Feeds:
Posts
Comments

Archive for October, 2014

৪০.

আটকে ছিলাম দু সপ্তাহ – গানটা নিয়ে। গানটা নিয়ে নয়, ওটা নিয়ে লেখার ব্যাপারটায়। লেখবো – নাকি লেখবো না? কি মনে করে সবাই? আবার ওটার জন্য আটকে আছে বাকি লেখাগুলো। গা ঝাড়া দিলাম কয়েকবার। লিখে দেখি না, মিলে যেতে পারে বোদ্ধাদের সাথে। আর সহৃদয় পাঠকেরা তো আছেনই।

৪১.

রেডিওতে শোনার আগে এমটিভিতে দেখি গানটা। চ্যানেলটা পাল্টে ফেলি প্রথমবার দেখার আগেই। আর ‘না পাল্টানোর’ উপায় রাখে নি সে। সে মানে গায়িকার কথা বলছি আর কি। এক রত্তি সুতা ছাড়াই গায়িকা হেঁটে বেড়াচ্ছে সব পাবলিক প্লেসে। সুপারমার্কেট, সাবওয়ে – ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বাদ পড়েনি কিছুই। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি – যখনই টিউন করছি এমটিভি, চলছে গানটা। ওমা! বলতে বলতে চলেও এলো এমটিভি টপ টোয়েন্টিতে। ইউএস, ইউরোপিয়ান কাউন্টডাউন শেষ করে ফুড়ুত্‍ করে আবার ঢুকেও গেলো এশিয়ান কাউন্টডাউনে। কি আছে জিনিসটায়? পুরো গানটা দেখার পাশাপাশি কান খাড়া করলাম কৌতুহল থেকেই। আটকে গেলাম গ্লুয়ের মতো। চমত্কার পিয়ানোর কাজ দিয়ে শুরু হয়েছে গানটা। ‘অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ছেড়ে দিলে কেমন হয় বলো না?’ কেমন ধরনের প্রশ্ন এটা? অথচ এই কথা দিয়ে শুরু গানটা। মনে পড়লো ‘কমফোর্টেবল নাম্ব’য়ের কথা। মাথায় ঢুকে গেল ওই ছোটবেলার জ্বরের কথা। যখন হাত ভেসে যেত বেলুনের মতো। আটকে গেলাম একটা ভার্সে।

How ’bout me not blaming you for everything
How ’bout me enjoying the moment for once
How ’bout how good it feels to finally forgive you
How ’bout grieving it all one at a time …

৪২.

মনে আছে ‘জ্যাগ্গড লিটল পিল’ অ্যালবামটার কথা? আকাশ ছোয়া খ্যাতি পেয়েছিলো অ্যালানিস মরিসেট গানগুলো দিয়ে। সেটাও সেই পচানব্বইয়ের কথা। তিন বছর আর কিছু বের হয়নি বলে সবার দৃষ্টি ছিলো পরের ম্যাটেরিয়ালগুলোর দিকে। তখনই এলো পরের অ্যালবাম – যার মধ্যমনি হিসেবে ছিলো এই গানটা। থ্যাংক ইউ, ‘ধন্যবাদ সবাইকে’র মধ্যে একটা ব্যতিক্রমধর্মী অল্টারনেটিভ ‘নোশন’ কাজ করেছে শুরু থেকেই। ভিএইচওয়ান চ্যানেলে ‘স্টোরিটেলার্স’য়ের একটা পর্বে এসেছিলো অ্যালানিস। গানটা লেখার ব্যপারে প্রশ্ন আসলে তার ধারনাটা পরিষ্কার হয় আমাদের কাছে। ‘আমরা এমন একটা সমাজ ব্যবস্থায় আছি যেখানে আমাদের বাইরের চেহারাটাই সব। সেটাতেই ডুবে আছি আমরা। মনে করছি ওখানেই আমাদের শান্তি। মানুষ বলছে আমি যা পাবার সেটা পেয়ে গিয়েছি এই বয়সেই। আসলে কি তাই? শান্তি পাচ্ছিলাম না মনে মনে। প্রশ্ন করা শুরু করি নিজেকে। বুঝি তখন, যা পেয়েছি সবই ‘ইল্যুশন’ মানে ভ্রমের মধ্যে আছি আমি। আমার সামনের সবকিছু যখন উবে যাওয়া শুরু করলো কর্পুরের মতো, সত্যিকারের ভয় পেতে শুরু করলাম তখন। মৃত্যুর ব্যাপারটাও ভাবিয়েছে আমাকে। সবকিছু নিয়ে থামলাম একসময়।’

৪৩.

ওই সময় সব বাদ দিয়ে দেড় বছরের ছুটি নিলো অ্যালানিস – নিজের কাছ থেকে। চলে এলো ভারতের দিকে। নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে। শুধু নিজেকে নয়, আশেপাশের সবাইকে নিয়ে। সমাজটা সবাইকে নিয়ে, ধারনাটা ‘সবাই আমরা সবার তরে’র মতো। তার আশেপাশের সবার কারণে আজ সে এখানে। সেই কৃতজ্ঞতা থেকেই গানটা লেখা তার।

How ’bout no longer being masochistic
How ’bout remembering your divinity
How ’bout unabashedly bawling your eyes out
How ’bout not equating death with stopping …

৪৪.

