Feeds:
Posts
Comments

Archive for October, 2013

David-Ogilvy-quote

The consumer isn’t a moron; she is your wife. You insult her intelligence if you assume that a mere slogan and a few vapid adjectives will persuade her to buy anything.

– David Ogilvy in ‘Confessions of an Advertising Man’

১৭৩.

ফিরলাম ডেভিড ওগল্ভিকে নিয়ে। এই নামকরা আইকনিক বিজনেসম্যান একবার একটা ইন্টারনাল মেমো ছাড়লেন এজেন্সীর সব কমকর্তার নামে। বিষয়টা আমারই। ‘কিভাবে লিখতে হয়’ ছিলো ওটার টাইটেল। সময়কার সাতই সেপ্টেম্বর, উনিশশো বিরাশি। ওগল্ভি নিশ্চয়ই জানতেন না যে এগুলো কোনোদিন বেরুবে বই হয়ে। ইন্টারনাল মেমো হয়েছে তো কি হয়েছে, কথাগুলো একদম সত্যি। ডেভিড লিখেছিলেন;

১৭৪.

যতো ভালো লিখবে ততো উপরে উঠবে এই ওগল্ভি আর ম্যাথারে (বুঝতেই পারছেন এটাই সেই কোম্পানির নাম)| যারা চিন্তা করতে পারে ভালো, ভালো লেখে তারাই।

বিশৃঙ্খল মানুষই লেখে উলটাপালটা মেমো, বিভ্রান্তকর চিঠি আর দিশেহারা ধরনের বক্তৃতা।

ভাল লেখা কোনো প্রাকৃতিক উপহার নয়। ভালো লিখতে চাইলে শিখতে হবে সেটা। দশটা টিপস্ দেয়া গেল ভালো লেখার জন্য:

১. পড় লেখার উপর রোমান-রাফায়েলসনের বইটা। (আমাজনে গিয়ে দেখি ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। পুরানো বই হলেও এখনো চলছে ভালোই। বুকচার্টে আছে মানে মানুষ কিনছে বইটা, এখনো। নাম “রাইটিং দ্যাট ওয়ার্কস; হাউ টু কম্যুনিকেট ইফেক্টিভলি ইন বিজনেস”।

২. লেখো কথা বলার ভঙ্গিতেই। স্বাভাবিকভাবেই।

৩. ছোট ছোট শব্দ, ছোট বাক্য এবং ছোট অনুচ্ছেদ ব্যবহার করবে।

৪. জার্গন মানে অপভাষা থেকে থাকবে দুরে। নিজেকে বিদ্বান দেখাতে গিয়ে বোকা হবার সম্ভাবনা বেশি।

৫. যে কোনো বিষয়ে দুই পৃষ্ঠার বেশি লিখতে নেই।

৬. উদ্ধৃতি পরীক্ষা করতে হবে পদে পদে।

৭. চিঠি অথবা মেমোটা কখনো পাঠাতে নেই সেদিনই, যেদিন লেখা হয়েছে এটা। পরের দিন সকালে এটাকে পড়তে হবে জোরে – আর তারপরই এডিট করো সেটাকে।

৮. মেমোটা গুরুত্বপূর্ণ হলে সহকর্মীকে দাও সেটাকে আরো উন্নত করতে।

৯. চিঠি বা মেমোটা পাঠাবার আগে তোমার প্রাপক ওটা পাবার পর কি করবে সেটা ঠিকমতো ফুটেছে কিনা নিশ্চিত কর। স্পষ্টভাবে লেখ – পানির মতো সোজা ভাষায়।

১০. কাজটা করাতে চাও আসলেই? লেখা বাদ তাহলে। চলে যাও লোকটার কাছে। কি চাও বলো তাকে।

– ডেভিড

১৭৫.

বহুদিন ধরেই বইটা আউট অফ প্রিন্ট। চাইলে, অনেক কষ্টে পাওয়া যেতে পারে একটা দুটো সেকেন্ড হ্যান্ড কপি। আমাজন থেকে। তবে ভালো খবর ওটা আবার বের হবে দুহাজার চৌদ্দতে। প্রি-অর্ডারের হিড়িক চলছে এখন। লাগবে নাকি একটা?

Read Full Post »

Don’t bunt. Aim out of the ballpark. Aim for the company of immortals.

― David Ogilvy

১৬৬.

বইটা নিয়েই যতো সমস্যা। আমাজনে চলছে এখন ওটার প্রি-অর্ডারের গল্প।

বের হবে কবে তবে? আপনার প্রশ্ন।

মে ১৩, দুহাজার চৌদ্দতে।

প্রশ্নে আসি সরাসরি।

লক্ষ্য করুন নিচের কয়েকটা কোম্পানিগুলোকে।

নেসলে, ক্যাডবারী, আইবিএম, কোডাক, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি), ফোর্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ম্যাক্সেল। অথবা ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড হিসেবে পন্ডস আর ডাভ? পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই শুনবেন এদের নাম। বিশ্বখ্যাত এই ব্র্যান্ডগুলোকে আজ এ পর্যায়ে আনার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?

সহজ হয়ে গেলো না প্রশ্নটা? ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।

আর, রোলস রয়েসের নামটা ভুলে গেলেন কেন?

সত্যি তো! আমারই ভুল।

১৬৭.

ফিরে আসি আগের প্রশ্নে। মার্কেট কমিউনিকেশনে এই যুগে সবাইকে অংশগ্রহন করানোর জন্য প্রশ্ন করা হয় সহজ সহজ। সেটাই চেষ্টা করেছিলাম হয়তোবা। দেব একটা উদাহরণ?

টিভির অ্যাডেই থাকে কিন্তু এধরনের জিনিস। ভেবে দেখুনতো। প্রোডাক্ট ‘ক’ সঠিক উত্তরদাতাদের মধ্যে লটারির বিজয়ীকে নিয়ে যাবে প্যারিসে। প্রশ্নের ধারায় আসি এখন। বাংলাদেশের রাজধানী হবে কোনটা?

ক. চট্টগ্রাম
খ. রাজশাহী
গ. ঢাকা

এসএমএস করুন ক, খ, অথবা গ উত্তর লিখে। সহজ প্রশ্ন হওয়াতে উত্তরের টার্নআউট হবে মারাত্মক। অ্যাড এজেন্সীর পোয়াবারো। দুষ্টু লোকেরা ওই এসএমএস থেকে টাকা তোলার গল্প দিতে চাইবেন। অনেকের ধারনায় হাই ‘আইকিউ’রা কখনই মাড়ায় না ওই পথ। ওদিকে যাচ্ছি না আপাতত।

১৬৮.

প্রস্তর যুগে বাস না করলে সবাই প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা পয়েন্ট করবেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর প্রভাবশালী আইকনিক অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এজেন্সী ‘ওগল্ভি আর ম্যাথারে’র দিকে। ডেভিড ওগল্ভি, আজকের এই বিলিয়ন ডলারের অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ‘পিতা’ তার এজেন্সীটাকে তৈরী করেছিলেন সেই উনিশশো আটচল্লিশে। ‘গো গ্রেহাউন্ড, লিভ দ্য ড্রাইভিং টু আস’ ট্যাগলাইনটা উনিশশো ছাপ্পান্নতে হলেও এর সাবলাইম ইনফো এখনো টানে আমাকে। আমেরিকার মতো জায়গায় নিজের গাড়ি চালানো ফেলে বাসে ওঠা, সম্ভব হতো না ওই চমত্‍কার ট্যাগলাইনটা ছাড়া। যতো লিজেন্ডারি আইকনিক অ্যাডভার্ট হয়েছে পৃথিবীতে, তার প্রায় সবগুলোই এসেছে ওই ডেভিড ওগল্ভির এজেন্সী থেকে। খ্যাতির চরমে থেকেই বই লেখেন একটা যা সব অ্যাডভার্টাইজমেন্ট প্রফেশনালদের ক্লাসে বর্তমানে ‘আ রিকোয়ার্ড রিডিং’| লেখা হয়েছিলো সেই উনিশশো তেষট্টিতে। ব্যক্তিগতভাবে ডেভিড পার্টলি কপিরাইটার হওয়াতে বইটা প্রিয় বইগুলোর মধ্যে একটা। কপিরাইটারের কাজ হচ্ছে এমনই ভাষা তৈরী করা যা আপনাকে সেই জিনিসটাকে কিনিয়ে ছাড়বেই। বইটার নাম? ও আরেক জিনিস! ‘কনফেসন অফ অ্যান অ্যাডভার্টাইজিং ম্যান’, নামটাই যে কাউকে বইটা পড়তে বাধ্য করবে।

১৬৯.

বইটা হাতে নেবার কারণ কয়েকটি। অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির পিতার কাছ থেকে লিখতে শেখা। পার্সুয়েসিভ লেখা। কিনিয়ে ছাড়ার মতো লেখা। আপনাকে কেনানোর জন্য লিখবো না আমি। সনাতন চিন্তা থেকে আপনাকে সরাতেই পারলেই খুশি আমি। পাল্টাচ্ছে দুনিয়া – অতি দ্রুত। পিছিয়ে পড়ার মতো বিলাসিতার সময় নেই আর। এগিয়ে যাচ্ছে সবাই। সামর্থবানরা অবকাশ যাপনে যান ভিন্ন দেশে। ভালো করে নিয়ে আসেন মন। মধ্যবিত্তদের যাবার রাস্তা নেই কোথাও। মন ছোট করে থাকছে দিনের পর দিন। কাজও হতে থাকবে মন ছোট করার মতো। আজ সিঙ্গাপুর সিঙ্গাপুর হয়নি এমনিতেই। পাল্টেছে তারা – জ্ঞান আহরণের মধ্যে থেকে। পেয়েছে বিগ পিকচার। বড় হয়েছে মন। এটা এসেছে এক প্রজন্মের স্যাক্রিফাইস থেকে। নিজেরা পাল্টালে পাল্টাবে দেশ। সেটা করতে হবে আমাদেরকেই। পড়তে শিখতে হবে। শিখতে হবে লিখতে। কনস্ট্রাক্টিভ লেখা। নয় দোষারোপের, লিখতে হবে দ্বায়িত্ববোধ থেকে। দ্বায়িত্ব নিতে হবে আশেপাশের জিনিসপত্রের। বিগ পিকচার পেলে সম্ভব সবই। মন ভালো করানোর ব্রত নিয়ে লিখতে শুরু করেছি আমি। ভেনিজুয়েলা ‘হ্যাপিনেস’ মন্ত্রনালয় করতে পারলে মন ভালো করার লেখার জন্য কে ঠেকায় আমায়। স্বপ্ন দেখানোর জন্য লেখা। সঙ্গে বিগ পিকচার!

১৭০.

