You don’t have to burn books to destroy a culture. Just get people to stop reading them.
― Ray Bradbury
৯৬.
বই পড়তে ভালবাসি। অস্ফুট স্বরেই বললাম।
এ আবার নতুন কি? ভুরু কুঁচকে তাকালেন আপনি।
‘বই পড়তে ভালবাসে সবাই’, আপনার তড়িত্ জবাব, ‘ছোটবেলায় দেখতেন যদি আমাদের’।
বুঝলাম, ভুল হয়ে গেছে বাক্য গঠনে। বাকি পড়ে গেছে একটা শব্দ। যোগ করলাম সেটা।
৯৭.
হাউ এবাউট স্টার্টিং ওভার? এভরিওয়ান নীডস আ সেকেন্ড চান্স!
বই পড়তে ভালবাসি, এখনো।
মানি আপনার কথা। সত্যি কথা বলতে আমাদের জীবন জটিলতর হচ্ছে দিন দিন। বই পড়ার সময় কোথায়?
সত্যিই তাই। তবে সময় যে নেই এটা বললে ভুল হবে হয়তোবা।
মোবাইল ফোন আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে আমি আপনি কতটা সময় দেই ধারণা আছে কি সেটার? পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম লোকটা কে বলুনতো? তার তো বই ধরারই কথা না।
৯৮.
১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১০| তুষারপাত হচ্ছে। দিনটা বেশ ঠান্ডা। জন্ম নিলো উরসুলা টড, অ্যামবিলিক্যাল কর্ড গলায় পেঁচিয়ে। মারা গেলো সে অবস্থায়। গল্পটার শুরু এভাবে। কেইট অ্যাটকিনসনের ‘লাইফ আফটার লাইফ’ বইটা নিয়ে আটকে আছি কয়েকদিন ধরে। গতবছর ‘লাইফ অফ পাই’ বইটা পড়ে যা মজা পেয়েছি সেটা সিনেমা দিয়ে মেটানো যাবে কি? বইটার কথা যখন উঠলোই, সেটা নিয়ে আসছি সামনে।
তার আগে আসি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধারা নিয়ে। আমার মুখচোরা ব্যাপারটা সার্বজনীন সাবলাইম ইনফো হলেও ঝামেলায় কম পড়িনি জীবনে। ইন্টারভিউয়ে দশ লাইনের প্রশ্নের উত্তর হয় এক পঞ্চমাংশ! আমার থাম্ব-রুল, আপাতত:| নতুন একটা গল্প ফাদি তাহলে।
৯৯.
ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় একজন পত্রমিতা ছিলো আমার – সুদুর গ্রীস থেকে। সে তিন পাতা লিখলে আমার উত্তর এক পাতা। একবার উপহার পাঠালো বই একটা। অ্যামেরিকায় এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে গিয়েছিলো সে। মনে করে কয়েকটা বই নিয়ে এসেছে আমার জন্য। পাগলাটে ছিলো মেয়েটা। আমি পাগল ছিলাম কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর এখানে নয় বোধকরি।
টিপ্পনি কাটলো ফিরতি চিঠিতে।
‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট কই?
এটা আবার কি?
এই যে তোমার জন্য বই পাঠালাম একটা, এর ধন্যবাদনামা কই?
এটা সত্যি, আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম বইটা পেয়ে। খুশি জানানোর কি আছে? তাও আবার লেখায়? পাগল নাকি? ও পাগল হলেও আমি তো নই আর।
লিখতে হয়, বুদ্ধু! না লিখলে সে জানবে কিভাবে?
তাই নাকি? আসলেই তো সত্যি। ওসময়ে ছিলো না টেলিফোনও। ছিলো হয়তোবা, কিন্তু আওতার বাইরে।
বই নিয়ে এসেছি তিনটা, তোমারই জন্য। পেতে চাও কিনা বলো?
পেতে চাই না মানে? তবে ভদ্রতা করলাম ওর সাথে। লিখতে লিখতেই অনেক ভদ্রতা শিখেছি এর মধ্যে। ওর থেকেই। ওকে আর সেটা হয়নি কখনো।
অন্য কাউকে দিয়ে দাও বরং! পোস্টেজ খরচ অনেক পড়বে তোমার। আগেরটার জন্য যে কতো খরচ করেছ সেটা জানালে না তো আর।
লাইনে এসেছো ভদ্রবাবু! ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার জন্যই নিয়ে এসেছি এগুলো। অন্যকে দেয়া যাবে না। তবে পেতে চাইলে কষ্ট করতে হবে কিছুটা। রাজি?
আবারো ভদ্রতা করলাম কয়েকটা চিঠিতে। ব্যাক টু স্কয়ার ওয়ান! ‘কষ্টটা’ কিছুটা পরিস্কার হলো বরং। ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট লিখতে হবে প্রতিটার জন্য! কি যন্ত্রণা! পত্রমিতা না প্রিন্সিপাল? যন্ত্রণা হলেও উত্তর পাবার জন্য দিন গুনতাম এই আমিই।
ফিরে আসি ‘লাইফ অফ পাই’ বইটা নিয়ে। কিছুদিন আগে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট একটা হস্তগত হলো – এক লোকের। লিখেছে এক লেখককে। লোকটা তার মেয়ের সাথে পড়েছে বইটা, অনেক ব্যস্ততার মধ্যে।
‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট – ভালোই লিখেছে লোকটা …
ব্যস্ততার মধ্যে বই না ধরতে পারলে মনে হয় লোকটার কথা। বন্ধ করি পিসিটা, ফোনটাকে রাখি হাতের নাগালের বাইরে। ফিরে আসি বইয়ে। মাথার কোথায় যেনো একটা ‘ইলুমিনেশন’ কাজ করে। এন্ডরফিনসের সরবরাহ বেড়ে যায় বোধহয়।
চারটা বই হস্তগত করেছি আপাতত।
এই ঈদের ছুটির জন্য। সৃষ্টিকর্তা মহান।
ঈদ মোবারক!
অক্টোবর, ১৭, ২০১৩; ঈদের পরের দিন
পুনশ্চ: অনেকেই জানতে চেয়েছেন ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোটটার ব্যাপারে। ভুল হয়েছে আমারই, বলা উচিত ছিলো তখনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লিখেছিলেন চিঠিটা, লাইফ অফ পাই’য়ের লেখক ইয়ান মার্টেলকে। মুগ্ধ হয়েই। গুনীজনকে কদর দিতে জুড়ি নেই মার্কিনীদের। ভাবানুবাদ জুড়ে দেয়া হলো সঙ্গে।
জনাব মার্টেল –
‘লাইফ অফ পাই’ বইটা শেষ করে উঠলাম এইমাত্র। মেয়েকে নিয়ে পড়েছি আমি। পশুপাখিকে নিয়ে গল্পগুলো আমাদের দুজনেরই খুবই পছন্দের।
আনন্দদায়ক বইটা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে আরো সুদৃঢ় করেছে। আরো মুগ্ধ হয়েছি গল্পটা বলার ক্ষমতা দেখে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
সাক্ষরিত,
বারাক ওবামা
Read Full Post »