তবে তার অফিসিয়াল মিউজিক ভিডিওটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না বলে আমি নিজেও দেখিনি প্রথম দিকে। এমটিভি, ইন্ডিয়া আর এশিয়ার অনেক দেশেই ওটাকে কিছুটা পাল্টে চালিয়েছিলো প্রথমদিকে। গানতো শোনার জন্য, দেখার ব্যাপারটাকে রেখে দেই আলাদা করে। গ্র্যামি পেয়েছিলো গানটা। দুহাজার এক সালে ভিএইচওয়ানের সেরা একশো ভিডিও’র মধ্যে তার জায়গা হয়েছিল ৬৬তে। বাংলাভাষাবাসী ব্লগে অফিসিয়ালটা না দিয়ে অডিওটা দিলাম শুধু!

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

And you may hear the same old story
In ev’ry town, on ev’ry street
The story of ‘Sunset’, and the
Heartbreak Kid

– Icehouse, Man of Colours

৩৫.

গানের নায়িকার প্রেমে পড়ে যাব – সেটা ভাবিনি কখনো। বইয়ের নায়িকা? ঠিক আছে, বই তো ‘গ্রো’ করতে থাকে আমাদের মনের ওপর – পড়ার শুরু থেকে। প্রথমেই না পছন্দ – নায়িকাকে। হবে না কেন? সেই তো ঝামেলা তৈরি করতে থাকে নায়কের। শুরু থেকে। বাস্তবেও তাই। আগেই ‘ক্লিয়ার’ করে রাখি, স্বাতী ব্যতিক্রম। নো মোর ডিসট্র্যাকশন। ফিরে আসি বইয়ে। একেকটা অধ্যায় পার হয়, মায়া বাড়তে থাকে নিজের অজান্তে। মানে নায়িকার ওপর। নায়ক হয়তো পাত্তা দিচ্ছে না মেয়েটাকে। তখন নিজেই উতযোগ নেই – মেলানোর ব্যপারে। আমরা তো আর মিলাই না, ওত্‍ পেতে থাকি গল্পের ‘টুইস্টে’র জন্য। কখন নায়িকা এমন কিছু করে ফেলবে যাতে নায়ক জিভ কেটে নায়িকার কাছে ক্ষমা চাইবে। মুভিতে মিল হলেও বইতে আবার মিলনান্তক ঘটনা কম।

‘ঠিক বলেন নি আপনি।’ আপনার জবাব। তবে তর্কে কখনোই পারিনি মানুষের সাথে।

৩৬.

বন্ধুর বাসায় গিয়ে চোখে পড়লো ক্যাসেটের খাপ একটা। বোঝাই যাচ্ছিলো বাইরে থেকে এনেছে কেউ। ইএমআই, অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডিং। উনিশশো অষ্টাশির কথা। খুব গান শুনতাম তখন। হয়তোবা, এখনো। কাভারটা পুরোটাই সাদা, একটা মানুষের আউটলাইন আঁকা। একেছে তাও কয়েক টানে। মানুষটার হাতে ফুল তিনটা। তিনটাই তিন রঙের। অ্যালবামের কাভার হিসেবে একেবারে ব্যতিক্রমধর্মী। আকর্ষণ করলো আমাকে। খোঁজ নিয়ে জানলাম, বন্ধুর খালাতো বোন এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। বরাবরের মতো ধার নিলাম ক্যাসেটটা। দিন কয়েকের জন্য। অস্ট্রেলীয় গায়কদের গান তো কম শোনা হয়নি ওই সময়ে। থ্যাংকস টু এবিসি, অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কার্পোরেশন। আর শর্টওয়েভ রেডিও।

৩৭.

আটকে গেলাম পাঁচ নম্বর গানটাতে। কোনো রিওয়াইন্ড বাটন ছিলো না আমার ওয়াকম্যানে – ওই সময়ের জিনিস। প্লে, ফরওয়ার্ড আর স্টপ। রিওয়াইন্ড করতে হলে ক্যাসেটটাকে উল্টিয়ে ফরওয়ার্ড – আবার উল্টিয়ে প্লে। সেম ড্রিল, ওভার এণ্ড ওভার এগেন। বুঝতেই পারছেন অবস্থাটা। আমার অভ্যাস হচ্ছে গান ভালো লাগলে শুনি – হাজারবার। রিপিট – আনলিমিটেড মোড। বাসার সবাই জানে ব্যাপারটা। অভ্যস্ত হয়ে গেছে সবাই। বিয়ের পর স্বাতীও। এখন আমার বাচ্চারা। আমার ধারনা, ইউটিউব আমাকে চেনে বলে ‘রিপিট’ ফিচারটা দেয়নি ইচ্ছে করে। আর সে কারণে চলে এসেছে রিপিট করার আলাদা সাইট। টেকনোলজি, ব্রাদার।

৩৮.

তখন তো ওয়েস্টার্ন বইয়ের যুগ। ঘটনাটা আঁচ করে নিলাম লিরিকস দেখে। বাকিটা তৈরি হলো মাথায় আমার। প্রেমে পড়ে গেলাম ‘সানসেট’ নামের মেয়েটার। বারমেইড। সমস্যাটা শুরু হলো অন্যখানে। আগন্তুক বন্ধুকধারীকে গুলি না করলে কি হতো না? আর বোকাটাই বা কেন চলে যেতে চাইলো? হৃদয় ভাঙার খেসারত যে এভাবে দিতে হবে এটা কে জানতো? গল্পটা অবশ্য জানে সবাই, পুরো জনপদ। রোমিও জূলিয়েটের ধাঁচে। ওয়েস্টার্ন বইয়ের ভেতরের সাব-প্লটের মতো। সবই ঘোরাঘুরি করছে মাথার ভেতরে। বের হয় না আর।

৩৯.

