Feeds:
Posts
Comments

Archive for May, 2013

“The mind is the limit. As long as the mind can envision the fact that you can do something, you can do it, as long as you really believe 100 percent.”

Arnold Schwarzenegger

“There is no passion to be found playing small – in settling for a life that is less than the one you are capable of living.”

Nelson Mandela

১৭.

অফিসের নতুন লোক নিয়োগ প্রক্রিয়াতে সংযুক্ত থাকতে হয়েছিলো কিছুদিন আগে। টেলিকম আর কম্পিউটার প্রকৌশলীদের ইন্টারভিউ নেবার সময় মনটা ভার হয়ে উঠছিলো কিছুক্ষণ পর পরই। চটপটে ছেলেমেয়েগুলো পারছে না কথা বলতে। অসীম সম্ভাবনার সামনে এসে গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। বিশ বছরের সরকারী চাকুরীর অভিজ্ঞতায় আমাদের এই জিনিসটা মিস করছি অনেকদিন ধরে। সদ্য উনিভার্সিটি পাস করা যে ছেলেমেয়েগুলো ইন্টারভিউ দেবার জন্য আসছে তাদের প্রায় সবারই আস্থা, প্রত্যয় বা সংকল্পের অভাব ধরা পড়ছে বার বার – প্রকটভাবে। প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও আটকে যাচ্ছে বার বার। তার জন্য দেয়া দশ মিনিটে তাকে ‘সেল’ করার কোনো ধারণা না থাকার কারণে চুপ করে থাকছে বসে – তার জীবনের ‘প্রিমিয়াম’ সেগমেন্টে। শারীরিক ভাষা থেকে উত্তরটা জানে বলে [আমি] বুঝতে পারলেও বলছে না – আস্থার ওভাবে। ওই বয়সে একই সমস্যা ছিলো আমারও। ক্যাডেট কলেজের হাজারো এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটি পার করলেও ‘বিগ পিকচার’ পাবার সেই প্রশিক্ষণ ছিলো না আমার। যেকোনো জিনিসকে তার ছোট গন্ডির মতো করে না মেপে বড় পরিসর থেকে চিন্তা করলে সবকিছুই মনে হবে অন্য রকম। এই বড় করে চিন্তা না করতে পারাটা আমাদেরকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে অন্য দেশগুলো থেকে। এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে আমাদের অংশগ্রহণ সে কারণে অন্যদের থেকে অনেক কম। পৃথিবী জয় করার মানসিকতা আসতে হবে ছোট বেলা থেকে। সংকল্প তৈরী করার কারখানা হতে হবে স্কুলগুলোকে। মানসিকভাবে পৃথিবীকে অধিগ্রহণ করার প্রত্যয় তৈরী করে দিতে হবে এই সময় থেকে। প্রতিমাসে দেশের সফল মানুষগুলোকে মুখোমুখি করতে করতে হবে ক্লাসরুমে – সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। মাসে এক ঘন্টা। রাজি আছি আমি – বিনামূল্যে। আপনি?

১৮.

গ্রামীণফোন আর প্রথমআলোর উদ্যোগে ‘ইন্টারনেট উত্সবের’ প্রোগ্রামের প্রথম দিকে যুক্ত থাকার কারণে এধরনের একটা উপলব্ধি এসেছিলো। আসলে, সেটা মনে দাগ কেটে গিয়েছিলো – গভীরভাবে। প্রতিযোগিতাটা ছিলো খুবই সহজ। আপনার প্রশ্নের উত্তর ফোনের ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করতে হবে – সবচেয়ে কম সময়ে। মোবাইল অপেরা ব্রাউজার পার্টনার থাকাতে এটার লোকালাইজড ভার্সন দিচ্ছিল বিনামূল্যে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শতাধিক স্কুল থেকে হাজারো ছাত্রদের মধ্যে পঞ্চাশ রত্নকে ছেঁকে তাঁরা নিয়ে এসেছিলেন ঢাকার গ্রামীণফোনের কর্পোরেট হেডকোয়ার্টার – জিপিহাউজে। আমি সেই পঞ্চাশ রত্নের মুখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছিলাম – নতুন পরিবেশে। আস্থা, সংকল্প আর প্রত্যয়ে টইটুম্বুর সবাই, বিশ্বজয়ে প্রস্তুত সবাই। পরিবেশটার প্রতিটা ইট ইন্ফিউজ করেছে সবাইকে। আবার, সেই হাজার হাজার ছাত্র যারা পারেনি আসতে – তারা শিখে নিয়েছে ইন্টারনেটের ক্ষমতায়নের কথা। জিপিহাউসের সেই কয়েকদিন ওয়ার্কশপ পাল্টে দিয়েছে তাদেরকে – সারা জীবনের জন্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেই বালক বা বালিকা প্রতিযোগিতার পর তার নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গেলেও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থান তাকে দমাতে পারবে না আগের মতো। মনে মনে সেই হাউজের চাকুরিরত অন্যান্য চৌকস মানুষগুলোর সাথে তুলনা করে ফেলেছে সে – এই ভাবনাটা কি কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে তাদের কাছ থেকে – এভার! এখন বসে আছে সময়ের অপেক্ষায় – স্লীপার এজেন্টদের মতো। ভালো রেজাল্ট, ভালো কলেজে ভর্তি হবার জন্য। তারা দেখেছে বিজয়ীরা কিভাবে গিয়েছে টেলিনর আর অপেরার নরওয়েজিয়ান হেডকোয়ার্টারে। কঠোর মানসিক প্রশিক্ষণের মধ্যে তৈরী হচ্ছে ওরা – বিশ্বজয়ে। আর না হলে, সেই হাউজে, চাকুরী নিয়ে – প্রত্যয়ের হাতছানিতে। বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিন এই পঞ্চাশ রত্নের – দশ বছর পর! এর মধ্যে পুরে যাবে ইন্টারনেটের ‘ক্রিটিকাল মাস’এর প্রয়োজনীয় প্যারামিটার।

১৯.

নতুন বইটা নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। আমাদের ক্যাডেট কলেজের এক বড় ভাই রেকমেন্ড করেছিলেন বলে সুদূর আমেরিকা থেকে আনানো। লেখা হয়েছে অবশ্যি – উনিশশো উনষাট সালে। বই পড়ার ব্যাপারে আমার একটা বদঅভ্যাস হচ্ছে ডেডিকেশন আর মুখবন্ধ পড়ে কয়েকদিনের জন্য ফেলে রাখা। আমার ধারণা (ভুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ) জনপ্রিয় লেখকরা প্রায় সবাই গল্প দিয়ে শুরু করেন মুখবন্ধ। সেখানে তার বইটা লেখার মোটিভেশনের কথা আসে চলে। সেটা মাথায় জমতে দেই কয়েকদিন ধরে। টিউবলাইট ইফেক্ট বলতে পারেন অনেকটা। আর, স্টোরিটেলিং এর ক্ষমতা উপেক্ষা করা অসম্ভব। ‘দ্য ম্যাজিক অফ থিঙ্কিং বিগ’ বইটার শুরুর গল্প মনে ধরেছে আমার। লেখক বইটা লেখার কয়েক বছর আগে একটা সেলস মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেই সভার ব্যাপারে খুবই উদ্দীপিত মনে হচ্ছিলো কোম্পানিটির মার্কেটিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টকে। কিছু একটা মেসেজ দিতে চাচ্ছিলেন তিনি – সবাইকে। একজন ‘সাধারণ চেহারার’ সেলস রেপ্রিজেন্টেটিভ দাড়িয়েছিলেন তার সাথে – স্টেজে। কারণ, সেবছর কোম্পানিতে ষাট হাজার ডলার এনে দিয়েছিলেন উনি। অন্য রেপ্রিজেন্টেটিভদের গড়পরতা বাত্সরিক আয় বারো হাজার ডলারের কাছাকাছি।

২০.

অন্য রেপ্রিজেন্টেটিভদের হ্যারির (স্টেজের সেই সাধারণ চেহারার রেপ্রিজেন্টেটিভের নাম) সাথে তুলনা করতে বলছিলেন সেই ভাইস প্রেসিডেন্ট। সবার এমন কি নেই যেটা আছে হ্যারির কাছে? তার পাঁচগুন আয়ের রহস্যটা জানতে চাইলেন সবার কাছে। ও কি সবার থেকে পাঁচগুণ চালাক? বরং কোম্পানির পরীক্ষায় দেখা গেছে সে মধ্যমানের বুদ্ধিমান। ও কি তাহলে সবার থেকে কাজ করেছে বেশি? কোম্পানির হিসেবে ও বরং ছুটি নিয়েছে বেশি – অন্য সবার থেকে। হ্যারির সেলসের জায়গাটা কি অন্যদের থেকে ভালো। তাও নয়। ওর কি পড়াশোনার ডিগ্রী বেশি? না। স্বাস্থ্যও ভালো নয় অতটা। তবে অন্য সবার থেকে একটা জায়গায় আলাদা এই হ্যারি। হ্যারি অন্য সবার থেকে পাঁচগুন বড় করে চিন্তা করতে পারে। তারপর সেই ভাইস প্রেসিডেন্ট দেখালেন কিভাবে সফলতা মগজের আয়তনের উপর নির্ভর না করে তা করে বড় করে চিন্তা করার আয়তনের উপর। মানুষের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে তার চিন্তা করার পরিধিটা। যার পরিধি যতো বড় সে উঠে গেছে ততো উপরে। বড় করে চিন্তা করলেই যদি সফলতা আসে তাহলে সবাই সেটা পারছেনা কেনো? মানুষ মাত্রই তার পারিপার্শ্বিক থেকে তার চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরী করে বলে সে সেটার মধ্যে হয়ে পড়ে সীমাবদ্ধ। আর সেই চিন্তাটা সহজাত কারণে বের হতে পারে না সেই ছোট গন্ডি থেকে। আবার আমাদের ছোট পারিপার্শ্বিক অবস্থাই আটকে রাখছে ছোট চিন্তায়। ভেবেই হচ্ছি নাকাল – এতো সফল মানুষের মধ্যে পাওয়া কি যাবে জায়গা? প্রথম ক্যাটাগরিতে হাজার মানুষের আনাগোনা, দিতে পারবো তো টেক্কা? বরং আসল গল্প হচ্ছে আমরাই পড়ে আছি দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে – কোটি মানুষের ভিড়ে। বড় চিন্তা করার ভয়ে মানুষ পড়ে থাকে নিচে। আচ্ছা, বলুনতো – পাঁচ লক্ষ টাকার উপর আয় করে কজন? সেই সাথে বিশ হাজার টাকার নিচে? অনেক এইচআর ম্যানেজারের সাথে পরিচয় থাকাতে এব্যাপারটা আমার কাছে পানির মতো পরিস্কার। অনেকে আমাকে তাদের উপরের ম্যানেজমেন্টের জন্য লোকদের নাম দিতে বলেন – হাতড়ে বেড়াই আমিও, তাদের সাথে। উপযুক্ত মানুষ কম। বেশিরভাগ মানুষ বড় করে চিন্তা করতে পান ভয়, আছি যেখানে – আছি ভালইতো। এর মাঝেই আছে ‘ব্লু ওশান’!

