The purpose of collecting so much information can only be power.
― Nick Drake, Nefertiti: The Book of the Dead
৭৬.
অস্ট্রেলিয়ার গল্প শুরু করেছিলাম ব্রডব্যান্ডের ধারণাটা মাথায় নিয়ে। কিন্তু চলে গেলাম অন্য দিকে। গত দুহাজার আট থেকে অস্ট্রেলিয়ার ‘ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক’ মানে এনবিএন নিয়ে কম কথা হয়নি। আমার প্রেজেন্টেশনেই ব্যবহার করেছি বহুবার। এনবিএন এতটাই হিট যে গুগল করলেই অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সাইটে চলে যাচ্ছে বার বার। অথচ এই এনবিএন অনেক দেশেরই এজেন্ডা। মানে, দেশের ব্রডব্যান্ড হবে না শুধুমাত্র প্রাইভেট অপারেটর দিয়ে। যেখানে ব্যবস্যা নেই সেখানে প্রাইভেট অপারেটরটা যাবেই বা কেন? দায়বদ্ধতা থেকে সেখানে যাবে সরকার। আর, সেটার জন্যও রয়েছে অন্য মেকানিজম, ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস অবলিগেশন ফান্ড। আবার সরকারী কোম্পানি ওদের মতো এফিসিয়েন্ট নয়। যে ভুলটা আমরা করছি প্রতিনিয়ত – শুধুমাত্র বিটিসিএলের উপর ভর দিয়ে।
৭৭.
টাকা ঢালতে হবে দেশকেই, তৈরী করতে হবে এসপিভি মানে ‘স্পেশাল পারপাজ ভেহিকল’| সেই বোর্ডে বসবে সরকার, প্রাইভেট অপারেটর – সবার স্টেক থাকবে ওটাতে। কিছুটা ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ’ মানে পিপিপির মতো। ম্যানেজমেন্ট থাকবে এফিসিয়েন্ট কোম্পানির কাছে, যার দায়বদ্ধতা থাকবে সরকারের হাতে। এখন অবশ্য চার পির যুগ, পাবলিক মানে জনগণসহ। ভারত, নেপাল, চিলি, কলম্বিয়া, অস্ট্রেলিয়া, পেরু, ব্রাজিলের মতো দেশ ‘রিভার্স সাবসিডি অকশন’ করলে আমাদের আপত্তি কোথায়? আসছি পেরুর গল্পটা নিয়ে সামনে। এই দুহাজার পাঁচের ঘটনা! আমরা চোখ খুলে দেখতে চাইনা কোথায় কি হচ্ছে। বিদেশে তো যাওয়া হচ্ছে না কম? দেখতে আর পড়তে তো আপত্তি থাকার কথা নয়। পড়বেন নাকি একটু?
৭৮.
অস্ট্রেলিয়ার মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কম ঠাট্টা করেনি এই এনবিএন নিয়ে। তাদের পত্রিকাগুলোতে এনবিএনের রুপার্থক একটা সাদা হাতি মানে বড় করে শ্বেত হস্তীর ছবি থাকতো প্রায়। পুরো টাকাটাই সরকার পানিতে ফেলে দিচ্ছে বলে অনেক সমালোচনা এসেছে সবস্তর থেকে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে ব্রডব্যান্ড ডেপ্লয়মেন্ট কিছুটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। এক জনপদ থেকে আরেক জনপদ পাঁচশো মাইলের বেশি দুরে। একেক জনপদে মানুষ নেই বললেই চলে। ফলে ইনভেস্টমেন্ট কস্ট অনেক বেশি। তাই বলে সরে আসেনি তাদের পরিকল্পনা থেকে। বরং অন্য অনেক বাজেট থেকে টাকা কেটে এনে জড়ো করেছে এখানে। আমার ধারণা, ভবিষ্যত দেখে ইনভেস্ট করছে তারা।
৭৯.
