Feeds:
Posts
Comments

Posts Tagged ‘নীতিমালা’

There’s a tremendous gap between public opinion and public policy.

– Noam Chomsky

৬৬৭.

আচ্ছা, টাকা নিয়ে আসবে কেন আমাদের দেশে? কেন নয় নিজের দেশে? চাকরিক্ষেত্র বাড়তো বরং ওই দেশে। তাহলে তো আইফোন তৈরি হতো খোদ মার্কিন ভূখণ্ডে। কোম্পানীগুলোর মূল লক্ষ্য থাকে মুনাফা বাড়ানো। তারা তো আর দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। আর মুনাফা করা তো দোষের নয়। আজ মাইক্রোসফট মুনাফা করতে পেরেছিলো বলেই তৈরি হয়েছে মেলিণ্ডা এণ্ড গেটস ফাউন্ডেশন। ফলে বিলিয়ন ডলার যাচ্ছে মানুষের ভালো কাজের জন্য। কম টাকা নয়, নভেম্বর দুহাজার চৌদ্দ পর্যন্ত তার টাকা বিলি হয়েছে বিয়াল্লিশ বিলিয়নের বেশি। ফিরে আসি সরকারের কাজে। ওই কোম্পানীগুলোকে দেশে আনতে দৌড়াতে হবে অনেকদুর। একটা দেশকে নিজেকে ‘ইভাল্যুয়েট’ করতে হবে কেন দেশ বা কোম্পানীগুলো আসবে টাকা নিয়ে? তারা কি চায়? আপনি হলে কি চাইতেন? বেশি লাভ, কম সময়ে। ‘ক’ দেশে ইনভেস্ট করলে আপনি কি চাইতেন? সরকারী অফিসে কম ঘুরাঘুরি, লাইসেন্সের নীতিমালাগুলো কতটুকু আপনার দিকে? লাভটা দেশে নিতে পারবেন কিনা? ওই দেশের মানুষগুলো ওই কাজের জন্য উপযুক্ত কিনা? শ্রমবাজার কেমন সস্তা?

৬৬৮.

আপনি নিজেই করবেন হাজারো প্রশ্ন। কারণ, টাকাটা আপনার। খাটাবেন আপনি। করলেন ইনভেস্ট, এরপর পাল্টে গেল নীতিমালা। আর ইনভেস্ট করবেন আপনি? নীতিমালার ‘প্রেডিক্টিবিলিটি’ নিয়েও কথা হয়েছে আগে। প্রাইভেট সেক্টর ‘ভর্তুকি’ চায়নি কখনো। তারা জানে ব্যবসা করতে হয় কিভাবে। রেগুলেটর আর সরকারকে চায় ‘ফ্যাসিলেটর’ রোলে। বাকিটা করে নেবে তারা। যেখানে ব্যবসা নেই সেখানে সরকারের ‘রেগুলেটরী ব্যবস্থা’ – ধরুন ইউনিভার্সাল অ্যাক্সেস ফান্ড নিয়ে কাজ করতে চায় তারা। দেখা গেছে বাজারে প্রতিযোগিতার বেঞ্চমার্ক ঠিক থাকলে ‘এফিসিয়েণ্ট’ নেটওয়ার্ক তৈরি হয় সবাইকে নিয়ে। ‘প্রতিযোগিতা’ ব্রডব্যান্ড সাপ্লাই সাইডে কমিয়ে নিয়ে আসে দাম, বাড়ায় সার্ভিসের কোয়ালিটি, বৃদ্ধি পায় গ্রাহকসেবা। আর সেকারণে সম্প্রসারণ করে ব্রডব্যান্ড বাজার, অ্যাক্সেস পায় আরো বেশি মানুষ। বেশি গ্রাহক মানে কমে আসে দাম, তৈরি হয় নতুন নতুন ‘ভ্যালু প্রপোজিশন’। এই সাইকেল নিয়ে কথা বলা হয়েছে আগেও।

৬৬৯.

আবার ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে অ্যাক্সেস না পেলে প্রোভাইডাররা বাড়িয়ে দেবে দাম। আর দাম বাড়লে বারোটা বাজবে ব্রডব্যান্ড ‘ডিফিউশনে’র। ব্রডব্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাক্চার না থাকলে গ্রাহকেরা সার্ভিস পাবে কোথা থেকে? আর নেটওয়ার্ক থাকলেও দাম না কমলে সেটার প্রতি আগ্রহ হারাবে গ্রাহকেরা। আবার সার্ভিস মানুষকে না টানলে নেটওয়ার্ক তৈরিতে আসবে মন্থরগতি। আর সেকারণে সরকারকে আসতে হবে এগিয়ে। ‘সাপ্লাই চেইনে’ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির সাথে সাথে ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা, নেটওয়ার্ক তৈরিতে প্রণোদনা আর গ্রাহকসেবার মানদন্ডটা ঠিক রাখলে বাড়বে ব্রডব্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা। পুরো দেশে ব্রডব্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাক্চার থাকলে ভালো, আর না থাকলে? মানে, আমাদের দেশে যে জনবসতির ঘনত্ব, সব বিজনেস কেস কাজ করবে এখানে। তবে, ব্রডব্যান্ডের দাম হাতের নাগালে না এলে গ্রাহকদের আনা কষ্ট হবে। আর তখন, প্রোভাইডাররাও পিছিয়ে যাবে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট থেকে। রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে যোগবিয়োগ করতে বসবে তারা। ওখানেই কাজ করতে হবে সরকারকে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

If you were born without wings, do nothing to prevent them from growing.

― Coco Chanel

৬৫২.

বাংলাদেশে কি চলবে আর চলবে না, সেটা দেখার আগে দেখে আসি অন্য দেশগুলোতে কি কি চলেছে। ব্রডব্যান্ডের সুফল পাবার আগে ওই দেশগুলো কি করেছে? যার ফলাফল পেয়েছে হাতেনাতে। মজার কথা – পঞ্চাশটার বেশি দেশের ব্রডব্যান্ড নীতিমালা দেখে একটা প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে যার অনেকটাই মিলে যাচ্ছে ব্রডব্যান্ড হ্যান্ডবূকের সাথে।

ক॰ ব্রডব্যান্ড নয়, দেশের উন্নতির নীতিমালা তৈরি করেছে উন্নতির শিখরে পৌছে যাওয়া দেশগুলো – সবার আগে। দেশের সমস্যা আর তার সমাধান চলে আসবে সেই ‘স্ট্র্যাটেজিক’ ক্যানভাসে। টার্গেট আর সেটাকে সময়মতো মেটানোর টাইমলাইন চলে আসবে ওই কাগজে। ওই কাগজ দেখবে সবাই। প্রাইভেট সেক্টর, ইনভেস্টর, ইনডাস্ট্রি। আর সেটা দেখে পরিমার্জন করবে তাদের ‘ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’। এই সবকিছুর টূল হচ্ছে এই ব্রডব্যান্ড নীতিমালা।

খ॰ দেশের উন্নতির নীতিমালা অথবা ওই দেশের ‘দর্শন’ তৈরি করার প্রক্রিয়ার সময় আলোচনা করতে হবে সবার সাথে। সরকার হয়তোবা তৈরি করতে পারে নীতিমালা, কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন করবে প্রাইভেট সেক্টর আর ইনডাস্ট্রি। সেটার পয়সা ঢালবে ইনভেস্টর। তাদের সাথে কথা না বলে অথবা তাদের মতামত – তাদের সুবিধা অসুবিধা না জেনে নীতিমালা তৈরি করলে কাজ এগোবে না দরকার মতো। গ্রাহক কি চান সেটা তো আসবে সবার আগে। ভুল বলেছি?

গ॰ তৈরি হলো নীতিমালা, তবে সেটা কাজ করছে কিনা বা তার ধারাবাহিকতা দেখার জন্য দ্বায়িত্ব নিতে হবে রেগুলেটর অথবা মন্ত্রণালয়কে। যেকোন কাজের ‘প্রগ্রেস ট্র্যাক’ করার অনেকগুলো ঝামেলা রয়েছে বলে উন্নতদেশগুলো একটা ‘রিসার্চ মেকানিজম’ বের করে নেয় আগে থেকে। নীতিমালার কাজ শুরু হয়ে গেলে পাল্টে যেতে থাকবে অনেকগুলো ‘ভ্যারিয়াবল’। যেমন, মানুষের ডিজিটাল লিটারেসি অনেকখানি বেড়ে যেতে পারে নীতিমালার ‘প্রজেক্টেড’ সংখ্যা থেকে। মানুষের ইন্টারনেট ব্যাবহারের ‘অ্যাডপশন রেট’ বেড়ে যেতে পারে সময়ের আগেই। আবার অনেকগুলো এজেন্সি ট্র্যাক করতে থাকবে তাদের অংশগুলো। ফলে, এই ‘মাল্টিলেয়ারড’ ফাংশনালিটিতে কার কার কাজ কতটুকু এগোলো সেটা বের করতে দরকার হবে ওই ‘রিসার্চ মেকানিজম’ প্রোগ্রাম। কি ধরনের ‘প্রগ্রেস ট্র্যাক’ হতে পারে এই প্রোগ্রামে? মানুষ কতটুকু সুবিধা নিচ্ছে এই ইন্টারনেটের, কি ধরনের প্রতিবন্ধকতা আটকে দিচ্ছে কাজগুলোকে, ডিজিটাল লিটারেসী বেড়েছে কতটুকু, সাপ্লাই সাইডের প্যারামিটারগুলোর কি অবস্থা, নেটওয়ার্ক তৈরির গতি কেমন, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে জিনিসগুলোর মাপার একক ‘ইউনিভার্সাল’ না হলে বিপদে পড়বে অন্যান্য এজেন্সিগুলো। কারণ, সব এজেন্সির জবাবদিহিতার প্যারামিটার এক নয়।

ঘ॰ ব্রডব্যান্ড নীতিমালাকে অনেক লম্বা সময় নিয়ে কাজ করতে হয় বলে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। একেকটা নীতিমালার পনেরো থেকে বিশ বছরের টাইমলাইন থাকে বলে সেটাকে ঠেলে নেয়ার মতো ‘প্রজ্ঞা’ সরকারগুলোতে থাকে কম। পাঁচ বছর পর পর নতুন সরকার এলেও আগের কাজগুলোকে ধরে রাখলে দেশ অর্জন করতে পারে তার সেই লক্ষ্যমাত্রা। উন্নতদেশগুলোতে এই লম্বা সময় ধরে ‘লেগে থাকা’ ব্যাপারটাই দিয়েছে তাদের সফলতা। সাধারণ মানের ব্রডব্যান্ড নীতিমালা নিয়েও শুধুমাত্র ‘লেগে থাকা’র কারণে উঠে গেছে ওই উন্নয়নশীল দেশগুলো। এদিকে, দুহাজার সালের ‘আইটি বিল’ নিয়ে শুধুমাত্র লেগে থাকার কারণে সাফল্যের চূড়ায় পৌছেছে সুইডেন।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Do you know what my favorite renewable fuel is? An ecosystem for innovation.

– Thomas Friedman

৬১৩.

ছোটবেলায় ইকোসিষ্টেম নিয়ে ভাবলেই মনে আসতো মানুষ, গরু, ছাগল, ঘাসপাতা, গাছের ছবি। ওগুলো ছিলো ডাঙার অংশে। বাতাস সূর্য আর পানি ছিলো ‘জীবনহীন’ কম্পোনেণ্ট। পানির অংশে তাকাতেই ভয় লাগতো আমার। কুমির, তিমি – ছবির আকারে বেশ বড়ই ছিলো আঁকাগুলো। আসল কথা হচ্ছে সবাই মিলে একটা ইকোসিষ্টেম। লাগবে সবাইকে। মানে ওই ব্যাকটেরিয়াটাকেও। কোন একটা কম্পোনেট বাদ পড়লেই বিপদ। ‘ফীডব্যাক লূপে’ হবে সমস্যা। খাদ্য চেইনেও একই সমস্যা। কেউ উত্পাদক – কেউ ভোক্তা। ঘাস ছাড়া চলে না গরুর। আবার গরু ছাড়া চলে না মানুষের। এই ‘ইন্টার-ডিপেনডেন্সি’ চিরকালের। ব্রডব্যান্ডের ইকোসিষ্টেম তো আরো ভয়াবহ। প্রতিটা কম্পোনেণ্ট শুধু একটা আরেকটার ওপর শুধু ‘ডিপেনডেন্ট’ না, একটা আরেকটার প্রবৃদ্ধির সহায়ক। বইয়ের ভাষায় বলে ফেললাম মনে হচ্ছে।

৬১৪.