এটা ঠিক, ইভা ডেভিস গানটাও লিখেছিল দরদ দিয়ে। চমত্কার ‘স্টোরিটেলিং’ রয়েছে গানটাতে। সেটিং, প্রেমিস – সবই অসাধারণ। অ্যালবাম কাভারটার স্কেচেও হাত রয়েছে তার। আর শুরুটা না শুনলে মিস করবে সবাই। আরেকটা কথা না বললেই নয়, অ্যালবামটার নামটাও অসাধারণ বটে।

পুনশ্চ: এর মিউজিক ভিডিওটা পাইনি খুঁজে। গানটার জন্য লিংকটা দেয়া।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

What you do has far greater impact than what you say.

— Stephen Covey

৬৩১.

ইকনোমিস্টের একটা রিপোর্ট পড়ছিলাম দিন কয়েক আগে। ওদের ‘ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট’ থেকে প্রতিনিয়ত ‘স্পেশাল রিপোর্ট’ বের করে – বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যাকে নিয়ে। এটা ছিলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্রডব্যান্ডের ভবিষ্যতের ওপর। মোবাইল ব্রডব্যান্ড নিয়ে অনেক আশা থাকলেও সেটার কিছু সমস্যা পিছিয়ে দিচ্ছে দেশগুলোকে। অপারেটররা চাচ্ছে নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে – তবে সেটার কাঁচামাল হচ্ছে এই স্পেকট্রাম। আর সেটার ‘অ্যালোকেশন’ নিয়ে যতো সমস্যা। আগে ঠিকমতো ‘অ্যালোকেশন’ না দেয়াতে নতুন করে পাওয়া যাচ্ছে না স্পেকট্রাম। অথবা নতুন স্পেকট্রাম কিভাবে দেবে সেটার ‘মোডালিটি’ কি হবে সেটা জ্ঞান না থাকার কারণে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে অনেক অনেক বেশি। স্পেকট্রামের দামটা কি হবে সেটা নিয়ে কালক্ষেপণ করছে অনেক দেশ। অথচ, এটার ব্যপারে ‘অপুরচুনিটি কস্ট’ বলে একটা হিসেব চলছে উন্নত দেশগুলোতে – অনেকদিন ধরে।

৬৩২.

অর্থনীতির সংজ্ঞাতে গেলে কিন্তু বিপদ। উদাহরণ টানি বরং – এই স্পেকট্রাম দিয়েই। স্পেকট্রামের ‘অপুরচুনিটি কস্ট’ বের করতে পারি দুভাবে। প্রথম প্রশ্ন, মোবাইল অপারেটর ‘ক’কে ওই স্পেকট্রামটা ছাড়া পুরোনো স্পেকট্রাম দিয়ে একই ভূখণ্ড আর গ্রাহকদের সার্ভিস দিতে গেলে তার বাড়তি খরচ করতে হবে কতো? মানে, তাকে বার বার ব্যবহার করতে হবে ওই পুরনো স্পেকট্রাম, কমিয়ে দিতে হবে ট্রান্সমিশন পাওয়ার, কিনতে হবে অনেক বেশি বেজস্টেশন। আরেকটা প্রশ্ন হতে পারে এধরনের – আমরা স্পেকট্রামটা যদি অন্য কোন সার্ভিসে দিতাম, তাহলে ওই নতুন মোবাইল কোম্পানীটা কতো টাকার সুবিধা পেত ওই সার্ভিসটা তৈরি করতে গিয়ে? এটাই ‘অপুরচুনিটি কস্ট’, যেখানে অপারেটরও খুশি আর গ্রাহককেও দিতে হচ্ছে না অকশনের উচ্চমূল্যের খেসারত। ‘থ্রীজি’ স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয়া হলো এশিয়ার প্রথম দিকের দেশগুলোর প্রায় বারো বছর পর। সিংগাপুরের রেগুলেটর অপারেটরদের পুরোনো ‘টুজি’ স্পেকট্রামের ওপর সব টেকনোলজি চালাতে দিয়ে এগিয়ে গেলো সবার – অনেক অনেক আগে। বলছিলেন সেখানকার ডেপুটি চীফ এগজিকিউটিভ, লেয়ং কেঙ্গ থাই। এক ধাক্কায় তাদের অপারেটরগুলো চলে গেলো ‘টুজি’ থেকে ‘ফোরজি’তে। দিতে শুরু করলো সত্যিকারের মোবাইল ব্রডব্যান্ড।

৬৩৩.

