“If you don’t have time to read, you don’t have the time (or the tools) to write. Simple as that.” ― Stephen King
৪.
মানুষের চাহিদার সাথে সাথে তার দর্শনের পালটাও ঘুরতে থাকে। জীবনে পূর্ণতা পাবার জন্য আব্রাহাম মাসলো উনিশশো আটান্নতে পাঁচ সিড়ির একটা পিরামিড তৈরী করেছিলেন। সিড়ির সবচেয়ে নিচের ধাপে মানুষের জৈব, শারীরবৃত্তীয় বা মৌলিক চাহিদার মধ্যে আলো, বাতাস, খাবার, আশ্রয়স্থল ইত্যাদি চলে আসে। এরপর নিজের নিরাপত্তা, সামাজিক আর তার আইনগত সুবিধা আর তার টিকে থাকার একটা সময়সীমা (স্থায়িত্ববোধ) মানুষকে এর পরের ধাপ “সম্পর্ক”, ভালবাসা, একসাথে থাকার বোধ তৈরী করতে সাহায্য করে। এভাবে উঠতে উঠতে শেষ সিড়িতে মানুষ পূর্ণতা পায়। প্রতিটা ধাপ পার করার আগে তার নিচের ধাপকে মিটিয়ে বা সন্তুষ্ট করেই উপরের ধাপে যেতে পারে মানুষ। যখন মানুষের চাহিদার প্রায় সবকিছুই মোটামুটিভাবে পূর্ণতা দেয়া যায়, তখন মানুষ নিজেকে চেনার নতুন একটা ভিত্তি পায়। অল্পতে বলতে গেলে, এই শেষ ধাপ “সেল্ফ এক্চুয়ালাইজেশন” ধাপে জ্ঞান আহরণ, বিতরণ, লেখালিখির চল শুরু হয়।
৫.
আবার, যেকোনো ধাপের কোনো চাহিদা না মিটলে সে তার আগের ধাপের ফিরে যাবে। যেমন, প্রথম ধাপের মৌলিক চাহিদা না মিটলে, মানুষ নিজের সত্তার সাথে আপোষ করবে, তখন খাবারের জন্য চুরিও করতে পারে সে। প্রতিটা মানুষ এই শেষ ধাপে আসার সক্ষমতা আর আকাংখা রাখলেও, তার পারিপার্শিক অবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অথবা নিচের ধাপগুলোর চাহিদা ঠিকমত পূরণ না করলে পূর্ণতা পাওয়ার পথে ব্যাঘাত ঘটায়। চাকুরী বা রোজগার না থাকলে বা যেটা যুক্তিসঙ্গত ভাবে পাওয়ার কথা তা না পেলে সেটাকে পাবার জন্য উপরের ধাপের আশা বাদ দিতে হয়। ধরা যায়, রোগে ভুগলে বা বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনা ঘটলে মানুষের এই ফুলফিলমেন্ট আসাটা আরো দুরে চলে যায়।
৬.
যেসব দেশে রাষ্ট্র মানুষের বেশিরভাগ চাহিদা মেটায়, তাদের মধ্যে এই “সেল্ফ এক্চুয়ালাইজেশন” এর হার বেশী। এদের নিজেদের মধ্যে জ্ঞান আহরণ, জ্ঞান বিতরণ, দান কর্ম (চ্যারিটি) প্রতিকূলতায় থাকা সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সাহায্য করার তাড়না সেই পূর্ণতা থেকে আসে। উনিশশো আটান্নএর পাঁচ ধাপের এই তত্বকে গবেষকরা মানুষের নতুন জীবনধারা আর অগ্রসরমান পৃথিবীর কথা মনে করে কিছুটা আধুনিক করেছেন। কয়েকটা ধাপের মধ্যে সর্বোত্কর্ষ বা শ্রেষ্ঠতা অর্জনের সাহায্যকারী হিসেবে “ট্রান্সসেন্ডেনস” ধাপ সর্বোচ্চ পূর্ণতা প্রাপ্তির ধাপের পরে যোগ হয়েছে। এই ধাপের মানুষগুলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের তার অভীষ্ট অর্জন সাহায্য করে। তারা পৃথিবীর প্রায় সব কিছুই পেয়ে গেছেন, এখন দেবার সময়। পুরো আফ্রিকাতে পরিস্কার পানির সরবরাহ তো এমনিতেই হয়নি। তাদের উধাহরণ নিয়ে লিখেছি আগে।
৭.
সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাত কাপড়ের মত মৌলিক চাহিদার কথা চিন্তা করতে গেলে লেখালিখি করবে কে? তার জন্য অন্যদের জন্য চিন্তা করতে হবে। যখন নিজের অবস্থান নড়বড়ে তখন অন্যের জন্য লেখা বা সৃজনশীল মনের জন্য দরকার অদম্য আকাংখা – যা খুব কম মানুষ উতরাতে পারে। মাসলোর ধারণা অনুযায়ী এক শতাংশ মানুষ সেই পূর্ণতা পায়, কারণ আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় মানুষকে প্রেরণা দেয়া বা পুরস্কৃত করার ব্যাপারটা অত সহজে আসে না।
৮.
মানুষ গুহাতে বাস করার সময় থেকে গল্প বলা শুরু করেছে। শিকারের পর পেট ভরে যাওয়ার পর মাথা খুলতে থাকত। পরবর্তী শিকারের আগ পর্যন্ত গল্প চলত। জ্ঞানদীপ্ত সমাজব্যবস্থায় উপরের এনলাইটমেন্ট থেকে গল্প তৈরী হয়, সেকারণে ওই সমাজগুলো থেকে অনেক অনেক গল্প আসে। মানুষ মাত্রই তার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে চায়, ভুক্তভুগী নিজের জীবন থেকে গল্পের মোরাল নিয়ে আসে – কারণ তা না বলতে পারলে মনের মধ্যে একটা অন্তর্দন্দ তৈরী হয়। ফলে, তার অভিজ্ঞতা গল্পে রুপান্তরিত হয়। এই গল্পগুলোই ভবিষ্যতের পথ দেখায়। সমাজের সবচেয়ে বড় আয়না হচ্ছে তার গল্প।
কি লিখবেন তো?