ব্রডব্যান্ড ইকোসিষ্টেমে আছে কি? শুরুতেই নিয়ে আসি হাই-স্পীড নেটওয়ার্ককে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা এটা বোঝেন ভালো। ইন্টারনেট ছড়াতে এটার পেছনেই খরচ করছেন কোটি কোটি টাকা। তাও আবার দিচ্ছেন বিটিসিএলকে। এই ইকোসিষ্টেমের ‘ইনভেস্টমেন্ট’ আসবে কিভাবে? ওই ‘পাজল’টা মেলাতে লেখা হয়েছে আরেকটা চ্যাপ্টার। পাইপ তো হলো, ভেতর দিয়ে আসা যাওয়ার জিনিস কোথায়? সেটা হচ্ছে সার্ভিস, যা তৈরি করতে আমরা আসলেই দুর্বল। কোটি টাকা দিয়ে বানালাম স্কুল, বই ছাড়া। অথচ এই ‘সেবা’র জন্যই সবকিছু। এই সার্ভিস হচ্ছে আমাদের ব্রডব্যান্ড ইকোসিষ্টেমের দ্বিতীয় কম্পোনেণ্ট। আবার সার্ভিসগুলো কিন্তু অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক। অ্যাপ্লিকেশন প্রোভাইডাররা বসবেন কোথায়? ভুল বুঝবেন না, এই কম্পোনেণ্টটাই বাঁচিয়ে রেখেছে নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারকে। অ্যাপ্লিকেশন ছাড়া ইন্টারনেট কেন, আপনার স্মার্টফোনই তো অচল। এই বিলিয়ন ডলারের অ্যাপ্লিকেশন (নাকি অ্যাপ) হচ্ছে তিন নম্বর কম্পোনেণ্ট। টেলকো’রা প্রায় অভিযোগ করেন – কমছে তাদের আয়। টেলকো’র ব্যবসা আগে ছিলো ‘ওয়ালড গার্ডেন’ ধাঁচের। নিজ নিজ অ্যাপ্লিকেশন শুধুমাত্র নিজ গ্রাহকের জন্য। ইন্টারনেট ভেঙে ফেলেছে ওই ‘ওয়ালড গার্ডেন’য়ের ব্যবসা, থমাস ফ্রীডম্যানের ভাষায়, ওয়ার্ল্ড হ্যাজ বিকাম ফ্ল্যাট! একেবারে ফ্ল্যাট! ভিসা লাগে না আয় করতে। পাশাপাশি আয় বাড়ছে টেলকো’র হু হু করে। আর যতো বাড়ছে অ্যাপ্লিকেশন, ততো মোটা হচ্ছে পাইপ। মানে ব্যবসা হচ্ছে পাইপেরও। আর যাই করেন – মিটার লাগানো আছে তো পাইপে। তবে ‘নেট নিউট্রালিটি’র একটা ধকল যাবে সামনে। ওটা আরেকদিন!

কোনটা ফেলনা নয়। একটা ছাড়া চলবে না আরেকটা। নেটওয়ার্কে পয়সা ফেললেই হবে না - বাকিগুলোকে দেখভাল করতে হবে।

কোনটা ফেলনা নয়। একটা ছাড়া চলবে না আরেকটা। নেটওয়ার্কে পয়সা ফেললেই হবে না – বাকিগুলোকে দেখভাল করতে হবে।

৬১৫.

চার নম্বর কম্পোনেণ্টের কথা ভুলে যায় সবাই। আমরা মানে ‘ব্যবহারকারীরা’। গ্রাহক। ফেসবুকের ভাষায় ‘আম জনতা’। যে যাই বলুক – ভোক্তা ছাড়া ব্রডব্যান্ড ইকোসিষ্টেমের পুরোটাই অচল। দিচ্ছে কে পয়সাটা – দিনের শেষে? ভোক্তা। আমার ভাষায় ‘প্রাইস সেনসেটিভ’ ভোক্তা। ব্রডব্যান্ড ইকোসিস্টেমের সবচেয়ে নামী দামী কম্পোনেণ্টকে নিয়ে ভাবেন কম – নীতিনির্ধারণীতে বসা মানুষেরা। আমি নিজেই ওখানে ছিলাম বলেই বলছি ব্যাপারটা। বিশ্বাস করুন, সার্ভিসের দাম আর তার সহজলভ্যতাকে ঠিকমতো ‘টুইকিং’ করতে পারলে এটাই মোড় ঘুড়িয়ে দেবে পুরো ইকোসিস্টেমের। গ্রাহকের সাথে অ্যাপ্লিকেশনের সম্পর্ককে বাদ দিলে চলবে না কিন্তু। ইন্দোনেশিয়ায় যে ধরনের অ্যাপ্লিকেশন চলে বেশি সেটা আমাদের দেশে যে চলবে সেটার গ্যারান্টি দেবে কে? বাড়বে গ্রাহক একসময়। বাড়বে গ্রাহকের চাহিদা, বাড়বে ‘সফিস্টিকেশন’, আর সেটাই বাড়াবে ডিমান্ড। ডিমান্ড বাড়লে আসবে ‘ইনভেস্টমেন্ট’ নেটওয়ার্কে। তখন, পয়সা আসবে উড়ে উড়ে। মানে ঘুরতে থাকবে ইকোসিস্টেমের বৃত্তটা। একেকটা ‘কম্পোনেণ্ট’ ঠেলে ওপরে ওঠাবে তার পরের কম্পোনেণ্টটাকে। প্রতিটা কম্পোনেণ্টকে ঠিকমতো দেখভাল করলে আর তাকাতে হবে না পেছনে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

If the world is cold, make it your business to build fires.

– Horace Traubel

৫৮৮.

স্বাধীন, শক্তিশালী রেগুলেটরি সংস্থা সবসময় চেয়েছে ডাব্লিউটিও। ইন্ডাস্ট্রির আর রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত নয় এমন সংস্থা। সরকারী বেসিক টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে এমন কোম্পানিকেও ছাড় দিতে পারবে না এই রেগুলেটর। বাজারে অন্য কোম্পানিগুলোকে দেখভাল করতে হবে এক নীতিমালা দিয়ে। টেলিযোগাযোগে স্পেকট্রাম, ‘রাইট অফ ওয়ে’ আর নাম্বারিং হচ্ছে দেশের সীমিত সম্পদ। স্পেকট্রাম হচ্ছে আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য লাইফলাইন। ভবিষ্যত ব্রডব্যান্ড নির্ভর করছে এর ওপর অনেকাংশে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর সাত শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি নির্ভর করছে এর ওপর।

৫৮৯.

আর নাম্বারিং হচ্ছে সবার জন্য ভয়েস কল করার নিশ্চয়তা। ইউনিভার্সাল এক্সেস। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বসাতে গেলে রাস্তার ‘রাইট অফ ওয়ে’র মতো তাদের ‘লিগাল এক্সেস প্রভিশনিং’য়ে সরকার কিছু টাকা পায়। আবার সেটা ঠিকমতো না বলা থাকলে সমস্যায় পড়ে ইনভেস্টররা। দক্ষতার সাথে সম্পদগুলোর ‘অ্যালোকেশন’ না হলে দেশ হারায় প্রবৃদ্ধির সুযোগ। সম্পদগুলোর ‘অ্যালোকেশন প্রসিডিউর’ হতে হবে স্বচ্ছ, পক্ষপাতিত্ব ছাড়া। ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর বর্তমান ‘অ্যালোকেশন’ উন্মুক্ত থাকতে হবে সবার জন্য। সবাই জানবে কে কি পাচ্ছে। তবে সরকারী ‘অ্যালোকেশনে’র বিস্তারিত দরকার নেই এই চুক্তিতে।

৫৯০.

দেশগুলোর ডাব্লিউটিও’র এইসব ‘কমিটমেন্ট’ বিশ্ববাজারে একটা শক্ত সিগন্যাল দেয়। মানে সেক্টরে রিফর্ম চাচ্ছে দেশটা। আবার চুক্তিতে সাক্ষর করেছেন কিন্তু মানছেন না – তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। মেষপালকের ওই নেকড়ে আসার গল্পে আসবে আর না কেউ। ইনভেস্টমেন্ট ‘ক্রেডিবিলিটি’ মানে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে দেশ। কয়েকটা কনসাল্টিং ফার্মের রিপোর্ট দেখে যা বোঝা গেল যারা ডাব্লিউটিও’র রেফারেন্স পেপারে সত্যিকারে ‘কমিট’ করেছিলেন – তাদের দেশে এফডিআই এসেছে অনেকগুণ।

৫৯১.

আসলেই অনেকগুণ। আর বেশি এফডিআই মানে বেশি প্রতিযোগিতা। নতুন নতুন টেলিযোগাযোগ ইনফ্রাস্ট্রাকচার। নতুন প্রোডাক্ট, হাজারো বিকল্প – দাম না কমে যাবে কোথায়? মানে আসল (প্রোডাকশন কস্ট) দামের কাছাকাছি চলে আসবে ইন্টারনেটের দাম। অথবা এখনকার দামে অনেকগুণ বেশি ইন্টারনেট। তবে এফডিআই আনার জন্য সবচেয়ে বড় কাজ করে দেশটা যখন তার নিজ টেলিযোগাযোগ কোম্পানিটা বেসরকারি করে দেয়। এটা ইনভেস্টরদের জন্য সবচেয়ে বড় সিগন্যাল। মানে, সরকারী কোম্পানিকে বাঁচাতে অন্যায় কিছু করবে না দেশটা।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Outstanding leaders go out of their way to boost the self-esteem of their personnel. If people believe in themselves, it’s amazing what they can accomplish.

— Sam Walton

৬০৮.

ইন্টারনেটের সফল দেশগুলোর নাম তো জানেন সবাই। ওদের ইতিহাস পড়ছিলাম এক এক করে। এদের প্রায় প্রত্যেকেই ইন্টারনেটের শুরুর দিকে জোর দেয় ডিমান্ড ‘ফ্যাসিলিটেশন’ – ইন্টারনেটের চাহিদা বাড়ানো গল্প নিয়ে। সে কারণে তাদের আগের নীতিমালাগুলো ‘সাপ্লাই সাইড’ থেকে ‘ডিমান্ড তৈরি’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো বেশি। বাজার তৈরি করা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট মানুষের কি কি সুবিধা দিচ্ছে সেটা নিয়ে জোর প্রচারনা ছিলো সবসময়ে। সরকারী প্রতিটা অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে গিয়েছিলো ইন্টারনেটে। ইন্টারনেট মানে স্বচ্ছতা – নয় কোন দালালী – মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের নিশ্চিহ্ন করার যা যা ব্যবস্থা নিতে হয় সব করেছিলো দেশগুলো। ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করার হাজারো পন্থা বের করেছিলো গনশুনানী করে। পার্টনার করে নিয়েছিলো ইনডাস্ট্রি স্টেকহোল্ডারদের। বলেছে – কমিয়ে দাও ইন্টারনেটের দাম – কি লাগবে তোমাদের? কোথায় কোথায় পাল্টাতে হবে নীতিমালাগুলোকে? দেখিয়ে দাও, ঠিক করে দিচ্ছি এক এক করে। যা যা পেরেছে ঠিক করে দিয়েছে রেগুলেটর।

৬০৯.

নিয়ে আসো আরো গ্রাহক বান্ধব সেবা, নিয়ে যাও ওই ‘বটম অফ দ্য পিরামিডে’র লোকটার কাছে। ওর কাছে পৌছানো মানে হচ্ছে সবার কাছে পৌছানো’র কাজটা হয়েছে ভালোভাবেই। পিরামিডের সবচেয়ে নিচের স্তরে যে মানুষগুলো আছে তাদের দেখভাল করবে কে? ওই দেখভাল করার জন্য ছাড় দাও অপারেটরদের, উইন উইন সিচ্যুয়েশন। আমরা দেখবো অপারেটরের কিছু দিক, তখন সেও দেখবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষটকে। কত ছাড়ে কতো সুবিধা – সেটা আবার দেখবে রেগুলেটর। রেগুলেটরের রোল পাল্টে গেছে অনেক আগেই – বুদ্ধিমান দেশগুলোতে। টেলিকম রেগুলেটর ইদানিং দেখছে শুধুমাত্র স্পেকট্রাম আর নাম্বারিং। বাকি সব চলে গেছে ‘কনজ্যুমার প্রোটেকশন’ আর ‘কম্পিটিশন’ এজেন্সির কাছে। গ্রাহকস্বার্থ ব্যাপারটা কতো বড় জিনিস সেটা বুঝেছি অনেকগুলো রেগুলেটরের ‘অ্যানুয়াল রিপোর্ট’ দেখে। সাইটে আছে দেয়া। ‘বুদ্ধিমান’ দেশগুলোতে গেলে ওটা ছিলো একটা ‘মাস্ট’ আইটেম – নিয়ে আসার।

৬১০.

আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি ভালো করেই – ইন্টারনেটে সফল দেশগুলোর অনেকেই মুখাপেক্ষী হয়ে ছিলো না অপারেটরদের ওপর। সরকারী টাকা খরচ হয়েছে ‘এসপিভি’র ওপর। তৈরি করেছে ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাক্চার। যুক্ত করেছে গ্রামগুলোকে শহরের সাথে, বিছিয়েছে হাজারো কিলোমিটারের ফাইবার অপটিক কেবল। এসপিভি, স্পেশাল পারপাজ ভেহিকেল। সবার অংশগ্রহণে একটা কোম্পানী। সরকারের একটা ‘স্টেক’ থাকলেও ম্যানেজমেন্টে হাত দেয় না। ওটা ছেড়ে দেয়া থাকে দক্ষ ম্যানেজমেন্টের ওপর। এটা নিয়ে লিখেছি অনেকবার। মনে আছে বিটি, ব্রিটিশ টেলিকমের কথা? ইনফ্রাস্ট্রাক্চার কোম্পানীর সংখ্যা দুটোই যথেষ্ট। পুরো দেশকে যুক্ত করবে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ – সব ব্যাকবোনে। অ্যাক্সেস কোম্পানীগুলো, হতে পারে মোবাইল, পিএসটিএন অথবা আইএসপি – তাদের ‘লাস্ট মাইলের’ আগের ‘মিডল মাইল’ নেবে ইনফ্রাস্ট্রাক্চার কোম্পানী থেকে। লাস্ট মাইলে এখনো দারুন কাজ করছে স্পেকট্রাম।

৬১১.

