Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘লেখালিখি’ Category

আমার চোখের সামনে বেশ দ্রুতই অনেকগুলো কাজই অটোমেট হয়ে যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এই কাজগুলোকে আমরা আগে হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির অংশ হিসেবে জানতাম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা এখন চলে আসছে অনেক “লো এন্ড” ডিভাইসে। তাহলে যারা এই মুহূর্তে কাজগুলো করছেন তাদের কি হবে?

এ ব্যাপারে আমি প্যানিক হবার কিছু দেখি না। আগে যেভাবে টাইপিস্ট পদ নিজে থেকেই কম্পিউটার অপারেটরে কনভার্ট হয়েছিলেন, সেই হিসেবে বর্তমান নলেজ ওয়ার্কাররাও রি-স্কিলিং এর আওতায় সামনের ভবিষ্যতকে সামলাবেন। তবে নতুন স্কিল অর্জন করা অনেকটাই “মাইন্ড গেম।” ট্রাস্ট মি!

AI will not replace individuals. But, people effectively utilizing AI as a tool to replace certain functions or roles will replace humans who don’t. নেটওয়ার্কের “লো হ্যাংগিং ফ্রুট” (বেসিক) কাজগুলো যেহেতু অটোমেশনের মধ্যে চলে যাবে, তখন অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়বে। এর অর্থ হচ্ছে একটা জব চলে যাবে, সেই জায়গায় আরো কয়েকটা জব তৈরি হবে। সেই জবের জন্য আমরা তৈরি তো?

* নেটওয়ার্ক অটোমেশন নিয়ে আমার আট নম্বর বই আসছে সামনে। সঙ্গে যোগ হবে প্রচুর ভিডিও “রোড টু হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি” সিরিজে।

একটা প্লেলিস্ট

Read Full Post »

সরকারে থাকার সময়ে ‘উন্নততর’ প্রযুক্তির জন্য একরকম প্রায় চষে ফেলেছিলাম প্রযুক্তিতে শীর্ষে থাকা দেশগুলোকে। তখন একটা ‘রিয়েলাইজেশন’ এলো, উন্নত বিশ্বের জন্য উন্নততর প্রযুক্তি যতটুকু দরকার, তার থেকে বেশি দরকার আমাদের দেশে। একমাত্র উন্নততর প্রযুক্তিই পারবে আমাদের সমসাময়িক সমস্যাগুলো মেটাতে। উন্নতর প্রযুক্তি এখন মানুষ থেকেও বুদ্ধিমান, কারণ মানুষই তৈরি করেছে ‘উন্নততর বুদ্ধিমত্তা’ যাতে মানুষের ভুলে সিস্টেমের যাতে ক্ষতি না হয়।

মানুষকে বের করে আনতে হবে ‘সার্ভিস লুপ’ থেকে। মানুষ কখনোই আরেকজন মানুষকে উন্নত ধরনের সেবা দিতে পারবেন না (বৃদ্ধ মানুষ ছাড়া)। সেটাই সত্য। উন্নত বিশ্বে ‘মধ্যম’ প্রযুক্তি (যেখানে এখনো কিছু মানুষ আছেন) থেকে যেই মাইগ্রেশনটা লাগছে, সেটা আমাদের দরকার পড়ছে না। এটাই ‘লিপ ফ্রগিং’ এর বড় সুবিধা। এছাড়া সবারই প্রযুক্তি জানার প্রয়োজন নেই, প্রযুক্তি জানবেন ডিজাইনাররা। বাকিরা হবেন প্রযুক্তির ব্যবহারকারী। জনগণ কথা বলবেন (সেবা গ্রহণ করবেন) সিস্টেমের সাথে। মানুষের সাথে নয়। মনে পড়ে, কবে শেষ দিয়েছিলেন আপনার ডিজিটাল ব্যাংকে?

আমাদের বিশাল জনশক্তিকে বিশাল স্কেলে, সময় মত সার্ভিস দিতে চাইলে উন্নততর প্রযুক্তি ছাড়া গতি নেই। উন্নত বিশ্বে পুরো দেশে যত মানুষ, তার থেকে বেশি মানুষ থাকেন আমাদের একটা শহরে। উন্নততর প্রযুক্তি ছাড়া সময় ক্ষেপন করা কাগুজে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এত মানুষের সেবা প্রদান সম্ভব না। যেকোনো এক মানুষের মর্জির উপরে বসে থাকতে হবে না একটা সেবা পাবার ক্ষেত্রে।

একজন মানুষ রাষ্ট্রের কাছে কি চান? ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা কিছুর প্রয়োজন সেটার যোগান তৈরি করে রাখবে রাষ্ট্র। সেগুলোকে শেষ বয়সে যোগান দিলে আবার হবে না, দিতে হবে সময় মতো। অন্ন, অস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থাৎ মধ্যম একটা লিভিং স্ট্যান্ডার্ড ‘মেনটেইন’ করার জন্য সুযোগ তৈরি করে দেবে রাষ্ট্র। যারা আরো বেশী কষ্ট করবেন তারা এগিয়ে থাকবেন মধ্যম স্ট্যান্ডার্ড থেকে।

সেই সুযোগের দশটা ‘এলিমেন্ট’ নিয়ে আমি লিখেছিলাম ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মানবিক রাষ্ট্র’ বইটা। বিশ্বাস করুন, উন্নত প্রযুক্তির প্রায় সবগুলো এলিমেন্টই আছে আমাদের দেশে। দরকার ‘বুঝদার’ সমন্বয়ের। দরকার একজন ডিজিটাল আর্কিটেক্টের, যিনি “ওরকেস্ট্রেট” করবেন এই ম্যাসিভ ডিজাইন। তবে শুরুতেই দরকার সব কিছুর সাথে ‘ডিজিটাল আইডেন্টিফিকেশনে’র ইন্টিগ্রেশন। ম্যাজিক টাচ বিগিন্স হিয়ার। দেশকে চালাবে বিশালাকার সফটওয়্যার, যেটা মানুষের স্বার্থ রক্ষায় আপসহীন।

• বইটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ‘ওপেনসোর্স’ ডোমেইনে। লিংক কমেন্টে। ডিজিটাল ফরম্যাটে ডাউনলোড করে পড়তে পারেন এখনই। নীতি নির্ধারণীতে থাকা আপনার প্রিয়জনকে উপহার দিতে পারেন প্রিন্ট বইটা, যেটা পাওয়া যায় রকমারিতে।

__

ওপেনসোর্স বই: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মানবিক রাষ্ট্র | Government Service Delivery Enhancement using Data

ডাউনলোড লিংক: https://lnkd.in/gytwaaHi

Read Full Post »

মনে আছে ক্লাসিফিকেশনস সমস্যার জন্য আমরা ব্যবহার করেছিলাম অ্যাকুরেসির একটা পরিমাপ? আমাদের সুপারভাইজার মডেল কেমন পারফর্ম করছে তার একটা সামারি বোঝা যায় এই অ্যাকুরেসি থেকে। ক্লাসিফিকেশন সমস্যার সবচেয়ে সহজ ব্যাপারটা আমরা দেখেছি বাইনারি ক্লাসিফিকেশন এ। মেশিন লার্নিং সমস্যায় এটা বেশ কমন এবং কনসেপচুয়ালি আমাদের কাজে লাগে। বাইনারি ক্লাসিফিকেশন মানে হচ্ছে সেটার আউটকাম হবে পজেটিভ অথবা নেগেটিভ। হ্যাঁ অথবা না। আমাদের মডেল কেমন ফাংশন করছে সেটা নির্ভর করবে এই পজিটিভ এবং নেগেটিভ ক্লাস কতটা ভুল করছে তার ম্যাট্রিক্স এ। তবে এখানে একটা কথা আছে – পজেটিভ মানে সেটা যে ভালো বা সেটা আমাদেরকে বেশি বেনিফিট বা ভ্যালু দেয় সেরকম না কিন্তু। এটা নির্ভর করবে আমরা কি ধরনের স্টাডি করছি এবং তার অবজেক্টিভ কি? আবার নেগেটিভ মানে যে খারাপ সে রকম নাও হতে পারে, এটা নির্ভর করছে আমরা কি ধরনের আউটকাম আশা করছি।

একটা গল্প দিলে বোঝা যাবে বেশি। আমার পাঠকেরা আমাকে বেশি গল্প দিতে বলেন।

ধরা যাক আমরা একটা অ্যাপ্লিকেশন ডেভলপ করছি যার কাজ হচ্ছে একজন সম্ভাব্য রোগীকে স্ক্রিনিং করে আলাদা করে ফেলবে তার সেই রোগটা আছে অথবা নেই। এটাকে কিছুটা অটোমেটেড আর্লি ডিটেকশন বলতে পারি যাতে সেই সম্ভাব্য রোগী পুরোপুরি অসুস্থ হবার আগেই তাকে ঠিকমতো ট্রিটমেন্ট দেয়া যায়। শুরুতেই যদি টেস্টটা নেগেটিভ হয় তাহলে আমরা ধরে নেব সম্ভাব্য রোগী সুস্থ আছেন। এর পাশাপাশি যদি এই স্ক্রিনিং টেস্ট পজিটিভ হয় তাহলে সেই রোগীকে আরও বাড়তি টেস্ট এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

কিভাবে এটা সমস্যা হলো?

এখানে আমরা পজিটিভ ক্লাসকে আসলে নেগেটিভ ধারণা বলতে পারি, কারণ একজন রোগী যখন পজিটিভ হবেন – সেটা আসলে রোগীর কাছে একটা নেগেটিভ জিনিস। আসল কথা কেউ এখানে পজিটিভ হতে চাইবেন না। বরং এই স্ক্রিনিং টেস্ট এর আউটকাম যদি নেগেটিভ হয় সেটাই রোগীর জন্য পজিটিভ। অর্থাৎ আমরা চাইব টেস্টে যত নেগেটিভ হয় ততই ভালো। তাই বলে যে আমাদের মডেল সব সময় ঠিকমতো পজেটিভ বা নেগেটিভ আউটকাম দিতে পারবে সেটাও না। যখন আমাদের অ্যাপ্লিকেশন সত্যিকারের পজিটিভকে নেগেটিভ অথবা সত্যিকারের নেগেটিভকে পজেটিভ বলবে তখনই সমস্যা হয়ে যাবে দুদিকেই। এই ভুল দুদিকে হলেও দুদিকেই দু’ধরনের কনসিকোয়েন্স আছে। হয়তোবা একটা ভুল থেকে আরেকটা ভুলের মাশুল দিতে হবে অনেক বেশি, তবুও আমরা চাইব না কোনভাবেই এই দুই ধরনের ভুল হোক।

সারাজীবন জেনেছি দুধরনের জিনিস হতে পারে। পরে জানবো ভেতরের জিনিস।

১. পজিটিভ (P): স্যাম্পলের অবজারভেশন পজিটিভ, যেমন রোগ আছে একজন মানুষের, সত্যিকারের রোগ

২. নেগেটিভ (N): অবজারভেশন নেগেটিভ, মানে তার আসলে রোগ নেই, স্বাস্থ্যবান মানুষ

বাড়তি গল্প

৩. ট্রু পজিটিভ (TP): সত্যিকারের পজিটিভ মানে আসলে রোগ আছে, এবং প্রেডিকশনও তাই, পজিটিভ – ঠিক প্রেডিকশন করেছে – ট্রু প্রেডিকশন

৪. ফলস নেগেটিভ (FN): সত্যিকারের পজিটিভ মানে অবজারভেশন পজিটিভ, কিন্তু প্রেডিকশন ভুল করেছে, ভুল করে নেগেটিভ দিয়েছে – ফলস প্রেডিকশন

৫. ট্রু নেগেটিভ (TN): আসলে নেগেটিভ, মানে আমাদের অবজারভেশনে নেগেটিভ, এবং প্রেডিকশন এসেছে নেগেটিভ – ট্রু প্রেডিকশন

৬. ফলস পজিটিভ (FP): আসলে নেগেটিভ, মানে অবজারভেশন নেগেটিভ, তবে ভুলে প্রেডিকশন এসেছে পজিটিভ হিসেবে- ফলস প্রেডিকশন

গল্পে গল্পে কি কি ভুল হতে পারে?

প্রথম ভুল হবে যখন একজন সুস্থ মানুষকে সেই অ্যাপ্লিকেশনটা পজিটিভ হিসেবে দেখাবে, তখন সেই মানুষটাকে রোগী বলবো এবং তাকে পরবর্তী কয়েকটা টেস্ট এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এতে সমস্যা দুটো। প্রথমত, সেই মানুষটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, দ্বিতীয়তঃ তার খরচ বাড়তে থাকবে নতুন টেস্টগুলোর জন্য। এই ভুল পজিটিভ প্রেডিকশন কে আমরা বলি ‘ফলস পজিটিভ’। এটাকে পরিসংখ্যানের ভাষায় আমরা বলি টাইপ ১ এরর।

তবে, দ্বিতীয় ভুলটি ভয়াবহ। একজন সত্যিকারের রোগীকে এই অ্যাপ্লিকেশন নেগেটিভ হিসেবে ক্লাসিফাই করবে, এর মানে হচ্ছে তাকে আর পরবর্তী নতুন কোন টেস্ট এবং তার অ্যাসোসিয়েটেড ট্রিটমেন্ট বাদ পড়ে যেতে পারে। এর ফলাফল সেই সত্যিকারের রোগীকে ভয়াবহ দিকে ঠেলে দিতে পারে। এ ধরনের ভুল যাকে আমরা বলছি ভুল নেগেটিভ প্রেডিকশন, তাকে আমরা মেশিন লার্নিং এ ভাষায় বলি ‘ফলস নেগেটিভ’। পরিসংখ্যানের ভাষায় আমরা এই ‘ফলস নেগেটিভ’কে বলি টাইপ ২ এরর।

এখানে কি চাইবো?

আমরা চাইবো যেকোনোভাবে যাতে আমাদের অ্যাপ্লিকেশন যত কম ‘ফলস নেগেটিভ’ দিতে পারে। ‘ফলস নেগেটিভ’ একটা ভয়াবহ জিনিস বিশেষ করে রোগের ক্ষেত্রে। সেই থেকে ‘ফলস পজিটিভ’ হলে আমরা সেই সুস্থ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব। তবে আমরা চেষ্টা করব যাতে দুটো ভুলই কমে আসে আমাদের এপ্লিকেশনে।

আমাদের কি করনীয়?

বাইনারি ক্লাসিফিকেশনকে ঠিকমতো ইভালুয়েট করতে হলে একটা ভালো কম্প্রিহেনসিভ গাইডলাইন হচ্ছে ‘কনফিউশন মাট্রিক্স’ ব্যবহার করা। যখন আমাদের ক্লাসিফিয়ের তার প্রেডিকশন এ কনফিউজড হয়ে ভুল করবে, তখন আমাদের জানা দরকার সে আসলে কোন ভুল করতে অন্য কি ভুল করে ফেলল? বাইনারি ক্লাসিফিকেশন না হলে যদি অন্যান্য ক্লাসিফিকেশন নিয়ে কাজ কাজ করতাম, তাহলে কি হতো? ধরা যাক আমরা ডিজিট রিকগনিশন মানে সংখ্যকে ঠিকমতো ক্লাসিফাই করতে পারছে কিনা সেটা দেখতে চাইছি। তখন আমরা দেখতে চাইবো সংখ্যা ১ আসলে মিসক্লাসিফাই হয়ে অন্য কোন সংখ্যায় রূপান্তর হচ্ছে, অথবা সংখ্যা ৬ কতবার ভুল করে সংখ্যা ৮ এর মত করে ক্লাসিফাই হচ্ছে। বেশি বলে ফেললাম?

আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা আপাতত বাইনারি ক্লাসিফিকেশন নিয়েই থাকি। যেহেতু বাইনারি ক্লাসিফিকেশন এর আউটকাম মাত্র দুটো, এর মানে হচ্ছে আমাদের কনফিউশন ম্যাট্রিক্সের দুটো সারি এবং দুটো কলাম থাকবে। আমরা এভাবে বলতে পারি এটা একটা ২ বাই ৩ অ্যারে, যেখানে সারিগুলো রিপ্রেজেন্ট করছে সত্যিকারের আসল ক্লাসকে। ছবি দেখুন, মোট চারটা সেল। আমাদের কলামগুলো রিপ্রেজেন্ট করছে প্রেডিকটেড ক্লাসকে। এখানে প্রথম কলামে কতগুলো পজিটিভ স্যাম্পলকে পজেটিভ অথবা নেগেটিভ হিসেবে প্রেডিক্ট করেছে। এরপরের কলামে আমরা দেখব কতগুলো নেগেটিভ স্যাম্পলকে ভুল করে পজেটিভ অথবা নেগেটিভ হিসেবে প্রেডিক্ট করেছে।

আমরা হাতেকলমের মানুষ, দেখি হাতেকলমে।

https://github.com/raqueeb/Intermediate-scikit-learn/blob/master/book_plot_confusion_matrix.ipynb

Read Full Post »

কি ডিসিশন নিয়েছেন আপনারা?

ডক্টর তাকিয়ে আছেন মামুনের দিকে। দাড়িয়ে ও। ওকেই প্রশ্ন করেছেন আমাদের ডক্টর। আমার দিকে তাকিয়েছিলেন একবার। এক সেকেন্ডের মতো হবে হয়তো। ভেতর দিয়ে দেখার মতো। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘সি থ্রু মি’। ঘরে মানুষ না থাকলে যেভাবে তাকায় সবাই। অথবা তাকাচ্ছেন না ইচ্ছে করেই। কোন একটা কারণে। পলক পড়ছে না মহিলার।

রাস্তা খোলা তিনটা। আমাদের সামনে। এ মুহুর্তে। খারাপ সবগুলোই। সময় দেয়া হয়েছে দশ মিনিট। দশ মিনিটের ওই সিদ্ধান্ত পাল্টে দেবে আমাদেরকে। সারাজীবনের জন্য। এতোই কমপ্লেক্স ব্যাপারটা – মনে হচ্ছে, ডক্টরের সারাজীবনের পড়াশোনার মুখোমুখি দাড়িয়ে আমরা।

শেষ হয়ে গেছে ওই মিনিট দশ। কিছুক্ষণ আগেই।

***

দশ দিন আগের ঘটনা। প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছিলো আমার। হঠাৎ করেই।

‘ঘাবড়াবেন না তো এতো!’ বলেছিলেন আরেক ডক্টর। ‘প্রেগন্যান্ট মহিলাদের কমন সিম্পটম জিনিসটা।’ কয়েকটা পরীক্ষা দিলেন বরং। আমাকে।

এতো ঘাবড়ালে মানুষ করবেন কি বাচ্চাদের? মনে হলো, সাহস দিলেন মামুনকে। ওই ডক্টর। আসলেই ঘাবড়ে গিয়েছিলো মামুন। এতো বিচলিত হতে দেখিনি আগে ওকে।

আলট্রাসাউন্ডের রেজাল্ট পারফেক্ট। হার্ট মনিটরেও এলো সবকিছু। ভালো। ভালো সবই। তবে ভালো ছিলো না কিছু একটা।

দশ ঘন্টা আগে ধরা পড়ল সমস্যাটা। ঠিকমতো সাপ্লাই পাচ্ছে না। বাচ্চা দুটো। আমার প্ল্যাসেন্টা থেকে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওজন বেড়েছে আমার। বিশেষ করে তলপেটের ওজন। ফুলেছেও বেশ। ব্যথা অনেক বাড়লেও বলিনি মামুনকে। কাঁদছিলাম মাঝে মধ্যেই। একা একা। নিতে পারছিলাম না আর। ধরে ফেললো মামুন এক রাতে।

কি করবো আমরা? জিগ্গেস করেছিলো মামুন। ‘আপনি আমার মেয়ে হলে’, ডাক্তার তাকালেন আমার দিকে। এবার ভালোভাবে। দম নিলেন কয়েক সেকেন্ড। ‘বলতাম টার্মিনেট করতে।’

দশ মিনিট আগের ঘটনা। আমাদের নতুন স্পেশালিস্ট মহিলা বুঝিয়েছিলেন ব্যাপারটা। এক বাবুমনি পাচ্ছে যা, অন্যজন পাচ্ছে না সেটাও। আমার নাড়ি থেকে। ব্যাপারটা এমন – একজন বাঁচলেও পারবে না পরের বাবু। স্টেজ তিন চলছে। চার হলে শেষ সব। মারা যাবে দুজনই।

দুটো জিনিস হতে পারে আমাদের সামনে। ইশারায় হাত দিয়ে দেখালেন ডক্টর। ‘অ্যাবর্ট করতে পারি আমরা। একজনকে।’ চোখ সরিয়ে নিলেন আমার থেকে। উপচে এলো আমার কান্না। ‘আশা করছি’ দম নিলেন মহিলা, ‘এই সিলেক্টিভ টার্মিনেশনে নরমাল লাইফ পাবার সম্ভাবনা আছে একটা বাচ্চার।’ আটকাতে পারলাম না আর।  হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আমি। ধরে রইলো মামুন আমাকে। শক্ত করে।  

‘শেষ চেষ্টা হিসেবে সার্জারির একটা অপশন আছে আমাদের। রিপেয়ার করার চেষ্টা করতে পারি আপনার প্ল্যাসেন্টাকে। যদি বাঁচে দুজন ..’ থামলেন ডক্টর। ‘তবে, সেটা ঠিক না হলে বিপদের সম্ভাবনা বেশি। বিপদে পড়বে সবাই।’ তাকালেন আমার দিকে। বুঝলাম আমি। স্ট্রেস দিলেন শেষে। ‘মা সহ’।

মামুন তাকালো আমার দিকে। বোঝা গেল রাজি না সে। সার্জারিতে। ডক্টর জানালেন, আমরা সার্জারি চাইলে করতে হবে তাড়াতাড়ি। আজই।

‘কথা বলুন আপনারা’ উনি বললেন, ‘দশ মিনিট পর আসছি আমি। জানাবেন কি চাচ্ছেন আপনারা?’ বেরিয়ে গেলেন ডক্টর।

বাবু দুটোই আমার ভেতর। দুজনের নড়াচড়ার রিদম বুঝতে পারি আমি। ডক্টর দুটো রাস্তার কথা বললেও আমি দেখছি না কিছু। বাচ্চাদের ছবি ভাসছে এখনো। সামনের স্ক্রিনে। সেগুলোর প্রিন্টআউটও আমাদের হাতে। ১৮ সপ্তাহেই চলে এসেছে তাদের চেহারার অবয়ব। এক বাবুর নাক দেখা যাচ্ছে। ভালোভাবে। হাতের শেপও দেখা যাচ্ছে চিবুকের কাছে। মনে হচ্ছে ভাবছে কিছু। বাবুটা। শেপগুলো মুখস্ত আমার। দেখছি তো কয়েকদিন ধরে। গেঁথে গেছে মাথায়।

কাঁদছে মামুন। ধরে আছে আমাকে। শক্ত করে। ও বুঝে গেছে এর মধ্যেই। মানুষকে বুঝতে পারে  ও দেখেই। ব্যতিক্রম হয়নি এখানে। ও বুঝতে পারছে কি ঘুরছে মাথায় আমার। মানা করছে আমাকে। বার বার।

জেদি নই আমি। সবাই জানে সেটা। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ আমাদের। বিয়ের আগেই বলেছিলো ওর সমস্যার কথা। চোখের। আমার বাবা মাকে। সবাই সরে গেলেও সরিনি আমি।

হাত ছাড়ছে না মামুন। চোখ মুছলো ও। তাকালো আমার দিকে।

আরেক হাত বাড়ালাম ওর দিকে। ধরতে ওকে। দুহাতে। এতো নিশ্চিত মনে হয়নি আমার কখনো। এই নিজেকে।

বললাম, ‘খবর দাও ডক্টরকে। তৈরি আমি।’

Read Full Post »

Sometimes even to live is an act of courage.

― Seneca

এটা সত্যি, চাপ বেড়েছে আমাদের ওপর। মানসিকভাবে। হাজারো জিনিস চলছে আমাদের আশেপাশে। একসাথে। এটাও ঠিক, মুহুর্তে জানতে পারছি সবকিছু। এই দুনিয়ার। ইন্টারনেটের কল্যাণে। তবে, সবকিছুই কেমন জানি বেশি বেশি। কথা ছিলো, প্রযুক্তির সাহায্য করবে আমাদের। উল্টোটা নয়। আমরা ডিক্টেট করবো প্রযুক্তিকে। কি কাজ দরকার। কিন্তু, প্রযুক্তি যদি পেয়ে বসে আমাদের? উল্টাপাল্টা করে ফেলে আমাদের জীবনকে?

রিসার্চ বলে, সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ নিতে পারে না আমাদের সন্তানেরা। নিতে পারার কথাও না। বড়রাই পারে না। ‘কগনিটিভ রিসার্চ’ বলে, ২১-২৪ বছরের আগে ‘ভালো মন্দ’ আর ‘রিজনিং ক্যাপাবিলিটি’ তৈরী হয় না মানুষের মাথায়। সেখানে হাজারো ফীড নিতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের সন্তানদের। কেউ কেউ বলবেন, সার্ভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট। যে টিকবে সে থাকবে। মানছি না সেটা। ওদেরকে তৈরি করবো আমরা। ‘ও যে টিকবে’ সেই ভাবধারা তৈরী করে দেবো আমরা। আর সেটা দিতে হবে আমাদেরই। বাচ্চাদের পাড়ার মানুষ বকুনি দিলে যেভাবে আগলে রাখি, ওই নিয়মও চলবে সোশ্যাল মিডিয়াতে।

অন্য রোগের মতো মানসিক সমস্যাও সেরে যায় পরিচর্যা পেলে। খুব ভালোভাবে। সোশ্যাল মিডিয়ার ‘কনস্ট্যান্ট’ ফীড নষ্ট করে দেয় কাজ করার স্পৃহা। পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ তার পুরো সময়ের কোন না কোন সময়ে ‘ডিপ্রেশন’য়ে ভোগে। এটাই স্বাভাবিক। মানুষের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে হিসেব না মিললে হতেই পারে এই বিষন্নতা। সবারই হয় জিনিসটা। পরিবার, বন্ধু বান্ধব হাত বাড়ায় তখন।

স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে ‘পপুলার’ হবার ব্যাপারটা এখন গড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আর তখনি যোগ হয় ‘সাইবার বুলিং’। স্কুলের ‘রটনা’ আগে থাকতো স্কুলের ক্যাম্পাসে। এখন সেটা চলে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আগে, রটনা ভুলে যেতো মানুষ। সময়ের সাথে সাথে। অথচ, এখন – সেটা থেকে যায় অনলাইনে। ‘কনটেন্ট শেয়ারিং’ একটা ক্লিকে আসার ফলে সবাই বিপদে।

‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমে’ থাকার সময় দেখেছি অভিভাবকদের। তাদের সন্তানদের। কতোটা অসহায় তারা। যারা পেরেছেন তারা পাঠিয়ে দিয়েছেন বাইরে। তাদের সন্তানদের। বাকিদের থাকতে হয়েছে নরকে, ‘ডে ইন ডে আউট।’ বাইরে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি কারো কারো। অথচ, সমাধান আছে সবকিছুর। সব সমস্যার। তার আগে দরকার ‘অ্যাওয়ারনেস’। কতটুকু দরকার জীবনে। চলতে।

কয়েকটা ঘটনার পর মনে হচ্ছে একটা জিনিস। ‘আত্মহত্যা’ জিনিসটাকে একটা ‘অপশন’ হিসেবে নিচ্ছে কেউ কেউ। অথচ, কোন ভাবেই এটা একটা ‘অপশন’ না। চেয়ে দেখুন, প্রতিটা সমস্যার আছে সমাধান। এই পৃথিবীতে। যে একটা সমস্যায় আছে, তার কাছে সেটাই সবচেয়ে বড়। সেটাই স্বাভাবিক, তাই না? কিন্তু সে জানে না সমাধান আছে এটার। কোথাও আশেপাশে। সে তার সমস্যা বলছে। পুরো পৃথিবীকে। কাছের মানুষকে ছাড়া। এটা তার সমস্যা নয়, বরং আমাদের। আমরা ‘কানেক্ট’ করছি না তাকে। পরিবারে।

মানুষ যখন ওরকম ‘ভার্নারেবল’ অবস্থায় থাকে – সামান্য কথাবার্তাও কাজ করে তখন। ফিরিয়ে আনতে পারে ওই অবস্থা থেকে। ফোনেও সম্ভব। আর তাই, ‘সুইসাইড প্রিভেনশন হটলাইন’গুলোর সাফল্য অনেক অনেক বেশি। সামান্য কথা যে মানুষকে কি করতে পারে সেটা বোঝা যায় ওখানকার স্ট্যাটিসটিক্স থেকে। প্রচুর প্রযুক্তি এসেছে মানুষকে বাঁচাতে, তবে সেটা আজকের বিষয় নয়।

একজন মানুষ বলছে – ‘আত্মহত্যা’ করবে সে। সোশ্যাল মিডিয়াতে। এবং সেটা সে বলছে কয়েকদিন ধরে। লক্ষাধিক মানুষ দেখছে সেটা। মজা হচ্ছে জিনিসটা নিয়ে। কোথায় গেল সহমর্মিতা? কেউ কি জানাতে পারতেন না তার পরিবারের মানুষগুলোকে? কাছের বন্ধুদের? অথবা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে? অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা। সুতো কেঁটে গেছে কোথায় জানি। খারাপ একটা ইনডিকেটর ব্যাপারটা।

অনেকে বলেন ‘আত্মহত্যা’ বা মানসিক সমস্যা ছোঁয়াচে নয়। ব্যাপারটা ভুল। এটা খুবই ‘কন্টেজিয়াস’। বিশেষ করে এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে। এর ‘ইনফ্লুয়েন্স’ অনেক বেশি। অনেক মানুষ জানতে পারছে মুহুর্তেই। একটা অপশন হিসেবে। ও পারলে – পারি তো আমিও। বিশাল ভুল মেসেজ চলে যাচ্ছে আমাদের ভেতরে। বের হতে হবে আমাদেরই।

‘মানসিক সমস্যা’ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা আছে আমাদের ভেতরে। ছোটবেলার রাস্তাঘাটে পাগলকে মারার ঘটনা এখনো ভাসে চোখে। এতো অমানবিক কেন আমরা? এটা অন্য যে কোন রোগের মতো আরেকটা রোগ। ঔষুধে, পরিচর্যায় সারে। পেটে যেভাবে বদহজম হয়, মাথার সামান্য ‘কেমিক্যাল ইমব্যালান্স’ মানুষকে করে তোলে অন্য মানুষ। ওই ‘কেমিক্যাল ইমব্যালান্স’ সারানো এখন অনেক অনেক সহজ।

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা অনেক। সেটাকে ব্যবহার করি বাঁচাতে। মানুষকে। আমাদের আশেপাশে। প্রতিটা জীবনই মূল্যবান। ‘সুইসাইড ক্যান নট বি অ্যান অপশন।’

Read Full Post »

It’s like Tolstoy said. Happiness is an allegory, unhappiness a story.

― Haruki Murakami, Kafka on the Shore

ট্রেন স্টেশনে ঢুকেই চক্ষুচড়কগাছ! প্রায় সবার হাতেই অন্য ধরনের একটা কাগজ। এগোলাম একটু। খটকা লাগছিল প্রথম থেকেই। নিউজ পেপার নয়। পত্রিকা তো নয়ই। সামনে পড়লো একজন বয়স্ক মহিলা। সাহস করে ঘাড়ের ওপর দিয়েই দেখার চেষ্টা করলাম। অল্প বয়স্কদের ওপর দিয়ে তাকানো বিপদজনক। একবার হলো কী, এই চট্টগ্রামের ঘটনা।

বিরক্ত চোখে থাকলেন আপনি। ‘আরে শুরু করলেন ট্রেন স্টেশনে – থাকেন তো ওখানে। পরে শুনবো ওই কাহিনী।’

মাফ করবেন। ট্রেন স্টেশনে থাকি বরং। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। ছোট কাগজ। ‘এ-ফোর’ সাইজ থেকে বেশ ছোট। আবার, পেপারব্যাক বইয়ের সমান না। বরং একটু বড়। হেডলাইন পড়েই বুঝলাম কাহিনী কী। ছোট গল্প। আশেপাশে তাকালাম সময় নিয়ে। ইংরেজির ‘হার্ড লুক’এর মতো করে। অনেকের হাতেই এই কাগজ। একেকটা দু তিন পাতার। সোর্স কী – মানে পেল কোথায়? বইয়ের দোকান থেকে পায়নি তো?

এটা ঠিক, স্মার্ট কখনোই ছিলো না এই বান্দা। তবে বেকুব হয়ে থাকার সুবিধা অনেক। মানুষ এগিয়ে আসে সাহায্যে। ভুল ভাঙ্গাতে। হলো এবারো। আমার ধারণা ওই বয়স্ক মহিলা বুঝতে পারছিলেন আমার অবস্থা।

‘মসিয়ে’, ভদ্রমহিলা তাকালেন আমার দিকে। মনে হলো – স্মিত হাসলেন আমার অবস্থা দেখে। ‘অবাক কান্ড হয়েছে এখানে। আজ। লাগবে আপনার?’ নিজের হাতের কাগজটা দেখিয়ে বললেন উনি।

মাথা নাড়ালাম আড়ষ্ট হাসি দিয়ে। ‘আসুন আমার সাথে।’ বললেন মহিলা।

পিছু নিলাম ওনার। অনেকে আসছেন ওই দিক থেকেই। ভিড় নয় তবে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা আছে ওখানে।

ওখানেই পাবেন আপনার গল্পগুলো! অসাধারণ, তাই না? বললেন মহিলা।

মহিলার চোখের লীড নিয়ে তাকালাম ওই দিকটাতে। দুটো ভেণ্ডিং মেশিন দাড়িয়ে আছে ওদিকে। ধন্যবাদ জানিয়ে এগোলাম যন্ত্রগুলোর কাছে। যতোই এগোই যন্ত্রগুলোর কাছে – ততোই বাড়ছে আমার হাঁটার গতি।

কমলা রঙের গোলাকৃতি এই ভেণ্ডিং মেশিনটা অনেকটাই অন্য মেশিনগুলোর মতো, তবে একটা পার্থক্য বোঝা গেলো কাছে থেকে। মাত্র তিনটা বোতাম। এক মিনিট, দুই আর পাঁচ মিনিট। টাকা পয়সার কথা বলেনি কোথাও।

বলে কী? এই একটা ভেণ্ডিং মেশিন পাওয়া গেলো পয়সা ছাড়া। চাপ দিলাম দুই মিনিটের বোতামে। বেরিয়ে এলো দুই পাতার একটা ছোট গল্প।


গল্পের মানুষগুলো কাল্পনিক হলেও ঘটনা কিন্তু একদম সত্যি। ফ্রান্সের ট্রেন স্টেশনগুলোতে বসানো হয়েছে এই গল্পের ভেণ্ডিং মেশিন। বিনে পয়সায় গল্প পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে ওদের ট্রেন অপারেটর ‘এসএনসিএফ’। ‘এসএনসিএফ’ ব্যবহার করার সুযোগ হয়েছে অনেকবার। প্রতিবারই নতুন কিছু না কিছু দেখেছি ওটাতে উঠে। এবারের গল্পটা বেশ ইউনিক। অনেক গভীর।

এই মোবাইলের যুগে এটা একটা স্বস্তির বাতাস। বোঝা যাচ্ছে – ট্রেন অপারেটর একটা নতুন কালচার চালু করতে চাচ্ছে এই গল্প পড়া নিয়ে। ব্যস্ততার মধ্যে মানুষ যাতে কিছু কোয়ালিটি সময় পায় সেটার ব্যবস্থা করেছে এই অপারেটর। কোয়ালিটি সময়ের সাথে কোয়ালিটি লিটারেচার দিতে এপর্যন্ত লাখের বেশি গল্প ডিস্ট্রিবিউট করেছে এই প্রোগ্রামের সলিউশন প্রোভাইডার ‘শর্ট এডিশন’।

দশ বছর হবে হয়তোবা। আমাজন থেকে ছোট গল্প কিনতাম চল্লিশ সেন্ট করে। তিন – পাঁচ পাতার। দেশীয় ক্রেডিট কার্ড ঝামেলা করলে বন্ধুরাই কিনে দিতো জিনিসটা। পরে মেইল করে দিতো পিডিএফ ফাইলটা। তখনই মনে হয়েছিল এই মডেলটার কথা। পাঁচ টাকায় একেকটা গল্প। কয়েকজনের সাথে এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম অনেকবার। সবার কথা, মানুষের পড়া কমে গেছে অনেকাংশে। সত্যি। পরে আর এগোয়নি জিনিসটা।

২০১৩তে ফ্রান্সকে নাম দেয়া হয়েছিল ‘লেখকদের দেশ’ হিসেবে। এটা এসেছিল বড় একটা ‘নেশনওয়াইড’ সার্ভের পর। জানা গেলো প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ বইয়ের পাণ্ডুলিপি লিখেও ফেলে রাখে বছরের পর বছর। বই হিসেবে আলোর মুখ দেখেনা আরো বড় একটা শতাংশ। শর্ট এডিশনের ডিরেক্টরের কথাটা ভালো লেগেছে আমার। ‘আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই গল্পকে। মানুষের মাঝে। উত্সাহ দিতে চাই পড়া আর গল্প লেখার ওপর। প্রোমোট করতে চাই আমাদের লেখকদের। গল্পের বিশাল একটা আবেদন আছে আমাদের জীবনে।’ ঠিক তাই। একটা জার্নির আগে আরেকটা জার্নির পরশ দিতেই এ ব্যবস্থা।

পাঁচ হাজারের বেশি গল্প লেখক লিখেছেন এই প্রোগ্রামে। বুঝুন তাহলে – অনেক লেখক তৈরি হবে এভাবে। সামনের বছরগুলোতে। ট্রেনে মানুষের সময়ের ওপর ভিত্তি করে এক, দুই আর পাঁচ মিনিটের গল্প নিয়েই আজ আমার এই গল্প। আমিও চাইবো এধরনের একটা প্রোগ্রাম চালাতে। কী বলেন?

Read Full Post »

আজকে আবার কিসের দিন? মানে, এই তেইশে অগাস্ট। অনেকে লিখেছেন আজকে।

হ্যাঁ, ইন্টারনেট ডে। বলেছেন কেউ কেউ।

হুম। সেটাতো অক্টোবরের উনত্রিশে।

তাই তো! ওহো বুঝেছি। তাহলে ‘ইন্টারনট ডে’। নট? মানে খট খট?

সেটা আবার কী?

এটা একটা শব্দের যৌগ। ‘বিশাল’ আর ‘আকার’ যোগ করে হয় বিশালাকার। ওরকম আরকি।

বুঝলাম। তাহলে ‘নট’ আসলো কোথা থেকে?

ওটা এসেছে ‘অ্যাস্ট্রোনাট’ থেকে। ইন্টারনেট থেকে ‘ইন্টার’ আর অ্যাস্ট্রোনাটের  ‘নট’।

নট কেন? হবে তো নাট? আপনার প্রশ্ন।

আসলে ‘নাট’ বললে এসে যায় অন্যকিছু। মানুষ রাগলে বলে ওই কথা। তাই বাদ সেটা।

মানুষ সারাজীবনই অভিযাত্রী। ভুল বলেছি? পৃথিবী চষে বেড়িয়েছে মানুষ। সত্যের খোঁজে। নতুন কিছু জানতে। উল্টে পাল্টে দেখেছে পৃথিবী। এরপর গিয়েছে চাঁদে। তারপর? আরো, আরো দূরে।

আসলেই তাই! ইন্টারনেট মানুষকে নিয়ে গেছে অনেক অনেক দূরে। জ্ঞান পিপাসার্ত মানুষ বশে নিয়ে এসেছে প্রযুক্তিকে। অভিযাত্রীর মতো সত্যের খোঁজে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে এই মানুষ। নিমিষেই চলে যাচ্ছে পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। সেজন্যই এসেছে ‘অ্যাস্ট্রোনাট’ শব্দটা।

০৬ আগস্ট। ১৯৯১ সাল। টিম বারনার্স লী পোস্ট দিলেন নিউজগ্রুপে। বরাবরের মতো। তবে এটা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব’ নিয়ে একটা প্রজেক্ট নিয়ে। ওহো, বলাই হয়নি ব্যাপারটা। ‘নিউজগ্রুপ’ ছিলো আমাদের মানে প্রস্তরযুগের ফেসবূক। মতামত জানতে সবাই ধারস্ত হতো এই নিউজগ্রুপে। ছিলোও হাজার হাজার গ্রুপ। একেক বিষয় নিয়ে একেকটা গ্রুপ। আমার প্রিয়টা ছিল শর্টওয়েভ নিয়ে।

তবে, ‘ওয়েব’ নয় সেটা। আলাদা অ্যাপ্লিকেশন। ‘এনএনটিপি’। আর উনার গ্রুপটার নাম ছিল অল্ট॰হাইপারটেক্সট!

আজকের দিন মানে ২৩ আগস্ট। খুলে দেয়া হয় সবচেয়ে প্রথম ওয়েবসাইটটা। সবার জন্য।

আর এখন?

ইন্টারনেটের সবচেয়ে ‘সবচেয়ে’ জনপ্রিয় জিনিস হচ্ছে এই ওয়েব। আমাদের মতো টেকি(!) লোকদের ভাষায় এটা ‘পোর্ট ৮০’। ‘এইচটিটিপি’। যে যাই বলুক জিনিস কিন্তু একটাই।

সত্যিই তাই। এজন্যই আজকের দিন হচ্ছে ওই ‘ইন্টারনট ডে’!

Read Full Post »

Learn to get in touch with the silence within yourself, and know that everything in life has purpose. There are no mistakes, no coincidences, all events are blessings given to us to learn from.

– Elisabeth Kubler-Ross, the author “On Death and Dying”

বইটার নাম দেখেই নাক সিটকেছিলাম বোধহয়। না হলে কিনলাম না কেন? আটানব্বইয়ের কথা। ‘চিকেন স্যুপ ফর দ্য সৌল।’ ‘ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড’ অর্থে গেলে হয় ‘আত্মার জন্য মুরগীর ঝোল’। বলে কী? এই বই কিনে পয়সা নষ্ট করার মানুষ না আমি।

দশ বছর পরের কথা। বুদ্ধিশুদ্ধি হয়েছে আরো। এবার যেতে হলো ওয়েস্ট কোস্টে। ‘সানি’ সান-ফ্রান্সিসকোতে। উঠলাম একটা পারিবারিক ধরনের হোটেলে। মানে, নিজের বড় বাসাকে পাল্টে নিয়েছে একেকটা গেস্টরুম ধরে। বুড়ো-বুড়ি মাথার ওপর থেকে চালালেও ব্যবসাটার খুঁটিনাটি সবকিছু বড় মেয়ের হাতে। আমার থেকে কিছুটা ছোট হবে। হোটেল ব্যবসায় যতোটুকু আন্তরিক হওয়া উচিত তার থেকেও বেশি আন্তরিক ছিলো মেয়েটা। বিশেষ করে এশিয়ানদের প্রতি। সে গল্প আরেকদিন।

সকালের বিনিপয়সার ব্রেকফাস্ট করতে যেতে হতো একটা বড় হলওয়ে দিয়ে। মজার কথা হচ্ছে পুরো হলওয়ের দুপাশটা অনেকগুলো বইয়ের ‘শেলফ’ দিয়ে ভর্তি। হাজারো বই। তার চেয়ে ভালো লাগতো ওই বইগুলোর গন্ধ। সকালের কফি, মাফিন আর বেকনের গন্ধ ছাপিয়ে বইয়ের গন্ধ খারাপ লাগতো না মোটেই।

আচ্ছা, ড্যাফনি – কিছু বই নিতে পারি রুমে? সন্ধার পর বেশ কিছু সময় নষ্ট হয় এমনিতেই। তোমাদের টিভি’র চ্যানেল মাত্র কয়েকটা।

ভাঙ্গাচোরা হলেও দুটো পয়েন্ট দাড়া করিয়েছি বলে শান্তি শান্তি লাগছিল মনে।

চোখ মটকালো মেয়েটা। মনে হচ্ছে হলিউড ফেল। ফেল তো হবেই। আমরা তো হলিউড স্টেটে। ব্লণ্ডদের নামে যে দুর্ণাম সেটাও উতরে যাচ্ছে সে।

ওমা! টিভি দেখবে কোন দুঃখে? আমাদের নাইটলাইফ পৃথিবী সেরা! তুমি চাইলেই পরিচয় করিয়ে দিতে পারি আমার কিছু বন্ধুবান্ধবীদের সাথে। ফোন দেবো ওদের?

