Feeds:
Posts
Comments

Archive for March, 2013

“If you don’t have time to read, you don’t have the time (or the tools) to write. Simple as that.” ― Stephen King

৪.

মানুষের চাহিদার সাথে সাথে তার দর্শনের পালটাও ঘুরতে থাকে। জীবনে পূর্ণতা পাবার জন্য আব্রাহাম মাসলো উনিশশো আটান্নতে পাঁচ সিড়ির একটা পিরামিড তৈরী করেছিলেন। সিড়ির সবচেয়ে নিচের ধাপে মানুষের জৈব, শারীরবৃত্তীয় বা মৌলিক চাহিদার মধ্যে আলো, বাতাস, খাবার, আশ্রয়স্থল ইত্যাদি চলে আসে। এরপর নিজের নিরাপত্তা, সামাজিক আর তার আইনগত সুবিধা আর তার টিকে থাকার একটা সময়সীমা (স্থায়িত্ববোধ) মানুষকে এর পরের ধাপ “সম্পর্ক”, ভালবাসা, একসাথে থাকার বোধ তৈরী করতে সাহায্য করে। এভাবে উঠতে উঠতে শেষ সিড়িতে মানুষ পূর্ণতা পায়। প্রতিটা ধাপ পার করার আগে তার নিচের ধাপকে মিটিয়ে বা সন্তুষ্ট করেই উপরের ধাপে যেতে পারে মানুষ। যখন মানুষের চাহিদার প্রায় সবকিছুই মোটামুটিভাবে পূর্ণতা দেয়া যায়, তখন মানুষ নিজেকে চেনার নতুন একটা ভিত্তি পায়। অল্পতে বলতে গেলে, এই শেষ ধাপ “সেল্ফ এক্চুয়ালাইজেশন” ধাপে জ্ঞান আহরণ, বিতরণ, লেখালিখির চল শুরু হয়।

৫.

আবার, যেকোনো ধাপের কোনো চাহিদা না মিটলে সে তার আগের ধাপের ফিরে যাবে। যেমন, প্রথম ধাপের মৌলিক চাহিদা না মিটলে, মানুষ নিজের সত্তার সাথে আপোষ করবে, তখন খাবারের জন্য চুরিও করতে পারে সে। প্রতিটা মানুষ এই শেষ ধাপে আসার সক্ষমতা আর আকাংখা রাখলেও, তার পারিপার্শিক অবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অথবা নিচের ধাপগুলোর চাহিদা ঠিকমত পূরণ না করলে পূর্ণতা পাওয়ার পথে ব্যাঘাত ঘটায়। চাকুরী বা রোজগার না থাকলে বা যেটা যুক্তিসঙ্গত ভাবে পাওয়ার কথা তা না পেলে সেটাকে পাবার জন্য উপরের ধাপের আশা বাদ দিতে হয়। ধরা যায়, রোগে ভুগলে বা বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনা ঘটলে মানুষের এই ফুলফিলমেন্ট আসাটা আরো দুরে চলে যায়।

৬.

যেসব দেশে রাষ্ট্র মানুষের বেশিরভাগ চাহিদা মেটায়, তাদের মধ্যে এই “সেল্ফ এক্চুয়ালাইজেশন” এর হার বেশী। এদের নিজেদের মধ্যে জ্ঞান আহরণ, জ্ঞান বিতরণ, দান কর্ম (চ্যারিটি) প্রতিকূলতায় থাকা সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সাহায্য করার তাড়না সেই পূর্ণতা থেকে আসে। উনিশশো আটান্নএর পাঁচ ধাপের এই তত্বকে গবেষকরা মানুষের নতুন জীবনধারা আর অগ্রসরমান পৃথিবীর কথা মনে করে কিছুটা আধুনিক করেছেন। কয়েকটা ধাপের মধ্যে সর্বোত্কর্ষ বা শ্রেষ্ঠতা অর্জনের সাহায্যকারী হিসেবে “ট্রান্সসেন্ডেনস” ধাপ সর্বোচ্চ পূর্ণতা প্রাপ্তির ধাপের পরে যোগ হয়েছে। এই ধাপের মানুষগুলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের তার অভীষ্ট অর্জন সাহায্য করে। তারা পৃথিবীর প্রায় সব কিছুই পেয়ে গেছেন, এখন দেবার সময়। পুরো আফ্রিকাতে পরিস্কার পানির সরবরাহ তো এমনিতেই হয়নি। তাদের উধাহরণ নিয়ে লিখেছি আগে।

৭.

সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাত কাপড়ের মত মৌলিক চাহিদার কথা চিন্তা করতে গেলে লেখালিখি করবে কে? তার জন্য অন্যদের জন্য চিন্তা করতে হবে। যখন নিজের অবস্থান নড়বড়ে তখন অন্যের জন্য লেখা বা সৃজনশীল মনের জন্য দরকার অদম্য আকাংখা – যা খুব কম মানুষ উতরাতে পারে। মাসলোর ধারণা অনুযায়ী এক শতাংশ মানুষ সেই পূর্ণতা পায়, কারণ আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় মানুষকে প্রেরণা দেয়া বা পুরস্কৃত করার ব্যাপারটা অত সহজে আসে না।

৮.

মানুষ গুহাতে বাস করার সময় থেকে গল্প বলা শুরু করেছে। শিকারের পর পেট ভরে যাওয়ার পর মাথা খুলতে থাকত। পরবর্তী শিকারের আগ পর্যন্ত গল্প চলত। জ্ঞানদীপ্ত সমাজব্যবস্থায় উপরের এনলাইটমেন্ট থেকে গল্প তৈরী হয়, সেকারণে ওই সমাজগুলো থেকে অনেক অনেক গল্প আসে। মানুষ মাত্রই তার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে চায়, ভুক্তভুগী নিজের জীবন থেকে গল্পের মোরাল নিয়ে আসে – কারণ তা না বলতে পারলে মনের মধ্যে একটা অন্তর্দন্দ তৈরী হয়। ফলে, তার অভিজ্ঞতা গল্পে রুপান্তরিত হয়। এই গল্পগুলোই ভবিষ্যতের পথ দেখায়। সমাজের সবচেয়ে বড় আয়না হচ্ছে তার গল্প।

কি লিখবেন তো?

Read Full Post »

“… an elegant proof of God, and the power of storytelling” – President Barack Obama’s letter to Martel.

১.

বইটা বের করলাম, আবার। সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিল বইয়ের প্রচ্ছদটা। দুবছর আগে পড়ার সময় কখনো মনেই হয়নি যে বইটা রুপালী পর্দায় যাবে।

কারণ?

বইটা নিজেই অতিমাত্রায় রুপালী ধরনের। পাঠক নিজ থেকে তার মনের মাধুরী মিশিয়ে বইটাকে মনে রাখবে বছরের পর বছর। নিজের চোখে গল্পটা দেখে ফেললে বইটার আবেদন কমে যেতে পারে। সিজিআই, (কম্পিউটার জেনারেটেড ইমাজিনারি) মুভিগুলোকে নায়ক নায়িকা বিবর্জিত করে ফেলছে। বই পড়ার সময় মাথার মধ্যে হাজার জিনিস ঘুরতে থাকে, ফলে আমার আপনার এক্সপিরিয়েন্স কখনো এক হবার নয়। বুক ক্লাবে ফাটাফাটি হবে। মুভি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বলে মুভি দেখতে যত আপত্তি আমার।

আমাকে হতাশ করলো স্বাতী। বাচ্চাদের মুভিটা দেখাতেই হবে। চারজনের দল নিয়ে দেখতে গেলাম।

২.

এক কোটির বেশি বিক্রীত এই বইটা বিভিন্ন পাবলিশিং হাউস থেকে প্রত্যাখ্যাত না হওয়াটাই অপ্রত্যাশিত ছিল। আজগুবে বইয়ের ব্যাপারে এটাই স্বাভাবিক। বাঘের সাথে উর্রুক্কু মাছ, স্বপ্নের মত দ্বীপ, সমুদ্রে দুশো সাতাশ দিন থাকা – সব কিছু মানুষের কল্পনাশক্তিকে হার মানায়। মানুষ যা দেখতে বা পড়তে চায়, তার ব্যত্যয় হলেই বিপত্তি। লন্ডনের পাচ পাচটা হাউস থেকে আশার কথা শুনতে না পেলেও ক্যানাডার এক প্রকাশক তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর পরের গল্প আপনার জানা। ফিকশনে অসাধারণ কাজের জন্য “ম্যান বুকার” পুরস্কার থেকে শুরু হয়ে বইটা সিনেমাও হয়ে গেল।

৩.

ইয়ান মার্টেল, তার বইয়ের অনুপ্রেরণার জন্য ব্রাজিলের মোয়াসির স্লিয়ারের “ম্যাক্স এন্ড দ্য ক্যাট” এর নাম নিয়ে এসেছেন। তবে, বই দুটোই পড়ে মার্টেলের গল্প লেখার স্টাইল বইটাকে অন্য ধারায় নিয়ে গেছে বোঝা যায়। তার ন্যারেটিভের ধরন খুব একটা বেশি ব্যবহৃত নয়। “পয়েন্ট অফ ভিউ” এর কথা উঠলে দুজনের কথা পাওয়া যায়। ইয়ান মার্টেলের (নিজ) ভার্সন, যেখানে সে তার গল্পকারের অংশ, আর “পাই” এর ফ্লাশব্যাক মিলে চলেছে অসাধারণ স্টোরি টেলিং। কিছুটা ডকুমেন্টারী আবার কিছুটা আরব্য রজনী। মার্টেলের কিছুটা ভেতরে যেয়ে স্টোরি টেলিং আর “পাই” এর অসমর্থিত সমান্তরাল ভার্সন – দুই মিলিয়ে পাঠক কিছুটা বিভ্রান্ত। দিতীয়বারে যেয়ে কেটেছে আমারটা। আর “পাই” এর বাবার গভীর অন্তর্দৃষ্টি ছড়িয়ে আছে গল্পের বুননে।

