God gave me you for the ups and downs God gave me you for the days of doubt And for when I think I lost my way There are no words here left to say, it’s true God gave me you
– Blake Shelton
ব্লেক শেলটনকে ভালো লাগার শুরুটা অনেক আগে থেকেই। প্রথম অ্যালবামটা অতটা না টানলেও পরেরগুলো মন ভালো করে দিচ্ছিলো আস্তে আস্তে। গলা সুন্দর। ভরাট। যুক্তরাষ্ট্রের সাদার্ন সাইডে থাকার বড় সুবিধা ছিলো একটাই। শত শত কান্ট্রি স্টেশন। রেডিও এয়ারপ্লে মানেই ‘কান্ট্রি ওয়েস্টার্ন’ আর ‘ক্রস-ওভার’। ক্লাসিক কান্ট্রি নয়। সময়ের সাথে মনও গেছে পাল্টে। ক্লাসিক টানে না আর।
‘ক্রস-ওভার’ হচ্ছে পপ আর কান্ট্রি’র মিশ্রণ। অন্যদের কেমন লাগে সেটা অতটা না জানলেও নিজের ভালো লাগে বলে সই। ব্লেকের সাথে পুরোনো রোমান্স ফিরে এলো ওর ২০১১এর অ্যালবামটা শুনতে গিয়ে। নামটাও অদ্ভুত। তবে সুন্দর। রেড রিভার ব্লূ। মজার কথা হচ্ছে আমার ছেলের পছন্দ কেমন করে জানি মিলে গেছে একটা গানে। আমার সাথে।
সুন্দর গান একটা। না শুনলে বোঝাতে পারবো না কী মিস করছেন আপনারা। ‘গড গেভ মি ইউ’ গানটার পেছনের গল্পটা আরো সুন্দর। যতদূর মনে পড়ে, এটা লিখেছিলেন ডেভ বার্নস বলে আরেকজন ‘ক্রিশ্চিয়ান’ ঘরানার গায়ক। ঠিক তাই। ডেভ বার্নস। গানটা লিখেছিলেন তার স্ত্রী’র কথা মনে করে। নতুন গায়ক হিসেবে জীবনের উঁচু নিচু রাস্তায় চলতে গিয়ে স্ত্রী’র পুরো সময়ের সাপোর্ট তাকে ভাবাচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। শেষে একদিন লণ্ডনের রাস্তায় চলতে চলতে মনে এলো এর লাইনগুলো। সত্যিই তাই। গানের প্রতিটা পরতে পরতে ফুটে উঠেছে কৃতজ্ঞতা।
তবে, আর্টিস্টদের স্ত্রী’রা দজ্জাল হয় বেশি। সেটার আবার বেশীরভাগ হয় ওই মানুষটার কারণে। ভক্তদের ছোঁক ছোঁক করার কারণে হয়তোবা। ট্রেন্ড দেখলে বোঝা যায় ব্যাপারটা। ফিরে আসি হাঁটার প্রসঙ্গে। যতো লেখক আছেন, তাদের মাথায় সব আইডিয়া ঢোকে হাঁটতে হাঁটতে। কেউ হাঁটে রাস্তায়। কেউবা পার্কে। সব কিন্তু বাইরেই। বিশ্বাস হচ্ছে না? বড় বড় লেখকদের তাদের লেখা নিয়ে জানতে চাইলে হাঁটার কথাই বলেন।
বার্নসের গানটা প্রভাবিত করে শেলটনকে। গানটার কারণেই মিরাণ্ডা ল্যামবার্টকে প্রস্তাব দেন এই গায়ক। গার্লফ্রেণ্ড ল্যামবার্টকে চিনবেন সবাই। কান্ট্রি’র আরেক উজ্জল ‘নক্ষত্র’ গায়িকা। পিস্তল অ্যানিজ’এর তিনজনের একজন। তাদের বিয়ের আগের রাতের ফুটেজটা জুড়ে দেয়া আছে সেলটনের এই মিউজিক ভিডিওতে। মিরান্ডাকে এই বিয়েটাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী হবার কথা শোনা গিয়েছিলো অনেকগুলো ‘গসিপ’ ম্যাগাজিনে। শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেনি তারা। একসাথে।
মানুষের মতো ঘোড়ারও ‘পার্সোনালিটি’ না জানলে ও কিন্তু ফেলে দেবে আবারো।
বলেন কি? বিস্ময়ের রেশটা আটকে থাকলো না আমার কথায়। ঘোড়ার ‘পার্সোনালিটি’? নতুন ঠেকছে ব্যাপারটা।
ঘোড়া যে ‘সপ্রতিভ’ বা ‘ভীতু’ হতে পারে জানা ছিলো না আমার। আপনি জানতেন?
যেমন, আপনার মতো ইন্ট্রোভার্ট মানুষের হাতে পড়েছে এক্সট্রোভার্ট একটা ঘোড়া, বললেন ইন্সট্রাকটর, বিশ্বাস করুন – সত্যিই তাই। ওর মনের সাথে মিলিয়ে চলতে পারলে আপনাকে পায় কে আর!
বুঝলাম। তার মানে একেক ঘোড়া একেক মানসিকতার? মানুষের মতো একেক কিসিমের?
মুখ টিপে হাসলেন ইন্সট্রাকটর। প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন মনে হলো। তবে নিরাশ করলেন না আমাকে।
আজকের টিপস হচ্ছে ঘোড়ায় চড়ে হাঁটু চেপে ধরে রাখবেন ওর পিঠের সাথে। মানুষের মতো ঘোড়াও পছন্দ করে ‘কনফিডেণ্ট’ সত্তয়ারকে। ফেলে দেবে না আর।
৭৮.
