It’s none of their business that you have to learn to write. Let them think you were born that way.
– Ernest Hemingway
৬৭.
বই লেখার খরচ আছে কিছুটা। ধরে নিচ্ছি আপনি একদম নিখরচায় লিখছেন। তবে এই লিখালিখির সময় লেখকদেরও তো খেতে পরতে হয়। উঠতি লেখকদের দিনের কাজের পাশাপাশি লিখালিখির জন্য অপেক্ষা করতে হয় গভীর রাতের জন্য। স্বপ্ন দেখার বদলে স্বপ্ন সফল করার জন্যই হয়তোবা পরিবারের সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে বসতে হয় এই কাজে। বছরের পর বছর এটা কষ্টকর বৈকি। ছেড়ে দিতে হয় বড় কাজ, ছোট কাজ জুটিয়ে জেগে থাকেন লেখকরা স্বপ্ন নিয়ে। প্রতিষ্ঠিত হবার আগে সাহায্য নিতে পারেন সাধারণ মানুষের, যারা আপনাকেই তুলে নিয়ে আসবে অনেক মমতা দিয়ে – সাধারণের মাঝ থেকে। যেমনটা আমরা শুনে থাকি, জনগনই সকল ক্ষমতার উত্স! সত্যি কথা। এযুগে হাজার হাজার বই লেখা হচ্ছে এই ক্রাউডসোর্সিং এর মাধ্যমে।
৬৮.
ফিরে আসি আমার কথায়। ধরে নেই (ধরে নিচ্ছি কিন্তু!) আমি একটা বই লিখছি ‘মাইন্ডম্যাপিং’ নিয়ে। প্রাথমিক খরচপাতি যা লাগে দাড়া করালাম তার হিসাব। আপনার যেকোনো জটিল কাজকে চাক্ষুষভাবে ‘স্ট্রাকচার্ড’ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বের করে দেবার জন্য এই বইটা কিভাবে সাহায্য করতে পারে তার একটা সারসংক্ষেপ তৈরী করে ফেললাম এর মধ্যে। তারপর গেলাম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে। লিখলাম আমার পরিচয়, কেন দরকার হলো বইটা লেখার। বইটার ডেলিভারেবল – মানে বইটা কিভাবে সাহায্য করবে আপনাকে, তার বিত্তান্ত লিখে বা ভিডিও আপলোড করে জানিয়ে দিলাম সবাইকে। বোনাস হিসেবে আবার তুলে দিলাম প্রথম দু অধ্যায়। আমার এই কাল্পনিক ক্যাম্পেইনের কিছু উদাহরণ টেনে আনতে পারি আপনার সুবিধার জন্য।
৬৯.
২০ টাকা: ধন্যবাদ দেবো আপনাকে – ফেইসবুক বা টুইটারে।
৫০ টাকা: ‘মাইন্ডম্যাপ’ বইয়ের ফাইনাল ই-বুকের কপি পাবেন আপনি।
৬০ টাকা: পাচ্ছেন আমার অটোগ্রাফ করা ‘মাইন্ডম্যাপ’ বইয়ের ই-বুকের কপি ।
১০০ টাকা: ‘মাইন্ডম্যাপ’ বইয়ের প্রিন্ট কপি, মানে আসল বই।
১৫০ টাকা: আসল বই, আমার অটোগ্রাফসহ।
৩০০ টাকা: স্কাইপে দশ মিনিটের একটা কল – আমার সাথে। (১৫০ টাকার সুবিধাসহ +)
১,০০০ টাকা: + ধন্যবাদ দেবো বইয়ের “কৃতজ্ঞতা” সেকশনে।
৫,০০০ টাকা: + বসতে পারি একটা কফিশপে, আপনার সাথে।
১০,০০০ টাকা: + বইটার একটা চরিত্রই হতে পারে আপনার নামে।
৭০.