রিচার্ড পার্কার, আমাদের বাঘের নামটা এসেছে এডগার অ্যালান পোর গল্প থেকে। মানুষ রিচার্ড পার্কারকে নিয়ে আরেক দিন লিখতে চাচ্ছিলাম।

রাজি তো? অন্য ধরনের গল্প।

Read Full Post »

I know you will come and carry me out into the palace of winds. That’s all I’ve wanted — to walk in such a place with you, with friends, on earth without maps… – Katherine@The English Patient

১.

বই কেন লিখবেন?

প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। মানুষ পড়ে কেন বই?

প্রশ্নটা নিজেকে করে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকলাম। রিচার্ড টেম্পলারের সাতচল্লিশ নম্বর রুল অনুযায়ী ঝামেলায় পড়লে “রিমেম্বার টু টাচ বেজ” অর্থাৎ বেজ এর (তার ভাষায়, বেজ হচ্ছে বাসা, আবার ঠিক বাসাও না, যেখানে ফেরতে আসতে হয় সবসময়। যেখানে শান্তি পাওয়া যায়) সাহায্য চাইলাম। বিয়ের পর থেকে বই ছাড়া ওকে দেখিনি। খাবার সময়ও বইটা পাশে খুলে না নিয়ে বসলে খেতে পারে না। কোথাও বেড়াতে গেলে বইগুলো আগে ব্যাগে ঢোকাবে। পুরানো ব্যাংকার হিসেবে সকাল আটটা-রাত দশটা অফিস করেও আট দশ হাজার বই পড়ে ফেলেছে। কাল রাতে ড্যান ব্রাউনের পুরনো বই “ডিসেপশন পয়েন্ট” রিভিশন দিতে দেখলাম।

অনেক আগেই প্রশ্নটা করা উচিত ছিল। মানে, বারো বছর আগে।

“ভালো লাগে তাই।” স্বাতী যোগ করলো, “বাস্তবতা থেকে পালাতে। কোনো জিনিসের একটা সেকেন্ড হ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স নিতে।”

“ইজিপ্টে যেতে পারিনি, কিন্ত বইয়ে পড়ে সেই এক্সপিরিয়েন্সটা নেবার চেষ্টা করেছি।” অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।

২.

বাঁচিয়ে দিল মেয়ে। ফাইভে উঠেছে এবার। ইনিড ব্লাইটনের ‘দ্য নটিয়েস্ট গার্ল’এর প্রথম বইটাতে বুদ হয়ে আছে সে। চল্লিশ সালের দিকে এই সিরিজের বইগুলো এখনো আমাজন কাপাচ্ছে। আর্শিয়া, এলিজাবেথের কল্পনার বোর্ডিং স্কুলে যেতে পারবে না বলে বইটা বার বার পড়ছে।

“বাবা, বইটা পড়ার সময় ওর স্কুলে যেতে পারছি ইচ্ছামতো।” আর্শিয়ার চোখের উচ্ছলতা আমার পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলো। ছোটবেলায় “ফ্ল্যাশ গর্ডন” কমিকের পাগল ছিলাম। বাবা মা দুজনে চাকুরিজীবী হবার কারণে ওর সাথে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়াতাম, ক্যাডেট কলেজে যাবার আগের সময়গুলোতে। ধারণা করা হয়, ডেল আর্ডেন জীবনের প্রথম ক্রাশ। ‘ফ্ল্যাশ’ বই থেকে বের হতে পারলেই হয়ে যেত আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ। ভাগ্যিস! ফ্ল্যাশকেও অসম্ভব পছন্দ করি।

৩.