আরেকটা বইয়ের কথা বললাম না তো?

Read Full Post »

“640K ought to be enough for anybody.” — Bill Gates (1955-), in 1981

৮.

ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম বড় সমস্যা বটে। তবে প্রযুক্তির যুগে তার সমাধান আছে কি নেই সে বিতর্কে যাব না আজকেই। মানুষ বাড়ছেই কিন্তু এই মেগা শহরে। সুবিধার জন্যই রাজধানীতে আসা। মানুষ পাখি না হলেও বসে তো থাকেন না তারা – প্রয়োজনের জন্য পাড়ি দেন নতুন নতুন জায়গায়। মানুষের এই যাওয়া আসার একটা প্যাটার্ন পাওয়া গেলে কতো সমস্যার সমাধান সম্ভব তা নিয়ে আজকের লেখা। ফিরে আসি মোবাইল ইন্ডাস্ট্রির বিগ ডাটাতে। কথা বললেই তার বিল করতে হবে আপনার অপারেটরকে। আর সে কারণে তাদেরকে রাখতে হয় অনেক তথ্যই। প্রতিটি মোবাইল ফোন টাওয়ারে জিপিএস থাকার ফলে ব্যবহারকারীদের অবস্থান আছে অপারেটরের বিগ ডাটায়। টাওয়ারগুলোতে জিপিএস রাখা হয়েছিলো টাইমড সিগনালের জন্য, যাতে সব টাওয়ারের সময় ঠিক থাকে। আর তার বাই-প্রোডাক্ট নিয়ে হয়েছে মানুষের হাজারো গবেষণা। ইচ্ছা করেই মোবাইল এপ্লিকেশনের দিকে যাচ্ছি না আর। ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক দিয়ে ঢাকা শহর ছেয়ে গেলে নতুন গল্প ফাঁদব এই আমিই।

1

৯.

আপনার হাজার বা বারোশো টাকার ফোন কখন কোথায় আছে তা বের করার জন্য রকেট সাইন্স পড়তে হয়না। আর আমাদের এতোই সেল টাওয়ার, আপনার ফোনের সিগন্যাল একসাথে টাওয়ার পায় তিন চারটা – একা একাই। টাওয়ারগুলো নিজের অবস্থান জানে বলে আপনারটা ফোনের অবস্থান বের করা পানির মতো সহজ। সিগন্যাল পৌছাবার টাইম ল্যাগ আর ট্রায়ানগুলেশন, মানে টাওয়ার থেকে লাইন টানলেই পাবেন আপনার ফোনের অবস্থান। আর ফোন আছে আপনার পকেটে। বিগ ডাটাতে আপনার অবস্থান পিনপয়েন্ট হবার দরকার নেই। আর জিপিএস ইচ্ছা করে যতোটুকু ভুল করে – তার হিসেব বাদ দেয়া হয়নি এখানে। দরকারও নেই আপনার ফোন নম্বর। মোবাইলের সেই নামছাড়া তথ্য নিয়ে কাজ করলে পাল্টে দেয়া যাবে মানুষের জীবন। নামছাড়া মানে হচ্ছে এই তথ্যের সাগরে থাকবে না কোনো মানুষের নাম। মানুষের ব্যক্তিগত, একান্ত তথ্য যাবে না – এই বিগ ডাটাতে। এলাকা ভিত্তিক কোথায় কতো মানুষের বসবাস, চাকুরী করতে যাচ্ছেন কোন এলাকায়, সকালে, দুপুরে আর রাতে থাকছেন কোথায়, সব আছে এখানে। নগরকর্তারা মানুষের এধরনের হিসেব পেলে যাবেন বর্তে। আমাদের দরকার প্রতিদিন কতো লোক উত্তরা থেকে মহাখালী হয়ে মতিঝিল যাচ্ছেন। ধানমন্ডি থেকে বনানী বা মিরপুর থেকে গুলশান। কতো লোক ফিরছেন নিজের ডেরায় – কোন রাস্তা নিচ্ছেন – কোন সময়? সব আছে এই বিগ ডাটায়। কোন কোন রাস্তা ফাঁকা থাকছে, মানুষ হিসেব করা কোনো সমস্যাই নয় কারণ শতকরা নিরানব্বই জনের পকেটে আছে মোবাইল ফোন। আর সেই ফোন প্রতিনিয়ত: তৈরী করছে প্রচুর তথ্য – যা ব্যবহার করা যাবে মানুষের কল্যানে। কোথায় কথা বলছেন বেশি – তার মানে কাজের সুযোগ কোথায় বেশি – কতক্ষণ ধরে কথা বলছেন তা দেখলেই বোঝা যাবে পরবর্তী ফিনান্সিয়াল ডিস্ট্রিকটা হচ্ছে কোথায়। আমার এলাকায় কি? মোবাইল ব্যাঙ্কিং চালু হওয়াতে সুবিধা হলো আরো বেশি। ফাঁকা আবার একটু ঘুরে যাবার রাস্তা নেবেন যারা তাদের মোবাইল ওয়ালেটে যোগ হবে আগের দিনের কাটা পাঁচ টাকা। আগের দিন নিয়েছিলেন ভিআইপি রোড। একটা ফাস্টফুডের দোকানের কথা চিন্তা করছেন বনানীর তিন নম্বর রোডের চৌরাস্তার পাশে। কতো মানুষ যাচ্ছে সেই রাস্তা দিয়ে – সঙ্গে শুক্র শনিবারের হিসেব পাওয়া কি খুব কষ্টকর? বিভিন্ন সভা সমিতিতে কোন রাস্তা বন্ধ আর কোনটা খোলা সমীচীন হবে আর কোন এলাকা থেকে লোক আসছে বেশি – তার জন্য বাস মালিকদের আগে থেকে জানানো, সবই সম্ভব এই নতুন অর্জিত জ্ঞান থেকে। কোন এলাকার লোক বেশি গ্যাস পোড়াচ্ছেন মানে যাচ্ছেন বেশী দুরে, সাথে হাসপাতালগুলোতে কতো মানুষ যাচ্ছেন তার হিসেব সরকারকে নতুন কিছু চিন্তার খোরাক পারে দিতে। মেট্রোপলিটন শহরের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে পরবর্তী ফ্লাইওভার কোথায় করতে হবে তার জ্ঞান আসবে এই বিগ ডাটা থেকে।

2

3

১০.

কাপড় চোপড় কেনা কাটা তো দুরের কথা বাইরে বের হবার জামা নিয়ে আমার ‘বিগ ডাটা’ (স্বাতী)র সাথে ঝামেলা লাগে মাঝে মধ্যে। সেই আমি এলিফ্যান্ট রোড পার হবার পেয়ে গেলাম নতুন কিছু কাপড়ের অফার – চার পাঁচটা এসএমএসে। একটা শার্ট কিনলে আরেকটা প্যান্ট ফ্রি। দুঃখিত, উল্টোটা হবে হয়তোবা। কারণ, আমার ফোন এখন ওই রোডে। তথ্য চলে গেছে বিগ ডাটায়, আর সে সঙ্গে দোকানগুলোতে। আমি যতো ঘুরাঘুরি করি না কেনো ডায়মন্ডওয়ার্ল্ডের পাশে – ডিসকাউন্ট এর অফার আসবে আমার ‘বিগ ডাটা’র (মেয়ের মা) কাছে। সবার প্রোফাইলিং আছে বিগ ডাটার কাছে। টুইটার, ফেইসবুক, লিংকডইন থেকে হাজার তথ্য নিয়ে তৈরী হয়ে গেছে প্রতিটা মানুষের প্রোফাইল, কি পছন্দ আপনার। কি কিনবেন সামনের সপ্তাহে তাও জানে সে। ডিসকাউন্ট পৌছে যাবে যথাসময়। আপনার ট্রাভেল প্যাটার্ন তার জানা – আগের মাসেই বুকিং দিয়ে রাখবে আপনার মালদ্বীপের পরবর্তী ট্রিপ। কম দামে দেবার জন্য কোম্পানির পুরো বছরের জন্য কেনা (জানতে চাইলে মানতে হবে হোটেলস.কম এর বিজনেস কেইস) ওই অফার কি পারবেন ফেলতে? বিশ্বাস হচ্ছে না? ফিরে আসি আপনার মোবাইল অপারেটরের বিজনেস কেইসে। সারা বছর ধরে কি ধরনের সার্ভিস ব্যবহার করছেন তা আপনার মনে না থাকলেও আপনার প্রোভাইডারের কাছে আছে ঠিকই। আপনার কেনাকাটার প্যাটার্ন সে আপনার চেয়ে ভালো জানে বলেই ভুলেও আপনাকে তিন গিগাবাইট প্যাকেজ কেনার জন্য প্রস্তাবনা দেবে না। আপনার কেনাকাটা সপ্তাহে পঁচিশ মেগাবাইট বা তার আশেপাশে হলে আপনার ব্যবহার জেনেই কখন এবং কোন সময়ে নতুন প্যাকেজের এসএমএসটা করতে হবে তা অবশ্যি আরেকটা বিজ্ঞান। কেএফসির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আপনার পরিবারের সদস্য (ফ্রেন্ডস্ এন্ড ফ্যামিলি নম্বর ধরে) সঙ্গে থাকলেই ‘চিকেন’ বালতির সাথে বাড়তি ফ্রি অফার না নিয়ে যাবেন কোথায়? আর লয়ালটি প্রোগ্রামের জন্য আপনাকে কিভাবে খুশি রাখবে তা না হয় রেখে দিলাম আরেকদিনের জন্য।

