The resistance is waiting. Fight it. Ship.
– Seth Godin
২৯১.
লিখছি অনেক কিছুই। ‘কেন লিখবেন’ গোছের লেখা থেকে শুরু করে ‘গান বাজনা’ কিছুই বাদ যাচ্ছে না বলেই এই গল্পের অবতারণা। কেউ কেউ বলছেন ইনবক্সে – লিখুন, আপনার কাজ নিয়ে। উত্তম প্রস্তাব। তবে এখনি নয়। শিখছি এখনো। তৈরী করছি বিশাল একটা নলেজবেজ। এই অর্গানাইজেশনের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। আমাদের মতো দেশগুলো জ্ঞান আহরণ করলেও তা টিকিয়ে রাখতে পারেনা প্রায়োগিক দর্শনের অভাবে। এজেন্সীগুলোর সমন্বয়হীনতা এর একটা বড় কারণ হতে পারে। তার চেয়ে বড় কারণ হচ্ছে অর্গানাইজেশনের স্মৃতি বা মেমরি তৈরী করার ধারণার চর্চা না থাকা। একটা অর্গানাইজেশনের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তার দক্ষ মানবসম্পদ। অর্গানাইজেশনের স্মৃতি তৈরী না হলে সেটা দিন দিন মেধাশুন্যতায় পর্যবসিত হবে। অর্গানাইজেশন আর দেশের জন্য ব্যাপারটা একই। সেদিক থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো মধ্যে যারাই জ্ঞানটাকে টেকসই অবস্থানে নেবে – তারাই টক্কর দেবে উন্নত অর্থনীতিগুলোর সাথে।
২৯২.
জ্ঞান ভিত্তিক অর্গানাইজেশনগুলোর বড় সমস্যার মধ্যে নলেজ ম্যানেজমেন্ট একটা বিশাল সমস্যা বটে। গুগলের মতো জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিতে সাত বছর চাকুরী করে বের হয়ে গেলে কোম্পানি কিছুটা চাপে পড়ে সত্যি, তবে সেটার জন্য ওদের নলেজ ম্যানেজমেন্ট দেখলে মাথা ঘুরে যাবে। বাংলাদেশে ওর কাছাকাছি নলেজ ম্যানেজমেন্ট গুটিকয়েক কোম্পানির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটার সুবিধাটা নিতে পারছি না আমরা, এখনো। ভালো ভালো রিসোর্স মানে জনবল চলে যায় কাজ শিখে – আটকে রাখতে পারি না আমরা।
২৯৩.
হাজারো জিনিস শিখছি প্রতিদিন। আমার বদ অভ্যাস হচ্ছে ওটার জার্নালিং করা। দু-এক লাইনে হলেও লিখে রাখি ডিজিটাল নোটপ্যাডে। হাজারো লাইন লেখার পর বছর এক দুই পর পর হারাই ওই নোটগুলো। ঠেকে শিখেছি ক্লাউড সিনক্রোনাইজেশন। আপাতত হারাচ্ছে না ওগুলো। এখন ক্লাউড প্রোভাইডার হাওয়া না হয়ে গেলেই হয়! কাজের ফাঁকে ফাঁকে রেগুলেটরি নতুন কীওয়ার্ড চোখে পড়লেই যোগাযোগ করি ওই দেশগুলোর রেগুলেটরের সাথে। জ্ঞান বিলানোর ক্ষেত্রে জুড়ি নেই ওদের। চাইতে হবে নিজ থেকে। দুহাজার আটে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সুইডিশ রেগুলেটর। শুরু করেছিলাম নিজের উদ্যোগে। ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির প্রথম লাইসেন্সিং নীতিমালার নামটা ধার করলাম তাদের থেকে। ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস এক্সেস – সংক্ষেপে বিডাব্লিউএ।
২৯৪.
গত ছয়বছর ধরে পড়েছি অনেক কিছুই। শুনেছি আর কথা বলেছি অনেক কনফারেন্সে। তবে জ্ঞান নিয়ে তো বসে থাকলে হবে না – সেটার আউটকাম থাকতে হবে! যাকে সেথ গোডিং বলেছেন ‘শিপিং’ মানে বের করে দাও কাজটা। উনার কথা হচ্ছে;
Ship often. Ship lousy stuff, but ship. Ship constantly.
২৯৫.
সবকিছুর একটা আউটপুট থাকবে। জ্ঞানের আউটকামটা নিয়ে আসতে হবে দেশের স্বার্থে। আজ আমার জ্ঞানের পেছনে খরচ করেছে দেশ, ফেরৎ দিতে তো হবে আমাকেই – দেশকে। জ্ঞান থাকার পরও কাজ না করার পেছনে রয়েছে রেজিস্টেন্স। কাজ করতে গেলেই ‘কিন্তু’ আর ‘কি না কি হয়’ গল্প চলতে থাকে মনের ভেতর। আর এই মনের ভেতরের ইন্টারনাল রেজিস্টেন্স শেষ করে দিচ্ছে আমাদের ক্যারিয়ার, হাজারো উদীয়মান প্রজেক্ট আর দেশের উন্নতি। সমস্যা হয় না আমার। আটকে গেলেই হাঁক ছাড়েন সেথ গোডিং আর স্টিভেন প্রেসফিল্ড!
