“Some failure in life is inevitable. It is impossible to live without failing at something unless you lived so cautiously that you might as well not have lived at all, in which case you fail by default.”
– J K Rowling
৪২.
গোল চশমার ভেতরে ভাসা ভাসা চোখ। কোকড়া চুলের মাথা বড় ছেলেটার কথা মনে পড়েছিল ট্রেনে বসে তার। কালো চুলের সাথে গোল গোল চশমা না গেলেও হ্যারির সাথে তা মানিয়ে গিয়েছিল গল্পের খাতিরে। কলম না থাকার কারণে কষ্ট পাচ্ছিলেন মনে মনে, চার চার ঘন্টা – কম নয়। ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন। তাও আবার ট্রেন লেট এই সময়ের জন্য। হ্যারি কিভাবে ঢুকে গেল মাথায়, আর বের হলোনা। মায়াভরা ছেলেটা যে নিজেই একটা যাদুকর, তা জানার মধ্যে দিয়ে গল্পের উত্পত্তি। কলম না থাকার কারণে ভালো না খারাপ হয়েছিল তা বলতে পারবোনা, তবে তার মতে কলম থাকলে বরং চিন্তা যেত আটকে, হয়তোবা। আমি যখন চিন্তা করি, তখন লিখতে গেলে সমস্যা হয় বৈকি। ম্যানচেস্টার থেকে যাবার পথে ট্রেনে দেখা জঙ্গলগুলোই হগওয়ার্টসের আদি সংস্করণ বলে ধরা যায়।
৪৩.
জে কে রওলিং কিভাবে শুরু করেছিলেন তা অনেকের জানা। গরিবী হাল থেকে বিশ্বের হাতেগোনা কিছু লেখক যারা কোটিপতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তাদের শুরুটা আমাদের মতো এতোটা সুখের ছিলো না। ব্যর্থতা রওলিংকে ঘিরে রেখেছিলো। না ছিলো কোনো চাকরি, বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল আগেই। এক সন্তানের মা, রাষ্ট্রের ওয়েলফেয়ার বেনিফিটের উপরে চলছিলেন কোনো রকমে। ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে সাত বছর ধরে কিছু না করতে পেরে বিষন্নতায় ভুগছিলেন তিনি। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন বার কয়েক। প্রথম সন্তানের মিসক্যারিজ হবার পর আরো ভেঙ্গে পড়েন। ট্রেনে লন্ডনে নেমে হাতে কলম ধরেন সেই সন্ধায়। “ফিলোসফার’স স্টোন” লেখা শুরু হয় সেই রাতে। বই লেখা শেষ হলে সেই রাতের ওই কয়েক পৃষ্ঠার মিল না থাকলেও সেটা ছিলো ভাগ্য পরিবর্তনের মাইল ফলক। এক ভোরে স্বামীর হাতে মার খেয়ে মেয়েকে নিয়ে ওঠেন তার বোনের বাসায়। বের হয়ে আসার সময় তার সুটকেসে ছিলো হ্যারি পটারের প্রথম তিন অধ্যায়।
৪৪.
লিখতেন ক্যাফেতে বসে, মেয়েকে ঘুম পাড়াতে সুবিধা হতো হাঁটলে। বারোটা পাবলিশিং হাউজ থেকে প্রত্যাখাত হতে সময় লাগেনি বেশি। ব্যর্থতা নিয়ে বছরের পর বছর পার করতে কম কষ্ট করতে হয়নি তাকে। সরকারের ওয়েলফেয়ারের টাকা আর বাড়ি তাকে ‘সর্বস্বান্ত’ শব্দটা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো। বছরখানিক পরে ব্লুম্সবারি পাবলিশিং হাউজ তাকে পনেরোশো পাউন্ড দিলেও পাশাপাশি একটা চাকরি খুজতে বলেছিলো ঠিকই। বাচ্চাদের বইয়ের ভবিষ্যত ভালো না, মনে করিয়ে দিতে ভুল করেনি। রওলিংএর পান্ডুলিপিটা বইয়ের মুখ দেখার পেছনে যার অবদান সে হচ্ছে এলিস নিউটন, ব্লুমসবারির চেয়ারম্যানের আট বছরের মেয়ে সে। কি মনে করে মেয়েকে বইয়ের প্রথম অধ্যায় পড়তে দিয়েছিলেন তিনি। সেটা গোগ্রাসে শেষ করে বাকি বইটা চায় এলিস। পরে স্কটিশ আর্টস কাউন্সিল তাকে আট হাজার পাউন্ড দিয়ে সাহায্য করে লেখা চালিয়ে নেবার জন্য। এ ধরনের ক্রাউডসৌর্সিংএর কারণে অনেক লেখক বেচে গিয়েছেন তা নিয়ে আসবো সামনে।
৪৫.
এই রওলিং ছাড়া অন্যের কাছ থেকে ব্যর্থতার সঙ্গা নেয়াটাই হবে বৃথা। আমি নিজে ‘টেড’ বক্তৃতাগুলোর একনিষ্ঠ ভক্ত হলেও হার্ভার্ডে দেয়া রওলিংএর এই বক্তৃতাটা কিভাবে যেন এড়িয়ে গিয়েছিল। ব্যর্থতার শক্তিকে কিভাবে লেখাতে পাঠাতে হয় তার জন্য দেখতে হবে হার্ভার্ডের তার সেই বক্তৃতাটা। সেখান থেকে থেকে তুলে দিলাম নিচের একটা অংশ। বিশ্বাস হচ্ছে না? ব্যর্থতা সাহায্য করে লিখতে। কিছু ব্যর্থতা নিয়ে আসুন জীবনে। আর, না লেখতে পারার কষ্টটা।
ব্যর্থতা মানুষের অপ্রয়োজনীয় সব জিনিস চেছে দেয় ফেলে। নিজের সম্পর্কে সব ভান ছুড়ে ফেলে নিজেকে খুঁজে বেড়িয়েছি। সমস্ত শক্তি জড়ো করে সেই কাজটাই করেছি যা করতে চেয়েছি সারাজীবন। অন্য কিছুতে সাফল্য পেলে আমার যেখানে থাকার কথা ছিলো সেখানে যাবার সংকল্পটা থাকতোনা আর। ব্যর্থতা দিয়েছিল আমাকে মুক্ত করে, একেবারে। সবচেয়ে বড় ভয়টা কেটে গিয়েছিলো। আমার বাচ্চা মেয়েটা ছিলো আমার সাথে, বেচে ছিলাম তখনও – আর, টাইপরাইটারটা ছিলো সঙ্গে। সঙ্গে ছিলো নতুন কিছু করার চিন্তা। আর সেই লেখার চিন্তাটা এতটাই শক্তিশালী ছিলো যে এর উপর তৈরী করেছি আমার নতুন জীবন।