Feeds:
Posts
Comments

Posts Tagged ‘লেখালিখি’

But my favorite is the one I read once in a magazine or book whose name I can’t remember: there’s a house in a prairie, it’s dark outside and a violent storm is raging. Inside it’s bright and warm. Somebody opens a window and a bird flies in, crosses the room and flies out the other window, back into the night.

We’re this bird.

– Roberto Motta

০১.

মন ভালো না থাকলে লিখি। আলতু ফালতু। মনে যা আসে। ‘আ গ্রেট এস্কেপ ফ্রম ডিফিকাল্ট ওয়ার্ল্ড।’ কে কী বললো সেটা কেয়ার করলে সেটাও হতো না হয়তো। আমার ওয়াল, আমার জিনিস। আর ‘ওয়াল’ তো এলো অনেক পরে। আগে তো ছিলো ব্লগ। প্রথম ব্লগ পোস্টটা ছিলো দুহাজারে। আছে এখনো। আগেরগুলো হারিয়ে গেছে ওয়েব্যাক মেশিনে। ঠিক বলেছেন। ওটাই হচ্ছে আমাদের মানে প্রস্তরযুগের মানুষদের ‘ইন্টারনেট’ আর্কাইভ।

০২.

ফেসবুক নয়, বরং ‘কোরা’তে অ্যাডিক্ট আমি। নেই কোন ফ্রেণ্ডের ঝামেলা। কে যেন হুমকি দিলো, ‘রেকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট না করলে খুলে দেবো লুঙ্গি’। বললাম, ‘ভাই ওটা পরি না যে? কি হপে এখন?’ উত্তর যা আসলো সেটা অলেখ্য। এখন ম্যাসেঞ্জার খুলি না ভয়ে। ‘কোরা’ই ভালো।

০৩.

হাজারো প্রশ্ন করে মানুষ। প্রতিদিন। উত্তর পড়ে তারও বেশি। ব্যাপারটা অনেক ফুলফিলিং। মানুষ লেখে কম্যুনিকেট করতে। ইণ্টেলেকচুয়াল গ্রিডের সাপ্লাই বলেন অনেক। যাই হোক, অনেকে শুধুই পড়ে। উত্তরগুলো। যেমন আমি। বেশিরভাগ নিজেরই প্রশ্ন। অন্য কেউ করেছে। এই যা! মাথায় অদৃশ্য আলোর ঝিকিমিকি করে ওই সময়টাতে। বুঝি, অনেকের জন্য হয়তোবা ‘কমপ্লিট ওয়েস্ট অফ ইফোর্ট’।

০৪.

একজন লিখলো, আমার বেড়াল ভেগে গেছে পাশের বাড়ির বেড়ালীর সাথে। কী করবো? পুলিশে যাব? উত্তরও আসলো আরো অনেক বেগে। অনেকের অভিযোগ একই। বরং গুরুতর অভিযোগ এলো আরো কিছু। এক্সের সাথে চলে গেছে নিজের বেড়াল। ফ্রী কান্ট্রি। যে যার সাথে যাবে স্বেচ্ছায়। প্রাপ্তবয়স্ক বেড়াল বলে কথা। আর মতামত লেখার সময় ‘নো ক্যাট ওয়াজ হার্মড’।

০৫.

জীবনের ‘পারপাজ’ নিয়ে প্রশ্ন হয় অনেক। ওগুলো আরো মজার। পড়লে পাল্টে যায় জীবনের পার্সপেক্টিভ। উন্নত দেশগুলো কেন উন্নত সেটার কিছুটা আভাস পাওয়া যায় ওখানে। ‘মিনিমালিস্ট লিভিং’ নিয়ে পড়ছিলাম কিছুদিন। সুখী হবার অনেক উপকরণ নিয়ে আলোচনা শুনলে মুগ্ধ হতে বাধ্য। ‘হায়ার লিভিং’, মানুষ কী করলে অমরত্ব পেতে পারে সেটা নিয়েও অনেক আলাপ হয় ওখানে। আসল কথা, মানুষের মনের গভীরের অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে এই মর্তের মানুষ।

০৬.

হাই-টেক উত্তর আসে ওই ইনডাস্ট্রির মাথাগুলো থেকে। নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কী ধরনের ব্যবসা এখন জনপ্রিয় সেটাও বলছেন অনেক বাঘা বাঘা লোকেরা। কোন ব্যবসা টিকবে আর কোনটা নয় সেটা ভালো বোঝা যায় ওখানে গেলে। দেশকে উন্নতির শিখরে নেবার অনেক উত্তরও লিখছে মানুষ। বছর ধরে। মানুষের মন কতো ক্রিয়েটিভ হতে পারে সেটা বোঝা যায় কোরা’তে গেলে।

[ক্রমশ:]

কোরা’র কন্সালট্যান্ট দরকার হলে যোগাযোগ করতে পারেন এখানে। ওহ, আচ্ছা। না। কোরা’র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে এখনো নিয়োগ দেয়নি ওরা। দেবে হয়তোবা। অসম্ভব কিছু নয় এযুগে।

#wideangle-rh

** শুনছিলাম: অ্যাশলী মনরো’র ‘দ্য ব্লেড’। ওই গানের ইনফ্লুয়েন্সে খারাপ হয়েছে লেখা। না শুনলে ভালো হতো আরো।

Read Full Post »

Kind words and forgiveness are better than charity followed by injury.

— The Quran 02:263

৫৬.

আমাদের সামরিক বাহিনীতে একটা বই লাগে প্রায় অনেক কোর্সে। বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবো সেটা নিয়ে লেখা বইটা। যেকোন লেখালিখিতে জিনিসটা ‘কনসাল্ট’ করলে উন্নত হয় আউটপুট। সত্যি! সহজ সরল ভাবে লেখালিখির জন্য বইটা আসলেই চমত্কার। কিছুটা বিজনেস কম্যুনিকেশনের মতো। তবে সেটার ব্যাপ্তি আরো বড়। আমার লেখালিখির অনেক স্কিলসেট এসেছে ওই বই থেকে। একেক কোর্সে গেলে একেক দিককে গুরুত্ব দেয়া হয় বলে বাদ পড়লো না কোন চ্যাপ্টার। শেষ মেষ দেখা গেলো – দাগিয়ে ফেলেছি পুরো বইটাই। লাল, নীল, ফ্লুরোসেন্ট, সবুজ, হলুদ – বাকি থাকে আর কোন রঙয়ের হাই-লাইটার?

৫৭.

আরবী পড়াও প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম এর মধ্যে। আর, আগে আরবী পড়তে জানলেও অর্থ জানতাম না – অন্য অনেকের মতো। ফলে বইটা ছিলো মূল কোরআনের অনুবাদ। ছয়মাস লাগিয়েছি শুধু ওই অনুবাদটা পড়ার জন্য। প্রতিদিন একটু একটু করে। আবারো টেক্সট মার্কার শেষ করে ফেললাম কয়েকটা। বিভিন্ন রঙয়ের। শেষমেষ বাদ পড়লো খুব কম অংশ। প্রায় অনেক লাইনই হাই-লাইটেড। এরকম হবার কথা ছিলো না প্রথমে। যতই ভেতরে ঢুকছিলাম ততোই বাড়ছিলো মনের সম্পৃক্ততা। দ্য কম্যুনিকেশন সীমড ভেরি পার্সোনাল। প্রভাব পড়ছিল মনের ওপর। ওই হাজারটা ‘সেল্ফ হেল্প’ বইগুলো থেকে অনেকগুন ‘ইল্যুমিনেশন’ টের পাচ্ছিলাম মনের ভেতর। ‘ট্রানকুইল’, ‘পিসফুল’, মনে শান্তি, যাই বলেন সেটা আসতে শুরু করলো তিন মাসের মধ্যে। সৃষ্টিকর্তার সাথে একটা ইন্টার-পার্সোনাল কম্যুনিকেশনের ধারনা পাওয়া যায় কোরআন পড়লে। সরাসরি কথা বলছেন আমাদের সাথে।

৫৮.