আসল কথাটা বলিনি এখনো। সরকারী ফান্ডের একটা বড় অংশ যায় ‘আর এণ্ড ডি’তে। মানে, ইউনিভার্সিটিতে। রিসার্চ ছাড়া দুনিয়া অচল। ইন্টারনেটকে কিভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে পুরো দেশে – এটা নিয়েই তৈরি হয় বিশাল বিশাল প্রজেক্ট। নীতিমালা বানানোর প্রজেক্ট। কোন নীতিমালায় পয়সা নষ্ট হবে কম। ওর মধ্যে থাকবে দেশীয় কনটেন্ট তৈরির জন্য বিশাল প্রণোদনা, কারণ তাহলে সবই ‘হোস্ট’ হবে দেশের ভেতর। এছাড়া ওই কনটেন্টগুলো পড়তে পারবে সবাই। মনে আছে জিপিটি’র কথা? ‘জেনারেল পার্পাজ টেকনোলজি’। বললে হবে না যে – “বুঝি না ইন্টারনেট”। দরকার পড়লে হাসপাতালের উচ্চপ্রযুক্তির জিনিসপত্র বুঝতে পারছি কিন্তু আমরা – তাহলে সাধারণ মোবাইল ব্যবহার করে পরীক্ষার ফী দিতে পারবো না কেন?

দরকার প্রযুক্তি ব্যবহার করার প্রায়োগিক বিদ্যা। এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে ওই দেশগুলো – তাদের বয়স্কদের। চালিয়েছে ‘ডিজিটাল লিটারেসী প্রোগ্রাম’। ওর কিছু ‘স্যাম্পল’ও ছিলো আমার কাছে। দূরে নয়, সিঙ্গাপুরে গেলে পাবেন ভুরি ভুরি।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Effective leadership is not about making speeches or being liked; leadership is defined by results not attributes.

— Peter Drucker

৬০৩.

একটা কথা বলে রাখি চুপি চুপি, ‘ওয়ারলেস অ্যাক্সেস’ রাজত্ব করবে আরো অনেক বছর। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। ফিক্সড ইনফ্রাস্ট্রাক্চার যেখানে তৈরি হয়নি শুরুর প্ল্যানিংয়ের অভাবে। আমার মতে, ‘ওয়ারলেস অ্যাক্সেস’ হচ্ছে একটা ‘স্টপ গ্যাপ’ সলিউশন। মানে পুরো সলিউশন না আসা পর্যন্ত একটা ‘মেকানিজম’। বসে তো থাকবে না কেউ। তবে, এটা চলবে না শত বছর ধরে। ওয়ারলেস সারাজীবন রাজত্ব করবে ‘গ্যাপে’ – বাসা থেকে যাচ্ছেন অফিস, অফিস থেকে বাসা, ট্রিপে যাচ্ছেন শহরের বাইরে। অথবা বিদেশে। আর, বাসায় থাকবে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড। অফিসে কথা আর নাই বা বলি। স্পেকট্রামের কিছু ‘ইনহেরেন্ট’ সমস্যার কারণে এটা ফিক্সড এর মতো অতো ‘রেজিলিয়েণ্ট’ পারে না হতে। মাল্টিপল বিমফর্মিং ছাড়াও আরো অনেক প্রযুক্তি আসলেও ‘ফিক্সড’ হচ্ছে ‘গ্যারানটিড’ ধরনের জিনিস। স্ট্রীমিং ভিডিও দেখছেন ওয়ারলেস ইন্টারফেসে। চলছে ভালই, আবহাওয়া খারাপের কারণে হোক আর সিগন্যাল দুর্বলের জন্য হোক – দরকারী ‘থ্রু-পুট’ না পেলে সবই মাটি। ভিডিও কণফারেন্সে সমস্যা করলে তো ব্যবসাই শেষ।

৬০৪.

‘ওইয়ার্ড’ মানে তারের ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে তার না কাটা পর্যন্ত চলতে থাকবে আজীবন। অফিসে, বাসায় মূল লাইনটা আসছে ওই তারের ইনফ্রাস্ট্রাক্চার দিয়ে, বাকিটা হয়তোবা শর্ট রেঞ্জ অ্যাক্সেস পয়েন্ট নিচ্ছেন কেউ কেউ। ‘ওয়াই-ফাই’কে আমরা তারের ইনফ্রাস্ট্রাক্চারেই ধরে নেই। তবে বাসার আর অফিসের ডেস্কটপ তারেই যুক্ত। ভিডিও কণফারেন্স চলে তারের ওপর। বিদেশে গেলেও অফিসে পাচ্ছেন কেবল। হোটেলেও পাচ্ছেন ওয়াই-ফাই, যার পেছনে রয়েছে শক্ত ‘কেবল’ ইনফ্রাস্ট্রাক্চার। মানে হচ্ছে – রাস্তায়, বাসে, বিমানে, গ্রামাঞ্চলে প্রয়োজন পড়ছে এই ওয়ারলেস অ্যাক্সেস। ভবিষ্যতের কথা বলছি কিন্তু। বাসে, বিমানেও পাওয়া যাচ্ছে ওয়াই-ফাই, বড় বড় শহরেও আসছে মেট্রো-ওয়াই-ফাই। মোবাইল অপারেটরের স্পেকট্রামের বহুল ব্যবহার হবে আরো দশ বছর, এই বাংলাদেশে। সংখ্যায় বলবো সামনে।

৬০৫.

বড় বড় ইনভেস্টমেন্ট আসবে এই ফিক্সড ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে। আমাদের এই বাংলাদেশে। আসতেই হবে। টাকা উড়ে বেড়াচ্ছে পুরো পৃথিবীতে, আফ্রিকাতে, আসতে চাইছে বাংলাদেশে। অনেকে জানে না নীতিমালা। বিশ্ব ব্যাংকের একটা স্টাডি পড়ছিলাম কাল রাতে। বুদ্ধিমান দেশগুলো খুঁজে বের করছে ‘নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক গ্যাপ’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটাকে বলছে ‘নেটওয়ার্ক অ্যাভেইলিবিলিটি গ্যাপ’। ওই অংশটার দাম কয়েক বিলিয়ন ডলার। মানে এখানে উদ্যোক্তারা বের করে নিতে পারেন তাদের বিজনেস কেস। ‘পয়সাঅলা’ দেশের গল্প আলাদা। এনবিএন, ন্যাশন্যাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক তৈরি করতে বের করছেন ‘স্টিমুলাস’ মানে প্রণোদনা প্যাকেজ। অস্ট্রেলিয়ার গল্প বলতে বলতে হয়রান করে ফেলেছি আপনাদের। সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের একই অবস্থা। ভুললে চলবে না, ব্রডব্যান্ড কিন্তু একটা ইনফ্রাস্ট্রাক্চার।

৬০৬.

ভুল বুঝবেন না, ব্রডব্যান্ড বোঝাতে ‘কেবল’কেই বোঝায় উন্নত দেশগুলোতে। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হলেও লাগবে স্পেকট্রাম, আমাদের মতো দেশে। দশ মেগাহার্টজের নিচে একেকটা চ্যানেল প্ল্যান? উহু, ওটাকে বলা যায় না ব্রডব্যান্ড। এজন্য দরকার আরো স্পেকট্রাম – দিতে হবে অপারেটরদের। হিসেব কিন্তু দিয়েছিলাম আগে। প্রথম ‘থ্রীজি’ লাইসেন্সটা ড্রাফট করার সময় নূন্যতম ব্যান্ডউইডথ দেবার কথা বলেছিলাম দশ। চার দশে চল্লিশ। চারটা অপারেটর। একজন নিতে পারে পনেরো। আমার দেশকে চিনি ভালোভাবে। এখানে ‘কাভারেজ’ ইস্যু নয়, বরং অপারেটরদের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে ক্যাপাসিটি’র সমস্যা। ইন-বিল্ডিং সলিউশন নিয়ে আসছেন ফেমটোসেল দিয়ে। বিল্ডিং কোডে রাজউককে বলে দিতে হবে এগুলোর ‘প্রোভিশনিং’য়ের কথা। দশের নিচে চ্যানেল প্ল্যানে বিটিএস কিনতে কিনতে পাগল হয়ে যাবে অপারেটর। মাঝখান দিয়ে গ্রাহক পাবে না দরকারী গতি। এমন নয় যে আমাদের ঘাটতি আছে স্পেকট্রামের। পড়ে আছে এখনো বেশ কিছু। ওটা ব্যবহার না হলে ক্ষতি সবার। ওটার এনপিভি মানে ‘নেট প্রেজেন্ট ভ্যালু’ যাচ্ছে কমে দিন দিন। আবার অপারেটরদের ‘স্পেকট্রাল এফিশিয়েণ্ট’ করতে লাগবে ‘বুদ্ধিমান’ রেগুলেটর। দরকার ভারসাম্যতা। প্রতিটা নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্ট কিনতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। উপায়?

৬০৭.

বুদ্ধিমান দেশগুলো ফাইবার নেটওয়ার্ক দিয়ে ভরে ফেলছে মেট্রো এরিয়াগুলোকে। সরিয়ে ফেলছে পুরোনো ‘পয়েন্ট টু পয়েন্ট’ স্পেকট্রাম ব্যাক-হল। দেয়া লাগছে না আগের মতো স্পেকট্রাম চার্জ। ওই স্পেকট্রাম বরং দেয়া যেতে পারে নতুন অপারেটরদের। এই স্পেকট্রাম ‘রিভোকেশন প্ল্যান’ করতে হবে রেগুলেটরকে। প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে না বাজারে? লাস্ট মাইলে থাকবে স্পেকট্রাম – আরো অনেক বছর। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। তাই মোবাইল অপারেটররাও তারের স্বাদ দিতে চাচ্ছেন তাদের গ্রাহকদের। যুক্ত করছেন তাদের থ্রীজি/এইচএসপিএ+/এলটিই বিটিএসগুলোকে একেবারে ফাইবার দিয়ে। গিগাবিট ইথারনেট। মালয়েশিয়াতে তো এটা একটা লাইসেন্সিং শর্ত। থ্রীজি’র ব্যপারে। এলো থ্রীজি এতদিন পর, মন ভরাতে হবে গ্রাহকদের। অনেক গ্রাহক হলেই না দাম কমবে ইন্টারনেটের। দুই শার্টে একটা ফ্রী, একহাজার শার্টে দাম অর্ধেক। প্রত্যেকটার। জানতে হবে ওই ‘ক্রিটিক্যাল মাস’টার কথা।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

A leader is best when people barely know he exists, when his work is done, his aim fulfilled, they will say: we did it ourselves.

— Lao Tzu

৫৮৮.

প্রশ্ন করি একটা?

আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের কতোটুকু আসে বাইরে থেকে? মানে দেশের বাইরে?

পুরোটাই?

বোধহয় না। দেশের পত্রিকাগুলোর অনলাইন ভার্সন দিয়ে শুরু করতে দেখেছি আমার বন্ধুদের। পত্রিকাগুলোর অফিস কি নিউ ইয়র্কে? অবশ্যই না। তারা * আছেন বাংলাদেশে।

৫৮৯.

আপনার মেইলের প্রাপকের কতো শতাংশ থাকেন বাইরে?

আপনার অফিসের মেইলের কথা চিন্তা করুন তো একবার। প্রেরক আর প্রাপক সবাই আছেন দেশে। পাঠাচ্ছেনও বড় বড় অ্যাটাচমেন্ট। আমার ট্রাভেল এজেন্ট আমাকে তার টিকেট পাঠান তার জিমেইল অ্যাকাউন্ট থেকে। আমিও পাঠাই ইয়া ভারি পাসপোর্টের অ্যাটাচমেন্ট। অবাক ব্যাপার হচ্ছে আমরা সবাই আছি দেশেই। অথচ মেইলগুলো ঘুরে আসছে দেশের বাইরে থেকে। চিন্তা করুন – ওই মেইলটা আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে কেনা ব্যান্ডউইডধ খরচ করে – যাচ্ছে একবার দেশের বাইরে। আবার, ফিরছে আরেকটা দামী লিঙ্ক দিয়ে। অনেকদেশ ধারনা করে – আমাদের মনে হয় অনেক পয়সা, পেট্রোডলারের মতো খানিকটা, খরচ করার যায়গা পাচ্ছে না বলে এই পদ্ধতি। সত্যি কি তাই?

৫৯০.

