“The mind is the limit. As long as the mind can envision the fact that you can do something, you can do it, as long as you really believe 100 percent.”
– Arnold Schwarzenegger
“There is no passion to be found playing small – in settling for a life that is less than the one you are capable of living.”
– Nelson Mandela
১৭.
অফিসের নতুন লোক নিয়োগ প্রক্রিয়াতে সংযুক্ত থাকতে হয়েছিলো কিছুদিন আগে। টেলিকম আর কম্পিউটার প্রকৌশলীদের ইন্টারভিউ নেবার সময় মনটা ভার হয়ে উঠছিলো কিছুক্ষণ পর পরই। চটপটে ছেলেমেয়েগুলো পারছে না কথা বলতে। অসীম সম্ভাবনার সামনে এসে গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। বিশ বছরের সরকারী চাকুরীর অভিজ্ঞতায় আমাদের এই জিনিসটা মিস করছি অনেকদিন ধরে। সদ্য উনিভার্সিটি পাস করা যে ছেলেমেয়েগুলো ইন্টারভিউ দেবার জন্য আসছে তাদের প্রায় সবারই আস্থা, প্রত্যয় বা সংকল্পের অভাব ধরা পড়ছে বার বার – প্রকটভাবে। প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও আটকে যাচ্ছে বার বার। তার জন্য দেয়া দশ মিনিটে তাকে ‘সেল’ করার কোনো ধারণা না থাকার কারণে চুপ করে থাকছে বসে – তার জীবনের ‘প্রিমিয়াম’ সেগমেন্টে। শারীরিক ভাষা থেকে উত্তরটা জানে বলে [আমি] বুঝতে পারলেও বলছে না – আস্থার ওভাবে। ওই বয়সে একই সমস্যা ছিলো আমারও। ক্যাডেট কলেজের হাজারো এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটি পার করলেও ‘বিগ পিকচার’ পাবার সেই প্রশিক্ষণ ছিলো না আমার। যেকোনো জিনিসকে তার ছোট গন্ডির মতো করে না মেপে বড় পরিসর থেকে চিন্তা করলে সবকিছুই মনে হবে অন্য রকম। এই বড় করে চিন্তা না করতে পারাটা আমাদেরকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে অন্য দেশগুলো থেকে। এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে আমাদের অংশগ্রহণ সে কারণে অন্যদের থেকে অনেক কম। পৃথিবী জয় করার মানসিকতা আসতে হবে ছোট বেলা থেকে। সংকল্প তৈরী করার কারখানা হতে হবে স্কুলগুলোকে। মানসিকভাবে পৃথিবীকে অধিগ্রহণ করার প্রত্যয় তৈরী করে দিতে হবে এই সময় থেকে। প্রতিমাসে দেশের সফল মানুষগুলোকে মুখোমুখি করতে করতে হবে ক্লাসরুমে – সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। মাসে এক ঘন্টা। রাজি আছি আমি – বিনামূল্যে। আপনি?
১৮.
গ্রামীণফোন আর প্রথমআলোর উদ্যোগে ‘ইন্টারনেট উত্সবের’ প্রোগ্রামের প্রথম দিকে যুক্ত থাকার কারণে এধরনের একটা উপলব্ধি এসেছিলো। আসলে, সেটা মনে দাগ কেটে গিয়েছিলো – গভীরভাবে। প্রতিযোগিতাটা ছিলো খুবই সহজ। আপনার প্রশ্নের উত্তর ফোনের ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করতে হবে – সবচেয়ে কম সময়ে। মোবাইল অপেরা ব্রাউজার পার্টনার থাকাতে এটার লোকালাইজড ভার্সন দিচ্ছিল বিনামূল্যে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শতাধিক স্কুল থেকে হাজারো ছাত্রদের মধ্যে পঞ্চাশ রত্নকে ছেঁকে তাঁরা নিয়ে এসেছিলেন ঢাকার গ্রামীণফোনের কর্পোরেট হেডকোয়ার্টার – জিপিহাউজে। আমি সেই পঞ্চাশ রত্নের মুখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছিলাম – নতুন পরিবেশে। আস্থা, সংকল্প আর প্রত্যয়ে টইটুম্বুর সবাই, বিশ্বজয়ে প্রস্তুত সবাই। পরিবেশটার প্রতিটা ইট ইন্ফিউজ করেছে সবাইকে। আবার, সেই হাজার হাজার ছাত্র যারা পারেনি আসতে – তারা শিখে নিয়েছে ইন্টারনেটের ক্ষমতায়নের কথা। জিপিহাউসের সেই কয়েকদিন ওয়ার্কশপ পাল্টে দিয়েছে তাদেরকে – সারা জীবনের জন্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেই বালক বা বালিকা প্রতিযোগিতার পর তার নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গেলেও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থান তাকে দমাতে পারবে না আগের মতো। মনে মনে সেই হাউজের চাকুরিরত অন্যান্য চৌকস মানুষগুলোর সাথে তুলনা করে ফেলেছে সে – এই ভাবনাটা কি কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে তাদের কাছ থেকে – এভার! এখন বসে আছে সময়ের অপেক্ষায় – স্লীপার এজেন্টদের মতো। ভালো রেজাল্ট, ভালো কলেজে ভর্তি হবার জন্য। তারা দেখেছে বিজয়ীরা কিভাবে গিয়েছে টেলিনর আর অপেরার নরওয়েজিয়ান হেডকোয়ার্টারে। কঠোর মানসিক প্রশিক্ষণের মধ্যে তৈরী হচ্ছে ওরা – বিশ্বজয়ে। আর না হলে, সেই হাউজে, চাকুরী নিয়ে – প্রত্যয়ের হাতছানিতে। বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিন এই পঞ্চাশ রত্নের – দশ বছর পর! এর মধ্যে পুরে যাবে ইন্টারনেটের ‘ক্রিটিকাল মাস’এর প্রয়োজনীয় প্যারামিটার।
১৯.