সোর্সিং করলাম আরো কয়েকটা অনুবাদ। টের পেলাম কয়েকটা জিনিস। কোরআনের বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে বহু কাদা ছোড়াছুড়ি দেখেছি, তার প্রায় সব কয়টাই ‘আউট অফ কনটেক্সট’। আগে পেছনের জিনিস বাদ দিয়ে হটাত্‍ করে একটা ‘উদ্ধৃতি’ নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে অনেকে। কোরআন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার ফলে এ ব্যাপারগুলো হয় বেশি। আগে, আমার বন্ধুরা যেটার রেফারেন্স দিতেন, বিশেষ করে কোরআন থেকে, বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিতাম। কারণ, আমি তো নিজেই তো পড়িনি। পড়িনি বললে ভুল হবে, বুঝে তো পড়িনি। আর যারা রেফারেন্স দিচ্ছেন তাদের অনেকেই শুনেছেন অন্য কারো কাছ থেকে। সবাই ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে কথা বলছেন। আর সেটাই আমাদের ডোবার বড় কারণ। ইসলামের নামে হাজার অনৈতিক কাজ ম্লান করে দিচ্ছে আমাদের ইমেজ।

৫৯.

কোরআন ঠিকমতো মানলে আজ পুরো পৃথিবী তাকিয়ে থাকতো আমাদের দিকে। মনে মনে ঈর্ষা করতো – ‘আহা হতে পারতাম ওদের মতো!’ ধৈর্য্য, সহনশীলতা হচ্ছে ইসলামের বড় একটা অংশ। ঢাকার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামলে দেখা যায় উল্টো চিত্র। ‘সবর’ মানছি না আমরা নিজেই। কোরআনের ভেতর কি আছে সেটা না জানার ফলে আমরাও সরে গেছি অনেক দূরে। তবে, এখন আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে ব্যাপারগুলো। যতো বেশি ঢুকছি, ততোই অবাক হচ্ছি। ‘ওপেননেস’, মুক্তমনা, সহনশীলতা – যাই বলেন তার সবকিছুই এসেছে এই কোরআন থেকে। স্পেনের কর্ডোবাতে গেলে অবাক হবেন আপনি। ৭১১ সাল থেকে ১৫০০ পর্যন্ত পৃথিবীর সেরা ইউনিভার্সিটি আর মেডিক্যাল স্কূলগুলো চলছিলো মুসলিম শাসনের আওতায়। ধর্মীয় সহনশীলতা বলতে যা বোঝায় সেটা এসেছে ওই ওখান থেকে। ইউরোপের মডার্ন সিভিলাইজেশনের অনেককিছুর গোড়াপত্তন ওখানেই। পরে মুসলমানদের ভেতরে সমস্যা হবার কারণেই হারিয়ে যায় ওই স্বর্ণযুগ।

৬০.

ম্যানুয়াল পড়েছি হাজারো। প্রতিটা যন্ত্রের জন্য ইন্সট্রাক্শন ম্যানুয়াল থাকলেও যতো জটিল যন্ত্র, ততো ম্যানুয়ালের প্রয়োজন বেশি। মানুষকে যদি যন্ত্রের সাথে তুলনা করি, মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে ‘কমপ্লেক্স’ যন্ত্র, তাহলে তাকে চালাতে ম্যানুয়াল লাগবে না? আর – মানুষকে তৈরি করেছেন যিনি, তার সৃষ্টিকে উনি ছাড়া আর ভালো চিনবে কে বলুনতো? ভাবতেই অবাক লাগছে, সেরা ম্যানুয়ালটাই পড়া হয়নি আগে। মানুষ কিভাবে চললে তার ভালো হবে তার সবকিছুই লেখা আছে এই ‘অবিকৃত’ ম্যানুয়ালটাতে। আমরা কোরআনকে সন্মান দিতে গিয়ে সেটাকে উঠিয়ে রেখেছি সবচেয়ে ওপরের তাকে। অথবা, আলমারীর ওপরে। আমাদের স্পর্শের বাইরে। বেঁধে রেখেছি সবচেয়ে দামী কাপড়ে। কাপড়ের কাভারটা খুলে আবার ঢুকিয়ে রাখতে যে সময় নষ্ট হয়, সেখানে পড়ার জন্য মানসিকতা তৈরি হলেও পিছিয়ে যায় অনেকে। পড়তে থাকে ধুলা। অথচ, সেটা হওয়া উচিত ছিলো সবচেয়ে কাছের জিনিস। প্রতিদিন পড়ার মতো একটা বই। মুসলিমদের কাছে এটা একটা ন্যাভিগেশন টূল বটে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Ordinary life does not interest me. I seek only the high moments. … I want to be a writer who reminds others that these moments exist.

 Anaïs Nin

The aim of life is to live, and to live means to be aware, joyously, drunkenly, serenely, divinely aware.

― Henry Miller

১৮৩.

বইয়ের দোকান পেলে হুঁশ থাকে না আমার। এইটা কিনি ঐটা কিনি। অনেক বইই পড়ে রেখেছি অর্ধেকটা – পড়বো পড়বো করে পড়া হচ্ছে না। গল্পটার শুরু ‘রু দু রিভোলি’র রাস্তাটা থেকে। প্যারিসের নামকরা রাস্তা বলে কথা। পৃথিবীর সবচেয়ে ফ্যাশনেবল রাস্তাগুলোর মধ্যে এই নামটা এসেছে নেপোলিয়ানের বিখ্যাত একটা জয় থেকে – অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। রিভোলীর যুদ্ধটা হয়েছিলো সেই সতেরোশো সাতানব্বইতে। মুখ ঝুলে পড়া বড় বড় ব্র্যান্ডশপের মধ্যে চোখ ঠিকই খুঁজছে বইয়ের দোকান। উইন্ডোশপিং আমার ফেভারিট পাস টাইম!

১৮৪.

পাগল নাকি? বইয়ের দোকান আছে নাকি পৃথিবীতে? মনে নেই আমাদের নিউ মার্কেটের বইয়ের দোকানগুলোর কথা?

কথাটা ফেলে দেবার মতো নয়। তবে ফ্রেঞ্চদের কথা আলাদা। এরা জার্মানদের মতো প্রচুর বই পড়ে। সেকারণে বইয়ের দোকানগুলো অনলাইন কোম্পানির ধাক্কায় উঠে যায়নি একেবারে। ‘রথ দেখা আর কলা বেচা’র মতো বই হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে কেনার আনন্দটা কি আর পাওয়া যাবে অনলাইন শপিংয়ে? এদিকে বইয়ের দোকান খোঁজার অ্যাপটা কাজ করছে ভালোই। কফিশপে ঢুকে কফির পাশাপাশি ওয়াইফাইটা চালু করতেই কয়েকটা নোটিফিকেশন এলো চলে। হায়রে, কানেক্টেড লাইফ। প্রথমটাই হচ্ছে গালিয়ানি, নামকরা বইয়ের দোকান – যার ব্যবস্যা শুরু নাকি পনেরশো বিশ সালে! রিভিউ পড়তে গিয়ে মাথা খারাপ হবার জোগাড়। কিসের কফি, কিসের কি – ডাম্পস্টার বরাবর গুগলি খেললাম। নিঁখুত আর্টিলারী শট! এক দৌড়ে হাজির দোকানের সামনে। পরিচয় হলো এস্তেলের সাথে, কিছুটা অকওয়ার্ড ভাবেই।

১৮৫.

‘আনাইস নিনে’র জার্নাল সমগ্রের কয়েকটা বই ওখান থেকে কেনা। এই ‘আনাইস নিনে’র রচনার সাথে পরিচয় হেনরি মিলারের মাধ্যমে। ছোটবেলায় ওর বইগুলো শেষ করলেও সেটার মর্মার্থ ধরতে পেরেছি কিছুটা বড় হয়েই। সমস্যা না থাকলে খোদ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে তার বইগুলো ব্যান থাকবে কেন? তাও আবার তিরিশ বছরের জন্য? নিষিদ্ধ জিনিস নিয়ে চোখ খুলে দিলে সমস্যা তো হবেই। সেখানে লিটারেরি মূল্য আছে কিনা সেটার বিতর্কে বসিনি আজ। বইগুলো ফিকশন ধরনের হলেও লেখায় তার লেখক জীবনের সংগ্রামী এক ‘আত্মজীবনী’ ফুটে উঠেছে। বইগুলো লিখেছিলেন এই প্যারিসে, পাবলিশ হয়েছিলো এখানেই। সাহায্য করেছিলেন এই আনাইস নিন। নিনের স্বামীর অস্বাভাবিক সহনশীলতা আর নিস্বার্থ ভালবাসা আমাকে ভাবিয়েছে অনেক। আর তার অফুরন্ত টাকা শুধু নিনকে নয়, হেনরি মিলারকে লিখতে সাহায্য করেছিলো। এই প্যারিসেই হেনরি আর নিনের বোহেমিয়ান লাইফস্টাইলের অনেকটাই এসেছে তার ষাট বছর ধরে লেখা এই জার্নাল সমগ্রতে। মাদাম বোভারীর ধারণাটা কিছুটা নিনের মতোই।

১৮৬.