দুশো বছর পরের অস্ট্রেলিয়ার প্ল্যান করছে এখনি। অস্ট্রেলিয়া ক্যাপিটাল টেরিটোরিতে গেলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে। রাস্তা থেকে লাইটপোস্ট আর তার সাইডওয়াক এতো দুরেই রেখেছে যে রাস্তা বড় করা যাবে আরো দুশো বছরের কথা চিন্তা করে। ফাইবার বসাতে হবে সারা মহাদেশ জুড়ে। সে জায়্গায় আমাদের দেশের জনপদের ভেতরে কোনো ফাঁক আছে নাকি সেটাই সন্দেহ। প্রতি ইঞ্চির ফাইবারের সুষ্ঠু ব্যবহার শুধুমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। প্রতি ইউনিট ফাইবারের দাম পড়বে সবচেয়ে কম এই বাংলাদেশে! টেলস্ট্রা মানে আমাদের বিটিসিএল আর প্রাইভেট অপারেটর মিলে যে নেটওয়ার্ক তৈরী করেছে সেটা দেশকে সেভাবে যুক্ত করতে পারছে না বলে এই এনবিএন। সরকার তার অবস্থান অটুট রেখেছে সবসময়ই।
৮০.
একচল্লিশ বিলিয়ন ডলারের পৃথিবীর বৃহত্তম ফাইবার রোলআউটের যে অবকাঠামো প্রকল্প তা আর গল্পে পর্যবসিত নয় আজ। তিরানব্বই ভাগ জনসংখ্যার সবাইকে ফাইবার নেটওয়ার্ক দিয়ে একশো মেগাবিট গতির ব্রডব্যান্ড দেবার কথা বলা আছে সেই ‘রিকোয়েস্ট ফর প্রোপজাল’ মানে আরএফপিতে। আবার প্রত্যন্ত এলাকায় সবাইকে লাস্ট মাইলে বেতার নেটওয়ার্ক দিয়ে সর্বনিম্ন বারো এমবিপিএসও থাকবে সেখানে। আর এই এনবিএন নিয়ে কম গবেষণা হয়নি। গবেষনার ফলাফল দেখলে ভিমড়ি খেয়ে যাবার জোগাড় হবে সবার। কথা হচ্ছিলো তাদের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে। তাদের মন্ত্রনালয়ের নাম শুনলেই ব্রডব্যান্ডের গুরুত্বটা বোঝা যাবে কিছুটা।
৮১.
ডিবিসিডিই’র গল্প শুনতাম সবসময়ে। খোলাসা হলো তাদের ডকুমেন্ট দেথে। ‘ডিপার্টমেন্ট অফ ব্রডব্যান্ড, কমিউনিকেশনস এন্ড দ্য ডিজিটাল ইকোনমি’ হচ্ছে সেই মন্ত্রনালয়ের নাম। যেই নাম সেই কাজ! তারা বুঝেছে কানেক্টেড ডিজিটাল ইকোনমি কি জিনিস। ওরা এটাও বুঝেছে যে ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশগ্রহনের মাধ্যমেই অস্ট্রেলিয়া বাড়াতে পারবে নিজের উৎপাদন। আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা মানে অন্যের বাজার দখল করতে লাগবে এই ইন্টারনেট। ‘সোশ্যাল ওয়েল বিঙ’ মানে সামাজিকভাবে ভালোভাবে থাকার উন্নতি করা যাবেই যুক্ত থাকার মাধ্যমে। সরকারী সার্ভিস ডেলিভারি প্লাটফর্ম গ্রামীন জনপদে নেবার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। অস্ট্রেলিয়া তার ডিজিটাল অর্থনীতির পূর্ণ সম্ভাবনা দেখছে ইন্টারনেটে যুক্ত থেকে। ভালো অর্থনীতি, সুশিক্ষা, সবার জন্য স্বাস্থ্য, ভালো সামাজিক ব্যবস্থার ফলাফল নির্ভর করছে এই এনবিএনের উপর।
৮২.