ছিয়ানব্বই-আটানব্বই সালের ঘটনা একটা। ফ্রীবিএসডি, লিনাক্স আর উইনডোজ ৩.১ নিয়ে অনেক মেশিনের ছড়াছড়ি ছিলো আমার অফিসে। একেক অ্যাপ্লিকেশন একেকটাতে। ভাগ্যিস ভিএমএস ছিলো না তখনো। কয়েকটা মেশিন এই অফিসে থাকলেও জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বাকিগুলোকে পাঠানো হলো অন্য অফিসে। পাশাপাশি দু অফিস হলেও ইন্টারনেট নেয়া ছিলো দুটো আইএসপি থেকে। অফিস দুটোর মধ্যে নেটওয়ার্কটা সমস্যা দেয়াতে শিখলাম একটা নতুন জিনিস। প্যাকেট ট্রেসিং করে দেখা গেলো ট্রাফিক ঘুরে আসছে আমস্টারড্যাম আর হংকংয়ের রাউটার হয়ে। পাশের অফিস, কিন্তু ঘুরে আসছে সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে – বিশ ত্রিশটা ‘এজ’ রাউটারে সময় নষ্ট করে।

দুনিয়া ঘুরে যাচ্ছে ট্রাফিক। যাচ্ছে গ্রাহকের পয়সা, গতি হারাচ্ছে ইন্টারনেট। পয়সা পাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারগুলো।

দুনিয়া ঘুরে যাচ্ছে ট্রাফিক। যাচ্ছে গ্রাহকের পয়সা, গতি হারাচ্ছে ইন্টারনেট। বাড়ছে ল্যাটেন্সি। পয়সা পাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারগুলো। দাম বাড়ছে ইন্টারনেটের।

৫৯১.

ওটা একটা অফিসের চিত্র হলেও দেশের বড় বড় সার্ভিস প্রোভাইডারদের ভেতর ট্রাফিক ঘুরে আসতো ওই দেশের বাইরে থেকে। দেশের ‘আপ-স্ট্রীম’ ** ব্যান্ডউইডথ প্রোভাইডাররা বুঝতো ব্যাপারটা। তারা মনে করতো – ভালোই তো, আমার কি? আপ-স্ট্রীম আর ডাউন-স্ট্রীমের জন্য পয়সা পাচ্ছি খালি খালি। কারণ, আমরা কথা বলছি না নিজেদের মধ্যে। এভাবেই চলেছে অনেক অনেক বছর। বুদ্ধিমান আইএসপিরা নিজেদের মধ্যে একটা ব্যবস্থা করে নিয়েছিল এর মধ্যে। চাহিদা বাড়ছিলো লোকাল ব্যান্ডউইডথের। কোন কোন আইএসপি’র দেশের ভেতরের চাহিদা বেড়ে দাড়ালো পঞ্চাশ শতাংশের ওপর। ধরা যাক ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ‘ক’য়ের গ্রাহক হাজার দুয়েক। হিসেব করে করে দেখা গেলো – তার আইপি ট্রানজিট মানে ব্যান্ডউইডথ কিনতে হয় দু গিগাবিটস/সেকেন্ড। সিষ্টেম অ্যাডমিনিষ্ট্রেটর প্যাকেট অ্যানালাইসিস করে দেখলেন সিংগাপুর বা ইতালিতে পাঠানো ট্রাফিকের মধ্যে অর্ধেকেরই ডেস্টিনেশন কিন্তু বাংলাদেশের অন্যান্য আইএসপিতে। দেশে অন্যেরা যুক্ত থাকলে ব্যান্ডউইডথ কিনতে হতো মাত্র এক গিগাবিটস/সেকেন্ডের। মানে বাকিটা সিষ্টেম লস।

সব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার + বিডাব্লিউএ + মোবাইল অপারেটর ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জে এলে কমে আসবে দাম, ল্যাটেন্সি। চলে আসবে আকামাই, স্পীডেরা, গুগল, ফেসবুক।

সব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার + বিডাব্লিউএ + মোবাইল অপারেটর ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জে এলে কমে আসবে দাম, ল্যাটেন্সি। চলে আসবে আকামাই, স্পীডেরা, গুগল, ফেসবুক।

৫৯২.

এর সহজ ‘ট্রান্সলেশন’ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায় দামী আইপি ট্রানজিট কিনতে হচ্ছে অর্ধেকটা ***। কষ্টের কথা হচ্ছে বাকিরাও পাঠাচ্ছেন ওই বাইরে। সমস্যা একটাই। সবাই যুক্ত নেই দেশের ভেতর। সরকার নয়, ইউএনডিপি প্রজেক্টের পয়সায় তৈরি হলো যুক্ত হবার একটা প্ল্যাটফর্ম। এটাকে বলা হয় ‘ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ’। দেশীয় ইন্টারনেট ট্রাফিক ‘এক্সচেঞ্জ’ হয় যেখানে সেটাই হচ্ছে সংক্ষেপে আই-এক্স, ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ। ধারনা করা যায়, বাংলাদেশ যদি সর্বসাকুল্যে চল্লিশ গিগাবিটস/সেকেন্ডের আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডধ কেনে, সেটা হয়ে যাবে আসলে – বিশ গিগাবিটস/সেকেন্ডে। দেশের ভেতরে যেই পরিমাণ অডিও ভিডিও আর ডাটা ফাইল শেয়ার করছেন নিজেদের মধ্যে, এই ট্রাফিক বাড়তে বাধ্য। আমাদের বাংলা কনটেন্ট প্রোভাইডাররা, মূলত: পত্রিকাগুলো দেশের ভেতরে হোস্টিং করলে – বাইরের ব্যান্ডউইডথ কিনতে হবে আরো কম। যেমনটি, কোরিয়াকে বাইরের ব্যান্ডউইডথ কিনতে হয় খুবই কম।

৫৯৩.

পরের সমস্যা আরো গুরুতর। টেলিকম রেগুলেটরের ‘এনডোর্সমেন্ট’ না থাকায় এলো না বড় বড় প্রোভাইডাররা। ওই আই-এক্সয়ে। অথচ, বিশাল ট্রাফিক বহন করছে তারা। দেশের ভেতরের সাইটে যেতেও হাজারো ল্যাগ। দেশের ভেতর ন্যাশন্যাল পোর্টাল – সেটাও আসছে ঢিমে তালে। দেশের ভেতর থেকে। মিটিংয়ে ডাকা হলো তাদের। আলাপ হলো অনেক কিছু। এধরনের পিয়ারিং অন্যান্য দেশে হয় সমঝোতার ভিত্তিতে। আপনাদের করতে সমস্যা কোথায়? রেগুলেটর বললে করবেন তারা। তাদের উত্তর। যেহেতু এটাতে একটা লাইসেন্সিং রেজিম আছে, তাই ‘নন’ লাইসেন্সড পিয়ারিং পয়েন্টে যুক্ত হয়ে রেগুলেটরের বিরাগভাজন হতে চান না বাইরের অপারেটররা। কথা ঠিক। মিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট তাদের। তাই সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আছেন রেগুলেটরের ওপর। এখানেই কাজ হচ্ছে রেগুলেটরের। যাই করতে চাইবেন – সবকিছুতে লাইসেন্স, বের হয়ে আসতে হবে ব্যাপারটা থেকে।

৫৯৪.

ব্যক্তিগতভাবে আইএসপি’র পিয়ারিং পয়েন্ট নিয়ে ‘লাইসেন্স’ দেবার পক্ষপাতি ছিলাম না মোটেই। এগুলো সাধারণত: কোম্পানীগুলো নিজেদের মধ্যে ‘মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ ওপর করে থাকে। এক আইএসপি’র গ্রাহক যদি তার বন্ধুর সাথে অনলাইন গেম খেলতে চায় – তাহলে সেটাকে কেন ঘুরে আসতে হবে ইটালী থেকে? অথচ দুজনই বসে আছেন ঢাকায়। ‘সাচ আ ওয়েস্ট অফ এক্সপেনসিভ ব্যান্ডউইডথ’। ন্যাশন্যাল পিয়ারিং পয়েন্ট নিয়ে সচরাচর কোন রেগুলেশন দেখা যায় না। আমার জানামতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যাপারটা রয়েছে। ওই একটাই। টেলিযোগাযোগ রেগুলেশনের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে এই পিয়ারিংকে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে কোম্পানীগুলোর ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে ওপর। চলে যাচ্ছে কোম্পানী অ্যাক্টে। পিয়ারিং করে অর্ধেক আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ বাঁচাতে চাইবে সবাই।

৫৯৫.

আমাদের টেলিযোগাযোগ অ্যাক্টটা যুগোপযোগী হয়নি এখনো। ওখানে বলা হয়েছে – সব মানে সব ধরনের টেলিযোগাযোগ সেবার জন্য লাগবে ‘লাইসেন্স’। এব্যাপারটা আটকে রেখেছে অনেক ইনোভেশনকে। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ নীতিমালাগুলো পাল্টে গেছে অনেক আগেই। ডি-রেগুলেশন ওপরে তুলছে বুদ্ধিমান দেশগুলোকে। লাইসেন্সের দরকার নেই সবকিছুতে। ভেবে দেখুন ওয়াই-ফাই স্পেকট্রামের কথা? ডি-রেগুলেটেড স্পেকট্রাম, ব্যবহার করো ইচ্ছেমতো। মনে আছে – বিশ বছর আগের এফসিসি’র  **** যুগান্তকারী ওই সিদ্ধান্তের কথা? উদ্ভাবনার জন্য ছেড়ে দাও এই দুশো মেগাহার্টজের ফ্রিকুয়েন্সী। অথচ এই ফ্রিকুয়েন্সী বেচলে পেতো বিলিয়ন ডলার।

৫৯৬.

কি হলো পরে? এই ‘ডি-রেগুলেটেড’ স্পেকট্রামকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারের ইনডাস্ট্রি। এফসিসি ওই টাকাটা ছেড়ে দেয়াতে তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল টেলিযোগাযোগ ম্যানুফ্যাক্চারিং ইনডাস্ট্রি। শুধু ওয়াই-ফাই রাউটার নয়, নন-লাইসেন্সড ব্যান্ড নিয়ে তৈরি হয়েছে হাজারো প্রোডাক্ট। তৈরি হয়েছে হাজারো কর্মসংস্থান, বেড়েছে জিডিপি – বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ পেয়েছে স্বাধীনতা। মনে চাইলো, কিনে লাগিয়ে ফেললেন একটা রাউটার। লাগছে না কোন এনওসি *****। কম ঝামেলা হয়নি মানুষকে বোঝাতে। নন-লাইসেন্সড ব্যান্ডের সম্পর্কিত সুবিধা দেখে বুদ্ধিমান দেশগুলো বাড়াচ্ছে ওই স্পেকট্রামের রেঞ্জ। আমারো প্রস্তাবনা থাকবে ওখানে। সরকার তো মানুষের জন্য, তাই নয় কি? আর সেকারণে আরো ১০০ মেগাহার্টজ নন-লাইসেন্সড স্পেকট্রাম ছেড়েছে এই মার্চে, ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে। ৫-০ ভোটে কমিশন ছেড়ে দেয় ওই বহুমূল্যের স্পেকট্রাম – বিনামূল্যে। আরো ছাড়বে পাঁচশো মেগাহার্টজ! আর সেকারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোক্তাদের জন্য স্বর্গরাজ্য। আমাদের কাজ করেছি ওই দুহাজার নয়ে। দেখুন, সেটার প্রতিফলন আমাদের ন্যাশন্যাল ফ্রিকুয়েন্সী অ্যালোকেশন টেবিল। চেষ্টা করেছিলাম ৫ গিগাহার্টজ খুলতে, সম্ভব হয়নি ওই সময়ে। আশা করছি হবে এখন। 

৫৯৭.

যখন ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) লাইসেন্সটা ড্রাফট করা হয়, সেখানে জোর করেই ঢুকিয়েছিলাম পিয়ারিংয়ের ব্যাপারটা। বলা হয়েছিল পিয়ারিং করতে হবে আইআইজি’দের মধ্যে। তবে সেখানে এক নীতিনির্ধারণী কর্তাব্যক্তি সেটাকে কমিশনের নির্দেশনার ওপর ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। ফলাফল, যা হবার তাই হলো। নির্দেশনা গেলো না আর। অনেক কষ্টে পরে সেই নির্দেশনা দেয়া স্বত্বেও বিটিসিএল এলো না প্রাইভেট আইআইজি’র সাথে পিয়ারিং করতে। কথা বললাম। বিটিসিএলের ভয়, তাদের ব্যান্ডউইডথ যদি নিয়ে নেয় প্রাইভেট আইআইজি? ওদের বুদ্ধি বেশি! অথচ, ন্যাশন্যাল ‘পিয়ারিং’ হচ্ছে দেশের ভেতরের ব্যান্ডউইডথ নিয়ে, আন্তর্জাতিক আইপি ট্রানজিট নিয়ে নয়। তারা অবশ্য ‘নতুন প্রযুক্তি’ বলে এড়িয়ে গিয়েছিলো ব্যাপারটা। অথচ, পুরো আফ্রিকাতেই এই ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ রয়েছে পচিশটার বেশি। আহা, দেখতে পেতেন যদি – আফ্রিকা পাল্টাচ্ছে কতো দ্রুত?

৫৯৮.