টিম ম্যাকগ্র’র একটা কনসার্টে ‘একরকম’ ধরেই নিয়ে যায় স্কুলের বন্ধু। পাশের অ্যাপার্টমেন্টে থাকে সে। ২০০১এর ঘটনা। এর আগে রেডিওতে ‘টিম ম্যাকগ্র’ শুনলেও অতটা পছন্দ করতাম না কেন জানি। পছন্দ শুরু হয় ফেইথ হিলের সাথের গানগুলোতে। সাদার্নে থাকার কারণে কানট্রি রেডিও শুনতে শুনতে ‘শোনা’ শুরু করলাম প্রায় সবই। ‘ক্রস-ওভার’ মিলিয়ে। এর পরের গল্প আরো চমত্কার। হলিউডের এই ছাড়াছাড়ির দিনে ফেইথ আর টিম তাদের বিয়ে টিকিয়ে রেখেছেন প্রায় বিশ বছর। ভালো মানুষ। গানের ভাষা আরো গভীরের।
৭৯.
একটা মুভি দেখছিলাম কিছুদিন আগে। ফ্লিকা। হ্যা, একটা ঘোড়ার নাম। ঘোড়া নিয়ে কম মুভি দেখিনি। অনেক কিন্তু। আর ছোটবেলায় ওয়েস্টার্ন সিরিজের গল্পের সাথে ঘোড়া না আসলে ওটা কোনো গল্পই না। অনেক সুন্দর সুন্দর মুভি থাকতে হটাত্ ‘ফ্লিকা’ কেন? আসলেই তো! পড়ে আছি বন জঙ্গলে। এই আফ্রিকাতে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনে পড়ে আর্শিয়ার কথা। আর্শিয়া, মেয়ের নাম আমার। নামটা রেখেছে তার মা। প্রথম মেয়ে হওয়াতে অনেক আদরে বড় হলেও সেটাতে ভাগ বসায় ছোট ভাই। কয়েক বছরের মাথায়। কিছুটা পরিবর্তন দেখেছি ওর মধ্যে তখন। তবে – এটা নিয়ে কথা হয়নি কখনো। বলতে চেয়েছিলাম কয়েকবার, বলা হয়নি আর। দেশে ফিরলে বলবো এবার।
৮০.
মুভির ক্রেডিট লাইন দেখা আমার পুরোনো দিনের অভ্যাস। সত্যি বলতে সবচেয়ে সুন্দর সাউন্ডট্র্যাকটা থাকে ওই সময়ে। দেশের সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে গিয়ে হতাশ হয়ে যাই ওই ক্রেডিট লাইন চলার সময়। বেশিরভাগ সময় পুরো ক্রেডিট লাইন চালায় না সিনেপ্লেক্স অপারেটর। এছাড়া, সবাই ‘সিট’ ছেড়ে উঠে যায় বলে সাউন্ড ইফেক্ট পাওয়া যায় না মনের মতো করে। একা একা ‘ফ্লিকা’ দেখতে গিয়ে ক্রেডিট লাইনে এলো চমত্কার এই গানটা। মজার কথা, মুভিটাতে বাবা হিসেবে ছিলেন টিম ম্যাকগ্র নিজেই। ‘সারপ্রাইজ’ সাউন্ডট্র্যাকটা এলো তার গলা থেকেই। ভিজে এলো চোখ। মনে পড়লো একজনের কথা।
Gotta hold on easy as I let you go. Gonna tell you how much I love you, though you think you already know. I remember I thought you looked like an angel wrapped in pink so soft and warm. You’ve had me wrapped around your finger since the day you were born.
৮১.
ছোটবেলা থেকেই ও বেশ শান্ত। মেয়ে বলে হয়তো। তবে তার ছোট ভাই অনেকটাই ‘ডোমিনেটিং’ হবার কারণে সবার ভালবাসায় বিশাল ভাগ বসায় সে। মুভিটা দেখে গল্পের ছায়াটা উড়িয়ে নিয়ে আসলো আর্শিয়ার কথা। প্রোটাগনিষ্ট মেয়েটা পুরোটাই আমার মেয়ের কপি। ওর মতোই মাঝে মধ্যে ‘রেবেলাস’ হয়ে যায় মেয়েটা। স্বাতী’র কথা ধরলে বলতে হয় – মেয়েটা হয়েছে আমার মতো। মানে, বুঝতে হবে ভবিষ্যত খারাপ মেয়ের। বিয়ের পরেই আমার ব্যপারে একটা ‘অ্যানালাইসিস’ তৈরি করে স্বাতী। ‘লোনার’। সারাজীবন আমি নাকি একা। ওই ক্যাডেট কলেজ থেকে। হাজারো মানুষের মধ্যে থাকলেও নাকি আমার জগত আলাদা। ওই জগতে প্রবেশাধিকার নেই কারো। ভয়ংকর কথা। আমি মানি আর না মানি – ব্যাপারটা খুব একটা তোলে না ইদানিং। স্বাতী। ছেড়ে দিয়েছে হয়তোবা – ভাগ্যের হাতে। তবে, আমি ভাবছি আর্শিয়া’র কথা। মেয়েটা আমার মতো হলে তো সর্বনাশ! এদিকে, বড় হচ্ছে মেয়েটা দিনে দিনে। আমি বাইরে বাইরে থাকি বলে পুরো সংসারের হাল ধরে আছে স্বাতী। তবে, মেয়ে ঝামেলায় পড়ে মায়ের শক্ত পাখনা থেকে বেরুতে গেলেই।
When you were in trouble that crooked little smile could melt my heart of stone. Now look at you, I’ve turned around and you’ve almost grown. Sometimes you’re asleep I whisper “I Love You!” in the moonlight at your door. As I walk away, I hear you say, “Daddy Love You More!”.
৮২.
সেদিন ওর স্কুলের ছবি দেখে চিনতে পারিনি প্রথমে। অনেক বড় হয়ে গেছে মা’টা আমার। সেটাই ভয়ের শুরু। ছেড়ে দিতে হবে তো একদিন। যেভাবে তার মা এসেছে আমার কাছে। সব স্বাদ আহ্লাদ ছেড়ে। তার মা’কে দেখে রাখার কথা আমার। কিন্তু দেখে রাখে সে। আমার মতো উড়নচণ্ডী ছেলে এসে যদি চায় ওকে, কি হবে তখন? কবি’র মতো হৃদয়বান ছেলের সাহস যে হতে হবে আমার থেকে অনেক বেশি। যে দেখে রাখবে মেয়েটাকে। ও কি চায় জানা হয়নি আর।
Someday, some boy will come and ask me for your hand. But I won’t say “yes” to him unless I know, he’s the half that makes you whole, he has a poet’s soul, and the heart of a man’s man. I know he’ll say that he’s in love. But between you and me. He won’t be good enough!
৮৩.
পৃথিবী জয় করতে চেয়েছিলাম আমিও। পারিনি। স্বপ্ন থেকে গিয়েছে মাথার ভেতরেই। যাও মা, আটকাবো না তোমাকে। আমার হয়ে চষে ফেল পুরো পৃথিবীটাকে। পৃথিবী দেখলেই বুঝবে কি চাও তুমি। স্বপ্ন তৈরি হবে তখনই। তবে আগে দেখতে হবে এই নীল গ্রহটাকে। নিজের মতো করে। গাইডবই না দেখে। তোমাদের সময়ে যা হতে চাইবে সেটাই পারবে হতে। আমার ধারনা, অন্যকে স্বপ্ন দেখানো কঠিন। সেটাই করবে তুমি। অন্যের স্বপ্ন পূরণ করলেই হবে তোমার ইচ্ছে পূরণ। তবে যেখানেই যাও না কেন, বাসার রাস্তাটা কিন্তু ভুলো না মা! ওখানে অপেক্ষা করবে এই বুড়োবুড়ি। সত্যি!
* তোমার ডায়েরি নিয়ে যাবে তোমার স্বপ্নে।লিখতে হবে প্রতিদিন, মাত্র তিনশো শব্দ, মা।
You’re beautiful baby from the outside in. Chase your dreams but always know the road that’ll lead you home again. Go on, take on this whole world. But to me you know you’ll always be, my little girl.
টম হ্যাঙ্কসের মুভি নিয়ে বাছবিচার করতাম আগে, এখন করি না আর। মুভি করেন না বেশি, তবে যা করেন ভালো করে করেন। ‘ব্যক্তি’ টম হ্যাঙ্কস ফ্যানদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় তার ব্যবহারের জন্য। মানুষ হিসেবেও ভালো সে। ভালো খারাপ মানুষ নিয়ে মাথা ঘামচ্ছি কেন? আসলে, সাফল্যের চূড়ায় পৌছালে মাথা ঠিক রাখতে পারেন না অনেকেই। সে হিসেবে বলছিলাম আর কি। তবে, মানুষ ভালো না খারাপ, সেজন্য দেখিনি এটা। ‘ফরেস্ট গাম্প’এর সাথে তুলনা করা যায় এরকম একটা মুভি খুজছিলাম মনে মনে। মুভিটা দেখতে দেখতে মনে পড়ছিল ‘হ্যামলেট’ স্টাইলের প্লটের কথা। অথবা, কিছুটা ব্লেণ্ডিং আছে হয়তোবা ‘সফোক্লিসে’র সাথে।
৬৭.
বাবা হয়েছি নিজে – চোদ্দ বছর আগে। সৃষ্টিকর্তার তৈরি করা এই ‘বন্ধন’ (বন্ধন, নাকি … আর কি বলবো, বলবেন নাকি কাছাকাছি একটা সমার্থক শব্দ?) পাল্টে দেয় মানুষকে। স্নেহের ছোট্ট ‘মাংসপিন্ড’টা কিভাবে বড় হচ্ছে চোখের সামনে – সেটা বলে দিতে হয় না বুঝিয়ে। হাসি আমি। হোয়াট ইজ ইট লাইক টু বি আ ফাদার? উত্তর আমার, ওয়েট ফর ইয়োর টার্ন, বাডি! এখন বুঝি নিজের বাবা মা তাকাতেন কিভাবে আমাদের দিকে। স্নেহ ঝরে পড়তো আমাদের ওপর। আগে বুঝতাম না, বুঝি এখন। কারণ? নিজে যে তাকাই ওদের দিকে? স্নেহ ঝরিয়ে। তবে, বুঝবে না সেটা ওরা। দে উইল বি অ্যাজ রেবেলিয়ান অ্যাজ আওয়ারসেল্ভস! না বোঝাই ভালো।
৬৮.
তিন বাবা – সন্তানের গল্প হচ্ছে গিয়ে এই ‘রোড টু প্রেডিশন’। দুটো হচ্ছে সত্যিকারের দুই বাবা, আরেকটা ইমোশনাল। ভাড়াটে খুনে হিসেবে টম হ্যাঙ্কস হারিয়ে ফেলে তার স্ত্রী আর ছোট সন্তানকে। আরেক সন্তানের কারণে ঘটে এই বিপর্যয়। কিন্তু, সন্তানের হাজার দোষ মাফ ওই – বাবার কাছে। সেই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে বেড়ায় হ্যাঙ্কস। এদিকে হ্যাঙ্কসকে ‘খুনে’ হিসেবে বড় করেছে আরেক গডফাদার, যার ছেলে ঘটায় বিপর্যয়টা। মানে, মেরে ফেলে হ্যাঙ্কসের স্ত্রী আর ছোট ছেলেকে। গডফাদার বাবা ছেলেকে বাঁচাতে বিলিয়ে দেয় নিজের জীবন। এই ইমোশনাল পিতা-পুত্রের গল্পটা হচ্ছে হ্যাঙ্কস আর গডফাদারকে নিয়ে। তারা রক্তের সম্পর্কে বাবা ছেলে নয়।
৬৯.
