But the real way to get happiness is by giving out happiness to other people. Try and leave this world a little better than you found it, and when your turn comes to die you can die happy in feeling that at any rate you have not wasted your time but have done your best.
– Last message to scouts, Robert Baden-Powell
৩৮৬.
স্বপ্ন দেখানোর কোম্পানির ব্লু-প্রিন্ট করতে গিয়ে পড়লাম বিপদে। ভালো কথা, স্বপ্ন দেখাবো – কিন্তু কি ধরনের স্বপ্ন? চিন্তা করতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে উঠলাম। আমার স্বপ্নটা কি সেটা বুঝতে বুঝতে বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেল। আমার ধারণা, যারা উদ্যোগতা তাদের স্বপ্ন পূরণ হয় তাড়াতাড়ি। নিজের বস নিজে হলে স্বপ্ন পূরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফিরে আসি নিজের কথায়। স্বপ্ন দেখানোর পাগলামিটা কোথায় পেলাম থেকে সেটা নিয়ে কম প্রশ্নের সন্মুখীন হইনি আমি। ভালো কথা, পাল্টা প্রশ্ন করি আপনাকে? আপনি কি চেয়েছেন জীবনে? আপনার স্বপ্নটা পূরণ করতে পেরেছেন কি? আবারো প্রশ্ন করছি আপনার চূড়ান্ত স্বপ্নের ব্যাপারে। মানুষের অনেকগুলো মধ্যম পর্যায়ের স্বপ্ন থাকতে পারে, তবে আপনি কি হতে চেয়েছিলেন শেষ অবধি? উত্তরটার জন্য আপনাকে কিছু ইনপুট দেই বরং।
৩৮৭.
দিনের শেষে কি হতে চান আপনি? একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো ছেলে/মেয়ে, নিজের বাচ্চাদের জন্য ভালো বাবা/মা? অথবা সহৃদয়বান সহকর্মী যিনি অন্যদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেন? অথবা এমন মানুষ যিনি অন্যদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিলিয়ে দেন সারাটি জীবন? কি হতে চেয়েছিলেন জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত? আরো একটা ইনপুট নিয়ে আসি এখানে। মনে করুন তো শেষ কবে গিয়েছিলেন আপনার প্রিয় কারো জানাজাতে? অথবা তার বাসায় উনার মৃত্যুর পর? কি হয়েছিলো ওখানে? সবার মুখে কি দেখতে পেয়েছিলেন? সবাই কি কথা বলছিলেন উনাকে নিয়ে? কেমন মানুষ এসেছিলেন ওনার মৃত্যুর পর? পত্রিকায় উনার ব্যাপারে কি লেখা হয়েছিলো?
৩৮৮.
যুদ্ধ ঠিক যেদিন শুরু হবে অর্থাৎ আক্রমনের ওই দিনটাকে আমরা বলি ‘ডি’ ডে। ওই ‘ডি’ডে টাকে শূন্য ধরে ডি-২ বা ডি-৫ দিন ধরে থাকি প্রস্তুতির সুবিধার্থে। মানে, ডি-৩ দিবসে কি করবেন সেটারও প্ল্যান করতে হয় আগেভাগে। এটা এক ধরনের ব্যাক ক্যালকুলেশন। প্রিয়জনের মুখটা শেষবারের মতো দেখতে যেয়ে চিন্তা করুন ওখানে নিজের মুখটাকে। ধরে নিন এটা আমার আপনার মৃত্যুর পরের ঘটনা। ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে নিলাম আমার আপনার জীবনটাকে। ডি ডে, মানে ডি শূন্য দিবস। যেদিন মারা গেলাম আমরা। চিন্তা করুন ডি+১ আর তার পরবর্তী দিনগুলোকে। আপনার জানাজার সময় কেমন মানুষ এসেছিলো? তারা সবাই কতটুকু ‘ইমপ্যাক্টেড’? আপনার কথা স্বরণ করতে যেয়ে কি বলছিলেন তারা? ওখানে বসে চিন্তা করুন আপনার আত্মীয়দের কথা? কি করছিলেন তারা? আপনার স্বামী/স্ত্রীর কি অবস্থা? আপনার ছেলেমেয়েগুলোর? আপনার বন্ধুদের আলোচনা? কেমন ছিলেন উনাদের চোখে আপনি? আমার ধারনায় ওটাই হচ্ছে সত্যিকারের ইভালুয়েশন। সৃষ্টিকর্তাও জানতে চান আপনি আমি কেমন ছিলাম? বিশেষ করে অন্যের চোখে। ওরকম একটা প্রশ্ন করা হয় জানাজাতে।
৩৮৯.
এখন আসি ব্যাক ক্যালকুলেশনে। বাংলাদেশের লাইফ এক্সপেকটেন্সীতে বাঁচি আমরা পঁচিশ-তিরিশ হাজার দিন। হিসেবের সুবিধার্থে ডি-১৫০০০ দিবস ধরে নিলাম আজ। স্বপ্ন পূরণের ব্লু-প্রিন্ট করেছি কি আমরা? আপনি যা হতে চান অথবা যা করতে চান তার ব্যাপারে কি করেছেন আপনি? হাজারো বই পড়ছি বলে অনেকগুলো ধারণাই মিলে যাচ্ছে একে অপরের সাথে। মনে আছে তো – স্টিভেন কোভি’র দ্বিতীয় অভ্যাসটার কথা? শুরু করতে হবে শেষের চিন্তাটা মাথায় নিয়ে। যাই শুরু করছেন না কেন আজ, শেষটা থাকে যেনো মাথায়। তাহলেই কিন্তু পৌছাতে পারবো আমাদের স্বপ্নে। নেপোলিয়ান হিলের কথাটাতে আসি ফিরে। মানুষ যা চিন্তা করতে পারে, চাইলে সে সেটা পেতে পারে। মানে আমি আজ যা হতে চাই বা পেতে চাই সেটা মস্তিস্কে ‘পারসিভ’ করলে সেটা পাওয়া সম্ভব। রন্ডা বার্নের ‘সিক্রেট’ ভিডিওটা দেখেছেন কি? আপনি যা চাইবেন পুরো পৃথিবীর সমস্ত শক্তি জড়ো হয়ে আপনাকে দিতে চাইবে, কিন্তু আপনাকে চাইতে হবে আগে। আমি আপনি কি চাই সেটা নিয়ে বসেছি কখনো? নিভৃতে। কথা বলেছি কি মনের মন্দিরে? লিখেছি কোথাও? লিখি তো বাজারের লিস্টিও!
৩৯০.
অভিজ্ঞতা বলে, প্রতিটা জিনিস তৈরী হয় দুবার। হ্যা, পৃথিবীর প্রতিটা জিনিস। মাথায় তৈরী হয় আগে, বাস্তবে তৈরী হয় ঠিকমতো চাইলে। আমাদের অফিসটার কথাই ধরুন। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট বিল্ডিংয়ে এর অবস্থান। চমত্কার বিল্ডিং। আজ এ বিল্ডিংটা দাঁড়িয়ে আছে বাস্তবে, কারণ কেউ না কেউ ওই খালি জায়গাটার পাশে দাঁড়িয়ে পুরো বিল্ডিংটা দেখেছিলেন আগে। মাথা উচু করে পনেরো তলা পর্যন্তও গুনেছিলেন উনি! এই বাতাসেই! ফ্লোর বাই ফ্লোর। এতো নিঁখুতভাবে যে বিল্ডিংটার কাঁচের প্রতিফলিত আলোর জন্য মাথা নুইয়ে নিয়েছিলেন উনি। স্বপ্নচারী মানুষ বলে কথা। অবিশ্বাসী মানুষেরও অভাব নেই। স্বপ্নে দেখেছেন নাকি প্রশ্ন করেছিলেন কেউ কেউ। তাদের জন্য আঁকা হয়েছিলো পুরো বিল্ডিংটা। বিল্ডিংটা তো আর হঠাত্ করে বানানো হয়নি। আবার হঠাত্ করে কেউ তো ইট সুরকি নিয়ে হাজির হননি খালি জায়গাটায়। বাস্তবে আসার আগেই স্বপ্ন দেখেছেন বছরের পর বছর ওই বিল্ডিংটা নিয়ে। বুঝতে চেয়েছেন কি চান তারা। আর আমাদের জীবন নিয়ে কি চাই সেটা নিয়ে চিন্তা করেছি কখনো? কতটুকু সময় দিয়েছি ভাবার জন্য – সত্যিকারের কি চাই আমরা?
৩৯১.