নিনকে নিয়ে আরো গল্প নিয়ে আসবো সামনে। ফিরে আসি বরং হেনরি মিলারকে নিয়ে। ‘ট্রপিক অফ ক্যান্সার’ আর তার অন্য বইগুলো বের হয়েছিলো এই ফ্রান্সেই। যে যাই বলুক, তার লেখার অন্তরঙ্গতা আর সেটার অবার গতিই মুগ্ধ করেছে মানুষকে। এই প্যারিসেই যাকে চলতে হতো ভিক্ষাবৃত্তি করে – সে হয়ে গেল এক লিটারেরি নক্ষত্র। তার একটা বইয়ের কিছু অংশ হস্তগত হলো দিন কয়েক আগে। ‘হেনরি মিলার অন রাইটিং’ নামের এই মাথা খারাপ করা বইটার কিছু অংশ আনবো আজ। ইংরেজিতে লেখা ওই এগারোটা কমান্ডমেন্ট বাংলায় নামাচ্ছি আমার ধারণার উপর ভর করে। অনুবাদে বিশ্বাসী নই আমি। তার পার্সপেক্টিভটা আমাদের মতো করে এনেছি এখানে। এগারোটা কমান্ডমেন্ট কিন্তু লিখেছিলেন একেবারে নিজের জন্য। দেয়ালে ঝুলিয়েছিলেন কিনা জানা নেই।

ক. লিখতে হবে একটা জিনিস নিয়েই। ওটা শেষ না করে ধরা যাবে না অন্য কিছু। সয়নে স্বপনে ওটাই। নতুন জিনিস – একেবারেই নো নো! [মনে হচ্ছে পুরো একসেন্ট্রিক ধারণা, এসপার না হলে ওসপার! মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। এই না হলে হেনরি মিলার!]

খ. [ওই সময় মিলার লিখছিলেন ‘ব্ল্যাক স্প্রিং’ নামের বইটা, চমৎকার, কমপ্লিট ম্যাডনেস, পড়েই দেখুন] কোনো কিছুতে হাত দেয়া যাবে না ওই ‘ব্ল্যাক স্প্রিং’টা না শেষ করে। বইটাতে নতুন কোনো সংযোজনও কাম্য নয় এমুহুর্তে।

গ. নার্ভাস হবার কিছু নেই। কাজ করতে হবে ঠান্ডা মাথায়। মন ভালো করে। বল্গাহীন ভাবে, যা হাতে আছে সেটা নিয়েই।

ঘ. কাজ করতে হবে শিডিউল ধরে। মুড আছে কি বা নেই, সেদিকে দেখলে কোনো কাজই হবে না। সিডিউল ধরে বন্ধ করতে হবে কাজ। কাজ মানে বুঝেছেন তো? লেখালিখি।

ঙ. মাথায় কিছু না আসলে অথবা তৈরী না করা গেলে অন্য কাজ করো। [আমার ধারণা, এডিটিংয়ের কথা বুঝিয়েছেন উনি]।

চ. প্রতিদিন লেখার স্তরগুলো বাড়াও। রচনাশৈলীতে নতুন বুনন আনো। কাজে নিড়ানি দিলেই সমস্যা।

ছ. মানবিক হও। দেখা করো মানুষের সাথে। বুঝতে শেখো মানুষকে। ঘুরতে যাও বিভিন্ন জায়গায়। ভালোলাগার কাজগুলো করো। তুষ্ট করো নিজেকে।

ঝ. করতে হবে বলে কাজ করা, সেটা নয় অবশ্যই। কাজ করবে মজার সাথে। [(ঘ) এর সাথে এর কিছুটা ব্যতয় আছে। আমার ধারণা, কাজ করার মধ্যে সুখ না থাকলে লেখার কাজ চালিয়ে যাওয়া দুস্কর]

ঞ. লেখার এই প্রোগ্রাম ভালো না লাগলে ক্ষতি নেই। কিন্তু লেখার প্রোগ্রামটাতে ফিরতে হবে পরের দিনই। ন্যারো ডাউন করে আনো পরের দিনের কাজটা। মনোযোগ বাড়াও। ফেলে দাও বাড়তি অংশ।

চ. ইচ্ছা জাগে তো আরো অনেক বই লিখতে। ভুলে যাও ওকথা। মনোনিবেশ করো যেটা লিখছো সেটার উপর। নো পিকিং!

ছ. দ্রুত লিখতে হবে – সবসময়ই। লেখাই সব। ছবি আঁকা [মিলার নিজেই কিন্তু বিশাল পেইন্টার], বন্ধুসংস্বর্গ, গান আর সিনেমা আসবে সবার পরে।

Read Full Post »

You don’t have to burn books to destroy a culture. Just get people to stop reading them.

― Ray Bradbury

৯৬.

বই পড়তে ভালবাসি। অস্ফুট স্বরেই বললাম।

এ আবার নতুন কি? ভুরু কুঁচকে তাকালেন আপনি।

‘বই পড়তে ভালবাসে সবাই’, আপনার তড়িত্‍ জবাব, ‘ছোটবেলায় দেখতেন যদি আমাদের’।

বুঝলাম, ভুল হয়ে গেছে বাক্য গঠনে। বাকি পড়ে গেছে একটা শব্দ। যোগ করলাম সেটা।

৯৭.

হাউ এবাউট স্টার্টিং ওভার? এভরিওয়ান নীডস আ সেকেন্ড চান্স!

বই পড়তে ভালবাসি, এখনো।

মানি আপনার কথা। সত্যি কথা বলতে আমাদের জীবন জটিলতর হচ্ছে দিন দিন। বই পড়ার সময় কোথায়?

সত্যিই তাই। তবে সময় যে নেই এটা বললে ভুল হবে হয়তোবা।

মোবাইল ফোন আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে আমি আপনি কতটা সময় দেই ধারণা আছে কি সেটার? পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম লোকটা কে বলুনতো? তার তো বই ধরারই কথা না।

৯৮.

১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১০| তুষারপাত হচ্ছে। দিনটা বেশ ঠান্ডা। জন্ম নিলো উরসুলা টড, অ্যামবিলিক্যাল কর্ড গলায় পেঁচিয়ে। মারা গেলো সে অবস্থায়। গল্পটার শুরু এভাবে। কেইট অ্যাটকিনসনের ‘লাইফ আফটার লাইফ’ বইটা নিয়ে আটকে আছি কয়েকদিন ধরে। গতবছর ‘লাইফ অফ পাই’ বইটা পড়ে যা মজা পেয়েছি সেটা সিনেমা দিয়ে মেটানো যাবে কি? বইটার কথা যখন উঠলোই, সেটা নিয়ে আসছি সামনে।

তার আগে আসি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধারা নিয়ে। আমার মুখচোরা ব্যাপারটা সার্বজনীন সাবলাইম ইনফো হলেও ঝামেলায় কম পড়িনি জীবনে। ইন্টারভিউয়ে দশ লাইনের প্রশ্নের উত্তর হয় এক পঞ্চমাংশ! আমার থাম্ব-রুল, আপাতত:| নতুন একটা গল্প ফাদি তাহলে।

৯৯.

ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় একজন পত্রমিতা ছিলো আমার – সুদুর গ্রীস থেকে। সে তিন পাতা লিখলে আমার উত্তর এক পাতা। একবার উপহার পাঠালো বই একটা। অ্যামেরিকায় এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে গিয়েছিলো সে। মনে করে কয়েকটা বই নিয়ে এসেছে আমার জন্য। পাগলাটে ছিলো মেয়েটা। আমি পাগল ছিলাম কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর এখানে নয় বোধকরি।

টিপ্পনি কাটলো ফিরতি চিঠিতে।

‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট কই?

এটা আবার কি?

এই যে তোমার জন্য বই পাঠালাম একটা, এর ধন্যবাদনামা কই?

এটা সত্যি, আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম বইটা পেয়ে। খুশি জানানোর কি আছে? তাও আবার লেখায়? পাগল নাকি? ও পাগল হলেও আমি তো নই আর।

লিখতে হয়, বুদ্ধু! না লিখলে সে জানবে কিভাবে?

তাই নাকি? আসলেই তো সত্যি। ওসময়ে ছিলো না টেলিফোনও। ছিলো হয়তোবা, কিন্তু আওতার বাইরে।

বই নিয়ে এসেছি তিনটা, তোমারই জন্য। পেতে চাও কিনা বলো?

পেতে চাই না মানে? তবে ভদ্রতা করলাম ওর সাথে। লিখতে লিখতেই অনেক ভদ্রতা শিখেছি এর মধ্যে। ওর থেকেই। ওকে আর সেটা হয়নি কখনো।

অন্য কাউকে দিয়ে দাও বরং! পোস্টেজ খরচ অনেক পড়বে তোমার। আগেরটার জন্য যে কতো খরচ করেছ সেটা জানালে না তো আর।

লাইনে এসেছো ভদ্রবাবু! ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার জন্যই নিয়ে এসেছি এগুলো। অন্যকে দেয়া যাবে না। তবে পেতে চাইলে কষ্ট করতে হবে কিছুটা। রাজি?

আবারো ভদ্রতা করলাম কয়েকটা চিঠিতে। ব্যাক টু স্কয়ার ওয়ান! ‘কষ্টটা’ কিছুটা পরিস্কার হলো বরং। ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট লিখতে হবে প্রতিটার জন্য! কি যন্ত্রণা! পত্রমিতা না প্রিন্সিপাল? যন্ত্রণা হলেও উত্তর পাবার জন্য দিন গুনতাম এই আমিই।

ফিরে আসি ‘লাইফ অফ পাই’ বইটা নিয়ে। কিছুদিন আগে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট একটা হস্তগত হলো – এক লোকের। লিখেছে এক লেখককে। লোকটা তার মেয়ের সাথে পড়েছে বইটা, অনেক ব্যস্ততার মধ্যে।

'থ্যাঙ্ক ইউ' নোট - ভালোই লিখেছে লোকটা ...

‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট – ভালোই লিখেছে লোকটা …

ব্যস্ততার মধ্যে বই না ধরতে পারলে মনে হয় লোকটার কথা। বন্ধ করি পিসিটা, ফোনটাকে রাখি হাতের নাগালের বাইরে। ফিরে আসি বইয়ে। মাথার কোথায় যেনো একটা ‘ইলুমিনেশন’ কাজ করে। এন্ডরফিনসের সরবরাহ বেড়ে যায় বোধহয়।

চারটা বই হস্তগত করেছি আপাতত।

এই ঈদের ছুটির জন্য। সৃষ্টিকর্তা মহান।

ঈদ মোবারক!

অক্টোবর, ১৭, ২০১৩; ঈদের পরের দিন

পুনশ্চ: অনেকেই জানতে চেয়েছেন ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোটটার ব্যাপারে। ভুল হয়েছে আমারই, বলা উচিত ছিলো তখনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লিখেছিলেন চিঠিটা, লাইফ অফ পাই’য়ের লেখক ইয়ান মার্টেলকে। মুগ্ধ হয়েই। গুনীজনকে কদর দিতে জুড়ি নেই মার্কিনীদের। ভাবানুবাদ জুড়ে দেয়া হলো সঙ্গে।

জনাব মার্টেল –

‘লাইফ অফ পাই’ বইটা শেষ করে উঠলাম এইমাত্র। মেয়েকে নিয়ে পড়েছি আমি। পশুপাখিকে নিয়ে গল্পগুলো আমাদের দুজনেরই খুবই পছন্দের।

আনন্দদায়ক বইটা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে আরো সুদৃঢ় করেছে। আরো মুগ্ধ হয়েছি গল্পটা বলার ক্ষমতা দেখে।

ধন্যবাদ আপনাকে।

সাক্ষরিত,

বারাক ওবামা

Read Full Post »

It is a truth universally acknowledged, that a single man in possession of a good fortune, must be in want of a wife.

— Jane Austen, Opening line of ‘Pride and Prejudice’ (1813)

৯০.

নোটবইটা বের করতে হলো আবার। অসমাপ্ত গল্পটা শেষ করতে নয়, বরং ওর প্রথম লাইনটা ধার করতে।

অন্যান্য দিনের মতো ঘুমুতে গেলাম একই সময়ে, এবার কালাসনিকভটা মাথার কাছে নিয়ে।

এবার বের করুন আপনার প্রথম লাইনটা। না থাকলে লেখুন একটা কিছু। কৌতুহলোদ্দিপক হলে ভালো। লেখার প্রথম লাইন নিয়ে যতো সমস্যা। সারাদিন মাথায় ঘুরতে থাকে আইডিয়া, শুধুমাত্র অফিস সময় ছাড়া। অফিস সময়ে কাজের চাপে সব যাই ভুলে। নাইন টু ফাইভ, টোটালি রাইটার্স ব্লক! অফিস থেকে সবাই যাবার পর ছটার পর থেকে আস্তে আস্তে খুলতে থাকে মাথা। তবে ওসময়ে লেখার মতো মাথায় থাকে না কিচ্ছু। বাসায় ফিরি নয়টায়। লিখতে বসি এগারটায়। বসতে গেলে চলে আসে হাজারো সমস্যা। পার্থিব সমস্যা। বাসার সমস্যা, পানির সমস্যা, কাল বাচ্চাদের স্কুলের সময়ের সমস্যা, ড্রাইভারের সমস্যা। উঠে যেতে হয় মিনিট কয়েক পর পর। ছোটবেলায় পড়তে বসলেই চলে আসতো হাজারো ঘুম, এখন লিখতে বসলেই আসে হাজারো সমস্যা। আর প্রথম লাইন বের করতে গেলে শুরু হয় মাথা ব্যথা।

৯১.

তবে হলফ করে বলতে পারি একটা কথা। প্রথম লাইনটা কখনো আসেনি লিখতে বসে। চড়ুই পাখির মতো আসে আর যায় – ওসময়ে। পুরোপুরি আসে না কখনো। আমার ধারনা, প্রথম লাইনটা আসে একবারে অসময়ে। চমত্কারভাবে। বাজারে গিয়েছি ছুটির দিনে, গড়গড় করে আসছে প্রথম দিকের লাইনগুলো। রিকশায় যাচ্ছি কোথাও, রাস্তা পার হচ্ছি, করছি গোছল, উঠছি সিড়ি বেয়ে, ঘুমানোর সময় চোখ বন্ধ হবার ঠিক আগের মুহুর্তে, টিভি দেখার সময়ে। প্রথম লাইন আসে সব উদ্ভট সময়ে। হাসপাতালে গিয়েছি – লাইনের অর্গল খুলে যায় ওসময়ে। আসল কথা হচ্ছে – হাতের কাছে লেখালিখির জিনিস না থাকলেই এসে হাজির হয় প্রথম লাইন। অনেক কষ্টে পেলেন না হয় কাগজ, কলম পাবেন না কখনো। আর কলম পেলেও সেটা লিখতে চাইবে না। আর সেকারণে হাজারো প্রথম লাইন হারিয়ে যায় সময়ের সাথে।

৯২.

