৪০.
আটকে ছিলাম দু সপ্তাহ – গানটা নিয়ে। গানটা নিয়ে নয়, ওটা নিয়ে লেখার ব্যাপারটায়। লেখবো – নাকি লেখবো না? কি মনে করে সবাই? আবার ওটার জন্য আটকে আছে বাকি লেখাগুলো। গা ঝাড়া দিলাম কয়েকবার। লিখে দেখি না, মিলে যেতে পারে বোদ্ধাদের সাথে। আর সহৃদয় পাঠকেরা তো আছেনই।
৪১.
রেডিওতে শোনার আগে এমটিভিতে দেখি গানটা। চ্যানেলটা পাল্টে ফেলি প্রথমবার দেখার আগেই। আর ‘না পাল্টানোর’ উপায় রাখে নি সে। সে মানে গায়িকার কথা বলছি আর কি। এক রত্তি সুতা ছাড়াই গায়িকা হেঁটে বেড়াচ্ছে সব পাবলিক প্লেসে। সুপারমার্কেট, সাবওয়ে – ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বাদ পড়েনি কিছুই। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি – যখনই টিউন করছি এমটিভি, চলছে গানটা। ওমা! বলতে বলতে চলেও এলো এমটিভি টপ টোয়েন্টিতে। ইউএস, ইউরোপিয়ান কাউন্টডাউন শেষ করে ফুড়ুত্ করে আবার ঢুকেও গেলো এশিয়ান কাউন্টডাউনে। কি আছে জিনিসটায়? পুরো গানটা দেখার পাশাপাশি কান খাড়া করলাম কৌতুহল থেকেই। আটকে গেলাম গ্লুয়ের মতো। চমত্কার পিয়ানোর কাজ দিয়ে শুরু হয়েছে গানটা। ‘অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ছেড়ে দিলে কেমন হয় বলো না?’ কেমন ধরনের প্রশ্ন এটা? অথচ এই কথা দিয়ে শুরু গানটা। মনে পড়লো ‘কমফোর্টেবল নাম্ব’য়ের কথা। মাথায় ঢুকে গেল ওই ছোটবেলার জ্বরের কথা। যখন হাত ভেসে যেত বেলুনের মতো। আটকে গেলাম একটা ভার্সে।
How ’bout me not blaming you for everything
How ’bout me enjoying the moment for once
How ’bout how good it feels to finally forgive you
How ’bout grieving it all one at a time …
৪২.
মনে আছে ‘জ্যাগ্গড লিটল পিল’ অ্যালবামটার কথা? আকাশ ছোয়া খ্যাতি পেয়েছিলো অ্যালানিস মরিসেট গানগুলো দিয়ে। সেটাও সেই পচানব্বইয়ের কথা। তিন বছর আর কিছু বের হয়নি বলে সবার দৃষ্টি ছিলো পরের ম্যাটেরিয়ালগুলোর দিকে। তখনই এলো পরের অ্যালবাম – যার মধ্যমনি হিসেবে ছিলো এই গানটা। থ্যাংক ইউ, ‘ধন্যবাদ সবাইকে’র মধ্যে একটা ব্যতিক্রমধর্মী অল্টারনেটিভ ‘নোশন’ কাজ করেছে শুরু থেকেই। ভিএইচওয়ান চ্যানেলে ‘স্টোরিটেলার্স’য়ের একটা পর্বে এসেছিলো অ্যালানিস। গানটা লেখার ব্যপারে প্রশ্ন আসলে তার ধারনাটা পরিষ্কার হয় আমাদের কাছে। ‘আমরা এমন একটা সমাজ ব্যবস্থায় আছি যেখানে আমাদের বাইরের চেহারাটাই সব। সেটাতেই ডুবে আছি আমরা। মনে করছি ওখানেই আমাদের শান্তি। মানুষ বলছে আমি যা পাবার সেটা পেয়ে গিয়েছি এই বয়সেই। আসলে কি তাই? শান্তি পাচ্ছিলাম না মনে মনে। প্রশ্ন করা শুরু করি নিজেকে। বুঝি তখন, যা পেয়েছি সবই ‘ইল্যুশন’ মানে ভ্রমের মধ্যে আছি আমি। আমার সামনের সবকিছু যখন উবে যাওয়া শুরু করলো কর্পুরের মতো, সত্যিকারের ভয় পেতে শুরু করলাম তখন। মৃত্যুর ব্যাপারটাও ভাবিয়েছে আমাকে। সবকিছু নিয়ে থামলাম একসময়।’
৪৩.
ওই সময় সব বাদ দিয়ে দেড় বছরের ছুটি নিলো অ্যালানিস – নিজের কাছ থেকে। চলে এলো ভারতের দিকে। নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে। শুধু নিজেকে নয়, আশেপাশের সবাইকে নিয়ে। সমাজটা সবাইকে নিয়ে, ধারনাটা ‘সবাই আমরা সবার তরে’র মতো। তার আশেপাশের সবার কারণে আজ সে এখানে। সেই কৃতজ্ঞতা থেকেই গানটা লেখা তার।
How ’bout no longer being masochistic
How ’bout remembering your divinity
How ’bout unabashedly bawling your eyes out
How ’bout not equating death with stopping …
৪৪.
তবে তার অফিসিয়াল মিউজিক ভিডিওটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না বলে আমি নিজেও দেখিনি প্রথম দিকে। এমটিভি, ইন্ডিয়া আর এশিয়ার অনেক দেশেই ওটাকে কিছুটা পাল্টে চালিয়েছিলো প্রথমদিকে। গানতো শোনার জন্য, দেখার ব্যাপারটাকে রেখে দেই আলাদা করে। গ্র্যামি পেয়েছিলো গানটা। দুহাজার এক সালে ভিএইচওয়ানের সেরা একশো ভিডিও’র মধ্যে তার জায়গা হয়েছিল ৬৬তে। বাংলাভাষাবাসী ব্লগে অফিসিয়ালটা না দিয়ে অডিওটা দিলাম শুধু!
[ক্রমশ:]