রেগুলেটরের ভাষায় এটাকে বলে ‘টেকনোলজি নিউট্রালিটি’ – মানে স্পেকট্রাম কিনে নাও কোন ধরনের ‘ইফ’ আর ‘বাট’ ছাড়াই। ‘নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড’। যে সময়ের জন্য কিনছো, ব্যবহার করো নিজের পছন্দমতো টেকনোলজি, বাজার যা চায়। বাজার ‘টুজি’, না ‘থ্রীজি’, না ‘ফাইভজি’, যা চাইবে সেটা দিতে পারবে ওই স্পেকট্রাম দিয়ে। এক কথায় অপারেটরকে স্বাধীনতা দেয়া স্পেকট্রামের ‘এফিশিয়েণ্ট’ ব্যবহারের ওপর। দুশো হার্টজ নাকি দশ মেগাহার্টজের চ্যানেল প্ল্যান, স্বাধীনতা অপারেটরদের। গ্রাহক বুঝে। আরেকটা উদাহরণ নিয়ে আসি আপনার সুবিধার জন্য। বাজার থেকে কিনলেন ফুলপ্যান্ট একটা। প্যান্টের পকেট চারটা, তার তিনটাই সেলাই করা। বলা হলো, ব্যবহার করতে পারবেন একটা, বাকিগুলো খুলতে লাগবে – পঞ্চাশ টাকা করে – প্রতিটা। পুরো প্যান্টের ‘এফিশিয়েণ্ট’ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হলো আপনাকে।

৬৩৪.

রেগুলেটরের কাছে এটা একটা কলমের খোঁচা হলেও, অপারেটরের কাছে এটা একটা বিশাল জিনিস। এটা একটা নতুন ধরনের ‘সিগন্যাল’ দেয় বাজারে। সেটা চলে যায় পুরো বিনিয়োগ দুনিয়ায়। আনকোরা নতুন মেসেজ। ‘নিশ্চয়তা’, রেগুলেটরী সার্টেনিটি। আর সেকারণে ‘ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস অ্যাক্সেস’ লাইসেন্সে ব্যাপারটা ঢোকাতে না পারলেও থ্রীজি লাইসেন্সের প্রথম ড্রাফটেই দেয়া হয়েছিল এই ‘নিউট্রালিটি’র ব্যাপারটা। অনেক রেগুলেটর এটাকে ‘টেকনোলজি অ্যাগনস্টিক’ বলে থাকেন। নীতিমালার নিশ্চয়তা চায় সবাই। অপারেটর, গ্রাহক, সবাই। জিএসএম অপারেটরদের অ্যাসোশিয়েশন, জিএসএমএ’র একটা স্টাডি বলে শুধুমাত্র এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিয়নের জিডিপি বাড়বে এক ট্রিলিয়ন ডলারে। ২০১৪ থেকে ২০২০য়ের মধ্যে। একটাই শর্ত, ‘এফিশিয়েণ্ট ইউজ অফ স্পেকট্রাম’। বেশি মনে হতে পারে, তবে, আমার ধারণায় এটা ছাড়িয়ে যাবে তাদের হিসেবকে। সেটা দেখাবো কাগজে কলমে। সামনে।

৬৩৫.

তবে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সব সমস্যার ‘জীয়ন কাঠি’ – এটা ভাবা ভুল হবে। এমনটাই বলেছেন আরেকজন আইটিইউ কন্সাল্ট্যান্ট। মোবাইল ব্রডব্যান্ড ততোক্ষণ পর্যন্ত ভালো সার্ভিস দেবে যখন তার পাশাপাশি ভালো ‘ফিক্সড’ নেটওয়ার্ক থাকবে। ‘ফিক্সড লাইন অ্যাক্সেস’ আর ‘ওয়াই-ফাই’ না হলে এতো ডাটা ‘অফলোড’ একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার – তাও আবার শহরগুলোতে। স্মার্টফোন কিন্তু বাড়ছে হু হু করে। ফেমটোসেল আর ওয়াই-ফাই কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে অপারেটরদের। সিংগাপুরের রেগুলেটর সবার সাথে বসে তৈরি করছে ‘হেটনেট’। এই ‘হেটারোজেনাস নেটওয়ার্কে’ থাকছে ফিক্সড লাইন, মোবাইল অপারেটরের ডাটা, ওয়াইফাই আর ছোট ছোট সেলুলার নেটওয়ার্ক। গ্রাহকরা বুঝবেনই না কিভাবে ‘সিমলেস ট্রানজিশন’ হচ্ছে নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে। ওটা তো জানার দরকার নেই জনসাধারণের। এটা ছাড়া, এই বিশাল ডাটা ডিমান্ড মেটানো সম্ভব নয়, কারো একার পক্ষে। আর ঢাকা শহরের জন্য আমার প্রস্তাবনা কিছুটা ভিন্ন। সেটা প্রাসঙ্গিক নয় বলে এখানে আলাপ করছি না। কীওয়ার্ড, নেটকো মডেল।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

When I give a minister an order, I leave it to him to find the means to carry it out.

— Napoleon Bonaparte

৬২৫.

দরকার কি এইসব ইন্টারনেট ‘ইকোসিষ্টেমে’র? একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখতে পারবেন এগুলো একটা আরেকটার ওপর – পুরোপুরি ‘ইন্টার-ডিপেণডেণ্ট’। একটা ছাড়া আরেকটা অচল। অথচ, এই ইকোসিষ্টেমের প্রতিটা জিনিষ নিয়ে কাজ করে সরকারের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট। সত্যিই তাই। কার সাথে কোনটার কি সম্পর্ক সেটা না জানলেই বিপদ। ইন্টারনেটের ট্রান্সমিশন মানে হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। সার্ভিসগুলো কার? সেটা তো আসলে সবার। অনলাইন ক্লাস নিয়ে মাথাব্যথা হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। ‘জেনারেল পারপাজ টেকনোলজি’ হিসেবে সবকিছুই দরকার সব মন্ত্রণালয়ের। ‘হেল্থকেয়ার’ নিয়ে ইন্টারনেটের সুবিধা নিচ্ছে পাশের দেশ ভারত। হাজার মানুষ প্লেন ভরে আসছে ওই দেশে ‘হেল্থকেয়ার’ ট্রিপে। প্রাথমিক ‘ডায়াগনস্টিকস’ হচ্ছে ইন্টারনেটের ওপর দিয়ে। থাইল্যান্ড আর সিংগাপুর তো শুরু করেছে অনেক আগেই।

৬২৬.

