I am often accused of interfering in the private lives of citizens. Yes, if I did not, had I not done that, we wouldn’t be here today. And I say without the slightest remorse, that we wouldn’t be here, we would not have made economic progress, if we had not intervened on very personal matters – who your neighbour is, how you live, the noise you make, how you spit, or what language you use. We decide what is right. Never mind what the people think.
― Lee Kuan Yew
৪৩৯.
লিখতে পারছিলাম না বলতে হাত চুলকাচ্ছিলো কয়েকদিন ধরে। আবার লিখতে বসলে কি লিখবো সেটাও ভেবে সারা। হাজারো টপিক ঘুরছে মাথায়। কতো কিছু করার আছে আমাদের – আবার, সব কিছুর হবার দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। ল্যান্ড অফ অপুর্চুনিটি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কথা আসলেও কাজ করতে চাইলে আসল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। অনেক কিছুই হয়নি এখনো। উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে আফ্রিকার অনেক দেশ ঘোরার সুবাদে মিসিং লিংকগুলো বোঝা যায় সহজে। মিসিং লিঙ্কের মধ্যে কয়েকটা জিনিস নিয়ে আমি খুবই আশান্বিত। সাত বছর আগে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)তে আসতে পারার সুবাদে ব্যাপারটা ভাবিয়েছে আমাকে। অনেক অনেক বেশি।
৪৪০.
আমাদের সমস্যা কোথায়? আপনি কোনো কিছু করতে চাইলে সেটার কোনো নীতিমালা পাবেন না। প্রায় সবই অলিখিত। আর অলিখিত থাকার কারণে ‘শর্টকাট’ নেবার একটা প্রবণতা থাকে। আমি নিজে সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে অন্য অফিসে কাজ করতে গেলে আমার পরিচিত মানুষ খুঁজি। আর ওটাই কষ্টকর। কেন আমাকে খুঁজতে হবে পরিচিত মানুষকে? এটাতো আমার দেশ। বিদেশ তো নয়। কারণ, ওকাজটা করার জন্য প্রোসিডিউরটা নেই তাদের সাইটে। নেই কোনো দৃশ্যমান বিলবোর্ড। কি কি কাগজ জমা দিতে হবে, কতদিন লাগতে পারে, কার সাথে কথা বলতে হবে, ওসব ঠিকমতো না লেখা থাকার কারণে যতো ভোগান্তি। নীতিমালার কাজও কম হয় আমাদের। আবার নীতিমালাগুলো করিয়ে নেয় বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা। সাহায্যের একটা বড় শর্ত থাকে স্বচ্ছ নীতিমালা তৈরী করা। মজার কথা হচ্ছে ওই নীতিমালাগুলোর বেশিরভাগ আসে বিদেশী কনসালটেন্টদের হাত দিয়ে। আমরা আমাদের রেকোয়ারমেন্ট এনালাইসিস না করতে পারার কারণে ওরাই ‘আমরা কি চাই’ সেটা ঠিক করে দেয়। আমাদের ‘কম্পিটেন্স’ কি কম? আমরা কি পারি না লিখতে? পলিসি ডকুমেন্ট? কাজ করার পদ্ধতিগুলো? সহজভাবে?
৪৪১.
সামরিক বাহিনীতে আবার সবকিছুই থাকে লেখা। না লিখে যাবে কোথায়? মানুষের জীবন নিয়ে যাদের দৈনন্দিন কাজ তাদের না লিখে থাকার জো নেই। প্রায় আদিমতম পেশা হওয়াতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি রিসার্চ জ্ঞান আছে তাদের। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে ‘লেসনস ফ্রম মিলিটারি’র গল্পগুলো বড় বড় কোম্পানিকে শিখিয়েছে অনেককিছু। এখন সবকিছুই চলে যুদ্ধক্ষেত্রের ধারনায়! আমি সামরিক বাহিনীর টেলিযোগাযোগ নিয়ে কাজ করাতে সৈনিকদের টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের লেসন প্ল্যান লিখে শুরু আমার পলিসি ড্রাফটিংয়ের জীবন। একই গল্প দুবার বলতে গেলেই বিরক্তি লাগতো আমার। কাজচোরাদের কাজ একটাই। একটা কাজ বার বার না বলে ওটাকে কোথাও লিখে ফেলা। তারপর ওটাকে সময়মতো সার্কুলেট করা। লেজিনেস ইজ দ্য ফাদার অফ ইনোভেশন। লিখতে লিখতেই শিখে গেলাম কিভাবে তৈরী করতে হয় পলিসি। কাজের সুবিধার্থে তৈরী হয় নীতিমালা। মানুষের অসুবিধা করে নয়।
৪৪২.