দেশের ভেতরে হোস্টিং সার্ভিস নিয়ে একই সমস্যা। হাজারো মানুষ জিজ্ঞাসা করছে একটা জিনিস। ভাই, ডাটা সেন্টার করবো – লাইসেন্স দেন একটা। আমার কথা, শুরু করেন। নীতিমালা তৈরি হলে ‘কনসাল্ট’ করা হবে আপনার সাথে। নীতিমালা তৈরি করতে লাগবে দুবছর, তার জন্য তো বসে থাকবেন না উদ্যোক্তারা। পরে নীতিমালা বানানোর সময় গনশুনানীতে – নেয়া হবে উনার অভিজ্ঞতা। কোম্পানী নীতিমালা অনুযায়ী ‘আর্টিকেল অফ অ্যাসোশিয়েশন’ আর ‘মেমোরান্ড্যাম অফ অ্যাসোশিয়েশনে’ কি কি করতে চান সেটা লিখে আবেদন করুন আরজেএসসি’তে। উদ্ভাবনাকে ব্যাহত না করার জন্য রয়েছে ‘ফার্স্ট রাইট অফ রিফিউজাল’। বিপদে পড়বেন না আপনি।

৫৯৯.

আরেকটা প্রশ্ন, বাংলাদেশ থেকে অনলাইন পত্রিকা পড়ছেন যারা, তাদেরকে বের হতে হবে কেন দেশ থেকে? কেনই বা পাড়ি দিতে হবে সাবমেরিন কেবল? দেশে হোস্টিং হলে এক ক্লিকেই চলে আসবে ‘প্রথম আলো’ আর ‘ইত্তেফাক’। দেশে হোস্টিংয়ে খরচ বেশি, অনুযোগ অনেকের। ব্যবহার শুরু না করলে দাম কমবে কিভাবে? ইকোনোমি অফ স্কেলের ব্যাপার জড়িত না? আরো কয়েকটা সাবমেরিন কেবল না আসা পর্যন্ত একটা সস্তা ‘মিরর’ হোস্টিং রাখতে পারেন বিদেশে। আবার সাবমেরিন কেবল কাটলে সবাই আগের মতোই অ্যাক্সেস পাবেন পত্রিকাগুলোতে। মনেই হবে না কেটেছে কেবল। বিদেশের ইন্টারনেট নেই তো হয়েছে কি? দেশে তো আছে।

৬০০.

ধারনা করুন বাংলা কনটেন্ট বেড়েছে কতো? অনেক! নিয়ে আসুন আপনার বাংলা কনটেন্টকে। দেশে। ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব এখানেই। এজন্যই ‘পিয়ারিং’ দরকার দেশে। সাইটগুলোর অ্যাডমিনিষ্ট্রেটরদের দেখা পাবেন রাস্তায়, বাজারে, দেশের ভেতর। দেখা হবে কফিশপে। কথা হবে মুখোমুখি। গুগল আর ফেসবুক নিজেই চলে আসবে তাদের ‘মিরর’ সার্ভার নিয়ে ঢাকায়। পুরো ইন্টারফেস হবে বাংলায়। ওরা আর যাই বুঝুক, ব্যবসা বোঝে ভালো – আমাদের চেয়ে। ইন্টারনেট দাম কমবে না মানে? বরং, বাইরে থেকে মানুষ কিনতে আসবে আমাদের আইপি ট্রানজিট। সমান সমান ট্রাফিক হলে কাটাকাটি। আমার বিশ গিগাবিট ট্রাফিক নিয়ে দাও তোমার বিশ গিগাবিট ট্রাফিক। ব্যবসার ভাষায় একে বলে ‘ফ্রী সেটলমেন্ট’। চমত্কার একটা মার্কেটপ্লেস তৈরি হয়ে যাবে এই বাংলাদেশে। টায়ার ১ না হলেও টায়ার ২ লেভেলের ট্রাফিক জেনারেট করবে এই বাংলাদেশ। ‘অ্যানালাইসিস’ দেখে বলছি। পৃথিবীব্যাপী বাংলাভাষাভাষীদের চাহিদার ফলে আন্তর্জাতিক টায়ার ১, ২ লেভেলের ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট তাদের বাড়তি ট্রাফিক কিনতে আসবে বাংলাদেশে।

৬০১.

বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গতি নিয়ে অনেক কথা শুনি। সেটা অনেকটাই সত্যি। অনেকদেশ ঘুরেছি। আমাদের ‘প্রদর্শিত’ গতি এই যুদ্ধবিদ্ধস্ত আইভরি কোস্ট থেকে যে ভালো নয়, সেটা বলতে পারি হলফ করে। এই গতির মূলে রয়েছে দেশের ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্টগুলো। সবাই যুক্ত থাকলে এক ক্লিকেই চলে আসে দেশের কনটেন্ট। টাইম-আউট ব্যাপারটাও দেখবেন না কখনো। ‘পিং’ মানে নেটওয়ার্ক ঠিক আছে কি না – দেখার ওই টূলটা ফেরত দেবে কয়েকশো মিলিসেকেন্ডে। ইউটিউব বিশাল ‘ক্যাশে’ ইঞ্জিন বসাবে আই-এক্সয়ে। আকামাই, স্পীডেরা, তাদের কনটেন্ট ডিসট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক নিয়ে আসবে আমাদের দেশেই। কথা দিচ্ছি! ইন্টারনেট সাবস্ক্রিপশনে ‘হকিস্টিক ফেনোমেনন’ উপেক্ষা করতে পারছে না কেউ!

৬০২.

আমাদের সবকিছুতে লাইসেন্স লাগে বলে এই ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট নিয়েও তৈরি হয়েছে লাইসেন্স। সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতাম লাইসেন্সটা নেবার ব্যপারে। বিজনেস কেস ওভাবে না থাকায় এগিয়ে আসছিলেন না উদ্যোক্তারা। এটা নিয়ে প্রথমদিকে সমস্যা থাকলেও সেটা মেটানো হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। লাইসেন্স নিয়েছেন দুটো কোম্পানী। সংখ্যা দিয়ে কথা বলি বরং। কে কতো আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ বাঁচাচ্ছে তাদের দেশের আই-এক্স দিয়ে।

কোরিয়ার ‘কেআইএনএক্স’ বাঁচাচ্ছে ৫৬২ গিগাবিটস আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ, প্রতি সেকেন্ডে।
জাপানের ‘জে-আই-এক্স’ ২৫০ গিগাবিটস বাঁচাচ্ছে – প্রতি সেকেন্ডে।
হংকংয়ের ‘এইচকে-আই-এক্স’ প্রতি সেকেন্ডে কম কিনছে ৫৬২ গিগাবিটস।
অ্যামস্টারডামের অ্যাম-আই-এক্স ২৮০০ গিগাবিটসের নিচে কথাই বলছে না! হ্যা, প্রতি সেকেন্ডে কিন্তু!

আর বাংলাদেশ বাঁচাচ্ছে কত – আপনারাই বলবেন আমাকে। না হলে আমি তো আছিই। 

[ক্রমশ:]

বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাগুলো আমার আগের আর বর্তমান প্রতিষ্ঠানের ভিউ পয়েন্ট নয়। নিতান্তই ব্যক্তিগত। 


* তাদের কতজন দেশের বাইরে হোস্টিং করছেন সেই তর্কে যাব না আমি। আসল কথা, তাদের তৈরি কনটেন্টের ভোক্তা কোথায় বেশি? বাংলাভাষাবাসী দেশের ভেতর না বাইরে বেশি সেটা জানি সবাই। খরচ কমিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য দেশের ভেতর আর বাইরে কনটেন্ট 'রেপ্লিকশন' থাকা জরুরী
** যাদের মধ্যমে আইপি ট্রানজিট ব্যান্ডউইডথ আসা যাওয়া করছে দেশের বাইরে
*** ওই উদাহরণের আইএসপি'র ক্ষেত্রে
**** ফেডারেল কম্যুনিকেশন কমিশন
***** নো অবজেক্টশন সার্টিফিকেট, ওটা যোগাড় করতে গিয়ে ভুলেও কিনতেন না রাউটার

Read Full Post »

Never doubt that a small group of thoughtful, concerned citizens can change world. Indeed it is the only thing that ever has.

— Margaret Mead

৫৮৪.

ধরুন, ব্যবহার করছি আইএসপি’র সার্ভিস। লিখিত আর অলিখিত হোক, একটা সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট আছে – তার সাথে আমার। গ্রাহক হিসেবে আমার অধিকার থাকার কথা ওই কোম্পানিটার সাথে সরকারের কি চুক্তি হয়েছে তা দেখার। অনুলিপি নেবার বাড়তি টাকাটা বরং প্রতিবন্ধক হিসেবে দাড়াবে গ্রাহক পর্যায়ে। ওয়েবসাইট হচ্ছে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। আর সেজন্যই ছুঁতো পেলেই করতাম পাবলিক কনসাল্টেশন। মতামত নিতাম সবার। দেখা যেতো যা চিন্তা করেছি – গ্রাহক আর ইন্ডাস্ট্রি চাইছে আরেক জিনিস। ভুল হয়েছে আমারই। আর আমি তো জানবো না সবকিছু। ‘ইগো’ ফেলে দিয়ে নতুন প্রস্তাব দিতাম নীতিনির্ধারকদের।

৫৮৫.

আমি নীতিনির্ধারকদের দোষ দেখি না অনেক জায়গায়। তারা বরং চান – জিনিসগুলো হোক। আর নির্ভর করেন আমাদের ওপর। বেশি জানি বলে অনেক সময় আটকে দেবার চেষ্টা করি আমাদের মনোমতো হয়নি বলে। ইনোভেশনের সুযোগ হারায় মানুষ। ডাব্লিউটিও’র কথা ছিলো দুটো। উন্মুক্ত করতে হবে ক. লাইসেন্সের সব ক্রাইটেরিয়া আর কতোদিনের মধ্যে লাইসেন্সটা পাবেন ‘আবেদনকারী’? সময়সীমাটা গুরুত্বপূর্ণ। আবেদনকারী তো বসে থাকবেন না অনন্তকাল ধরে।

৫৮৬.

অনেক উদ্যোক্তাকে দেখেছি মাসের পর মাস কর্মচারীর বেতন আর বিল্ডিং ভাড়া গুনে যাচ্ছেন। ভেবেছেন, হয়ে যাবে হয়তোবা – কয়েক মাসের মধ্যে। হয়েছে পরে, তবে ব্যবসাটা আর টানতে পারেননি অতগুলো বছর। কতোদিন বসিয়ে খাওয়াতে পারবেন ব্যবসা শুরু করতে না পারলে? আমার কথা, হ্যা অথবা না – হওয়া উচিত একটা সময়ের মধ্যে। ছোট ব্যবস্যা – সর্বোচ্চ চৌদ্দ দিন। বড় ব্যবস্যা মানে সাবমেরিন ক্যাবল অথবা মোবাইল কোম্পানি – পয়তাল্লিশ দিন থেকে দুমাস।

৫৮৭.

সবকিছুর জন্য থাকবে ‘ওয়েল পাবলিসাইজড’ ‘ডিফাইনড প্রসেস’। তাহলে সময় লাগবে কেন বেশি? সময় বেশি লাগলেই ওর ভেতরে অন্যায় কিছু ব্যাপার ঢুকে যেতে পারে। তারপরও সময় বেশি লাগলে – জানিয়ে নিন সবাইকে। ডাব্লিউটিও দ্বিতীয় পয়েন্টটা ছিলো খ. ইন্ডিভিজুয়াল লাইসেন্সের সব টার্মস/কন্ডিশন সবাইকে জানানোর ব্যাপারে। আবার, লাইসেন্স না পাবার কারণ বলতে হবে আবেদনকারী চাইলে।

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

The best time to plant a tree was 20 years ago. The second best time is now.

– Chinese Proverb

ক॰

সমস্যাটার শুরু প্রায় এক দশক আগে। ছুটাছুটির চাকরি। আজ এখানে তো কাল ওখানে। শেষমেষ ‘পীস কীপার’ হিসেবে পোস্টিং হলো কঙ্গোতে। ঘুরাঘুরিই বেশি। ঘুমের সময় ছাড়া বাকিটা হিসেব করলে – পুরোটাই রাস্তায়। নিজ দ্বায়িত্বের এলাকা, যাকে বলে ‘এরিয়া অফ রেস্পন্সিবিলিটি’ – ইঞ্চি ইঞ্চি করে না জানলে বিপদ। মানুষের জীবন বলে কথা। পুরো এলাকা থাকতে হবে নিজের নখদর্পণে। কন্সট্যান্ট ভিজিল্যান্স। পায়ে হাটা অথবা গাড়ি – পায়ের মাইলোমিটারে লাখ মাইল পার হয়েছে নিশ্চিত।

খ॰

রাস্তায় নামলেই হাজার চিন্তা কিলবিল করে মাথায়। একটা এদিকে হলে আরেকটা ওদিকে। মাথা মুন্ডু ছাড়া চিন্তাভাবনা। দিন কয়েক পর বেস ক্যাম্পে ফিরলে বসতাম ইউএন এর কচ্ছপ গতির ইন্টারনেট নিয়ে। সভ্যতার সাথে একমাত্র ‘ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ’ – ওই স্যাটেলাইট লিংক। একসময়, প্লট করতে শুরু করলাম চিন্তাগুলোকে। ‘চ্যানেলাইজ’ করতে তো হবে কোথাও। একেকটা চিন্তা একেকটা ডট। কানেক্টিং দ্য ডট’স ব্যাপারটা বুঝলাম অনেক পরে। চল্লিশের আগে নাকি ব্যাপারটা আসে না মাথায়?

