If your actions inspire others to dream more, learn more, do more and become more, you are a leader.
— John Quincy Adams
২২.
গুগল হেডকোয়ার্টারের মানুষগুলোর ওয়ার্কিং সিডিউল এতটাই ‘ফ্লেক্সিবল’ যেখানে তারা সময় পায় চিন্তা করতে। চিন্তা করার অনেক সুন্দর সুন্দর যায়গাও তৈরি করা আছে অফিসের বাইরে। পা বাড়ালেই গাছের ওপর ছোট্ট ছোট্ট বাসা। কোন চিন্তাই ‘ফালতু’ না বলে তাদেরকে প্রচুর সময় দেয়া হয় – নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে। মোদ্দা কথা – ‘যা ইচ্ছা চিন্তা’ করার জন্য ‘পয়সা’ দেয়া হয় তাদের। মানুষের ভেতরের জিনিসটা বের করে আনতে পারে বলেই আজ তারা এতো বড় কোম্পানী। চিন্তার খোরাকের জন্য পুরো পৃথিবীর ‘মাথাওলা’ লোকদের ধরে নিয়ে যায় তাদের গল্প শোনার জন্য। মেডিটেশনের প্রোগ্রাম চলছে এর মধ্যেই। তারা জানে ভালো করে, মন ভালো থাকলে হয় সবই। বাড়ে সুন্দর চিন্তা করার ক্ষমতা, ভালো মানসিক স্বাস্থ্য আর ‘ইমোশনাল ইণ্টেলিজেন্স’। মনে আছে ড্যানিয়েল গোল্ডম্যানের কালজয়ী বইটার কথা? এটা ঠিক, চোখ বন্ধ করলে সবকিছু দেখা যায় পরিষ্কার ভাবে। আমার নিজস্ব মতামত, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন নিজে। ঝামেলায় পড়লে মাথা ঠান্ডা করে বসে থাকি পার্কে। চোখ বন্ধ হয়ে আসে আপনা আপনি। বুঝতে পারি, ‘আলোর ছটা’র রেশ পাই মাথায়। ‘ইল্যুমিনেশন’ বলে নাকি ওটাকে। কে জানে?
২৩.
মনে আছে ‘ওয়াইয়ার্ড ম্যাগাজিন’এর কথা? প্রযুক্তির উত্কর্ষতা নিয়ে নিয়ে সেই উনিশশো তিরানব্বই থেকে পৃথিবী কাপাচ্ছে ম্যাগাজিনটা। কম্পিউটার, কম্যুনিকেশনস, বিজনেস, টেকনোলজি লীডারশিপ – কি নিয়ে লেখেনি তারা? অনেক টেকনোলজি ‘টার্ম’ ‘লিটারেলি’ উদ্ভাবন করেছে তারা। প্রতিবার এয়ারপোর্ট পার হলেই চোখে পড়ে ওটার রঙচঙা কাভারটা। ম্যাগাজিনটার একজন ফাউন্ডার হচ্ছে কেভিন কেলী। বই লিখেছেন কয়েকটা। সিলিকন ভ্যালীর নামকরা লোক। এক নামে চেনে তাকে সবাই। উনার শেষ বইটা লিখেছেন নতুন টেকনোলজি নিয়ে। তবে উনি সেটা লিখেছেন ল্যাপটপ, টিভি আর স্মার্টফোন ছাড়াই। সিলিকন ভ্যালীর অনেকের মতো তিনি চলে যান অফলাইনে। বাকিরা যান চব্বিশ অথবা আটচল্লিশ ঘন্টার জন্য। পুরোপুরি। এক এক সপ্তাহে। মাথাকে কাজ করতে দেন নিজের মতো। সিলিকন ভ্যালী ওই দিনটার নাম দিয়েছে ‘ইন্টারনেট স্যাবাথ’। আমি নাম দিয়েছি ‘ইন্টারনেট রোজা’। ছুটি হিসেব করলে বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ইন্টারনেট আর ফোনের কাছে না গেলে হয় না? গল্প বেশি দিয়ে ফেললাম মনে হচ্ছে! তবে, আমি যাই অফলাইনে – আট ঘন্টার মতো। প্রতিদিন।
২৪.
উন্নত দেশগুলোতে ‘আন-প্লাগিং ডে’ উদযাপন শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। ‘লুক আপ’ মানে ‘তাকাও ওপরে’ দিয়ে সার্চ করলেই বুঝবেন কি হচ্ছে পৃথিবীতে। সুন্দর সুন্দর গানও বেরিয়েছে ইউটিউবে। যেখানেই যাই সবাই তাকিয়ে আছে তার মোবাইল ডিভাইসটার দিকে। ‘সেল্ফ অ্যাবজর্ভড’। ‘সেল্ফ প্রোমোশনে’ মগ্ন সবাই। বাদ দেই কেন আমাকে? আমিও করতাম একই জিনিস। ধীরে ধীরে শিখলাম কিভাবে ‘দাস’ বানাতে হবে প্রযুক্তিকে। সীমারেখা টানলাম নিজ থেকে। নয়তো দাসখত লেখাতে হবে আমাকেই। ওই যন্ত্রগুলোর কাছে। শিখলাম ‘রি-ক্লেইম’ করতে একসময়। সিংগাপুরের মতো। পুরো ইস্ট কোস্ট পার্কটাই তৈরি করেছে সমুদ্র থেকে মাটি তুলে এনে। ওটার সি-বীচটাও মানুষের তৈরি। সত্যি তো, কেই বা চায় না ফিরে পেতে নিজেকে? গত চুয়াল্লিশ বছরে কম ইনপুট নেয়নি মাথাটা আমার। হাজারো বই, গোয়িং প্লেসেস, হাজারো মানুষের সাথে সখ্যতা – কি দিয়েছে আমাকে? আমি কি দিয়েছি পৃথিবীকে? নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অন্যকে মাড়িয়ে দিলাম নাকি আবার? অন্যদের স্বপ্নের কি হবে? কেমন হয় অন্যদের স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকতে? স্বপ্ন পূরণের স্কূল?
২৫.
ইণ্টেল একটা পরীক্ষা চালিয়েছিলো ‘কোয়াইট আওয়ার্স’ নামে। প্রতি বৃহস্পতিবার, চার ঘন্টার জন্য – তাদের তিনশো ইঞ্জিনিয়ার আর ম্যানেজারদেরকে বলা হয়েছিল বন্ধ রাখতে সবকিছু। ফোন আর ইমেইল বন্ধের সাথে সাথে অফিসের দরজায় ঝোলানো হয়েছিল ‘ডু নট ডিসটার্ব’ সাইন। কারণ, ওটা হচ্ছে তাদের ‘চিন্তা’ করার সময়। ওই পাইলট টেস্টটার আউটপুট এতো ভালো হয়েছিল যে পরে তারা আট সপ্তাহের একটা প্রোগ্রাম তৈরি করে ‘সোজাসাপটা চিন্তাভাবনা’ নিয়ে। কতো সহজে একটা কাজ বের করে নিয়ে আসবেন সেটার জন্য ওই প্রোগ্রামটা চমত্কার কাজ করেছিল ম্যানেজারদের মধ্যে।
[ক্রমশ:]