নিয়তির পরিহাসের মতো শোনালেও অফিসের কাজ বা একটা প্রজেক্টের পেছনে যতটা সময় দেই সে তুলনায় নিজের জীবনের প্রজেক্টে সময় দেয়া হয় না কখনো। আমি কি করতে ভালবাসি মানে সত্যিকারের ভালবাসার জিনিসটা উপেক্ষিত হয়ে থাকে সারাজীবন। অফিসের প্রজেক্টের কাজে প্রতিটা মাইলস্টোন লিখে রাখলেও নিজে কি চাই এ জীবন থেকে তা কি লিখে রাখিনি কখনো। সর্বোচ্চ চাওয়া। আমিও লিখিনি চল্লিশ বছরের আগ পর্যন্ত। আরো ভয়ংকর একটা কথা বলি? আমাদের অনেকেই বছর ধরে ভ্যাকেশনে কোথায় কোথায় যাবেন আর কি কি করবেন প্ল্যান করেন সেটার। সাময়িক মুক্তি পাবার জন্য, এই দুঃসহ জীবন থেকে। অথচঃ বর্তমান জীবনটাকে সুন্দর করার ব্যাপারে একটা প্ল্যান করতে আমাদের অনীহা অনেক। বিদেশে যেয়ে তাদের স্কাই ট্রেন দেখে আন্দোলিত হলেও দেশে এসে তাকিয়ে থাকি সরকারের দিকে। স্বপ্ন দেখতেও ভয় পাই ওটা নিয়ে। থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশের মানুষেরা নিজেরাই টাকা তুলে বিশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরী করছেন সরকারের দিকে না তাকিয়ে থেকে। মনে চাইলো তো নতুন একটা মোবাইল কোম্পানিই খুলে ফেললো সবাই মিলে। ওটার গল্প মানে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড নিয়ে আসবো সামনে। তবে নিজের মতো করে কিসে আমাদের পরিবেশটাকে সুন্দর করা যাবে সেটার একটা ব্লু-প্রিন্ট তৈরী করা গেলে দেশটাকে নিয়ে যেতে পারবো অন্য মাত্রায়। তার জন্য জানতে হবে নিজেদের সত্যিকারের চাওয়াটাকে। তাহলে পালানোর ব্লু-প্রিন্ট করতে হতো না বছর ধরে।
৩৯২.
স্টিভ চ্যান্ডলারের একটা বেস্টসেলার পড়ছিলাম কয়েকদিন ধরে। সাধারণ নাম, তবে বিভ্রান্তকর টাইটেল, না জানলে কিনতাম না কখনই। আমাজনে রিভিউ পড়ে হুঁশ হলো আমার। চাইই আমার বইটা। থাকি ঢাকায়। একদিন স্বপ্নেও দেখলাম বইয়ের কভারটা। আমার কোলে। চাওয়ার মাত্রাটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবার আগেই চলে এলো বইটা। একেবারে আমার টেবিলে। চোরাই বই চেষ্টা করি না পড়ার জন্য। পড়লেও পরে বইটা কিনে নেই নিজের জন্য। আমি চুরি করলে আমার বই কিনবে কে? চ্যান্ডলারের কথা একটাই। দুনিয়া থেকে যাবার আগে একটা প্রশ্ন আসবে কিন্তু বারে বারে। কি পরিবর্তন করেছি সবার জন্য? কি ভালো হয়েছে আমার এই দুনিয়াতে আসাতে? উত্তরটা কিন্তু ছোট, কতটুকু দিতে পেরেছি দুনিয়াকে।
৩৯৩.
স্কাউটের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রবার্ট বেইডেন পাওয়েলের কথা ওই একই সুরে বাধা। স্কাউটদের জন্য লেখা শেষ চিঠিটা মুগ্ধ করবে সবাইকে। কতোটুকু ‘এনলাইটেনড’ হলে একজন মানুষ তার ভ্রমণের সময় সাথে রাখতেন চিঠি কয়েকটা। তার একটা ছিলো মার্ক করা – ‘আমার মৃত্যুর পর’। স্ট্যানফোর্ডে দেয়া স্টিভ জবসের তিন নম্বর গল্পটা ছিলো মৃত্যুর ওপর। আমার মতে, সেরা অংশ। মাসলো’র তত্ত্ব অনুযায়ী এরা পৌঁছে গেছে ‘সেলফ অ্যাকচুয়ালাইজেশন’ পর্বে, তা না হলে মেলিন্ডা এন্ড গেটস ফাউন্ডেশন বিলিয়ন ডলার ঢালছে কেন মানব কল্যানে? সেরা অংশের ভাবটা তুলে আনলে ‘কনটেক্সট’টা বাদ যেতো চলে। সেকারণেই – সেরা অংশের আমার সেরা অংশটা হুবহু তুলে দিচ্ছি এখানে।
Your time is limited, so don’t waste it living someone else’s life. Don’t be trapped by dogma — which is living with the results of other people’s thinking. Don’t let the noise of others’ opinions drown out your own inner voice. And most important, have the courage to follow your heart and intuition. They somehow already know what you truly want to become. Everything else is secondary.
৩৯৪.
আমাদের সমস্যাটা কোথায়? স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই কেন আমরা? কেন জানি না – আমরা কি চাই জীবনে? স্বপ্ন দেখানোর কোম্পানির বিজনেস কেস না থাকলেও সাহস পাচ্ছি কোথা থেকে? নিজের ভয় কাটানোর গল্প নিয়ে আসছি সামনে।
বিদায় নেবো একটা মিউজিক ভিডিও দিয়ে। কেনী চেজনী’র এই গানটা মনে করিয়ে দেয় ক্যাডেট কলেজের এথলেটিক প্রতিযোগিতাগুলোর কথা। পুরো গানটা না শুনতে পারলেও পাঁচ মিনিট পঞ্চাশ সেকেন্ড থেকে মিস করবেন না, অনুগ্রহ করে। স্বপ্ন দেখবোই আমরা! থাকুন সাথে।
[ক্রমশঃ]