স্টিভেন পিংকার, ক্যানাডিয়ান মনোবিজ্ঞানী তার ‘হাউ দ্য মাইন্ড ওয়ার্কস”এ বই পড়া নিয়ে কিছু মন্তব্য রেখেছিলেন। ওই মন্তব্যটাকে লোকালাইজড করলে – এরকম দাড়ায়,

মানুষ কেন গল্প (ফিকশন) পড়তে পছন্দ করে? প্রশ্নটা “মানুষ কেন জীবনকে পছন্দ করে”র মতো। আমরা যখন একটা বই বা সিনেমার মধ্যে নেশার মতো বুদ হয়ে থাকি তখন অবচেতন মনে বিশ্বয়কর কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে। নিশ্বাস আটকে পৃথিবীর অসম্ভব অসম্ভব সুন্দর জায়গায় দাড়িয়ে চোখ ঝাপসা করতে থাকি। হুমায়ুন আহমেদের বর্ণনায় নেভাদা মরুভূমি অসহ্য সৌন্দর্য আমাদেরকে ওখানে যাবার আগেই পাগল করে দিয়েছে। গুরত্বপূর্ণ লোকদের সাথে, (যাদের সাথে দেখা হবে না কথনও) ঘুরতে থাকি পুরা দুনিয়া। পাগলের মতো ভালোবাসতে থাকি এর নায়ক নায়িকাকে। জীবন দিয়ে রক্ষা করি ভালবাসার মানুষটাকে। করে ফেলি অসম্ভব জিনিস, দুষ্ট লোকদের দেই ভাগিয়ে। সত্তুর টাকায় এর থেকে ভালো ডিল কি হতে পারে?

মনে পড়ল ক্যাথেরিনের কথা। হঠাৎ করেই। কাগজে কয়েকটা কালির লেখা আমাকে জিম্মি করে রেখেছে বছরে পর বছর।

‘দ্য ইংলিশ পেশেন্ট’এ ওর মতো অপেক্ষায় ছিলাম তিন বছর, অসম্ভব ঠান্ডায় আর অন্ধকারে – আলমাসির জন্য। আমাকে নিয়ে যাবে ঠিকানা বিহীন জায়্গায়।

Read Full Post »

“We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.” — Randy Pausch

১.

পকেট হাতড়ে আরো কিছু দিনার খুজলাম, চেষ্টা বৃথা গেল। অগত্যা কয়েকটা বই নামিয়ে রাখতে হলো। বাদামী চামড়ার মানুষের সমস্যা সহজেই বুঝে গেলেন মহিলা বিক্রেতা কর্মী। এই বইটাও ছিল তার মধ্যে। মনোকষ্ট বাড়তে থাকলো পরে, আস্তে আস্তে। বোর্ডিং ব্রিজের কাছে যেয়ে আরেকটা বই পাল্টে ওটা নিয়ে আসার কথা মনে হতে আর ফিরতে পারলাম না।

 ২.

বাইরের ইউনিভার্সিটিগুলোতে ‘শেষ বক্তৃতা’ নামে একটা চল প্রচলিত আছে। ছাত্ররা তাদের প্রিয় ফ্যাকাল্টির একটা বক্তৃতা শোনার জন্য ভার্সিটিকে অনুরোধ করে। বক্তৃতা দেবার সময় প্রফেসরদের ধরে নিতে বলা হয় জীবনের শেষ বক্তৃতা হিসেবে (কাল যদি আর না আসে, তাহলে কি উপদেশ রেখে যেতে চাইবেন), যাতে উনারা সারা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপদেশগুলো সংযোজন করেন। প্রফেসররা অনেক সময় তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা আর স্মৃতি রোমন্থন করতে যেয়ে আবেগঘন পরিবেশ তৈরী করে ফেলেন।

 ৩.

কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর রান্ডি পাউশের ক্ষেত্রে এরকম ধরে নেবার কিছু ছিলনা। তার হাতে সময় ছিল না বললেই চলে। টার্মিনাল ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। প্রথম ক্যান্সারের আক্রমন থেকে পালাতে পারলেও পরেরটা আর ক্ষমা করেনি। এই কয়েক মাসের সীমিত টাইমলাইনে আগের দেয়া ‘শেষ বক্তৃতা’ সিডিউলটা রাখবেন, না পরিবারের সাথে শেষ কয়েকদিন কাটাবেন – দ্বিধায় পড়লেন রান্ডি পাউশ। তার অবর্তমানে স্ত্রী ‘জে’ আর তিন অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করতেও হবে এর মধ্যে। ছোট মেয়ে ক্লয়ীর বয়স মাত্র বারো মাস।

 ৪.

“‘শেষ বক্তৃতা’র সিডিউলটা থেকে আমাকে ছেড়ে দেবে ইউনিভার্সিটি”, রান্ডি স্ত্রী ‘জে’কে বললেন, “তবে” দ্বিধান্বিত গলা, “আমি কাজটা করতে চাচ্ছিলাম।”

‘জে’ আর রান্ডি বাচ্চাদের নিয়ে পিটসবার্গ ছেড়ে ভার্জিনিয়াতে চলে এসেছে যাতে রান্ডির মৃতুর পর ‘জে’ তার সন্তানদের নিয়ে ‘জে’র পরিবারের কাছে থাকতে পারে। ‘জে’ রান্ডিকে ছাড়তে চাচ্ছিলেন না এই বক্তৃতার জন্য, কারণ তাকে যেতে হবে পিটসবার্গে, আবার।