১১.

বাংলাদেশকে মানুষ চেনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে। আমরা অনেকটাই বের হয়ে এসেছি, তবে ফেলে রেখেছি আমাদের স্বর্ণখনি ‘বিগ ডাটা’কে। ভবিষ্যত দেখার সব অস্ত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও আমরা কিছুটা অন্ধ – এখনো। ছোটবেলায় শুনতাম, ‘ফিউচার ইজ ইন ইওর হ্যান্ড’, তখন না বুঝলেও এখন বুঝি কড়ায় গন্ডায়। আমাদের হাতে ভবিষ্যত বলেই ভবিষ্যত দেখাটা কষ্টের কিছু নয়। আমার বর্তমান কাজের একটা বড় অংশ হচ্ছে ভবিষ্যতদ্বানী করার ব্যর্থ চেষ্টা করা, যা মাঝে মধ্যে লেগে যায় বটে। বাংলাদেশের বাইরের একটা ঘটনা নিয়ে আলাপ করি বরং। দুর্যোগের সময় মানুষ দুর্যোগপূর্ণ অবস্থান থেকে যতো তাড়াতাড়ি অন্য জায়গায় যেতে পারে ততো জীবন বাঁচে। উপকূল অবস্থান থেকে লক্ষ লোক সরে গেলেও তার কতোভাগ ফিরে আসেন আবার তার হিসেব রাষ্ট্রের কাছে থাকলে তাদের পুনর্বাসন করা সহজ হয়ে যায় বটে। আর যারা ফিরে আসেন না তারা শহরের বস্তি এলাকায় গিয়ে শেষ আশ্রয় খোঁজেন। শ্রম বিক্রি করে চলে তাদের জীবন। সরকার তাদেরকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করতে চাইলেও কে কোথায় গিয়েছে তা বের করতে না পারার জন্য ব্যাহত হয় সেটা। রিলিফ অপারেশন চালানোর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে আসল মানুষগুলোকে সাহায্য করতে না পারাটা। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা ব্যাহত হয় চিন্হিত না করতে পেরে। নদীর ভাঙ্গনে কতো মানুষই তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কয়জনকেই আমরা পারি পুনর্বাসন করতে? শুধুমাত্র দুহাজার দশ সালেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চার কোটি ২০ লক্ষ মানুষ মাথা গোঁজার ঠাই হারায়। ফলে একুশ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় – প্রতক্ষ্যভাবে আর ক্ষতি হয় বারোশো কোটি ডলারের।

১২.

মনে করুনতো দুহাজার দশ সালের জানুয়ারীর বারো তারিখের কথা। তিন লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলো সেই ভুমিকম্পে – হাইতিতে। শুরু হয়েছিলো হাইতির রাজধানী পোর্ট অ-প্রিন্স থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূর থেকে। হাইতির সবচেয়ে বড় মোবাইলফোন কোম্পানি, ডিজিসেল আর কয়েকটা ইউনিভার্সিটির সমন্বয়ে বিপদে পড়া সেই মানুষগুলোর ছুটাছুটি আর তার রিলিফ অপারেশন কিভাবে সুষ্ঠুভাবে করা যায় তার পরিকল্পনা এসেছিলো সেই বিগ ডাটা থেকে। ভূমিকম্পের বিয়াল্লিশ দিন আগে থেকে ঘটনার পরের তিনশো একচল্লিশ দিন পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের সিডিআর (কল ডিটেইল রেকর্ড) ঘেঁটে যা পাওয়া গেছে তা সেই সরকারকে দিয়েছিলো নতুন করে চিন্তার সুযোগ। উনিশ দিনের মাথায় পোর্ট অ-প্রিন্স ছেড়ে গিয়েছিলো তিরিশ শতাংশ মানুষ। কতো দূর গিয়েছিলো মানুষগুলো, কোথায় গিয়েছিলো, কেন গিয়েছিলো, কার কাছে গিয়েছিলো – তার খতিয়ান পেয়েছিল সরকার। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ প্রথমে ছোটে তাদের আত্নীয়দের কাছে, মানবিক বন্ধন ধরা পরে সেই বিগ ডাটা থেকে। মানুষ তো মানুষেরই জন্য। সেই বিগ ডাটা বিপদে পড়া মানুষের আচরণ আগে থেকেই পারছিলো বলতে, ভবিষ্যত দেখা যাচ্ছিলো ওই বিগ ডাটা থেকে। ভবিষ্যত দেখতে পারলে বিপদে পড়া মানুষকে সাহায্য করা সহজতর হয় বলে আমি ভালবাসি এই বিগ ডাটাকে। আরো গল্প নিয়ে আসব সামনে। জানতে চান হাইতির গল্পটা? ঘুরে আসুন এখানে

শুভরাত্রি!

Read Full Post »

“The idea that the future is unpredictable is undermined every day by the ease with which the past is explained.”

― Daniel Kahneman, Thinking, Fast and Slow

“I may be surprised. But I don’t think I will be.”

― Andrew Strauss

১.

আগে অবাক হতাম, এখন ছেড়ে দিয়েছি অনেক কিছুই। অবাক হবার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে হয়তোবা। ধরুন, লিখছি একটা বিষয় নিয়ে – অনেকের মতো রিসার্চের জন্য সাহায্য নিতে হয় গুগলের। পিএইচপি দিয়ে তৈরী করা সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করছিলাম বহুবছর আগে – তাও আবার একটা অফিসেরই ভেতরে। আমার পালা দুটো স্পাইডার (ক্রলারও বলেন অনেকে) ইনডেক্সিং করতো অফিস ডকুমেন্টগুলো – সারাদিন ধরে। সেই আদি ধারণা থেকে গুগলের সার্চ আলগরিদম আন্দাজ করা কষ্টকর তো বটে। কাজের সুবিধার জন্য আমার সার্চ প্যাটার্ন (যা সার্চ করেছি এপর্যন্ত, দশ বছর হবে কি?) গুগলকে রাখতে বলেছি মনে, আর তার ফলাফল ভয়াবহ। এর মধ্যে ‘গুগল ইনস্ট্যান্ট’ আগুনে ঢেলেছে ঘি। ইনস্ট্যান্ট সার্ভিসটা কোটি মানুষের ‘সার্চ ফ্রেজ’ মানে যে বাক্য দিয়ে মানুষ সচরাচর কিছু একটা খোজে তা মুখস্ত করে বসে বসে। আবার আপনি সার্চ করার মুহুর্তে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো লিখে দেয় আগেই। আপনি সার্চ করার বাক্যের প্রথম শব্দটা কোনো রকমে লিখলেই হলো। আপনার আশেপাশের লোকজন এধরনের কিওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকলে তার প্রস্তাবনার লিস্টি সহ আপনার কাছে উপস্থিত করবে গুগল। সেদিন ষ্টারমুভিজে ‘মিরর মিরর’ মুভিটা দেখার পরপরই গুগলে মিররের শুধুমাত্র ‘এমআইআর’ লিখতেই পুরো মুভিটার সাজেশনই নয় – তার ডান পাশের স্নিপেটে চলে এলো এর পুরো মুভির আদ্যপান্ত। কনটেক্সট ও ছাড়া ভালো কে বুঝবে? গুগলের কথা বলছি। দশ বছরের ব্যবহৃত সার্চ টার্ম ও জানে বলে আমার খোজার ফলাফলকে ন্যারো ডাউন করে নিয়ে এসেছে আমার চাহিদার উপর ভিত্তি করে।

২.