নতুন প্রজন্মের সাথেই আমার কাজ। অনেক কাজ। ভুল হতে পারে আমার, প্রত্যয়ের অভাব দেখি অনেকের মধ্যে। ওদের বয়সে আমাকে নিয়ে গিয়েও মেলাতে পারি না মাঝে মধ্যে। আস্থার অভাব কেন? কাজের গভীরে যেতে পারছে না অনেকেই। কষ্ট পাই। আস্থা তৈরীর জন্য যে ‘রিকোয়ার্ড রিডিং’ বা সময় দেবার দরকার তার কোনটাই দিতে পারছে না তারা। সময় কাটাচ্ছে কিভাবে ওরা? যেটা বুঝতে পারছি – পড়ছেই কম ওরা। লিখছে না। সেটাই ভয়ের। আরেকটা ব্যাপার আমাকে পীড়া দিচ্ছে ইদানিং। প্রচন্ড নেগেটিভিটি কাজ করছে অনেক জায়গায়। এটা সম্ভব না, ওটা সম্ভব না – যাই বলি, কোনোটাই করা সম্ভব না। দেশ এগুবে কিভাবে? উপায় একটা, পরিবর্তন হতে হবে দৃষ্টিভঙ্গির। সেটার জন্য দরকার জ্ঞানের চর্চা। তার জন্য লিড নিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে, বিশেষ করে যারা প্রতিষ্ঠানটা চালাচ্ছেন। উদ্বুদ্ধ করতে হবে অধীনস্তদের, জ্ঞান আহরণে। বাড়াতে হবে মানবসম্পদ উন্নয়নের বাজেট।

১৭১.

‘কনফেসন অফ অ্যান অ্যাডভার্টাইজিং ম্যান’ বইটা এতোই চলেছে যে লেখার পঁচিশ বছর পর লেখারটার পেছনের গল্পও জুড়ে দিলেন। প্রচন্ড আস্থা থেকে লেখার কারণেই অথবা অন্য কারণে হোক অনেকে তার লেখার মধ্যে দাম্ভিকতা বা আত্মশ্লাঘার ব্যাপারটা আনতে পারেন। ডেভিডও মনে হলো মেনে নিয়েছেন ব্যাপারটা। তিনি লিখছেন,

দাম্ভিকতার রেশ পেলে আমি বলবো – সেটা অনেকটাই সিলেক্টিভ। কিছুই পারি না আমি, (মিজারেবল ডাফার, তার ভাষায়) একমাত্র অ্যাডভার্টাইজিং ছাড়া। বুঝি না ব্যালান্সশিট, পারি না কম্পিউটার, স্কি, গল্ফ কিংবা আঁকতে ছবি। কিন্তু যখন কথা হয় অ্যাডভার্টাইজিংয়ের, অ্যাডভার্টাইজিং এইজ (পত্রিকা) বলেছে আমি অ্যাডভার্টাইজিংয়ের ক্রিয়েটিভ রাজা। আবার ফরচুন পত্রিকার একটা আর্টিকেলের টাইটেলের জন্য মামলা করেছিলাম। টাইটেলটা ছিলো, ‘ডেভিড ওগল্ভি কি জিনিয়াস?’ মামলা করতে বলেছিলাম ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে আমার আইনজীবীকে, প্রশ্নবোধক চিহ্নটার জন্য।

১৭২.

মারা গিয়েছেন ডেভিড উনিশশো নিরানব্বইতে। ‘অপ্রকাশিত ডেভিড ওগল্ভি’ বইটা সামনের দুহাজার চৌদ্দতে বের হলেও ওর কয়েকটা পাতা পাওয়া গেছে অনলাইনে। অ্যাডভার্টাইজিংয়ের রাজা, লিখেছেন আবার লেখার উপর। দশ দশটা টিপস – শুধুমাত্র ভালো লেখা মানে ভালো কমিউনিকেশনের উপর। ঠেকায় কে আপনাকে?

আসছি সামনেই!

Read Full Post »

It is better to light a candle than curse the darkness.

– Chinese proverb

১৫৮.

পত্রিকার ‘পাঠকের পাতা’গুলো পড়তাম ছোটবেলা থেকে। মেনস্ট্রিম নিউজ থেকে অন্য পার্সপেক্টিভ পেতে এ ব্যবস্থা। টিভি, প্রিন্ট আর অনলাইন নিউজের রিপোর্টিং থেকে আন্দাজ একটা পাওয়া যায় বটে। তবে পাঠকের লেখা তার নিজস্বতা থেকে তৈরী হলেও অনেকের লেখা থেকে কিছু রিফ্রেশিং আইডিয়া মাথা খোলায়। সেকারণে বড় বড় নিউজ এজেন্সীগুলো সিএনএনএর আইরিপোর্টের মতো পাঠকের সাথে হাত মিলিয়েছে সরাসরি। আজ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সেই ‘পাঠকের পাতাকে’ নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়। বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগের নতুন এই মাত্রা একেকজনের ব্রডকাস্টিং স্টেশনে পরিনত হয়েছে।

১৫৯.

ঢাকার লেটেস্ট হ্যাপেনিংস পাচ্ছেন ওই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের নিউজফীড থেকে। বন্ধুর বিয়ে থেকে শুরু করে কোন রাস্তায় কে কি দেখেছে তাও আসছে সেই নিউজফীডে। পাওয়ার টু দ্য পিপল, বলে কথা। মেনস্ট্রিম নিউজের লিংক আর কাস্টমাইজড খবরের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটা হট ব্রডকাস্টিং স্টেশন – প্রায় সবার জন্য। হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকাতে স্টাটাস আপডেটের ভিড়ে ওর মতামত আসছে প্রতিনিয়ত। ওল্ড হ্যাবিট ডাই হার্ড, মতামতগুলোই পড়ি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। আর সেটা নিয়ে আমার এই লেখা। সমস্যা নিয়ে একটা স্টাটাসের পাশাপাশি সবার মতামতগুলো পড়লে এর আশিভাগই হয় ‘দোষারোপ’ সংক্রান্ত। মানে কার দোষে হলো এটা? এটা দোষের নয় কিছু, তবে সবাই দোষারোপ করেই ক্ষান্ত। ব্লেমগেম চলতে থাকে নিরন্তর। সমস্যাটার অ্যাকশন পয়েন্ট কি অথবা সমস্যাটার সমাধানে কি করণীয় সেটা ভুলে যাই আমরা। সমস্যার শুরুটা সরকার দিয়ে শুরু হলে তার ‘ব্যাশিং’ স্টেটমেন্টেই সবাই ক্ষান্ত, কনস্ট্রাকটিভ ডিসকাশন হয় কম।

১৬০.

কারণ বের করতে নামলাম এক সপ্তাহের রিসার্চে। মনস্তাত্ত্বিক। প্রথমেই পেলাম এই চীনা প্রবাদবাক্যটা। অন্ধকারের অভিসম্পাত না করে বরং মোমবাতিটা জ্বালানো জরুরী। কার দোষে অন্ধকার হলো সেদিকে না যেয়ে উচিত আসল কাজটাই করে ফেলা। অন্ধকার তাড়ানোর জন্য মোমবাতিটা জ্বালানোটাই হচ্ছে অ্যাকশন পয়েন্ট। এরপর কার ‘দোষে’ আর কিভাবে অন্ধকার হলো সেটা নিয়ে ‘পিএইচডি’ করলে কারো সমস্যা থাকার কথা নয়। সমাধানটা তো হয়েছে আগে। মূল প্রশ্ন, সমস্যার সমাধানে মানুষ কাজটা না করে দোষারোপের পথটা বেছে নেয় কেন?

১৬১.

প্রথমত, দোষারোপ করাটা সবচেয়ে সহজ। আমার দ্বায়িত্বটা পার করে দিলাম আরেকজনের ঘাড়ে। থাকলো না কোনো পিছুটান। সমাধান করতে গেলে ওর দায়িত্বটা নিতে হবে আমাকে। আবার সমস্যার সমাধানের চিন্তা করতে গেলেও সমস্যাটাকে নিজের করে নিতে হবে আগে। দেশের প্রতিটা সমস্যাকে নিজের সমস্যার মধ্যে নিয়ে নিলে দোষারোপের গল্প থাকবে না। কারণ, ওই সমস্যাটা আমারো সমস্যা। আমার কিছু করার আছে এতে। দ্বায়িত্ব নিলেই আমিও পার্ট অফ দ্য সল্যুশন। আর দায়িত্ব না নিলে ওটা অন্য কারো সমস্যা। আশা করতে থাকি সমস্যাটা অন্যদের, সমাধান করবে বাকিরাই। এগোচ্ছি না আমরা, হচ্ছে না ভাগ্য পরিবর্তন। ঘটনা ঘটছে সেই দুধ দিয়ে পুকুর ভরানোর মতো। অত দুধের মধ্যে আমার এক কলসী পানি যাবে কি বোঝা?

১৬২.

আমি আশাবাদী। পাল্টাচ্ছি আমরা। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের অভিনব ব্যবহার মুগ্ধ করছে প্রতিনিয়ত। এই কর্মসংস্থানের দুর্যোগে সরকারকে দোষারোপ না করে কিছু দ্বায়িত্বশীল মানুষ এগিয়ে এসে তৈরী করেছেন “চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব” গ্রুপ। সমস্যাটাকে তারা চালান করে দেননি সরকারের কাছে। দ্বায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছেন সমস্যা সমাধানে। বড় কথা, ধরে নিয়েছেন নিজের সমস্যা হিসেবে। দোষারোপ করে যে আগানো যায়না সেটা ভালোভাবেই বোঝেন এই দ্বায়িত্বশীল মানুষগুলো।

১৬৩.

দরকারের সময় রক্তের যোগান পাওয়া যে কতো বড় সমস্যা সেটা ভুক্তভোগীরাই জানেন ভালো। এটা একটা সমস্যা, দেশের সমস্যা। তবে কেউ কেউ এটাকে নিজের সমস্যা মনে করে নেমে গেছেন এর সমাধানে। করছেন সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বোত্তম ব্যবহার। তবে অবাক করেছে এই মেয়েটা। ফারহিন সোহান কবির লিটা’র ফেইসবুক পেজের সর্বশেষ আপডেট নিয়ে আসি বরং (সংক্ষেপিত)।

#মিশন_প্রতিদিন_৪_ব্যাগ_বি_পজিটিভ_ঢাকা।

একজন দুরন্ত তরুণ রাজু ভাই। কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছেন। এখন তাঁর সময় নবপরিণীতাকে নিয়ে গল্পের চেয়েও সুন্দর দিন কাটানোর।

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছেন রাজু ভাই। প্রায় ৩০ ব্যাগের মতো রক্ত দেয়া হয়েছে তাঁকে। রক্তকোষ গুলো ভেঙে যাচ্ছে তাঁর। ডাক্তার বলেছে আবার ৩০ ব্যাগ রক্ত দিতে হবে, ধীরে ধীরে, প্রতিদিন ৪ ব্যাগ করে।

ফোনঃ 01670865036 সাইদুল বাশার হিমেল (রাজুর ভাই)

সবাই মিলে কি পারবো এই ভাইকে রক্ত জোগাড় করে দিতে?? বি পজেটিভ বলে যারা রক্ত দিতে সুযোগ পান না, তাঁদের জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর কি হতে পারে??

কপি পেস্ট করুন, শেয়ার করুন, নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে আসুন। রাজু ভাইর জন্য, প্রতিদিন ৪ ব্যাগ বি পজিটিভ।

১৬৪.

আমরাই বাংলাদেশ’ নামে একটা কমিউনিটি পেজ দেশের কিছু কিছু সমস্যা নিয়ে ঘামাচ্ছে মাথা। তৈরী করেছে ডোনারদের অনলাইন ডাটাবেস। সমস্যাগুলোকে নিজের করে নিয়েছে তারা। দেখুন উন্নত দেশগুলোতে, সরকারের পাশে কর্পোরেটদের ‘সিএসআর’ পাল্টে দিচ্ছে সামাজিক দায়বদ্ধতার পুরনো হিসেব। ‘বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে’র অডিটেড ফিনান্সিয়াল ফিগার নামালাম এইমাত্র, খরচ বাদে শুধুমাত্র দানই করেছেন দুই লাখ বিশ হাজার আটশো কোটি টাকা (২৭.৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার)| টাকা নিয়ে বসে আছে তারা, নিতে পারছে না দেশগুলো। মানুষের জীবন পাল্টানোর আইডিয়ার অভাব বড়। বরং আফ্রিকাই ছাড় করিয়েছে অনেক টাকা।

১৬৫.

চীনা প্রবাদবাক্যটাকে জনসাধারণের সামনে প্রথম নিয়ে আসেন একজন ইংলিশ আইনজীবী, পিটার বেনেনসন। উনিশশো একষট্টি সালে – তার এক বক্তৃতায়। চিনতে পেরেছেন নিশ্চয়ই। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা। আমার ধারণা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের লোগোতে মোমবাতিটা এসেছে ওখান থেকে।

কাজটাই আসল কথা। সব সমস্যাই আমাদের নিজেদের সমস্যা। ব্লেমগেম নয় আর – কি বলুন?

Read Full Post »

Today you’ll be in negotiation with somebody in Africa and learn the man’s been to Oxford, Cambridge, and Harvard and speaks six languages. I barely speak English.

– Aidan Heavey, CEO, Tullow Oil (Ireland)

১৪৬.

কফি নিয়ে এসেছি দুটো –মনের ভুলে, নেবে নাকি একটা?

খানিকটা অবাক হয়েই তাকালো সে। ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না বলে মনে হলো। নিজের কথা গিলে খাওয়ার মতো অবস্থায় দাড়িয়ে গেল মনে হচ্ছে।

রিওয়াইন্ড করার মানে হয় না কোনো। র-সুগারের প্যাকেটটা এগিয়ে দিলাম বরং।

সুগার আলাদা করেই নিয়ে এসেছি – তোমার আন্দাজ জানা নেই আমার।

মেয়েটা দাড়িয়ে গেল হঠাত্‍ করে। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই। এগিয়ে এলো কিছুটা। জিনিস দুটো আমার হাত থেকে নিলো সে।

আই উড লাভ টু, ধন্যবাদ তোমাকে। ইউ আর সো থটফুল! নিয়ে আসা উচিত ছিলো আমারই।

খাঁটি ব্রিটিশ অ্যাকসেন্ট, কিংস কলেজে পড়েছে সে।

১৪৭.

গতকাল থেকে কনফারেন্স শুরু হয়েছে আফ্রিকার একটা দেশে। একই টেবিলে বসছি আমরা। দুজনের এক টেবিল। টুকটাক হয়েছে কথা। গতকাল কার্ড বিনিময়ের সময় পেছনের ‘কিউআর কোড’ দেখে যে ভূয়সী প্রশংসা করলো তাতে মনে হলো কোডটা আমিই আবিস্কার করেছি।

ওয়াজ আই ব্লাশিং? ব্রেকে একটা ‘কিউআর কোড’ জেনারেটর বের করে দিতে হয়েছিলো ওকে।

আজ সকাল থেকে খুবই ব্যস্ত সে। একটা রিপোর্ট পাঠাতে হবে তার অফিসে। কেনিয়ান কমিউনিকেশন কমিশনে। কফি ব্রেকেও যেতে পারেনি সকাল থেকে। আভাস দিলো রিপোর্টটার ব্যাপারে, সাঁজিয়ে নিয়ে এসেছে প্রায়। কিছু কসমেটিক চেঞ্জ বাকি। এর মধ্যে দুটো কফি ব্রেক পার। ওঠেনি ল্যাপটপ ছেড়ে। সেকারণেই কফিটা আনা।

টাইমজোনে ঘাপলা হলেই হতচ্ছাড়া ঘুম যায় পালিয়ে। ভোর পাঁচটায় উঠে সব ই-মেইলগুলোকে সিসটেম করাতে ব্রেকে নেটওয়ার্কিং করা যাচ্ছে ভালো।

১৪৮.

একটা ক্রোসান্টও নিয়ে এসেছো দেখা যাচ্ছে। আমার জন্য নাকি?

থতমত খেয়ে গেলাম এবার। আসলেই তাই। ওর জন্যই নিয়ে এসেছিলাম। কাঁচুমাচু মুখ করে এগিয়ে দিলাম ওকে। টুইস্টেড ক্লাসি ব্রেইডের চুলগুলোকে বেশ মানিয়েছে ওর হাস্যজ্জল মুখে।

এটা গছানোর জন্য কি বলবে বলে রিহার্সাল দিয়েছো, বলতো?

হাসলাম আমি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাইছে সে।

রিপোর্ট শেষ, ফুর্তিতে আছ মনে হচ্ছে। এড়ানোর চেষ্টা করলাম।

বল না প্লিজ, অনুনয় করলো সে।

হাসতে গিয়ে গালে টোল ফেলে দিলো মনে হচ্ছে। চুল থেকে একধরনের গ্লিটারিং আভা তার আফ্রিকান ডিম্বাকার মুখটাকে আকর্ষনীয় করে রেখেছে।

রিহার্সাল শুরু করলাম, দ্বিতীয়বার।

ভাবটা এমন করবো যে ক্রোসান্টটা আমার জন্যই নিয়ে এসেছি আমি।

তারপর? চোখ বড় বড় করলো সে। যথেষ্ট ইমপর্টেন্স দেবার সিগন্যাল দিচ্ছে – আমার কথায়।

তারপর বলবো, ভুলেই গেছি যে ক্রোসান্ট খেয়ে এসেছি একটা, নেবে নাকি এটা?

মৃদু হাততালির অভিনয় করলো সে। ‘রিহার্সাল চমত্‍কার, আর তার থেকে চমত্‍কার তোমার অভিনয়। হলিউডে যাচ্ছ কবে?’

কেনিয়া: নির্ধারণ করেছে নুন্যতম গতি, স্কুল আর হেলথকেয়ার সিস্টেমকে নিয়ে এসেছে ভেতরে ...

কেনিয়া: নির্ধারণ করেছে নুন্যতম গতি, স্কুল আর হেলথকেয়ার সিস্টেমকে নিয়ে এসেছে ভেতরে …

১৪৯.

এই গত জুলাই মাসে কেনিয়া সাহস করে বিশাল এক কাজে হাত দিয়েছে। তিনশো কোটি ডলারের কাজ। আমাদের টাকায় দুহাজার চারশো কোটি টাকা, ইন্টারনেটের স্পীড বাড়ানো আর ডিজিটাল সার্ভিসগুলোকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিভাবে নেয়া যায় সেটার জন্যই নেয়া হয়েছে এই নতুন ব্রডব্যান্ড স্ট্রাটেজি। দুহাজার সতেরোর মধ্যে দেশব্যাপী ‘নির্ভরযোগ্য’ ইন্টারনেট আর ডিজিটাল সার্ভিসগুলোকে কিভাবে সেখানে নেয়া হবে সেটাই এখানে উপজীব্য। নিখুত প্ল্যান, এদিক ওদিক হবার জো নেই একেবারে।

ব্রডব্যান্ড ডেফিনেশন, স্বপ্ন দেখছে না কেনিয়া, বাস্তবে রূপান্তর করছে দুহাজার সতেরোর মধ্যে ...

ব্রডব্যান্ড ডেফিনেশন, স্বপ্ন দেখছে না কেনিয়া, বাস্তবে রূপান্তর করবে দুহাজার সতেরোর মধ্যে …

অতিনো হাত নেড়েচেড়ে বোঝাচ্ছিল ওদের ব্রডব্যান্ড স্ট্রাটেজিটা, নিখুতই বলতে হবে। জ্বলজ্বল করছে ওর চোখ, মনেই হচ্ছে আত্মস্থ করেছে মন থেকে। মনে প্রাণে বিশ্বাস করছে মেয়েটা – কাজ করবেই এটা। আমাকেও বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছে এর মধ্যে।

১৫০.

মাঝ রাতে জন্ম নেয়ায় ওর নামের মর্মার্থ পেলাম দুপুরের খাবারের টেবিলে বসে। দুপুরে খুঁজে খুঁজে আমার টেবিল বের করেছে সে। কিন্তু কাছে এসেই ভড়ং।

তোমার সাথেই বসতে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত! ফাঁকা কেন তোমার টেবিল? টিপ্পনী কাটলো সে।

হাসলাম বরং। প্রশ্রয়ের হাসি। বয়সে অনেক ছোট সে।

সব টিপ্পনীর উত্তর দিতে নেই। ফলাফল পেলাম কিছুক্ষণের মধ্যে। খাবারের মাঝখান থেকে উঠে গেল সে। ফিরে এলো আরেকটা প্লেট নিয়ে। কিছু ফ্রাইড প্ল্যানটেনস পাশে রাখা। নিজের জন্য নিয়ে এলো বুঝি!

তোমার পছন্দ হবে এই মাছের ‘স্টু’টা। ওবোকুন মাছের সাথে টমেটো দিয়ে তৈরী কিন্তু। স্পাইস দেয়া। স্পাইস খাওতো তোমরা। ‘ওবেএজা তুতু’ বললেই হবে এখানে।

১৫১.

আছে কি ব্রডব্যান্ড স্ট্রাটেজিটাতে? ‘স্টু’টা লাগছে চমত্‍কার।

দুহাজার সতেরোর মধ্যে পঁচাত্তর শতাংশ লোকাল বিজনেসকে অনলাইনে আনার অনেকগুলো অ্যাকশন পয়েন্ট দিয়ে শুরু করা হয়েছে এটা। অতিনোর শার্প রেসপন্স।

ফিস রোল চেখে দেখবে নাকি একটা? মাংসের পাইয়ের মধ্যে মাছের ফিলিং, ডিপ ফ্রাইড!

অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে। চেখে দেখবো ‘খন। আর কি আছে স্ট্রাটেজিতে?

ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়েই অনেকগুলো অ্যাকশন পয়েন্ট আছে এখানে, প্রথম পাতাটা তুলে দিচ্ছি শুধু, পুরো রিপোর্টটা দিচ্ছি নিচে ...

ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়েই অনেকগুলো অ্যাকশন পয়েন্ট আছে এখানে, প্রথম পাতাটা তুলে দিচ্ছি শুধু, পুরো রিপোর্টটা দিচ্ছি নিচে …

সরকারীভাবে যোগাযোগের সত্তুরভাগ জিনিসপত্র অনলাইনে আনতে হবে ওই সময়ের মধ্যে। চল্লিশ শতাংশ মানুষকে ডিজিটালি লিটারেট মানে ডিজিটাল সার্ভিস নেবার নুন্যতম শিক্ষার মধ্যে আনতে হবে একই সময়ে। এর জন্য যা যা করতে হবে তার সব কিছুই বলা আছে ওই স্ট্রাটেজিক পেপারে – অ্যাকশন পয়েন্ট আকারে। কেনিয়ান ওয়েবসাইটগুলোর নুন্যতম বিশ শতাংশ আনতে হবে আমাদের নিজস্ব ভাষায়।

মনে হলো পেপারটা পুরোই মুখস্ত ওর! ভালো লাগলো ওর আত্মবিশ্বাসে। মুখমন্ডল থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে যেনো!

১৫২.

ডেজার্ট কোনটা পছন্দ তোমার? ‘চিন চিন’ না ‘পাফ পাফ’? হাসি লুকানোর চেষ্টা করলো না আর। রিদমিক শব্দের জন্য বোধহয়।

চেখে দেখলেই হাতে পাবে কিন্তু স্ট্রাটেজিক পেপারটা!

বলে কি, মেয়েটা! পড়ে ফেলছে আমাকে! মাইন্ডরিডার নাকি?

বেকায়দায় পড়লাম মনে হচ্ছে। দেখতে হয় যে চেখে!

ব্রডব্যান্ড স্ট্রাটেজিকে বছর ধরে সাপোর্ট করার জন্য টাকাটা আসবে কোথা থেকে? আমার দেখা অনেক ব্রডব্যান্ড স্ট্রাটেজির সীড ফান্ডিংয়ের পরে সাস্টেনিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন আসে অনেক।

ঠিক বলেছ হাসান। এই স্ট্রাটেজিক প্ল্যানকে সাপোর্ট করার জন্য বার্ষিক বাজেট থেকে পাঁচ শতাংশ চলে যাবে ওই ফান্ডে। এখন এটা আছে মাত্র ০.৫ শতাংশে! এছাড়াও টেলিকমিউনিকেশন অপারেটররা তাদের রেভিনিউয়ের একটা অংশ ছেড়ে দিচ্ছে লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটির জন্য, বিশেষ করে গ্রামের দিকে।

মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। কথা বলতে দিলাম ওকেই।

সরকারও প্ল্যান করছে একটা ব্রডব্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড তৈরী করতে। সেটা তুলতে লাগবে চৌত্রিশ কোটি ডলার। এছাড়া এই ব্রডব্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিজে থেকে তুলবে উননব্বই কোটি ডলার।

স্মার্টফোনটা বের করলো সে। স্ট্রাটেজির ব্লুপ্রিন্টটা বড় করলো। সেটা বলছে, তুলে দিচ্ছি হুবহু;

The strategy provides a roadmap to transform Kenya into a knowledge-based society driven by reliable high-capacity nationwide broadband network.

আরেকটা পাতা, শিক্ষা আর হেলথকেয়ার খাত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে এখানে ...

আরেকটা পাতা, শিক্ষা আর হেলথকেয়ার খাত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে এখানে …

১৫৩.

অনেকগুলো থিমেটিক এরিয়া নিয়ে তৈরী হয়েছে স্ট্রাটেজি পেপারটা। প্রথমেই রয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার, কানেক্টিভিটি আর ডিভাইস সংক্রান্ত বিষয়গুলো। পরের ধাপে রয়েছে কনটেন্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলো, উদ্ভাবনা, মানবসম্পদ তৈরী আর সচেতনতা বৃদ্ধির রোডম্যাপ। শেষে আছে সব গুরু বিষয় – নীতিমালা, লিগ্যাল, রেগুলেটরি, ফিনান্স আর বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির কিছু মাইলস্টোন।

টিং টিং করে আস্তে বেল বাজলো বারান্দায়। লাঞ্চের সময় শেষ। ফেরার পালা কনফারেন্সে। দুজনের কফি নিয়ে কনফারেন্স ভেন্যুতে যাবার দায়িত্ব নিলো অতিনো। আমি ছুটলাম কনফারেন্স প্রোডিউসারের কাছে। দেখা করতে বলেছে, দুমিনিটের জন্য। কার বক্তৃতা প্রক্সি দিতে হয় কে জানে!

১৫৪.

বিকেলের কফি ব্রেকে একজনের কার্ড নেবার জন্য দৌড় দেবার চেষ্টা করতেই আটকালো সে।

ওর কার্ড আছে আমার কাছে। কার্ডস্ক্যান অ্যাপ থেকে ট্রানসফার করে দিচ্ছি এখুনি।

তাই সই। গাইডেড ট্যুর দাও তোমার স্ট্রাটেজিক পেপারের ওপর। কালকের লাঞ্চ আমার উপর।

তাই নাকি? এশিয়ান, আফ্রিকায় এসে হোস্ট বনলো কবে থেকে? লাঞ্চ আমার উপর!

আমি অফার করেছি আগে! তোমাদের ব্রডব্যান্ডের নুন্যতম স্পীড কতো বলতো? সাবজেক্ট পাল্টানোর চেষ্টা করলাম।

স্ট্রাটেজিক প্ল্যান অনুযায়ী মানুষের বাসাবাড়িতে নুন্যতম সংযোগ গতি হবে পাঁচ মেগাবিট/সেকেন্ডের। এছাড়াও স্কুলের সব শিক্ষকদের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আইসিটি শিক্ষা করা হয়েছে বাধ্যতামূলক।

ন্যাশনাল ফাইবার ব্যাকবোন? সেটার কথা কি আছে কিছু? সন্দেহ ছুড়ে দিলাম ওর দিকে।

বলো কি তুমি? সরকার শুরু করেছে কাজ, সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে তিরিশ হাজার কিলোমিটারের ফাইবারের নেটওয়ার্ক। নুন্যতম আশি শতাংশ এলাকায় পৌঁছুতে হবে নেটওয়ার্কটাকে! সড়ক আর রেল বিভাগকেও বলা হয়েছে আইসিটির সম্পুরক ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরী করতে। সরকারী সব এজেন্সীকে এর মধ্যেই তার কনটেন্টকে হোস্ট করতে হবে এই শেয়ার্ড নেটওয়ার্কে। গ্রামে ফাইবার নেবার জন্য দেয়া হচ্ছে ট্যাক্স ওয়েভার।

১৫৫.

কনফারেন্স শেষেই দৌড় দিতে হলো। হোস্ট আমার হোটেলে যাবার গাড়ির ব্যবস্থা করেছে। ভেন্যুতে থাকা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল – খরচ বেশি বলে। রাতে এদেশের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয় আমন্ত্রণ করেছে ওদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে – ফলোড বাই ডিনার। ভেন্যু, নতুন জায়গা।

হোটেলে ফিরে সময় পেলাম দেড় ঘন্টার মতো। মাথা ঘুরছে। টাইমার চালু করলাম, সাঁতার আধাঘন্টা।

কেনিয়ার ব্রডব্যান্ড স্ট্রাটেজিক প্ল্যানের উপর ইন্টারনেট রিসার্চ – পয়তাল্লিশ মিনিট।

সাঁতার কেটে এলাম। দেহঘড়িকে এডজাস্ট করার নিজস্ব পন্থা। পিঠের ব্যথাটা বাড়লো মনে হচ্ছে।

ইন্টারনেট রিসার্চের ফলাফল ভয়াবহ। আইসিটি রেগুলেশন টুলকিট আর ব্রডব্যান্ড টুলকিটের গল্প বলেছিলাম আগেই। আইটিইউ, ওয়ার্ল্ডব্যাংক আর ইনফোডেভের রিসার্চ পাবলিকেশন্সে কেনিয়ার এই ব্রডব্যান্ড প্ল্যানের মাথা ‘ভিশন ২০৩০’ ফ্রেমওয়ার্ককে নিয়ে এসেছে কেসস্টাডি হিসেবে! মাথা খারাপ করা ফ্রেমওয়ার্ক, কাজ না করে উপায় নেই। গভার্নমেন্ট লেড এই প্রোগ্রামের ট্যাগলাইন পড়তে গিয়ে চোখে পানি এলো চলে। ‘বিল্ড ইট, দে উইল কাম’ কথাটার অন্তর্নিহিত মেসেজ অনেক ভেতরের। সাঁতারের পর চোখে পানি – অসম্ভব ব্যাপার।

১৫৬.

অতিনোকে চিনতেই পারিনি ডিনারে। টারকুইজ কালারের আফ্রিকান ফ্রেঞ্চ লেস স্কার্ট, সঙ্গে মাথায় চমত্‍কার একটা ‘আসো ওকে’র টপ।

মাফ করবেন, চিনতে পারছি না আপনাকে। হ্যাভ উই মেট বিফোর?

হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডসেক করার জন্য, হাসি আটকাতেই পারচ্ছে না সে, কোনোভাবেই।

আফ্রিকায় থেকে যেতে হবে মনে হচ্ছে!

ভালো কথা – নিয়ে এসেছে ‘দ্য ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড স্ট্রাটেজি ফর কেনিয়া’র একটা কপি। নিজে থেকে মনে করে।

তোমার জন্যই কিন্তু। মনে করিয়ে দিলো সে, আবার।

আমার জন্য মানে দেশের জন্য, লিখবো দেশে গিয়ে। অসুবিধা হবে তোমার?

ঠিক আছে, পাল্টে দিও নামটা আমার। সেটিংটাও কিন্তু!

১৫৭.

খেতে বসে নতুন আইটেমগুলোর চেখে দেখার আবদারের মধ্যে ফিরে এলাম স্ট্রাটেজিক পেপারটাতে।

টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্কের কি অবস্থা? দেশের এই লাইসেন্সটার প্রথম ড্রাফট তৈরী করেছিলাম বলে অন্যদেরটাও জানার ইচ্ছা হয় মাঝে মধ্যে।

শোনোনি তুমি সকালের সেশনটা?