লেখকদের কাগজ কলম রাখতে হবে সাথে – সবসময়। বাসার সব রুমে, গাড়িতে, শোবার ঘরে বিছানার পাশে। বাজারে গেলে কাগজ কলম রাখতে হবে পকেটে। ও আমার হয় না বলে মোবাইল হ্যান্ডসেটে রেখেছি ‘গুগল কীপ’ আর ‘এভারনোট’ অ্যাপ। কাগজ কলমের মতো যুতসই না হলেও শর্টহ্যান্ডে কিছু লেখালিখি রাখা যায়। ছোট নোটবই সাথে রাখতে পারলে মন্দ নয়। মনে করে রাখাটাই সমস্যা – আর আমার মতো মিনিটে মিনিটে হারানোর অভ্যাস থাকলে তো কথাই নেই। মিলিয়ন ডলারের আইডিয়া হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত! মিটিং ওয়ার্কসপে গিয়েছি – লিখেছি ন্যাপকিনে, পোস্ট-ইটে। পরে এসে টুকে নিয়েছি কম্পিউটারে।

৯৩.

মনে আছে কি এইমি বেন্ডারের কথা? ছোটগল্পের একটা চমত্কার সংকলন নিয়ে দুনিয়া মাতিয়েছিলেন উনিশশো আটানব্বইয়ের দিকে। ‘দ্য গার্ল ইন দ্য ফ্ল্যামাবল স্কার্ট’ ছোটগল্পের এই সংকলনের লেখিকা তার ছোটগল্প শুরু করেন সেই প্রথম লাইন দিয়েই। তার কথায় অনেক লাইনই কাজ করে না প্রথম লাইন হিসেবে, সেগুলো কার্যকর নয় হয়তোবা। তবে যে লাইনটা তার পরের লাইনগুলোকে এমনিতেই টেনে নিয়ে আসে সেগুলো নিয়ে কাজ করেন এইমি। অনেক সময় সেই প্রথম লাইনেই একটা চরিত্রের স্বর ফুটে ওঠে – ফলে প্রথম লাইন থেকে একটা চরিত্র বের করা অসম্ভব কিছু না।

৯৪.

শক্তিশালী প্রথম লাইন কিন্তু একজন লেখককে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়। পাঠক যেভাবে পাতার পর পাতা উল্টাতে থাকে মনের কৌতুহল মেটানোর জন্য – তার থেকে বেশি শক্তি দরকার হয় লেখকের। আর সেকারণে প্রথম লাইনটা এতো গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি নাই বা আসে সেই প্রথম লাইনটা? বইয়ের দোকানে ঢু মারুন। বইগুলোর প্রথম লাইনগুলো লক্ষ্য করুন। প্রথম প্যারাগ্রাফটা পড়ুন। আইডিয়া আসতে বাধ্য। খবরের কাগজে অনেক গল্পের খোরাক থাকে। আমি নিজেই অনেক গল্পের প্লট পেয়েছি পুরনো খবরের পাতা থেকে। টিভির অ্যাডগুলো লক্ষ্য করুন, পাবেন সেখানে।

৯৫.

একটা সাবধানবাণী না দিলেই নয়। প্রথম লাইনটা গল্পের লিড দিলেও ওর ভালবাসায় পড়া যাবে না কিন্তু। অনেক সময় প্রথম লাইন দিয়ে শুরু করলেও পরে ওই লাইনটাকে ফেলে দিতে হতে পারে। গল্পের প্রয়োজনে প্রথম লাইনটা একটা সময়ে কাজে দিলেও পরে সেই গল্পেরই প্রয়োজনে পাল্টাতে হতে পারে। এটাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে হবে। আমি নিজেই পাল্টেছি প্রথম লাইনটাকে, অনেকবার। তবে শুরু করাটাই প্রথম লাইন জেনারেট করা থেকে অনেক কষ্টের।

শুরু তো করতে হবে কোথাও থেকে? কি বলেন?

Read Full Post »

They shoot the white girl first.

— Toni Morrison, Opening line of “Paradise” (1998)

৮৫.

কোথায় যেনো পড়েছিলাম বই পড়ুয়ারা নাকি মাছের মতো। মেজাজ গরম হলো তখনি। শেষ পর্যন্ত মাছ? টিউবলাইটই তো ভালো ছিলো। বন্ধুদের কাছে নামের কি শেষ আছে? সেদিন কে জানি দিলো নাম আরেকটা, এসএম। স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট? না, সাবমেরিন! সে গল্প আরেকদিন! তবে, বইই তো পড়ছি, কারো ক্ষতি তো করছি না। মাছের গবেষণায় বসলাম। ভুল বুঝেছি খামোকাই। বই পড়ুয়ারা সাদামাটা মাছ নয়, স্মার্ট মাছ। বলেছে আরেক স্মার্ট লেখিকা, কে এম ওয়েইল্যান্ড, আমার বই পড়ার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ‘গুডরিডে’র বন্ধু। বই পড়ুয়ারা ভালো ভাবেই জানেন লেখকদের। বড়শি নিয়ে বসে আছে সবাই। মানে সব লেখক। লেখকদের লেখা শেখার শুরুতে যে কয়েকটা বাজ্জওয়ার্ড জানতে হয় তার মধ্যে ‘হুক’ অন্যতম। বই মেলায় পড়ুয়াদের লক্ষ্য করেছেন কখনো?

৮৬.

মাছের কথায় আসি। স্মার্ট মাছ কিন্ত জানে লেখকরা বড়শিতে আদার লাগিয়ে বসে আছে তার বইয়ে। মাছটাকে ধরতেই হবে বইয়ের প্রথম কয়েক পাতায়। সেটার জন্য বড়শির সুতা কখন ছাড়বে আর টানবে সেখানেই লেখকের মুন্সীয়ানা। ‘হুক’ লাগানোর আগেই যদি আমরা যারা স্মার্ট মাছ বইটাকে ছেড়ে দেই সেখানে লেখকের ব্যর্থতা। স্মার্ট মাছ ধরা কিন্তু সহজ নয়। এই মাছ আসলে পড়েছে অনেক বই। প্রথম কয়েক পাতায় ‘হুক’টা ঠিকমতো না গাথলে ফসকে যাবার সম্ভাবনা বেশি। স্মার্ট লেখক তার ‘হুক’টাকে কিভাবে স্মার্ট মাছের গলায় আটকাবেন শক্ত করে সেটার গল্প আজ। ‘স্মার্ট’ মাছ বুঝতেই পারবেনা যে ও কখন পুরো ‘হুক’টা গিলে ফেলেছে – খেসারত দিতে হবে পুরো বইটা শেষ করে। তার মানে বইয়ের প্রথম কয়েক পাতায় পাঠকদের ধরে রাখার জন্য লেখক যে ছলচাতুরী করেন সেটার নামই ‘হুক’| অফিসিয়াল নাম কিন্তু।

৮৭.

লেখা শেখার প্রথম অস্ত্র, এই ‘হুক’ ব্যবহার করেই আমাদেরকে ধরাশায়ী করেন স্মার্ট লেখকেরা। প্রথম পাতাগুলোতে আমাদেরকে ‘হুক’ড না করা গেলে বইয়ের বাকি সময়ে সাঁতার কাটতে চাইবে না কেউই। পরের দিকের গল্প যতোই চমত্কার হোক না কেন, স্মার্ট মাছ ছুড়ে ফেলবে বই। এখানেও রয়েছে অনেক গবেষণা। আর এই ‘হুক’ আসে হাজার স্টাইলে, হাজার রকমের ফর্মে। তবে, সবকিছুর পেছনে থাকে একটাই ষড়যন্ত্র। মিনিম্যালিস্ট ভার্সনে বলতে গেলে লেখক স্মার্ট মাছকে কৌতুহলী করে তোলে ওই প্রথম কয়েক পাতায়। অথবা, প্রথম লাইনেই। বলেন কি? কিউরিসিটি কিল্ড দ্য ক্যাট। পিরিয়ড। মাছ আদার খাবে কেন, কৌতুহলী না হলে? সবাই কি বেকুব আমার মতো? কিছু না পেলে কাগজের ঠোঙ্গাও পড়ে।

৮৮.

