Ordinary life does not interest me. I seek only the high moments. … I want to be a writer who reminds others that these moments exist.
― Anaïs Nin
The aim of life is to live, and to live means to be aware, joyously, drunkenly, serenely, divinely aware.
― Henry Miller
১৮৩.
বইয়ের দোকান পেলে হুঁশ থাকে না আমার। এইটা কিনি ঐটা কিনি। অনেক বইই পড়ে রেখেছি অর্ধেকটা – পড়বো পড়বো করে পড়া হচ্ছে না। গল্পটার শুরু ‘রু দু রিভোলি’র রাস্তাটা থেকে। প্যারিসের নামকরা রাস্তা বলে কথা। পৃথিবীর সবচেয়ে ফ্যাশনেবল রাস্তাগুলোর মধ্যে এই নামটা এসেছে নেপোলিয়ানের বিখ্যাত একটা জয় থেকে – অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। রিভোলীর যুদ্ধটা হয়েছিলো সেই সতেরোশো সাতানব্বইতে। মুখ ঝুলে পড়া বড় বড় ব্র্যান্ডশপের মধ্যে চোখ ঠিকই খুঁজছে বইয়ের দোকান। উইন্ডোশপিং আমার ফেভারিট পাস টাইম!
১৮৪.
পাগল নাকি? বইয়ের দোকান আছে নাকি পৃথিবীতে? মনে নেই আমাদের নিউ মার্কেটের বইয়ের দোকানগুলোর কথা?
কথাটা ফেলে দেবার মতো নয়। তবে ফ্রেঞ্চদের কথা আলাদা। এরা জার্মানদের মতো প্রচুর বই পড়ে। সেকারণে বইয়ের দোকানগুলো অনলাইন কোম্পানির ধাক্কায় উঠে যায়নি একেবারে। ‘রথ দেখা আর কলা বেচা’র মতো বই হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে কেনার আনন্দটা কি আর পাওয়া যাবে অনলাইন শপিংয়ে? এদিকে বইয়ের দোকান খোঁজার অ্যাপটা কাজ করছে ভালোই। কফিশপে ঢুকে কফির পাশাপাশি ওয়াইফাইটা চালু করতেই কয়েকটা নোটিফিকেশন এলো চলে। হায়রে, কানেক্টেড লাইফ। প্রথমটাই হচ্ছে গালিয়ানি, নামকরা বইয়ের দোকান – যার ব্যবস্যা শুরু নাকি পনেরশো বিশ সালে! রিভিউ পড়তে গিয়ে মাথা খারাপ হবার জোগাড়। কিসের কফি, কিসের কি – ডাম্পস্টার বরাবর গুগলি খেললাম। নিঁখুত আর্টিলারী শট! এক দৌড়ে হাজির দোকানের সামনে। পরিচয় হলো এস্তেলের সাথে, কিছুটা অকওয়ার্ড ভাবেই।
১৮৫.
‘আনাইস নিনে’র জার্নাল সমগ্রের কয়েকটা বই ওখান থেকে কেনা। এই ‘আনাইস নিনে’র রচনার সাথে পরিচয় হেনরি মিলারের মাধ্যমে। ছোটবেলায় ওর বইগুলো শেষ করলেও সেটার মর্মার্থ ধরতে পেরেছি কিছুটা বড় হয়েই। সমস্যা না থাকলে খোদ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে তার বইগুলো ব্যান থাকবে কেন? তাও আবার তিরিশ বছরের জন্য? নিষিদ্ধ জিনিস নিয়ে চোখ খুলে দিলে সমস্যা তো হবেই। সেখানে লিটারেরি মূল্য আছে কিনা সেটার বিতর্কে বসিনি আজ। বইগুলো ফিকশন ধরনের হলেও লেখায় তার লেখক জীবনের সংগ্রামী এক ‘আত্মজীবনী’ ফুটে উঠেছে। বইগুলো লিখেছিলেন এই প্যারিসে, পাবলিশ হয়েছিলো এখানেই। সাহায্য করেছিলেন এই আনাইস নিন। নিনের স্বামীর অস্বাভাবিক সহনশীলতা আর নিস্বার্থ ভালবাসা আমাকে ভাবিয়েছে অনেক। আর তার অফুরন্ত টাকা শুধু নিনকে নয়, হেনরি মিলারকে লিখতে সাহায্য করেছিলো। এই প্যারিসেই হেনরি আর নিনের বোহেমিয়ান লাইফস্টাইলের অনেকটাই এসেছে তার ষাট বছর ধরে লেখা এই জার্নাল সমগ্রতে। মাদাম বোভারীর ধারণাটা কিছুটা নিনের মতোই।
১৮৬.
নিনকে নিয়ে আরো গল্প নিয়ে আসবো সামনে। ফিরে আসি বরং হেনরি মিলারকে নিয়ে। ‘ট্রপিক অফ ক্যান্সার’ আর তার অন্য বইগুলো বের হয়েছিলো এই ফ্রান্সেই। যে যাই বলুক, তার লেখার অন্তরঙ্গতা আর সেটার অবার গতিই মুগ্ধ করেছে মানুষকে। এই প্যারিসেই যাকে চলতে হতো ভিক্ষাবৃত্তি করে – সে হয়ে গেল এক লিটারেরি নক্ষত্র। তার একটা বইয়ের কিছু অংশ হস্তগত হলো দিন কয়েক আগে। ‘হেনরি মিলার অন রাইটিং’ নামের এই মাথা খারাপ করা বইটার কিছু অংশ আনবো আজ। ইংরেজিতে লেখা ওই এগারোটা কমান্ডমেন্ট বাংলায় নামাচ্ছি আমার ধারণার উপর ভর করে। অনুবাদে বিশ্বাসী নই আমি। তার পার্সপেক্টিভটা আমাদের মতো করে এনেছি এখানে। এগারোটা কমান্ডমেন্ট কিন্তু লিখেছিলেন একেবারে নিজের জন্য। দেয়ালে ঝুলিয়েছিলেন কিনা জানা নেই।
ক. লিখতে হবে একটা জিনিস নিয়েই। ওটা শেষ না করে ধরা যাবে না অন্য কিছু। সয়নে স্বপনে ওটাই। নতুন জিনিস – একেবারেই নো নো! [মনে হচ্ছে পুরো একসেন্ট্রিক ধারণা, এসপার না হলে ওসপার! মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। এই না হলে হেনরি মিলার!]
খ. [ওই সময় মিলার লিখছিলেন ‘ব্ল্যাক স্প্রিং’ নামের বইটা, চমৎকার, কমপ্লিট ম্যাডনেস, পড়েই দেখুন] কোনো কিছুতে হাত দেয়া যাবে না ওই ‘ব্ল্যাক স্প্রিং’টা না শেষ করে। বইটাতে নতুন কোনো সংযোজনও কাম্য নয় এমুহুর্তে।
গ. নার্ভাস হবার কিছু নেই। কাজ করতে হবে ঠান্ডা মাথায়। মন ভালো করে। বল্গাহীন ভাবে, যা হাতে আছে সেটা নিয়েই।
ঘ. কাজ করতে হবে শিডিউল ধরে। মুড আছে কি বা নেই, সেদিকে দেখলে কোনো কাজই হবে না। সিডিউল ধরে বন্ধ করতে হবে কাজ। কাজ মানে বুঝেছেন তো? লেখালিখি।
ঙ. মাথায় কিছু না আসলে অথবা তৈরী না করা গেলে অন্য কাজ করো। [আমার ধারণা, এডিটিংয়ের কথা বুঝিয়েছেন উনি]।
চ. প্রতিদিন লেখার স্তরগুলো বাড়াও। রচনাশৈলীতে নতুন বুনন আনো। কাজে নিড়ানি দিলেই সমস্যা।
ছ. মানবিক হও। দেখা করো মানুষের সাথে। বুঝতে শেখো মানুষকে। ঘুরতে যাও বিভিন্ন জায়গায়। ভালোলাগার কাজগুলো করো। তুষ্ট করো নিজেকে।
ঝ. করতে হবে বলে কাজ করা, সেটা নয় অবশ্যই। কাজ করবে মজার সাথে। [(ঘ) এর সাথে এর কিছুটা ব্যতয় আছে। আমার ধারণা, কাজ করার মধ্যে সুখ না থাকলে লেখার কাজ চালিয়ে যাওয়া দুস্কর]
ঞ. লেখার এই প্রোগ্রাম ভালো না লাগলে ক্ষতি নেই। কিন্তু লেখার প্রোগ্রামটাতে ফিরতে হবে পরের দিনই। ন্যারো ডাউন করে আনো পরের দিনের কাজটা। মনোযোগ বাড়াও। ফেলে দাও বাড়তি অংশ।
চ. ইচ্ছা জাগে তো আরো অনেক বই লিখতে। ভুলে যাও ওকথা। মনোনিবেশ করো যেটা লিখছো সেটার উপর। নো পিকিং!
ছ. দ্রুত লিখতে হবে – সবসময়ই। লেখাই সব। ছবি আঁকা [মিলার নিজেই কিন্তু বিশাল পেইন্টার], বন্ধুসংস্বর্গ, গান আর সিনেমা আসবে সবার পরে।