চলুন দেখি কিছু গবেষনার ফলাফল – এই এনবিএন নিয়ে। এই এনবিএন তাদের আঠারোটা ইন্ডাস্ট্রিকে কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত করবে সেটার হিসেব। বিলিয়ন ডলার ঢালছে মাটিতে – সেটার আউটকাম কি হবে হচ্ছে সেটার চুলচেরা হিসেব। দুহাজার বিশ সালের মধ্যে এই ফাইবার নেটওয়ার্কের প্রভাব তাদের সেই ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে কতোটুকু সম্মৃদ্ধি করবে সেটার হিসেব নিয়ে এই গবেষণা। ভুলে যাবেন না এই প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ডেসিমালের ডানেই হয় আর সেটা অনেক অনেক বেশি!
৮৩.
আঠারোটা ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে এই প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ০.১৭ থেকে ০.৫৪ শতাংশ মধ্যে – সমস্ত ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে এটার গড় হচ্ছে ০.৪৩ শতাংশ। এই গবেষনাতে শুধুমাত্র এনবিএনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এনবিএনের উচ্চগতির ফলে বিভিন্ন নতুন এপ্লিকেশনের ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি, তার প্রসেস আউটপুটের যোগফল আর সেগুলোর বিজনেস মডেলের আউটকাম আসেনি এই গবেষনাতে। সামগ্রিকভাবে, সমস্ত সেক্টর জুড়ে উচ্চগতি যে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসে সেটা ধরা হয়নি এখানে। উদাহরণ হিসেবে আজ আমাদের দেশে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড থাকলে ইউটিউব, গুগলের মতো দেশী একটা কোম্পানি কতো রেভিনিউ জেনারেট করতো সেটা যোগ করা হয়নি উপরের গবেষণায়। চার্টটা * দেখবেন নাকি একবার?
ইন্ডাস্ট্রি |
% প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি (সর্বনিম্ন) |
পরিবহন ব্যবস্থা |
০.৫৪ |
পানি |
০.৫৪ |
বিদ্যুত |
০.৫৩ |
সরকারী পরিষেবা |
০.৫১ |
ফিনান্সিয়াল আর ইন্সুরেন্স |
০.৪৯ |
কনস্ট্রাকশন |
০.৪৯ |
গ্যাস |
০.৪৮ |
যোগাযোগ |
০.৪৬ |
বানিজ্য |
০.৪৪ |
অন্যান্য বানিজ্যিক পরিষেবা |
০.৪৩ |
তেল |
০.৪২ |
চিত্তবিনোদন আর তার সম্পর্কিত সার্ভিস |
০.৩৮ |
কয়লা |
০.৩৮ |
ম্যানুফ্যাকচারিং |
০.৩৩ |
অরণ্যবিদ্যা আর মত্স্যখাত |
০.২৭ |
খনিজসম্পদ |
০.২৭ |
প্রসেসড ফুড |
০.২৩ |
কৃষিবিদ্যা ও পশুপালন |
০.১৭ |
৮৪.
গবেষণাতে সতেরোটা ইন্ডাস্ট্রির পাঁচশোচল্লিশটা কোম্পানিকে নেয়া হয়েছিলো। কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আয় পাঁচ মিলিয়ন থেকে এক বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বেশি ছিলো – সেই গবেষনার সময়। এদের সাতান্ন শতাংশের মতামত অনুযায়ী এনবিএন পাল্টে দেবে তাদের ক্লায়েন্ট আর সাপ্লাইয়ারদের সাথে যোগাযোগের বর্তমান ধারাটা। বাড়বে প্রোডাক্টিভিটি। আবার পঞ্চান্ন শতাংশ বিশ্বাস করেন যে এই এনবিএন বাড়িয়ে দেবে সবার অনলাইন সক্ষমতা। ভালো তো, ভালো না?
আমাদের ব্রডব্যান্ড – আসছে শিগগির!
* চার্ট সূত্র: সাইমস এট এল. অস্ট্রেলিয়ান বিজনেস এক্সপেকটেশনস ফর দ্য ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক, পৃষ্ঠা ৬
[…] ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ফান্ড। আর এসপিভি। লাগবে এটাও। […]
LikeLike