এই পালানোর সময় নতুনভাবে চিনতে পারে পুত্র পিতাকে। হ্যাঙ্কস একবার গুলি খেয়ে আশ্রয় নেয় ফার্ম হাউজে। তখন তাকে সাহায্য করে এক বুড়োবুড়ি। হ্যাঙ্কস কিছুটা সুস্থ হলে বসে একদিন বারান্দায়। ওই ফার্ম হাউজে। ওই সময় কিছু কথা হয় বুড়ির সাথে। তখনই শুরু হয় আমার প্রিয় স্কোরটা। ‘দ্য ফার্ম’। সাউন্ডট্র্যাকের কথা বলছিলাম আর কি! এটারও কম্পোজার ছিলেন থমাস নিউম্যান। শেষের দিকটা আরো ভয়াবহ। পুরোটা বলে দিলে রাগ করবেন আপনারা। হ্যাঙ্কস মারা যায় শেষে। মুভিটা দেখা ওই ‘পিতাপুত্রে’র গল্পের জন্য। আর অর্কেস্ট্রার সাউন্ডট্র্যাকগুলো অতুলনীয়।
A painter paints his pictures on canvas. But musicians paint their pictures on silence.
– Leopold Stowoski
৬৩.
মাছের কান্না! সেটাও দেখতে হলো বাচ্চাদের সাথে বসে। বাচ্চাদের সাথে বসে বিশ্বাস করেছি সেটাও। মুভিটা দেখলে বলবেন আপনিও। এখন ওদের বিশ্বাস ভাঙ্গাবে কে বলেন? আপনি? তাও, বাচ্চাদের সামনে? তো, চেষ্টা করুন গিয়ে! মাছের কান্না তো দূরের কথা, মুখস্ত হয়ে গেলো মাছের মুখের হাজারো অভিব্যক্তি। তাও ভালো, ডিজনী খুঁজে নিয়েছে ক্লাউন ফিশ। কি বললেন? বুড়োরা দেখে নাকি ডিজনী মুভি? বলেন কি? আমি তো জানি, ওরা তো দেখে বেশি বেশি। মনে হয়ে যায় নিজেদের হারানো দিনের কথা। হয়তোবা। বউ বাচ্চা নিয়ে মুভি দেখতে জুড়ি নেই এই ডিজনীর। এর সাথে ‘পিক্সার’ যোগ হলে উপায় থাকে না আর না দেখে। আর অ্যানিমেটেড মুভি কোথায় চলে গেছে সেটা দেখতে হলে বসতে হবে হালের কিছু মুভি নিয়ে।
৬৪.
ফাইণ্ডিং নিমো’র শুরুর দৃশ্যেই খারাপ হয়ে গেল মন। হতচ্ছাড়া বারাকুডাটা মেরে ফেললো নিমো’র মাকে। মার্লিন, নিমো’র বাবাটা যে কি কাদলো ‘ক্যারল’কে হারিয়ে। ওর মাকে খুঁজতে খুঁজতে পেল তাদের ডিমটাকে। ডিমটাকে তার ফিন দিয়ে বুকে টেনে নিতেই চালু হয়ে গেল মুভির টাইটেল। মানে শুরু হলো মুভিটা। খারাপ লাগানোটাকে আরো ত্বরান্বিত করলো ‘থীম’ সাউন্ডট্র্যাকটা। অসম্ভব সুন্দর একটা ট্র্যাক। মানুষের শব্দ শোনার ওপরের সীমার দিকের কিছু বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। লাগে না কানে। শুনতে হয় মনোযোগ দিয়ে। ভালো অডিও সিষ্টেম হলে বোঝা যায় এফেক্টটা। সমস্যা একটাই। খুবই ছোট একটা স্কোর। এক মিনিট ষোল সেকেন্ডের। বরাবরের মতো, গুড থিংস কাম ইন স্মল প্যাকেজেস! নিন্দুকেরা বলবেন একটা কথা। এক অ্যানিমেটেড মুভি, তার আবার স্কোর? তবে যারা শুনেছেন, তারাই পাল্টেছেন দল। গ্রেট ব্যারিয়ার রীফের সাগরের তলার সৌন্দর্য্য হাজার গুণে বাড়িয়েছে এই স্কোরগুলো।
৬৫.
মুভি’র ডিরেক্টর ছোটবেলায় প্রায় যেতো ডেন্টিস্টের কাছে। আমার ধারনা, চকলেট খেত মনে হয় বেশি। আমার বাচ্চাদের মতো। আর বাচ্চাদের সাথে ভাগ বসায় স্বাতী। মীমাংসা করতে হয় আমাকে। তবে, ওই ডেন্টিস্টের অফিসের মাছের অ্যাকুরিয়ামটা টানতো বেশি ডিরেক্টর সাহেবকে – ওই ছোট বেলায়। তার মনে হতো – মাছগুলো মনে হয় যেতে চায় তাদের বাসায়, মানে ওই সাগরে। সেভাবেই তৈরি হলো এই অসাধারণ মুভিটা। আমাদের হৃদয়কে তছনছ করার জন্য যোগ দিলেন আমাদের গুরু ‘থমাস নিউম্যান’। পরে সেটা গ্র্যামী অ্যাওয়ার্ডে নমিনেশনও পেল অরিজিনাল সাউন্ড ট্র্যাক হিসেবে। সেই সাথে আমার লিস্টে যোগ দিলো ‘নিমো এগ’ চোদ্দ নম্বরে। শোনার সুবিধার জন্য দেয়া হলো এক্সটেন্ডেড ভার্সনটা, মানে লম্বা করা হয়েছে টেনে।
When you see something from afar, you develop a fantasy. But when you see it up close, 9 times out of 10, you wish you hadn’t.
– Matthew, @Wicker Park
৬০.
মুভিতে সাউন্ডট্র্যাকগুলো মানুষের মানসিক অবস্থা নিয়ে এমনভাবে খেলে, সেটার শিকার হই আমাদের মতো ‘নিরীহ’ দর্শকরা। আগেও ছিলো, বর্তমানে এটার অবস্থা ভয়াবহ। আমাদের মনে ‘লাস্টিং ইম্প্রেশন’ রাখার জন্য অর্কেস্ট্রার ওঠা নামা, কানে ধরে ওঠায় নামায় আমাদেরকে। মুভি থিয়েটারে ‘স্টেট অফ আর্ট’ সাউন্ড সিস্টেমস থাকলে তো আরো খারাপ অবস্থা। ‘উইকার পার্ক’ দেখতে গিয়েই নাস্তানাবুদ ওই সান ফ্রান্সিসকো’র এক সিনেপ্লেক্সে। নাম পার্ক দিয়ে, তবে মুভি একটা এটা। নাস্তানাবুদ হবার কারণ, ছবিটার আগা মাথা পাচ্ছিলাম না – প্রথম দিকে। মুভি’র একটা ধর্ম হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, সেটাতে সফল এই মুভিটা। আবার, ছাড়তেও পারছিলাম না, ‘কি বুঝতে পারছিলাম না’, সেটা বুঝতে গিয়ে বসে থাকলাম আরো কিছুক্ষণ। বাদই দিলাম পয়সা দিয়ে টিকেট কাটার কথা। গল্পের বইয়ের প্লটে ‘টুইস্ট’ এণ্ড ‘টার্ন’ থাকাটাই স্বাভাবিক, এখানে মনে হলো এটার পরিমাণ একটু বেশি।
৬১.
আরেকটা কথা রাখি বলে। আগে ভাগে। ফ্রেঞ্চ মুভি দেখতে বসলে এধরনের কিছু ব্যাপার হয় বটে। মানে বুঝতে বুঝতে অর্ধেক সিনেমা পার। পরের ঘটনা আরো মারাত্বক। শুনলাম, মুভিটা উনিশশো ছিয়ানব্বইয়ের ফ্রেঞ্চ মুভি ‘লা’পার্টমেন্ট’এর রিমেক। দেখেছিলাম পরে ওটাও, মেলানোর জন্য। মিল পাইনি আমি। নিম্ন বুদ্ধিবৃত্তির প্রাণী হলে যা হয় আরকি। মুভির প্লট জানতে চাইলে বলাটা দুষ্কর। মুভিটা দেখতে চেয়েছিলাম কেন? ডায়ান ক্রুগারের জন্য। এই জার্মান অভিনেত্রী ছিলেন ‘ট্রয়’ মুভিটাতে। আরেক অভিনেত্রী অস্ট্রেলিয়ান। যাই দেখলাম মুভিটাতে, মন খারাপ হতে থাকলো শেষের দিকে। অনেকগুলো দৃশ্যে নেই কোন কথাবার্তা, ‘সো মাচ লেফট আনসে(ই)ড’। সেটাই বিপদ।
৬২.
ভুলে যেতাম এই মুভিটাও, অন্য অনেক মুভির মতো। তবে, আটকে রেখেছে একটা সাউন্ডট্র্যাকের স্কোর। সাউন্ডট্র্যাকটা দিয়ে বুঝে নিয়েছিলাম অনেক কিছু। নায়ক অপেক্ষা করতে থাকে উইকার পার্কে। নায়িকার জন্য। তখনই শুরু হয় এই স্কোরটা। অসাধারণ। স্কোরটা তৈরি করেছে একটা স্কটিশ ব্যান্ড। নামও অদ্ভুদ। ‘মগাই’। গান গায় না তারা। ইন্স্ট্রুমেণ্টাল সবই। স্কোরটা দৃশ্যের সাথে এমন মানানসই, মনে হবে স্কোরটা তৈরি করা হয়েছে ওই দৃশ্যটারই জন্য। স্কোরটার নামটাও পাগল পাগল। আই নো ইউ আর, বাট হোয়াট অ্যাম আই। আপনারা কি ভাবছেন জানি না, তবে দেখতে পারেন মুভিটা। বকতে পারবেন না পরে, কারণ বাকি সাউন্ডট্র্যাকগুলোও সুন্দর।
It takes backbone to lead the life you want, Frank.
– April Wheeler @Revolutionary Road
৫৭.
‘টাইটানিক’ মুভিটা পছন্দ হয়নি। ভুল বললাম বোধহয়। বলতে হবে, পছন্দ হয়নি ‘অতটা’। আর যাই হোক আপনাদের রাগাতে চাইছি না এমুহুর্তে। আপনি রাগলে তো নট নড়ন-চড়ন। পড়া বন্ধ এখানেই। আমি জানি না – তবে কি লজিক কাজ করেছে এই মুভিটার ব্যপারে সেটা কিছুটা গবেষনার বিষয়। প্রথমত: বিগ বাজেটের মুভি নিয়ে বিতর্ক আছে আমার মনে। সেটার গল্পের মুন্সিয়ানার চেয়ে ‘সেট’ তৈরি অথবা কম্পিউটার গ্রাফিক্সে ইনভেস্টমেন্ট থাকে বেশি। ভুলও হতে পারে ধারনাটা। তবে কেট উইনস্লেটকে দেখে আসছি অনেক আগে থেকে। এই মুভিটাতে তাকে ‘ফ্ল্যাসি’ মনে হয়েছে বেশি। কেট হচ্ছে গিয়ে ‘গার্ল নেক্সট ডোর’। অন্য ছবিগুলো দেখে মনে হয়েছে তাই। তাকে ভালো লেগেছে বরং ‘ইটারনাল সানশাইন …’ মুভিটাতে। সত্যি বলেছেন! পাগল কিছিমের মুভি একটা।
৫৮.