নতুন বইটা নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। আমাদের ক্যাডেট কলেজের এক বড় ভাই রেকমেন্ড করেছিলেন বলে সুদূর আমেরিকা থেকে আনানো। লেখা হয়েছে অবশ্যি – উনিশশো উনষাট সালে। বই পড়ার ব্যাপারে আমার একটা বদঅভ্যাস হচ্ছে ডেডিকেশন আর মুখবন্ধ পড়ে কয়েকদিনের জন্য ফেলে রাখা। আমার ধারণা (ভুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ) জনপ্রিয় লেখকরা প্রায় সবাই গল্প দিয়ে শুরু করেন মুখবন্ধ। সেখানে তার বইটা লেখার মোটিভেশনের কথা আসে চলে। সেটা মাথায় জমতে দেই কয়েকদিন ধরে। টিউবলাইট ইফেক্ট বলতে পারেন অনেকটা। আর, স্টোরিটেলিং এর ক্ষমতা উপেক্ষা করা অসম্ভব। ‘দ্য ম্যাজিক অফ থিঙ্কিং বিগ’ বইটার শুরুর গল্প মনে ধরেছে আমার। লেখক বইটা লেখার কয়েক বছর আগে একটা সেলস মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেই সভার ব্যাপারে খুবই উদ্দীপিত মনে হচ্ছিলো কোম্পানিটির মার্কেটিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টকে। কিছু একটা মেসেজ দিতে চাচ্ছিলেন তিনি – সবাইকে। একজন ‘সাধারণ চেহারার’ সেলস রেপ্রিজেন্টেটিভ দাড়িয়েছিলেন তার সাথে – স্টেজে। কারণ, সেবছর কোম্পানিতে ষাট হাজার ডলার এনে দিয়েছিলেন উনি। অন্য রেপ্রিজেন্টেটিভদের গড়পরতা বাত্সরিক আয় বারো হাজার ডলারের কাছাকাছি।
২০.
অন্য রেপ্রিজেন্টেটিভদের হ্যারির (স্টেজের সেই সাধারণ চেহারার রেপ্রিজেন্টেটিভের নাম) সাথে তুলনা করতে বলছিলেন সেই ভাইস প্রেসিডেন্ট। সবার এমন কি নেই যেটা আছে হ্যারির কাছে? তার পাঁচগুন আয়ের রহস্যটা জানতে চাইলেন সবার কাছে। ও কি সবার থেকে পাঁচগুণ চালাক? বরং কোম্পানির পরীক্ষায় দেখা গেছে সে মধ্যমানের বুদ্ধিমান। ও কি তাহলে সবার থেকে কাজ করেছে বেশি? কোম্পানির হিসেবে ও বরং ছুটি নিয়েছে বেশি – অন্য সবার থেকে। হ্যারির সেলসের জায়গাটা কি অন্যদের থেকে ভালো। তাও নয়। ওর কি পড়াশোনার ডিগ্রী বেশি? না। স্বাস্থ্যও ভালো নয় অতটা। তবে অন্য সবার থেকে একটা জায়গায় আলাদা এই হ্যারি। হ্যারি অন্য সবার থেকে পাঁচগুন বড় করে চিন্তা করতে পারে। তারপর সেই ভাইস প্রেসিডেন্ট দেখালেন কিভাবে সফলতা মগজের আয়তনের উপর নির্ভর না করে তা করে বড় করে চিন্তা করার আয়তনের উপর। মানুষের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে তার চিন্তা করার পরিধিটা। যার পরিধি যতো বড় সে উঠে গেছে ততো উপরে। বড় করে চিন্তা করলেই যদি সফলতা আসে তাহলে সবাই সেটা পারছেনা কেনো? মানুষ মাত্রই তার পারিপার্শ্বিক থেকে তার চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরী করে বলে সে সেটার মধ্যে হয়ে পড়ে সীমাবদ্ধ। আর সেই চিন্তাটা সহজাত কারণে বের হতে পারে না সেই ছোট গন্ডি থেকে। আবার আমাদের ছোট পারিপার্শ্বিক অবস্থাই আটকে রাখছে ছোট চিন্তায়। ভেবেই হচ্ছি নাকাল – এতো সফল মানুষের মধ্যে পাওয়া কি যাবে জায়গা? প্রথম ক্যাটাগরিতে হাজার মানুষের আনাগোনা, দিতে পারবো তো টেক্কা? বরং আসল গল্প হচ্ছে আমরাই পড়ে আছি দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে – কোটি মানুষের ভিড়ে। বড় চিন্তা করার ভয়ে মানুষ পড়ে থাকে নিচে। আচ্ছা, বলুনতো – পাঁচ লক্ষ টাকার উপর আয় করে কজন? সেই সাথে বিশ হাজার টাকার নিচে? অনেক এইচআর ম্যানেজারের সাথে পরিচয় থাকাতে এব্যাপারটা আমার কাছে পানির মতো পরিস্কার। অনেকে আমাকে তাদের উপরের ম্যানেজমেন্টের জন্য লোকদের নাম দিতে বলেন – হাতড়ে বেড়াই আমিও, তাদের সাথে। উপযুক্ত মানুষ কম। বেশিরভাগ মানুষ বড় করে চিন্তা করতে পান ভয়, আছি যেখানে – আছি ভালইতো। এর মাঝেই আছে ‘ব্লু ওশান’!
আরেকটা বইয়ের কথা বললাম না তো?