“স্বার্থপর বলো আমাকে”, ‘জে’ বললেন, “এমুহুর্তে তোমাকে সবসময়ের জন্য চাচ্ছিলাম। যতটুকু সময় এই বক্তৃতা তৈরির পেছনে যাবে তা তো আর পাচ্ছি না আমি আর বাচ্চারা। রান্ডি বুঝে নিয়েছিলেন পুরো ব্যপারটা। সেজন্য, অসুস্থ হবার পর থেকেই সবার অলক্ষে অনেক রাত না ঘুমিয়ে ‘জে’ আর সন্তানদের ভবিষ্যত সহজতর করার চেষ্টা করছিলেন – যখন উনি আর থাকবেন না। রান্ডি শেষ পর্যন্ত সেই ‘শেষ বক্তৃতা’ দিলেন তার সন্তানের দিকে চেয়ে। অবুঝ বাচ্চাগুলোর জন্য বড় হবার উপদেশ রেখে গেলেন সবার মাঝে। অন্য পিতা মাতার মতো রান্ডিও চেয়েছিলেন তার অবর্তমানে সন্তানগুলো মানুষের মত মানুষ হয়।

৫.

মৃত্যুপথযাত্রী রান্ডি তার শেষ বক্তৃতাতে মৃত্যুর বিষয়টা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। তার বদলে, অনেক মজার মজার গল্পের মধ্য দিয়ে শৈশবের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পথ দেখালেন। শুধুমাত্র নিজের নয়, অন্যের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের অলিগলি দেখাতে গিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে (বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে গেলেও) উপভোগ করার পদ্ধতি বাতলে দিলেন। নিজের পরিবার, ইউনিভার্সিটির সহকর্মী, ছাত্র আর যাদের সাথে কাজ করেছেন, তাদের সবার প্রতি আলাদাভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শৈলী দর্শক মনে রাখবে অনেকদিন।

৬.

বক্তৃতার তিন মাস পর ভিডিওটা ইউটিউবে পোস্ট করে কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটি। পুরো পৃথিবী হুমড়ি খেয়ে পড়ে দেখেছে তার মজার (উনি যতই মজা করেন, দর্শকরা ততই চোখ মোছেন), অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন, আবেগঘন ভিডিওটা। দেড় কোটিবার দেখা হয়েছে এ পর্যন্ত। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, রিডার্স ডাইজেস্ট থেকে শুরু করে সব নিউজ মিডিয়া তাকে “পারসন অফ দ্য উইক” বানালেও বই লেখার জন্য সাত মিলিয়ন ডলারের ‘বুক ডিল’ তার বক্তৃতাকে নিয়ে যায় অন্য উচ্চতায়। টাইম মাগাজিনের  দুহাজার আট সালের একশ ‘মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পিপল’ এর মধ্যে নাম চলে আসে রান্ডির। কম লোকই আশা করেছিল, বইটা উনি দেখে যেতে পারবেন।

৭.

বইটা বের হয়েছে। বইয়ের প্রচ্ছদটা তার শৈশবের স্বপ্নকে এমনভাবে দেখিয়েছে, বইটা হাত থেকে নামাতে কষ্টই হবে। ‘শেষ বক্তৃতা’ তার কর্মজীবনকে বেশি টানলেও বইটিতে তার নিজস্ব ধারণাগুলো আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। রান্ডি এক জায়গায় বলেছিলেন যে বইটাতে তার জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কিছু গল্প আর তার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা সন্তানদের জন্য রেখে যেতে চেয়েছেন। বক্তৃতার সময়ে স্টেজে এই একান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আসলে, আবেগকে ধরে রাখা বেশ কষ্টকর হতো।

‘শেষ বক্তৃতা’র আট মাস পর রান্ডি পাউশ চলে যান পৃথিবী ছেড়ে।

তার তৈরী বিশ্বখ্যাত সিমুলেশন সফটওয়্যার ‘এলিস’ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার একটা অনন্য টুল। পরবর্তী প্রোগ্রামিং প্রজম্মের জন্য তৈরী এই টুল বিনামূল্যে দেবার জন্য ওরাকল, ইলেকট্রনিক আর্টস (ইএ), সান মাইক্রোসিস্টেমস, ডারপা, ইন্টেল, মাইক্রোসফট, ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন আরও অনেকে সাহায্য করছে।

Read Full Post »

“Desire is the starting point of all achievement, not a hope, not a wish, but a keen pulsating desire which transcends everything.” – Napoleon Hill

১৫.

‘সবার হবে গাড়ি’, ন্যানোকে নিয়ে টাটার উচ্ছাসের শেষ নেই। আর হবে না কেন? এই দামে কে দেয় গাড়ি!