জ্ঞান তো হলো অনেক, অভিজ্ঞতা কাজে লাগালে আসবে প্রজ্ঞা। সেটাকে প্রয়োগ করলেই উন্নতি। দেশের।

জ্ঞান তো হলো অনেক, অভিজ্ঞতা কাজে লাগালে আসবে প্রজ্ঞা। সেটাকে প্রয়োগ করলেই উন্নতি। দেশের।

গ॰

আগের ঘটনা আরো চমত্‍প্রদ। কঙ্গোতে যাবার ঠিক আগ মূহুর্তে ফিরেছিলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিগন্যাল স্কুল থেকে। থাকতে হয়েছিল লম্বা সময়ের জন্য। প্রায় নব্বই বর্গ মাইলের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টেলিকম্যুনিকেশন ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি। যায়গাটাও জর্জিয়ার একটা অজ পাঁড়া গাঁয়ে। সন্ধার পর কুপি জ্বলার মতো অবস্থা। স্কূল থেকে ফিরে কাজ না পেয়ে হাত দিলাম রান্নায়। কাঁহাতক আর খাওয়া যায় ফাস্ট ফুড! পিএক্স থেকে এটা কিনি, ওটা কিনি। বাসায় এসে ভয়াবহ ধরনের ‘টেস্ট এণ্ড ট্রায়াল’। অসুবিধা কি? গিনীপিগ তো নিজে। ক্ষান্ত দিলাম স্মোক ডিটেক্টরের পানির ঝাপটা খেয়ে। বার কয়েক। তবে, একেবারে ক্ষান্ত নয়, কমিয়ে দিলাম গতি। মনোযোগ সরালাম নতুন দিকে।

ঘ॰

বিশাল লাইব্রেরী। এটা ওটা ইস্যু করি, টাইম লিমিটও অসহনীয় লম্বা। পুরনো পত্রিকা, দুস্প্রাপ্য বই সব মাইক্রোফিশেএকদম নতুন বই লাইব্রেরীতে না থাকলেও সেটা কিনে এনে চেকআউট করিয়ে রাখতেন লাইব্রেরিয়ান। আমাজনের বেস্টসেলার লিস্ট দেখা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেলো ওই সময়ে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ‘বেস্টসেলার’গুলো লিখছেন আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষ। মানে, পেশাদার লেখক নন তারা। সাহস পেলাম। যাই লিখি, পাঠক পেতেই হবে বলেছে কে? মনের খোরাক মেটানোর জন্য লেখা। ওই বিরানব্বই থেকে। সেথ গোডিংয়ের গলা শুনি প্রায়ই। শিপ, বাডি! শিপ!

ঙ॰

দেখা গেলো ওই ‘বেস্টসেলার’দের কেউ ছিলেন স্টক এক্সচেঞ্জের হর্তাকর্তা, কেউ সিআইয়ের চীফ। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার। সরকারী কর্মকর্তা। নেভী সীল। ফুটবল কোচ। জিমন্যাষ্ট। তারা লিখছেন পেছনের অনেকগুলো বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে। ব্যর্থতা থেকে সফলতার গল্প। যা আসলে সাহায্য করছে ওই পড়ুয়া মানুষদের। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। বিতর্কিত জিনিস নিয়ে যে লেখা হয়নি তা নয়। লিখেছেন রেচেল মোরানের মতো পেশাজীবীরা। মানে – লেখা হয়েছে প্রায় সব বিষয় নিয়ে। বের হয়ে এসেছে অনেক সমস্যার কথা। সেই ভুল থেকেও শিখছে দেশ। সমালোচনা নিতে পারার মানসিকতার দেশগুলো ওপরে উঠছে দ্রুত। আবার লিখছেন জাতির পিতারা। আজকের ‘আধুনিক’ সিঙ্গাপুরের পেছনে যিনি ছিলেন তারো বই আছে কয়েকটা। নেলসন ম্যানডেলা’র বইটা পড়েছেন নিশ্চয়। সাতাশ বছরের অবিচারের ঘৃণাটা মূহুর্তে গিলে ফেলার ঘটনাটা অজানাই থাকতো বইটা না পড়লে। পড়ছি সবই, বুঝতে পারছি ভালো মন্দ। মন্দটা ফেলে ভালো নিয়ে এগুচ্ছি সবাই আমরা, সময়ের বিবর্তনে। অন্যের কাছ থেকে শিখে। পেছনে লেগে নয়।

চ॰

জ্ঞান কিন্তু রি-ইউজেবল। ব্রিটেনের লেগেছে দুশো বছর প্রায়। শুধু শিখতেই। শিল্পবিপ্লব থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিখেছে ব্রিটেন থেকে। তাদের লোক পাঠিয়ে। নোটবই ভরে নিয়ে আসতো তাদের অভিজ্ঞতার কথা। জাহাজে করে। সেটা কাজে লাগিয়ে ওই ব্রিটেনের সাথে টক্কর দিয়েছে অনেক কম সময়ে। ‘লীড টাইম’ কমিয়ে নিয়ে এসেছে প্রায় একশো বছর। এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওই শেখার চর্চাটা ধরে রেখেছে বলে তারা এখনো শীর্ষে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন শত বিপত্তির মধ্যে উদ্ভাবনা দিয়ে আছে টিকে। নিজেদের দেশে মানুষ কম বলে বাইরের বাজার দখলে ব্যস্ত তারা। এখন বোকারাই বলে যুদ্ধের কথা, বাজার দখলে কে কাকে বাজার বানাতে পারে সেটাই হচ্ছে বড় যুদ্ধ। রক্তপাত ছাড়াই ‘আউটবাউন্ড’ ক্যাশফ্লো!

ছ॰

এশিয়ান দেশগুলো আরো বুদ্ধিমান। ইউরোপ আর অ্যামেরিকা থেকে শিখে সেটা কাজে লাগিয়েছে গত তিরিশ বছরে। এখন টক্কর দিচ্ছে সবার সাথে। হংকং, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর অন্যের ‘ঠেকে শেখা’র অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এগিয়েছে বেশি। পাশ্চাত্যে কোনটা কাজ করছে আর কোনটা করেনি সেটা জানলেই তো হলো! তার সাথে মেশাও ‘লোকাল কন্ডিশন’। আমি এটাকে বলি, ‘ঘুটা’, মানে জ্ঞানের ডিফিউশন। মেলাও হাজারো জ্ঞানের অভিজ্ঞতা। গরীব দেশ হলেও কোন সরকারী কর্মকর্তাকে তো মানা করা হয়না বৈদেশিক ভ্রমনে না যেতে। অথচ কর্পোরেট হাউসে কৃচ্ছতা সাধনে প্রায় সবই চলছে ভিডিও কনফেরেন্সে। দেশের একটাই চাওয়া, শিখে আসা জ্ঞানটা কাজে লাগবে দেশের উন্নতিতে। প্রাথমিক জ্ঞানটা পাবার পর বাকিটা শেখার বাহন হচ্ছে ইন্টারনেট। আর সেকারণে ইন্টারনেট নিয়ে লাগা। জ্ঞান ছড়িয়ে আছে সব যায়গায়, দরকার তার প্রয়োগ।

ঝ॰

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেলেন জ্ঞান ‘ক’। এদিকে সিংগাপুর দিলো ‘খ’ জ্ঞান, ভিয়েতনাম থেকে নিয়ে এলেন ‘গ’। এখন – আমাদের স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে মিলিয়ে যেটা যখন কাজে লাগে সেটাই ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। অনেকে এটাকে বলে ‘বেস্ট প্র্যাক্টিসেস’। মানে, যেটা কাজ করেছে অনেক যায়গায়। ‘ওয়েল টেস্টেড’। টেস্ট পেপার সলিউশনের মতো কিছুটা। দেখা গেছে – ওভাবে কাজটা করলে জিনিসটা মার যাবার সম্ভাবনা কম। টেস্ট এণ্ড ট্রায়ালের পর ফুলপ্রুফ হয়েই নাম হয়েছে ‘বেস্ট প্র্যাক্টিসেস’। দেশের ‘লোকাল কন্ডিশন’কে বেস্ট প্র্যাকটিসে ঘুঁটানোতেই রয়েছে মুন্সিয়ানা। ইন্টারনেটকে ছড়িয়ে দেবার ওই ধরনের ‘টেম্পলেট’ নিয়ে কাজ করেছি গত সাত সাতটা বছর।

ঞ॰

মনে আছে বৈজ্ঞানিক নিউটনের কথা? ‘আমি যদি আজ বেশি দেখে থাকি অন্যদের চেয়ে, সেটা পেরেছি পূর্বপুরুষদের জ্ঞানের ভিত্তিতে’। উন্নতবিশ্বের আজকের যা উন্নতি তার সবটাই এসেছে ওই ‘স্ট্যান্ডিং অন দ্য সোল্ডার অফ জায়ান্টস’ কথাটার ওপর ভিত্তি করে। আজ জানি আমরা ট্রানজিস্টর কি – আর কিভাবে কোটি ট্রানজিস্টর থাকে একটা চিপসেটে। নতুন করে ওই ট্রাংজিস্টর উদ্ভাবন না করে বরং কোটি ট্রাংজিস্টরের চিপসেট দিয়ে আর কি কি করা যায় সেটাই ভাববার বিষয়। আর তাই আগের জ্ঞানের ‘ডিফিউশন’ দিয়ে নতুন উদ্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ওপরে উঠছে নতুন ইমার্জিং দেশগুলো। এটাকে বলা হয় লিপ-ফ্রগিং।

য॰

সামরিক বাহিনীর স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার বিটিআরসিতে আসা। টেকনোলজি নিয়ে একসময় লিখতাম কিছু পত্রপত্রিকায়। শুরুতেই ঝামেলা। ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট – নতুন যাই লিখি সেটা নিয়ে মাথা নাড়াচ্ছিলেন অনেকেই।

“ভালো, তবে সমস্যা অন্যখানে। এটা সম্ভব নয় এদেশে।”

সময় কিন্তু যাচ্ছে চলে। জ্ঞানকে অভিজ্ঞতায পরিণত করতে লাগবে সময়োচিত দর্শন, যুক্ত হবার অদম্য স্পৃহা। লাগবে রেগুলেটরী রেফর্ম। দরকার নেই প্রযুক্তি জানার, নীতিনির্ধারণীদের।

সময় কিন্তু যাচ্ছে চলে। জ্ঞানকে অভিজ্ঞতায পরিণত করতে লাগবে সময়োচিত দর্শন, যুক্ত হবার অদম্য স্পৃহা। লাগবে রেগুলেটরী রেফর্ম। দরকার নেই প্রযুক্তি জানার, নীতিনির্ধারণীদের।

বলেন কি? অবাক হয়ে তাকাই উনাদের দিকে। নীতিমালায় আটকানো আছে জিনিসগুলো। মানে আমরা আটকে আছি আমাদের জালে। জিনিসপত্র না জানার ফলে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। যুক্ত থাকার হাজার সুবিধার মূলে হচ্ছে মানুষের মুক্তি। সেটা প্রথমে আসবে অর্থনৈতিক মুক্তি থেকে, জ্ঞান দেবে আমাদের প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা। সোশ্যাল মিডিয়ার বিগ ডাটা নিয়ে কাজ করেছিলাম একটা এজেন্সিতে বসে। যুক্ত থাকার ফলে আজ যা দেখছেন, এটা আইসবার্গের ছোট্ট একটা টিপ। আরব বসন্ত, একটা উপসর্গ মাত্র। পালটাচ্ছে পৃথিবী, পাল্টাবো আমরাও। ভালোর দিকে। দরকার ইন্টারনেটের মতো কিছু টুলস।


The two most important days in your life are the day you are born and the day you find out why.