মুভিটা কোথায় দেখেছিলাম সেটা মনে আছে দিব্যি। এখনো। আর সেটা সম্ভব হয়েছে ‘এন্ড টাইটেল’ স্কোরটার কারণে। মুভিটা শেষ হবার অনেক পরেও বসে ছিলাম মুভি থিয়েটারে। টাইটানিকের পর লিয়োনার্দোর সাথে আর কোন মুভিতে আসেনি কেট। হয়তোবা ‘টাইপড’ হবার ভয়ে। তবে এই মুভিটা পুরোপুরি রোমান্টিক না হবার কারণে নিজে থেকেই আগ্রহী হয় কেট। বিশেষ করে, রিচার্ড ইয়েটসের বইটার অ্যাডাপ্টেশনে। বইয়ের নামেই হয়েছে সিনেমাটা। বিয়ে হবার পর যে বাড়িতে উঠেছিল সেই রাস্তাটার নামটাই ‘রেভোল্যুশনারী রোড’। বিয়োগান্ত এই মুভিটাতে ‘কেট’ মারা যায় শেষে। তবে সেই ঘটনাটা খুব কষ্টের।
৫৯.
কষ্টের বলেই ‘রুট টুয়েল্ভ’টা কানে লেগে আছে এখনো। কেটের শরীর থেকে ফোটা ফোটা রক্ত পড়ছিল, তখনি মনে হচ্ছিল খারাপ কিছু হবে একটা। ‘পার্ফেক্ট ম্যারেজ’টা বিষিয়ে যায় কিভাবে সেটা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না মোটেই। আর সেকারণেই খারাপ লাগাটা। গল্পের ‘টুইস্ট’টা শেষের দিকে যেদিকে মোড় নেয় সেটার ব্যপারে অধিকাংশ মানুষ দ্বিধায় ছিলো। ছিলাম আমিও। তবে ঘটনাটা বাস্তবতার সাথে মেলে বলে মুভিটা দেখেছে মানুষ। সপ্তাহখানেক খারাপ ছিলো মনটা। এটার কম্পোজার ছিলেন নামকরা ‘থমাস নিউম্যান’। পাগল করা স্কোর লিখতে ওস্তাদ উনি। এটার শুরুর পিয়ানোটা অন্য ধরনের।
In Memory of those who made the ultimate sacrifice so others could reach the stars.
– Apollo 1 Plaque at Launch Complex-34
৫৪.
তিন মাস বয়স ছিলো ওর। আর্শিয়ার কথা বলছিলাম। তেরো বছর আগের কথা। ‘ডিউটি কল’। চলে যেতে হলো বেশ লম্বা সময়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা সামরিক বেসে। কম্যুনিকেশন ট্রেনিং। অনেক ঘুরপাক খেয়ে পৌছালামও থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটির আগের দিন। এরপর কিভাবে যেন পড়ে গেছে লম্বা উইকএন্ড! কাউকে চিনি না, তার ওপর টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে সবাই হাওয়া। আমাকে যিনি এয়ারপোর্ট থেকে তুলেছিলেন তিনিই অ্যাপার্টমেন্টে নামানোর আগে দেখিয়ে দিয়েছিলেন আশেপাশের কিছু খাবারের দোকান আর ‘পিএক্স’। সামরিক বেসে এই ‘পিএক্সে’ পাওয়া যায় সবকিছু। রূমে ফিরতেই মনে হলো কেন আসলাম এই দেশে। কান্নায় ভেঙে পড়লাম আর্শিয়ার কথা ভেবে। প্রথম সন্তান। ও হ্যা, কান টানলে আসে মাথা। আর্শিয়ার মা’র জন্য বূক ফাঁকা হয়ে আছে সেই সিংগাপুর থেকেই।
৫৫.
কেপ ক্যানাভেরালের চৌত্রিশ নম্বর পুরোনো লঞ্চ সাইটে ছোট একটা ‘প্লাক’ পড়বে চোখে। খোদাই করা ওই লেখাটা ভিজিয়ে দেবে যে কারো চোখ। প্রায় পয়তাল্লিশ বছর আগে এই লঞ্চসাইটে জীবন দিয়েছিলেন তিন নভোচারী, অ্যাপোলো-১এর ঘটনায়। অনেকের মনে আছে – আর্মাগেডন মুভিটাতেও দেখিয়েছিলো ওই প্লাকটা। আমি আজো বুঝি না ‘ট্রান্সফরমার’ ব্যবসা করে বিলিয়ন ডলারের, ‘আর্মাগেডন’ নয় কেন? মানুষের মনের ওপর তো হাত নেই কারো। কে কোন মুভি দেখবে সেটা তার বিষয়। তবে মুভিটা মনে আছে দুটো কারণে। দুটোই বাবা আর মেয়ের মিলনের দৃশ্যের ওপর। বাবা হ্যারি আমার মতোই উড়নচণ্ডী। মেয়ে গ্রেস হচ্ছে সেইরকম – যার ওপর নির্ভর করা যায় প্রতি পদে। কেপ ক্যানাভেরালের ওই লঞ্চ সাইটেই কথা হয় মেয়ে বাবার সাথে। প্রথম দিকে। তখনি শুরু হয় দুই নম্বর ‘কিউ’।
৫৬.