এ আবার কী বিপদ ডেকে আনছি এই সকালে! মিনমিন করে কয়েকটা বই চাইতে যেয়ে এ বিপদে পড়বো জানলে ওমুখো হয় কী কেউ? শেষমেষ হাতে পায়ে ধরে রক্ষা পেলাম ওর বন্ধুদের হাত থেকে। নাইটক্লাবে গেলে ডেজিগনেটেড ড্রাইভার হিসেবে ফ্রী সোডাটাই যা লাভ।

এই ড্যাফনি’র হাত ধরে আবার এলো ‘চিকেন স্যুপ ফর দ্য সৌল’ সিরিজের দুটো বই। আমার নেয়া কয়েকটা বইয়ের মধ্যে কিছুটা জোর করেই ঢুকিয়ে দিলো বই দুটো। কথা না বাড়িয়ে বইগুলো নিলাম ওর হাত থেকে। দিন কয়েক পর এক উইকেন্ডে বন্ধুর বাসায় দাওয়াতে যেতে হলো আমাকে। ট্রেনে যেতে যেতে কী পড়বো বলে মনে হতে নিয়ে নিলাম ওই দুটো বই।

প্রথম গল্পেই ঝাপসা হয়ে গেল চোখ। জীবনের ‘ডার্কেষ্ট আওয়ার’গুলোতে সাধারণ মানুষগুলোর অসাধারণ গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনটা ভিজে রইলো পুরো সময়টা ধরে। ছোট্ট ছোট্ট সত্যিকারের গল্প। আসলেই, খুব সুন্দর করে লেখা। চিকেন স্যুপ যেমন করে পেটের জন্য সহনীয়, গল্পগুলোও তাই। মনের জন্য।

ট্রেন স্টেশনে এসেছিল বন্ধু আমাকে নেবার জন্য। ও ঠিক ধরে ফেললো ব্যাপারটা। ক্যাডেট কলেজ থেকে দেখছে না আমাকে? হাতের বইটা হিন্ট দিয়েছে হয়তোবা। মজার কথা, ওই সিরিজের বেশ কয়েকটা বই বের হলো ওর বাসা থেকেও। সেই থেকে জ্যাক ক্যানফিল্ডের বিশাল ভক্ত আমি।

‘চিকেন স্যুপ ফর দ্য সৌল’ সিরিজের প্রথম দিকের একটা গল্প হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা একজন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে। ঠিক ধরেছেন, উনি হচ্ছেন আব্রাহাম লিন্কন। অধ্যবসায় মানে ‘নাছোড়বান্দাভাবে জিনিস চালিয়ে’ নেবার ব্যাপারটা মনে হয় এসেছে উনার কাছ থেকে। আরেক রবার্ট ব্রূস। চরম দারিদ্র থেকে উঠে আসা এই মানুষটা সারা জীবন বিফলতা ছাড়া কিছু দেখেননি বলে আমার ধারনা। তার জীবনের টাইমলাইন কিন্তু তাই বলে।

আট আটটা ইলেকশনে হারলে ওই পথ আর মাড়ায় কেউ? দুবার ব্যবসা করতে গিয়ে খুইয়েছিলেন সব। বিয়ের পর হারান তার প্রিয়তমাকে। আরো কয়েকটা বিপদে পড়ে বড় ধরনের নার্ভাস ব্রেকডাউন হয় তার। বিছানায় পড়ে ছিলেন ছয়মাস। চাকরি হারান কয়েকবার। কিন্তু হাল ছাড়েননি কখনো। আর সেই লেগে থাকাই তাকে নিয়ে গেছে সর্বোচ্চ জায়গায়। আর ওই বিফলতা তাকে শিখিয়েছে নম্র আর বিশাল হতে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

The hungrier one becomes, the clearer one’s mind works— also the more sensitive one becomes to the odors of food.

George S. Clason, The Richest Man in Babylon

ইন্টারনেট নিয়ে আমার কৌতুহল ওই অফলাইন ইন্টারনেট থেকে। নব্বইয়ের সেই “ওয়াইল্ডক্যাট” বুলেটিন বোর্ড সার্ভিস টানে এখনো। অফলাইন পুশ-পুল এফটিপি, এনএনটিপি পোর্ট দিয়ে নিউজ সার্ভিস – দৃক, প্রদেষ্টা, কাইফনেট সব অনেক অনেক আগের জিনিস। একটা কমোডোর ১২৮ নিয়ে খোঁচাখুচির ফল যা হয় আরকি! একটা জিনিস খেয়াল করতাম, ইউইউসিপি (ইউনিক্স টু ইউনিক্স) প্রটোকল দিয়েও সবাই কানেক্ট করতো কাছাকাছি প্রোভাইডারদেরকে। এরপর এলো আসল ইন্টারনেট, আমাদের সব ডাটা যেতো গোটা পৃথিবী জুড়ে। মানে – যুক্তরাষ্ট্র হয়ে!

সেটাও অনেক অনেক দিন। এরপর ঘুরতো সিঙ্গাপুর হয়ে। এখন?

স্যানোগ-৪ ই হবে হয়তোবা, ২০০৫ এর কথা। সুমন ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছিলাম কিছু ডকুমেন্ট। যেটা বেশি টেনেছিলো – ‘আই-এক্স’, ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ নামের একটা গল্প। তখন কী জানতাম বিটিআরসিতে পোস্টিং হবে ওর দুবছর পর? “আই-আই-জি”, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে লাইসেন্সে অনেকটা মারামারি করে করে ঢুকিয়েছিলাম ‘এক্সচেঞ্জ’ ব্যাপারটা। সুমন ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে।

সেটা কাগজে ঢুকলেও বাস্তবে আনতে কষ্ট হচ্ছিলো অনেক। মানে, আই-আই-জি’রা সবাই ডাটা পিয়ারিং করবে দেশের ভেতর। একটা ব্যাপার ঠিক। এটা কিছুটা ব্যবসায়িক স্বার্থেই চলে। জোরাজুরির কিছু নেই। লাইসেন্সিং দরকার নেই। ‘বিডিআইএক্স’ হলো। আইএসপিদের কল্যাণে। মোবাইল অপারেটররা কানেক্ট করছিলো না। নন-লাইসেন্সিং এনটিটিতে কানেক্ট করে কী না কী হয়? এক সময় সেটারও লাইসেন্স এলো।

এখন দেশের ভেতরেই থাকছে প্রচুর ডাটা। বড় বড় ডাউনলোড সার্ভারগুলো ‘ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ’ হয়ে যাচ্ছে একেকটা আইএসপিতে। লাভ অনেক। আইএসপিদের বিদেশী ‘আইপি ট্রানজিট’ কিনতে হচ্ছে কম। আসল কথা হচ্ছে দেশে হোস্টিং বেশি হলে একসময় অন্যদেশ ‘আইপি ট্রানজিট’ কিনবে আমাদের থেকে। ওটা অনেক পরে হলেও একসময় করতে হবে। ব্যালান্স করতে হবে না ট্রাফিক? ধরুন, বিদেশ থেকে কিনলেন ৩০ জিবিপিএস। ওরা যদি সমপরিমাণ নেয় আমাদের থেকে – তাহলে সেটা হবে “সেটলমেন্ট ফ্রী”। কেউ কাউকে পয়সা দেবে না। মানেও হয় না।

অনেক অনেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটা গ্রামে থাকার সময় ব্যবহার করতাম ‘ডিএসএল’ সার্ভিস। বেসিক ফোনের সাথে এসেছিলো ওটা। একবার ফোনে সমস্যা হলো, কিন্তু ‘ডিএসএল’ ডাউন হয়নি কখনোই! এখন তো ফোনের ওই কপারলাইন দিয়ে গিগাবিট ইথারনেটও চলছে অনেক জায়গায়। সেটা আরেকদিন!

বিটিসিএলএর ডিএসএল সার্ভিস নিলাম কয়েকদিন আগে। ওর আগে পাড়ার আইএসপি ছিলো বাসায়। পাড়ার আইএসপি’র সার্ভিস ছিলো রকেটের মতো। ‘গুগল ক্যাশে’ ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ডাউনলোড সার্ভার, কী নেই তাদের! অনেকের বাসা পর্যন্ত ফাইবার টেনেছে তারা। বিদ্যুত্‍ চমকালেও যাবে না রাউটার। নতুন ‘ডিএসএল’ নেবার পরও ডাউনলোড ম্যানেজারে পুরানো আইএসপি’র একটা লিংক রয়ে গিয়েছিলো কোনো একটা কারণে। পিসি চালু করতেই লিংকটা মুছতে গিয়ে দেখলাম ঢাকা থেকে ঢাকার ওই দুই কিলোমিটার দূরত্বের ট্রাফিক ঘুরে আসছে ওই বিদেশ থেকে। মানে, এখনো যেতে হবে অনেকদূর!

আমার বাসা থেকে দুই আইএসপি’র ট্রাফিকের রাউটিং। এর থেকেও অনেক অনেক কমপ্লেক্স রাউটিং আছে অনেক জায়গায়। আমার কথা একটাই। দেশের ট্রাফিক বিদেশী ডলারের কেনা “আইপি ট্রানজিট” দিয়ে গেলে দাম বাড়বে বৈকি।  ইন্টারনেটের।

[এটা একটা উদাহরণ, কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়, আমরাও শিখছি প্রতিদিন]

1 5 ms 3 ms 2 ms Routing.Home.Inside [192.168.x.x]
2 1615 ms 1675 ms 2003 ms 123.49.x.x
3 1920 ms 1534 ms 1852 ms 123.49.13.x
4 931 ms 995 ms 892 ms 44.44.44.2 [এটা যাচ্ছে স্যান-দিয়াগো, অ্যামেচার রেডিও]
5 1399 ms 1458 ms 1571 ms 123.49.13.82
6 1400 ms 701 ms 729 ms 123.49.1.14 [বিটিসিএলের মধ্যেই অনেকগুলো হপ]
7 1062 ms 1115 ms 1189 ms 121-1-130-114.mango.com.bd [114.130.1.121]
8 1562 ms 1555 ms 1466 ms aes-static-133.195.22.125.airtel.in [125.22.195.133]
9 1456 ms 1536 ms 1591 ms 182.79.222.249 [ভারতে যেয়ে ঘুরে আসছে ট্রাফিক]
10 1878 ms * 1009 ms aes-static-118.1.22.125.airtel.in [125.22.1.118]
11 1479 ms 1605 ms 1444 ms 103-9-112-1.aamratechnologies.com [103.9.112.54]
12 1007 ms 1611 ms 1727 ms 103-9-112-1.aamratechnologies.com [103.9.113.130]
13 1619 ms 1596 ms 1810 ms 103.x.x.x
14 1774 ms 1058 ms 1222 ms x.x.82.x
15 1373 ms 1423 ms 1410 ms site1.myoldisp.com [x.x.28.x]

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

The two most important days in your life are the day you are born and the day you find out why.

– Mark Twain

০৪.

আমার নিজের একটা তত্ত্ব আছে এই ‘কানেক্টিং দ্য ডটস’ নিয়ে। হয়তোবা এতো বছরের উপলব্ধি থেকে তৈরি হয়েছে জিনিসটা। অনেক কিছু পড়তে গিয়েও আসতে পারে ধারনাটা। ব্যাপারটার নাম দিয়েছি ‘ক্যানভাস’ তত্ত্ব। প্রতিটা মানুষ পৃথিবীতে আসে একটা সময়ের জন্য। ধরে নিন – ওই সময়টাতে সমমাপের একেকটা ‘সাদা ক্যানভাস’ নিয়ে আসি আমরা। জন্মের পর ওই একেকটা জ্ঞান একেকটা বিন্দু হয়ে আঁকা হতে থাকে ওই ক্যানভাসে। সবার ক্যানভাসের জায়গা সমান হলেও যে শিখবে যতো বেশি, তার বিন্দু হবেও বেশি। এক যায়গায় কারো বিন্দু বেশি হলে সেগুলো চলে আসবে কাছাকাছি।

০৫.

হাটতে শেখার জ্ঞানটাকে প্লট করুন একটা বিন্দু দিয়ে। সেভাবে দৌড়ানোটাও আরেকটা বিন্দু হয়ে যোগ হবে আগের হাঁটতে শেখার বিন্দুর কাছাকাছি। সাঁতার শেখাটাও কিন্তু আরেকটা বিন্দু। এগুলো সব কাছাকাছি বিন্দু। তেমন করে ক্লাস ওয়ান পড়াটা একটা বিন্দু, ক্লাস টু আরেকটা। এক ধরনের জ্ঞানগুলোর বিন্দুগুলোই আঁকা হতে থাকে কাছাকাছি।

০৬.

আর এভাবেই তৈরি হতে থাকে একেকটা ‘ফ্লো অফ আইডিয়া’। কয়েকটা বিন্দু মিলে হয় একেকটা ‘ওয়ার্কফ্লো’। যুক্ত হতে থাকে ওই ‘ডটেড’ ইভেন্টগুলো। পাশাপাশি। তৈরি হয় ‘বিগ পিকচার’। মনে আছে ওই প্রথম ভিডিও’র বিন্দু থেকে আঁকা পাখিটার মতো? আর সেসময়ে তৈরি হয় ওই ‘আহা’ মুহূর্তটা!

০৭.

সময় আর অভিজ্ঞতা থেকেই চলে আসে আরো অনেক ‘ডট’। দুটো ‘ডটে’র মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনে নতুন নতুন জ্ঞান মানে ওই ‘ডট’ প্রতিদিন। মানে নতুন নতুন প্রসেস করা তথ্য। একেকটা বিন্দুর ‘ইনফ্লুয়েন্স’ চলে আসে পরের বিন্দুগুলোর ওপর। আর সেকারণে পেছনের ওই গায়ে গায়ে লাগানো ডটগুলো প্রজ্ঞা দেয় তৈরি করতে – আমাদের সামনের ডটগুলো। ভবিষ্যত দেখার প্রজ্ঞা। কিছুটা বুঝতে পারি এখন – কি করতে চাই জীবনে।

০৮.

যে যতো শেখে তার ক্যানভাসে বিন্দুর সংখ্যা বেশি। আবার, বেশি বেশি বিন্দুতে কাছাকাছি বিন্দুগুলো ‘ইনফ্লুয়েন্স’ করে যে জায়গাগুলোতে – যেখানে বিন্দু পড়েনি এখনো। সেকারণে ওই বিশেষ জ্ঞানটা তার না থাকলেও কাছের বিন্দুগুলো থেকে ‘কনটেক্সচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ নিয়ে নেয় ওই মানুষটা। এর সোজা মানে হচ্ছে সেই মানুষটা ‘কানেক্ট করতে পারে ওই ডটগুলোকে। আমার ধারনা, সেটার আউটকাম হচ্ছে ড্যানিয়েল গোল্ডম্যানের ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’। কিছুটা উপলব্ধির ‘বিগ পিকচার’।

কেন দরকার?

নিজেকে চিনতে। আরো ভালো করে বললে, জানতে – কেন এসেছি দুনিয়াতে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Older Posts »