― Mark Twain

র॰

বইগুলো লিখছি কিছুটা দায়বদ্ধতা থেকে। বিটিআরসির সাত বছরের অভিজ্ঞতা মাথায় নিয়ে ঘোরার অন্তর্জালা থেকে মুক্তি পেতে এ ব্যবস্থা। নোটবই সেনাবাহিনীতে পোশাকের অঙ্গ হবার ফলে মিস করিনি খুব একটা। জিম রনের অমোঘ ‘নেভার ট্রাস্ট ইয়োর মেমরী’ বাণীটা খুব একটা বিচ্যুতি আনতে পারেনি ‘নোট টেকিং’য়ে। এখন যুগ হচ্ছে ‘গুগল কীপ’ আর ‘এভারনোটে’র। হাতির স্মৃতি বলে কথা – মাটিতে পড়ে না কিছুই। দেশ বিদেশের ফোরাম, যেখানে গিয়েছি বা যাইনি – হাজির করেছি তথ্য। টুকেছি সময় পেলেই। ভরে যাচ্ছিলো নোটবই। ‘এভারনোট’ আর ‘কীপের’ ভয়েস মেমোতে। পয়েন্ট আকারে। প্রোগ্রামিংয়ের মতো পয়েন্টারগুলো লিংক করা ছিলো মাথায়। ভুলে যাবার আগেই বইগুলোর ব্যবস্থা।

ল॰

আরেকটা সমস্যা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমাকে – ওই ছোটবেলা থেকে। কোন জিনিস ধরলে সেটার শেষ না দেখলে ঘুম আসে না আমার। বিশাল বিপদ। আগে ভাবতাম সমস্যাটা আমার একার। ভুল ভাঙ্গলো দুনিয়া দেখতে দেখতে। ইনডাস্ট্রিতে একই অবস্থা। একেকটা রিসার্চ, সফল না হওয়া পর্যন্ত পড়ে আছে মাটি কামড়ে। মনে আছে, হেনরী ফোর্ডের ভি-৮ সিলিন্ডার তৈরির কথা? এই কৌশল ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি, এরোস্পেস, নাসা, ঔষধ গবেষণা সহ প্রচুর স্পেসালাইজড প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হচ্ছে। আজকের এয়ারবাস এ-৩৮০, দোতলা উড়োজাহাজ এতো সহজে আসেনি। উনিশশো অষ্টাশির গবেষনার ফল পাওয়া গেছে এপ্রিল দুহাজার পাঁচে, উড়োজাহাজটাকে উড়িয়ে। এরপরও আরো দুবছরের বেশি হাজার হাজার ‘সেফটি টেস্ট’ আর অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার পর প্রথম বানিজ্যিক ফ্লাইট চালায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স। অন্য কিছু নয়, ওড়াতেই হবে – তাই উড়েছে উর্রুক্কুটা। কেউ জেদ ধরেছিলো, আট দশ ফ্লাইটের তেল দিতে পারবো না। এক ফ্লাইট এর তেল নাও, নইলে অন্য ব্যবসা দেখো। বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনারটাও তৈরি হয়েছে কয়েকটা জেদি মানুষের জন্য। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে উজাড় করে দিয়েছেন তার জ্ঞানকে। বাকিটা আমাদের পালা।

শ॰

আজকের ‘ইন্টারনেট’ (যা পৃথিবীকে পাল্টে দিচ্ছে) এর আবিস্কারের পেছনে একই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। দেশ চেয়েছে ব্যয়বহুল সার্কিট সুইচিং থেকে বের হতে, ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সী, সংক্ষেপে ‘ডারপা’ বিভিন্ন উনিভার্সিটিতে ঢেলেছে অঢেল পয়সা, দিয়েছে অনেক সময়। প্রজেক্ট ‘ফেইল’ করেছে হাজারো বার, হাল ছাড়েনি তারা। ফলে তৈরী হয়েছিল আরপানেট, বর্তমান ইন্টারনেট এর পূর্বসুরী। আজকের বিদ্যুত্‍ বাল্ব তৈরি করতে থমাস এডিসনকে চেষ্টা করতে হয়েছিল হাজার বারের বেশি। রিপোর্টার জানতে চেয়েছিলেন তার ‘হাজারবারের ব্যর্থতার অনুভুতির কথা’। এডিসনের জবাব, ফেইল করিনি তো হাজার বার। বরং, লাইট বাল্বটা তৈরি করতে লেগেছিলো হাজারটা স্টেপ।

ষ॰

টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় ভাসা ভাসা কাজের উপযোগিতা কম। রেগুলেশনেও একই অবস্থা। দরকার স্পেশালাইজেশন – বাজার বুঝতে। ঢুকতে হবে ভেতরে, অনেক ভেতরে। পুরোটাই অর্থনীতিবিদদের কাজ। ভবিষ্যত না দেখতে পারলে এ ব্যবস্যায় টিকে থাকা কঠিন। টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর জাহাবাজ লোকেরাও মাঝে মধ্যে অত ভেতরে ঢুকতে পারেন না। স্পেশালাইজেশন বলে কথা। সেখানেই আসে টেলিযোগাযোগ কনসাল্টিং কোম্পানিগুলো। ওদের কাজ একটাই, আর এন্ড ডি, সারাবছর ধরে। আবার সেই কনসাল্টিং ফার্ম একই ধরনের কাজ করে বেড়াচ্ছে সব টেলিযোগাযোগ কোম্পানির জন্য। স্পেশালাইজড না হয়ে যাবেই বা কোথায় তারা? আর সেই সল্যুশনের জন্য মিলিয়ন ডলারের নিচে কথা বলেন না কেউই। আর বলবেন নাই বা কেন? এধরনের আর এন্ড ডির জন্য কম কষ্ট করতে হয়না তাদেরকে। প্রচুর রিপোর্ট পড়েছি এই কনসাল্টিং ফার্মগুলোর। রিপোর্টতো নয় যেনো হাতের রেখা পড়ছেন। ভবিষ্যত দেখা যায় রীতিমত। মিলিয়ন ডলারের কনসাল্টিং বলে কথা। টার্গেট দিন এক কোটি কর্মসংস্থানের। তৈরি করে দেবো প্রায়োগিক ফর্মুলা। হতে বাধ্য। জানতে হয় ভবিষ্যত দেখতে। বিগ ডাটা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারি খানিকটা।

ট॰

তাই বলে সব কনসাল্টিং ফার্ম এক নয়। আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, কনসাল্টিং ফার্মের দোষ না দেখে যিনি কাজ দিয়ে বুঝে নেবার কথা – তার কম্পিটেন্সিতে ঘাটতি থাকলে রিপোর্ট খারাপ হতেই পারে। আমি কিনছি রিপোর্ট, না বুঝে কিনলে কনসাল্টিং ফার্মের দোষ দিয়ে লাভ কি? গরীবদেশগুলোতে প্রচুর কনসালটেন্সি হয় বটে, তবে সে দেশগুলো সেগুলো ঠিক মতো বুঝে নেবার সামর্থ বা জ্ঞান থাকে না বলেই ঝামেলা হয়। ডোনারদের টাকায় কনসাল্টেন্সি হলে সেটার অবস্থা হয় অন্য রকম। রিপোর্ট নিজের মনে করে বুঝে নিতে পারলে সেটার দাম মিলিয়ন ডলারের বেশি। সে ধরনের রিপোর্ট বুঝে নিয়েছিলাম বেশ কয়েকটা। পোস্ট-ডক করা যাবে কয়েকটা।

ঠ॰

কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হলো বিশ্বখ্যাত অনেকগুলো টেলিযোগাযোগ কনসাল্টিং ফার্মের সাথে। এর সাথে যোগ হলো ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) আর কমনওয়েলথ টেলিকম্যুনিকেশন অর্গানাইজেশনের (সিটিও) আরো অনেক ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালটেন্ট। ধারণা পেলাম তাদের কাজের। পড়তে থাকলাম আরো হাজারো রিপোর্ট। দামী সব রিপোর্ট, তবে তার দাম কোনো কোনো দেশ বা এজেন্সি দিয়ে দিয়েছে আগেই। পরিচয় হলো ওভাম, অ্যাকসেন্চার, কেপিএমজি, পিডাব্লিউসি, নেরা আর এনালাইসিস ম্যাসনের মতো তুখোড় তুখোড় ফার্মের সাথে। আবার নিজের প্রতিষ্ঠানেরই কাজ করতে পরিচয় হলো মার্কিন ফার্ম টেলিকমিউনিকেশনস ম্যানেজমেন্ট গ্রূপ, ইনকর্পোরেশন (টিএমজি)র সাথে। তাদের ধরনটাই বুঝতে সময় লেগেছিলো বেশ। তলই পাচ্ছিলাম না প্রথমে। বিলিয়ন ডলারের কনসাল্টিং কোম্পানি বলে কথা। পরিচয় হলো অনেকের সাথে। বন্ধুত্ব হলো অনেকের সাথে। হাতে ধরে দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশের ‘ফল্ট-লাইন’গুলো।

ড॰

একসময় তল পেলাম এই ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্মগুলোর কাজের ধারার। পৃথিবী জুড়ে কাজ করার ফলে কোথায় কি সমস্যা সেটা তারা জানে ভালো। আর সেটা থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দেয়া ওদের একমাত্র কাজ বলে ওটাও সে জানে ‘অসম্ভব’ ভালো। গরীব দেশগুলোতে হাজার কোটি টাকার ম্যানেজমেন্ট কন্সাল্টেনসি করে টাকা বানালেও সেটার ব্যর্থতার দায় দেয়া যাবে না তাদের ওপর। ওই দেশের – যাদের ‘কন্সাল্টেনসি’টা বুঝে নেবার কথা তারা ‘ছাড়’ দিলে কাজ হবে কিভাবে? উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাড়াতাড়ি ওপরে উঠতে হলে লাগবে কন্সাল্টেনসি, তবে সেটা ‘পাই’ ‘পাই’ করে বুঝে নেবার মতো থাকতে হবে মানুষ। দু চারটা বৈদেশিক ভ্রমণে ব্যাপারটা উপেক্ষিত হলে জ্ঞান আর প্রজ্ঞাটা হারায় দেশ।

ঢ॰

ব্যাপারটা অনেকটা বিজনেস প্ল্যান কেনার মতো। ও আমাকে বানিয়ে দিলো একটা। না বুঝে দিয়ে দেবো পয়সা? সমস্যা হয় যখন সেটা হয় ‘সরকারী’ মানে জনগণের পয়সা। একারণে উন্নতদেশগুলো ছোট করে নিয়ে আসছে সরকারগুলোকে। যাই হয় সব পার্টনারশীপে। যারাই থাইল্যান্ড গিয়েছেন মুগ্ধ হয়েছেন তারা – বিশাল বিশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার দেখে। বেশিরভাগ ইনফ্রাস্ট্রাকচারই কিন্তু পিপিপি’র মডেলে করা। সরকারের অতো পয়সা থাকে না কোথাও। পিপিপি হচ্ছে গিয়ে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ। পয়সা যোগান দেবে বেসরকারী কোম্পানি – কাগজ দেবে সরকার, আইনগত ভিত্তি সহ। ‘উইন’ ‘উইন’ ব্যাপার। পয়সা লাগলো না সরকারের। কর্মসংস্থানও হলো। আমাদের পিপিপি নীতিমালা তৈরী হয়নি এখনো।


There is no ‘poor’ country, they are ‘poorly’ managed.

― Slightly modified

ণ॰

উন্নত দেশগুলোতে অনেক বড় বড় কাজে সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে না জনগণ। কারণ এই পিপিপি। যেকোনো দেশের উন্নতির ইনডিকেটর বোঝা যায় ওদেশের পাবলিক ট্রানজিট সিস্টেম দেখে। মানে জনগন কতো সহজে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারছেন – নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। ঢাকা শহরে সেটার অবস্থা আফ্রিকার অনেক দেশ থেকেও খারাপ। অথচ ব্যবস্যা বান্ধব পিপিপি নীতিমালা থাকলে প্রাইভেট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো প্রস্তাব দিতে পারতো সরকারের কাছে। তৈরী করতো ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড’। ভাগ করে ফেলতো পুরো শহর – চার পাঁচ ভাগে। একেকটা ভাগের রুট নিয়ে দেন-দরবার করতো কনসেশন পিরিয়ডটা নিয়ে। এই রুটটা দাও আমাকে পঞ্চাশ বছরের জন্য। তৈরী করবো স্কাই ট্রেন। ইনফ্লেশন হিসেব ধরে ভাড়ার একটা চার্ট জমা দিতো সরকারকে।

স॰

সফটওয়্যারের মানুষ হিসেবে শূন্য ভার্সন থেকে শুরুতে বিশ্বাসী আমি। শুরু করতে হবে কোথাও। নিউটনের কথায় ফিরে আসবো আবার। ষ্টান্ডিং অন দ্য সোল্ডার অফ জায়ান্টস। আমাদেরও এগুতে হবে পূর্বসূরীর অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে। গাছ রোপণ করার কথা ছিল বিশ বছর আগে। সেটা না হলে কি থাকবো বসে? বরং – লাগাবো আজই। বাংলাদেশের ‘যুক্ত’ হবার এজেন্সিতে চাকরি করার সুবাদে গরীব দেশ আমার ওপর যা ইনভেস্ট করেছে সেটা ফিরিয়ে দেবার জন্য নিয়েছি নগণ্য একটা প্রয়াস। নাম দিয়েছি প্রজেক্ট ‘গিভিং ব্যাক’। ব্রডব্যান্ড ছড়িয়ে দেবার ‘চিটকোড’ হিসেবে ধরুন ব্যাপারটাকে। ব্রডব্যান্ডে সফল দেশগুলোর ধারণা নিয়ে ‘আমাদের আঙ্গিকে’ কোডটাকে ‘ক্র্যাক’ করতে চেষ্টা করেছি মাত্র। আর, পয়সার জন্য ওর সাথে থাকবে ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ফান্ড। আর এসপিভিলাগবে এটাও

দরকার আপনার সুচিন্তিত মতামত। ওই মতামতের ওপর ভিত্তি করে কাঠামোগত পরিবর্তন আনবো বইগুলোতে।

প্রি-প্রোডাকশন স্টেজ: কাজ চলছে এখনো

প্রথম বই: ইন্টারনেটের মুল্যঃ যে কারনে এখনো ধরাছোয়ার বাইরে

দ্বিতীয় বই: বাতাস ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: দক্ষ স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনা পাল্টে দিতে পারে বাংলাদেশকে

তৃতীয় বই: রেগুলেট অর নট টু রেগুলেট? চতুর্থ প্রজন্মের রেগুলেটর ও বাংলাদেশ

* লিংকগুলো যুক্ত করা হয়েছে কয়েকটা ব্লগপোস্টের সাথে। পুরো বইগুলো আসবে আস্তে আস্তে – প্রিন্টে।


০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
সাশান্দ্রা, আইভরি কোস্ট

Read Full Post »

We can easily forgive a child who is afraid of the dark; the real tragedy of life is when men are afraid of the light.

– Plato

৫৭৭.