জামার পেছনে হাত পড়তেই ভেজা ভেজা লাগলো শীলার। শিউরে উঠলো সে।

নোটবইয়ের একটা অসমাপ্ত গল্পের প্রথম দুটো লাইন তুলে দিলাম এখানে। পাঠকদের এটা কৌতুহলী করে তুলবে কি? সেটা আপনারাই বলবেন ভাল করে। স্মার্ট মাছের মতো চিন্তা করলে অনেক কিছুই হতে পারে এখানে। শীলা, ও আবার কে? ওর জামাটা কেনই বা ভেজা? কিভাবে ভিজলো? কোথায় ভিজেছে ওর? বৃষ্টির পানি? শিউরে ওঠার কি আছে? না কি আবার রক্ত? রক্ত আসলো কোথা থেকে? পাঠকের কৌতুহলী হবার বেশ কিছু এলিমেন্ট আছে এখানে। আচ্ছা, আরেকটা ছোট গল্পের ওপেনিং লাইন হিসেবে কোনটা পছন্দ আপনার?

তুমি কি ভালোবাসো আমাকে? মেয়েটার প্রশ্ন।

অথবা

‘তুমি কি’ মেয়েটার অস্ফুট স্বর, ‘ভালোবাসো আমাকে?’

৮৯.

আমার ধারনায় ছোটবেলার সবচেয়ে মোটা বইটা হাতে নিয়েছিলাম সেই কৌতুহলের বসে। মোটা বইগুলোর মধ্যে এই সাতশো পাতার ওজনদার বইটা আমাকে দমাতে পারেনি – ওই প্রথম লাইনটার জন্য। দুর্দান্ত! মার্কিন সাহিত্যে অমর হয়ে আছে বইটা অনেক কিছুর জন্য। আমার মতো বেকুব মাছদের কাছে কিন্তু ওই প্রথম লাইনটার জন্য।

কল মি ইসমাইল।*

* আসল উচ্চারণ, ইসমেল। ‘আমার নাম ইসমেল’ দিয়ে শুরু করলে কি ওরকম লাগতো? প্রথম প্যারাগ্রাফটা আজ না পড়ে যাবেন না কোথাও। ভয়ঙ্করভাবে সুন্দর! ইসমেলের পুরো চরিত্রটা ফুটে এসেছে ওই প্যারাগ্রাফে। সাগর ওকে কেন ডাকে? সেটার উত্তরও ওখানে।

Read Full Post »

“I’m a big believer in first impressions,” he finally said. “Tell me what your first thought was when Jason walked into the courtroom.”

Taylor took a sip of her drink and grinned. This one was easy. “I vowed to hate him forever.”

Jeremy’s brown eyes twinkled at this. “That’s exactly what I said nineteen years ago, five minutes after he first walked into our dorm room.”

― Julie James, Just the Sexiest Man Alive

আগের অংশ: উৎকর্ষতার সন্ধানে: প্রথম ছাপ, ১

৫০.

মানুষের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার ধারনাটা আসে যশোরের ‘স্কুল অফ সিগন্যালস’ থেকে। যুদ্ধক্ষেত্রে যোগাযোগ আর প্রযুক্তির যোগসুত্র নিয়ে আসে সিগন্যাল কোর। সিগন্যালার হবার প্রথম ধাপ পার হতে হয় একটা কোর্স শেষে। বছর ধরে হয় সেটা। যোগাযোগ প্রযুক্তির আদিম মোর্স কোড থেকে শুরু করে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির পাশাপাশি ইন্সট্রাকশনাল প্র্যাকটিস মানে শিক্ষক বানানোর চেষ্টা চলে ওখানে।

কোথায় বই পড়ে, হাতে কলমে শিখে পরীক্ষা পাশ আর সেখানে শিক্ষক হওয়ার মহড়া ঘুম কেড়ে নিলো আমাদের সবারই। বিচ্ছু কোর্সমেটের বেকায়দায় ফেলার একটা প্রশ্ন আপনার পুরো মাসের প্রিপারেশন যে জলে ফেলে দেবে না সেটার সম্ভাবনার সমীকরণ নিয়ে আর নাই বা বলি।

দোস্ত, এই প্রশ্নটা করবি। একটাই কিন্তু! কিসের কি। বিচ্ছু কোর্সমেটদের দাবি দাওয়া বাড়তে থাকলো লাফিয়ে লাফিয়ে। নাইটমেয়ারের পাশাপাশি ‘ডেমেয়ার’ অভিধানে যুক্ত করার সময় হয়ে আসলো বলে। এর সাথে যুক্ত হলো নতুন আরেকটা নিয়ম।

পুরো ক্লাস পড়িয়ে ইন্সট্রাকটরদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মন জয় করতে পারলেই পাবেন গ্রীন সিগন্যাল ‘গো’| আর নাহলে, নাহলে আর কি?

নাহলে ‘নো গো’| মানে নতুন সাবজেক্ট নতুন ক্লাস। হ্যামস্টার হুইল আর গিনিপিগ – চলবে অনন্তকাল। ভাগ্যে কি ঘটেছিলো শেষে – আমার? ক্যাডেট কলেজের শাস্তি কি লেগেছিল কাজে?

৫১.

টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে গ্রাহকসেবার মতো সংবেদনশীল অংশটা আমার বিভাগ দেখে বলে মোবাইল নম্বরটাও দেয়া আছে সাইটে। নিজে থেকে দেয়া। অনেক পার্সপেক্টিভ পাওয়া যায় সেখান থেকে। আই লাভ মিটিং নিউ পিপল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কটাও দেখার সুবাদে সেখানেও কম জানাশোনা হয়না সেখানে। রজার্স এইল্স সাত সেকেন্ড বলেছেন বটে – আমার ধারনায় সেটা দাড়াতে পারে পনেরো সেকেন্ড পর্যন্ত। আই কন্টাক্ট আর স্মিত হাসি, অনুমোদনের মাথা নাড়ানো থেকে শুরু করে হ্যান্ডসেক পর্যন্ত সময় যোগ করে ‘কথা-ছাড়া’ কমিউনিকেশনে কিছু সময় লেগে যেতে পারে বটে। গলার টোন আর তার সাথে শব্দের সতর্ক নির্বাচন আপনাকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়। রুমে ঢোকা থেকে শুরু করে আপনার প্রতিটা পদক্ষেপ, দাড়াবার ভঙ্গি, মুখভঙ্গি সবকিছুর উপর তৈরী হয় এই অবিনশ্বর প্রথম ইম্প্রেশন। হাজার ইমেইল চালাচালি করার পরও সেই মানুষটার সাথে ‘প্রথম দেখা’র আগে হোমওয়ার্ক করে নিতে হয় আমাকে কিছুটা। নতুন বা আপনার থেকে পদমর্যাদার নিচের কাউকে ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ বলে নেবার ধারণা শেষ করে দিতে পারে আপনার প্রথম ছাপ।

৫২.

আমার চেহারা আপনার মতো ‘ফ্ল্যাশি’ না হলেও মিষ্টি করে হাসতে আটকাচ্ছে না কেউ। মুখের কথার আগেই আমাকে বিক্রি হয়ে যেতে হবে বন্ধু হিসেবে। প্রকৃত বন্ধু, বলে দিচ্ছি কিন্তু। মেকি হাসি বোঝা যায় কিন্তু। এক্ষেত্রে আন্তরিকের বিকল্প আছে বলে জানা নেই আমার। গলার টোন, পিচ আর তার প্রতিক্রিয়ার জন্য আপনি নিজে যা আশা করেন বা যে শব্দগুলো শুনতে চান তার কাছ থেকে – সেটাই বলুন। আরামদায়ক অভিজ্ঞতা দেবার চেষ্টা করতে কষ্ট করতে হয় না বেশি।

মুখের অভিব্যক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উষ্ণ আর আউটগোয়িং হিসেবে বোঝানোর জন্য গলার টোন ব্যবহার করে দেখুন না। মেকি নয়, প্লীজ। দেবো একটা উদাহরণ?

৫৩.