বুঝতেই পারছেন স্কোরটার নাম হচ্ছে ‘হ্যারি এণ্ড গ্রেস মেক পিস’। এক কথায়, ভেরি শর্ট এণ্ড সুইট! মেইন থীমের কাজটাকে ছোট করে অ্যাকোষ্টিক গিটারে তোলা। সঙ্গে রয়েছে ব্যাকগ্রাউন্ড স্ট্রিংয়ের চমত্কার কাজ। কম্পোজার ট্রেভর রবিনের ‘ওয়ান অফ দ্য বেস্ট’ না হলেও আমার লাগে ভালোই। ১৪ সেকেন্ড থেকে গলতে শুরু করে মন আমার। আর্শিয়ার কথা মনে পড়ে এক মিনিট চার সেকেন্ড থেকে।
ড্যান ব্রাউনের বই দেখলে জ্বর না আসলেও ঘাম আসে কিছুটা। সাতশো পাতার বই পড়েছি বহু – তবে এই বয়সে সাহস পাই না আর। এদিকে কোন বাছবিচার নেই স্বাতীর। ওর দরকার বই, সাতশো না বারোশো – সেদিকে ভ্রুক্ষেপ দেখিনি কখনো। অথচ, ও আমার থেকে হাজারো ব্যস্ত। এক, সে ব্যাংকার, প্রাইভেট ইন্সটিটিউশনে। ওয়ার্কিং আওয়ার আমার থেকে অনেক বেশি। রাস্তায় থাকতে হয় অনেক ঘণ্টা। চালাতে হয় সংসার। আমিও থাকতে পারি না বাসায় – প্রায় সময়ই। তার মধ্যেও পড়ছে বই – সময় পেলেই। বাছবিচার নেই মোটা চিকনের, না থ্রিলার। তবে, বইয়ের বড় সরবরাহটা আসে তার বোনদের কাছ থেকে বলে রক্ষা।
৫২.
কি বলছিলাম যেন? ড্যান ব্রাউন। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য কম, ভীষণ ফার্স্ট পেসড! ঘটনাগুলো রীতিমতো দৌড়ায়। সত্যি! আর সেকারণে পাতা বেশি হলেও সেটা উল্টায় তাড়াতাড়ি। দ্রুত পড়ার নিয়ম বাদ দিলেও তার বই ছেড়ে উঠতে চায় না মানুষ। তবে, আমি তার সিনেমাগুলোর বিশেষ ভক্ত নই। কেন নই? এমনিতেই। বিশেষ কোন কারণ বের করতে পারিনি এখনো। তবে, জানতে পারবো শিগগির। আর, সিনেমা দেখতে হয় দুটো কারণে। বই থেকে কতোটা ‘ডেভিয়েশন’ করলো স্ক্রীনরাইটার, দেখতে হবে না সেটা? একজন বই লিখলো কষ্ট করে, সেটার ‘সিনেমারূপ’ সহজ নয় অত।
৫৩.
আজ আঠারো নম্বরে আসছে সেভালিয়ে(র)দ (স্যাঙ)গৃয়েল। ফ্রেঞ্চ শব্দ। পুরোনো আমলের। মানেতে আজ না যাই। দ্য ডা ভিঞ্চি কোডের সাউন্ডট্র্যাক থেকে নেয়া। তেরো নম্বর ‘কিউ’ হলেও এটাই ছবির আসল থিম স্কোর। মুভির শেষের দিকে ল্যাঙ্গডন যখন কোডটাকে ভাঙতে যায়, মানে গ্রেইলের অবস্থান জানতে পারে – তখনই শুরু হয় স্কোরটা। আমি জানি না আপনাদের ভালো লাগবে কি না, তবে হ্যান্স জীমারকে এতো পেছনে দেখে রাগ করবেন অনেকে। যদি ছবি একটা হাজারো শব্দের চেয়ে বেশি হয় তাহলে তার ‘স্কোর’ হবে দশ হাজারগুণ। আমি বলিনি এটা। বলেছে মিকা স্নো! তার কমেন্টে। আমার প্রিয় অংশ শুরু ১ মিনিট ১১ সেকেন্ড থেকে। ইয়োর মাইলেজ মে ভ্যারি!
মনে আছে ডিসট্রিক্ট ১১ এর মেয়েটার কথা? ঠিক বলেছেন, নাম ছিলো তার ‘রু’। ডার্ক কমপ্লেকশন। কোকড়া চুল। বয়স কম, মাত্র বারো। দেখতেও ছোটো। ক্যাটনিসের সাথে তার সখ্যতার কথা জানে সবাই। ৭৮তম খেলায় সবাই যখন একে অপরকে মারছে, তখন ‘রু’ আটকে পড়ে আরেক শিকারীর জালে। উপায়ন্তর না দেখে ক্যাটনিসকে ডেকে সাহায্য চায় ও। ভাগ্যক্রমে কাছেই ছিলো ক্যাটনিস, এসে জাল কেটে ‘রু’কে বের করে আনে সে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি মেয়েটার। উঠে দাড়াতেই তীর বুকে এসে লাগে ‘রু’র। ক্যাটনিস না বোঝার আগেই ঘটে যায় ব্যাপারটা। পরে, ছেলেটা মারা যায় ক্যাটনিসের হাতেই। ডিসট্রিক্ট ১২’র ছেলেটাই মেরেছিল ওই তীরটা।
৪৯.
‘রু’ পড়ে যায় মাটিতে। ক্যাটনিস ওকে বাচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পরে। মারা যাবার আগে ক্যাটনিসকে ঘুম পাড়ানী গান গাইতে অনুরোধ করে ‘রু’। শেষে ওর কোলেই মারা যায় ‘রু’। কান্নায় ভেঙে পড়ে ক্যাটনিস। ওদিকে, রু’র চোখ দিয়ে ঝাপসা হতে থাকে ক্যামেরাটাও। অর্কেস্ট্রা’র গিটারের কাজ শুরু হয় ওখান থেকে। বনের ভেতর ওকে শুইয়ে রাখার পর তার হাতে গেঁথে দেয় বেশ কিছু ফুল। একসময় ওকে পেছনে ফেলে এগোতে থাকে ক্যাটনিস। কিছুদূর যেয়ে পেছনে তাকায় সে। ক্যাটনিস জানে যে টিভি ক্যামেরা ‘প্যান’ করে আছে ওর দিকে। ‘রু’র প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে তিনটা আঙুল ঠোটে চেপে হাতটা তুললো ওপরে। এদিকে ডিসট্রিক্ট ১১তে রু’র শোকাহত মা আর পুরো এলাকাবাসীও একাত্ত ঘোষণা করে ক্যাটনিসের সাথে। তিন আঙুল তোলে ওই ডিসট্রিক্টের সবাই। শুরু হয়ে যায় নিপীড়ন।
৫০.