হেনরি ফোর্ডের  ‘সাধারণের জন্য গাড়ি”র স্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল উনিশশো বিশ থেকে। গাড়ির দাম সাধারণের হাতের নাগালে আনার জন্য অসম্ভব পাগলামি তাকে ধরে বসলো। গাড়ির ‘ইঞ্জিন’ এই গাড়ির জন্য একটা বড় কস্ট কম্পোনেন্ট। সব জায়গায় খরচ নামিয়ে আনা সম্ভব হলেও ইঞ্জিনকে আর সস্তা করা যাচ্ছিলো না। ফোর্ড তার প্রকৌশলীদের প্রচন্ড চাপে রাখলেন। সেসময় সেভ্রলেট ছয় সিলিন্ডারের ইঞ্জিন বাজারে নিয়ে আসল। তখনকার সময় দুই তিনটা সিলিন্ডারের এক একটা লোহার ছাচ তৈরী করে তা নাট বল্টু দিয়ে জোড়া লাগাতে হতো। একারণে দাম কমানো যাচ্ছিলো না। আর ক্র্যাংকশ্যাফট ভেঙ্গে যাচ্ছিল। ফোর্ডের দাবি, তৈরী করো -এক ছাচে আটটা সিলিন্ডার! দাম কম, স্থায়িত্ব বেশি।

প্রকৌশলীদের উত্তর, অসম্ভব। মরে গেলেও সম্ভব নয়। আটটা সিলিন্ডার, তাও আবার এক ছাচে!

ফোর্ড জোর করে অনেকগুলো বিকল্প ব্লু-প্রিন্ট তৈরী করলেন কাগজের ওপরে। তা কাগজের উপরেই থাকলো প্রথম কয়েক মাস।

ফোর্ড বললেন, “পয়দা করো , টাকা পয়সা সমস্যা না।”

“কিন্ত”, প্রকোশলীদের তারস্বরে জবাব, “অসম্ভব!”

“লেগে থাকো”, ফোর্ডের স্বভাবচরিত জবাব, “শেষ না হওয়া পর্যন্ত। সময়ও ব্যাপার না।”

প্রকৌশলীরা নাওয়া খাওয়া ভুলে নেমে পড়লেন। ছয়মাস গড়ালো। না। আরো ছয়মাস, ছাচ ভেঙ্গে যাচ্ছে আগের মত। প্রকৌশলীরা তাদের জ্ঞানের সবকিছু চেষ্টা করলেন, কোনো কিছুতেই সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।

আরো এক বছর চলে গেল। ফোর্ড আবার খোজ নিলেন। প্রকৌশলী ক্যাম্পের একই উত্তর। “আমার চাইই – চাই”, ফোর্ডের একই গো।

প্রকৌশলীদেরও রোখ চেপে গেল। তাদেরও ফোর্ডের পাগলামিতে পেয়ে বসলো। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যাদুমন্ত্রের মত সমাধান পেয়ে গেল। এক লোহার ছাচে আট সিলিন্ডারই হলো! ক্র্যাংকশ্যাফট ছোট হয়ে আসলো, এর ভেঙ্গে যাবার সমস্যা আর থাকলোনা। তৈরী হলো যুগান্তকারী ফোর্ডের ভি-৮ সিলিন্ডার।

ফোর্ডের জেদের সুফল পেল আবার সাধারণ জনগণ। তার সাফল্যগাথার পেছনে কয়েকটা নীতি কাজ করেছে। কোনো কিছুর জন্য অদম্য ‘আকাঙ্ক্ষা’ কাউকে আটকে রাখতে পারেনি। আপনাকে স্পষ্ট করে জানতে হবে – আপনি কি চান। নিজেকে সেটা দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে হবে। আপনি যা চাইবেন তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করলে তা পেতে বাধ্য।

১৬.

বর্তমান বিশ্বে ফোর্ডের এই আচরণ অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই কৌশল ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি, এরোস্পেস, নাসা, ঔষধ গবেষণা সহ প্রচুর স্পেসালাইজড প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হচ্ছে। আজকের এয়ারবাস এ-৩৮০, দোতলা উড়োজাহাজ এতো সহজে আসেনি। উনিশশো অষ্টাশির গবেষনার ফল পাওয়া গেছে এপ্রিল দুহাজার পাঁচে, উড়োজাহাজটাকে উড়িয়ে। এরপরও আরো দুবছরের বেশি হাজার হাজার ‘সেফটি টেস্ট’ আর অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার পর প্রথম বানিজ্যিক ফ্লাইট চালায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স। অন্য কিছু নয়, ওড়াতেই হবে – তাই উড়েছে উর্রুক্কুটা। কেউ জেদ ধরেছিলো, আট দশ ফ্লাইটের তেল দিতে পারবো না। এক ফ্লাইট এর তেল নাও, নইলে অন্য ব্যবসা দেখো।