জেমস (নাম পাল্টে দিলাম), একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালটেন্ট ইমেইলে আমার সাথে দেখা করতে চাইলেন কয়েকদিন আগে। বাংলাদেশে একটা প্রজেক্টের কাজে আগ্রহী, কারো কাছে শুনেছেন আমার কথা। গুগলে জেনে নিলাম প্রজেক্টের বর্তমান অবস্থান। কথা বললাম কয়েকজনের সাথে। ধারণা হলো। লিংকডইনে মানুষের প্রোফাইল জেনে নেয়া অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে আমার।

ফিরতি ইমেইলে ঢাকার বর্ষার গ্রিটিংস পাঠিয়ে দিলাম। ছাতা না নিয়ে আসলে সেটা উপহার দেবো বলে প্রতিশ্রুতি দিতে আপত্তি থাকার কথা নয় আপনারও। প্রজেক্টের সামান্য ধারণা দিয়ে কমফোর্ট জোনে নিয়ে আসার চেষ্টা করলাম তাকে। ইচ্ছা করে লিংকডইন অংশটা বাদ দিয়ে গেলাম। ইন্ট্রুসিভ না হওয়াই ভালো। ক্যালেন্ডার এন্ট্রি, এটেনডি জেমস – ট্রাফিক আপডেট দিয়ে রাখলাম লোকেশন-ডেস্টিনেশন – যেখানে যা লাগে।

খুশি সে। হোটেলের ধারণা চাইলো। ঢাকায় পৌছেই স্কাইপ। পরদিন সকালে অফিসের রিসেপশন থেকে তার আসার ব্যাপারে জানালো আমাকে। গল্প শুরু এখানে।

উঠে দাড়ালাম রুমের সামনে। দেখা পেলাম জেমসের – দশ ফুট দুরে। হাত তুলে সাড়া দিলাম। হি ওয়েভড ব্যাক, তখনি।

সাত সেকেন্ড, শুরু।

হাসি ফুটে উঠলো আমার চেহারায় – মাথা নাড়ালাম দুবার, অ্যাপরুভিং নড। চোখের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলাম তার দিকে আড়াই কদম – রিহার্সড। ভর দিলাম দুপায়েরই। হ্যান্ডস ফ্রি। পকেটে হাত – একেবারেই না!

“ফাইনালি!” গলায় এনটাইসিং টোন, এটাও রিহার্সড – সকালে। হাত বাড়িয়ে দিলাম – চোখ সরিয়ে নিলো জেমস হাতের দিকে, হ্যান্ডসেক। উষ্ণ, মধ্যম চাপ। চোখে চোখে আমার তখনও। পিঠ চাপড়ালাম হালকাভাবে একবার – অন্য হাতে। শেষ করে দিলাম গলার কাজ “উই মিট!”

রুমের দিকে পথ দেখালাম পাশাপাশি।

চোখ বড় করে তাকালাম তার দিকে। ঔৎসুক্য দেখালাম উত্তরের জন্য।

শেষ, সাত সেকেন্ড।

Read Full Post »

She glanced at the minotaur horn in my hands, then back at me.
I imagined she was going to say, You killed a minotaur! or Wow, you’re so awesome! or something like that.

Instead she said, “You drool when you sleep.

― Rick Riordan

৪৮.

প্রথম ইমপ্রেশন বলে কথা। হাজারো মানুষের সাথে হয় দেখা বছরে। আবার কম বক্তৃতাও দেয়া হয়নি জীবনে। পা কাঁপাকাঁপি শুরু কিন্তু ক্যাডেট কলেজে। ঘুম, নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যেতো পাবলিক এড্রেসের আগের দিনগুলোতে। সে এক ভয়াবহ যন্ত্রণা। মানুষের সামনে দাড়িয়ে বক্তৃতা তো দুরের কথা, আই কন্টাক্টএর প্রথম এলিমেন্টই মিসিং।

খবরদার, তাকাবি না মানুষের দিকে। ইম্প্রম্প্চু মানে উপস্থিত বক্তৃতার বিশারদ বন্ধুর উপদেশ।

তাকাবি সবার মাথার উপর দিয়ে – অডিটোরিয়ামের চিলে কোঠায়। বন্ধুদের হাসি মুখের দিকে তাকাবি না ভুলেও। তাকিয়েছিস তো মরেছিস! ভেংচি কাটবো আমরা কিন্তু!

সেযাত্রায় পার পেয়ে গিয়েছিলাম উপদেশের উপর ভর করে। তবে হাত দেখে বলতে নিতে গিয়ে পড়লাম নতুন ঝামেলায়। মানে উত্তপ্ত কড়াই থেকে একেবারে উনুনে। লাগাতার ইম্প্রম্প্চু স্পিকার! পড়াশোনা উঠলো লাটে। মিলিটারি একাডেমীর লিডারশিপ ট্রেইট ধরতে গিয়ে নাকানি চুবানি খেতে খেতে পা কাঁপাকাঁপি বন্ধ হলেও মানুষকে ‘প্রথম ইমপ্রেস’ করার ধারণা নিয়ে বইটার উপর হাত পড়লো গতবছর।

৪৯.

বলেন কি? আসলেই তাই। মানুষ মাত্রই ইমপ্রেস করতে চায় মানুষকে। জেন্ডার পাল্টালে সেটা পায় নতুন মাত্রা। আবার প্রথম ইম্প্রেশনকে পাল্টানো বেশ কষ্টের। খারাপ ‘প্রথম ইমপ্রেশন’ থেকে বের হয়ে আসা অনেক কষ্টের। প্রথম ইম্প্রেশনই মানুষকে নিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত। মানুষের প্রথম ধারণা পাল্টাতে যে কাঠখড় পোড়াতে হয় সেটা জানলে সবাই জোর দিতো প্রথম ইম্প্রেশন তৈরী করার ব্যাপারে। ‘ফার্স্ট ইম্প্রেশন’ নিয়ে দুনিয়া জুড়ে এতো কথাবার্তা, এটা তৈরী হতে লাগে কতক্ষণ?

ধারণা করুন।

গুগল করলেন নাকি? কে বলতে পারবে ভালো?

মিডিয়া কনসালটেন্ট? নাকি রজার্স এইল্স! তিন মার্কিন প্রেসিসেন্ট রিচার্ড নিক্সন, রোনাল্ড রিগ্যান আর সিনিয়র বুশের মিডিয়া কনসালটেন্ট এই রজার্স এইল্স যিনি ফক্সনিউজের প্রেসিডেন্টও বটে।

ঠিক ধরেছেন। সাত সেকেন্ড। মাত্র?

হ্যা।

উনিশশো অষ্টাশিতে লেখা বইটা।

পরের অংশ: উৎকর্ষতার সন্ধানে: প্রথম ছাপ, ২

Read Full Post »

এক

তির তির করে কাপছে পানিটা। কয়েকটা ডাহুক উড়ে গেলো। বিলের এদিকে পানি বেশ কম। পানিটা স্বচ্ছ হবার কারণে প্রায় ফুট খানেক নিচের কাদামাটিও দেখা যাচ্ছে ভালোভাবেই। দাড়কিনাগুলোর অস্থিরতা মানিয়ে গেছে পানির স্বচ্ছতা সাথে। কয়েক গুচ্ছ লম্বা ঘাস ধীরে ধীরে নড়ছে। বাতাস বইছে তবে তা পানিতে ওভাবে বোঝা যাচ্ছে না। মাটির ছোট্ট ঢিবিটা পানির উপরে বেশ বেরিয়ে থাকলেও বেঢপ লাগছে না।

পানির ভেতরে শরীরটা কিছুটা বেকায়দায় পড়ে থাকলেও পত্রিকার ছবির মতো বিভৎস্য কিছু নয়। গলার রগের দিকটা কিছুটা কালচে হলেও পানির নিচে থাকাতে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে সেটা। পুরো শরীরটা পানির নিচে থাকলেও ছোটবেলার দেখা টিভি সিরিজ ‘ম্যান ফ্রম অ্যাটলান্টিসের’ মার্কের নাক মুখের বুদবুদের অংশটা কেন জানি এখানে অনুপস্থিত। চুলগুলো পানির সাথে মিলিয়ে যেতে পারতো ঠিকই, কয়েকটা কচুরিপানার ভাসমান কালো শেকড় লম্বাটে মুখের মেয়েলি সৌন্দর্যটাকে বাড়িয়েছে মনে হচ্ছে। চুড়ি না পরলেও হাতের কব্জিগুলোর উপর কালশিটে দাগ চুড়ির মতোই মনে হচ্ছে কিন্তু। কাছে থেকে না দেখলে কালো টপসটার উর্ধাংশের ছেড়া অংশটা চোখে না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। চোখ খুলে আছে, মনে হচ্ছে তাকিয়ে আছি সেই ঢিবির দুরের গ্রামের উপরের আকাশের আবছায়া অংশে। আকাশটা অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। এরকম ভোর অনেকদিন দেখা হয়নি, মনটা কিছুটা আনমনা হয়ে গেলো।