স্বাস্থ্য আর চিকিত্‍সা নিয়ে কাজ করবে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়। ‘অ্যাপ্লিকেশন’ নিয়ে কাজ করছে আইসিটি মন্ত্রণালয় অনেক আগে থেকে। তবে কেউ জানে না কার করতে হবে – কতোটুকু অংশ। নাকি আবার ‘ডুপ্লিকেশন অফ ইফোর্ট’ হচ্ছে বার বার? বিটিআরসিতে থাকার সময় দেখেছি এধরনের কাজ – করছে সবাই। সবার দরকার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, পয়সা ঢালছে কিন্তু সবাই। গরীব দেশে এটা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। এমনিতেই ফান্ডিংয়ের সমস্যা, সেখানে পয়সা যাচ্ছে নতুন নতুন জায়গায় – না জানার কারণে। ডোনার এজেন্সিরা সরকারের এই ‘সমন্বয়হীনতা’ ব্যাপারটা জেনেও দেনার ধার বাড়াচ্ছেন দিনে দিনে।

৬২৭.

ইন্টারনেট বা ব্রডব্যান্ড যাই বলেন সেটা যে শুধু হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক নয় – সেটা থেকে বের হতে এই ‘ইকোসিষ্টেম’ ব্যবস্থা। সার্ভিস আর অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার আগে কথা বলে নিতে হবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে – জিনিসগুলো তাদের নেটওয়ার্ক নিতে পারবে কি না? টিএণ্ডটি’র যুগে ‘টেলিফোন মডেল’ থেকে বের হয়ে আসতে হবে আগে। একটা ফোনের জন্য একটা লাইন। আরেকটা ফোন লাগাতে চাইলে আরেকটা লাইন – আর ফ্যাক্স চাইলে আরেকটা। ওইটা ছিলো পুরনো টেলিযোগাযোগের ‘ওয়ালড গার্ডেন’ সমস্যা, সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা রিসোর্স। এখনকার যুগে লাইন আসবে একটা, ওইটার ওপর যা চাইবেন তাই করবেন। আবার সার্ভিস আর অ্যাপ্লিকেশন কিন্তু শুধুমাত্র আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি নয়, এটা সবার। শিক্ষা আর হেল্থকেয়ার অ্যাপ্লিকেশন কেন তৈরি করবেন তারা? ব্যবহারকারী মন্ত্রণালয় জানেন না – কিন্তু তার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছেন আরেকজন। ‘ইন-কম্পাটিবিলিটি’র শুরু ওখানেই। সনাতন ‘পুশ’ মানে ‘খাইয়ে দেয়া’র মডেল থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের। পয়সা ঢালো ‘সাপ্লাই সাইডে’, মানে দাম কমাও ইন্টারনেটের – ওতেই হবে সব – সেটা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে আমাদের।

৬২৮.

মানি, পুরনো শেখাটাকে ‘আন-লার্ন’ করা কষ্টের। সেটাকে মেনেই চিন্তা করতে হবে নতুন ‘কনসেপ্চুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক’, বড় আকারে – সবাইকে নিয়ে। ব্যবহারকারীদের নিয়ে। টাকা দেয় তো তারাই। তাদের জন্যই তো সবকিছু। চারটা কম্পোনেণ্টকে আলাদা করে মাইলস্টোনে ভাগ করলেই ‘ফোকাস’ এরিয়াগুলো বোঝা যাবে সরকারের দিক থেকে। ইকোসিষ্টেমের প্রতিটা কম্পোনেণ্টকে আলাদা করে সেটার জন্য সরকারের কোন কোন এজেন্সি কাজ করবে সেটা বের করতে হবে আগে। সেটার ‘ফীডব্যাক’ লুপ যাবে সরকারী বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলোতে। সেটাকে ঘিরে ঘোরাতে হবে সরকারের সম্পর্কিত পলিসিগুলোকে। শুধুমাত্র ব্রডব্যান্ড নীতিমালা নিয়ে কাজ করতে গেলে পয়সা, সময় আর ‘ফোকাস’ নষ্ট হবে আরো বেশি। আমাদের মতো গরীব দেশের জন্য সেটা হয়ে যাবে বড় ধরনের বিলাসিতা। এখনকার ‘ব্রডব্যান্ড প্লান’ আগের মতো নেই আর। এটা শুরু হয় দেশের ‘দর্শন’ নিয়ে। দেশ কি চায়, সেটা বের করতে হয় আগে। টেকনোলজি বাদ, দেশের ‘প্রায়োরিটি’ বের করতে হয় খুটে খুটে। উদাহরণ দেখবেন নাকি একটা? ‘কানেক্টিং আমেরিকা’ বলে ওদের ন্যাশন্যাল ব্রডব্যান্ড প্ল্যানটা দেখলে পরিষ্কার হবে সবার। দেখুন তাদের দর্শনগুলো – প্রথম কয়েক লাইনে। সবকিছু আছে ওতে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা, চিকিত্‍সা ব্যবস্থা, সরকারের কাজের জবাবদিহিতা, এনার্জি খাত, মানুষের নিরাপত্তা, আরো অনেক কিছু – কোন কিছু বাদ রাখে নি তারা। এক্সিকিউটিভ সামারিটা না পড়লে ব্যাপারটা না ধরতে পারার সম্ভাবনা বেশি। একটা দেশ কি চায়, সেটাই এনেছে এই প্ল্যানে। বিশাল ক্যানভাস।

৬২৯.