ডাব্লিউটিও’র রেফারেন্স পেপারের প্রথমেই কোম্পানীদের মধ্যে সার্ভিসগুলোর ভেতর ‘প্রতিযোগিতামূলক সেফগার্ড’ রাখার কথা বলা হয়েছে বার বার। ছোট কোম্পানীগুলোকে দেখবে কে? রেগুলেটর। বড় বড় কোম্পানিগুলো একে ওপরকে অথবা বড়রা সবাই মিলে ছোট কোম্পানিগুলোকে বাজার থেকে বের করে দেবার অপকৌশলের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছে রেগুলেটরকে। ‘ক্রস-সাবসিডাইজেশন’ মানে কয়েকটা পণ্যের লাভ মিলিয়ে একটা কোম্পানির প্রোডাক্টের দাম এমন কমিয়ে আনে যাতে শুধুমাত্র ওই প্রোডাক্ট তৈরী করছে যারা – তারা যাতে আর না আসতে পারে প্রতিযোগিতায়। অনেক সময় প্রতিযোগীদের ভেতরের তথ্য নিয়ে নিজের পণ্যকে এমন ভাবে নিয়ে আসে যাতে প্রতিযোগীরা মার খেয়ে যায়। ব্যবসা গোটাতে হয় বাজারে যাবার আগেই। আবার আমার তৈরী কাঁচামাল নিয়ে অন্যেরা কোন প্রোডাক্ট বাজারে নিয়ে আসলে সেখানে সাপ্লাই চেইন বন্ধ করে বিপদে ফেলে রিটেলারদের। এধরনের কাজ হলে আটকে দেবে রেগুলেটর। এসব কাজে প্রতিযোগিতা হারায় মুক্ত বাজার। মুক্ত বাজার মানে এই নয় যে যা ইচ্ছা করতে পারবে সে। আর প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমবে কিভাবে? আপনারই বলুন। 

৫৭৮.

সব সার্ভিসের জন্য দরকার নেই লাইসেন্সের। তবে ‘ইনোভেশন’ বন্ধ করতে চাইলে সেটার দরকার হতে পারে হয়তোবা। অন্যান্য দেশগুলোর ‘টেলিকমিউনিকেশন অ্যাক্ট’ পড়ে মনে হয়েছে তাই। আমার ধারণায় টেলিকম অ্যাক্টে ‘এনিথিং হুইচ ইজ নট প্রোহিবিটেড ইজ পারমিটেড’ ব্যাপারটা থাকলে ইনোভেশনে ঠেখাতে পারতো না আমাদের। শুরুতেই লাইসেন্স লাগলে আজকের বিলিয়ন ডলারের ইনডাস্ট্রি ফেসবুক আর ইউটিউব দেখতো না আলোর মুখ। রেগুলেটরকে ছাড় দিতে হবে নতুন নতুন উদ্ভাবনাকে। উল্টো, নতুন পথ দেখাতে হবে ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের। লাইসেন্স লাগবে কি লাগবে না – সেটা দেখা যাবে প্রজেক্ট ওড়ার পর। হাজারো লোক আসতো আমার কাছে, ভাই, এটা করবো – ওটা করবো। করবো ডাটা সেন্টার, অনলাইন রেডিও, পডকাস্টিং। “লাইসেন্স দেন আগে। সবাই বলছে – লাগবে লাইসেন্স।” আমার কথা একটাই, শুরু করুন তো আগে। আমাদের একটা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিন এটা করতে চাচ্ছেন – এই টাইম লাইনের মধ্যে।

৫৭৯.

বলুন তো গুগল, ইউটিউব আর ফেসবুকের লাইসেন্স লেগেছিল কি প্রথমে? টেলিকম লাইসেন্স? জিনিসটা ওড়ার পর সার্ভিসটা নিয়ে কোম্পানী তৈরি করতে গিয়ে ওই দেশের কোম্পানী অ্যাক্ট অনুযায়ী যা যা লাগে সেটাই করেছে তারা। তারা সেটা করতে পারবে কি, পারবে না সেটার জন্য ধরনা দিতে হয়নি সরকারের কাছে। বসে থাকতে হয়নি বছর ধরে। ভালো করে তাকিয়ে দেখুন – আমাদের দেশের মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোর যাদের ‘প্রেজেন্স’ রয়েছে দেশের বাইরে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের রেজিস্ট্রেশন নিতে আগ্রহী। অথবা, আয়ারল্যান্ড। ভুল বুঝবেন না, দেশ চালাচ্ছে কিন্তু উদ্যোক্তারা। তাদেরকে অনিয়মের জুজুবুড়ীর ভয় দেখিয়ে ইনোভেশন আটকে দিলে তারা চলে যাবে দেশের বাইরে। কর্মসংস্থান হবে ওদেশে। আর সেজন্যই ব্যবসায়িক ক্যাটেগরীর অভিবাসন নীতিমালা ততো মাত্রায় শিথিল। নীতিমালা করতে হবে ব্যবসাবান্ধব। পেঁচাবেন বেশি, তো সুযোগ হারাবে দেশ। হয়তোবা – ওনার হবে না কিছু, দেশ হারাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ।  

৫৮০.

বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রির সাথে কাজ করতে গেলে পড়তে হয় প্রচুর ইন্টারন্যাশনাল লিগাল ডকুমেন্টেশন। গুগলের সাথে কাজ করতে গিয়ে শতখানিক ‘লিগালীজ’ জানতে হয়েছে এই আমাকেই। ফেইসবুক নিয়েও একই অবস্থা। ইনোভেশন আর ‘ফ্রী স্পীচে’র ধারক হিসেবে মার্কিন ‘ডিজিটাল মিলেনিয়াম কপিরাইট অ্যাক্টে’র ধারা ৫১২ ভালো কাজ করেছে অনেক দেশেই। প্ল্যাটফর্ম প্রোভাইডারদের স্বাধীনতা দিয়েছে ওই অ্যাক্ট। আর সেকারণে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম এখনো টিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আবার ‘কমিউনিকেশন ডিসেন্সি অ্যাক্টে’র ২৩০ ধারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্ল্যাটফর্মগুলোকে ভারসাম্য দিয়েছে অনেকটাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটা যুগান্তকারী ব্যাপার হচ্ছে সাম্প্রতিক ‘ইনোভেশন অ্যাক্ট’। দেখবেন নাকি এক পলক? ধরাধরি করলে তো অনেক কিছুই করা যায়। তাহলে মুখ থুবড়ে পড়তো আইটি ইনডাস্ট্রি। পোস্ট দিলেন আপনি, আর বন্ধ করলেন ফেসবুক বা ইউটিউবের প্ল্যাটফর্ম, ঠিক হলো জিনিসটা? এটা তো ‘ইউজার জেনারটেড কনটেন্ট’, ধর্মীয় বিদ্বেষী হলে আইনগত ব্যবস্থা নিন তার বিরুদ্ধে। তবে, সেই মানুষটার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয় সেটা দেখবে সর্বোচ্চ আদালত। কিছু মানুষ সরকারকে ভুল পথ দেখালেও সেটা ঠিক করে দেবে দেশের বিচার ব্যবস্থা। সবকিছুর ওপর আস্থা হারালে যাবে কোথায় মানুষ? 

৫৮১.

মোদ্দা কথা, প্রাইভেট সেক্টর মুখিয়ে আছে আইডিয়া নিয়ে। ক্লিক করতে দিন তাদের। পয়সা তো চাচ্ছে না তারা সরকারের কাছ থেকে। শুরু করতে দিন কাজটা। নীতিমালার বাইরে রাখুন পরীক্ষামূলক কাজগুলো। প্রথম তিন বছরের ‘ইনোভেশন’ হলিডে দিন উদ্যোক্তাদের। ‘ফ্লাই’ করতে দিন তাদের স্বপ্নের প্রজেক্টটাকে। দরকার হলে নীতিমালার ভেতরে নিয়ে আসুন এর পরের বছরগুলোতে। যখন উদ্যোক্তারা শোনেন ‘নীতিমালা তৈরি হচ্ছে’ গত পাঁচ বছর ধরে, তখন তারা চলে যান ভিয়েতনাম, না হয় মালয়েশিয়া। পরিক্ষিত প্রযুক্তি নিয়ে বসে থাকতে চান না কোনো উদ্যোক্তা। ‘আমি বুঝি না তাই এর অনুমতি দেবো না’ অথবা, ‘না বুঝে দিয়ে বিপদে পড়বো নাকি’ মনোভাব পিছিয়ে দিচ্ছে দেশকে। তবে, যেগুলোর জন্য দরকার লাইসেন্স, তার ‘লাইসেন্সিং ক্রাইটেরিয়া’ মানে লাইসেন্সের সব ‘ক্লজ’ উন্মুক্ত করতে বলেছে – সবার জন্য। ডাব্লিউটিও। আমাদের টেলিযোগাযোগ আইনও বলেছে একই কথা। উন্মুক্ত করতে হবে লাইসেন্সের সব ক্রাইটেরিয়া। সবার জন্য। জানবে সবাই। লুকোচুরির তো কিছু নেই। আপনার সার্ভিস প্রোভাইডার মানে আইএসপি, মোবাইল কোম্পানী আপনাকে কী দিচ্ছে আর সে কি বলে সরকারের কাছে লাইসেন্স নিয়েছে সেটা তো জানতে চাইবেন গ্রাহকরা। বলেছেন রেগুলেটরকে একটা – আর গ্রাহককে দিচ্ছেন আরেকটা, থাকতে হবে তো একটা ‘চেকিং মেকানিজম’। 

৫৮২.

সব লাইসেন্সের কপি ওয়েবসাইটে দেবার ব্যাপারে কাজ করতে হয়েছে আমাকে। শুরুতে অনেকগুলোই ছিলো না ওয়েবসাইটে। মোবাইল লাইসেন্সটাও ছিলো না অনেকদিন। সাংবাদিকরা চাইতেন মাঝে মধ্যে। আমাদের ভেতরের অনেকে বললেন – দিলে সমস্যা হতে পারে। সারাদিন আমাদের ভুল বের করার চেষ্টা করবেন তারা। টেলিকম অ্যাক্টে কিন্তু উন্মুক্ত করতে বলা হয়েছে সব লাইসেন্সিং ক্লজ। তখন অনেকে বললেন দুহাজার টাকা নিয়ে অনুলিপি দেবার কথা। আমার কথা একটাই। মানুষের জন্যই তো আমরা। আমাদের ভুল বের করে দিলে এর থেকে খুশির খবর কি আছে আর? ভুল শোধরাবার পথ পাওয়া গেলো বরং। আমার কণসেপ্টে ‘থার্ড আই’ কাজ করে ভালো। সরকার নয়, একটা জনগোষ্ঠী জানে কিসে ভালো হবে তাদের। শুনে নিন তাদের কথা। ‘ইনক্লুসিভনেস’ কথাটা তো উড়ে আসেনি এমনিতেই! সম্পৃক্ত করতে হবে গ্রাহক, সার্ভিস প্রোভাইডার, সম্পর্কিত স্টেকহোল্ডারদের। গ্রহণযোগ্যতা আসবে তখনি।

৫৮৩.

ইউএন পিস কীপিং অপারেশনের একটা বড় কাজ হচ্ছে বেসামরিক জনপদকে রক্ষা করা, যেকোন মূল্যে। রুয়াণ্ডান জেনোসাইড নিয়ে ‘হোটেল রুয়াণ্ডা’ দেখেছেন নিশ্চয়ই। জাতিগত বিদ্বেষে প্রথমেই টার্গেট হন বেসামরিক মানুষেরা। তবে এই ‘কো-ল্যাটেরাল ড্যামেজে’র প্রথম শিকার হন মহিলা আর বাচ্চারা। আর সেকারণে আমাদের প্রথম ম্যানডেট, ‘প্রোটেকশন অফ সিভিলিয়ান’ – নো ম্যাটার হোয়াট! আইভরি কোস্টে পিস কীপিং মিশন চলছে প্রায় দশ বছর ধরে। মিলিটারি অ্যাকশন কমাতে বাড়ছে এখন ইনফ্রাস্ট্রাক্চার প্রজেক্ট। ছোট ছোট প্রজেক্ট, মন জয় না করতে পারলে বাকি কাজ কষ্টসাধ্য। সেটা পড়েছে আমার ডিপার্টমেন্টে, সিভিল মিলিটারি কোর্ডিনেশনে। আমি হচ্ছি মিলিটারির সর্বশেষ কম্পোনেণ্ট যেটা কাজ করছে সাধারণ জনগণের সাথে। যুদ্ধে দরকারী সব ইনফ্রাস্ট্রাক্চার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক কিছুই তৈরি করতে হচ্ছে নতুন করে। স্কুল, কলেজ, হাট, বাজার – লাইব্রেরীর প্রজেক্ট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে ইদানিং। কোন গ্রামে কি দরকার সেটা কিন্তু ঠিক করছি না আমরা। চেষ্টাও করছি না চাপানোর। বরং, কথা বলছি সবার সাথে। শুনছি তাদের কষ্টের কথা। উঠে আসছে তাদের ‘এক্সপেক্টেশন’গুলো। সহকর্মীদের বলি, এটা কিন্তু তাদের দেশ। আমরা এসেছি সহায়তা দিতে তাদের। শুনতে হবে তাদের কথা, শুরুতেই! তাহলেই আসবে গ্রহনযোগ্যতা।   

[ক্রমশ:]

Read Full Post »

Older Posts »