না, অ্যাপের সেশনটায় গিয়েছিলাম আমি। সিমুলটেনাস সেশনের এই সমস্যা।

তানজানিয়া, জাম্বিয়া আর কেনিয়া মিলে তৈরী করছে ত্রিদেশীয় ফাইবার নেটওয়ার্ক। ইলেকট্রিসিটি মানে পাওয়ারগ্রিড কোম্পানির ঘাড়ে চড়ে এই নেটওয়ার্ক করতে লাগবে মাত্র পসট্টি কোটি ডলার।

থামলো সে। পরের প্রশ্নটা ছুড়ে দিলো আমাকেই।

বল দেখি, আইটিইউর রিপোর্ট অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি মোবাইল ব্রডব্যান্ডের পেনিট্রেশন কার? আফ্রিকার রিজিওনের কথা বলছি।

সাউথ আফ্রিকা?

ভুল! ঘানা, দুহাজার এগারোর রিপোর্টেই ‘তেইশ শতাংশ’ ছিলো এই মোবাইল ব্রডব্যান্ডে। মাইন্ড ইট, কীওয়ার্ড ‘মোবাইল ব্রডব্যান্ড’।

সেই ঘানা আর ‘বারকিনা ফাসো’ নিজেদের টেরেস্ট্রিয়াল ফাইবার লিংকের কাজ ধরেছে এমাস থেকে।

দেখে নিও আমাদের ছুঁতে পারবে না কেউই।

ভুল হতে পারে আমার। ভেজা ভেজা লাগছে ওর চোখ।

ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা হচ্ছিলো প্রথমে। এমনিতেই। ‘আইনফুলঙস্যাম্যু’ জার্মান শব্দটাই মনে হচ্ছিলো বার বার। পরে যোগ হয় ইংরেজিতে। এম্প্যাথি।

এক্সকিউজ মি, দাড়িয়ে গেল সে। নতুন একটা ডেজার্ট দেখলাম, আনছি এখুনি, ভালো লাগবে তোমার।

* The preceding is a work of fiction. Any resemblance to persons living or dead is purely coincidental.

Read Full Post »

Dominate in your domain; You can do it.

― Jaachynma N.E. Agu, The Prince and the Pauper

১৩৩.

ঈদের দিন আজ! মন ভালো করার একটা গল্প নিয়ে আসি, কি বলেন? সবার জন্য। তুলনার গল্প। পালাবেন না প্লিজ। দেশকে উপরে তোলার গল্প।

আমি আপনার থেকে ভালো, বললেন আপনি।

প্রমান করুন কোথায় কোথায় ভালো আপনি? আমার সহজাত উত্তর।

একশো মিটার স্প্রিন্টে আপনাকে হারিয়েছি, মনে নেই?

মেনে নিলাম। আসলেই হারিয়েছেন আমাকে।

মেট্রিকে আমি স্ট্যান্ড করেছি। আর আপনি?

সত্যি। স্ট্যান্ড করিনি আমি।

ইন্টার ক্যাডেট কলেজ বক্তৃতায় আমি ছিলাম চ্যাম্পিয়ন।

একদম সত্যি কথা। বোমা মারলেও আমার মুখ থেকে বেরুতো না কথা, তখন।

এখন, আপনারাই বলবেন ভালো।

১৩৪.

ছোটবেলায় বাবা মা চাইতেন ডাক্তার হই। বয়সের দোষ ফেলে দিলো অন্য দিকে। এমনই কাজ করলাম যাতে মেডিক্যাল পড়তে না হয় কখনো। মেট্রিকের বায়োলজিতে ভালোই করছিলাম। ইন্টারমিডিয়েটের সময় কিভাবে যেনো বায়োলজি ফেলে পরিসংখ্যান নিয়ে নিলাম, সেটা নিয়ে ভাবি এখনো। হয়েছিলো কি আমার? সে যাই হোক – ইন্টারমিডিয়েটের পরিসংখ্যানই বাঁচিয়ে দিলো আমাকে। তুলনার গল্পে আপনি আমার থেকে দৌড়ে, পরীক্ষায় আর বক্তৃতায় ভালো। স্ট্যাটিসটিকাল ইনডিকেটরের ভাষায় ওই তিনটা বিষয়ে আপনি এগিয়ে। তুলনা করছিলাম আপনার সাথে আমার।

১৩৫.

এখন দেশগুলোই দৌড়াচ্ছে নিজেদেরকে এগিয়ে নেবার জন্য – প্রতিনিয়ত:| নিজের তাগিদেই। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বলে যাকে আর কি। একেক দেশ একেকদিকে ভালো। কেউ ভালো পড়াশোনায়, কেউ আইসিটিতে, আবার কেউ খাদ্য উত্‍পাদনে। আবার অনেকে প্রায় সবকিছুতেই! আফ্রিকার দেশগুলো তাদের ইনডিকেটরগুলোকে ভালো দেখানোর জন্য হেন কাজ নেই করছে না। ইনফ্রাস্ট্রাকচার সম্পর্কিত যতো ইনডিকেটর আছে সেগুলো ভালো হলে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) আনার জন্য অত রোডশো করতে হয় না। কোনো দেশে বিনিয়োগের আগে সেদেশের ইনডিকেটর দেখেই মনকে তৈরী করে ইনভেস্টররা। আমরা ভুলে যাই, আইসিটি নিজেই একটা বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার! মায়ানমারকে দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছি ইদানিং। চেখে দেখবেন না কি রিপোর্ট একটা? অন্যেরটা না পড়লে আমাদের অবস্থান জানা দুঃসাধ্য! নিজে ঠেকে না শিখে অন্যের ভুল থেকে শেখা ভালো নয়? আমার কথা, হোয়াই রি-ইনভেন্টিং হুইল!

১৩৬.

কিছু কিছু ইনডিকেটর খালি চোখে দেখা যায়, এর জন্য স্ট্যাটিসটিসিয়ান হবার প্রয়োজন হয় না। যেকোনো দেশের একটা শহরের উদাহরণে আসি বরং। শহরের রাস্তা আর তার পাবলিক ট্রানজিট সিস্টেমস দেখলেই খালি চোখে ওর উন্নতি বোঝা যায়। বাকি জিনিসগুলোর তুলনা করার উপায় কি? আইসিটি আমার বিষয় হবার ফলে ফিরে আসি ওর গল্পেই। আইসিটিতে কোন দেশগুলো ভালো করছে? ওটার পরিমাপ কি? তুলনার বিষয়গুলো কি কি হতে পারে? সবাই সেটা মানবে কিনা? সেগুলোর তথ্য কিভাবে নেয়া হবে?

১৩৭.

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কে করবে?

ইউ এন অর্গানাইজেশন, আপনার উত্তর।

আপনি আসলেই ভালো, অন্ততঃ, আমার থেকে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) একাজটার ধারণা নিয়ে বসে আছে প্রায় বিশ বছর আগে থেকে। সবদেশের সম্মতির ভিত্তিতে আশির বেশি ইনডিকেটর ঠিক করা হলো বিশ্বের আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ট্র্যাক করার জন্য। রিপোর্ট বের করা শুরু করলো দুহাজার নয় থেকে। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স (এনআরআই) আর ইউএন ই-গভর্নমেন্ট সার্ভের ডাটা একাজে ব্যবহার হয়।

১৩৮.

ভালো কথা, আইসিটির দরকার কেন? আইসিটি ব্যবহার করেই দেশগুলো উঠছে উপরে। যারা পারছে না উঠতে তাদের ঘাটতি আছে এই আইসিটি ব্যবহারে। ভালো গভার্নেসের জন্য দরকার আইসিটির বহুল ব্যবহার। ইনফরমেশন উইথহেল্ড নয়, তথ্য দিয়েই এগুচ্ছে সরকারগুলো। আর সেকারণে আইসিটি। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন আঠারোশো পসট্টি সালে উত্পত্তি হলেও ইউএনের স্পেশালাইজড এজেন্সি হিসেবে নাম লেখায় উনিশশো সাতচল্লিশে। আইসিটি নিয়ে সব কাজ কারবার করতে হয় ওকেই। একশো বিরানব্বইটা দেশ ওর সদস্য হলেও ওর জ্ঞানের আঁধার হচ্ছে সাতশোর বেশি বেসরকারী কোম্পানিগুলো। টেলিযোগাযোগ, স্পেকট্রাম, স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেটের ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়ে যতো পলিসি আর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, ওর সবকিছুই আসে ওর থেকে। তিউনিস কমিটমেন্টের আওতায় ওয়ার্ল্ড ‘সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি’ (উইসিস)র পর অনেক দিন গেছে চলে।

১৩৯.

ডাটা কালেকশন হ্যান্ডবুক, টেলিযোগাযোগ/আইসিটি

ডাটা কালেকশন হ্যান্ডবুক, টেলিযোগাযোগ/আইসিটি

ডাটা এক্সট্রাপলেশনের ধারণা পাবার জন্য মনটা আইটাই করছিলো বেশ কিছুদিন। জেনেভাতে ই-হেলথের উপর এক বক্তৃতা দিতে যেয়ে সুযোগটা গেল বাতলে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের অফিস থেকে এক লাঞ্চ ব্রেকে চলে এলাম আইটিইউর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলের সাথে দেখা করতে। জেনেভায় নেমেই আউটলুক মিটিং রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম ওনার কাছে। মিটিং শেষে নামতেই করিডোরে চোখে পড়ল ডাটা সংগ্রহ করার চমত্কার একটা হ্যান্ডবুক। আইটিইউ এর পাবলিকেশন্স এটা। চেয়ে নিলাম কপিটা। পড়ে ফেললাম নিমিষেই। মানে ওই রাতেই – হোটেলে বসে। মাথায় এন্ডরফিনসের সরবরাহ বেড়ে গেলো বলে মনে হলো। দরকার আপনার? নামিয়ে নিন আজই। জানালাম অফিসে। আইটিইউ’র রিজিওনাল অফিসের সাথে খোচাখুচি করে একাউন্ট তৈরী হলো সে মাসেই। কাজে নামতে সময় লাগলেও ছোট একটা কমিটি তৈরী করে ফেললাম। চেকলিস্ট যোগ হলো সঙ্গে। ধাক্কা খেলাম ডাটা টানতে যেয়ে। বিশাল কাজ। কমিটির অন্যদের আইটিইউ’র বিভিন্ন স্ট্যাটিসটিকাল মিটিংগুলোতে পাঠাবার জন্য উত্‍যোগ গ্রহণ করলাম। তার একজন যাচ্ছে মেক্সিকোতে, এই ডিসেম্বরে। থাইল্যান্ডের টাও মিস যায়নি। এগুচ্ছে বাংলাদেশ।

১৪০.

মিটিং ডাকলাম সবাইকে নিয়ে। পর পর কয়েকটা। সব লাইসেন্সড অপারেটর, বুরো অফ স্ট্যাটিসটিক্স সহ। ইনডিকেটর নিয়ে বসলাম, একটা একটা করে। একশোর বেশি ফিল্ড। ইনডিকেটর ডেফিনেশনেই কাবু হয়ে যাচ্ছিলাম বার বার।একেকজন একেকভাবে ডেফিনেশন বুঝলে তো আমাদের অবস্থা খারাপ। চাইলাম এক ডাটা, দিলেন আরেকটা। সমস্যাটা তো মিটলো না। আবার ডাটা দরকার দু-হাজার দশ, এগারো আর বারোর। সবাই সাহায্য করতে চাইলেন। চ্যালেঞ্জ একটাই। এতো ডাটা, পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। দরকার সহসাই। নতুন ডাটাই রেডিমেড থাকছে না, পুরনো ডাটা তো আরো সমস্যা। কিছু কিছু ডাটা প্রজেকশন করলাম। চিঠি, ই-মেইল, ফোন আর তাগাদা পত্র, চলতে থাকলো একাধারে। ডাটা না থাকলে তো তৈরী করা যাবে না, বললেন অনেকে। অনেকেই সাহায্য করলেন আগ বাড়িয়ে। কাজের প্রসেস ডেভেলপ করে ফেললাম – নতুন ইন্টার-ডিপার্টমেন্টাল প্রসেস।

১৪১.

আইটিইউ’র স্ট্যাটিসটিকাল ডিপার্টমেন্টের সাথে লিয়াজোঁ বাড়িয়ে দিলাম এর পাশাপাশি। ডক্টর সুসান আর ভানেসা গ্রে নিজ থেকে সাহায্য করতে শুরু করলেন। আইটিইউ’র রিজিওনাল হেডকোয়ার্টারের সাহায্য চাইলাম। দেশকে উপরে উঠাতে হলে যা যা করা দরকার তার স্কিম তৈরী করে ফেললাম সে মাসেই। চমত্‍কার সম্পর্ক তৈরী করে ফেললাম ওদের সাথে। ডেডলাইন পার হয়ে গেলেও এক্সেস পাওয়া গেলো আপডেট করার। কিছু কিছু জিনিস ওরাই আপডেট করলো, আমাদের পরে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে। অসাধ্য সাধন করে ফেললো, আমার টীম! বলতে গেলে ক্রস ফাংশনাল টীম। সমস্যা শুরু হলো অন্যখানে। ডাটা টানা শুরু করলো আইটিইউর অন্যান্য ডিপার্টমেন্টগুলো। জেনে গেছে ওরা, বাংলাদেশের কোন লোকটাকে মেইল করলে রেসপন্স পাওয়া যায় ঘন্টার মধ্যে। ট্যারিফের ডাটা রিকোয়েস্ট চলে আসলো এর মধ্যে। আমার মনও ভালো, কাজ বাড়ছে, ছোট ছোট কমিটি করছি। প্রসেস তৈরী করছি মনের আনন্দে। কাজ হবে প্রসেস ডিপেন্ডেন্ট, মানুষ ডিপেন্ডেন্ট নয়। মানুষ চলে গেলে কাজ যাতে থমকে না যায় সেজন্য এই প্রসেস তৈরী করা। নিজের দেশ বলে কথা। এসক্যাপও কথা বলছে আমাদের সাথে। মন খারাপ হয়ে আছে – আইসিটি ডাটার বাইরের ডাটাগুলো পাচ্ছি না। টীমও লেগে আছে আমার পেছনে। নাছোড় বান্দা বসের নাছোড় বান্দা টীম প্লেয়ার! ভালোই আছি। চমত্‍কার এই ছেলেমেয়েগুলোকে পাবো কোথায়?

১৪২.

ডাটা দেবার পর শুরু হয় আসল সমস্যা, ভ্যালিডেশন। ডাটা ঠিক আছে কিনা, সেটার জন্য হাজার কোয়েরি। স্বাভাবিক। আমি দেশের ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের হার পঞ্চাশ শতাংশ বললেই তো আর সেটা হবে না। ওর সপক্ষে যুক্তি না দিলে সেটা টিকানো মুশকিল। ওরা অন্য ডাটা সোর্স থেকে সেটা ভেরিফাই করে – সবসময়। দুঃখের কথা, বিশ্বব্যাপী আমাদের সাপোর্ট করার ডাটা খুবই কম। আমরা ডাটা দিলে অন্য সোর্স সেটা কনফার্ম না করলে সেটা যায় কেঁচে। তখন ধরি অন্য পন্থা। বৈধভাবেই। সেদিকে আর নাই বা গেলাম। মজার কথা, ভয় নেই ডাটা হারানোর। সবই আছে আইটিইউ’র আইসিটি-আই ক্লাউডে। আপডেট করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কয়েক দফা ডাটা দিয়ে শিখেছি অনেক কিছু। সেটা আরেকদিন।

মোস্ট ডাইনামিক কান্ট্রিজ - বাংলাদেশ এগিয়েছে চার চার ধাপ!

মোস্ট ডাইনামিক কান্ট্রিজ – বাংলাদেশ এগিয়েছে চার চার ধাপ! আবার, অস্ট্রেলিয়ার এনবিএন প্রজেক্ট ওকেও এগিয়েছে চার ধাপ!

১৪৩.

ঘাপটি মেরে পড়ে ছিলাম এমাসের সাত তারিখের জন্য। ‘মেজারিং দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি রিপোর্ট’ ২০১৩ বের হলো বলে। পৃথিবী তাকিয়ে আছে এই রিপোর্টটার দিকে। আমাদের কথা চিন্তা করেই, গরীবদেশগুলো জেনেভা হেডকোয়ার্টারে যেতে না পারলেও পুরো অনুষ্ঠানটাই ওরা আপলোড করেছে ইউটিউবে! এই অনুষ্ঠানটা একাধারে জেনেভার পাশাপাশি আদ্দিস আবাবা, ব্যাঙ্কক, ব্রাসিলিয়া, কায়রো, মস্কো, নিউ ইয়র্কে হয়েছে। লঙ লিভ ইউটিউব! দেখতে চান? যাদের সময় নেই তাদেরকে বলবো টেনে উনিশ মিনিটের মাথায় চলে যেতে। এবার মোস্ট ডাইনামিক কান্ট্রিজ, যারা ভালো করেছে সেখানে ‘বাংলাদেশে’র নাম বলেছেন ডক্টর সুসান – ঠিক বিশ মিনিটের মাথায়। ডক্টর সুসান তেল্শার, হেড অফ আইসিটি ডাটা এন্ড স্ট্যাটিসটিক্স ডিভিশন পুরো রিপোর্টের একটা ব্রিফ দিলেন ওখানে। আমার তুরুপের তাস ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট পাঠানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রেসপন্স করলেন ডক্টর সুসান, তারিফ করলেন বাংলাদেশের। শেষ লাইনে বলেছিলাম আমাদের থ্রিজির কথা। দেখা হবে সামনের বছরে। পাল্টে যাবে বাংলাদেশ। সুখের কথা, আবার ডাটা চেয়েছে আইটিইউ, ডেডলাইন তিরিশে অক্টোবর। সময় নেই একেবারেই। পরের বছর বাংলাদেশ যাবে কোথায়? প্রেডিকশন ইন্জিনিয়ারিংয়ের ধারনায় বর্তমান গ্রোথ রেটে এগোলে ‘একশো তিরিশে’র ভেতরে যাবার ইচ্ছা পোষণ করাটা খুব কি একটা ভুল হবে? আপনি বলুন।

আরো এগুবে বাংলাদেশ, পাল্টাচ্ছি আমরা, পাল্টাতে হবে সবাইকে!

আরো অনেক এগুবে বাংলাদেশ, আমার হাতের ডাটা তাই বলে। সুযোগ হাতছাড়া যাবে না করা!

১৪৪.

গত বছর থেকে এবার এগিয়েছি চার ধাপ, একবারেই। প্রথম ধাক্কায়। আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই) একশো সাতান্নটা দেশের মধ্যে তুলনা করে কে কতটা এগিয়েছে সেটা দেখিয়েছে ওখানে। আবার দুহাজার বারোর আইসিটি প্রাইস বাস্কেট (আইপিবি) ইনডেক্সে গ্রাহকেরা টেলিযোগাযোগ আর ইন্টারনেট খাতে কতো ব্যয় করছে সেটারও স্নাপ্শটটা ক্যাপচার করেছে ওখানেই। ‘পারচেজ পাওয়ার প্যারিটি’ (পিপিপি) মানে গ্রাহকের কেনার ক্ষমতাতে খারাপ নেই আমরা। গ্রাহক পর্যায়ের ইন্টারনেটের দাম নিয়ে ওভাবে কিছু না এলেও এর দাম কমে আসবেই এর মধ্যে। প্রতিযোগিতায় থ্রিজির দাম কমে আসতে বাধ্য।এক্সেসে মানে ‘সংযোগ’ পাবার আইসিটি সাব ইনডেক্সে বাংলাদেশ ভালো অগ্রসর হলেও ‘ব্যবহার’ সাব ইনডেক্সে অনেক কাজ করার স্কোপ রয়েছে। ব্যবহার বাড়াতে হলে ইন্টারনেটের ‘ইউজফুল’ অ্যাপ্লিকেশন আনতে হবে আগে। সরকারী বেসরকারী সার্ভিস ডেলিভারি প্লাটফর্মে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ নেয়া দেয়া বাধ্যতামূলক করলে ‘ব্যবহার’ আইসিটি সাব ইনডেক্স বাড়তে বাধ্য। ইলেকট্রনিকভাবে টিআইএন নেবার পদ্ধতিটা এর ভালো উদাহরণ। খালি ফেইসবুক আর ব্লগিং করে কতো আর? ইলেকট্রনিক ট্রানজাকশানের উপর উন্নত বিশ্বের মতো প্রনোদনা দিলে ভালো করবে বাংলাদেশ। মোস্ট ডাইনামিক কান্ট্রিজের মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে কি লিখেছে ওরা, পড়তে ইচ্ছা করছে নিশ্চয়ই!

সব তথ্যই সরবরাহ করা হয়েছে একটা ভালো রাইট-আপের জন্য, ভালো লাগছে না?

সব তথ্যই সরবরাহ করা হয়েছে একটা ভালো রাইট-আপের জন্য, ভালো লাগছে না?

১৪৫.

আজ এ পর্যন্তই। ঘুমানোর সময় হলো বলে। বাকি সাব-ইনডেক্সগুলোর মধ্যে আইসিটি “এক্সেস”, “ইউজ” আর “স্কিল” নিয়ে আসছি সামনে। ফেলে দিন আমার বকবকানি, নামিয়ে নিন পুরো রিপোর্টটা, অ্যানেক্স চার ছাড়া। দরকার নেই ওটার আপনার! নিজেই দেখুন চেখে। হাতে নিয়েছি নতুন এক্সেলশিট, উইসিস আর এমডিজির ডাটা টানবো বলে। উইসিস, ও’ইসিডি, ইউনেস্কো, ইউএন রিজিওনাল কমিশন আর আংকটাড মিলে এক বিশাল উইসিস টার্গেট রিপোর্ট চেয়েছে দেশগুলো থেকে – দশ বছরের উপর। ওখানেও হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। পিছিয়ে পড়ে থাকার দিন নেই আর! শুরু তো করতে হবে – কোথাও। দেশকে তুলতে হবে ঠিক জায়গায়।

এগুচ্ছি আমরা, পাল্টাচ্ছে বাংলাদেশ!

Read Full Post »

You don’t have to burn books to destroy a culture. Just get people to stop reading them.

― Ray Bradbury

৯৬.

বই পড়তে ভালবাসি। অস্ফুট স্বরেই বললাম।

এ আবার নতুন কি? ভুরু কুঁচকে তাকালেন আপনি।

‘বই পড়তে ভালবাসে সবাই’, আপনার তড়িত্‍ জবাব, ‘ছোটবেলায় দেখতেন যদি আমাদের’।

বুঝলাম, ভুল হয়ে গেছে বাক্য গঠনে। বাকি পড়ে গেছে একটা শব্দ। যোগ করলাম সেটা।

৯৭.

হাউ এবাউট স্টার্টিং ওভার? এভরিওয়ান নীডস আ সেকেন্ড চান্স!

বই পড়তে ভালবাসি, এখনো।

মানি আপনার কথা। সত্যি কথা বলতে আমাদের জীবন জটিলতর হচ্ছে দিন দিন। বই পড়ার সময় কোথায়?

সত্যিই তাই। তবে সময় যে নেই এটা বললে ভুল হবে হয়তোবা।

মোবাইল ফোন আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে আমি আপনি কতটা সময় দেই ধারণা আছে কি সেটার? পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম লোকটা কে বলুনতো? তার তো বই ধরারই কথা না।

৯৮.

১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১০| তুষারপাত হচ্ছে। দিনটা বেশ ঠান্ডা। জন্ম নিলো উরসুলা টড, অ্যামবিলিক্যাল কর্ড গলায় পেঁচিয়ে। মারা গেলো সে অবস্থায়। গল্পটার শুরু এভাবে। কেইট অ্যাটকিনসনের ‘লাইফ আফটার লাইফ’ বইটা নিয়ে আটকে আছি কয়েকদিন ধরে। গতবছর ‘লাইফ অফ পাই’ বইটা পড়ে যা মজা পেয়েছি সেটা সিনেমা দিয়ে মেটানো যাবে কি? বইটার কথা যখন উঠলোই, সেটা নিয়ে আসছি সামনে।

তার আগে আসি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধারা নিয়ে। আমার মুখচোরা ব্যাপারটা সার্বজনীন সাবলাইম ইনফো হলেও ঝামেলায় কম পড়িনি জীবনে। ইন্টারভিউয়ে দশ লাইনের প্রশ্নের উত্তর হয় এক পঞ্চমাংশ! আমার থাম্ব-রুল, আপাতত:| নতুন একটা গল্প ফাদি তাহলে।

৯৯.

ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় একজন পত্রমিতা ছিলো আমার – সুদুর গ্রীস থেকে। সে তিন পাতা লিখলে আমার উত্তর এক পাতা। একবার উপহার পাঠালো বই একটা। অ্যামেরিকায় এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে গিয়েছিলো সে। মনে করে কয়েকটা বই নিয়ে এসেছে আমার জন্য। পাগলাটে ছিলো মেয়েটা। আমি পাগল ছিলাম কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর এখানে নয় বোধকরি।

টিপ্পনি কাটলো ফিরতি চিঠিতে।

‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট কই?

এটা আবার কি?

এই যে তোমার জন্য বই পাঠালাম একটা, এর ধন্যবাদনামা কই?

এটা সত্যি, আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম বইটা পেয়ে। খুশি জানানোর কি আছে? তাও আবার লেখায়? পাগল নাকি? ও পাগল হলেও আমি তো নই আর।

লিখতে হয়, বুদ্ধু! না লিখলে সে জানবে কিভাবে?

তাই নাকি? আসলেই তো সত্যি। ওসময়ে ছিলো না টেলিফোনও। ছিলো হয়তোবা, কিন্তু আওতার বাইরে।

বই নিয়ে এসেছি তিনটা, তোমারই জন্য। পেতে চাও কিনা বলো?

পেতে চাই না মানে? তবে ভদ্রতা করলাম ওর সাথে। লিখতে লিখতেই অনেক ভদ্রতা শিখেছি এর মধ্যে। ওর থেকেই। ওকে আর সেটা হয়নি কখনো।

অন্য কাউকে দিয়ে দাও বরং! পোস্টেজ খরচ অনেক পড়বে তোমার। আগেরটার জন্য যে কতো খরচ করেছ সেটা জানালে না তো আর।

লাইনে এসেছো ভদ্রবাবু! ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার জন্যই নিয়ে এসেছি এগুলো। অন্যকে দেয়া যাবে না। তবে পেতে চাইলে কষ্ট করতে হবে কিছুটা। রাজি?

আবারো ভদ্রতা করলাম কয়েকটা চিঠিতে। ব্যাক টু স্কয়ার ওয়ান! ‘কষ্টটা’ কিছুটা পরিস্কার হলো বরং। ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট লিখতে হবে প্রতিটার জন্য! কি যন্ত্রণা! পত্রমিতা না প্রিন্সিপাল? যন্ত্রণা হলেও উত্তর পাবার জন্য দিন গুনতাম এই আমিই।

ফিরে আসি ‘লাইফ অফ পাই’ বইটা নিয়ে। কিছুদিন আগে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট একটা হস্তগত হলো – এক লোকের। লিখেছে এক লেখককে। লোকটা তার মেয়ের সাথে পড়েছে বইটা, অনেক ব্যস্ততার মধ্যে।

'থ্যাঙ্ক ইউ' নোট - ভালোই লিখেছে লোকটা ...

‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট – ভালোই লিখেছে লোকটা …

ব্যস্ততার মধ্যে বই না ধরতে পারলে মনে হয় লোকটার কথা। বন্ধ করি পিসিটা, ফোনটাকে রাখি হাতের নাগালের বাইরে। ফিরে আসি বইয়ে। মাথার কোথায় যেনো একটা ‘ইলুমিনেশন’ কাজ করে। এন্ডরফিনসের সরবরাহ বেড়ে যায় বোধহয়।

চারটা বই হস্তগত করেছি আপাতত।

এই ঈদের ছুটির জন্য। সৃষ্টিকর্তা মহান।

ঈদ মোবারক!

অক্টোবর, ১৭, ২০১৩; ঈদের পরের দিন

পুনশ্চ: অনেকেই জানতে চেয়েছেন ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোটটার ব্যাপারে। ভুল হয়েছে আমারই, বলা উচিত ছিলো তখনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লিখেছিলেন চিঠিটা, লাইফ অফ পাই’য়ের লেখক ইয়ান মার্টেলকে। মুগ্ধ হয়েই। গুনীজনকে কদর দিতে জুড়ি নেই মার্কিনীদের। ভাবানুবাদ জুড়ে দেয়া হলো সঙ্গে।

জনাব মার্টেল –

‘লাইফ অফ পাই’ বইটা শেষ করে উঠলাম এইমাত্র। মেয়েকে নিয়ে পড়েছি আমি। পশুপাখিকে নিয়ে গল্পগুলো আমাদের দুজনেরই খুবই পছন্দের।

আনন্দদায়ক বইটা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে আরো সুদৃঢ় করেছে। আরো মুগ্ধ হয়েছি গল্পটা বলার ক্ষমতা দেখে।

ধন্যবাদ আপনাকে।

সাক্ষরিত,

বারাক ওবামা

Read Full Post »

It is a truth universally acknowledged, that a single man in possession of a good fortune, must be in want of a wife.

— Jane Austen, Opening line of ‘Pride and Prejudice’ (1813)

৯০.

নোটবইটা বের করতে হলো আবার। অসমাপ্ত গল্পটা শেষ করতে নয়, বরং ওর প্রথম লাইনটা ধার করতে।

অন্যান্য দিনের মতো ঘুমুতে গেলাম একই সময়ে, এবার কালাসনিকভটা মাথার কাছে নিয়ে।

এবার বের করুন আপনার প্রথম লাইনটা। না থাকলে লেখুন একটা কিছু। কৌতুহলোদ্দিপক হলে ভালো। লেখার প্রথম লাইন নিয়ে যতো সমস্যা। সারাদিন মাথায় ঘুরতে থাকে আইডিয়া, শুধুমাত্র অফিস সময় ছাড়া। অফিস সময়ে কাজের চাপে সব যাই ভুলে। নাইন টু ফাইভ, টোটালি রাইটার্স ব্লক! অফিস থেকে সবাই যাবার পর ছটার পর থেকে আস্তে আস্তে খুলতে থাকে মাথা। তবে ওসময়ে লেখার মতো মাথায় থাকে না কিচ্ছু। বাসায় ফিরি নয়টায়। লিখতে বসি এগারটায়। বসতে গেলে চলে আসে হাজারো সমস্যা। পার্থিব সমস্যা। বাসার সমস্যা, পানির সমস্যা, কাল বাচ্চাদের স্কুলের সময়ের সমস্যা, ড্রাইভারের সমস্যা। উঠে যেতে হয় মিনিট কয়েক পর পর। ছোটবেলায় পড়তে বসলেই চলে আসতো হাজারো ঘুম, এখন লিখতে বসলেই আসে হাজারো সমস্যা। আর প্রথম লাইন বের করতে গেলে শুরু হয় মাথা ব্যথা।

৯১.

তবে হলফ করে বলতে পারি একটা কথা। প্রথম লাইনটা কখনো আসেনি লিখতে বসে। চড়ুই পাখির মতো আসে আর যায় – ওসময়ে। পুরোপুরি আসে না কখনো। আমার ধারনা, প্রথম লাইনটা আসে একবারে অসময়ে। চমত্কারভাবে। বাজারে গিয়েছি ছুটির দিনে, গড়গড় করে আসছে প্রথম দিকের লাইনগুলো। রিকশায় যাচ্ছি কোথাও, রাস্তা পার হচ্ছি, করছি গোছল, উঠছি সিড়ি বেয়ে, ঘুমানোর সময় চোখ বন্ধ হবার ঠিক আগের মুহুর্তে, টিভি দেখার সময়ে। প্রথম লাইন আসে সব উদ্ভট সময়ে। হাসপাতালে গিয়েছি – লাইনের অর্গল খুলে যায় ওসময়ে। আসল কথা হচ্ছে – হাতের কাছে লেখালিখির জিনিস না থাকলেই এসে হাজির হয় প্রথম লাইন। অনেক কষ্টে পেলেন না হয় কাগজ, কলম পাবেন না কখনো। আর কলম পেলেও সেটা লিখতে চাইবে না। আর সেকারণে হাজারো প্রথম লাইন হারিয়ে যায় সময়ের সাথে।

৯২.

লেখকদের কাগজ কলম রাখতে হবে সাথে – সবসময়। বাসার সব রুমে, গাড়িতে, শোবার ঘরে বিছানার পাশে। বাজারে গেলে কাগজ কলম রাখতে হবে পকেটে। ও আমার হয় না বলে মোবাইল হ্যান্ডসেটে রেখেছি ‘গুগল কীপ’ আর ‘এভারনোট’ অ্যাপ। কাগজ কলমের মতো যুতসই না হলেও শর্টহ্যান্ডে কিছু লেখালিখি রাখা যায়। ছোট নোটবই সাথে রাখতে পারলে মন্দ নয়। মনে করে রাখাটাই সমস্যা – আর আমার মতো মিনিটে মিনিটে হারানোর অভ্যাস থাকলে তো কথাই নেই। মিলিয়ন ডলারের আইডিয়া হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত! মিটিং ওয়ার্কসপে গিয়েছি – লিখেছি ন্যাপকিনে, পোস্ট-ইটে। পরে এসে টুকে নিয়েছি কম্পিউটারে।

৯৩.

মনে আছে কি এইমি বেন্ডারের কথা? ছোটগল্পের একটা চমত্কার সংকলন নিয়ে দুনিয়া মাতিয়েছিলেন উনিশশো আটানব্বইয়ের দিকে। ‘দ্য গার্ল ইন দ্য ফ্ল্যামাবল স্কার্ট’ ছোটগল্পের এই সংকলনের লেখিকা তার ছোটগল্প শুরু করেন সেই প্রথম লাইন দিয়েই। তার কথায় অনেক লাইনই কাজ করে না প্রথম লাইন হিসেবে, সেগুলো কার্যকর নয় হয়তোবা। তবে যে লাইনটা তার পরের লাইনগুলোকে এমনিতেই টেনে নিয়ে আসে সেগুলো নিয়ে কাজ করেন এইমি। অনেক সময় সেই প্রথম লাইনেই একটা চরিত্রের স্বর ফুটে ওঠে – ফলে প্রথম লাইন থেকে একটা চরিত্র বের করা অসম্ভব কিছু না।

৯৪.

শক্তিশালী প্রথম লাইন কিন্তু একজন লেখককে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়। পাঠক যেভাবে পাতার পর পাতা উল্টাতে থাকে মনের কৌতুহল মেটানোর জন্য – তার থেকে বেশি শক্তি দরকার হয় লেখকের। আর সেকারণে প্রথম লাইনটা এতো গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি নাই বা আসে সেই প্রথম লাইনটা? বইয়ের দোকানে ঢু মারুন। বইগুলোর প্রথম লাইনগুলো লক্ষ্য করুন। প্রথম প্যারাগ্রাফটা পড়ুন। আইডিয়া আসতে বাধ্য। খবরের কাগজে অনেক গল্পের খোরাক থাকে। আমি নিজেই অনেক গল্পের প্লট পেয়েছি পুরনো খবরের পাতা থেকে। টিভির অ্যাডগুলো লক্ষ্য করুন, পাবেন সেখানে।

৯৫.

একটা সাবধানবাণী না দিলেই নয়। প্রথম লাইনটা গল্পের লিড দিলেও ওর ভালবাসায় পড়া যাবে না কিন্তু। অনেক সময় প্রথম লাইন দিয়ে শুরু করলেও পরে ওই লাইনটাকে ফেলে দিতে হতে পারে। গল্পের প্রয়োজনে প্রথম লাইনটা একটা সময়ে কাজে দিলেও পরে সেই গল্পেরই প্রয়োজনে পাল্টাতে হতে পারে। এটাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে হবে। আমি নিজেই পাল্টেছি প্রথম লাইনটাকে, অনেকবার। তবে শুরু করাটাই প্রথম লাইন জেনারেট করা থেকে অনেক কষ্টের।

শুরু তো করতে হবে কোথাও থেকে? কি বলেন?

Read Full Post »

They shoot the white girl first.

— Toni Morrison, Opening line of “Paradise” (1998)

৮৫.

কোথায় যেনো পড়েছিলাম বই পড়ুয়ারা নাকি মাছের মতো। মেজাজ গরম হলো তখনি। শেষ পর্যন্ত মাছ? টিউবলাইটই তো ভালো ছিলো। বন্ধুদের কাছে নামের কি শেষ আছে? সেদিন কে জানি দিলো নাম আরেকটা, এসএম। স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট? না, সাবমেরিন! সে গল্প আরেকদিন! তবে, বইই তো পড়ছি, কারো ক্ষতি তো করছি না। মাছের গবেষণায় বসলাম। ভুল বুঝেছি খামোকাই। বই পড়ুয়ারা সাদামাটা মাছ নয়, স্মার্ট মাছ। বলেছে আরেক স্মার্ট লেখিকা, কে এম ওয়েইল্যান্ড, আমার বই পড়ার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ‘গুডরিডে’র বন্ধু। বই পড়ুয়ারা ভালো ভাবেই জানেন লেখকদের। বড়শি নিয়ে বসে আছে সবাই। মানে সব লেখক। লেখকদের লেখা শেখার শুরুতে যে কয়েকটা বাজ্জওয়ার্ড জানতে হয় তার মধ্যে ‘হুক’ অন্যতম। বই মেলায় পড়ুয়াদের লক্ষ্য করেছেন কখনো?

৮৬.

মাছের কথায় আসি। স্মার্ট মাছ কিন্ত জানে লেখকরা বড়শিতে আদার লাগিয়ে বসে আছে তার বইয়ে। মাছটাকে ধরতেই হবে বইয়ের প্রথম কয়েক পাতায়। সেটার জন্য বড়শির সুতা কখন ছাড়বে আর টানবে সেখানেই লেখকের মুন্সীয়ানা। ‘হুক’ লাগানোর আগেই যদি আমরা যারা স্মার্ট মাছ বইটাকে ছেড়ে দেই সেখানে লেখকের ব্যর্থতা। স্মার্ট মাছ ধরা কিন্তু সহজ নয়। এই মাছ আসলে পড়েছে অনেক বই। প্রথম কয়েক পাতায় ‘হুক’টা ঠিকমতো না গাথলে ফসকে যাবার সম্ভাবনা বেশি। স্মার্ট লেখক তার ‘হুক’টাকে কিভাবে স্মার্ট মাছের গলায় আটকাবেন শক্ত করে সেটার গল্প আজ। ‘স্মার্ট’ মাছ বুঝতেই পারবেনা যে ও কখন পুরো ‘হুক’টা গিলে ফেলেছে – খেসারত দিতে হবে পুরো বইটা শেষ করে। তার মানে বইয়ের প্রথম কয়েক পাতায় পাঠকদের ধরে রাখার জন্য লেখক যে ছলচাতুরী করেন সেটার নামই ‘হুক’| অফিসিয়াল নাম কিন্তু।

৮৭.

লেখা শেখার প্রথম অস্ত্র, এই ‘হুক’ ব্যবহার করেই আমাদেরকে ধরাশায়ী করেন স্মার্ট লেখকেরা। প্রথম পাতাগুলোতে আমাদেরকে ‘হুক’ড না করা গেলে বইয়ের বাকি সময়ে সাঁতার কাটতে চাইবে না কেউই। পরের দিকের গল্প যতোই চমত্কার হোক না কেন, স্মার্ট মাছ ছুড়ে ফেলবে বই। এখানেও রয়েছে অনেক গবেষণা। আর এই ‘হুক’ আসে হাজার স্টাইলে, হাজার রকমের ফর্মে। তবে, সবকিছুর পেছনে থাকে একটাই ষড়যন্ত্র। মিনিম্যালিস্ট ভার্সনে বলতে গেলে লেখক স্মার্ট মাছকে কৌতুহলী করে তোলে ওই প্রথম কয়েক পাতায়। অথবা, প্রথম লাইনেই। বলেন কি? কিউরিসিটি কিল্ড দ্য ক্যাট। পিরিয়ড। মাছ আদার খাবে কেন, কৌতুহলী না হলে? সবাই কি বেকুব আমার মতো? কিছু না পেলে কাগজের ঠোঙ্গাও পড়ে।

৮৮.

জামার পেছনে হাত পড়তেই ভেজা ভেজা লাগলো শীলার। শিউরে উঠলো সে।

নোটবইয়ের একটা অসমাপ্ত গল্পের প্রথম দুটো লাইন তুলে দিলাম এখানে। পাঠকদের এটা কৌতুহলী করে তুলবে কি? সেটা আপনারাই বলবেন ভাল করে। স্মার্ট মাছের মতো চিন্তা করলে অনেক কিছুই হতে পারে এখানে। শীলা, ও আবার কে? ওর জামাটা কেনই বা ভেজা? কিভাবে ভিজলো? কোথায় ভিজেছে ওর? বৃষ্টির পানি? শিউরে ওঠার কি আছে? না কি আবার রক্ত? রক্ত আসলো কোথা থেকে? পাঠকের কৌতুহলী হবার বেশ কিছু এলিমেন্ট আছে এখানে। আচ্ছা, আরেকটা ছোট গল্পের ওপেনিং লাইন হিসেবে কোনটা পছন্দ আপনার?

তুমি কি ভালোবাসো আমাকে? মেয়েটার প্রশ্ন।

অথবা

‘তুমি কি’ মেয়েটার অস্ফুট স্বর, ‘ভালোবাসো আমাকে?’

৮৯.

আমার ধারনায় ছোটবেলার সবচেয়ে মোটা বইটা হাতে নিয়েছিলাম সেই কৌতুহলের বসে। মোটা বইগুলোর মধ্যে এই সাতশো পাতার ওজনদার বইটা আমাকে দমাতে পারেনি – ওই প্রথম লাইনটার জন্য। দুর্দান্ত! মার্কিন সাহিত্যে অমর হয়ে আছে বইটা অনেক কিছুর জন্য। আমার মতো বেকুব মাছদের কাছে কিন্তু ওই প্রথম লাইনটার জন্য।

কল মি ইসমাইল।*

* আসল উচ্চারণ, ইসমেল। ‘আমার নাম ইসমেল’ দিয়ে শুরু করলে কি ওরকম লাগতো? প্রথম প্যারাগ্রাফটা আজ না পড়ে যাবেন না কোথাও। ভয়ঙ্করভাবে সুন্দর! ইসমেলের পুরো চরিত্রটা ফুটে এসেছে ওই প্যারাগ্রাফে। সাগর ওকে কেন ডাকে? সেটার উত্তরও ওখানে।

Read Full Post »