গ্রামে আসা হয়ে ওঠেনি অনেকদিন। দুরের গ্রামটা দেখে ফ্রস্টের পাসিং গ্লিমসেস কবিতাটা মনে পড়ছে খুব। তবে দূর থেকে সবকিছুই স্বপ্নের মতো লাগে। ছোটবেলায় ট্রেনে গ্রামের বাড়িতে যাবার সময় বাবার কোলে বসে খালের পারের দুরের গ্রামগুলোকে দেখতে দেখতে ঘুম চলে আসতো কিভাবে জানি। ঘুম এলে বাবা কাঁধ পাল্টাতে গেলেই উঠে যেতাম আমি। কাঁধ পাল্টাতে পারতো না বাবা। মাথা ঘুরিয়ে উপর দিকে বাবার দিকে তাকাতেই মুহুর্তে চোখ বন্ধ তার। প্রশ্রয়ের হাসি লেগে থাকতো মুখে তার। লুকোচুরি করতে করতেই লোহার ব্রিজের উপর চলে আসতো ট্রেনটা। ভয় পেয়ে উল্টো ঘুরে বাবার কোলে ঢোকার চেষ্টা করতেই চেপে ধরতেন জোরে। মাথায় বিনুনী ঠিক করার ছলে হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করতেন হয়তোবা। মনে হতো বাবাকে ছাড়া থাকতে পারবো কখনো।

মেয়ের সবকিছুর উপর বাবার কড়া নজর থাকলেও পড়াশোনার ব্যাপারে একদম নিশ্চুপ। পড়াশোনা ভালো না লাগলে করবি না, জোর কোনো কিছুই ভালো না মা। রিপোর্ট কার্ডে সিগনেচারই শেষ। উঠেছিস তো পরের ক্লাসে? উত্তরের অপেক্ষা করতেন বলে মনে হয় না। ফর্মে মার নাম লিখতাম ঠিকই – দেখতে মন চাইতো খুব। বাবাকে স্বান্তনা দিতাম ছোটবেলায়, আসবে ঠিকই একদিন ফিরে। দেখো তুমি। ধরা পড়ে গেলেন একদিন বাবা। ছবি পোস্ট করতেন প্রায়। কোথায় যেনো। আমার ছবি। জন্মদিনের ছবি। বয়স আট তখন আমার। ঠিকানায় মার নামের নিচে লন্ডন স্কুল অফ ইকনোমিক্সের নাম লেখা। জিজ্ঞাসা করতেই থতমত খেয়ে গেলেন বাবা। বন্ধুকে মা। কোন বন্ধু বাবা? স্কুলের বন্ধুকে। তোতলালেন খানিকটা। বছর খানেক আগে ফুপিকে দীদার সাথে মার ব্যাপারে কি যেনো কথা বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গিয়েছিল আমাকে দেখে। মেলানোর চেষ্টা করছিলাম তখন।

অপহৃত হয়েছিলাম মে মাসের উনত্রিশ তারিখে। জুনের মাঝামাঝি হবে কি আজ?

Read Full Post »

There is no duty we so much underrate as the duty of being happy.

Robert Louis Stevenson

৪৪.

সকাল থেকেই আছি বাসায় বসে। ঈদের এই দুদিনের নিশ্ছিদ্র ব্যাক টু ব্যাক নিজস্ব সময়ের জন্য বসে ছিলাম মাস ধরে। সত্যি, মাস দুই হবে কিন্তু। গুগল টাস্ক পোসপন্ট করতে করতে হয়রান হয়ে বেচে গেছি ঈদের ছুটি পেয়ে। ধারণা করছিলাম কিছুটা সৌল [সোল্] সার্চিং করবো হয়তোবা। বইও জমে গেছে ছয়টা। পড়ার জন্য। কষ্ট একটাই – পড়তে পারছিনা বই, ছোটবেলার মতো। মাথায় চিন্তা খুব একটা ছিলো না তখন। ক্যাডেট কলেজের ছুটিতে পায় কে আমায়। বইয়ের পর বই, কেনা নাকি ধার নাকি লাইব্রেরি থেকে তোলা – হু কেয়ারস! পেলেই হলো। মুক্তধারার লোগোর উপর ভালোলাগার একটা আছরও পড়েছিলো বটে।

৪৫.

লিংকডইন নেটওয়ার্কে গ্রেচেন রুবিনের পোস্ট ফলো করতাম মাঝে মধ্যে। গ্রেচেন রুবিনের সাথে পরিচয় কিন্ডল কেনার পর। ‘হ্যাপিনেস প্রজেক্টের’ কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়েই তাকে ফলো করা শুরু করি গতবছর থেকে। বিখ্যাত লোকদের বায়োগ্রাফার হিসেবে তার লেখক জীবনে প্রবেশ। পরবর্তীতে চিন্তার খোরাক জোগায় এমন জিনিসপত্র নিয়ে লেখালিখি করে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। ইমেইল বা কথাবার্তা বলা যেতো ঠিকই – সেকেন্ড ডিগ্রী সেপারেশন খারাপ নয় বলে আগ বাড়াইনি আর। আমি চিনি জুলিয়াস জেনুকাউস্কিকে, চেয়ারম্যান – এফসিসি, আর উনি চেনেন গ্রেচেনকে। স্মল ওয়ার্ল্ড! ছোট হচ্ছে আরো।

৪৬.

এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে সিটিবাস ধরে বাড়ি ফিরছিলেন গ্রেচেন। অলস মুহুর্তে চাড়া দিয়ে ওঠে প্রশ্ন মাথায়, নতুন কিছু নয়, হাজার বছরের পুরোনো প্রশ্ন।

জীবন থেকে কি চাওয়া আছে আমার? অথবা – কি চাই জীবনে? গ্রেচেনের নিজের কাছে প্রশ্ন। প্রশ্নটা আমাকেও সমানভাবে প্রভাবিত করেছে বলে লিখতে বসা। বয়স অনেক হলো, জিজ্ঞাসা করা হয়নি এই সামান্য প্রশ্নটা। দিন লম্বা মনে হলেও বছর পার হয়ে যাচ্ছে বেশ তাড়াতাড়িই। জীবনে যে জিনিশগুলো আসলেই প্রয়োজনীয়, সেখানে মনোযোগ দেয়া হয়নি কখনো। যা চেয়েছিলেন জীবনে তার থেকে শত যোজন দুরে চলে গেলেও সেটা নিয়ে চিন্তা করতে নেই নাকি? প্রশ্নটার উত্তর চাইলেন নিজের কাছে গ্রেচেন। লুকোছাপা নয়, সরাসরি উত্তর। ‘সুখী হতে চাই আমি’ উত্তরটা আসলো শেষ পর্যন্ত, মনের অতল তল থেকে। মজার কথা, এই সুখী হবার প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্বেও এটার পেছনে কোনো সময় দেয়া হয়নি কখনোই। ফেলে দেন গ্রেচেনের কথা, আমি বা আপনি ভেবেছি কথনো? বুকে হাত দিয়ে বলবেন কিন্তু।

৪৭.

যেমন কথা তেমন কাজ! বরং সময় বাড়িয়ে নিলেন নিজের কাছে। বছর খানেক, ডেডিকেটেড টু ‘হ্যাপিনেস প্রজেক্ট’| শুরু করলেন আরেকটা ডায়েরি, ধরে রাখলেন বছরের তিনশো পঁয়ষট্টি দিন, পাঁচ বছরে আঠারশো পঁচিশটা মুহূর্ত। বের হলো বই হয়ে। বের হয়েই বেস্টসেলার! হ্যাপিনেস প্রজেক্টের উপর ভিত্তি করে চার পাঁচটা বই বেস্ট সেলার লিখলেও প্রজেক্টের নামে নাম দিয়ে বইটাই আমার প্রিয়। আচ্ছা, বই বাদ, ভেবেছেন কখনো – কি চান জীবনে? সময় কি দিয়েছেন সেটার পেছনে?

আচ্ছা, সুখী হতে চেয়েছিলেন কখনো?

Read Full Post »

Older Posts »