১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড থেকে শুরু আমার প্রিয় অংশ। ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড থেকে ভাঙ্গতে থাকে মন। ৩:৩০ মিনিটে পৌঁছায় ক্লাইম্যাক্সের চুড়ান্তে। নিজেও তুলি ওই তিনটে আঙুল *। এটাও জেমস নিউটন হাওয়ার্ডের অসাধারণ একটা স্কোর। এলো উনিশ নম্বরে।
[ক্রমশ:]
* বইয়ে যদিও ক্যাটনিস তুলেছিলো অন্য হাতটা। এটা লিখার সময় শুনছিলাম ‘হিলিং ক্যাটনিস’, শুনেছেন কি? মন ভালো হয়ে যাবে এখুনি।
If I weren’t a director, I would want to be a film composer.
Steven Spielberg
৪৫.
মুভির অরিজিনাল সাউন্ডট্র্যাকস নিয়ে কম সমস্যায় পড়িনি আগে। একেকটা মুভি দেখে সেটার ‘ওএসটি’ মানে অরিজিনাল সাউন্ড ট্র্যাক পেতে পাগল হয়ে যেতে হতো ওই ছোটবেলায়। যখন বুড়ো হতে চললাম তখন মিটলো কিছু সমস্যা। ইউটিউবের কথা বলছিলাম। তবে সেগুলো ‘লসলেস’ কোয়ালিটি হলে ভালো হতো আরো। আগে বন্ধুদের হাতে পায়ে ধরে আনতে হতো ওই সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আগে ‘ওএসটি’ মানে ধরে নিতাম চমত্কার চমত্কার কিছু গানের কম্পাইলেশন, ধারনা পাল্টাতে শুরু করলো আশির দশকের পর থেকে। ওর আগেও প্রচুর মুভি স্কোর আছে যা এসেছে শুধুমাত্র অর্কেষ্ট্রা থেকে। গান নয়, মুভি’র সিকোয়েন্স ধরে স্কোর তৈরি করা যা তা ব্যাপার নয়। মনে আছে ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’য়ের কথা? অর্কেষ্ট্রা শোনার হাতে খড়ি হয় সাঈদ ভাইয়ের সাথে, মাদ্রিদে গিয়ে। গায়ের লোম দাড়িয়ে যায় একেকটা নোটে। মুভিতে এখন ‘সাউন্ডট্র্যাক’ হয়ে গিয়েছে একেকটা ক্যারেক্টার। সত্যি!
৪৬.
শুরু করি বিশ নম্বর দিয়ে? দ্য হাঙ্গার গেমসের ‘ক্যাচিং ফায়ার’ বইটা পড়তে যেয়ে বেশ কষ্ট লাগছিলো পিতা’র জন্য। ক্যাটনিসের জন্য সবার মায়া উপচে পড়লেও পিতা ছেলেটা নিজের দিকে দেখেনি কখনো। যেখানে, সবাই চাইছে বেঁচে থাকতে। পরে মুভিতে বিচের পাশে দুজন মিলে যখন কথা বলছিলো, পিতা তার গলার লকেট খুলে দিয়েছিলো ক্যাটনিসের হাতে। সময়টা আটকে ছিলো আমার জন্য। মনে রাখার মতো ‘সিকোয়েন্স’ একটা। গলার নিচ থেকে কষ্ট উপচে উঠতে চাইলো। এর সাথে যুক্ত হলো ‘আইম্যাক্স’ মুভি থিয়েটারের সাউন্ড ইফেক্ট। কানে মধু পড়তে শুরু করলো বলে।
পিতা: তুমি যদি মারা যাও, আমার তো থাকবে না কেউ। তাই, আমি বেঁচে গেলেও লাভ হচ্ছে না কিছু।
ক্যাটনিস: পিতা! গলাটা ভারি হয়ে গেল তার। [সাউন্ড ট্র্যাকের ব্যাকগ্রাউণ্ড স্কোর শুরু হলো এমুহুর্তে]
পিতা: তোমার জন্য ব্যাপারটা ভিন্ন। তোমার পরিবারের দরকার তোমাকে। সেকারণেই বাঁচতে হবে তোমাকে। তাদের জন্য।
‘পিতা’র লকেটে ওর বাবা মার ছবি দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে গেলো ক্যাটনিস।
তোমার কি হবে, পিতা?
কারো দরকার নেই আমাকে। পিতা’র উত্তর।
আমার প্রয়োজন। ক্যাটনিস গভীরভাবে তাকালো পিতা’র দিকে।
তোমাকে আমার প্রয়োজন। ক্যাটনিস আরো ঝুকলো পিতা’র দিকে। [মুভির অর্কেষ্ট্রার স্কোর এখন তুঙ্গে]
৪৭.
মুভির এই অংশটা হৃদয় বিদারক কিনা জানি না তবে কম্পোজার জেমস নিউটন হাওয়ার্ড তার স্কোর দিয়ে স্থান করে নিলেন বিশ নম্বরে। গিটারের এতো ক্ষমতা সেটা জানা ছিলো না আগে। নিচের ক্লিপের এক মিনিট সাতাশ সেকেন্ড থেকে চোখ ঝাপসা হয়ে যায় আমার। আমি তো আমিই। এমনিতেই কাঁদি।