বুঝতে পারছি মন খুব খারাপ হয়ে গেছে আপনার। মানতেই পারছেন না মন থেকে। এগুলো করতেই হবে – বই লেখার জন্য? আচ্ছা, মন থেকে ফেলে দিন উপরের উদাহরণ – একেবারই। ফিরে আসি ‘ক্রাউডফান্ডিং’য়ে। ‘কেইলী’ গানটার কথা মনে কি আছে আপনার? পাগলকরা (এখনো পাগল আমি) এই গানটা এসেছিলো ব্রিটিশ ব্যান্ড ম্যারিলীয়ন থেকে। অথচঃ এই ব্যান্ডের পুরো ইউএস টুরের টাকা তুলে দিয়েছিলো তার ভক্তরাই। সাতানব্বই সালের দিকে এই ভক্তকুল ইন্টারনেটের মাধ্যমে তুলে দিয়েছিলো ষাট ষাট হাজার ডলার! আর এতে ছিলো না ব্যান্ডের কোনো যোগসূত্র। ক্রাউডফান্ডিং। হ্যাঁ। উনিশশো নিরানব্বই সাল থেকে আমার পিসির প্রসেসরের ক্রান্চিং পাওয়ার ভাগাভাগি করে নিচ্ছি ‘সেটি@হোম’ প্রজেক্টের সাথে। সবার প্রসেসরের মিলিত কাজের ফল পাচ্ছে ‘সেটি’, বার্কলির ‘সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ প্রজেক্ট। আরো জানতে দেখুন ‘কন্টাক্ট’ মুভিটা।
৭১.
আঠারশো চুরাশি সালে মার্কিন জনগণ এক ডলার করে চাঁদা দিয়ে তৈরী করে দিয়েছিলো স্ট্যাচু অফ লিবার্টির বেদীটা। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে ষাট লক্ষ্ ইউসেজ আর তার বাক্যের উদাহরণ যোগান দিয়েছেন কিন্ত সাধারণ মানুষ, প্রায় সত্তুর বছর ধরে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সবার মতামত চাওয়া হয়েছিল তখন। আমাদের দেশেও অনেক উদাহরণ আছে এরকম। মানুষের জন্য মানুষ করে বলেই মানুষ বড় কোনো অসুখে পড়লে তার বন্ধুরাই পত্রিকার মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন। ‘টু কিল আ মকিং বার্ড’এর বই বা মুভিটা আজকে পেতাম না যদি না তার বন্ধুরা চাঁদা তুলে তার এক বছরের খরচ তুলে দিতেন। নেলী হার্পার লী ছিলেন ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সামান্য কেরানী – যিনি লিখতেন কাজের ফাঁকে। লেখার জন্য চাকরি ছেড়ে যেতে হয় সস্তা এপার্টমেন্টে। এই বইটা আজ অবিশ্বরনীয় হয়ে আছে। এটিকাসকে মনে রাখবে যারাই পড়েছে বইটা।
৭২.
ইন্টারনেটের যুগে এই ‘ক্রাউডফান্ডিং’ পাল্টে গেছে ‘ক্রাউডসোর্সিং’ নামে। যা করতে চান, বলুন মানুষকে। মানুষ মানে আমরা তুলে দেবো টাকা, লিখুন গান, চিত্রনাট্য অথবা তৈরী করুন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র। সবই সম্ভব। বিনা পয়সায় বিশ্বভ্রমন, তাও সম্ভব। বইয়ে আসি ফিরে। আমার অনেক বন্ধুকে লেখক বানিয়ে ছেড়েছে ব্রিটিশ সাইট আনবাউন্ড। একটু ঘুরে আসুন সাইট কিকস্টার্টারে। আগেই বলে দিচ্ছি, মাথা কিন্তু দেবে ঘুরিয়ে। একাধারে চলছে চল্লিশ হাজারের মতো প্রজেক্ট (বই বা অ্যালবাম বের করা হচ্ছে এক একটা প্রজেক্ট)| দুহাজার নয় থেকে চল্লিশ লক্ষ মানুষ তুলেছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো। জি। বাংলাদেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিটা কিভাবে আমাদের জীবনযাত্রা পাল্টে দিচ্ছে তা আমাদের বাসার গৃহকর্মীকে দেখলে বোঝা যায়। ‘বিকাশ’ গুগলের মতো ক্রিয়াপদে পরিনত হচ্ছে। প্লাস্টিক মানুষের হাতে হাতে আসছে চলে। মানুষ দেবে টাকা – লেখার জন্য। সত্যি বলছি। লিখুন নিজের জন্য। অন্যের জন্য নয়। আপনাকে আপনি পরিতৃপ্ত করতে পারলে অন্যকেও পারবেন।
৭৩.
অনুরোধ রাখবেন কি একটা? জ্ঞান চালাচালি করতে পারাটা এই ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তবে, অন্যের বই পয়সা না দিয়ে পড়াটা অন্যায়। আমি বই কিনে পড়লে অন্যেরাও পড়বেন আমারটা।
লিখছেন? মাঝরাতে না তো?
Yes, crowdsourcing is a blessing for many unknown writers. At the same time, it’s so hard to find a model that makes the real money.
LikeLike
I agree.
LikeLike