‘বিল্ডিং ব্রডব্যান্ড’ বইটাতে আমাদের মতো দেশগুলো কি ধরনের ভুল করতে পারে সেগুলোর বেশ কিছু ধারনা দিয়েছেন আগেভাগেই। ব্রডব্যান্ড মানে ইন্টারনেটের মতো প্রোডাক্টের ডিমান্ড তৈরি করার মতো ‘ব্যাপারটা’র ধারনা না থাকাতে পুরো ইনভেস্টমেন্ট চলে যায় ‘সাপ্লাই’ সাইডে। মানে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি হলেই খুশি। কিভাবে বাড়াতে হবে ব্যবহারকারীদের সংখ্যা, তৈরি করতে হবে নতুন নতুন সার্ভিস, নতুন গ্রাহকবান্ধব অ্যাপ্লিকেশন – সেটা পলিসিতে না থাকাতে পুরো কাজটাই যায় ভেস্তে। ‘ইকোনোমি অফ স্কেল’ – ব্যবহারকারী বাড়লে কমবে দাম, আর দাম কমলে আসবে নতুন নতুন সার্ভিস, নতুন ইনভেস্টমেন্ট। ইকোসিষ্টেমের তুখোড় সাইকেল হচ্ছে জিনিসটা। কম্পোনেণ্টগুলোর মধ্যে ‘ইন্টার-ডিপেনডেন্সি’ থাকাতে পুরো জিনিসটাকে ফেলতে হবে বড় ক্যানভাসে। ইংরেজিতে যাকে আমরা বলি ‘হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ’, তাহলেই কাজ করবে পুরো ইকোসিষ্টেম। কম্পোনেণ্টগুলোর একটার ওপর আরেকটার নির্ভরশীলতা কাজ করে অনেকদিক থেকে। হাই-স্পীড ট্রান্সমিশনে ইনভেস্টমেন্ট আসা মানে ‘কোয়ালিটি অফ সার্ভিস’ বাড়বে আমাদের দরকারী সব সার্ভিসগুলোতে। আর সেটা বাড়িয়ে দেবে ‘ব্যান্ডউইডধ ইন্টেসিভ’ অ্যাপ্লিকেশন তৈরির মাত্রা। যতো বেশি অ্যাপ্লিকেশন, ততো বেশি টানবে নতুন নতুন গ্রাহকদের। নতুন গ্রাহকেরা চাপ তৈরি করবে নেটওয়ার্ক এক্সপ্যানশনের কাজে। ফলে বাড়বে ইন্টারনেট আর ব্রডব্যান্ডের ওপর নতুন ইনভেস্টমেন্ট। পুরো পৃথিবী বসে আছে পয়সা নিয়ে। ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার জন্য বসে আছে কোম্পানীগুলো।

৬৩০.

নতুন সার্ভিস আসা মানে নতুন কনটেন্ট তৈরির হিড়িক। কনটেন্ট তৈরি করছেন ব্যবহারকারীরা নিজেই। ইন্টারনেটের শুরুতে ডাউনলোডই ছিলো বেশি। আজ – পাল্টে গেছে দাবার গুটি। অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে গুগল আর ফেসবুকের মতো কোম্পানীগুলো। হাজার হাজার গিগাবাইটের ‘ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট’ আসছে আপনার আমার দিক থেকে। আমার আপনার ভিডিও, ছবি, ব্লগ পোস্ট দিয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট। ষাট হাজার ছবি আছে আমারই, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। আগে কনটেন্ট তৈরি করতো মিডিয়া কোম্পানীগুলো। এখন সেটা চলে এসেছে গ্রাহকদের হাতে। ফলে, দরকার হচ্ছে হাই-স্পীড নেটওয়ার্ক – ব্যবহারকারীর দোরগোড়ায়।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

The nation will find it very hard to look up to the leaders who are keeping their ears to the ground.

—Sir Winston Churchill

৬১৬.

ব্রডব্যান্ড কি না দিচ্ছে? ইন্টারনেটের কথা বলছি আর কি। পড়ছিলাম দুহাজার সাতের ‘ইয়ানসেনের’ রিপোর্টটা। আস্তে আস্তে যোগ হতে থাকলো জেনী, বেজলী, ফিলিপা আর টিম কেলীর অনেকগুলো রিপোর্ট। বিশ্বব্যাঙ্কের ‘বিল্ডিং ব্রডব্যান্ড’ বইটা বেশ কিছু মিলিয়ে নিয়ে এসেছে কয়েকটা যায়গায়। সামাজিকভাবে ইন্টারনেটের সুবিধা কোথায় কোথায়? ফার্স্ট থিং ফার্স্ট, এটা যুক্ত করছে আমাদের সবাইকে। এই যে পড়ে আছি আমি সুদূর ‘কোতে দে ভোয়া’তে (সরকারীভাবে তারা মানে না ‘আইভরি কোস্ট’ নামটা), যুক্ত আছি কিন্তু এই ইন্টারনেটের ওপর দিয়ে। আমার সব ‘অ্যাপ’ জীবিত আছে ওই পাইপটার জন্য।

যোগাযোগে কোন সুযোগ নিতে নেই। আরেকটা ভি-স্যাট আছে অন্য যায়গায়।

যোগাযোগে কোন সুযোগ নিতে নেই। আরেকটা ভি-স্যাট আছে অন্য যায়গায়। ডিজাস্টার রিকভারি সাইটে। ওপরের দিকের মাইক্রোওয়েভ লিংকটার কথা বাদ দিয়েছি নাকি?