জীবনের শুরুতে একটা কমোডর কম্পিউটারের ম্যানুয়াল হাতে পাওয়াতে মাথা খারাপ হবার যোগাড় হয়েছিলো প্রায়। সত্যিকারের অডিও ক্যাসেট দিয়ে প্রথমে লোড হতো অপারেটিং সিস্টেম, পরের ক্যাসেটটায় থাকতো অন্য এপ্লিকেশন। কম্পিউটারটা হাতে পেয়ে না চালাতে পারার কষ্টে বসলাম ম্যানুয়াল নিয়ে। ওমা, অসম্ভব কথা! এটা পড়লে ক্লাস থ্রী’র বাচ্চাও চালাতে পারবে এই মেশিন। আর মেশিনটা সবাই চালাতে পারলেই বাড়বে বিক্রি। ওই ম্যানুয়ালগুলো তৈরিতে কোটি টাকা খরচ করেছিলো হয়তোবা। জীবনের মিশন হয়ে গেলো ম্যানুয়াল লেখা। বড় হয়ে একটা বড় সময় থাকতে হয়েছিলো মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণে। ওদের ম্যানুয়ালগুলো দেখে তো চোখ ছানাবড়া। স্টেপ বাই স্টেপ, ভুল হবার জো নেই। এয়ারবাস এ-৩৮০’র ম্যানুয়াল দেখে তো আরো মুগ্ধ! বলে রাখি একটা কথা, অন্য বইয়ের সাথে ম্যানুয়াল পড়া আমার নেশা। আরটিএফএম! গুগল ‘আরটিএফএম’।
৪৪৩.
সারাদিন বিটিআরসি’র অফিসে বসে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কাজে ঢুকে থাকাটাই ছিলো আমার লার্নিং গ্রাউন্ড। মজার কথা, ছুটিতেও যেতে চাইতাম না। শিখতে পারাটাই হচ্ছে ওখানকার সবকিছু। ওখানে টেবিলে মাথা লাগিয়ে রাখলেও আপনি শিখবেন অনেককিছু। আপনি শিখতে না চাইলেও আপনার স্টেকহোল্ডারদের চাপে শিখে যাবেন আপনি। ওদের কাজের দরকারে শিখিয়ে ছাড়বে আপনাকে। ধরা যাক, আপনি সাতশো মেগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম ছাড়তে চাইছেন বাজারে। প্রথম প্রশ্ন, কিভাবে ছাড়বেন? তারপরের কোটি প্রশ্নের কয়েকটা এমন হতে পারে, কবে ছাড়বেন, দাম কতো হলে ছাড়বেন, কোন পদ্ধতিতে ছাড়বেন, কোনটায় ভালো হবে দেশের, ইকুইপমেন্ট আছে কিনা বাজারে, ডিভাইস ইকোসিস্টেম তৈরী কিনা ইত্যাদির উত্তর নিয়ে ঘুম কেড়ে নেবে আপনার। পোস্ট গুগলের যুগে এটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। হাজারো রেগুলেটরি ডকুমেন্টেশন হচ্ছে প্রথম ধাপ। দেশ বিদেশের রেগুলেটর আর আইটিইউ’র বন্ধুদের কাছে পাঠিয়ে দিন আপনার উইশলিস্ট। সকাল হতেই চলে আসবে শত শত লিংক। সবাই চায় তাদের দেশের রিসার্চের একটা ভালো আউটপুট যাতে পায় আরেকটা দেশ। আর বাংলাদেশকে সাহায্য করতে চায় অনেক দেশই।
৪৪৪.