বড় বড় দুরূহ, অসম্ভব জটিল আর লম্বা প্রজেক্টগুলোকে চালানোর জন্য এ কৌশল ছাড়া গতি নেই। প্রথমে প্রজেক্টটাকে ছোট ছোট ভাগে (মাইলস্টোন) ভাগ করে ডিপেন্ডেন্সি দেখে নেয়া হয়। ধরা যাক, বিন্দু ‘ক’ থেকে ‘খ’, ‘গ’ থেকে ‘ঘ’ আর ‘ঘ’ থেকে ‘ঙ’ করতে যে প্রযুক্তি প্রয়োজন তা বর্তমানে উপস্থিত অথবা, সময়ের মধ্যে তৈরী করে নেয়া যাবে। কিন্ত, ‘খ’ থেকে ‘গ’ অংশটা কিভাবে হবে তার সমন্ধে কারো কোনো ধারণাই নেই। প্রজেক্ট শুরু হয়ে যাবে, ‘খ’ থেকে ‘গ’ অংশটা কিভাবে হবে তা বাকি প্রজেক্ট এর গতি কমাবে না। সবসময়ে দেখা যায় (পরীক্ষিত বটে), বাকি অংশগুলো হবার সময় যেহেতু প্রজেক্টটা বের করে নিতেই হবে, অন্য অংশের উপলব্ধিগুলো জড়ো হয়ে অজানা অংশটুকুও বের করে নিয়ে আসে। আমি কি চাই, তা ঠিক মতো পিনপয়েন্ট করে – বিশ্বাস করে লেগে থাকলে তা পাওয়া যাবেই।

আজকের ‘ইন্টারনেট’ (যা পৃথিবীকে পাল্টে দিচ্ছে) এর আবিস্কারের পেছনে একই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। দেশ চেয়েছে ব্যয়বহুল সার্কিট সুইচিং থেকে বের হতে, ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সী, সংক্ষেপে ‘ডারপা’ বিভিন্ন উনিভার্সিটিতে ঢেলেছে অঢেল পয়সা, দিয়েছে অনেক সময়। প্রজেক্ট ‘ফেইল’ করেছে হাজারো বার, হাল ছাড়েনি তারা। ফলে তৈরী হয়েছিল আরপানেট, বর্তমান ইন্টারনেট এর পূর্বসুরী। আজকের বিদ্যুত্‍ বাল্ব তৈরি করতে থমাস এডিসনকে চেষ্টা করতে হয়েছিল হাজারের বেশি। রিপোর্টার জানতে চেয়েছিলেন তার ‘হাজার বার ব্যর্থতার অনুভুতির কথা’। এডিসনের জবাব, ফেইল করিনি তো হাজার বার। বরং, লাইট বাল্বটা তৈরি করতে লেগেছিলো হাজার স্টেপ। 

আপনার ভয় কি? সত্যি করে বলুনতো, আপনি এমন কিছু চেয়েছিলেন – বিশ্বাস করে লেগেও ছিলেন, কিন্ত পাননি?

সত্যি করে বলবেন কিন্তু।

Read Full Post »

“I have won hundreds of chess games, and lost thousands. You have to have the courage to fail.” – Garry Kasparov

১৩.

হাল ছেড়ে দিতে দেখি অনেককেই। আমাদের পারিপার্শিক অবস্থান এর জন্য কিছুটা দায়ী হতে পারে। অফিসে প্রতিদিনই অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়। এর মধ্যে প্রায় বেশ বড় শতাংশ আবার ফিরে আসেন নতুন কিছু নিয়ে। যে উত্সাহ নিয়ে একেকটা বিজনেস কেস উপস্থাপন করেন, কল্পনায় তাদের জায়গায় নিজেকে বসানোর চেষ্টা করতে থাকি সে সময়ের জন্য। তারা প্রতিনিয়ত যে বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যান, তা অনুধাবন করার চেষ্টা করতে থাকি। চোখের সামনেই যে অল্পসংখ্যক কোম্পানিগুলো দেশ থেকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যাচ্ছে, হাল ছাড়তে দেখিনি কাউকে।

মেকানাস গোল্ড, প্রথম ক্লু। আর গোল্ড রাশের কথা মনে আছে আপনাদের অনেকেরই। নাপোলীয়ন হিলের বন্ধুর চাচাকে এইগোল্ড রাশে ধরেছিলো। বন্ধু ডার্বির চাচা ভাগ্গান্নেষে কলোরাডো পার হয়ে সোনার খোজে গেলেন অন্য সবার মতো। অনেক বুঝেশুনে জায়গা বেছে বেলচা শাবল নিয়ে খুড়তে শুরু করলেন তিনি। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুরতে ভাগ্যদেবী কিছুটা প্রসন্ন হলেন। পায়ের নিচে চকচকে আকরিকখন্ড পেতে শুরু করলেন। কিন্তু এটাকে তুলবে কে? চুপিসারি আবার গর্তগুলো বন্ধ করে রওয়ানা দিলেন দেশের বাড়ি মেরিল্যান্ডে।

দেশের কিছু আত্বীয়স্বজন আর এলাকার লোকজন মিলে টাকা তুলে যন্ত্রপাতি কিনে আবার রওয়ানা দিলেন আগের জায়গায়। এবার ডার্বি তার চাচার সঙ্গ নিলেন। আকরিক তুলে প্রথম গাড়ি পাঠানো হলো গলানোর কারখানায়। দেখা গেল এরকম ভালো আকরিক এ এলাকায় অন্যান্য খনিতেও পাওয়া যায়নি। আর কয়েকটা গাড়ি হলেই পুরো টাকা উঠে আসবে।

নুতন উদ্যমে শুরু হলো আবার খোড়াখুড়ি। ধারণা, এর পরের স্তরে  সোনার আকরিক পাওয়া যাবেই।

অবিশ্বাস্য ঘটনাটা ঘটল তখনই। আকরিক স্তরের সেই উল্টা রংধনুর তলানিতে স্বর্ণের যে স্তর থাকার কথা ছিল তা একবারে হাওয়া। স্বর্ণের খনির ভেতরে আকরিকের পরের স্তর না থাকাটাই অবিশ্বাস্য ঘটনা।

খোড়াখুড়ি চলতে থাকলো আরো অনেকদিন। আগের স্তরের লাইন ধরে এগোলো তারা। সপ্তাহ ঘুরতে শুরু করলো। সব চেষ্টাই বিফলে গেল।

হাল ছেড়ে দিল তারা।

কয়েকশো ডলারের বিনিময়ে তাদের সব যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়ে ট্রেন ধরল নিজ বাড়ির দিকে। সবার মন অসম্ভব খারাপ। যিনি কিনলেন তিনি ততো উচ্চভিলাসী ছিলেন না। নিতান্তই সাধারণ গোছের মানুষ। তবে কি মনে করে কিছু প্রকৌশলীকে ডেকে খনিটা দেখালেন। প্রকৌশলীরা এই অবিশ্বাস্য ঘটনার কারণ বের করতে কিছু হিসেব করলেন। দেখা গেল আগের দল আকরিকের আস্তরের ‘ফল্টলাইন’ এর ব্যাপারে জানতেন না। ভূমিকম্প বা অন্য আস্তরের চাপে এই ‘ফল্টলাইন’ সরে যেতে পারে। হিসেব করে দেখা গেল আর তিন ফুট দুরেই ছিল সোনার স্তর। খুড়ে ঠিক তাই পাওয়া গেল। কোটি টাকা তুলে নিলেন সেই খনি থেকে।

১৪.

প্রশ্ন, এই অবস্থায় আমি ডার্বির জায়গায় হলে কি করতাম? ধারণা করছি, অনুশোচনায় বাকি জীবন পার করতাম। পাগলগারদে জীবন পার করাও  অস্বাভাবিক কিছু নয়।

বহু বছর পর জনাব ডার্বির খবর পাওয়া গেল। না, পাগল হন নি তিনি। স্বর্ণ খনি থেকে যত টাকা হারিয়েছিলেন তার অনেকগুন টাকা আয় করেছেন তার জীবনবীমা ব্যবসা থেকে। ভুলতে পারেননি এক মুহূর্তও – কি হারিয়েছিলেন মাত্র তিন ফুট দুরে থেকে। “আমি হয়তোবা সোনা থেকে তিন ফুট দুরে আটকে গিয়েছিলাম, ‘না বলা’ মানুষকে বীমা করাতে তো আমাকে আটকাতে পারবে না”, নাছরবান্দার চরম পরকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন তিনি। ডার্বি বছরেই কোটি টাকার বীমা করতেন, যাকে ধরতেন তাকে বীমা করিয়েই ছাড়তেন। বীমা কোম্পানীর উত্পত্তি হলো।

উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নতুন শিক্ষানবিশদের বুদ্ধিমত্তার সাথে অকৃতকার্য হবার পন্থা শেখায়। ফলে, বার বার, বিভিন্নভাবে অকৃতকার্য হবার ফলে কৃতকার্য হবার রাস্তা একসময় পেয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে সাফল্যের হার বাড়তে থাকে।

একটা সাফল্য আনতে অনেক ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক ব্যর্থতা যেকোনো জিনিস থেকে বের হয়ে যাবার জন্য যথেস্ট যৌত্তিকতা তৈরী করে বলে মানুষ হাল ছেড়ে দেয়।

হাল ছাড়ছেন নাকি, আবার?

Read Full Post »