৬১৭.

ছবি দেবো নাকি একটা? এছাড়া, যুক্ত করছে ব্যবসাগুলোকে যারা পয়সা আনছে দেশে – তৈরি করছে কর্মক্ষেত্র। সবচেয়ে বড় জিনিসটা বলিনি এখনো। এটা যুক্ত করছে মানুষকে তাদের সরকারের সাথে। সরকারের সব সার্ভিসের সাথে। প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ‘সুশাসন’। ‘গুড গভার্নেন্স’ যাকে বলি আমরা। সরকারের কর্মক্ষমতা চেখে দেখতে পারছি আমরা। জবাবদিহিতা বাড়ছে সরকার আর রাজনীতিবিদদের। আমার ‘জবাবদিহিতা’র ওয়ার্ক-ফ্লো তৈরি করেছিলাম বিটিআরসিতে থাকতে। এর ওপরে তৈরি হয় দেশের প্রবৃদ্ধি। ইংরেজিতে ‘সোশ্যাল ক্যাপিটাল’ও বলতে শুনেছি অনেক যায়গায়। মানে মানবসম্পদের মেধাভিত্তিক – অর্থনৈতিক যাই বলেন সবকিছুর প্রবৃদ্ধি।

৬১৮.

আজ ফেসবুকেই বিক্রি হচ্ছে অনেককিছু। বই, টি-শার্ট, জামা কাপড় – আরো কতো কি? গ্রাহক নিজে কথা বলছেন ক্রেতার সাথে। ভালো মন্দ যাই বলছেন না কেন সেটা কিন্তু ছড়াচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। ‘ইবে’ থেকে পুরোনো কিছু সিডি কিনেছিলাম অনেকদিন আগে। এর মধ্যে কিভাবে একটার সিডি’র কভার গিয়েছিলো ফেটে। শিপিংয়ের সময় হতেই পারে সেটা। কমেন্ট না করে ইমেইলে এমনিতে জানিয়েছিলাম বিক্রেতাকে। তবে সেটা পাল্টে দিতে বলিনি ইমেইলে। পরের সপ্তাহে নতুন কভার এসে হাজির। বিক্রেতাকে ভালো ‘রেটিং’ না দিয়ে উপায় আছে আমার?

৬১৯.

‘ইনফর্মেশন ইজ পাওয়ার’। আজ আমরা জানি কোথায় কি আছে – এই ইন্টারনেটের বদৌলতে। তথ্য যতো ছড়াবে, ইকোনোমিক অ্যাক্টিভিটি বাড়বে জ্যামিতিক হারে। ফালতু জিনিস গছিয়ে দিয়ে টাকা মেরে দেবার দিন গেছে চলে। ফলে, কোম্পানীগুলোর মধ্যে বাড়ছে সুশাসন। বাড়ছে ব্যবসা। কোম্পানীগুলো ‘সৌর্সিং’ করছে দুনিয়াব্যাপী। এক ল্যাপটপ আয়ারল্যান্ডে সংযোজন করলে তার পার্টস আসছে ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের ফ্যাক্টরি থেকে। ইনভেন্টরি আপডেট হচ্ছে সেকেন্ডে। ইন্টারনেটের ওপর দিয়ে। মানুষ বাজার করছে বাসায় বসে। দেবে খারাপ জিনিস? ক্রেতা ওমুখো হবে না আর। বিক্রেতাও জানে সেটা। কোম্পানীর ফীডব্যাক পাতা না থাকলেও অসুবিধা নেই তাতে। রয়েছে গ্রাহকদের তৈরি পাতা। কোম্পানীর ঠিকমতো কাজ না করলে আছে খবর।

৬২০.

তথ্যের ‘প্রাচুর্যতা’ মুক্ত করে দিয়েছে মানুষকে। মাসলো’র থিওরিতে গেলাম না আর। মুক্তবাজার অর্থনীতি সুযোগ নিচ্ছে এই ইন্টারনেটের ওপর থেকে। এখন অফিস আর তাদের ফ্যাক্টরিগুলো থাকে দুনিয়া জুড়ে। বিলিয়ন বিটস যাচ্ছে শুধুমাত্র ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ওপর। প্রোডাক্টিভিটি বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ‘আইফোনে’র ডিজাইন যাচ্ছে স্যান-ফ্রান্সিস্কো থেকে। কোরিয়া থেকে আসছে চিপসেট, গরিলা গ্লাস আসছে সিংগাপুর আর থাইল্যান্ড থেকে। মেমরি আসছে হয়তো তাইওয়ান থেকে। উদাহরণ হিসেবে বলছি আরকি। চীনের ফক্সকণ কোম্পানীতে হচ্ছে আরো অনেককিছু। প্রোটোটাইপ তৈরি হচ্ছে আরেক যায়গায়। পুরো দুনিয়া সুবিধা নিচ্ছে ইন্টারনেটের।

৬২১.