একটা চিঠি ছেড়ে দিন অপারেটরদের কাছে। প্লাস, আপনার ধারনাটা দিয়ে ছেড়ে দিন ডিভাইসের ম্যানুফ্যাকচারারদের কাছে। উনারা জানেন কোথায় কি হচ্ছে, কোন টাইমলাইনে হচ্ছে, কোন রেগুলেটর কিভাবে কাজ করছে। কোথায় কি হারে কতো টাকা রিসার্চে ইনভেস্ট হচ্ছে। সব দেশের রেগুলেটররাও নির্ভর করেন অপারেটর আর ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারারদের ওপর। গ্রাউন্ড লেভেল স্টাডির জন্য। মানুষ কি চায় সেটা উনারা ছাড়া আর কে জানে? আর অ্যাপেলের মতো কোম্পানি হলে তো কথায় নেই। গ্রাহক খাবে না মানে? গ্রাহক কিভাবে খাবে সেটা নিয়ে ওর রয়েছে বিলিয়ন ডলারের রিসার্চ। সাত বছরের স্প্যানে শুনেছি দেশী বিদেশী হাজারো কোম্পানির বিজনেস প্ল্যান। আইটিইউতে জমা পড়ে হাজারো বিজনেস কেস। ওই ডকুমেন্টগুলো নিয়ে তৈরী করেছি ডিজিটাল লাইব্রেরি। হাজারো রিসার্চ। কারণ, ওই রিসার্চই সাহায্য করে পলিসি ফ্রেমওয়ার্কে।
৪৪৫.
আমাদের একটা পলিসি ডকুমেন্ট তৈরিতে প্রথমে যে জিনিসটার অভাব অনুভব করি সেটা হচ্ছে তার পেছনের রিসার্চ আর ডাটার অপ্রতুলতা। সরকারীভাবে আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলোকে কাজে লাগানো হয় না রিসার্চে। অথচ প্রতিনিয়ত খুব কমই রিসার্চ পেপার জমা পড়ছে দেশের সমস্যা নিয়ে। আমাদের দেশের সমস্যা নিয়ে কয়টা পিএইচডি দেয়া হয়? আমি তো নিজেই চাই কয়েকটা করতে। আমাদের দেশের সমস্যা নিয়ে অন্য দেশের ইউনিভার্সিটি থেকে প্রচুর পিএইচডি নিচ্ছে বিদেশীরা। আমার কথা একটাই। অনেক মানুষ আমাদের, বিশাল বাজার – এখানে কাজ না হয়ে যাবে কোথায়? পলিসি ডকুমেন্টেশনটা তৈরী করে নেয়া যেতে পারে ইউনিভার্সিটি থেকে। আর এখন পাবলিক কনসালটেশনের যুগে পলিসি ড্রাফট করে দেবে স্টেকহোল্ডার অথবা সাধারণ মানুষ। উইকিপিডিয়ার মতো। কিন্তু কাজ করার নিয়মটা সাইটে লেখা থাকলে ওই কাজ করার ‘লাইসেন্স’টার ওপর থাকবে সবার সমান এক্সেস। কম্পিটেন্ট যে, পাবে সে। পরিচিতি থেকে নয়।
৪৪৬.
যেখানেই যাওয়া হয় সেখানের একটা ‘টেক-আউট’ নিয়ে আসার চেষ্টা করি। হোক সেটা আফ্রিকার একটা ছোট দেশ অথবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। খোঁজার চেষ্টা করি ওরা এমন কিছু কি করেছে যেটা এখনো করতে পারিনি আমরা। সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। এয়ারপোর্টে কিনেছিলাম লি কুয়ান উ’র বই, ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট: দ্য সিঙ্গাপুর স্টোরি: ১৯৬৫-২০০০। বইটা পড়ে পানি এলো চোখে। আজ গভার্নেন্সের ওপর পুরো পৃথিবীর মানুষ পড়তে যায় ওখানে। আমাদের সরকারী কর্মকর্তারাও যান ওখানে পড়তে। আমারও একটা সুযোগ হয়েছিলো টেলিযোগাযোগ রেগুলেশনের ওপর পড়তে যেতে – এই সিঙ্গাপুরে। যাদের খাবার পানিটাও কিনে খেতে হয় পাশের দেশ থেকে – তাদের বিলাসিতা সাজে না। পলিসিতে সাংঘাতিক শক্ত এই দেশটা।
৪৪৭.
হাটিহাটি পা করে পলিসি লেখা শুরু করলেও ওই কোর্সটা পাল্টে দেয় আমার জীবন। নিজের দেশের নীতিমালা লিখতে গিয়ে পড়তে হয়েছে হাজারো দেশী বিদেশী নীতিমালা। আমাদের নীতিমালাগুলো এখনো উদ্দ্যোক্তাবান্ধব নয়। আমরা সরকারী কর্মকর্তা কিছু কিছু জিনিস ইনোভেশনের ওপর ছেড়ে দিতে পাই ভয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় দেশটা খালি আমার সম্পত্তি। প্রতিটা ক্লজ দেখে মনে হবে কিভাবে আটকে দেয়া যায় বিজনেসটাকে। হোয়াট’স-আপ অ্যাপটা বিক্রি হয়েছে আমাদের জাতীয় বাজেটের দামের সমান দিয়ে। এটা নিয়ে আমরা থ্রিলড সবাই। বক্তৃতায় ব্যাপারটা বলতে মুখিয়ে থাকি আমরা। কিন্তু এ ধরনের একটা অ্যাপ বাংলাদেশে তৈরী হতো কখনো? ওটার উত্তর চাইবো না আজ। আজ গুগল, পেপ্যাল বাংলাদেশে আসতে চাইলেও আসতে পারছে না কেন? এক বিদেশী তো মুখের ওপরে বলেছিলেন, এই ‘ড্রাকোনিয়ান’ পলিসি নিয়ে বেশি আশা কর কিভাবে?
৪৪৮.
ওই নীতিমালা লেখার উপর একটা ‘হাউ-টু’ জাতীয় বই নিয়ে আসছি শিগগিরই। প্রতিটা অর্গানাইজেশন থাকা উচিত তাদের নিজস্ব নীতিমালা। পাবলিশড! আর সে নীতিমালা কিভাবে লিখতে হবে – সেটার হাতেখড়ি হবে সামনে। দেশের নীতিনির্ধারনী থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবস্যার শুরুতে লাগে একটা দর্শন। ওই দর্শনটাকে অর্জন করার জন্যই তৈরী হয় পলিসি বা নীতিমালা। জাপানে একটা ডিম কিনে খেতে গেলেই চোখে পড়বে এক বিশাল ম্যানুয়াল। মানে ডিমটা ছেলার কৌশল থেকে শুরু করে ওটাকে কিভাবে ভাঙ্গতে হবে, কোন জায়গায় ধরতে হবে আর কিভাবে মুখে পুড়তে হবে সবই লেখা আছে ওই ম্যানুয়ালে। ওটা না দিলে কি হতো না? হতো। সবকিছু লিখে দেয়াটাই পড়ে একটা নিয়মে। ডিটেইলিং কিন্তু একটা সংস্কৃতি। সেটা আসে সবকিছু লেখার সংস্কৃতি থেকে।
বানাবো আপনাকে পলিসি অ্যান্তপ্রেনর, নীতিমালা উদ্দ্যোক্তা। জন কিংডনের ভাষায় ‘পলিসি উইনডো’ আর ‘পলিসি অ্যান্তপ্রেনর’ গল্প নিয়ে আসছি সামনে।