ফাইট ইট, রকিব! নেইল ইট, বাডি! বি দ্য লিঞ্চপিন!
মুক্তি নেই! ঘুমের মধ্যেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন এঁরা। একারণে মনে হয় ডেলিভারিও বেশি।
ব্রায়ান ট্রেইসির মূল মন্ত্রটাও একেবারে খারাপ নয়।
ট্র্যাই ইট, ডু ইট, ফিক্স ইট!
২৯৬.
নলেজ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়েছি বলে তৈরী করছি একটা নলেজবেজ, আমার সহকর্মীদের নিয়ে। আগে ম্যানেজ করতাম একা একা। এখন পারছিনা আর। ভাগ করে দিয়েছি সবার মধ্যে। কাউকে ডাব্লিউটিও/গ্যাটস প্রোটোকল, কাউকে স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট আর কাউকে কনসিউমার প্রটেকশন। সংগ্রহ করেছি প্রায় সাত হাজার ডিজিটাল নীতিনির্ধারনী ডকুমেন্টেশন, আরো হাজার আটেকের মতো হাতে আসছে সামনেই। কবে কে কি করেছে – ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্রাকটিস কোনোটাই বাদ পড়বে না বলে আশা করছি। টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশন চলে গেছে অন্য ধাপে। আসল কথা, ইনোভেশন ইন্ডাস্ট্রির সাথে করতে হবে মিতালি। বানাতে হবে তাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। দেশের স্বার্থে। তবেই হবে উন্নতি। রেগুলেশন বলছে না কেউ, ওটা হয়ে গেছে ফ্যাসিলিটেশন। আসল রেগুলেশন চলে গেছে কম্পিটিশন আর কনসিউমার প্রটেকশন এজেন্সীর কাছে। গল্প দিচ্ছি না কিন্তু! ফেডারেল ট্রেড কমিশন আর অস্ট্রেলিয়ান কম্পিটিটিশন এন্ড কনসিউমার কমিশন সাইটে উঁকি মারবেন নাকি একবার? ট্যাগলাইন হচ্ছে ‘প্রটেক্টিং কনসিউমার’!
২৯৭.
দেশের উন্নতির সাথে জিডিপি জড়িত। আর ব্রডব্যান্ড ছড়ানোর সাথে জিডিপি যুক্ত সরাসরি। দেশগুলো নিজেকে বলছে ডিজিটাল ইকোনমি আর নিচ্ছে ডিজিটাল এজেন্ডা। যে দেশগুলোতে ব্রডব্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে উঠেনি তাদেরকে নিরাশ করেননি সৃষ্টিকর্তা। তাদেরকে দিয়েছেন তরঙ্গ বা স্পেকট্রামের মতো জাদুর চাবিকাঠি। লেট-স্টার্টারদের সামনে অফুরন্ত সম্ভাবনা। ওয়েস্টার্ন সিনেমার নায়কদের মতো বন্দুকের নল না কামড়িয়ে বড় হলেও তরঙ্গের সাথে সখ্যতা সেই জ্ঞান হবার পর থেকেই। ওই স্পেকট্রাম আর টেলিযোগাযোগের নাম্বারিং হচ্ছে যেকোনো দেশের একটা সীমিত রিসোর্স। আজ আপনার বাতাসের ভেতরের ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স আর থ্রীজি/এলটিই – সবই হচ্ছে স্পেকট্রামের খেলা। মজার কথা হচ্ছে সব দেশের এই দুটো জিনিসকে সমান করে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্পেকট্রাম আছে যে পরিমান – আমাদেরও তাই। এটার সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য গবেষণা হচ্ছে কোটি কোটি ডলারের। আবার সর্বোত্তম আউটকামের জন্য দরকার ওই গবেষণালব্ধ জ্ঞান আর ওই দেশের জন্য প্রায়োগিক প্রজ্ঞা। তবে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়লে হবে না। দরকার ব্যবস্যা বান্ধব নীতিমালা। দরকার ভিশনারী ব্রডব্যান্ড মাস্টার প্ল্যান।
২৯৮.
খালি হাতে যাব না আজ। শিক্ষা কিভাবে দেশগুলোকে এগিয়ে নিচ্ছে সেটার গল্প বলার অপেক্ষা রাখে না আর। স্কুলগুলোতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেবার জন্য কাজ করছে অনেকেই। সেটার একটা চমত্কার রিপোর্ট হাতে এসে পড়ল গতকাল। নামিয়ে নিন এখান থেকে।
তার আগে, বলুন তো – শুরু করবো কোনটা দিয়ে?
স্পেকট্রাম না নাম্বারিং?
[…] আসি সেথ গোডিংয়ের ‘শিপিং’ এর গল্পে। বই পড়ছি এতো, ফলাফল কোথায় তার? […]
LikeLike