে নিচ্ছে ‘আইএমটি’ ব্যান্ড হিসেবে। এখন হাত দিয়েছে স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সিতে।ব্রডকাস্টিং ফ্রিকোয়েন্সি যখন বসে থাকে খামাকা, সেটার সুষম ব্যবহারের জন্য চালু হয়েছে ‘হোয়াইট স্পেস’ প্রযুক্তি। কগনিটিভ রেডিও প্রযুক্তি বসে থাকে ঘাপটি মেরে, কখন খালি হবে ফ্রিকোয়েন্সিটা। যেমনটা হয় রাডারের ব্যাপারে। মাসে দু একবার যন্ত্রটা চললে পুরো ব্যান্ড ধরে বসে থাকার মানে হয় না। এটা রিসোর্সের অপচয়।

৩৬২.

দক্ষতার সাথে স্পেকট্রাম ব্যবহার বাড়ানোর জন্য ভাগাভাগি করে স্পেকট্রাম এসাইনমেন্টের ওপর চাপ বাড়ছে উন্নত দেশগুলোতে। ‘লাইসেন্স এক্সেম্ট’ মানে লাইসেন্স ছাড়া ফ্রিকোয়েন্সির ব্যবহার বাড়িয়ে দেশগুলো বাড়াচ্ছে ব্রডব্যান্ড কাভারেজ। নতুন ব্যান্ড খুঁজছে দেশগুলো ‘লাইসেন্স এক্সেম্ট’ ব্যান্ডের ব্যপারে। আর ভাগাভাগি করে স্পেকট্রাম ব্যবহার শুরু হবার কারণে ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি হয়ে গেছে ওয়াইফাই ইকোসিস্টেম। লাইসেন্স ছাড়া এর ব্যবহারের ধারণা মানুষকে নিয়ে গেছে উত্কর্ষের দ্বারপ্রান্তে। আমার কথা একটাই। যে ব্যান্ড ‘হারমোনাইজড’ হয়েছে আজ, বিশ্বের মাঝে – ওটা ছেড়ে দাও কালই! নাহলে কমতে থাকবে এর ‘নেট প্রেজেন্ট ভ্যালু’ দিন দিন। জনগণও বঞ্চিত হবে নতুন সেবা থেকে। ও হ্যা, আমারও হবে গাড়ি একদিন – ততোদিনে প্রতিবেশীরা শুরু করে দেবে ইন্টার-গ্যালাক্টিক মিশন!

৩৬৩.

স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট আর দক্ষতা কিন্তু সমার্থক শব্দ। সেটা নিয়ে আসছি সামনে। যাবার আগে থাইল্যান্ডের রেগুলেটর ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং এন্ড টেলিকমিউনিকেশন কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান কর্নেল ডক্টর সেতাপংয়ের একটা চমত্কার রিপোর্ট রেখে যাচ্ছি আজকের জন্য। স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্টের ওপর এই রেগুলেটরি রিভিউ থেকে শিখেছি অনেক কিছুই। এই সেপ্টেম্বরের পাবলিকেশন্স। আমার ডক্টরাল প্রজেক্টের ভেতরে ঢুকিয়েছি এটাকে। দুহাজার বিশের মধ্যে মোবাইল ব্রডব্যান্ডের জন্য আটশো মেগাহার্টজ ‘আইএমটি’ স্পেকট্রাম না ছাড়লে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।

আসছি সামনে।

[ক্রমশঃ]

Read Full Post »