অবাক হবার কিছু নেই। ধারণা করছি, ওই সময়ে এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নে ষ্টারমুভিজ সিনেমাটা ব্রডকাস্ট করছিলো বলে অনেকেই মুভিটা সমন্ধে জানতে চেয়েছে গুগলের কাছে। তার একদিন আগে মেয়ের জন্য জিমেইলে ‘স্নোহোয়াইট’ সম্পর্কিত কিছু ইমেইল চালাচলি করেছিলাম হয়তোবা। আমার দশ বছরের সার্চ প্যাটার্ন গুগল মনে রাখাতে তার সাজেশন এতটাই টার্গেটেড হয় তা দেখলে অবাক না হবার জো নেই। ও আমাকে চেনে আমার থেকে বেশি। বেশি অবাক হলে কাজে সমস্যা হয় বলে ছেড়ে দিয়েছি ইদানিং। আমার সব লেখালিখির জিনিসপত্র গুগলের বিভিন্ন সার্ভিসে থাকার কারণে এটা কতোটা নিখুঁত হয় তা আপনার অজানা নয় আপনার। ফ্লাইট ডিটেলস আর স্টক মার্কেট? বাংলা টাইপিং এর জন্য গুগল ইনপুট টুলস ব্যবহার করাতে ইংরেজিতে একটা বাংলা শব্দ লেখা শুরু করতেই যা সাজেশন দেয়া শুরু করে তা ইর্ষনীয় বটে। এই টুল যতই ব্যবহার করছি, আরো স্মার্ট হচ্ছে দিনকে দিন – আমার লেখার (মানে ইনপুটের) ভিত্তিতে। আমি যে শব্দটা যেই ইংরেজি শব্দে লিখেছি আগে, মনে রেখে দেয় টুলটা। অনেকটা টেক্সট তো স্পীচ সফটওয়্যারের ট্রেনিং পিরিয়ডের মতো। মানে, নিজের চোখে দেখছি মেশিন লার্নিং। আর ইংরেজি শব্দ এমন ভাবে বাংলায় ম্যাপিং করেছে তার জন্য নিজেকে দেখতে হবে চেখে। ইংরেজি বানানে কোনো কিছু লেখলে তার সরাসরি বাংলা উচ্চারণ ছাড়াও অভিধানের কাজ করছে সময় সময়। যেমন, ইংরেজিতে ‘আমেরিকান’ শব্দটা লেখতেই ‘মার্কিন’ শব্দটা বের করে দিচ্ছে বাংলায়।

৩.

বই পড়ার সময় পাতায় পাতায় দরকারী লাইনে দাগানো আমার ছোট বেলার অভ্যাস। আমাজনের কিন্ডল এ কেনা সব বইয়ে পৃথিবীর বাকি পাঠকদের হাইলাইটগুলোর অংশ দেখে বুঝতে পারি আমার ফারাকটা। পিসিতে কাজ করার পর মোবাইল ফোনে কাজ করতে গেলে অবাক হবার চেষ্টা করি – ও আমার সব বদ অভ্যাসগুলো রেখেছে মনে। ফোনটা [নয় সালের] পুরোনো হলেও এন্ড্রয়েডের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেমে নতুনভাবে ইনস্টল করতেই পুরোনো সব সেটিংস, ফোনবুক এন্ট্রি, গুগলের কোন কোন সার্ভিস ব্যবহার করছিলাম তার সকল যোগসূত্র, কি কি এপ্লিকেশন ইনস্টল করেছিলাম তা নিমিষেই নিয়ে আসলো গুগল ক্লাউড থেকে। মানে, গুগল জানে সবকিছু! আমার প্রিয় রংটাও। ‘গুগল কীপ’ [ড্রাইভের অংশ] সাহায্য করছে পরের বইটা লেখার ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে।

৪.

‘পার্সোনালাইজেশন’ কাকে বলে সেটা দেখতে যেতে হবে আমাজনের সাইটে। প্রতিদিন প্রায় বিভিন্ন জিনিসের জন্য ওখানে ঢু মারার ফলে আমাকে চিনে গেছে বন্ধুদের থেকে বেশি। আমার কেনাকাটার রেকর্ড আর তার ব্রাউজিং রেকর্ড ঘেঁটে যা রেকমেন্ডেশন তৈরী করে তা ইর্ষনীয়। না কিনে যাবেন কোথায়? ওই জিনিষটা যারা কিনেছেন উনারাই আর কি কি কিনেছেন তার প্রস্তাবনা দিচ্ছে পাশেপাশে। আবার আমার কেনাকাটার রেকর্ড দেখে অন্যেরা প্রভাবিত হলে তারা কি কিনেছেন তাও দেয়া আছে পাশে। বিশেষ দিনগুলোতে কি কি কিনেছেন সেটা মনে রাখবে বছর ধরে। পরের বছর নতুন কিছু মনে করিয়ে দিতে পিছুপা হবে না সে। কুকি দিয়ে ট্রাক করছে আমার ব্রাউজিং হিস্ট্রি, আমার একান্ত গোপনীয় জিনিসও জানে সে। তবে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো আমাকে কখনো জানাবে না কি কি জানে সে আমার ব্যাপারে।

৫.

দোকানের জানালা পার হতেই পাঞ্জাবিটা পরলো চোখে। মনেও ধরলো আপনার। দামটাই মনকে সায় দিলো না বরং। হাঁটতে শুরু করলেন আগের মতো। আপনি হয়তোবা জানেন না যে জানালাতে লাগানো ওয়াইফাই সেন্সর আপনার স্মার্টফোনতাকে স্ক্যান করে নিয়েছে এর মধ্যে। কতোজন দাড়িয়েছিলেন সেই ডিসপ্লের সামনে, কতোজন এরপর দোকানে ঢুকেছেন আর কতোজন ঢোকেননি – তার হিসেব চলে যাচ্ছে স্টোর ম্যানেজারের কাছে। কতোক্ষণ দাড়িয়েছিলেন ক্রেতা তার উপর নির্ভর করছে দামটা যুতসই হয়েছে কিনা। দোকান যদি এটাই না বের করতে পারে তাহলে বিক্রি ব্যবসায় কেনো? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো রিটেল শপে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ইউক্লিড এনালাইটিক্স’ এর প্রযুক্তি – যারা সিলিকন ভ্যালির আরেকটা স্টার্টআপ। ক্রেতার কোন কোন তথ্য নেয়া যাবে আর নেয়া যাবেনা সেটার উপর সুবিধাজনক অবস্থান আসাতে ফ্লাডগেট খুলেছে ‘বিগ ডাটা’র ব্যাপারে। বিজনেস মডেল পাল্টে যাচ্ছে রাতের মধ্যে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের বই ‘ডিকোডিং বিগ ডাটা’ বইটা শুরু হয়েছে এভাবেই।

৬.

সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর ডাটার ভলিউম নিয়ে বিপাকে সবাই। যেভাবে বাড়ছে ডাটা সেটাকে প্রসেস করাটা সমস্যা হলেও ভবিষ্যত এখানেই। বিজনেস হাউস, হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে সরকারও এই ডাটার দিকে তাকিয়ে আছে। গুগলের আগের চিফ এক্ষিকিউটিভ এরিক স্মিদ দুহাজার দশ সালেই বলেছিলেন নতুন এই ডাটা তৈরীর ব্যাপারে। মাত্র দুদিনে তৈরী হচ্ছে পাঁচ এক্সাবাইটের মতো যা দিয়ে ধারণ করা যাবে দুলক্ষ পঞ্চাশ হাজার বছরের ডিভিডি কোয়ালিটি ভিডিও। আর দু হাজার তেরোতে সেটাই তৈরী হচ্ছে প্রতি দশ মিনিটে। ‘খেতে যাচ্ছেন গুলশানে’ থেকে ‘রক্ত দরকার বন্ধুর জন্য’ বা সহমর্মীদের কাছ থেকে টাকা তোলা থেকে শুরু করে আপনার ‘পিনপয়েন্ট লোকেশন’ সবই যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আপনার আপলোড করা কোন কোন ছবিতে আপনি বা আপনার বন্ধুরা আছেন তাদের মুখ স্ক্যান করে তথ্য যাচ্ছে এই বিগ ডাটাতে। ছবিটা কোথায় তোলা হয়েছে তা বলে দিতে হয়না আর। ও জানে সব। প্রচুর ডাটা, প্রচুর সম্ভাবনা।

৭.

রাতে ঘুমের সমস্যা হওয়াতে ফোনটাকেও শুইয়েছিলাম আমার সাথে। ভোরে বলে দিলো ঠিক কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম রাতে, কোন কোন লেভেলে। তাও চলে গেছে ‘বিগ ডাটা’তে। হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রি মুখিয়ে আছে সামনের বছরগুলোতে। যারা মোবাইল হেলথ ট্র্যাকার পরতে সন্মত হচ্ছেন তাদের জন্য প্রিমিয়াম কমিয়ে দিচ্ছেন ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো। সব যাচ্ছে বিগ ডাটাতে। আগে গাড়ির ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো যেভাবে জিপিএস লাগালেই কিস্তি কমিয়ে দিতো – তার উন্নততর ভার্সন এটা। চালু করা টিভির সামনে এক দম্পতি ঝগড়া করাতে পরবর্তী কমার্শিয়াল ব্রেকে চলে আসলো স্থানীয় ম্যারেজ কাউন্সিলরের বিজ্ঞাপন। ভেরাইজন তার পেটেণ্ট ডাটাবেসে এই প্রযুক্তি পাশ করিয়ে নিয়েছে বেশ আগে। মা তার সন্তানের একটা ইনফেকশনের খবর জানতে পেরেছেন চব্বিশ ঘন্টা আগে, দৃশ্যমান লক্ষণ হাতে পাবার আগেই। সবই যাচ্ছে ‘বিগ ডাটা’য়।

৮.

আসি মোবাইল ইন্ডাস্ট্রির বিগ ডাটাতে। লেডি গাগাকে ব্যক্তিগতভাবে [প্রথম দিকে] পছন্দ না করলেও তার ‘বিগ ডাটা’র উপরে ভরসা মুগ্ধ করেছে আমাকে। লেডি গাগার ভক্তদের  ব্র্যাকেটটা দেখতে অনুনয় করছি। ‘স্পটিফাই’ এপ্লিকেশনের ‘বিগ ডাটা’র ক্লাউড থেকে কোটি মানুষের প্লে-লিস্ট দেখে তার পরবর্তী কনসার্টে কোন কোন গান গাইবেন তা ঠিক করতে পারাটা কিন্তু উচ্চমার্গের। ভক্তরা তার ব্যক্তিগত সময়ে ফোনে বা পিসিতে গানের যে ‘একান্ত’ প্লেলিস্ট ব্যবহার করেন; সংগীতশিল্পী তার আন্দাজ পেলে ভক্তের মনের ভেতরে ঢোকা কষ্টকর নয়। নির্বাচন পূর্ব সার্ভে আর বিগ ডাটা সম্পর্কযুক্ত।

‘বাবা’, আমার মেয়ে দাড়িয়ে আছে হাসিমুখে ‘মা খেতে ডেকেছে, বাবা – গুহা থেকে’। ‘গুহা’ মেয়ের মা’র তৈরী করা আমার ঘরের [দেখতে কিন্তু স্টোররুমের মতো] সমার্থক শব্দ। এই শব্দটাও এসেছে বিগ ডাটা থেকে। চিন্তা করছি, মেয়ের মা আবার আমার ‘বিগ ডাটা’ কি না?

Read Full Post »

“The indispensable first step to getting the things you want out of life is this: Decide what you want.”

– Ben Stein (American Actor, Lawyer and Writer, b.1944)

৭৯.

নতুন লেখকদের মধ্যে অনেকেই বলে থাকেন বেস্টসেলার টাইটেল লেখার কথা। মানে, বেস্টসেলার টাইটেল লেখা ছাড়া জীবনই বৃথা। সেই বই বের না হলে কি লিখবেন না আপনি? আর সেই বই লিখবেন কবে – তার আছে কি ঠিক? আপনি কি সত্যি করে জানেন যে আপনার কোন বইটা সবাইকে কাঁপিয়ে দেবে? ওটা জানা যে কত দুস্কর – সেটা আর আপনাকে বলে দিতে হবে না নিশ্চয়ই। মানে হচ্ছে, বেস্টসেলার লিখতে যেয়ে অনেকগুলো বাজে বই লিখতে হবে আপনাকে – প্রথমে দিকে। বাজে বই লেখার সাহস থাকলেই লেখা হবে আপনার! শুরু করুন – প্রথম বাজে বইটা দিয়ে। দ্বিতীয়, তৃতীয় – চলতে দিন। বড় লেখকেরা লেখাকে তাদের কর্তব্যের মধ্যে ফেলে দেন। লেখেন কারণ ভালবাসেন লেখাকে, নো ম্যাটার হোয়াট! মনে করেন – লিখতেই হবে তাকে। মানুষ পড়ুক আর না পড়ুক!

৮০.

ভালবাসা থেকে মানুষ যে লেখেন তার প্রমান পাবেন আপনার আশেপাশে। পাবলিশিং হাউসের রিজেক্টশন স্লিপের পর স্লিপ নড়াতে পারেনি তাদের নিজের উপর বিশ্বাস থেকে। যারা নিজেরা বাগান পরিচর্যা করেন, তারা বাগানটাকে কিন্তু সন্তানতুল্য হিসেবে দেখভাল করেন দিনের পর দিন। অফিস থেকে ফিরে বিকেলেই পানির পাইপ আর ছোট নিড়ানি নিয়ে নেমে পড়েন তারা। কিসের জন্য করেন বলুন তো? ‘ভালবাসা আর মনের টান থেকে’ বললেন আপনি। “ভালো লাগে তাই” এই উত্তরটা দেবেন তারাও। মানসিক ফুলফিলমেন্ট থেকে এ কাজ করা। এটা করতে পছন্দ তাদের। ‘বাংলাদেশের সেরা বোটানিস্ট’ পুরস্কারের লোভের জন্যও করেন না তারা। এধরনের ধারনাও আসে না তাদের মনে।

৮১.

আমার মতো অনেক লেখক (নিজের অবস্থান পরিস্কার করছি, লেখক মানে যে লেখে অফিসের ফাইলনোট, বাজারের ফর্দ … ইত্যাদি) লেখে যান, অন্যের মতামতের জন্য অপেক্ষা করেন না তারা। মতামত পেলে ভালো – আর কেউ পড়লো কি পড়লো না তার জন্য চাতক পাখির মতো থাকেন না বসে। ভালো হলে পড়বেন অন্যেরা – আর না হলে সেটা হবে আরেকটা বাজে বই। বাজে বই লেখার আনন্দ আছে, কারণ বই লিখতে পারবো – আরেকটা! মন আনচান করছে এখনিই! আর যারা লেখেন ভালবাসা থেকে – নিজের সন্তুষ্টির জন্য, তারা যেতেই পারেন না ভুল পথে। লিখছেন গভীর অনুরক্তি আর ভালবাসা থেকে – তাদের প্রতিদিনের অনুশীলন, অধ্যবসায় আর প্রবল আকাঙ্ক্ষা লেখক না বানিয়ে যাবে কোথায়? আপনি হারতে পারেন না যখন আপনি লিখছেন প্রতিদিন – চর্চা আপনাকে করছে অপরাজেয়, প্রতিদিন! আপনিই বলুন, ভুল বকছি না তো?

লিখেছেন তো আজ?

Read Full Post »

“My inner critic who had begun piping up about how hopeless I was and how I didn’t know to write.” – Mary Garden

৭৭.

লেখতে গেলেই হবে ভুল। আর ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রথমেই কেউ বেস্টসেলার লেখেন না। হবু লেখকরা লেখার শুরুতে প্রচন্ড চাপে থাকেন। চাপ মানে যে সে চাপ না, বড় লেখক হবার চাপ। আর সে কারনে অনেকে শুরুই করতে পারেন না লেখা। মনে মনে চিন্তা করতে থাকেন লেখার কথা, আসল লেখা শুরু হয় না আর। যায়, মাস – বছর। তিন বছর। মানুষ নিজেই নিজের সবচেয়ে বড় ক্রিটিক। পারফেক্টশনিস্ট হতে যেয়ে ভেস্তে যায় সবকিছু। হবু লেখকদের তার ক্যারিয়ারের শুরুতে ভেতরের ক্রিটিকটাকে না মারতে পারলে সে আর পারবে না এগুতে। মেরে ফেলা মানে একেবারে গলা টিপে মেরে ফেলা। ন্যানোরাইমো মানে ‘ন্যাশনাল নভেল রাইটিংয়ের মাস’ (আগে লিখেছি এ ব্যাপারে, এক মাসের ভেতরে লিখতে হবে পঞ্চাশ হাজারের বেশি শব্দের উপন্যাস) প্রোগ্রামের ভেতরে বাচ্চাদের একটা বই দেখেছিলাম আমি। সেই প্রোগ্রামের ক্যাম্পে গল্প লেখার শুরুতে [ওই বইয়ের] প্রথম পাতায় দেয়া আছে একটা বড় চাবি টেপা বোতামের ছবি। ছবি লাগবে? বলে দিচ্ছি, বাচ্চাদের বই কিন্ত! তবে, তার পরের লেখাগুলো আরো সুন্দর! পড়ব?

৭৮.

উপন্যাস লেখার শুরুতে ছোট একটা কাজ করতে হবে যে বাবু তোমাকে। রেডি তো? বেঁধে ফেলতে হবে কিন্তু মনের ভেতরের ক্রিটিকটাকে। ঘ্যান ঘ্যান করা ছাড়াও প্রতি পদে পদে তোমার লেখার বারোটা বাজাবে সে। ঘাড়ের উপর দিয়ে বানান আর ব্যাক্যগুলোর ভুল বের করতে করতে পাগল করে ফেলবে তোমাকে। আর মাঝে মধ্যে ওর মুড খারাপ থাকলে পঁচাতে ওস্তাদ সে। সে চাইলে কিন্তু লেখা থেকে উঠিয়েও দিতে পারে সে, তোমাকে।

কথাটা শুনতে হাসি লাগলেও চোখ বন্ধ করো তো তোমরা। ভাবতে থাক তোমার ভেতরের ক্রিটিক মানুষটার কথা। বলতো, সে মেয়ে না ছেলে? দেখতে কেমন সে? হাতে কি তার ডিকশনারি? বাব্বা, অনেক ভেবে ফেলেছো দেখি! তোমাকে রুলার দিয়ে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নাকি সে? চোখ বন্ধ রেখে ওর পুরো ছবিটা মাথাতে পেয়েছো তো তোমরা? চোখ খোলো এবার! দেরী না করে নিচের সুইচটা চাপ দাও তো, বাবুরা!

story1

সতর্কীকরণ বাণী: সুইচটা চাপ দেবার সাথে সাথে তোমার ভেতরের ক্রিটিকটা বাবা বাবা বলে বের হয়ে যাবে মাথা থেকে। খপ করে ধরে ফেলবো ওকে – আর পাচার করে দেবো ক্রিটিক ধরার বোতলে। তার পর পাঠিয়ে দেবো আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রুফরিডিংয়ের কাজে। আমাদের ওয়েবসাইটে এখন অনেক কাজ! প্রমিস, ওকে ফেরৎ দেবো তিরিশ দিন পরে – উপন্যাস লেখার শেষে। উপন্যাস লেখার পর এডিটিংয়ের কাজে লাগবে কিন্তু ওকে।

অভিনন্দন, তোমাকে! সুইচটা চেপেছো ভালোমতোই কিন্তু। ভেতরের ক্রিটিকটা বিরক্ত করবে না আর তোমাকে। লিখতে থাকো মন খুলে!

Read Full Post »

“I went for years not finishing anything. Because, of course, when you finish something you can be judged.” – Erica Jong

৭৪.

মানুষ লেখে কেনো? নিজের মনের ধারণা অন্যের সাথে ভাগাভাগি করার জন্য হয়তোবা। মস্তিস্কে মাঝে মধ্যে যে আলোর ছটা মানে ইলুমিনেশন হয় তা নেভাতে দরকার লেখা। লেখা রয়েছে হাজার রকমের – আবার লেখার ধারাও আছে অনেক ধরনের, কে কোনটা লিখবে তা নির্ভর করছে যিনি লিখবেন তার উপর। আমি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নিয়ে লিখতে চাইতে পারি যদি সেটার ব্যাপারে আমার ব্যাপক ধারণা থাকে। ব্যাপক ধারণা থাকলেই যে সবাই সব কিছু লিখবেন তাও কিন্তু নয়। আমার লেখতে লাগে ভালো, আর সেই নিউক্লিয়ার সাবমেরিন বঙ্গোপসাগরে আসলে না লেখে যাব কই। তখন দরকার হবে বেশ কিছু বন্ধু যারা ছিলো সেই যন্ত্রদানবে। তাও সম্ভব এযুগে।

৭৫.

প্রশ্নে আসি, কি ধরনের লেখা পছন্দ করেন আপনি? চিন্তায় পড়ে গেলেন নাকি? হয়তোবা উত্তরটা আপনার জানা। আমি ‘হরর’ পছন্দ করি না বলে আমার দ্বারা ওটা লেখা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে, কোন ভুত কার ঘাড়ে কখন চড়বে তা তো আগে থেকে বলাটা দুস্কর। দেখা গেলো এই আমিই লিখছি পেত্নী কাহিনী। আর ‘রিং” এর ‘সামারা’র মতো আমার লেখা পেত্নী তাড়া করে ফিরছে আপনাদের। এইমাত্রই দেখছিলাম স্নোহোয়াইটের ‘মিরর মিরর’ মুভিটা, পুরোনো লেখাটাকে নতুন করে কিভাবে উপস্থাপন করতে হয় তা দেখতে ফিরতে হবে সব রূপকথাতে। আবার প্রতিটা রুপকথাই কিন্তু আসল ঘটনার প্রতিচ্ছবি মানে আসল জীবন থেকে নেয়া। আসল জীবনে ফিরতে অনীহা বলে মজা পাই রূপকথাতে। ফিরে আসি প্রশ্নে আবার। একটু ঘুরিয়ে।

কেন লেখতে চান?

৭৬.

রাইটিং ওয়ার্কশপে প্রথম প্রশ্নটা এধরনের হয় কিছুটা। সবাই শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রশ্নকর্তার দিকে। উত্তরটা এতটাই পরিস্কার যে তার উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করেননা অনেকে। ‘লিখতে ভালবাসি’ বলে উত্তরটা সবার মনে মুখিয়ে থাকলেও পরের প্রশ্নে সবার গোলকধাঁধা কেটে যায়। লেখতে যদি এতটাই ভালবাসেন তাহলে গত বছরগুলোতে লিখেছেন কি? ভালোবেসে কয়টা পান্ডুলিপি বের করেছেন আপনি?

সমস্যা এখানেই। ভালবাসি লিখতে, কিন্তু লিখতে বসা হয়নি ওভাবে।

Read Full Post »

“To write well, express yourself like the common people, but think like a wise man.” ― Aristotle

২১.

গল্প লেখার বই জিনিসটাই কেমন যেনো। গল্প লেখা শেখার জন্য বইয়ের দরকার আছে কি নেই, তা নিয়ে আলাপ হয়েছে অনেক আগেই। তবে প্রথম গল্প লেখার উপর বইটা কে লিখেছিলো তা নিয়ে আলাপ করতে গেলেই চলে আসে এরিস্টটলের ‘পোয়েটিকস’ বইটার নাম। গল্পে কি কি থাকে তার একটা ধারণা লিখেছিলেন খৃষ্ট জন্মের তিনশো পয়ত্রিশ বছর আগেই। গ্রিক থিয়েটারের নাটকগুলো দেখতে দেখতে গল্পের প্লট আর তার কাঠামোগত স্ট্রাকচারের উপর বেশ কিছু ধারণা পেয়ে যান এরিস্টটল। প্লট আর স্ট্রাকচারের উপর এই বইটা চলেছে হাজার বছর ধরে – লেখকদের মধ্যে। বইটা হারিয়ে গিয়েছিলো মাঝে – অনেক দিনের জন্য, পরে এটা পাওয়া যায় একটা আরবী ট্রান্সলেশন থেকে। ‘পোয়েটিকস’ এর গল্পের অংশের (কবিতা নয়) সারাংশ ধরলে যা হয় তা তুলে ধরলাম আপনাদের জন্য।

গল্পের ছবি

ক. প্রতিটা গল্পের একটা ‘শুরু’, ‘মাঝ’ আর ‘শেষ’ থাকবে। এই তিন ভাগ ছাড়া হবে না কোনো গল্প। গল্পের ঘটনা শুরুর কারণ আর তার পরিনতি আবার বইয়ের বাইরের কোনো ঘটনার উপর নির্ভরশীল থাকতে পারবে না। মাঝের অংশ মানে ক্লাইম্যাক্স যা আগের ঘটনাগুলোর উপর বা ওর নিজের অংশের উপর নির্ভর করতে হবে। এখানে সেটাকে টেনে লম্বা বা ছোট করা – পুরোটাই পড়বে গল্পকারের মর্জির উপরে। গল্পের ‘শেষ’ মানে রিজোল্যুউশন আগের ঘটনাগুলোর পরিনতি থেকে আসবে, তা আবার নতুন কোনো ঘটনার জন্ম দেবে না।

খ. প্লটকে হতে হবে সম্পূর্ণ, সবদিক থেকে। ছোট গল্পের মতো “শেষ হইয়াও হইলো না শেষ” হবার জো কম। অনেকগুলো ঘটনা মিলে প্লট হলেও সেই ঘটনাগুলোর প্রতিটির কিন্ত কারণ আর তার পরিনতি থাকবে। ঘটনাগুলো আবার পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঘটনার সিকোয়েন্স গল্পের প্রয়োজনে আসবে।

গ. গল্প আগানোর সাথে সাথে মূল চরিত্রের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতে থাকবে। সাধারণ প্লট থেকে জটিল অংশ গল্পের ভেতরে আনবে অশান্তি। গল্পের মধ্যে যতো প্যাচ, ততোই মধু। মানে, গল্পের মান বৃদ্ধি পাবে। কোথায় যেনো পড়েছিলাম, গল্পের চরিত্র পড়বে যতো বিপদে, লেখক থাকবে ততো আনন্দে। জটিল প্লটে দু ধরনের অবস্থা হতে পারে যা তৈরী করবে আসল চমক। প্রথম অবস্থায় গল্পের নায়ক (নায়িকাদের ক্ষেত্রে ঘটবে কি বেশি?) করতে চাইলো কাজ একটা ফল হলো উল্টাটা। স্পাইডারম্যান চায় ভালো করতে মানুষের, আর শহরবাসী ভাবে আরেকটা। পরের অবস্থায় এমন কিছু ঘটনা ঘটবে যা হবে নায়কের অজ্ঞাতসারে। পাঠক জানবে সেটা আর উসখুস করতে থাকবে পুরো সময়।

Read Full Post »

It’s none of their business that you have to learn to write. Let them think you were born that way.

– Ernest Hemingway

৬৭.

বই লেখার খরচ আছে কিছুটা। ধরে নিচ্ছি আপনি একদম নিখরচায় লিখছেন। তবে এই লিখালিখির সময় লেখকদেরও তো খেতে পরতে হয়। উঠতি লেখকদের দিনের কাজের পাশাপাশি লিখালিখির জন্য অপেক্ষা করতে হয় গভীর রাতের জন্য। স্বপ্ন দেখার বদলে স্বপ্ন সফল করার জন্যই হয়তোবা পরিবারের সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে বসতে হয় এই কাজে। বছরের পর বছর এটা কষ্টকর বৈকি। ছেড়ে দিতে হয় বড় কাজ, ছোট কাজ জুটিয়ে জেগে থাকেন লেখকরা স্বপ্ন নিয়ে। প্রতিষ্ঠিত হবার আগে সাহায্য নিতে পারেন সাধারণ মানুষের, যারা আপনাকেই তুলে নিয়ে আসবে অনেক মমতা দিয়ে – সাধারণের মাঝ থেকে। যেমনটা আমরা শুনে থাকি, জনগনই সকল ক্ষমতার উত্স! সত্যি কথা। এযুগে হাজার হাজার বই লেখা হচ্ছে এই ক্রাউডসোর্সিং এর মাধ্যমে।

৬৮.

ফিরে আসি আমার কথায়। ধরে নেই (ধরে নিচ্ছি কিন্তু!) আমি একটা বই লিখছি ‘মাইন্ডম্যাপিং’ নিয়ে। প্রাথমিক খরচপাতি যা লাগে দাড়া করালাম তার হিসাব। আপনার যেকোনো জটিল কাজকে চাক্ষুষভাবে ‘স্ট্রাকচার্ড’ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বের করে দেবার জন্য এই বইটা কিভাবে সাহায্য করতে পারে তার একটা সারসংক্ষেপ তৈরী করে ফেললাম এর মধ্যে। তারপর গেলাম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে। লিখলাম আমার পরিচয়, কেন দরকার হলো বইটা লেখার। বইটার ডেলিভারেবল – মানে বইটা কিভাবে সাহায্য করবে আপনাকে, তার বিত্তান্ত লিখে বা ভিডিও আপলোড করে জানিয়ে দিলাম সবাইকে। বোনাস হিসেবে আবার তুলে দিলাম প্রথম দু অধ্যায়। আমার এই কাল্পনিক ক্যাম্পেইনের কিছু উদাহরণ টেনে আনতে পারি আপনার সুবিধার জন্য।

৬৯.