বোয়িংয়ের ‘ড্রিমলাইনার’ প্লেনটা তৈরি হয়েছে কয়টা দেশ মিলে? দেশগুলো টাকার কথা চিন্তা করছে না আর। সবার একটাই কথা। ছড়িয়ে দাও ইন্টারনেট, যুক্ত করো সবাইকে – ব্রডব্যান্ডে। পয়সা যা লাগে ঢাল তো আগে। সরকারী সার্ভিস পৌঁছে দাও মানুষের দোরগোড়ায়। সহজ করে দাও সরকারী ইন্টারফেসকে। সময় বাঁচিয়ে দাও মানুষের। তাহলেই বাড়বে মানুষের প্রোডাক্টিভিটি। মানুষের প্রোডাক্টিভিটি বাড়া মানে হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। পুরো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসটাকে নিয়ে আসতে হবে অনলাইনে অথবা মোবাইলে। টাকাকে ‘রোল’ করানোর জন্য যতো ধরনের ‘অটোমেশন’ দরকার, সেটা কিন্তু তৈরি আছে ইন্টারনেট ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে। একমাত্র ইন্টারনেটই পারে বিলিয়ন ডলার ‘রোল’ করতে – সেকেন্ডে। যতো বেশি ‘রোল’ – ততো বেশি ভ্যালু অ্যাডিশন। সব যায়গায়। পয়সা যাবে সবার পকেটে। আর, সব ইনফ্রাস্ট্রাক্চার তৈরি করতে হবে সরকারকে – এটা লেখা আছে কোথায়?

৬২২.

ইন্টারনেট আসার পর হেল্থকেয়ার ইনডাস্ট্রি কোথায় গেছে সেটা আর বলতে! টেলিমেডিসিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের ডাক্তার দেখছে অজ পাড়াগাঁয়ের মানুষটাকে। ডায়াগনষ্টিক টেস্ট হয়ে যাচ্ছে অনলাইনে। এ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিতে পারে দেশের সরকারগুলো। প্রতিটা যায়গায় দামী মেডিক্যাল ‘রিসোর্স’ না কিনে সেটার সুবিধা বিস্তৃত করতে পারে ওই দূরদুরান্তের হাসপাতালগুলোতে – অনলাইনে। মানুষকে ভিড় করতে হতো না ঢাকায়। ইলেকট্রনিক ভোটিং আর জমির রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে আনতে পারলে তো কেল্লা ফতে। দেশের মানুষ বেঁচে যেতো লক্ষ লক্ষ ফৌজদারী মামলা থেকে। প্রচুর খুনোখুনি হয় এই জমি নিয়ে। বিচার ব্যবস্থা অনলাইনে নিয়ে এলে মানুষের ভোগান্তি কমে আসতো হাজারগুণে। প্রতিবার ঢাকায় আসাটা বন্ধ হতো শুরুতেই। জমির অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে আশেপাশের দেশগুলোর অগ্রগতি ইর্ষণীয়।

৬২৩.

দুহাজার ছয়ে চমত্কার একটা কাজ করেছিলো পিউ রিসার্চ সেন্টার। ওরা দেখিয়েছিলো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অন্যদের থেকে সাহায্য পায় অনেক বেশি। আপনি বলবেন এটার জন্য রিসার্চ লাগে নাকি? আসলেই তো! ইউনিক্স ‘সকেট প্রোগ্রামিং’ শিখতেই পারতাম না এই ইন্টারনেট না হলে। ভুল স্ক্রিপ্ট লিখে নিউজগ্রুপে পোস্ট দিলেই ঠিক করে দিতো সারা দুনিয়ার লোক। বকা যে খাইনি তাও নয় – ওই জ্ঞানের কাছে ও ধরনের ‘ফ্লেমিং’ তুচ্ছ। তাও আবার বোধকরি ‘ক্রস-পোস্টিং’য়ের জন্য। সোলারিস, ফ্রীবিএসডি আর লিনাক্স নিয়ে আমার হাজারো পোস্ট ঘুরছে ইন্টারনেটে – এখনো। এখন মানুষ সবচেয়ে বেশি সাহায্য পায় ‘স্বাস্থ্য’ বিষয়ক ব্যাপারে। এরপর আসে চাকরির ব্যাপারটা। ‘লিংকডইন’ প্রোফাইল দেখে চাকুরীর অফার পাচ্ছি না বলাটা ভুল হবে। বিডিজবস থেকে প্লেসমেন্ট হচ্ছে হাজারো লোকের। ‘মন্সটার ইঙ্ক’ও করছে ভালো। এখনকার ছোট বড় সবধরনের ইনভেস্টমেন্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে ইন্টারনেটের ওপর। স্টক এক্সচেঞ্জ চলছে কিসের ওপর?

৬২৪.

ইন্টারনেট হয়ে গেছে অক্সিজেনের মতো – না থাকলে সব যায় আটকে। আমার কথা নয়, জিজ্ঞাসা করুন নিজেকে। আর থাকবে না কেন? জিজ্ঞাসা করুন আমাকে। সামরিক বাহিনীর কম্যুনিকেশনের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে – ডুপ্লিকেশন। নো কম্যুনিকেশন উইথআউট অল্টারনেটিভ চ্যানেল। পিরিয়ড।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »