Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী/Cryptography’ Category

If you have something that you don’t want anyone to know, maybe you shouldn’t be doing it in the first place.

– Eric Schmidt, Google

০৭.

পাগলেও করে চিন্তা, বিশেষ করে ভবিষ্যত নিয়ে। ‘দিন আনি দিন খাই’ মোডে থাকলেও কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ‘ডাটা’ চিন্তা এনে দেয় এমনিতেই। অনলাইন বিশ্বে একটা অ্যাপ বিক্রি হয় দেশের পুরো রিজার্ভের টাকা দিয়ে। টাকাটা কোথায় আসলে? আমার ধারনা ‘অ্যানালিটিক্সে’। সবাই জানে, ডাটার ভিজ্যুয়ালাইজেশন আসে এই টূল থেকে। সত্যিকারের ভবিষ্যত দেখতে পারে এই জিনিস। মানুষ ‘কি করে’ আর ‘কি না করে’ তার সবকিছু দেখতে পায় বর্তমান যুগের একেকটা অ্যাপ। মানুষের তথ্য নিয়ে কায়-কারবার হলেও তথ্য থেকে আপনি কি দেখতে চান – কি কি ‘ইন্টারপ্রেট’ করবেন – আর কি ‘প্রজ্ঞা’ নেবেন সেটাই হচ্ছে আর্ট। বিলিয়ন ডাটার ওপর বসে আছি প্রতিনিয়ত। দেখতে না চাইলে অন্য কথা। তবে দেখছে অনেকেই। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ওখানেই। আর সেটা না হলে মানুষের ‘অমরত্ব’ নিয়ে কাজ করছে কেন গুগল? পয়সা পাচ্ছে কোথায়?

ধারনা পোক্ত হবার জন্য ‘পার্সন অফ ইন্টারেস্ট’ দেখতে হয় না। চার নম্বর সীজনটা খারাপ নয় একেবারে। নিয়ে আসছি নতুন নতুন গল্প। ভেগে যাচ্ছেন নাকি?

০৮.

ওরেগনের একটা কম্যুনিটি কলেজের ‘মাস শুটিং’য়ের নিউজ দেখেছেন নিশ্চয়ই। টিভিতে। শুটিংয়ের পর এটা নিয়ে একটু রিসার্চ করতেই পাওয়া গেল বেশ কয়েকটা লীড। শুটিংয়ের আগের রাতে শুটারের বেশ কয়েকটা পোস্ট দেখলে ভাবিয়ে তুলবে আপনাকেও। শুটার কি করতে চাচ্ছে সেটার একটা স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায় ওই পোস্টগুলো থেকে। কিছুটা ‘গ্লিবারিশ’ মনে হবে প্রথমে, কিন্তু মিনিট দুইয়ের মধ্যে ধারনা পেয়ে যাবে যে কেউ। ওখানেই বেশ কয়েকজনকে পাওয়া গেল বুদ্ধিদাতা হিসেবে। মানে, কিভাবে ঘটাতে হবে ওই জঘন্য হত্যাকান্ড। শুটারের মায়ের বেশ কয়েকটা অনলাইন অ্যাক্টিভিটি পাওয়া গেল ছেলের মানসিক সমস্যা নিয়ে। আগের শুটিংগুলোও ব্যতিক্রম নয় এই ঘটনা থেকে। একই ধরনের প্যাটার্ন। আর এই প্যাটার্ন ‘প্রেডিক্ট’ করতে পারলে বেশিরভাগ ঘটনা আটকানো সম্ভব আগে থেকে। হিসেবে বলে – যারা মারা যান তাদের বড় একটা সংখ্যা শুটারদের চেনেন আগে থেকে। অনেকে আঁচ করতে পারেন কি হতে পারে সামনে। ফ্ল্যাগটা তোলেন হয়তোবা। তবে সেটা বেশ দেরিতে। ঘটনাগুলো ঘটছে কিভাবে তাহলে? টাইমলাইনে প্লট করলে বোঝার কথা।

০৯.

‘পার্সন অফ ইন্টারেস্ট’ সিরিজটা মাথার ওপর দিয়ে যায় বলে ‘না পছন্দ’ অনেকের। এদিকে, ফালতু তথ্যের মধ্যে থেকে ‘ইণ্টেল’ বের করার অ্যালগরিদম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দিনে দিনে ঝোঁক বেড়েছে বরং। শুধু ফিউচারিস্টিক নয় বলে, ব্যাপারগুলো দুই দুই মিলে চার হয় বলে দেখি মন লাগিয়ে। আর আমার প্রিয় ‘ইনফর্মেশন ওভারলোড’ ব্যাপারটা তো আছেই। শত্রুকে ‘স্মোকস্ক্রীন’ দেবার মতো করে ফালতু তথ্য দিয়ে করে দাও ওর সিষ্টেম ওভারলোড। নষ্ট করে দাও ওর সময়। বাই দ্য টাইম, ও যখন বুঝবে, ততোক্ষনে পগারপার আমরা। ওই গল্প থেকে অনেক অনেক বড় জিনিস ঘটে যাচ্ছে প্রতিদিন আমাদের আশেপাশে। মোবাইল নিয়ে আলাপ নয় আজ। ফিরে তাকাই পেছনে। ব্রাউজারের দিনে ফিরে যাই বরং। অনলাইন মার্কেটিং তো শুরু হলো দেশে। তবে সেটা অনেকদিন ধরে চলে আসছে পাশ্চাত্যে। বছর কয়েক আগে অডিও-টেকনিকার একটা হেডফোন অর্ডার করেছিলাম অ্যামাজনে। এর আগে কিছুটা রিসার্চ করেছিলাম গূগলে। কোন মডেলটা কিনবো, সেটার নম্বর আমার আগেই বলে দিল সার্চ ইঞ্জিন। আগে কি কি কিনেছি সেটার ইতিহাস ঘেঁটে এখন কি কিনলে ভালো সেটা বলে দিচ্ছে ও। হাই-রেজল্যুশন অডিও কি কি কিনতে পারি সেটার লিস্টিও দেখি দিচ্ছে দিয়ে। আচ্ছা, ও আমাকে চিনলো কিভাবে?

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Quis Custodiet Ipsos Custodes. -> Who will watch the watchmen.

— Juvenal, circa 128 AD

২৬.

দেখা গেছে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অক্ষরগুলো হচ্ছে ‘E’, ‘T’, ‘A’, ‘O’ আর ‘I’। পর্যায়ক্রমে। সবচেয়ে কম ব্যবহার হয় ‘Q’, ‘Z’ আর ‘X’। আবার ব্যাঞ্জনবর্ণের জোড়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলে ‘TH’। ঠিক বলেছি কিনা বলুন? আর স্বরবর্ণের জোড়া? ঠিক বলেছেন। ‘EA’। বাকীদের কথা বললে আসে OF, TO, IN, IT, IS, BE, AS, AT, SO, WE, HE, BY, OR, ON, DO, IF, ME, MY, UP অক্ষরজোড়ার কথা। রিপিটেড অক্ষরজোড়ার মধ্যে SS, EE, TT, FF, LL, MM and OO চলে বেশি। তিন অক্ষরের ভেতরে দেখলে THE, EST, FOR, AND, HIS, ENT, THA নাম আসে আগে। বেশি বলে ফেলছি নাকি? আমাদের হিসেব বলে – যদি গুপ্ত মেসেজে অক্ষর ‘E’ এর পর ‘T’ বারংবার মানে বেশীরভাগ সময়ে আসে তাহলে সেটা ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফারের মেসেজ নয়। সেটা বরং ‘স্থান-বিনিময়’ মানে ট্রান্সপজিশন সাইফার। ওমা, এটা আবার এলো কোথা থেকে?

২৭.

‘স্থান-বিনিময়’ সাইফারটা কি? গল্প নিয়ে আসি বরং! বাসার প্লাস্টিকের পানির পাইপ যোগাড় করুন – এক ফুট লম্বা। পেন্সিল হলে হবে, তবে সেটা কিছুটা ছোট হয়ে যাবে আমাদের কাজের জন্য। পাইপের ওপর দড়ি যেভাবে পেচিয়ে পেচিয়ে এগোয় সেভাবে স্কচ টেপ পেচান। স্কচ টেপ না থাকলে ওধরনের ‘চিকন করে কাটা’ কাগজও পেচাতে পারেন। পেচানোর পর এর ওপর দিয়ে কলম দিয়ে লিখুন আপনার মেসেজ। লেখার পর খুলে ফেলুন কাগজটা। এরপর পাঠিয়ে দিন বন্ধুর কাছে। বন্ধু যদি ওই একই ব্যাসার্ধের পাইপ নিয়ে একই ভাবে পেচান, তাহলেই রক্ষা। মানে, পড়তে পারবেন মেসেজটা। কাগজটা পুরোপুরি খুলে ফেললে হযবরল হয়ে যাবে অক্ষরগুলো। আগের মতো করে না পেচালে দুর্বোধ্যই থেকে যাবে মেসেজটা। অক্ষরের এই ‘স্থান-বিনিময়’এর জন্যই এর নাম ‘ট্রান্সপজিশন’ সাইফার। অনেক সময় এই মেসেজ লিখতে পারেন ‘কলাম’ ধরে। একেকটা অক্ষর একেকটা কলাম। পরে পাল্টে দিলেন কলাম ঘরগুলো।

২৮.

মজার কথা হচ্ছে এই ‘ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানালিসিস’ ধরতে পারে অনেক গল্প। কোন ভাষা, সেটাও ধরতে পারে এই অ্যানালিসিস। এই ইংরেজি অক্ষর দিয়েই ভাষা আছে অনেকগুলো। ধারণাই করতে পারবেন না – এই রোমান আর ল্যাটিন অক্ষর ব্যবহার হয় কতো ভাষায়! পুরো মেসেজে যদি একটা অক্ষর ২০%এর বেশি আসে, তাহলে সেটা ‘জার্মান’ হবার সম্ভাবনা বেশি। জানেন তো জার্মানে ‘E’ অক্ষরের ব্যবহার অনেক অনেক লম্বা। ইটালিয়ান হলে তিন অক্ষরের আধিক্য ১০% এরও বেশি। ‘নয় অক্ষরে’র ফ্রিকোয়েন্সিও কম নয়। ক্রিপ্টগ্রাফার কাজও কিন্তু যায় বেড়ে। ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফারে অনেক সময় লম্বা মেসেজ হলে ভালো। বড় হলে প্যাটার্ন ধরা যায় সহজে। কয়েকবার এক জিনিস আসলে যা প্রথমে ধারনা করেছিলাম সেটা পোক্ত হয় বেশি। ছোট মেসেজে ধারনা করতে হয় বেশি। এক অক্ষরের ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফারে ‘A’ আর ‘I’ ছাড়া অন্য কিছু আসার কথা নয়। দুটোই বসিয়ে দেখতে হবে কোনটাতে মেসেজটা অর্থবহ হয়। তাই বড় মেসেজে সুবিধা বেশি।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

It is oviously an attempt to convey secret information.

– Sherlock Holmes (“The Valley of Fear”)

২৩.

আমাদের জানামতে প্রথম সাইফার শুরু হয় খ্রিস্টজন্মেরও আটান্ন বছর আগে। প্রচলিত আছে যে সম্রাট জুলিয়াস সিজার ব্যাপারটা শুরু করেন তার সামরিক বাহিনীর ভেতর। তার কমান্ড স্ট্রাকচারের মধ্যে যোগাযোগের জন্য এটাই ছিলো সবচেয়ে নিরাপদ ব্যবস্থা। কাজের ধরণ দেখে অনেকে এর নাম করেন ‘শিফট’ মানে ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফার। ইতিহাসের সবচেয়ে সরল ‘এনক্রিপশন’ মেকানিজম এটা। ইংরেজিতেই উদাহরণ টানি বরং। মনে করুন, চিঠি লিখলেন বন্ধুকে। এসএমএসও হতে পারে। ইংরেজি শব্দ দিয়ে। বললেন, ‘MEET ME AT BOGA LAKE’। তবে কাগজে লেখার সময় সেটাকে বাম দিক থেকে তিন অক্ষর সরিয়ে সরিয়ে লিখবেন। ‘A’ অক্ষর বলতে চাইলে সেটা লিখবো ‘D’ হিসেবে। ‘B’ বোঝাতে চাইলে তিন অক্ষর সরিয়ে লিখবো অক্ষর ‘E’। বাম দিক থেকে তিন অক্ষরের ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফারে মেসেজটা দাড়াবে ‘PHHN PH ERJD ODNH’। ডান দিক থেকে তেইশ অক্ষরের ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফারের মেসেজ হবে এটাই। ছাব্বিশটা শব্দ না ইংরেজিতে?

২৪.

আপনার বন্ধুর সাথে মেসেজ আদান প্রদানের চুক্তি ছিলো ছোটবেলা থেকেই। অ্যালগরিদমটাও সহজ। যা লিখবেন তিন অক্ষর ডানে মানে পেছনে নিয়ে পড়বেন মেসেজটা। এখন এই খোলা মেসেজ অন্যরা পেলে হিব্রু মনে হবে তাদের কাছে। দোকানে গেলে কি হয় এখনো? পাড়ার দোকানের কথা বলছিলাম আরকি! সুপারস্টোর নয়। দোকানদার প্রতিটা আইটেমের ওপর কাগজ দিয়ে কোড লিখে রাখে দামের। দাম কতো বললে কোড দেখে হিসেব করে দাম বলে। সেটাও ‘শিফট’ মানে ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফার। তবে সেটা সংখ্যা থেকে ইংরেজি অক্ষরের। ধরুন, 1234567890 সংখ্যাগুলোকে ইংরেজিতে নিজের মতো পাল্টে দেই MAKEPROFIT অক্ষর দিয়ে। একটা খেলনার ওপর ‘KPT’ থাকলে ওর দাম কতো হবে? ৩৫০ টাকা? তবে যে যাই বলুক এই ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফার ভালো কাজ দিয়েছে সম্রাট সিজারকে। হিসেব বলে, নয় দশকের আগে এটাকে ভাঙার কথা চিন্তা করেনি কেউ। এটা ভাঙা সম্ভব হয় যখন আরব বিশ্বের একজন নামকরা দার্শনিক, গাণিতিক আবিষ্কার করেন ‘ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানালিসিস’ বলে একটা নতুন জিনিস। মজার জিনিস বটে!

২৫.

এই ‘সিজার সাইফার’ এক-সংখ্যাভিত্তিক সাইফার বলে এর দুর্বলতা ধরতে পারেন আবু আল-কিনদি। তাও আবার নবম শতাব্দীতে। ৯০০ বছর পরে! এর পারমুটেশন কম্বিনেশনে অক্ষরের সংখ্যা বেশি হলেও এর আসল ব্যবহৃত অক্ষর কম। একটা ইংরেজি অভিধান খুলে বসুন এখুনি। সব অক্ষর কি ব্যবহার হচ্ছে সমানভাবে? অবশ্যই না। একটা টেবিল দেখি বরং। ইংরেজি অক্ষরগুলো এই ভাষায় কিরকম ব্যবহার হয় সেটা ধরতে পারলে তো কেল্লা ফতে। একজন উত্‍সাহী ক্রিপ্টগ্রাফার ইচ্ছা করলেই ধরতে পারবেন ইংরেজিতে কোন অক্ষরগুলো বেশি ব্যবহার হয় অথবা কম। এটাকে বলি আমরা ‘ক্রিপ্ট-অ্যানালিসিস’। ধরুন, একটা মেসেজ লিখলেন ‘প্রতিস্থাপন’ সাইফার দিয়ে। আমি ছোট্ট একটা প্রোগ্রাম তৈরি করবো যা ওই গুপ্ত মেসেজের কোন কোন অক্ষর কতোবার ব্যবহার হয়েছে সেটা বের করবে। সোজা কিন্তু! তবে, এটার জন্য প্রোগ্রামও দরকার নেই, মেসেজ ছোট হলে – হাতে গুণে কাগজে লিখে রাখবো সামনে। এরপর গুপ্ত মেসেজটার একেকটা অক্ষর ধরে ধরে পাল্টে দেবো অভিধানে দেয়া সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অক্ষর দিয়ে। পর্যায়ক্রমে। তবে, মেশিনের মতো করে নয়।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

There is no security on this earth. There is only opportunity.

– General Douglas MacArthur

২০.

‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’র অ্যালগরিদম নিয়ে কথা বলি বরং। ডাটাকে লুকানোর জন্য যা যা করা দরকার সেটা লেখা থাকবে এই অ্যালগরিদমে। এটা এক ধরনের ‘স্টেপ বাই স্টেপ ইন্সট্রাকশন সেট’ যা ঘুরালে হারিয়ে যাবে ডাটা। আবার ওটাকে উল্টাভাবে ব্যবহার করলে ‘চিচিংফাক’। মানে ডাটা হাজির। তবে সেটাকে জানতে হবে যারা লুকাবে আর খুলবে ওই দরকারী ডাটাটাকে। উদাহরণ নিয়ে আসি বরং। একটা লেখা পাঠাতে হবে দূরে। বাহক সেটা মানুষ অথবা ইন্টারনেট যাই হোক না কেন – আপত্তি থাকার কথা নয় কারো। লেখাটা ‘এনক্রিপ্ট’ করে পাঠানোর সময় অন্যের হাতে পড়লেও সমস্যা হচ্ছে না এমূহুর্তে। যার লেখাটা পাবার কথা নয়, সে সেটা পেলেও অ্যালগরিদম তো আর জানে না ওই লোক। ইমেইলে পাঠানোর সময় অন্যের হাতে পড়তে পারে ওই গুপ্ত লেখাটা। চাবি তো নেই আর তার কাছে। ছোট্ট একটা ‘অ্যালগরিদম’ তৈরি করি এখানে।

ধাপ – ১। লেখার সব ‘ক’ অক্ষরগুলো পাল্টে দিতে হবে সংখ্যা ‘৪’ দিয়ে। ধাপ – ২। লেখার ভেতরে সব ‘ব’ অক্ষর মুছে দিতে হবে ঢালাও ভাবে। ধাপ – ৩। লেখার শেষ দিক থেকে শুরু করে পুরো লেখাটা নতুন করে ‘রি-রাইট’ করতে হবে শুরু থেকে। (মানে, শেষ থেকে একটা একটা করে অক্ষর নিয়ে সেটাকে নতুন করে বসাতে হবে প্রথম দিক থেকে)

২১.

অনেক আগের একটা ধারনা দিয়ে শুরু করলাম আজ। তবে বর্তমান ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ এর থেকে হাজার কোটিগুণ শক্ত ‘অ্যালগরিদম’ দিয়ে বানানো। আপনার সামান্য জিমেইলই ব্যবহার করছে ওপেনএসএসএল, সিকিউরড সকেট লেয়ার, যা ভাঙা অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। ট্রান্সপোর্ট লেয়ার তো আরো শক্ত! তবে ওয়েব সার্ভিসগুলোর মধ্যে যারা ‘ডিফি-হেলম্যান’ অ্যালগরিদম ব্যবহার করছেন না, তাদের ছাড়া বাকীদের বেশীরভাগ ট্রাফিকই হাজারটা কম্পিউটিং রিসোর্স দিয়ে ‘ডিক্রিপ্ট’ করা সম্ভব যদি সার্ভারের ‘মাস্টার প্রাইভেট কী’ হাতে পায় কেউ। তবে সেটা পাওয়াও অসম্ভব ওই সার্ভার থেকে। তাহলে মানুষ পায় কিভাবে? ধরুন, এমন ঘটনা ঘটলো যেখানে মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তখন একটা কোর্ট অর্ডারই ওই কোম্পানীকে বাধ্য করে সার্ভারের ‘মাস্টার প্রাইভেট কী’ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাদের হাতে দিতে। তবে সেটাও এখন বিপদের মুখে।

২২.

মনে আছে এডওয়ার্ড স্নোডেনের ডকুমেন্টের কথা? ২০১৩ সালে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাওয়া ওই ডকুমেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘এনএসএ’র কাজ নিয়ে কথা ওঠায়। ‘ন্যাশন্যাল সিকিউরিটি এজেন্সি’ ওই তিরিশ দিনে প্রসেস করেছিল ১৮১,২৮০,৪৬৬টা ইমেইল রেকর্ড। এতে বিপদে পড়ে জিমেইল আর ইয়াহু কর্তৃপক্ষ। সবাই একে অপরের দোষারোপ করে স্টেটমেন্ট দেয় কাগজে। এর পরেই ‘এনক্রিপশন’ প্রযুক্তি পাল্টায় গুগল। এখন প্রতিটা ইমেইল ‘এনক্রিপ্ট’ হয়ে যাওয়া আসা করে জিমেইল সার্ভার থেকে। ‘সিকিউরড এইচটিটিপি’ ব্যবহার করছে প্রথম থেকেই। তবে সেটা ‘কমপ্লিমেণ্টেড’ হলো আরো উন্নতর প্রযুক্তি দিয়ে। ফলে প্রতিটা সেশনের জন্য সে তৈরি করবে নতুন নতুন চাবি। আগে ‘এনক্রিপ্ট’ হতো গ্রাহক আর সার্ভারের মধ্যে যোগাযোগগুলো। নিজেদের ডাটাসেন্টারগুলোর মধ্যে যোগাযোগগুলোও ‘এনক্রিপ্ট’ করা শুরু করেছে সার্ভিস প্রোভাইডাররা। বিপদে পড়েছে এখন দেশগুলো।

তবে যে যাই করুক, সবকিছুর শুরু হচ্ছে ওই পুরানো সংখ্যা আর সম্ভাব্যতা মানে ‘প্রোবাবিলিটি’ তত্ত্বের ওপর।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

If you think cryptography is the answer to your problem, then you don’t know what your problem is.

– Peter G. Neumann, New York Times, February 20 2001.

১৫.

গল্প দিয়েই শুরু করি কি বলেন? শাফায়েত কিছু একটা জানাতে চাচ্ছে সালমাকে। দুজন আবার থাকে শহরের দুপ্রান্তে। যোগাযোগ করতে পাঠাতে হবে কিছু একটা – কাগজে লিখে। শাফায়েত ম্যাসেজটা লিখলো গোপন একটা কোড দিয়ে। গোপন কোডটা জানে মাত্র ওই দুজন। আগে থেকেই। পরে, ওর বন্ধুকে দিয়ে কাগজটা পাঠিয়ে দিলো সালমার বাসায়। সময়মতো সালমার জানালা দিয়ে জিনিসটা ফেলেও দিলো বন্ধুটা। কপাল ভালো হলে সেটা পাবে সালমা। কিন্তু গল্পে দরকার ‘টুইস্ট’। কপাল খারাপ, ওটা গিয়ে পড়লো সালমার ‘বদরাগী’ বড় ভাইয়ের হাতে। সব বড়ভাই বদরাগী হয় কিনা জানিনা, তবে সালমার ভাই ‘ওই সিনেমা’র মতোই বদরাগী। কাগজটা পেলেন ঠিকই তবে সেটার মাথামুন্ডু কিছু না বুঝে ফেলে দিলেন ওয়েস্ট পেপার বীনে। সালমা সবার চোখের আড়ালে তুলে নিয়ে এলো জিনিসটা – ওই বীন থেকে। আগে থেকে ‘শেয়ার’ করা কোড দিয়ে ম্যাসেজ উদ্ধার করলো মেয়েটা। আমার জীবনের গল্প দিলাম কিনা?

১৬.

এখানে যে পদ্ধতিতে শাফায়েত ম্যাসেজটা গোপন করলো সেটাকে বলে ‘এনক্রিপশন’। আর যেভাবে ম্যাসেজটা পাঠোদ্ধার করলো সালমা, সেটা ‘ডিক্রিপশন’। ধরুন, ওই কোড ছাড়া পাঠাতে গেলে কি করতে হতো শাফায়েতকে? একটা বাক্স কিনে লাগাতে হতো তালা। ওই চাবিটার দুই কপি থাকতো দুজনের কাছে। অথবা ‘কম্বিনেশন লক’ হলে সেটার তিন ডিজিটের সংখ্যাটা জানতো দুজনই। ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’তে ওই তালার চাবিকে প্রতিস্থাপন করছে একটা কোড। যাকে আমরা বলছি ‘সাইফার’। আবার যেই পদ্ধতিতে ‘এনক্রিপ্ট’ করা হচ্ছে সেটা হতে পারে কিছু গাণিতিক অ্যালগরিদম, তাই না? আর যে অ্যালগরিদম দিয়ে ওই তথ্যটা লুকানো হচ্ছে সেটাকেও বলা হচ্ছে ‘সাইফার’। ওই ‘সাইফার’ মানে যে অ্যালগরিদম দিয়ে ওই তথ্যকে লুকানো হয়েছে তার ‘ভার্চুয়াল তালা’টার চাবি কোথায়? ওই চাবিটাই হচ্ছে লুকানোর ‘কোড’। ওটা দিয়ে খোলা যাবে গুপ্ত তথ্যটা। তালার মতো ওই ‘চাবি’টাই (কোড) আসল।

১৭.