২০ টাকা: ধন্যবাদ দেবো আপনাকে – ফেইসবুক বা টুইটারে।
৫০ টাকা: ‘মাইন্ডম্যাপ’ বইয়ের ফাইনাল ই-বুকের কপি পাবেন আপনি।
৬০ টাকা: পাচ্ছেন আমার অটোগ্রাফ করা ‘মাইন্ডম্যাপ’ বইয়ের ই-বুকের কপি ।
১০০ টাকা: ‘মাইন্ডম্যাপ’ বইয়ের প্রিন্ট কপি, মানে আসল বই।
১৫০ টাকা: আসল বই, আমার অটোগ্রাফসহ।
৩০০ টাকা: স্কাইপে দশ মিনিটের একটা কল – আমার সাথে। (১৫০ টাকার সুবিধাসহ +)
১,০০০ টাকা: + ধন্যবাদ দেবো বইয়ের “কৃতজ্ঞতা” সেকশনে।
৫,০০০ টাকা: + বসতে পারি একটা কফিশপে, আপনার সাথে।
১০,০০০ টাকা: + বইটার একটা চরিত্রই হতে পারে আপনার নামে।

৭০.

বুঝতে পারছি মন খুব খারাপ হয়ে গেছে আপনার। মানতেই পারছেন না মন থেকে। এগুলো করতেই হবে – বই লেখার জন্য? আচ্ছা, মন থেকে ফেলে দিন উপরের উদাহরণ – একেবারই। ফিরে আসি ‘ক্রাউডফান্ডিং’য়ে। ‘কেইলী’ গানটার কথা মনে কি আছে আপনার? পাগলকরা (এখনো পাগল আমি) এই গানটা এসেছিলো ব্রিটিশ ব্যান্ড ম্যারিলীয়ন থেকে। অথচঃ এই ব্যান্ডের পুরো ইউএস টুরের টাকা তুলে দিয়েছিলো তার ভক্তরাই। সাতানব্বই সালের দিকে এই ভক্তকুল ইন্টারনেটের মাধ্যমে তুলে দিয়েছিলো ষাট ষাট হাজার ডলার! আর এতে ছিলো না ব্যান্ডের কোনো যোগসূত্র। ক্রাউডফান্ডিং। হ্যাঁ। উনিশশো নিরানব্বই সাল থেকে আমার পিসির প্রসেসরের ক্রান্চিং পাওয়ার ভাগাভাগি করে নিচ্ছি ‘সেটি@হোম’ প্রজেক্টের সাথে। সবার প্রসেসরের মিলিত কাজের ফল পাচ্ছে ‘সেটি’, বার্কলির ‘সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ প্রজেক্ট। আরো জানতে দেখুন ‘কন্টাক্ট’ মুভিটা।

৭১.

আঠারশো চুরাশি সালে মার্কিন জনগণ এক ডলার করে চাঁদা দিয়ে তৈরী করে দিয়েছিলো স্ট্যাচু অফ লিবার্টির বেদীটা। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে ষাট লক্ষ্ ইউসেজ আর তার বাক্যের উদাহরণ যোগান দিয়েছেন কিন্ত সাধারণ মানুষ, প্রায় সত্তুর বছর ধরে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সবার মতামত চাওয়া হয়েছিল তখন। আমাদের দেশেও অনেক উদাহরণ আছে এরকম। মানুষের জন্য মানুষ করে বলেই মানুষ বড় কোনো অসুখে পড়লে তার বন্ধুরাই পত্রিকার মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন। ‘টু কিল আ মকিং বার্ড’এর বই বা মুভিটা আজকে পেতাম না যদি না তার বন্ধুরা চাঁদা তুলে তার এক বছরের খরচ তুলে দিতেন। নেলী হার্পার লী ছিলেন ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সামান্য কেরানী – যিনি লিখতেন কাজের ফাঁকে। লেখার জন্য চাকরি ছেড়ে যেতে হয় সস্তা এপার্টমেন্টে। এই বইটা আজ অবিশ্বরনীয় হয়ে আছে। এটিকাসকে মনে রাখবে যারাই পড়েছে বইটা।

৭২.

ইন্টারনেটের যুগে এই ‘ক্রাউডফান্ডিং’ পাল্টে গেছে ‘ক্রাউডসোর্সিং’ নামে। যা করতে চান, বলুন মানুষকে। মানুষ মানে আমরা তুলে দেবো টাকা, লিখুন গান, চিত্রনাট্য অথবা তৈরী করুন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র। সবই সম্ভব। বিনা পয়সায় বিশ্বভ্রমন, তাও সম্ভব। বইয়ে আসি ফিরে। আমার অনেক বন্ধুকে লেখক বানিয়ে ছেড়েছে ব্রিটিশ সাইট আনবাউন্ড। একটু ঘুরে আসুন সাইট কিকস্টার্টারে। আগেই বলে দিচ্ছি, মাথা কিন্তু দেবে ঘুরিয়ে। একাধারে চলছে চল্লিশ হাজারের মতো প্রজেক্ট (বই বা অ্যালবাম বের করা হচ্ছে এক একটা প্রজেক্ট)| দুহাজার নয় থেকে চল্লিশ লক্ষ মানুষ তুলেছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো। জি। বাংলাদেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিটা কিভাবে আমাদের জীবনযাত্রা পাল্টে দিচ্ছে তা আমাদের বাসার গৃহকর্মীকে দেখলে বোঝা যায়। ‘বিকাশ’ গুগলের মতো ক্রিয়াপদে পরিনত হচ্ছে। প্লাস্টিক মানুষের হাতে হাতে আসছে চলে। মানুষ দেবে টাকা – লেখার জন্য। সত্যি বলছি। লিখুন নিজের জন্য। অন্যের জন্য নয়। আপনাকে আপনি পরিতৃপ্ত করতে পারলে অন্যকেও পারবেন।

৭৩.

অনুরোধ রাখবেন কি একটা? জ্ঞান চালাচালি করতে পারাটা এই ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তবে, অন্যের বই পয়সা না দিয়ে পড়াটা অন্যায়। আমি বই কিনে পড়লে অন্যেরাও পড়বেন আমারটা।

লিখছেন? মাঝরাতে না তো?

Read Full Post »

“Writing is like pros*itu*ion. First you do it for love, and then for a few close friends, and then for money.” – Moliere

৬৪.

লেখা নিয়ে লিখতে যেয়ে কয়েকজন এর খরচপাতির কথা বলেছেন। মানে, বই লিখতে গেলে কাজ ছেড়ে দিতে হতে পারে। আর কাজ ছেড়ে দিলে খাব কি? অল্প বয়সে বাবা মার হোটেলে থাকলে কিছুদিন চেষ্টা করা যেতে পারে লেখালিখির, তবে বেশিদিনের জন্য গ্যারান্টি থাকার কথা নয় তার। সবাই প্রায় পাশাপাশি একটা ছোটখাটো চাকুরী জুটিয়ে রাখেন, পেটে ভাতেও হলে চলে। যখন তার লেখা মানুষের নজরে আসে, তখন কিছু আয় আসতে পারে বলে ধারণা করা যায়। তবে, লিখে জীবনধারণ করার ব্যাপারটা কিছুটা কষ্টকর। বছরে একটা দুইটা বই বিক্রি করে তা প্রায় অসম্ভব বটে। এর বেশি লেখতে গেলে কাজ ছেড়ে দিতে হতে পারে। কাজ ছেড়ে দিয়ে পুরো সময় লিখলে সংসার চালানোর আনুষঙ্গিক খরচ আসবে কোথা থেকে?

৬৫.

তবে, বই লেখতে চাইলে ঠেকাবে কে আপনাকে? আপনার বই লিখবেন আপনি, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলে টাকাও কোনো সমস্যা নয়। একসময় ছোটগল্প পড়তাম বেশ। নতুন বা পুরোনো লেখকদের ছোটগল্প বিক্রি করতো আমাজনে উনপঞ্চাশ সেন্টে। মানে, পুরো টাকাও নয়, পয়সায়। সেটা পড়তে পারতাম মুহুর্তে, পোর্টেবল ফরম্যাটে। মানে ফেলো কড়ি, পড় গল্প। আমাজন শর্ট নেই আর। এখন এসেছে কিন্ডল ডাইরেক্ট পাবলিশিং (কেডিপি), মানুষকে লেখক বানানোর ব্রত নিয়ে নেমেছে, আমাজন। মানুষ যতো পড়বে আর লিখবে, ততো বড় হবে মানুষ। মানুষ পাবে অমরত্ব। অমরত্ব মানে লাইফ এক্সপেক্টেনসি বাড়ছে মানুষের। ‘টেডটকস’ দেখে বোঝা যায় জ্বীনতত্ত্ব মানুষকে পাল্টে দিচ্ছে কিভাবে – আর দশবছর কোনো রকমে পার করতে পারলে রোগকে জয় করবে কে তা নিয়ে আসব আবার। আবার বেশি বাঁচলে মানুষ তার বাড়তি সময়ে কি করতে চাইবে? অমরত্ব পাবার জন্য মানুষ মানুষের জন্য ভালো না করে যাবে কোথায়? মনুষত্ব আসতে থাকবে ফিরে ফিরে। ফিরে আসি কিন্ডলে। কম্পিউটারে পড়তে লাগে না ভালো – আবার কাগজের বই অর্ডার (আমাদের দেশে অনেকগুলো বইয়ের অনলাইন সাইট আছে) দিয়ে ধৈর্য ধরে বসে থাকা কষ্টকর, গুনতে হয় দিনের পর দিন।

৬৬.

ই-বুক রিডার পাল্টে দিয়েছে মানুষকে। পাল্টে দিয়েছে আমাকে। আমি কাগজের বই ছাড়া কোনো কিছুই পড়তে পারতাম না, চোখে সমস্যা থাকার কারণে। ট্যাবলেট তো নয়ই। প্রযুক্তিগত ভাবে ই-ইন্ক কাগজের মতো পলিমারের নিচে প্রয়োজন মাফিক কালো সাদা করে ইলেকট্রনিক ফ্লো দিয়ে। সাধারণ ডিসপ্লের মতো এটা থেকে বিচ্ছুরিত হয় না কোনো আলো। অন্য বইয়ের মতো, যতো বেশি আলো ততোই পড়তে আরাম। আর নেই কোনো গ্লেয়ার। বন্ধ অবস্থায় কাগজে শেষের পাতাটা ভেসেই থাকে সবসময়ের জন্য। এক চার্জে যায় নিদেনপক্ষে – দু মাস। আমাজনের মতো বড় বড় বইয়ের দোকানগুলো এই যন্ত্র এতই সস্তায় দিচ্ছে যে না কিনে যাবেন কোথায়? কারণ এ-রিডার যতো মানুষের কাছে থাকবে ততো বিক্রি হবে ই-বুক। ধারনাটা কিছুটা রেজরের মতোই, দাম অনেক কম – ভর্তুকি দিয়ে, যাতে ব্লেড বিক্রি হয় বেশি। ভালো ই-রিডারের দাম ষাট ডলারেরও কম। ঢাকাতেও যায় পাওয়া।

৬৫.

আমার কিন্ডলটা ধার পেয়েছি বোনের কাছ থেকে। ক্যানাডায় থাকা ভাই গিফট কার্ড (মোবাইলের টপ-আপের মতো) পাঠালে আমার আমাজনের একাউন্টে ‘রিডিম’ করলে পায় কে আমাকে। কোটি কোটি নতুন বইয়ের মধ্যে হাবুডুবু না খেলে ভালই লাগে না ইদানিং। আগে বইয়ের জন্য হা-হুতাশ করতে হতো মাসের পর মাস, কে আসবে কবে। বই কেনা যাচ্ছে সেকেন্ডে। বই পড়ে ভালো না লাগলে পয়সা ফেরৎ। যদিও এপথে হাটি নি কখনো। বই কেনার আগে দুই তিন অধ্যায় পড়া যায় বিনামূল্যে। কাজেই প্রশ্ন আসে নি ফেরৎ দেবার। বই পড়ার সময় আঁকাবুকি করা আমার চিরকালের অভ্যাস, ইলেকট্রনিক হাইলাইটিংটা আমার জন্য গডসেন্ড! কোনো বই পড়তে গেলে ভালো ভালো লাইনে হাইলাইটিংগুলো আসতে থাকে স্বয়ংক্রীয়ভাবে। ওই লাইনটা কত হাজার বার হাইলাইটিং করা হয়েছে তা সহ, কারণ ওই বইটা আমার সাথে পড়ছে বা পড়েছে কোটি লোক। এর ভেতরে রাখা যায় হাজার বই, প্রতিটার আলাদা বুকমার্কসহ। এই যন্ত্রের বন্ধ বা চালুর কিছু নেই, থেকে যায় শেষ পাতা।

৬৬.

সব মানুষকে সব কিছু পছন্দ করতে হবে – এটাই বা লেখা আছে কোথায়? আমি নিজেও কাগজের বই পেলে বর্তে যাই। নতুন বইয়ের গন্ধ – আর কিছু বলতে হবে? তবে পুরোনো বই পছন্দ আমার – সংগত কারণে। সাইডলাইনে অজ্ঞাতনামা আঁকিবুকি মনকে কেনো জানি করে দেয় এলোমেলো। কাগজের বইয়ের চাহিদার থাকার কারণে অন-ডিমান্ড পাবলিশিংয়ের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। অর্ডার করবেন বই, দশ মিনিটে প্রিন্ট করে পাঠিয়ে দেবে আপনাকে। পাশাপাশি টাকা পয়সা ছাড়া বই লেখার “ক্রাউডফান্ডিং’ পদ্ধতি নিয়ে আসছি সামনে। না লিখে যাবেন কোথায়?

লিখছেন তো? দিনে তিনশো পঞ্চাশ শব্দ?

Read Full Post »

“I’m sorry Mr. Kipling, but you just don’t know how to use the English language.”

One rejection letter to Nobel laureate Rudyard Kipling who wrote ‘The Jungle Book’.

৬১.

‘দ্য গ্রীন মাইল’ মুভিটা দেখে থাকলে স্টিফেন কিং নামটা ভোলার কথা নয়। সত্যি বলতে, ‘ড্রিমক্যাচার’ বই আর মুভিটা কম খ্যাতি দেয় নি তাকে। আমেরিকাতে এই ‘কিং’ এক কথায় ফ্যান্টাসির কিং বটে। লেখতে চাই বললেই যে বইটা পৃথিবীর সবাই দেখিয়ে দেবে সেই ‘অন রাইটিং’ বইটা কিন্তু এই কিং সাহেবেরই লেখা। নিউ ইয়র্কের সেই রাইটিং ওয়ার্কশপে মনের ভুলে বইটা কোথায় পাওয়া যায় জিগ্যেস না করতেই পরের দিন বইটার ছয় ছয় কপি পেয়েছিলাম! তার প্রথম বই “ক্যারি’ লেখার পর ডজন খানেক রিজেকশন স্লিপ পেলেও তা পরম যত্নে ঝুলিয়ে রেখেছেন তার শোবার ঘরে। তার মধ্যে একজন বলেছিলেন,

“নেতিবাচক আকাশকুসুম সাইন্স ফিকশনে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। বিক্রি হয় না সেগুলো।”

৬২.

বিখ্যাত ব্রিটিশ এসপিওনাজ লেখক ‘জন ল্যা ক্যারে’ ছদ্দনামে লেখা শুরু করার পেছনে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থায় এমআই ফাইভ আর এমআই সিক্স ক্যারিয়ার জিওপারডি করতে চান নি। তার প্রথম বা মতভেদে তৃতীয় পান্ডুলিপি ‘দ্য স্পাই হু কেম ইন ফর্ম দ্য কোল্ড’ জমা দেবার পর এক পাবলিশার আরেকজনের কাছে পাঠানোর সময় লেখেন,

“স্বাগতম জন ল্যা ক্যারেতে (মনে হচ্ছে নামেই শো!) – তার তো কোনো ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছিনা!”

জন গ্রিশামের বই আর তার মুভিগুলো গিলেছি একসময়। অসাধারণ শৈলী, গল্পের খাঁজে গল্প। ভালো ব্যাকস্টোরি। ফাস্ট পেসড, মানে গল্প কিভাবে আগে বাড়ে তা দেখতে হলে পড়তে হবে ‘আ টাইম তো কিল’| হারপার লী’র ‘টু কিল আ মকিংবার্ডের’ প্রচ্ছন্ন একটা প্রভাব এই বইটার উপর থাকলেও এর আবেদন আমার চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিলো বটে। সাদা দুজন বর্ণবাদী লোক দশ বছরের কালো আফ্রিকান-আমেরিকান হেইলিকে নির্মমভাবে ধর্ষণের পর গাছে লটকিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। গল্পটা এতটাই মানুষকে মুগ্ধ করেছিলো যে এর মুভিটা দেখেছে কোটি লোকে। আর, এই বইটা ফিরিয়ে দিয়েছিলো বারো বারোটা পাবলিশিং হাউস, সঙ্গে ষোলোজন এজেন্ট।

৬৩.

ক্যাচ টোয়েন্টি-টু পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছি কিন্তু দিন রাত! মানে, আপনি এক সমস্যা থেকে বের হবার জন্য যে কাজটা করলেন তা আরেকটা সমস্যা তৈরী করলো। আবার সেটা সমাধান করতে যেয়ে ফিরে আসলেন আগের জায়গায়। বোমারু বিমান চালক ‘জন ইওসারিয়ান’ অনেকদিন ধরে গ্রাউন্ডেড হতে চাচ্ছিলেন। বিপদজনক কমব্যাট ফ্লাইট চালাতে গিয়ে কম পাইলটই আসেন ফিরে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পাবার একমাত্র উপায় যদি ফ্লাইট সার্জন তাকে ‘পাগল’ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। আবার, ‘পাগল’ ছাড়া নিশ্চিত মৃত্যু জেনে কোনো মানুষই এই বিপদজনক কমব্যাট ফ্লাইট চালাতে চাইবে না। ‘পাগল’ হিসেবে মূল্যায়িত হবার জন্য মেন্টাল ফিটনেস সার্টিফিকেট চাওয়াটা আবার তার সুস্থতা প্রমান করে। মানে, মুক্তি নেই যুদ্ধে যাওয়া ছাড়া। এই ‘ক্যাচ টোয়েন্টি-টু’ কথাটার জন্মদাতা মার্কিন লেখক জোসেফ হেলারকেও পাগল ঠাউরেছিলো তার এডিটর। তার ভাষায়,

“কোনো ধারণাই পাচ্ছি না কি বলতে চাইছে সে [হেলার]| লেখক মনে হয় মজা করতে চাইছে, নাকি স্যাটায়ার – কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক লেভেলের জন্য এই ‘কৌতুক’ মার্কা লেখা প্রযোজ্য নয়।”

Read Full Post »

Older Posts »