‘সাইফার’ ওই ম্যাসেজটাকে এমনভাবে ‘স্ক্র্যাম্বল’ আর ‘ডি-স্ক্র্যাম্বল’ মানে ‘ঘুটা’ দেয় যে সালমার ভাই আর শাফায়েতের বন্ধুর কাছে পুরো জিনিসটাই ঘোলাটে মনে হবে। এই ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ চলে আসছে হাজার বছর ধরে। এটা নিয়ে হয়েছে অনেক অনেক যুদ্ধ – বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত। যুদ্ধের জয় পরাজয়ও নির্ভর করেছে এই ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’র ওপর। এক দেশ পাঠিয়েছে ম্যাসেজ, সেটা হাতে পেয়ে প্রযুক্তির সাহায্যে ‘ডিক্রিপ্ট’ করে আগে ভাগে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ‘অ্যালাইড ফোর্স’। ওই গল্প জানেন সবাই।

১৮.

আমি যেখানে কাজ করছি, ওই টেলিযোগাযোগ সেক্টরের পুরোটাই চলছে এই ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’র ওপর। ফোন, ইন্টারনেট, ইমেইল, স্কাইপ, স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফাইনান্সিয়াল ট্রান্জাকশন, এটিএম নেটওয়ার্ক, অনলাইনে কেনাকাটা – যাই চিন্তা করেন সেটার কোর জিনিস হচ্ছে এই ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’। এটা না থাকলে আপনার আমার ইমেইল পড়ে ফেলার কথা সবার। স্কাইপ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে অনেক। উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে ব্যাপারটা। এক ব্যাংক থেকে টাকা পাঠানো হবে আরেক ব্যাংকে। ভাড়া করলেন ‘স্টেট অফ দ্য আর্ট’ এসকর্ট সার্ভিস। পথে টাকা হাইজ্যাক হবার প্রশ্নই আসে না। এসকর্ট সার্ভিসের হাতে টাকা দেবার আগেই লূট হয়ে গেল টাকাগুলো ব্যাংক থেকে। দোষ দেবেন কাকে? এসকর্ট সার্ভিসকে? ভেবে দেখুন।

১৯.

পৃথিবীটাই চোর পুলিশের খেলা। ‘ক্লোজ’ ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ ব্যবহার করছেন যারা, মানে কোম্পানীগুলো – তাদের হাত পা বাধা। তবে, ধরুন – আপনি তৈরি করলেন একটা ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ সিষ্টেম। কমপ্লায়েন্সের কারণে ওই সরকারকে দিতে হলো এর ‘কী’ মানে চাবিটা। অর্থাত্‍ দেশ মনিটর করতে পারবে এটা দিয়ে ‘এনক্রিপ্ট’ করা পাঠানো ফাইল অথবা ভয়েস কল। কিন্তু ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ সিষ্টেমটা ওপেন সোর্স হবার কারণে যে কেউ নিজের মতো তৈরি করে নিতে পারবে আরেকটা ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ সিষ্টেম। কি হবে তখন? অথবা, কয়েকটা ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ সিষ্টেমের কম্বিনেশন? জার্মান পত্রিকা ‘দার স্পাইজেল’ কিছু ডকুমেন্ট পেয়েছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ’র। ডিফেন্স কনট্রাক্টর এডওয়ার্ড স্নোডেনের হাত দিয়ে। পরে মার্কিন পত্রিকাগুলোতেও কিছু ঘটনা আসে এ সুত্রে। অনেক ‘ক্রিপ্টোগ্রাফী’ এখনো মাথা খারাপ করে দিচ্ছে তাদের এনএসএ’র। প্রযুক্তির উত্কর্ষতার সাথে সাথে সমস্যা আসবেই।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »